১৮ ডিসেম্বর ২০২১

মোঃ হা‌বিবুর রহমান/৯ম পর্ব





ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন
( ৯ম পর্ব ) 
মোঃ হা‌বিবুর রহমান

অতঃপর প্লেইন থে‌কে নামার হুকুম হ‌লো। নামলাম পু‌রোটাই মি‌লিটারী কায়দায়। অধীনস্ত‌দের সু‌যোগ ক‌'রে দিয়ে আমরা প‌রেই নে‌মে‌ছিলাম। যতদূর ম‌নে প‌ড়ে বিমান বন্দ‌রে ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো প্র‌শিক্ষণ কেন্দ্র থে‌কে আমা‌দের জন্য গন্ডা চা‌রেক স‌ুন্দর স‌ুন্দর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বাস পাঠা‌নো হ‌'য়ে‌ছি‌লো ক‌য়েকজন সা‌র্জে‌ন্টের নের্তৃ‌ত্বে। আমার আজও ম‌নে প‌ড়ে সেই অত্যাধু‌নিক এ‌সি বাসগু‌লোর অভ্যন্ত‌রে আধু‌নিক সু‌যোগ-সু‌বিধার পর্যাপ্ততার কথা। স‌তিই চমৎকার! দীর্ঘ ২৭ বছর পর আমা‌দের বাংলাদে‌শেও অবশ্য বেশ সুন্দর সুন্দর বাস আজকাল রাস্তায় নে‌মে‌ছে।

সেনাবা‌হিনীর পদ্ধ‌তি অনুযায়ী জনব‌ল ও অস্ত্রপা‌তির হিসাব-‌নিকাশ পুরামাত্রায় নেবার পর পরম করূণাময় আল্লার না‌মে আমা‌দের এবারের স্হলযাত্রা শুরু ক'রলাম। আমা‌দের এখনকার গন্তব্যস্হল মি‌লিটারী প্র‌শিক্ষণ‌ কেন্দ্র, ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো। বাই‌রো‌ডে ঘণ্টা চা‌রে‌কের রাস্তা হ‌বে। আমা‌দের বাসগু‌লো যেন পিঁপড়ার মত সা‌রিবদ্ধ হ‌'য়ে সমগ‌তি‌তে গন্তব্যস্হ‌লের দি‌কে ছু‌টে চ‌'লে‌ছে একবা‌রে সমান-সমান দূরত্ব বজায় রেখে। 

সূ‌র্যি মামাও বোধ ক‌রি নিজ বা‌ড়ি‌তে যাবার উ‌দ্দে‌শ্যে আ‌স্তে আ‌স্তে অ‌তি ধীর পদক্ষে‌পে তার তাপমাত্রা ক'মিয়ে দি‌য়ে‌ছে। রাজপ‌থে চ‌'লে‌ছি আর হা ক‌রে অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে রাস্তা এবং রাস্তার  দু'পা‌শের প্রাকৃ‌তিক সৌন্দয্য দর্শ‌নে আমরা সর্বদাই ব্যস্ত ছিলাম। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! চোখের পলক যেন আর প‌ড়েনা। ম‌নে ম‌নে বল‌ছিলাম যে, হে আল্লাহ্, এ কোন দে‌শে, কোথায় আসলাম? 

যে‌দি‌কেই চোখ যায় সে‌দি‌কেই দে‌খি সবু‌জের সমা‌রোহ যেন রাস্তার এপাশে-ওপাশে সবু‌জের মেলা ব‌সে‌ছে। আমা‌দের দেশ সবু‌জের দেশ হওয়া স‌ত্বেও ম‌নে হ‌'চ্ছিল এ‌দের সবু‌জের কা‌ছে আমা‌দের সবুজ যেন কো‌নো কোনো সময় ফি‌কে হ‌'য়ে যাচ্ছিল। রাজপথটা ওয়ানও‌য়ে মেটাল রোড এবং ৫/৬ লেন বি‌শিষ্ট, যেন শিল্পীর তু‌লি দি‌য়ে এই রাজপথ‌কে অতি সুচারুরূ‌পে মা‌র্কিং ক‌'রে অত্যন্ত সয‌ত্নে রোড-সাইনগু‌লো আঁকা হ‌'য়ে‌ছে সেগু‌লোর কথা ম‌নে পড়লে ম‌নে হয় যেন জে‌গেই স্বপ্ন দেখ‌ছি। 

