০৫ আগস্ট ২০২১

দেবজ্যোতি কর্মকার

 



পথ



সবাই যেমন মেপে পা চালায়

আমি তেমন কোনও ছন্দ শিখতে পারিনি ;

পারিনি ব'লেই আমার সঙ্গে আর পাঁচজনের মেলে না;

মেলে নি ব'লেই তো আমি অন্যদের থেকে একটু আলাদা ;

আলাদা বলতে তেমন কিছুই নয়--

তাদের মতই চোখ, নাক-কান; এমনকি মাথাটাও অনেকটা এক

আবার গায়ের রংটাও কারও কারও সঙ্গে হুবহু মিলে যায়!

আবার অদ্ভুত হলেও সত্যি যে অনেকের মতই কবিতা লিখি;

জীবনানন্দ পড়ি; রবীন্দ্রসংগীত, মেঘমল্লার শুনি

খুব হাসিতে লুটিয়ে পড়ি, আবার ভীষণ কান্না পেলে কেঁদেও ফেলি;সবার অলক্ষ্যে!

অলক্ষ্যে বলতে তুমি লক্ষ্য করনি তাই --

আসলে এগুলো তো লক্ষ্য করার মতো কিছুই নয়

যাকগে, আলাদা কেন সেটাই এখনও বলিনি তাই তো? 

তোমাদের সঙ্গে চলতে চলতেই হঠাৎ আমি উল্টো দিকে হাঁটি

বেরসিকের মতো এলোপাথাড়ি ছুটতেই থাকি

কখনও ভীষণ একগুঁয়ে, বড্ড জেদি

তখনই তোমাদের, বিশেষত তোমাকে আমার নিজের পথে চালাতে চেষ্টা করি;

এখানেই ঘটে বিপত্তি। 

বিপত্তি ঘটেই চলেছে। চলেছে বলেই এতবার তোমাদের সঙ্গে গোলযোগ বাঁধে; 

যেকারণেই আমাকে নিয়ে তোমাদের এত এত অভিযোগ; এমনকি আত্মিক বিয়োগ!

শুধু কী অভিযোগ? 

কত রাগ, তীব্র ঘৃণা, গালাগাল শুনতে হয় আমাকে! 

এত ভর্ৎসনায় এতটুকু দমি না আমি

আর দমে যাই না বলেই 

আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখি

সে স্বপ্নে বাসা বাঁধে সংসারে হোঁচট খাওয়া কিছু উন্মাদ;

যেখানে অবাধে মিলেমিশে এক হয় লালন সাঁইয়ের মাটির হাঁড়ি;

স্বপ্নের উঠোনজুড়ে সূর্যটা রোজ বনবন ঘোরে

ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যায় চাঁদ এসে উপচে পড়ে ঘরের বারান্দায় 

অথচ তুমি সেই বারান্দায় দু'দন্ড ব'সে আজও 

ভেজা স্বপ্নগুলোর গল্পই শোননি!

শোননি বলেই না এত গোলমাল হচ্ছে 

গোলমেলে দেখাচ্ছে সূর্যের রং এখনও লাল নাকি খয়েরি, ফিঁকে!

গোলমেলে দেখাচ্ছে চাঁদের আদল ঠিক কার সঙ্গে মেলে! 

আমি এসব দ্বান্দ্বিক সভা উপেক্ষাই করি 

উপেক্ষা করি আমাকে ঘিরে তোমাদের যত সংশয়! ঘৃণা, বিদ্বেষ কিংবা আক্রোশ। 

বারবার তবু তোমাদের নিয়েই স্বপ্ন দেখি। বিশেষত তোমার কাছেই বারবার আশ্রয় চেয়ে উপশম খুঁজি।

খুঁজতেই থাকি, হাতড়াই, হোঁচট খাই! 

তবু পথ মেলে না কিছুতেই!

উম্মে হাবীবা শারিনা




 একটা তুমির অপেক্ষায়


আমি এমন একটা তুমির অপেক্ষায়। 

যে আমার এসিডদগ্ধ বা বসন্তের দাগে ভরা-

মুখে চুমু দিতে দ্বিধা না করে আদরে ভরিয়ে দিবে।

আর বলবে তুমি এত সুন্দর কেন?


