১৮ ডিসেম্বর ২০২১

শামরুজ জবা




মনভ্রমর


আমার ঘরের দরজাতে কেন?
ইচ্ছে হলে দেখে যেতে পারো 
কত যত্নে আছো এই বুকে;
আমার হয়ে এসো - প্রিয়তম 
জীবন কাটে কাটুক, 
শূন্য রিক্ত হাতে, খালিপেটে ধুঁকে ধুঁকে। 

তুমি শুধুই আমার হবে শুধুই আমার 
ধরো; 
পেতেছি তো আমি এই বুক 
খুলে দিলাম মনের যতো দ্বার 
রেখে দিও ভালোবাসা 
যত খুশি দিতে পারো ধার। 

তোমায় আমি ভালোবাসি ঢের
বুঝবো যখনোই ভুল 
তোমার জন্য বুকের ভেতর 
ফোটাবো অজস্র ফুল। 

ভালোবাসো আর নাই বাসো 
শুধু এইটুকু মনে রেখো, তোমাকে কতটা ভালোবাসি, নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো।

তোমার নামে লিখবো দিন
তোমার নামেই রাত, 
মনের ডাইরি মাথায় রেখে
যাক না চলে জাত।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান/৯ম পর্ব





ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন
( ৯ম পর্ব ) 
মোঃ হা‌বিবুর রহমান

অতঃপর প্লেইন থে‌কে নামার হুকুম হ‌লো। নামলাম পু‌রোটাই মি‌লিটারী কায়দায়। অধীনস্ত‌দের সু‌যোগ ক‌'রে দিয়ে আমরা প‌রেই নে‌মে‌ছিলাম। যতদূর ম‌নে প‌ড়ে বিমান বন্দ‌রে ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো প্র‌শিক্ষণ কেন্দ্র থে‌কে আমা‌দের জন্য গন্ডা চা‌রেক স‌ুন্দর স‌ুন্দর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাস পাঠা‌নো হ‌'য়ে‌ছি‌লো ক‌য়েকজন সা‌র্জে‌ন্টের নের্তৃ‌ত্বে। আমার আজও ম‌নে প‌ড়ে সেই অত্যাধু‌নিক এ‌সি বাসগু‌লোর অভ্যন্ত‌রে আধু‌নিক সু‌যোগ-সু‌বিধার পর্যাপ্ততার কথা। স‌তিই চমৎকার! দীর্ঘ ২৭ বছর পর আমা‌দের বাংলাদে‌শেও অবশ্য বেশ সুন্দর সুন্দর বাস আজকাল রাস্তায় নে‌মে‌ছে।

সেনাবা‌হিনীর পদ্ধ‌তি অনুযায়ী জনব‌ল ও অস্ত্রপা‌তির হিসাব-‌নিকাশ পুরামাত্রায় নেবার পর পরম করূণাময় আল্লার না‌মে আমা‌দের এবারের স্হলযাত্রা শুরু ক'রলাম। আমা‌দের এখনকার গন্তব্যস্হল মি‌লিটারী প্র‌শিক্ষণ‌ কেন্দ্র, ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো। বাই‌রো‌ডে ঘণ্টা চা‌রে‌কের রাস্তা হ‌বে। আমা‌দের বাসগু‌লো যেন পিঁপড়ার মত সা‌রিবদ্ধ হ‌'য়ে সমগ‌তি‌তে গন্তব্যস্হ‌লের দি‌কে ছু‌টে চ‌'লে‌ছে একবা‌রে সমান-সমান দূরত্ব বজায় রেখে। 

সূ‌র্যি মামাও বোধ ক‌রি নিজ বা‌ড়ি‌তে যাবার উ‌দ্দে‌শ্যে আ‌স্তে আ‌স্তে অ‌তি ধীর পদক্ষে‌পে তার তাপমাত্রা ক'মিয়ে দি‌য়ে‌ছে। রাজপ‌থে চ‌'লে‌ছি আর হা ক‌রে অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে রাস্তা এবং রাস্তার  দু'পা‌শের প্রাকৃ‌তিক সৌন্দয্য দর্শ‌নে আমরা সর্বদাই ব্যস্ত ছিলাম। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! চোখের পলক যেন আর প‌ড়েনা। ম‌নে ম‌নে বল‌ছিলাম যে, হে আল্লাহ্, এ কোন দে‌শে, কোথায় আসলাম? 