এতক্ষণ যত জীপ বা কার দেখে‌ছি আ‌মি এর কোন চাল‌ককে ম‌হিলা ছাড়া পুরুষ দেখি‌নি। ভাবলাম, এ আবার কোন দেশে এ‌সে হা‌জির হলাম? বড্ড তাজ্জ্বব এদেশ বাবা! এমন দেশও যে পৃ‌থিবী‌তে থাক‌তে পা‌রে তা কস্মিনকা‌লেও ভা‌বি‌নি বা ই‌তিপূ‌র্বে দে‌খি‌ও‌নি। রাস্তার দু'পাশ দিয়ে চ‌'লে‌ছি আর তাই একবার ডা‌নে আর আ‌রেকবার‌ বামে তাকা‌তে তাকা‌তে ‌যেন দু‌'চোখ হয়রা‌ন হ‌'য়ে গে‌লো। 

ভাবলাম, এজন্যই বু‌ঝি আল্লাহপাক সৃ‌ষ্টির সব প্রাণী‌কে বাদ দি‌য়ে মানুষ‌কেই সৃ‌ষ্টির সেরা জীব হি‌সে‌বে ম‌নোনীত ক‌'রে তা‌দের‌কে সেই প‌রিমাণ হিকমাহ বা জ্ঞান দান ক‌'রে‌ছেন। আস‌লে দ্বিপদী মনুষ্যজা‌তির প‌ক্ষে সবই সম্ভব। পড়ন্ত বেলায় বি‌ভিন্ন বয়সী ছে‌লেমে‌য়ে, যুবক-যুবতী, প্রৌঢ়-‌প্রৌঢ়া ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অসম বয়‌সের মানু‌ষেরা রঙবেরং‌য়ের বাহারী কাপড়-‌চোপড় প‌রে হাটাহা‌টি, খেলাপাগল মানু‌ষেরা নানান ধর‌নের খেলায় কিংবা জ‌গিংএ মহাব্যস্ত। হায়, আপ‌শোস্! আমরা বাঙালীরা কেন এদের ধা‌রের কা‌ছেই নেই? এ‌দের মত এত স্বাস্হ্য স‌চেতন মানুষ আ‌মি আর কোনদিন দে‌খি‌নি।

‌গোধুলীর ঠিক পূর্ব মূহু‌র্তের রোদ‌কে আমরা অ‌নে‌কে শেষ রোদ ব‌লে আখ্যা‌য়িত ক‌রে থা‌কি, এই রোদ মানু‌ষের অবয়‌বে বা শরী‌রের কোন জায়গায় প'ড়‌লে যে কোন মানুষ‌কেই বু‌ঝি বেশী-বেশী আকর্ষনীয় ব‌'লে প্র‌তিভাত হয়। পো‌র্টো‌রি‌কোর সকল মানু‌ষ তথা ছে‌লেমে‌য়ে নি‌র্বি‌শে‌ষে বেশ সুশ্রী ও সুন্দর দেখ‌তে এবং সেইসা‌থে তা‌দের বেশভূষাও বেশ আকর্ষনীয় ব‌টে। 

রাস্তার দু'পা‌র্শ্বে সুন্দর সুন্দর দোকান এবং সেগু‌লোর অ‌ধিকাংশই কাঁ‌চের তৈরী ও আধু‌নিকতার য‌থেষ্ট ছাপ আ‌ছে। বি‌ভিন্ন বয়সী লোকজ‌নের দোকা‌নে ভিড় জমা‌নো দে‌খে বার বারই ম‌নে হ‌'চ্ছিল যেন বছ‌রের বা‌রো মাসই এ‌দের বৈশাখী মেলা চ‌'লে। অ‌তি চমৎকার সে দৃশ্য কেউ নি‌জের চো‌খে না দেখ‌লে বু‌ঝি কল্পনা করাও অসম্ভব। 

