১৩ এপ্রিল ২০২১

শুভ্র ব্যানার্জি




 জট

সকালে ঘুম ভাঙলেই আপনার মনে পড়বে  একটা জাঁদরেল জট যা আপনি পাকিয়ে ফেলেছেন জীবনের সুতোয় তা আবার ছাড়াতে বসতে হবে।যদিও আগের দিনও ছাড়াচ্ছিলেন।আগামীতেও ছাড়াবেন।তার মানে 'যাচ্ছে দিন'।

না!তেমন যাচ্ছেতাই দিন আপনার নয় এবং সত্যি সত্যি দীন তো আপনি নন।তাই পরোক্ষ 

প্রচুর অসুবিধে থাকলেও 'বেলা হবে'।বেলা হলে রোদ উঠবে।বিকেলও হবে আবার রাত।

আবার কিছুক্ষণ স্বপ্নের জটলা।

একে তো চৈত্র মাস দারুণ এ সময়

 লেগেছে বিষম ভোট কী জানি কী হয়।

কালকে এক পার্টির অভিনেতা নেতার ভূমিকা পেয়ে পাড়া বেড়াতে এসেছিলেন।মুখে মিষ্টি হাসি।কী সুন্দর চেহারা।লাল টুকটুকে, সর্বহারার ব্যথা নির্ঘাত বোঝেন।

আজ আবার পাশের পার্কে ফুল ভলিউমে মাইক বাজছে।না সিনেমার গান না।সকলে কেন অত্যন্ত সুখে আছি সেই কথা মনে করিয়ে দেবার গান।আশ্চর্য নিম্নমানের লেখা ও সুর।তেমনই গায়কের কণ্ঠস্বর।মাঝে মাঝে বন্দেমাতরম পাঞ্চ করা আছে লিরিকের যেখানে সেখানে।

আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে কী বলব।আকাশে বাতাসে আনন্দ থৈ থৈ করছে।


করোনার লকডাউনে মানুষের স্বার্থে পুলিশ মাস্ক ছাড়া লোক দেখলেই কেলিয়ে বৃন্দাবন দেখাত।এখন করোনা নাই?নো মাস্ক। সব ঠিক হয়ে গেছে।ভোট কত বড় বালাই।লার্জার দ্যান লাইফ।আমি কে?মরি বাঁচি কার কী এসে গেল?লোক না পোক!ঠাকুর বলেছেন।

করোনা হোক আর ভোট হোক।জন্ম মৃত্যু তো লেগেই আছে।ওসব বিধাতার কোর্টের বল।

'মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি ভোটার'।যাহ!মিলল না।মিলল না মিলল তোদের .....তো ছিঁড়ল।

এতো সবের মধ্যে মজাটি হলো এই আকালেও দু একজন জুটে যাওয়া যারা জট খুলতে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।আপনার সন্তান ওই ছুট্টে এসে গলা জড়িয়ে একবার বাবা বলে ডেকে উঠল।

ঠিক মনে হবেই -কোথায় 'বেলা হবে' আর 'যাচ্ছে দিন'।আহা জীবন এসবের অনেক উর্দ্ধে রে পাগলা।চশমা নাকে লাগা,জট খুলতে বোস।

এক কাপ রেড লেভেলের ন্যাচেরাল কিওর চা বানাও রাখী,আমি ব্রাশ করে আসছি।


গদ্য 

মাহমুদা রহমান ( যুক্তরাষ্ট্র , নিউইয়র্ক )




জৈবিকঘাতক


এবার আমার আমিত্ব জানান দেবো ,

প্রবল অনুভূতির দীঘিটি যেনো বিরান ছিলো !

হৃদয়ের পড়ে থাকা পিপাসার্ত সেই তির্যক দৃষ্টি 

এখনো  তোমার ,

সময় বরফে ক্ষীণ হিমায়িত আচ্ছাদিত বুকের 

তুষার !

প্লাবনের তীব্র স্রোতে নির্গত  লাভার প্রয়োজনে 

একাকী  স্রোতস্বিনী  ,

তোমার অনুভূতির সুক্ষ স্নায়ুকণার ভেঙে যাক 

রীতির প্রাচীর !

বহুবছরের সুপ্ত প্রবল অনুভূতির বিশাল শুকনো 

দীঘিটি প্রবল আছড়ে আজ ,

আড়চোখে পুরোনো দৃষ্টিতে  দুর্বার পাবার !

ঠিক তাই হয়তো জমে আছে বিনিদ্রার  অফুরান 

ক্ষুধা ,

জৈবিক শেষ ভোজ বিক্ষিপ্ত নির্বোধ কেনো এ 

বিশ্বাসঘাতকতা ?