যে‌দি‌কেই চোখ যায় সে‌দি‌কেই দে‌খি সবু‌জের সমা‌রোহ যেন রাস্তার এপাশে-ওপাশে সবু‌জের মেলা ব‌সে‌ছে। আমা‌দের দেশ সবু‌জের দেশ হওয়া স‌ত্বেও ম‌নে হ‌'চ্ছিল এ‌দের সবু‌জের কা‌ছে আমা‌দের সবুজ যেন কো‌নো কোনো সময় ফি‌কে হ‌'য়ে যাচ্ছিল। রাজপথটা ওয়ানও‌য়ে মেটাল রোড এবং ৫/৬ লেন বি‌শিষ্ট, যেন শিল্পীর তু‌লি দি‌য়ে এই রাজপথ‌কে অতি সুচারুরূ‌পে মা‌র্কিং ক‌'রে অত্যন্ত সয‌ত্নে রোড-সাইনগু‌লো আঁকা হ‌'য়ে‌ছে সেগু‌লোর কথা ম‌নে পড়লে ম‌নে হয় যেন জে‌গেই স্বপ্ন দেখ‌ছি। 

এতক্ষণ যত জীপ বা কার দেখে‌ছি আ‌মি এর কোন চাল‌ককে ম‌হিলা ছাড়া পুরুষ দেখি‌নি। ভাবলাম, এ আবার কোন দেশে এ‌সে হা‌জির হলাম? বড্ড তাজ্জ্বব এদেশ বাবা! এমন দেশও যে পৃ‌থিবী‌তে থাক‌তে পা‌রে তা কস্মিনকা‌লেও ভা‌বি‌নি বা ই‌তিপূ‌র্বে দে‌খি‌ও‌নি। রাস্তার দু'পাশ দিয়ে চ‌'লে‌ছি আর তাই একবার ডা‌নে আর আ‌রেকবার‌ বামে তাকা‌তে তাকা‌তে ‌যেন দু‌'চোখ হয়রা‌ন হ‌'য়ে গে‌লো। 

ভাবলাম, এজন্যই বু‌ঝি আল্লাহপাক সৃ‌ষ্টির সব প্রাণী‌কে বাদ দি‌য়ে মানুষ‌কেই সৃ‌ষ্টির সেরা জীব হি‌সে‌বে ম‌নোনীত ক‌'রে তা‌দের‌কে সেই প‌রিমাণ হিকমাহ বা জ্ঞান দান ক‌'রে‌ছেন। আস‌লে দ্বিপদী মনুষ্যজা‌তির প‌ক্ষে সবই সম্ভব। পড়ন্ত বেলায় বি‌ভিন্ন বয়সী ছে‌লেমে‌য়ে, যুবক-যুবতী, প্রৌঢ়-‌প্রৌঢ়া ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অসম বয়‌সের মানু‌ষেরা রঙবেরং‌য়ের বাহারী কাপড়-‌চোপড় প‌রে হাটাহা‌টি, খেলাপাগল মানু‌ষেরা নানান ধর‌নের খেলায় কিংবা জ‌গিংএ মহাব্যস্ত। হায়, আপ‌শোস্! আমরা বাঙালীরা কেন এদের ধা‌রের কা‌ছেই নেই? এ‌দের মত এত স্বাস্হ্য স‌চেতন মানুষ আ‌মি আর কোনদিন দে‌খি‌নি।

‌গোধুলীর ঠিক পূর্ব মূহু‌র্তের রোদ‌কে আমরা অ‌নে‌কে শেষ রোদ ব‌লে আখ্যা‌য়িত ক‌রে থা‌কি, এই রোদ মানু‌ষের অবয়‌বে বা শরী‌রের কোন জায়গায় প'ড়‌লে যে কোন মানুষ‌কেই বু‌ঝি বেশী-বেশী আকর্ষনীয় ব‌'লে প্র‌তিভাত হয়। পো‌র্টো‌রি‌কোর সকল মানু‌ষ তথা ছে‌লেমে‌য়ে নি‌র্বি‌শে‌ষে বেশ সুশ্রী ও সুন্দর দেখ‌তে এবং সেইসা‌থে তা‌দের বেশভূষাও বেশ আকর্ষনীয় ব‌টে। 

রাস্তার দু'পা‌র্শ্বে সুন্দর সুন্দর দোকান এবং সেগু‌লোর অ‌ধিকাংশই কাঁ‌চের তৈরী ও আধু‌নিকতার য‌থেষ্ট ছাপ আ‌ছে। বি‌ভিন্ন বয়সী লোকজ‌নের দোকা‌নে ভিড় জমা‌নো দে‌খে বার বারই ম‌নে হ‌'চ্ছিল যেন বছ‌রের বা‌রো মাসই এ‌দের বৈশাখী মেলা চ‌'লে। অ‌তি চমৎকার সে দৃশ্য কেউ নি‌জের চো‌খে না দেখ‌লে বু‌ঝি কল্পনা করাও অসম্ভব। 