সাই সাই ক‌'রে আমা‌দের এ‌সি বাসগু‌লো ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গোকে লক্ষ্য ক‌'রে যেন ছু‌টে চ‌'লে‌ছে, এরই ম‌ধ্যে চালক বরাবর বা‌সের সাম‌নে তাকালাম। কিছু কিছু কার বা ছোট ছোট যানবাহন অ‌ধিক দ্রুতগামী হওয়ায় লেন প‌রিবর্তন ক‌'রে আমা‌দের বাস ওভার‌টে‌ক ক‌'রে আমা‌দেরকে দ্রুত পিছু ফে‌লে যেন জানা‌তে চা‌চ্ছিল "তোমরা বঙ্গ‌দেশ থে‌কে এ‌সে‌ছো, ধী‌রেসু‌স্থেই আ‌সো, আ‌স্তে আ‌স্তে এ‌দে‌শের সা‌থে প্রথ‌মে নি‌জে‌দের‌কে মানাও, খাপ খাওয়াও তারপর আমা‌দের মত ক‌'রে চ‌লো"। হঠাৎ ক‌রেই অতীব নয়না‌ভিরাম দৃ‌শ্যের অবতারনা হ‌লো। কি মজা! প্রকৃ‌তির সব সৌন্দ‌র্যের সমা‌রোহ বু‌ঝি এখা‌নেই ঘ‌টে‌ছে।
 
আমা‌দের বা‌মে তাকালাম, দেখ‌ছি সমু‌দ্রের সমান্তরা‌লে আমর‌া চলা শুরু ক‌'রে‌ছি। সমু‌দ্রের পাশ ঘে‌ষে রাস্তা সমান্তরালভা‌বে চ‌'লে‌ছে, আল্লাহ্ না করুক, য‌দি চালক একটু অসাবধানতাবসতঃ গাড়ী চালায় ত‌বে আমা‌দের যে‌কোন সময় সমুদ্র স্না‌নের একটা সম্ভাবনা‌কে বু‌ঝি আমরা উ‌ঁড়ি‌য়ে দি‌তে পা‌রবো না। পাকা রাস্তার সমান্তরা‌লে সমু‌দ্রের কিনারা দি‌য়ে স্পীডবো‌টের সমা‌রোহটা বেশ চো‌খে পড়ার মত এবং ম‌নোমুগ্ধকর ছি‌লো। দেখ‌তে দেখ‌‌তে কখন যে চারটি ঘণ্টা খরচ ক‌'রে ফে‌লে‌ছি তা ‌যেন একদমই ঠাহর ক'র‌তে পারি‌নি। সন্ধ্যা সমাগত প্রায়, সূ‌র্যিমামা টাটা দি‌য়ে নিঃশ‌ব্দে এইমাত্র বিদায় নি‌লো। আমা‌দের বা‌সের গাইড সা‌র্জেন্ট সা‌হেব হঠ‌াৎ ক‌'রেই দাঁ‌ড়িয়ে বল‌লো, 

"Sir, we have reached to Camp Santiago, I welcome you here at Camp Santiago. Sir, you may kindly get down from the bus and Sergeant Bright is here to guide you further, he will show your accommodation, dinning hall and other allied facilities you are going to enjoy during your 15 days stay here". 

অতঃপর, আমরা বাস থে‌কে নে‌মে  অন‌তিদূ‌রে আমা‌দের জন্য নির্ধা‌রিত আবাসস্হ‌ল, অ‌ফিসার মে‌সের দি‌কে পদব্র‌জে যাত্রা শুরু ক'রলাম। 

চল‌বে.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much