০৫ মার্চ ২০২১

সুচিতা সরকার




তুমি শুধু তুমি



যান্ত্রিক শরীরটাও মাঝে মাঝে প্রাণ পায়,

খাঁচার হলুদ পাখিটা যখন তোমার নাম নেয়..

হাজার বছর বৃষ্টি তো হয়নি কোথাও,

তবু ভেজা মাটিতে মিশে, তোমার গন্ধে বুকটা ভরে যায়...


প্রজাপতির ডানায় চেপে তোমার শব্দগুলি ভিড় করে আমার ছোট্টো আঙিনায়,

জুঁই ফোটায়, শিউলি ফোটায়, আমার পলাশের গায়ে ফাগুনের রঙ ধরায়...


সুতোটা বড্ড নরম, তবু শক্ত বাঁধনে জড়ায় শুধু জড়ায় আমায় ..

কোথাও কিচ্ছু নেই, তবু ময়ূরপঙ্খী ভেসে ওঠে মৃত স্বপ্নদোলায়...


বেইমানির হাত ধরে যখন ভাড়াটে নিঃশ্বাসেরা হাঁটতে চায় অচেনা দিশায়...

চোখের অতল গভীরে থাকা তোমার মুখখানি হৃদয়ে নব স্পন্দন যোগায়...

মুন চক্রবর্তী

 



প্রজ্ঞা সুন্দরী


খেতের ফসলের মত বিস্তৃত হয়ে আছে মানবী কথা

উননের ধোঁয়ায় কিংবা সেটেলাইটে জাহ্নবী অবলোকনে

খুঁজতে চেয়েছিল সমার্থক শব্দের বিকেলের আকাশ

মেঘে মেঘে অন্ধকার না অন্ধকার মনের মেঘের ঝড়!

সাদা শাড়িটির সম্ভ্রম রাখতে পারার দায় শুধু প্রজ্ঞা সুন্দরীর।

ফসল কেটে নিয়ে গেছে বাজারে মূল্যের বিনিময়ে

হাত বাড়লেই যে সৌন্দর্য কেনা যায় নিলামে

সোনার অলংকারে ঢাকা যায় জীবন বোধ

মাটির ৠণ শোধ করতে পারেনি কোনো মহাকাল

ফসলে ফসলে লিখে রেখেছে প্রজ্ঞা সুন্দরী মায়াবী স্নিগ্ধতা।

ওয়াহিদা খাতুন




সনেট সামাজিক ব্যধি 



মিথ্যা ত্রাসে মরি শুধু সমাজের ভয়ে;

বিকৃত সমাজে কিবা আছে গ্রহণীয়--

জ্ঞানচক্ষু দিয়ে দেখো সব বর্জনীয়--

অশ্রু ঢেকেও হাসতে হবে জ্বালা সয়ে;

এ কী মারণযজ্ঞ নেশাতে আছি বাঁধা--

বিবাহ নামে এক নারকীয় যন্ত্রণা ;

পৈশাচিক কুটুম্বের হিংস্র কূমন্ত্রণা;

হাজারো সংস্কারের কিযে গোলকধাঁধা !


বৈষম্যের ঘুর্ণিপাকে অহর্নিশি জ্বলি--

মৎস্য কণ্টকের ন্যায় ওষ্ঠাগত প্রাণ ;

শ্বাসাঘাতে গেঁথে নিয়ে করি আনচান ;

ন্যায়ের দন্ডেও আত্ম,স্বার্থ-দলাদলি--


 সামাজিক ব্যধির কবে হবে উৎখাত--!

এ ব্যধি-পরে কেনো হয়না বজ্রপাত--!

বাহাউদ্দিন সেখ


 

