১৭ ডিসেম্বর ২০২০

নাজমা সুলতানা



কেমন আছো বাংলাদেশ  


বাংলা মায়ের অশ্রুসজল

চোখের পানে চেয়ে 

পথে নামল দামাল ছেলে 

নামল দামাল মেয়ে ।


লড়েছ তারা বুক চিতিয়ে 

আগে পিছে থেকে 

বাংলা মায়ের আব্রু তারা 

রাখবে সদা ঢেকে।


বাংলা ভাষা মধুর ভাষা 

বাংলা দেশের  মাটি 

সোনার বাংলা সোনার চেয়ে 

অনেক বেশি খাঁটি ।


বিজয় গর্বে বাংলার ছেলে 

ফিরল মুখে হাসি 

আমার সোনার বাংলা আমি 

তোমায় ভালোবাসি  ।


সত্যি বলো বাংলা আজ

হাসছে প্রাণ খুলে ?

বিজয়ীর বেশ পরে নাকি 

কাঁদছে এলো চুলে  ?

মশিউর রহমান রবিউল



বিজয় নিশান


লরেন্টসের ক্যামেরায় দেখেছি-

সোনার বাংলা পুড়ে ছাই,

আজ পোড়া ছাইয়ের বুকে দাড়িয়ে

রুপসী বাংলার গান গাই।


আমরা মিলেনিয়াম প্রজন্ম -

গা সওয়া হয়ে গেছে বারুদের গন্ধ, 

দেখে নাও পাক শত্রু,আমরা প্রভার সঞ্চারী

তোদের লাগি বাংলার সকল দ্বার বন্ধ। 


তোদের রক্তাক্ত হাত দুমড়ে মুচড়ে 

আনন্দে ভেসেছি,করেছি বিজয় স্নান,

দীপ্ত উচ্চারণে শুধাই তোদের-

বাংলার দিকে তাকাসনে,মারবো হিংস্র বান।


গৌরব গাঁথা ইতিহাসের ধ্বজাধারী মোরা

বিজয়ের হাসিতে বিজয় পতাকা বইবো,

শহীদের আত্মদানের প্রতিফোটা রক্তকে

চুমুতে আদরে বুকে তুলে লইবো।


রক্তের প্লাবনে ধুয়ে মুছে

ঘোচাবো সকল অকল্যান,

ছিড়তে দেবোনা লাল সবুজ পতাকা

বাঙ্গালীর রক্ত যতক্ষণ এ দেহে বহমান।


শৌর্যে,বীর্যে, তূর্য আমরা

মননের ধনি আমরা বাঙাল,

পাকীদের অহংকার ধুলায় লুন্ঠিত

নরপশু তোরা চির কাঙ্গাল।।

রেখা আক্তার



প্রিয় বাবা


প্রিয় বাবা,

কেমন আছো? মনে হয় খুব ভালো!

ভালো থাকার ই কথা,

এখন তো তোমায় কাউকে শাসন করতে হয় না!

কেউ তোমার কাছে কোন আবদার ও রাখি না,

তাহলে তুমি ভালো না থাকলে কে ভালো থাকবে?


আচ্ছা বাবা,এখন যে আমরা ভুল করি 

তা কী তুমি দেখতে পাওনা?

তোমার কী ইচ্ছে হয় না,আগের মত বকে দিতে?

ভুল গুলো শুধরে দিতে?

নাকি ইচ্ছে করেই এসব করতে চাও না?


বাবা এখন বুঝে গেছি তোমার অভাব কতখানি!

তাইতো রোজ রাতে নিয়ম করে 

আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে 

বাবা বাবা বলে চিৎকার করি।

আর তোমাকে খোঁজ করি।


তুমি শুনতে পাওনি আমার এই চিৎকার? 

নাকি শুনেও ইচ্ছে করেই লুকিয়ে থাকো

ঐ তারাগুলোর ভীড়ে! 