সাই সাই ক‌'রে আমা‌দের এ‌সি বাসগু‌লো ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গোকে লক্ষ্য ক‌'রে যেন ছু‌টে চ‌'লে‌ছে, এরই ম‌ধ্যে চালক বরাবর বা‌সের সাম‌নে তাকালাম। কিছু কিছু কার বা ছোট ছোট যানবাহন অ‌ধিক দ্রুতগামী হওয়ায় লেন প‌রিবর্তন ক‌'রে আমা‌দের বাস ওভার‌টে‌ক ক‌'রে আমা‌দেরকে দ্রুত পিছু ফে‌লে যেন জানা‌তে চা‌চ্ছিল "তোমরা বঙ্গ‌দেশ থে‌কে এ‌সে‌ছো, ধী‌রেসু‌স্থেই আ‌সো, আ‌স্তে আ‌স্তে এ‌দে‌শের সা‌থে প্রথ‌মে নি‌জে‌দের‌কে মানাও, খাপ খাওয়াও তারপর আমা‌দের মত ক‌'রে চ‌লো"। হঠাৎ ক‌রেই অতীব নয়না‌ভিরাম দৃ‌শ্যের অবতারনা হ‌লো। কি মজা! প্রকৃ‌তির সব সৌন্দ‌র্যের সমা‌রোহ বু‌ঝি এখা‌নেই ঘ‌টে‌ছে।
 
আমা‌দের বা‌মে তাকালাম, দেখ‌ছি সমু‌দ্রের সমান্তরা‌লে আমর‌া চলা শুরু ক‌'রে‌ছি। সমু‌দ্রের পাশ ঘে‌ষে রাস্তা সমান্তরালভা‌বে চ‌'লে‌ছে, আল্লাহ্ না করুক, য‌দি চালক একটু অসাবধানতাবসতঃ গাড়ী চালায় ত‌বে আমা‌দের যে‌কোন সময় সমুদ্র স্না‌নের একটা সম্ভাবনা‌কে বু‌ঝি আমরা উ‌ঁড়ি‌য়ে দি‌তে পা‌রবো না। পাকা রাস্তার সমান্তরা‌লে সমু‌দ্রের কিনারা দি‌য়ে স্পীডবো‌টের সমা‌রোহটা বেশ চো‌খে পড়ার মত এবং ম‌নোমুগ্ধকর ছি‌লো। দেখ‌তে দেখ‌‌তে কখন যে চারটি ঘণ্টা খরচ ক‌'রে ফে‌লে‌ছি তা ‌যেন একদমই ঠাহর ক'র‌তে পারি‌নি। সন্ধ্যা সমাগত প্রায়, সূ‌র্যিমামা টাটা দি‌য়ে নিঃশ‌ব্দে এইমাত্র বিদায় নি‌লো। আমা‌দের বা‌সের গাইড সা‌র্জেন্ট সা‌হেব হঠ‌াৎ ক‌'রেই দাঁ‌ড়িয়ে বল‌লো, 

"Sir, we have reached to Camp Santiago, I welcome you here at Camp Santiago. Sir, you may kindly get down from the bus and Sergeant Bright is here to guide you further, he will show your accommodation, dinning hall and other allied facilities you are going to enjoy during your 15 days stay here". 

অতঃপর, আমরা বাস থে‌কে নে‌মে  অন‌তিদূ‌রে আমা‌দের জন্য নির্ধা‌রিত আবাসস্হ‌ল, অ‌ফিসার মে‌সের দি‌কে পদব্র‌জে যাত্রা শুরু ক'রলাম। 

চল‌বে.....

শান্তা কামালী/৪৪ তম পর্ব





বনফুল 
( ৪৪ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

পলাশের বোনের চোখেও পানি জুঁই যেন পাথর হয়ে গেছে। একটুও পানি নেই ওর চোখে।কিন্তু জুঁই য়ের আম্মুর চোখ ছলছল করছে। সবার কাছে বিদায় নিতে নিতে সবার শেষে পলাশ এলো জুঁই য়ের কাছে। জুঁই পলাশের বাঁহাতের কড়ে আঙুল টা ধরে মুখের কাছে এনে কচ্ করে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো, আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে নজর দিতে পারবে না। আমি তোমাকে দেগে দিলাম, তুমি শুধুই আমার, আমার, আমা.... আর বলতে পারে না।দুচোখে রুমাল চাপা দিয়ে তার আম্মুর কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। 

পলাশ এগিয়ে যায় তার বডি চেকিং করে ফ্লাইটে ওটার জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেলের দিকে। 
এরপর সবাই চলে আসেন রানওয়ের থেকে অনেক টা দূরে একটা ঘেরাটোপে, সেখান থেকে তারা মাল্টা যাত্রার এয়ারক্রাফট কে হাত নেড়ে যাত্রা পথ সুগম হওয়ার বার্তা জানায়।ফ্লাইট ধীরে ধীরে রানওয়েতে তার দৌড় শুরু করে হঠাৎ মাটি ছেড়ে ডানা মেলে আকাশে। মুহুর্তে ফ্লাইট উঠে যায় সাঁইত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায়। একটা ছোট্ট চড়াই পাখির মতো দেখাচ্ছে সেটা কে।
যাত্রা পথে সে মাটি ছোঁবে কলকাতা, দিল্লি।তারপর তুষারশৃঙ্গ হিমালয় কে ডিঙিয়ে ভূমধ্যসাগরের নীল জলের বুকে মাল্টা'র মাটিতে করবে যাত্রা সমাপন।

ভারাক্রান্ত মনে সবাই আবার গাড়ীতে গিয়ে বসলো, বাসায় ফিরতে হবে তো।

চলবে.....