আইরিন পারভীন




আমাদের রাফিয়ারা


আমাদের অনেকের ছোটবেলা কেটেছে খুব সাধারন ভাবে।১৬ই ডিসেম্বর ও ২১শে ফ্রেরুয়ারী এবং ২৬শে মার্চ বা পহেলে বৈশাখ এইদিন গুলি উদযাপন করেছি সাধারন ভাবে ও যথাযোগ্য মর্যাদায়।  কিন্তু বর্তমানে পালন ও উদযাপন মনে হয় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। 


আমাদের সময় এই তারিখ গুলো পালনে বা উদযাপনে কোন বিশেষ ড্রেস কোড ছিল না। আজকাল ড্রেস কোড মেইনটেইন করতে হয়। যেমন রাফিয়ারা পাচঁভাইবোনের সংসার। বাবা চাকুরীজীবি। রাফিয়া এই অনুষ্ঠান উদযাপনে বাবার কাছে লাল সবুজ ড্রেস চাই কারন তার বান্ধবীরা সবাই পড়বে। তার মা উত্তর দিল কেন তোমাকে গেল বছর ১৬ই ডিসেম্বর এ লাল সবুজ জামা কিনে দেওয়া হয়েছে। অতএব আবার কেন??

রাফিয়া উত্তর দেয় ওটা দিয়ে হবে না ওটা সব বন্ধুরা দেখেছে এবং ফেইসবুকে ও ছবি দিয়েছি।


আসলে রাফিয়াকে একটা জামা দেওয়া খুব বেশী কিছু যে তা নয়। কিন্তু তার এই অহেতুক খরচ ও বখাটেপনা তার বাবা মা পছন্দ করছেন না। রাফিয়ার মা আমার বন্ধু তাই আজ সকালে ফোন করে মেয়ের এই বখাটেপনার কথা গুলো শেয়ার করলেন। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আচ্ছা আমরা কি এইদিন গুলি পার করিনি। ছবি আকাঁর প্রতিযোগীতা, দেয়াল পত্রিকা লিখন আরো কত কি করতাম। আমরা কিভাবে আমাদের প্রতিভা বিকশিত করবো তারই চেষ্টা ছিল আর আজ লাল সবুজের পোশাক পড়ে পার্কে পার্কে আড্ডা দেওয়া যেন বিশেষ দিনগুলির পালন ও উদযাপন।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান




জীবন‌বোধ



জীবন তো বু‌ঝি এভা‌বেই অনা‌দিকাল পর্যন্ত বহমান থাক‌বে একেবা‌রে মহাপ্রলয়ংক‌রের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। কখনও মে‌ঘে ঢে‌কে যা‌বে আবার সূ‌র্যের রোদ এ‌সে তা‌কে ক্ষে‌দিয়ে পদ্মা পার ক'র‌বে আবার হয়ত বা কোন দিন মেঘ ও রোদ দু'‌টোর যে‌কোন একটার প্রতাপ বা রাজত্ব দীর্ঘক্ষণ যাবৎ আকা‌শে দৃশ্যমান থাক‌বে। 


        জীব‌নের স্বল্পকালীন জমা মেঘগু‌লো স‌রে গে‌লেই হয়তবা জীব‌নের আকাশটা নীল হ‌য়ে পূ‌র্বের মত আ‌বিভূর্ত হ‌বে, শুভ্র রঙ্গীন আ‌লোয় যেন জীব‌নের দিগন্ত‌টি উদ্ভা‌সিত হ‌বে আর আমার-আপনার জীব‌নের সকল কর্মকান্ডগু‌লোও এ‌কেবা‌রে স্বাভা‌বিক হ‌'য়ে আস‌বে ধী‌রে ধী‌রে।


            আর এছাড়া জীব‌নের মেঘ য‌দি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় কিংবা এ‌কেবা‌রে নাইবা কা‌টে, কোন অসু‌বিধা তো হবার কথা নয়। যে‌হেতু, এই কষ্টগু‌লোর কশাঘা‌ত জীব‌নের বি‌ভিন্ন প‌রিস‌‌রে খে‌তে খে‌তে তা একপ্রকার যেন সহনীয় এক পর্যা‌য়ে এ‌সে আজ দাঁ‌ড়ি‌য়ে‌ছে।

                    

                বড় বড় কষ্ট, দুঃখ আর বেদনা সহ্য ক'র‌তে ক'র‌তে সেগু‌লো যেন আজ ন‌স্যির মত হ'য়ে গে‌ছে। আর যে বেপ‌রোয়া চ‌লে আর একলা চলা যার বহু আ‌গে থেকেই অভ্যেস গ‌ড়ে উ‌ঠে‌ছে তার কা‌ছে তো এটা কোন ক‌ষ্টের বিষয়ই নয় বরং তার কা‌ছে থোড়াই কেয়ার করার মত অবস্থা আর‌ কি! 


