১০ জানুয়ারী ২০২১

বিকাশ সরকার




আত্মজীবনীর পরাবাস্তব


থেকে থেকে করাত ও হাতুড়ির শব্দ আসে; আর

শুনতে পাই চলন্ত র্যা দার মুখর গান

গজালের বাক্সে মাথা রেখে শুয়ে আছে ভাই

নধর দুপুর নিয়ে সে খেলছে

আর রোদে রোদে পোড়ে ছুতোরের ছেলে সে-ছুতোর

একজন জিশু খ্ৰিস্ট


তখন আমি চলেছি তোমার পিছনে ঘাস পার হয়ে

আরও কত মহাজাগতিক ঘাসে

বন পার হয়ে অন্য বনে, এক ত্ৰাস থেকে

অরণ্যনিবিড় অন্য কোনও ত্ৰাসে

পার হয়ে যাই মধুবনি নদী, পার হয়ে যাই

পাতাগুল্মলতাঘাসফুল

তোমার সাথেই ছুটছি, তোমার পিছুই বিকাশ

এক ভুল থেকে আর ভুল


এরপর কী হচ্ছে জানো? উড়ে যাচ্ছে জামা

কলার সাদা হয়ে আসা, দিনমজুরের এক মেরুন জামা 

তার সেলাইছেঁড়া পকেট থেকে খসে পড়ছে কাগজ

সে-কাগজ শূন্য পাতা

সে-কাগজ না-লেখা সব বিরল প্ৰেমপত্ৰ

সে-কাগজ কালু ডাক্তারের লেখা প্ৰেসক্ৰিপশন


তখন আমি ছুটছি আর ছুটছি তোমার সাথে

আংরাভাসা-ঠাকুরপাট

দেওমালি থেকে ইনডং হয়ে লুকসান ছুঁয়ে

ময়নাগুড়ি-বানারহাট

আকাশে উড়ছে আজব পাখিরা, পাখাহীন তারা

তবু তীক্ষ্ণ যত চঞ্চুময়

জলা পার হয়ে অন্য জলা, তোমার সাথেই,

ভয়ের পর আরেক ভয়


আমি উড়ন্ত জামাকে বলি ফিরে এসো

আমি উড়ন্ত পাখিদের বলছি ফিরে এসো

উড়ন্ত প্ৰেসক্ৰিপশন তুমিও ফিরে এসো

এখনও বাবার জন্য দুচারটে ওষুধ কেনা বাকি


ফিরে এসো শূন্য পাতা সব ক্লোরোফিল

ফিরে এসো প্ৰেমপত্ৰ বিষাদআবিল

ফিরে এসো চোর মুন্ডা মাতাল হাবিল


হারি মুন্ডা কী চুরি করেছিল? আদৌ চুরি করেছিল কিছু? মনে পড়ে?

হাবিল লাকরা খেয়েছিল কোন মদ? পচা মারুয়ার? মনে পড়ে?


যখন তোমার পিছু-পিছু এদিক-ওদিক ছুটি সব মনে পড়ে যায়

মনে পড়ে কুজি ডায়নার জলে সাহাবাড়ির মেয়েটি কী চিঠি ভাসায়

নদীর ওপাড়ে, ভুটানের দিকে, কেমন ফাঁসি-ফাঁসি ভাব জেগে ওঠে

ঘুমের বড়িগুলি সেগুনের ফুল হয়ে সারারাত খুলিগাছে ফোটে

শুধু ফাঁসি-ফাঁসি ভাব, ফাঁসিঘ্ৰাণ, শুধু চারদিকে ফাঁসিফিসফিস

ফাঁসি বলে, ‘সাহামেয়ে, আয়, চাঁদ সাক্ষী রেখে তুই ফাঁসিতে ঝুলিস'