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৩৫




কশায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৩৫)
শামীমা আহমেদ 

-----মা'কে কেবিনে শায়লার সাথে  রেখে রাহাত সারারাত কেবিনের বাইরের লবিতে বড় সোফাটায় বসে রইল। মাঝে মাঝে ঝিমুনিতে ঘুমে ভেঙে পড়ছিল। সারাদিনতো কম খাটুনি যায়নি! যদিও একজন পুরুষের জন্য এই খাটুনিটা খুব একটা বেশি কিছু না। কিন্তু শায়লাকে নিয়ে রাহাত যে ভীষণ  ভয়টা পেয়েছে তা ভেবে বারবার তার গা শিউরে উঠছে! রাহাতের জীবনে সে তার আপুকে কোনদিন একটুও  জ্বরে পড়তেও  দেখেনি।আপু সারাজীবন অফিস  আর বাসা, বাসা আর অফিস করেছে।এই ছিল আপার জীবনের গন্ডী। নাহ! খুব বেশিই  চাপ নিয়েছে  আপা।  রাহাত বারবার একই কথা ভাবছে। আপার প্রতি তার এই উদাসীনতা দেখানো একদম উচিত হয়নি।আপার প্রতি  তার অনেক অবহেলা ছিল। সব কাজ আপু উপর চাপিয়েছে। বাড়ির ছেলে হিসেবে তার কিছু দায়িত্ব নেয়া উচিত ছিল। রাহাত ঠিক করলো ইনশাআল্লাহ আপু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে আপুকে এত কাজের চাপ থেকে রেহাই দেয়া হবে।  রাহাত নিজের ভেতরে কাজের একটা ছক তৈরি করে নিল।বাড়ির বাজার, ইউটিলিটি বিলস আর যাবতীয় কিছু এখন থেকে নিজেই দেখবে। 
মায়েরও বয়স হয়েছে।তার দিকটিও দেখতে হবে। রাহাত আজ বুঝলো আসলেই সে দায়িত্ব  নেয়ার মত বড় হয়েছে।মা আর আপু চিরকালই তাকে আদরে আহ্লাদে ছোট বানিয়ে রেখেছে।
 রাতে শায়লা একটু সুস্থ বোধ করেছিল।মা আর রাহাতের সাথে একটু কথাও হয়েছে। আপুর মুখের হাসিতে 
রাহাতের কাছে মনে হয়েছে  যেন ফুল বাগানের ফুলগুলো  হাসছে! ডাক্তারের এডভাইস মত শায়লাকে সহজপাচ্য খাবার চিকেন সুপ এনে খাওয়ানো হয়েছে। রাহাত লজ্জায় অনুশোচনায় আপুর চোখের দিকে তাকাতে পারছিল না ।সবকিছুর জন্য  মনে করছে সেই দায়ী। আমাদের বাঙালি  সমাজে ছেলেরাই সংসারের দায়িত্ব নিবে আর বোনরা নিশ্চিন্ত  মনে স্বামীর সংসার করবে। এটাই যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে।আপুর জন্য এ বিষয়টি অনেক দেরি হয়ে গেছে।জীবনের একটা সময়ে  পরিবারের আপনজনের চেয়েও অচেনা অন্য একটা মানুষ বেশি আপন হয়ে উঠে।এটাই প্রকৃতির  নিয়ম।তার ভালবাসা মায়ার টানে পিতৃকুল তখন অনেক দুরের হয়ে যায়।আর তা এমনটি না হলে  পিছুটানের মায়ায় কেউ সামনে এগুতে পারতো না। আপুকে যখন রাহাত স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছিল তখন আপুকে মনে হচ্ছিল ঝড়ের দাপটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে  পড়া ভীত সন্ত্রস্ত একটা ছোট্ট পাখির ছানা। সে যেন কারো নিবিড়  সান্নিধ্যের আশ্রয় খুঁজছে। আপুর চোখ দুটোতে কি যেন না বলা কথা ভীড় করে আছে। আপু কাকে যেন খুঁজে  ফিরছে।রাহাত বুঝতে পারছে আপুর ভেতরে এমন কিছু ঢাকা দেয়া আছে যা সে খুব সন্তর্পনে লুকিয়ে রেখেছে। কোন ভাললাগা অনুভুতিকে আড়াল করে রেখেছে। কোন স্পর্শের অপেক্ষায় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।এমন কোন অজানা কথা যা আপু মুখ ফুটে  না বললেও চোখ মুখ তা প্রকাশ করতে চাইছে! 
আপুকে স্যুপ খাইয়ে  টিসু দিয়ে খুব যত্ন করে আপুর মুখটা মুছে দিলো। আপুকে একটু পানি খাওয়ালো।ভাইয়ের এমন যত্ন পেয়ে শায়লা যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছিল! রাহাত  আপুর চুলগুলো ঠিক করে দিলো।মা হাত পা বুলিয়ে দিলো।মা কেঁদে কেঁদে  আকুল হলো। যেন আরেকটু হলেই শায়লাকে সে  চিরতরে হারিয়ে ফেলছিল! রাহাত নার্সকে ডেকে রাতের ঔষুধগুলো খাইয়ে দিতে বললো। ঔষুধ খেয়ে শায়লা টুপ করে ঘুমিয়ে পড়লো।সম্ভবত ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে। বাসা থেকে রুহি খালা রাহাত ও  মায়ের জন্য খাবার পাঠিয়েছে। মাকে অনেক অনুরোধ করে রাহাত খাওয়ার জন্য রাজী করালো।নিজেও কিছুটা খেয়ে নিলো। মাকে আরেকটি বেডে রেখে কেবিনের লাইট অফ করে রাহাত বাইরের সোফায় এসে বসলো।