আর লুকিয়ে আমাকে দেখে 

মিটিমিটি করে হাসো।


ভালো থেকও বাবা।

ঐ আকাশের তারাগুলোর ভিড়ে 

তোমার সুখের ভুবনে।

সুলতানা রিজু



একটুখানি ভুলের ভুলে


একটুখানি ভুলের ঝড়ে এলোমেলো

হয়ে গেল একখানি সাজান বাগান।

নড়ে গেল শক্ত মনের ভিত,

ভেঙে গেল মনের বাড়ি।

স্বপ্নেরা উড়ে উড়ে,উড়ে গেল দূরে।

বেশত ছিলাম আমি ভালোই ছিলাম,

পৃথিবীটা আঁকড়ে ধরে। চাঁদকে ছিনিয়ে

নিয়ে জ্যোস্না বিলিয়ে দেব তারে।

একটি ভুলের ঝড়ে এমন পৃথিবী থেকে

ছিটকে গেলাম আমি একাকী হোয়ে।

নিঃস্বর্গের কাছে থেমে গেল পৃথিবী সমেত

আমার সব গচ্ছিত সময়।

একখানি কালোমেঘ ঢেকে দিল আমার

উষসী আকাশ

ঠিকানা খুঁজে হয়রান তাই বাকিটা সময়।

জানি ফুল ফুটবেনা,পাখি আর গাইবেনা গান,

কুহু ডাকে ফিরবেনা আলসে দুপুর।

ফুলেফুলে সাজবেনা মনের বাগান।

সব রঙ মুছে দিল অনাহুত ঝড়। 


আচমকাই থমকে গেল সব,

ফুল ফোটানোর বেলা।

 কাঁচের মত গুড়িয়ে গেল বুকের ভেতর

শব্দাবলী মালা।

     

জীবনের সব কথা রয়ে গেল ঝড়ে ওড়া

একটি পাতায়।

আমার পৃথিবী এখন উড়বেই তবু

আমারি অপেক্ষায়।

সাহানা সিরাজী



মুক্তি


স্বাধীনতা দিবস সবার থাকলেও বিজয় দিবস কারো নেই,সবার মুক্তি থাকলেও আমাদের মুক্তি নেই।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের চোহদ্দী কাঁটাতারের ভেতর থাকলেও  মননের কাঁটাতার উঠেনি; স্বাধীনতা পেলেও সার্বভৌমত্ব  আজো মিলেনি-

শ্রেণি সংঘাত চলছে তো চলছেই

শ্রেণি বৈষম্য চলছে তো চলছেই

সামাজিক ট্রায়াঙ্গল নীতি ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো 

হলো না আর এই ঊনপঞ্চাশেও ;


মুক্তির ভেতর আরেক মুক্তি হাহাকার করছে

যুদ্ধের ভেতর আরেক যুদ্ধ নীরবে অশ্রুপাত করছে।

জামার ভেতর ছেঁড়া গেঞ্জির মতো পরিপাটি আমরা

টকটকে লাল বাঁশের ভেতর ঘুণ যেমন 

আব্বার কবর যেমন বেদখল 

আম্মার ঘর যেমন লুটপাট বেখল

আমাদের মুক্তিও তেমনি ঘুণে ধরা বেদখল।


মুক্তির ভেতর অন্য মুক্তি ছেঁড়া কাপড়ের  ঠিকানা

ঠোঁটের ভেতর আরেক ঠোঁট  আইনের সূঁতোয় সেলাই করা,জোরে হাঁচির শব্দেও ঝরে কালো রঙের রক্ত

আমরা পারি না শোক করতে,বিলাপ করতে

আমরা পারি না মুখ বাঁকা করতে


গেরিলাযুদ্ধ সবাই দেখে

অস্ত্রের যুদ্ধ দৃষ্টিগোচর

ডুবতে থাকা  জাহাজের নাবিকের বাঁচার যুদ্ধ কেউই দেখে না; খুলে নিয়ে যায় এমন কী ইঞ্জিনও 

মাছের দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেন  তাকিয়ে থাকে 


মুক্তির ভেতর আরেক মুক্তি বাঁচার জন্য চিৎকার করে

আমরা দুহাতে কান চেপে রাখি

আমরা কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে রাখি,

আমরা খাবারের প্লেটে পানি ঢেলে উচ্ছ্বসিত  হই,

কেবল সমস্বরে গেয়ে উঠি -

"আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি "

সেলিনা আহমেদ



স্বাদের বিজয় 


বিজয় বিজয় বিজয় 

আজ চারদিকে বিজয়ের উল্লাস। 

উল্লাসে উল্লাসিত আজ পুরো বাংলাদেশ । 


জাগো মানুষ জাগো

ভেঙে ফেলো হিংসার দেওয়াল

সব ব্যবধান ভুলে গিয়ে, বিজয়ের 

নিশান উড়িয়ে, মুক্তির স্বাদ নাও।


ঘরে ঘরে আজ আনন্দের জোয়ার, 

তোমাকে ফিরে পাওয়ায় হে স্বাধীনতার বিজয় । 

লাল সবুজে সেজেছে, বাড়ি অফিস, আদালত। 


মা তোমার শঙ্কা কেনো আজ?

টগবগিয়ে খুন ছুটছে ধেয়ে 

লাল-সবুজের পতাকা হাতে 

নবীন প্রবীন, কৃষক, মজুর সবে। 


মা,আজ অন্ধকারে নেই তো কেউ 

আলোর মশাল হাতে প্রতি ঘরে ঘরে। 

তোমার যোগ্য উত্তরসুরী রয়েছে পথ চেয়ে,

 হবে হবে জয়,নেই কোন ভয়।


মা তুমি পরিপূর্ণ, 

তোমার দেশ আর 

নয়তো কারো অধীনে।

রয়েছে আজও 

কেউ কেউ তোমার 

নিন্দুকের দলে। 

ভয় কি মা? 

নিন্দুকেরা আছে বলে,

আমাদের সবার সজাগ দৃষ্টি। 


আজ এই বিজয় দিবসে

 সবাই একসঙ্গে বলি,

এদেশ আমার, এদেশ তোমার, এদেশ লাখো শহীদের। 

বিজয় বাংলাদেশের,

আমাদের বাংলার ।

এন. এইচ. চৌধুরী বিপ্লব



বিজয় কেতনের 


৫২ এর ভাষা আন্দোলন-

৬৯ এর গণ বিস্ফোরণ -

৭১ এর স্বাধীনতার বারুদ। 


দু'শো বছরের ব্রিটিশ শাসন

চব্বিশ বছরের পশ্চিমা শাসনে

যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জীবন,

অধিকার আদায়ে মুক্তির মিছিলে

প্রতিবাদী কন্ঠে আগুন ছড়াল।


শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে

বিপ্লবের পথে কোটি পদধ্বনির আওয়াজ,

৭০ এর গণতন্ত্রী জনতার দাবানলে পুড়ল শাসক

তাই ৭১ এর ২৫ শে মার্চের কালো রাতে

নিরীহ ঘুমন্ত জনতার উপর গুলি ছুঁড়ল ।


একি! রক্তের হোলি খেলায়

হত্যাযজ্ঞে সম্ভ্রম কেড়ে নিয়ে,

আমার স্বাদের মানচিত্রে

কলঙ্ক রেখা টানল হায়েনা রূপে।


ঘুরে দাঁড়াল বাংলার আবাল বৃদ্ধ ভণিতা

বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা,

বিপ্লব স্পন্দিত বুকে নয় মাস অবিরাম সম্মুখ যুদ্ধে

শহীদের রক্তে ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে

হে স্বাধীনতা তোমার এল বিজয় আজকের দিনে।


সেই থেকে ৪৯ বছর ধরে বিজয় তুমি

আস উল্লসিত হৃদে বাতিঘর হয়ে,

দাম দিয়ে কেনা স্বাধীনতার বিজয়

আজও কেন  পৌঁছায়নি স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে?