পাথরে চশমা খুলে রেখে মেয়ে তাই ঝুলে পড়ে চাঁদ থেকে চাঁদে

সেই থেকে সেগুনবনের কুকুরেরা ঘুমচাঁদ দেখে দেখে সারারাত কাঁদে


সেই ঘুম পানপাত্ৰে ঢেলে খায় মাতাল হাবিল

তার যত কারখানাখেতবনঝিলকাঠমিল

সৰ্বত্ৰ চুয়ে পড়ে কুয়াশা ফোটার মতো ফাঁসির নিঝুম

সেই ফাঁসি গোপনে বেহাত করে হারি মুন্ডা চোর

সেও এক ছমছমে হরর সিনেমা, অপঘুমঘোর

চুরি করে, কাটে, তারপর আগুনে পোড়ায়

পিটিয়ে পিটিয়ে দেখে ফাঁসিমাখা লোহা আজ কত ঝলসায়


বিকাশ, তোমার সাথেই ছুটছি; না-ছোটার

সাধ্য নেই আর

তারপর ফুটছি, টগবগ করে, যেন আমি ভাদইয়ের ভাত

ফুটে উঠি ম্লান করে টগরের সমস্ত অভিশম্পাত 

চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে দেখো সে-ভাতের ঘ্ৰাণ

গজালের মতো ঋজু, দৃঢ় হয়ে আসে আজ আমাদের প্ৰাণ


তখন হারানো করাতকে বলি ফিরে আয়

শাণিত বাটালকে চুপিসারে বলি ফিরে আয়

মৰ্গের স্টিলের হাতুড়িকে বলি ফিরে আয়


আমার দিকে ফিরে আসতে থাকে এক আত্মজীবনী...



২.

ঘুম ভাঙাতে এসেছেন মাদমোয়াজেল উরশুলা

আর ঘুমন্ত কবির মুখে খেলছে বারবানটাইন ঘাসের আভা

শিলিগুড়ির বিছানায় খেলছে আৰ্লসের সূৰ্য

সূৰ্যমুখীর খেতে দুলে যাচ্ছে তকতকে আকাশ

যেন বাতাসের গাউন পরে উরশুলা যায় হলুদের দিকে

আমি কি তবে হলুদেই যাব? চাঁদনিরাতের নুয়েনেনে?


কোত্থাও না, আমি শুধু যেতে চাই গয়েরকাটায়

মাদমোয়াজেল সেই গাঁয়ে শোকেতাপে একলা কাটায়

সেখানে এক চাঁদনিরাতে বসে থাকব মধুর শ্মশানে

আর সাধুবাবা পাঠ করবেন মৃদু পাৰ্ল বাক

লেলিহ চিতা জ্বলছে নদীটির পাড়ে

কে এক বেতাল যেন বসে আছে আমাদের ঘাড়ে

আৰ্লসহলুদ থেকে আমি চলি তাহিতিসুনীলে


এখানেও সেই নিগ্ৰোবস্তি, আর হাৰ্লেমের রাজা

সাপ, জেব্ৰা, খচ্চরের মধ্যে যেন বারাক ওবামার পূৰ্বপুরুষ

ওয়াল স্ট্রিটের এক চৈনিক ভিখিরি, ইহুদি বেশ্যার দল

পোপের মুখোশ পরা যত পৰ্তুগিজ উচ্ছন্ন নাবিক

শেয়ারবাজার হয়ে উঠছে শেওলার পিরামিড

মনোবিকলনের ফাঁকে কত বিষ

দুই হাত আকাশে তুলে লোরকা তাই আমাকে বলেন

বলো, কে আমার দুঃখ বুঝতে পারবে?

বলো, কে আমার দুঃখ বুঝতে পারবে?'


আমি বুঝি

আমি বুঝি

বুঝতে পেরেছি এই এক স্বেচ্ছানিৰ্বাসনে

বিষাদের বিষ কীভাবে নীল হয়ে হয়ে আসে শরীরে

পল্টনবাজারের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপছে

ষোঢ়শী গণিকা

তাকে বুঝি

খিস্তি ঝাড়ছে বুড়ো ফলওয়ালা

তাকে বুঝি

লাখটকিয়ায় ঝলমল করছে বাজনামুখর মলগুলি

ব্ৰা ও প্যান্টি পরা পুতুল দেখে রগড় করছে পুলিশ

বিধানসভার সামনে আদিবাসী মেয়েকে নাঙা করে পিটছে শহর


আমাকে সকল মল পার হয়ে ঘেটোর দিকে যেতে হবে

পলিথিন প্যাকেটের পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে

যেখানে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে আনা ভাত খায়

যতসব বাংলাদেশি, ডি ভোটার

নগরের সব উড়াল সেতু মিশেছে এইখানে এসে

এই মনোবিকলনে, দিশি ভাঙ আর মদের আড্ডায়

এরাও আমার চেয়ে কম ক্ৰীতদাস নয়, কম দুখি নয়

নিয়মিত ছেঁড়া বুট পালিশ করা হয়, সব যেন আস্ত হাবসি

আর বিষ পড়ে, চুয়ে- মদে, ভাতে, ঘিলু ও জীবনে

লেক ইডেনের মতো পড়ে থাকে দিঘলিপুখুরি

অফিসপাড়ার তাম্বুলখেকো বাবুরা সেখানে প্ৰস্ৰাব করে

ব্যানার খাটিয়ে বসে সব ঝানু রাজনীতিবিদ

আমি বলিঃ


‘বলো, কে আমার দুঃখ বুঝতে পারবে?