রাহাতের হাতে দুটো মোবাইল ফোন ধরা। একেবারেই খেয়াল করা হয়নি। একটা ফোন শায়লার। হঠাৎ মনে পড়লো সন্ধ্যায় তো আপুর ফোনে একটি মিসড কল হয়েছিল।কলটা আর ব্যাক করা হয়নি! এখন কি ব্যাক করবে? রাত হয়ে গেছে।রাত এগারোটা বেজে গেছে।এত রাতে কাউকে কল করা কি ঠিক হবে? কিন্তু কি আর করা একা মানুষ  সবদিক দেখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। যদিও একজন পুরুষের জন্য এটা এমন কোন খাটুনিই না কিন্তু আপুর সেই অবস্থায় মনে হতেই রাহাতের  বারবার গা শিউরে উঠছে। যদি আরেকটু দেরি হতো তবে আজ অনেক বড় একটা অঘটন ঘটে যেতো! 
যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই নায়লার হাজবেন্ড মূর্শেদ চলে এসেছিল।কিন্তু সেতো আর এতদিক দেখবে না। টাকা পয়সার সব রকম আশ্বাস দিয়ে ডক্টরদের সাথে কথা বলে চলে গেলো।দেরি হলে নায়লা আবার জানতে চাইবে।তাইতো বাসা থেকে কোন খাবার আনা গেলো না। মোর্শেদ বেশ লজ্জিত হচ্ছিল বারবার। মোর্শেদ ছেলেটি খুবই ভালো।অবশ্য একটি ছেলে তখনই ভালো হবে যখন তার পারিবারিক শিক্ষাটা মজবুত হবে। 
রাহাত কল দিতে উদ্যত হতেই দেখা গেলো আপুর মোবাইলটা চার্জশূন্য হয়ে আছে। এখন আর কেবিনে গিয়ে চার্জে দেয়া সম্ভব না।মা বা শায়লার ঘুম ভেঙে  যেতে পারে।দুজনেরই  বিশ্রাম প্রয়োজন। কিন্তু শিহাব সাহেব নিশ্চয়ই খুব চিন্তিত  হয়ে থাকবেন। উনি বলেছিলেন 
 নিয়মিতভাবে তাকে যেন শায়লার শারীরিক  অবস্থার কথা জানানো হয়।কিন্তু কি আর করা! হয়তো উনি সারারাত খবরের অপেক্ষায় থাকবে। আসলে মানুষের  হাতেতো সবটার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মোবাইল নাম্বারটা জানা থাকলে রাহাতের মোবাইল  থেকে কল দেয়া যেতো।কিন্তু সেটাও তো নেয়া হয়নি। আচ্ছা কাল সকালেই কথা হবে।এখন আপুর সুস্থতাই সবচেয়ে বড় কথা।রাহাত মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করে নিলো, যে করেই হউক আপুর মুখে হাসি ফোটাতে  হবে।খুব দ্রুতই আপুরকে  তার সংসারে পৌঁছে দিতে হবে।বিষয়টি আপুর হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত হয়নি। রাহাত নিজের লাইফ ক্যারিয়ার  নিয়ে বেশি ডুবে গিয়েছিল।যাক কোন ঘটনা না ঘটলে মানুষের সচেতনতা আসে না।তবে আপুর যদি আজ একটা কিছু হয়ে যেতো? আপুর হাজবেন্ড নোমান ভাইকে তারা কী জবাব দিতো? নোমানের কথা মনে হতেই রাহাতের মনে প্রশ্ন এলো, আচ্ছা তবে এই যে কল করছে শিহাব নামে একজন ভদ্রলোক, তবে উনি কে? কখনোতো আপুর মুখে বা কলেজ ইউনিভার্সিটি লাইফে এই নামটি শোনেনি? তবে উনি কে? কেনইবা  এমন উৎকন্ঠিত হয়ে বারবার আপুর খোঁজ  নিচ্ছিল। নাহ! সবকিছু কেমন এলোমেলো  লাগছে। ফোনটাতেও চার্জ নেই।নয়তো কল করে কথা বলে জেনে নেয়া যেতো যে উনি কে?  রাহাতের মনে খটকা বেঁধে গেলো ডাক্তারদের কথাটা। রাহাতের মনে পড়লো,,, হয়তো উনি মেন্টালি কারো সাথে ইনভলভড হয়েছেন! রাহাত দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে লাগলো।আপুর অসুস্থতার সাথে তবে কি এর কোন যোগসূত্র আছে? উফ, রাহাতের আর ত্বর সইছে না।কখন সকাল হবে আপুর ফোনে চার্জ দিয়ে শিহাব সাহেবের সাথে কথা বলবে। যতটুকু কথা হয়েছে লোকটিকে বেশ ভদ্রই লেগেছে আর উনি যদি অসুস্থতার  কারনই হবেন তবে নিশ্চয়ই এতবার কল করতেন না? রাহাত এই রহস্যের জালে ঘুরপাক খেতে লাগল।মনে ভেতর অনেক ভাবনা দূর্ভাবনা আর অজানা আশংকা ভর করলো।নিরুপায় হয়ে রাহাত ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় রইল৷