সিগারেট


গৃহ বসত রাস্তা পথে দেখি আজ অশুদ্ধ বায়ু কুয়াশা ওরে ধোঁয়ার ধূম

যেথায় সেথায় সিগারেট খৈনি চুন মাখানো তামাক পাতা মানুষ ক্ষুধার উপশম।

সিগারেট গম্ভীরে পরিজনে লাগে দ্বন্দ্ব বিবাদ তবু সিগারেট খায়

শুষ্ক রোগা দুর্বলতা ক্যান্সার ধরা তবু দোক্তা শুকনো তামাক পাতা নেশা মসলা চাই।

পৃথিবী ধরাতে রোগ মৃত্যু দেহধারণ ভরা মানুষ সিগারেটের অন্ধকার

মানুষ মৃত্যুর পরে চলে কান্নার হৃদপিন্ডের স্পন্দন শব্দের হাহাকার।

ছোট-বড় দেখি আজ তামাক পাতা সকল বসে সিগারেট ধোঁয়া খায়

তড়বড় সিগারেট অতিরিক্ত নেশাতে ব্যস্ততা প্রকাশ তখুনি ক্যান্সার ধরা পায়।

ফরমান সেখ




নৌকা চলে সাগর জলে


নৌকা চলে  সাগর জলে

   একূল-অকূল বহে,

তারি ওপর  মাঝি সে আর

       দাঁড়ে পালে রহে।


উপরে পাল  ভাসায় পাখা

    নৌকা খানি দোলে,

দাঁড়ের ইজ্জত  দেয়না কভু

     অহংকারে ফোলে।


নিচের তলায়  দাঁড় যে একা

    খাটে সারা বেলা,

সহ্য করে   পালের কটূ

    নানা রকম জ্বালা।


দাঁড়ে পালে  ঝগড়া করে

    সকাল-দুপুর-রাতে,

মাঝি সদাই   নিরপেক্ষ

   থাকে দুয়ের সাথে।


নৌকা খানি  নিরুপায় সে

     অচল তাদের ছাড়া,

নীরবে তাই  পড়ে থাকে

    দেয়না কভু সাড়া।


     

স্বপন কুমার ধর



 বলোতো এবার ভেবে


ভাবো আমরা আছি,

দুজনেই কাছাকাছি।

বাস করছি প্রাচীন দিনে,

থাকছি আগুন বিনে।

রয়েছি বাকল পড়ে,

ঘুরছি বনে পাহাড়ে।

আদম-ইভস্ এর জীবন,

নেই কোন প্রদূষণ।


ব্যস্ত থাকছো কী তুমি,

দেখতে সিরিয়াল, দূরদর্শনে।

এসেছে কী কখনো ধ্যানে,

মন দিতে হবে জন্ম নিয়ন্ত্রণে।

সাধ হচ্ছে কী প্রানে,

বিলাস ব‌্যসন জীবন যাপনে।

মানুষ কী রয়েছে বিভক্ত,

জাত-পাত-ধর্মের বিভাজনে।

হাতে আছে কী সদা,

চলমান দূরাভাষ।

আছে কী কোন ব্যবস্থা,

দিচ্ছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।


বলো তুমি এবার ভেবে,

সত্যি কথাটা তবে,

আমরা আধুনিক হচ্ছি যত,

প্রয়োজন কী বাড়ছে না তত!

অলোক দাস


 


আশীর্বাদ 

  আমার বাতির আলো অতি ক্ষীণ I দেয় আলো ঠিকই, তবে বেশিটাই ছায়া I আমি ভাবের কাঙাল - তিনি ছিলেন ভাব জগতের রাজা I কোন ভাবটা  চাই, তিনি জানতেন I এ বাতি নিভিয়ে দিলেম, কে দেবে আমায় ভাব? সেতো আজ পাশে নেই I খালি একটা কথা, কাজের মধ্যে থাকবেন I কবিতা লিখুন, কবিতা II তাঁর আলো এখন মেলে দেবে তোমাকে আমাকে I জীবনের রথ যিনি চালান, তিনি দেখিয়ে দেবেন পথ I কার কোথা অনুসরণ I তাঁর আশীষ মাথায় নিলাম I সুখ কি? দুঃখ কি? জানিনে আজিও I এখন শুধু কাঁটার পথ ধরে চলা I চলাই জীবন I থেমে থাকা নয় I হয়তো আনন্দ আছেই I দেখা যাক, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি I ইচ্ছের ডানা মেলে মুক্তির আস্বাদ পেতেই হবে I

মো.শফিকুল ইসলাম শফিক




জাগো বঙ্গবাসী



কৃশানু হস্তে দাঁড়াও ঘুরে ঠেকাতে ব্যাবিচার,

মুখ-বুজিয়া সইবে কতো নির্মম অত্যাচার?

বিত্তশালীরা ঈশ্বর নয়ে পূজায় দেবে স্থান!

জাগো হে জাগো, হে বঙ্গবাসী ধরো অশুর কান।


আর ক'' দিন মুক্তশালায় বন্দির মত রবে!

আর ক'' দিন ইচ্ছাঅধীন অন্যের কথা কবে?

আর ক'' দিন দেখবে চুপ মিথ্যাচারীর জয়,

আর ক'' দিন দেখবে মিছে ন্যায়ের পরাজয়? 