আমি এমন একটা তুমির অপেক্ষায়। 

যে আমার ক্যান্সারে আক্রান্তে ঝরে যাওয়া লোম বা-

চুল না থাকলেও আমাকে ভালোবাসবে।

নিজে নেড়া হয়ে এসে বলবে,কারো সাহস হবে না- 

কিছু বলার। এই দেখ তোমার মত হয়ে এসেছি।

তোমাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি। 


আমি এমন একটা তুমির অপেক্ষায়। 

যে আমার হলদে খসখসে বা তেলে ছিটকে পড়া- 

হাত শক্ত করে ধরে বলবে,তোমার হাতের স্পর্শে-

আমার অস্তিত্ব ফিরে আসে।আমি নিজেকে খুঁজে পায়। 


আমি এমন একটা তুমির অপেক্ষায়। 

যে আমার চামড়া কুঁচকানো ফাটা পায়ে-

নূপুর বা আলতা পড়িয়ে দিয়ে বলবে, 

বাহ্ তোমার পায়ে খুব মানিয়েছে তো।

আলতো করে পায়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলবে,

আমার যে খুব ভালো লাগে এটা করতে।


আমি এমন একটা তুমির অপেক্ষায়। 

যে আমার কাজের মধ্যে ঘেমে যাওয়া অবস্থায়-

জড়িয়ে ধরে বলবে,এই তুমি এত খুশবু কেন?

আমি যে মাথাল হই।তোমার ঘাম মাখা শরীরে-

লেপ্টে থাকতে এত ইচ্ছে করে কেন?


আমি এমন একটা তুমির অপেক্ষায়। 

যে আমার বাহ্যিক সৌন্দর্য কে নয়,

আমার মনের সৌন্দর্য কে খুঁজবে।

আমার রোগকে,আমার অসুন্দরকে,

আমার বদঅভ্যাসকে,আমার সব খারাপকে 

আপন করে নিবে আর ভালোবাসাবে।


আমি বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, 

পথ চেয়ে রইবো,এমন তুমির আশায়।

অনন্তকাল তোমারই অপেক্ষায়। 

শুধু তোমারই অপেক্ষায় ।




স্বপন কুমার ধর

 



ভেসে চলেছি



নীল সমুদ্রে ভেসে চলেছি,

নির্জনতার ঢেউকে সঙ্গে নিয়ে,

হৃদয়ে রয়েছে সীমাহীন উত্তাপ,

বাইরে দাঁড়িয়ে বেদনার বুঁদবুঁদ।


চলেছি কোন অচিনপুরির দেশে,

একাকীত্ব হয়েছে চলার সাথী,

মেঘের মধ্যে মেঘ করছে আনাগোনা,

মনের মধ্যে চলছে অজস্র চিন্তাভাবনা।


ভরদুপুরে চলার সাক্ষী সোনালী রোদ্দুর,

উদ্বেল হৃদয়ে কেবল নীরবতার ক্ষতচিহ্ন,

পুলকিত হই যখন ভেসে ওঠে স্মৃতি,

কিন্তু ক্রমশঃ তা আবছা হয়ে মিলিয়ে যায়।


চলতে চলতে উদাস হয়ে যাই আর ভাবি,

সকলেই কেমন যেন ছুটে চলেছে,

একটু ভালোবাসা পাওয়ার তরে,

কিন্তু সে তো অদৃশ্য, অথচ

প্রত্যেকের অন্তরে বিরাজমান,

আত্মিকটানের অনুভূতিতেই,

থাকে সদা জাগ্রত।

শিবনাথ মণ্ডল

 



রক্তের স্বাধীনতা

  

  সূর্যসেন বাঘায‍্যোতিন

শহিদ ক্ষুদিরাম

বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন

বন্দেমাতরম।

বিনয় বাদল দিনেশরা

জীবন দিলেনদান

ব্রিটিশদের তারিয়ে দিয়ে

রাখেন ভারতের সম্মান।

গুলিখেয়ে মাতঙ্গিনী হাজরা

বলে বন্দেমাতরম

রক্ত দিয়ে লেখা থাকবে

স্বাধীনতার নাম।

বড়োলাডকে মারতেগিয়ে

মরল ভারতবাসি

অবিরামের দীপ চালোনা

ক্ষুদিরামের ফাঁসি।

হিংসাছাড়ো আন্দোলন

করেনগান্ধীজী

রক্তদাও স্বাধীনতা দেবো

বলেন নেতাজী।

স্বাধীনতা আনলো দেশে

হিন্দু  মুসলমান

কোটি কোটি বিপ্লবিরা

ভারত সন্তান।

পনেরো ই অগষ্ঠ দেশস্বাধীন হলো

পতাকা উঠলো আকাশে

বিপ্লবিরা জীবন দিলো

ভারতমাতাকে ভালো  বেশে।।

প্রেমাংশু শ্রাবণ

 



পরিভ্রমণ


নদীকে না বলে তার পাড়েই স্থাপন করি 

সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর। 

নদী দেখার আগে

দেখি প্রিয়ন্তীকে,প্রিয়ন্তী আমার প্রথম নদী-

অথৈ ইসকুল

হাবুডুবু পাঠে হাতেখড়ি

জীবনে ভোর সকালে।


আগুনের সাথে পরিচয় পাথরের।

সভ্যতার পায়ে লেগে গেল দৌঁড় গতি,

লোহার চাক।চাকা আবিষ্কার 

চক্রাকারে ঘোরা সেই থেকে শুরু,--

পরিভ্রমণ। 

ফুল,মধু ও ঘ্রাণে।