চলবে....

তাহসান কামরুজ্জামান





মা 



মা" এই শহরে এসে উপলব্ধি ক্ষমতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। 
প্রতিমুহূর্তে তোমার থেকে দূর থাকার যন্ত্রণা তিলতিল করে আত্মার গভীরে রোগের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে! 

মা"কখনো সামনা-সামনি তোমায় প্রচন্ড রকমের ভালোবাসি শব্দের ব্যবহার করতে পারিনি। 

মা"তোমায় জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠতে কখনো পারিনি। 
প্রচন্ড রকমের দুঃখ কষ্টগুলো অবলীলায় প্রকাশ করতে পারিনি! 
কিন্ত বিশ্বাস করো মা"
অনেক বার গিয়েছি,
তোমায় জড়িয়ে সবকিছু বলতে! 

প্রতি মুহুর্তে ব্যর্থতার গ্লানিবোধটুকু কাঁধে চাপিয়ে ফিরে এসেছি। 

সময়ের ব্যবধানে সেই না বলা গল্পগুলো বলতে ইচ্ছে করছে! 
মনে হচ্ছে আকাশ পথে উড়ে গিয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরি। 

খুব কষ্টে দিনকাল যাচ্ছে মা"
তুমি একটু মোনাজাতে আমায় স্মরণ করে, 
স্রষ্টার নিকট দোয়া করো।