বিজয় তোমায় নিয়ে গর্ববোধে

আমজনতার নেই উৎসবের কমতি,

৭১ এর মত কাঁধে কাঁদে মিলিয়ে

মুছে দিতে চাই সকল অসংগতি।।


সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে

স্বাধীনতা দিবসের উৎসবের কলধ্বনি,

বিজয় দিবসে প্রত্যয়ী সব মন

একসুরে বলুক আমার সোনার বাংলা,

আমি তোমায় ভালবাসি- ভালবাসি ।

ফাতেমা ইসরাত রেখা



কথা ছিলো 


কথা ছিলো তুমি আমি হেঁটে যাবো 

এক আরণ্যক বেভুল পথিক,

ভেসে যাবো মহাকালের শপথে কোন 

শ্বাপদসংকুল পথে সামুদ্রিক। 


কথা ছিলো, খুব বিচলিত না হয়ে 

কিছু গোপন কথা হবে, 

ভুল ভ্রান্তিতে আর জমানো নালিশে 

ভালোবাসা মিশে রবে। 


কথা ছিলো বর্ষার রূপালী ঢেউয়ে 

ভাসাবো এই বসন্ত শরীর,

ইচ্ছের পাল তোলা তরীখানি তখন

ছুঁয়ে যাবে প্রণয়ী নদী তীর। 


কথা ছিলো,আশ্বিনের ভরা রোদ্দুরে

ছুঁয়ে দিবো বাবুইয়ের সংসার, 

হলুদ সন্ধ্যায় ডুবে শেষ গোধূলির 

সঙ্গী হবো প্রজাপতি ডানার।


কথা ছিলো শ্রাবণ ধারার স্রোতে 

মুছে দিবো ক্লান্তির ছায়া, 

শূন্য হৃদয়ে ব্যথার দহনে সব ছেড়ে 

বুকে জমা আছে শুধু মায়া। 


সব কথা আজ শুধু কিছু কথার ভীড়ে

নোনাজলে ভাঙে বুকের জমিন,

কিছু গোপন কথার শোভা বাড়িয়ে কষ্ট 

বাড়িয়ে চলছে জীবনের ঋণ।

সালমা খান


 

হারিকেন 


আমি তোমার রাতের আঁধার 

কোন আশায় পথে পথে 

খুঁজি বারে বার ?

অন্ধকারে খুঁজতে গিয়ে, 

রাত্রির শরীর জড়িয়ে নিয়ে,

চলেছি তোমার অভিমুখে

চাঁদের আলোয় দেখিনা 

তোমায়,  

দেখি ,আমার ভালোবাসা 

গুলো হারিকেনের সলতে

হয়ে পোড়ে,

রঙীন স্বপ্ন একটা একটা খুঁটে

খুঁটে দিয়েছিলাম জুড়ে।

তোমার আমার কাব্যকথা

নীরব চলা সাড়াশব্দ হীন,

যতই চাঁদের কানে কানে

বাজাও তুমি বীণ,

চাঁদের আলোয় হয়েছো

মলীন

এখন তোমার ইচ্ছা গুলো

সলতে পোড়া গন্ধ 

চাঁদের আলোয় দেখতে

তুমি মন্দ ।

জোছনার দহনে গেছো তুমি 

 হেরে

আঁধার ভালোবেসে যায়নি 

তোমায় ছেড়ে ।

জোছনার আলোয় তোমার

নেই পরিচয় ,

একটু আলোতেই

অন্ধকারে  

তোমার হয় জয়।

চাঁদ যতই বলুক 

সব তোমার ছল,

তুমিই আমার আঁধার

 রাতের  তীক্ষ্ণ চোখের

 বল ।

মো.শফিকুল ইসলাম শফিক



বিজয় মানে


বিজয় মানে,

নিপীড়িত সম্ভ্রমহারা নারী

বিজয় মানে,

রক্তিমরাঙা শত শবের সারি।

বিজয় মানে,

কাফনবস্ত্রে রাঙা রঙিন সাজ

বিজয় মানে,

অন্তীম মুক্তি কেতন মুকুট রাজ।


বিজয় মানে,

পিতাহারা মাতৃমনের বেদন

বিজয় মানে,

সত্যের মুক্তি চিরো অমর চেতন;

বিজয় মানে,

পীড়নধ্বংসে অপশক্তির নাশ

বিজয় মানে,

ভয়হীন ইচ্ছে স্বাধীন ফেলা শ্বাস।


বিজয় মানে,

বোনের কন্দন অশ্রু মুচন যন্ত্র

বিজয় মানে,

নিজঅধিকার ফলানোর এক মন্ত্র।

বিজয় মানে,

স্বক্ষমতা বুঝে নেওয়া বীর;

বিজয় মানে,

অকতোভয় বসতস্বর্গ নীড়।