গদ্য

                                  

                      আর তাই সে বু‌ড়ো আঙ্গুল দে‌খি‌য়ে দে‌খি‌য়ে সোজা আ‌গে বাড়‌তেই পা‌রে আর বল‌তেই পা‌রে যে' "who cares" আ‌মি কা‌রো খাই না প‌রি না কা‌রো চাকুরী ক‌রি।

                                                 

                         

আস‌লে সৃ‌ষ্টিকর্তার না‌মে সদা পথ চ'ল‌লে কোন বিপদই বু‌ঝি বিপদ ম‌নে হয় না। তাই আমা‌দের জীব‌নের সকল চলার পথ শুরু হোক একমাত্র পরম করুণাময় সৃ‌ষ্টিকর্তা আল্লাহতায়া'লার না‌মেই।

সালমা খান

 


 

ডাকবাক্স



সেই তো উনিশ শতকের পর 

হতে, পড়ে আছি অযত্নে অবহেলায়,

অপেক্ষা করি দিনের পর দিন

মাসের পর মাস গড়িয়ে বছর,

কতকাল ডাকপিয়নের ডাক শুনিনা,

ডাকঘর বানিয়েছে ভৃমিঅফিস 

আমাকে ফেলে রেখেছে ময়লার স্তুপে।

জানো, অপেক্ষায় থেকে থেকে 

গায়ে মরচে পড়ে।

সুখ দুঃখ  ভালোবাসারা ছিলো

 এ ডাকবাক্সে ভরা 

খুব খাঁটি ছিলো আমাদের প্রণয় কথা

এ যুগের মুঠো ফোনের মতো

 সস্তা নয়,

আমার খসে পড়া জঙ ধরা দেহে

যদি মায়া হয় চিঠি দিও 

করুণা করে হলেও একটা চিঠি লিখো

তোমার যতো এলোমেলো 

ভাবনা আছে ,

ওখান থেকে একটা শব্দ তুলে দিও।

যদি ভাবনারা নাইবা আসে অন্তত ,

সাদা কাগজে তোমার আঙুলের স্পর্শ দিও।

যদি ভুল বানানে মাটিতে ছুঁড়ে  

ফেলো সমস্ত কাগজ 

ঐ ছেঁড়া কাগজের টুকরো টুকু দিও

মন থেকে শব্দেরা যদি মুছেও যায়, 

তবুও খামে ভরে দিও টকটকে 

কিছু গোলাপের পাপড়ি। 

ময়ূরের পেখম হতে নিও গাঢ় সবুজ রঙা নীল পালক,

প্রজাপতির ফোটা ফোটা পাখনা হতে হাজার বুটি টিপ ।

সূর্য থেকে চেয়ে নিও রোদে ভেজা এক ফোঁটা শিশির,

না হয় দিও ভোরে ডাকা দোয়েল পাখির শিষ

ভুল করে হলেও ভুলে চিঠি দিও

খামে,

মিথ্যা করে হলেও, বলো ভালোবাসা নিও।

ওয়াহিদা খাতুন "গজল"




রমজানের খশবু



রমজানেরি খশবু এলো পাপেরি ধরায়,

আদর করে চুমে নেরে মাখরে সারা গায়;

হৃদয় খুলে যে যা পারিস দুহাতে দান কর,

জ্বিন,ফেরেশতা খুশিতে আজ সিজদাতে লুটায়!

রমজানেরি খশবু এলো পাপেরি ধরায়!


মর্জিমতো চলাফেরা ছেড়ে দে সবাই ;

রোজার মাসে যাদের ঘরে খাবার টুকু নাই,

খুরমা,খেজুর কেনার মতো পয়সা যাদের নাই,

দুঃখী জনের মুখে হাসি ফোটা ভালোবাসি, 

নিজেকে আজ বিলিয়ে দে  তাদেরি সেবায়!

রমজানেরি খুশবু এলো পাপেরি ধরায়!


বেহেশতে আজ যেতে যে চাস মওলারি দরবার ;

শুকিয়ে থেকে রোজা রেখে ফায়দা হবেনা,

সাচ্ছা মনে না চলিলে কিছুই হবেনা,

অন্ধ হয়ে অহংবোধে ভুল পথে না চলে;

চক্ষু খুলে দেখবো আগে শরীয়ত কি বলে;

রোজার মাসে তওবা করো থাকতে রে সময়!

রমজানেরি খুশবো এলো পাপেরি ধরায়!

আদর করে চুমে তারে মাখরে সারা গায়!!


রচনাকালঃ-১৩/০৪/২০২১ রাত ৯টা ২১ মিনিট।