আমার দেশে সাধুর বেশে শাসক কালো হাত

সোনালী দিন বিলীন করে হানছে ধ্বংস ঘাত!

সত্যেকে আজ মারছে ফাঁসে মিথ্যাচারী কাড়ায়,

নাই কি তবে বীরের সেনা বুক পেতে দাঁড়ায়?


নিগ্রহভয় করিনা আমি সত্যেকে ভাই বুঝি

আঁধারে মিশে আঁধারগ্রহে আলোরশিখা খুঁজি।

ডরিনা কারা অনলপাড়া চরণে যাই পিষে

আমিতো মরি প্রতি নিঃশ্বাসে ন্যায় হারানো বিষে।


মিথ্যার কাছে হবে না নত সত্যের উচ্চ শির

উদিবে ফেরে সত্যেসুরুজ

সর্বপ্রকার ঘির।

জানিনে কবে হতেও পারে এ'লেখা ইতিহাস,

আমিতো লিখে যাবো-ই যাবো 

ভ্রান্তের সর্বনাশ।

মোহাম্মদ সোহেল রানা




 বিষাক্ত প্রেম


আমি চাই না আর এই 

ছলনার বিষাক্ত প্রেম, 

যে প্রেমে চিত্তে জ্বেলে দেয় 

দহন!পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে 

আমার একাকিত্বের শহর।


প্রণয়ে যদি হবেই ক্লেশ তাহলে 

তো দিনে দিনে বাড়বেই র্লেশ!

প্রেম বিষাদ চিত্তে শহরের 

দাউ দাউ করে জ্বলে পুড়ে,

প্রেমে কেন লক্ষ্য মানব 

হয়ে যাচ্ছে তব ভবঘুরে।


ভালোবাসার বেদনায় যদি

 হয় চিত্ত ঘরে বিষাক্ত নীল,

তাহলে যে মেরে দিতে হবে 

হৃদয় ঘরে একটি শক্ত  খিল।


চিত্ত ঘরে ঢুকে যদি

 হয় বিষাদের ছড়াছড়ি 

হৃদয়টা অঙ্গার না করে 

একা একা থেকে সুখেই মরি।


মানুষ রূপে জন্ম নিলে এই পৃথিবীতে 

মৃত্যু তার নির্ধারিত এই ভবের দুনিয়াতে,

সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে আজ বা কাল

সবাইকে ছেড়ে যেতে যে হবে।


ভালোবেসে যদি কারো সাথে

 না হয় আত্মার সনে মিল,

দিন যাবে সন্দেহ হবে প্রবল চিত্তে

 উঠবে হাহাকার ছুড়ে দিবে বেদনার ঢিল;

কেন অযথা প্রেমের চিত্তে ঝরে 

পড়িস অসুখের অজস্র শিল।

ফিরোজ আহমেদ জুয়েল


 


মুক্তি


পরাধীনতার শিকলে বাঁধা,

বন্দি এ জীবন,

মুক্তি পেলেও রুদ্ধ হৃদয়,

আজি সময়ের ক্ষেপন।


স্বাধীন চেতনায় বাঁচার লড়ায়ে,

বদ্ধ এ স্পন্দন।

অটুট ব্যক্ততায় জলান্জলি আজি,

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।


ওরা চেয়েছিল নিতে এ প্রান,

রেখেছিল করে রুদ্ধ;

পারেনি তারা পারবেনা কভু,

চিত্তকে করে আবদ্ধ। 


বাঁচার জন্য ছিলো মিনতি,

শুনেছিল কঠোর উক্তি;

লান্হিত উপহার পেয়ে সমাহার,

অবশেষে মিলেছে মুক্তি।


ব্যস্ত শহরের চেনা মুখগুলি,

আজ বড় অচেনা;

নিস্প্রান দেহে হয়নি ফেরা আজোও,

আপন ঠিকানা।


সহসায় হবেনা মুক্তি যেখানে,

নিবেদিত সমর পণ;

তবুও পথ চলতে হবে,

প্রাণহীন এ জীবন।


ফেলা আসা স্মৃতির নিস্তেজ বাঁধন,

চিত্ত আহত করে;

দিতে হবে পথ বহুদুর পাড়ি,

দুঃস্মৃতিকে সঙ্গী করে।


জীবন চলার সঙ্গী যদি হয়,

নিত্যদিনের কদুক্তি;

অজানায় পথ পাড়ি দিয়ে হোক,

শেষ জীবনের মুক্তি।