মমতা রায়চৌধুরী/৭২




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৭২ 

মায়ের ভাঙ্গা হৃদয়

মমতা রায়চৌধুরী





কালকের কি দিনটা গেল সকলের মনের ওপর দিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। মাসিমার দিকে তাকানো যাচ্ছে না ।মাসিমার  দুই ছেলে অন্তপ্রাণ। সন্তানরা তার কাছে হৃদপিণ্ড স্বরূপ। মেসোমশাই মারা যাবার পর থেকে মনের দিক থেকে এমনি ভেঙ্গে পড়েছিলেন ।তবুও দুই সন্তান মাকে যেভাবে আগলে রেখেছে তাতে আস্তে আস্তে মেসোমশাইয়ের শোকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন ।ঠিক সেইসময় একটা বড় ধাক্কা ।কিভাবে মেনে নেবেন ভাবতেই পারা যাচ্ছে না ।সারাটা রাত আমার কাছেই ছিলেন। পাশে থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি মায়ের যন্ত্রণা। শুভায়নের অ্যাডভেঞ্চার এর প্রতি এতটাই ঝোঁক ছিল যে, সে ,যে কোন ঝুঁকি নিতে পিছপা হতো না ।তার বন্ধু অনীকের কথাটা
একদম সত্যি। 
ভোর চারটের সময় ফিরে এসে চোখের পাতা এক করতে পারে নি রেখা।চোখ দুটো  জ্বলছে।সারাক্ষণ শুভায়ন এর সুখ স্মৃতি চোখের কাছে ঘুরে বেরিয়েছে। আজকেও সূর্য উঠেছে ।তার আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে ।তবুও বিষন্ন মন আলোর প্রথম কিরণ  তার মেখে  নিতে ইচ্ছে করছে না। মানুষের মনের ভিতরে কত দ্বন্দ্ব , কত টানাপোড়েন, কে কার খবর রাখে ?চেনা মানুষগুলোকে এরকম কষ্ট পেতে দেখতে কারই বা ভালো লাগে ।এসব ভাবতে ভাবতে এক কাপ গরম কফি করে নিয়ে এসে খাবার টেবিলে বসল।
মনোজ  জিজ্ঞেস করল 'কফি কি শুধু তুমি একাই খাবে?'
রেখা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল 'কখন তুমি এসেছ বুঝতেই পারি নি তো।
 মনোজ বলল 'তুমি কার কথা অত মন দিয়ে ভাবছিলে ?তুমি আমার আসাটাও টের পাওনি?'
রেখা বলল 'কার কথা ভাববো? কাল থেকে যা হচ্ছে শুধু খারাপ খবর। মাসিমা পুরো ভেঙে পড়েছেন।'
মনোজ বলল' সে তো স্বাভাবিক।'
রেখা বলল 'পার্থর জ্বরটা কমেছে ।এত কাজ কম্ম, ওই তো দেখাশোনা করতো। মাকে সামলানো, সব দায়-দায়িত্ব  নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
মনোজ বললো' বড় ছেলে, দায়িত্বটা একটু বেশি।'
রেখা বলল 'মাসিমাকে সামলানোটাই সব থেকে এখন বড় ব্যাপার।"
মনোজ বলল" শোক দিয়েছেন যিনি ।লাঘব ও করবেন তিনি।"
হঠাৎ রেখা বলল ''ওই দেখো কে উঁকি মারছে?'
মনোজ বলল "কে গো?'
রেখা বলল'  পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখো।'
মনোজ বললো 'তুলি, লিলি, পাইলট।'
রেখা বলল 'ও মা গেট  কে খুলে দিল গো?'
ওরা সবাই ভোঊ..উ করে উঠলো।
রেখা সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গিয়ে দুটোকে কোলে তুলে নিল।আর  মনোজকে বললো' দেখো গেটটা খুলে দিয়ে কেউ ঝগড়া করার ফন্দি আঁটছে কিনা?"
মনোজ বল 'যা করে করুকগে  ছাড়ো তো?'
মনোজ নিমিষের মধ্যে রেখার চোখমুখে দেখতে পেল একরাশ ক্লান্তির ভেতরে একমুঠো সোনালী ভালোবাসা ,আদর ,স্নেহ সবকিছু জড়িয়ে যেন মাতৃত্ব টাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। কে বলবে সারারাতে ক্লান্তি দুশ্চিন্তা আর টেনশান গেছে ওর উপর দিয়ে।
রেখা কোলে তুলে নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে ওদের দুধ গরম করে আনল তারপর বেশ কয়েকটা বিস্কিট ওর ভেতরে দিয়ে ভালো করে চটকে ওদেরকে খেতে দিল।'
মনোজ বলল  'আজকে রুটি দিলে না ওদের?'
রেখা বলল 'রুটি করার সময় পাই নি গো?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ ,তাই তো আমারই প্রশ্নটা করা ভুল হয়েছে। ঠিক আছে। খাক ওরা।'
রেখা বলল' কি খিদে পেয়েছে দেখো?'
মনোজ  বললো 'তাই তো দেখছি।'
রেখা বললো তোমার জন্য কি খাবার করব বল তো ?কি খাবে তুমি?'
 মনোজ বলল 'কি বলি বলো তো ?
'ক্লান্তি একরাশ  
তোমায় করেছে গ্রাস'
এরমধ্যে কি বলি তোমায়?'
রেখা তো মনোজ এর কন্ঠে কাব্য শুনে
 রীতিমতো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
মনোজ হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝাতে চাইলো'কি হলো একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছ?'
রেখা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বলল 'আ্যাই জানো তুমি না ভালো কবিতা লিখতে পারবে?'
মনোজ বললো 'ও তুমি নিজে লেখিকা তাই  কেবল আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছো?'
রেখা বলল ' না গো । ঠাট্টা করছি না ।বি সিরিয়াস।'
এবার মনোজের মুখ থেকে কোন কথা বের হল না।
রেখা বলল' কি হল তুমি এখন হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে।।?'
মনোজ বলল' দেখছি আমি এই পৃথিবীর মানুষ না অন্য গ্রহের?'
রেখা গায়ে চিমটি কেটে বললো 'দেখো তো?'
মনোজ বলল উঃ  লাগছে?
রেখা বলল 'চোখের ইশারায় এবার কি মনে হচ্ছে তুমি এই পৃথিবীতে আছো, না অন্য গ্রহে?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ এখন মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আমার মিষ্টি বউ ,লেখিকা বউ, রেখার কাছে।'
রেখা মনোজকে ধাক্কা দিয়ে বলল' যাও সব সময় মশকরা না? আমার অনেক কাজ আছে।''
রেখা রান্না ঘর থেকেই বলল ডিম সেদ্ধ করছি কিন্তু তোমাকে হেলদি  খাবার খেতে হবে?
মনোজ আমতা আমতা করে বলল 'অ্যাই রেখা, মেথি মালাই  হবে গো?
রেখা বললো 'আজকে মেথি মালাই আবার কখন বানালাম? কাল থেকে যা দেখছ এই অবস্থা?'
মনোজ বলল 'না ,তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।'
রেখা বলল  'ঠিক আছে ,আমি তোমাকে পরে মেথি মালাই  করে খাওয়াবো ।তাহলে এখন তুমি ওটস খেয়ে নাও। ঠিক আছে। ফ্রুটস ওটস দিয়ে দিই।
মনোজ "মাথা নাড়লো।'
একটা প্যানে দুধ ফুটতে দিলো ।অন্যদিকে আপেল কলা, কিসমিস ,কাজু  খেজুর কুচি কুচি করে কাটল। কেটে একটা বোলে ওটস দিয়ে গরম দুধ দিয়ে করে মিশিয়ে, চামচ দিয়ে খেতে দিল।'
সবেমাত্র মনোজ এক চামচ মুখে তুলেছে ,এমন সময় ফোন'বেজে উঠলো'আকাশ ভরা সূর্য তারা..।'
রেখা রান্না ঘরে থেকে  গ্যাস মুছতে মুছতে ন্যাতার জলটা নিংড়ালো ,বেসিনে ন্যাতার জল টপটপ করে পড়তে লাগল। 
ওই অবস্থাতেই রেখা বলল 'বাবা তোমার ফোনে আবার এই রিংটোন ?বাহ খুব সুন্দর।‌'
মনোজ 'তখনও কথা বলছে ফোনে।'
রেখা কানটা খাড়া করে শুনছে? কখন হয়েছে?
রেখা ন্যাতাটা  বেসিনে  রেখে এসে বলল ‌ 'কি হয়েছে গো?'
কি হয়েছে ?এসব কথা শুনলেই যেন আজকাল রেখার বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন করে ওঠে।
মনোজ হাতের ইশারায় কথা বলতে বারণ করল।'
মনোজ বলল' ডাক্তার ডেকেছ?'
রেখা  কথাগুলোর কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
মনোজ যখন বল ' পার্থ আমার মনে হয় মাসিমার এখন রেস্ট এর প্রয়োজন, তাছাড়া ডাক্তারের মতামত নিয়ে কাজ করা উচিত।'
রেখা বুঝলো যে মাসিমার শরীর খারাপ।
রেখা মনে মনে ভাবল সত্যিই ভদ্রমহিলা অমায়িক স্বভাবের।কিন্তু তার জীবনে একের পর এক ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা।'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ নিশ্চয়ই যাবে?'
দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
ফোন কেটে মনোজ বললো 'রেখা একবার তুমি পার্থদের বাড়ি যাও তো?'
রেখা বলল 'মাসিমার কিছু হয়েছে?'
মনোজ বলল-হ্যাঁ বারবার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছেন।'
রেখা বললো 'কালকে রাত্রেও ওরকম হয়েছে।
ডাক্তার ঘোষ দেখছেন তো?'
মনোজ বলল-'হ্যাঁ ,ডাক্তার তো এসেছেন।এবার ওদের তো একটা মেন্টাল সাপোর্টের প্রয়োজন। তুমি একটু ওদের কাছে যাও।'
রেখা বলল 'সে তো আমি যেতাম ই । আমি ঘরের কাজগুলোও গুছিয়ে নিয়ে ভেবেছিলাম যাব।'
রেখা বলল' আর পারা যাচ্ছে না সুমিতাকে নিয়ে ।এবার তুমি ছাড়িয়ে দাও ।আমি আর পারছি না ওকে নিয়ে।'
মনোজ বলল 'কালকে এসেছিল তো?'
রেখা বলল 'কালকে এসেছিল, তাহলে ও  কি কাজটা করে গেল বলো?আজকে আবার আসলো না। এভাবে পারা যায়?'
মনোজ বললো 'ঠিকআছে এ কটা দিন তুমি সহ্য করো ।এখন আমিও তো বেরোতে পারছি না বলো? লোক দেখাবো কি করে?'
রেখা বলল ' ওরা ঠিক  সুযোগ বুঝে দাও মারে।'
মনোজ বলল' ঠিক আছে এখন ঐসব নিয়ে ভাবলে চলবে না ।তোমার হাতের কাজগুলো করে যত তাড়াতাড়ি পারো ,তুমি পার্থদের বাড়ি যাও।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,এই তো এখন স্নান করবো, পুজো করবো,  কিছু খেয়ে যাচ্ছি।'
মনোজ বলল' ঠিক আছে।'
লেখা তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে গেল গিয়েই শাওয়ারটা ছেড়ে দিল শো শো করে জলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ।অন্যদিকে আরেকটি বাথরুমের কল ও খুলে দিয়েছে।'
রেখা বাথরুমে  স্নান করতে করতে ভাবতে লাগলো সব যেন ঠিক হয়ে যায় ঈশ্বর।