বলো, কে আমার দুঃখ বুঝতে পারবে?'


গয়েরকাটা; গয়েরকাটাই আমার সব শোক বোঝে

      সব তাপ বোঝে

      সব শৈত্য বোঝে

আমি মরবার আগে তাই গয়েরকাটায় যেতে চাই

রক্তাক্ত সব উড়ালসেতুর বদলে মধুবনি সাঁকোয় কত প্ৰাণ

অন্ধবাউল সেখানে গাইছে বসে অন্তহীন ভাটিয়ালি গান

বোধিকথা বলছেন সন্ত কেরুয়াক, সেখানে বসত

পিট সিগার গাইছেন গুয়ান্তেনামারা, সেখানে বসত

হরকরা আসে রোজ, থিওর লেফাফা দিয়ে যায়

বোধিকথাময় গীত, আর আত্মজীবনীর যত চিঠি


বস্তুত আমি এক ভাতশিকারি

হারপুন পাশে রেখে লেফাফা খুলে অক্ষর টিপে টিপে দেখি

কতটা ফুলেছে চালগুলি, কতটা গরম ও নরম হয়েছে

ঠিকঠাক সেদ্ধ হল কি না

কতটা ভাতের মতো হল অক্ষরের প্ৰাণ


তারপর ফের বোধিকথা হবে

তারপর ফের বাজবে গিটার

থিওর চিঠি নিয়ে বিকেলবেলায় আসবে বোবা হরকরা


আর আর্তুরের রক্ষিতা সেই হাবসি মেয়েটি

আমার পায়ের ক্ষত মুছে দেয়

আমার হৃদয়ক্ষত ধুয়ে দেয় স্তন থেকে চুয়ে পড়া দুধে

প্ৰকৃতি পরিব্যাপ্ত হয়েছে আজ এক অচুক ওষুধে


হাবসি মেয়েটি রে, তোকে তো বৃথা খুঁজে মরি

আসাম ট্ৰাংক রোডের ধারে তোর উড়োউড়ো তাঁবু

নোংরা মশারির ভিতর শুয়ে আছিস তুই

এবার তোরও না জানি কত হয়েছে গ্যাংগ্ৰিন


তোর কাছে তোর কাছে তোর কাছে

আমার সকল কবিতার যাবতীয় ঋণ



৩.

২৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ সাল

আমার আত্মহননের তারিখ

আমার কোনও সোয়েটার ছিল না

গুয়াহাটির তীব্ৰ শৈত্যে ঠকঠক করে কাঁপছে

আমার চাদর-পরা-মৃতদেহখানা

রাইগর মরটিসের পর কেমন যেন ফ্যাকাশে সব আঙুল

ঝুলে পড়েছে জিভ, চোখদুটো নিথর, চুলে কাচপোকা


মরবার পর কাছারিবস্তি থেকে এল

ঝলসানো শুয়োরের মাথা

আর ভাতের পচাই

তখন নরকাসুর পাহাড়ের মাথায় এক দিব্য আলো

আমি ঝুলতে ঝুলতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম

নেমে আসছেন বেথলেহেমের সেই কাঠমিস্ত্ৰি

এবার জিশুজন্ম হবে, তারই সব জাঁক

তারই যত দিব্য আলোক

শীতের রাতে আকাশে কতশত তারা

কত জোনাকি উড়ছে তখন পাহাড়ের বেতবনে


গুয়াহাটির তীব্ৰ শীতে আমার

মৃতদেহ তখন ঠকঠক করে কাঁপছে

প্ৰথম বেতন পাবার পর সোয়েটার কেনা জরুরি 

এটা বোঝা গেল


আমি শবদেহমাত্ৰ

আমি আমার শরীর বয়ে নিয়ে যাই দিনহাজিরায়

বয়ে নিয়ে আসি ঘেটোর ভিতর

জাদুকুয়াশা পড়েছে চারদিকে, আমি তবু সোয়েটারহীন

কাছারিবস্তির উত্তাপ সম্বল করে বাঁচি

আর উপরের আস্তাবল কী অবাক প্ৰভাময় হয়


ফাঁসিবাজারে গেলে আমার গা ছমছম করে

সুরম্য বিপণিগুলিতে কত যে ঝুলে আছে শব

ফাঁসির মড়া সেসব

ফ্যাকাশে আঙুল, ঝুলে পড়া জিহ্বা, চোখ অপলক

শুধু নরকাসুর পাহাড়ে কার যেন প্ৰসববেদনা শুনি

একটি উজ্জ্বল তারা ঝুলে আছে চূড়ার নিকটে

সেই তারা দেখে দেখে হাঁটি, দিক ঠিক করি

তখন পাদদেশে কোন-এক সত্ৰে ভাওনা শুরু হয়

ওই যে করতাল বাজে, ওই যে বাজে মহাখোল

তখন মড়াগুলি নড়েচড়ে উঠেছে চারদিকে

দিব্য আলো খুব নড়েচড়ে, নড়েচড়ে একখানি শিশুহাত


আমি এক একা

বন্ধু নেই, প্ৰেম নেই, গ্ৰাম নেই, প্ৰাণ নেই

কাছারিবস্তি ছাড়া আর কোনও উত্তাপ নেই

সেঁকা শুয়োর, টকে ওঠা পচাইয়ের গন্ধে মাখা দিন

হাজিরাশ্ৰমিকের এক রাত্ৰি জাগরণ

আমি আমার মৃতদেহ পাহারা দিতে থাকি


যদি প্ৰাণ আসে ফের...


আশা তবে আজও আছে কণ্ঠে লেগে থাকা ফাঁসে


যদি প্ৰাণ আসে, যদি প্ৰাণ আসে...


ডিফু থেকে আসা কুষ্ঠরোগী গাইছে

আজান ফকির

বারাবাঁকি থেকে আসা বুড়ো ঠেলাওলার সাথে

গল্প করি

ভুরাগাঁও থেকে আসা প্ৰৌঢ় কামলার সাথে

কথা বলি

ভাওনা ফুরোলে আগুন পোহায় হাজিরাশিল্পীরা

তাদের সঙ্গী হয়ে সেঁকি মৃতশরীর

ওষুধ বেচতে এসেছে বেদে ও বেদেনিরা

তাদের তাঁবুর কাছে কাছে প্ৰাণভিক্ষা করি

কিশোর শাকওলার কাছে প্ৰাণভিক্ষা করি

ঠকঠক ঠকঠক চাদর বুনছে যে কাৰ্বিকুমারী

সকলেই আমার মতন, ঝুলে থাকা শব

যারা বেঁচে আছে তারা আমাদের দেখেও দেখে না


ছায়া ছায়া

কাছারিবস্তির এই কজন যেন ছায়া ছায়া


নগরের রাজপথে আমাদের ছায়াটি পড়ে না

যখন বোমা ফাটে

যখন গুলি চলে

যখন লাঠিচাৰ্জ হয়

আমাদের ফের মৃত্যু হয়


গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মজীবনী তখন ছটফট করে



৪.

বিকাশের সাথে রোজ দেখা হয়

সে কিছু বলে, সে কিছু শোনে

সে বলে শোকের কথা, আনন্দের কথা আমি বলি

আমার পকেটে ছিল রোদ, আমি তাকে দিতে চাই

সে আমাকে ঠোঙা ঝেড়ে দেয়

কিছুটা পাহাড় আর কিছুটা সাগর

আমরা দুজনে বানাতে থাকি এক প্ৰবালের ঘর

তারপর ঝড়বৃষ্টিবজ্ৰপাত আমাদের ঘর ভাসে বানে

ঘিলু থেকে কত ঢেউ সংগোপনে ঢুকে যায় 

আমাদের প্ৰাণে


আমি কি বিকাশ? নাকি তার ছায়া?

এইসব ভাবি

মায়াবি এইসব রূপকথাগুলি ব্ৰাত্য যত 

জাদুহাবিজাবি

কেন শুধু ঝুলে থাকে নক্ষত্ৰপুঞ্জ থেকে

থুতুমাখা দড়ি

কেন আজ খুলে যায় যাকে আমি অন্ধরাতে

ছানাছানি করি

আমারই ছায়াকে আমি ছানি শুধু, চুষে খাই

ছায়াটির জিভ

আমি কি বিকাশ, নাকি ভিনগ্ৰহী কোনো

নক্ষত্ৰের জীব¯


সবে তো কামরাঙারং হয়েছে আজকের আলো

শিউলিও আজ যেন গন্ধ ছড়াল

হিম পড়েছিল; পড়ে ছিল তারা কলমিপাতায়

সেখানে হাওয়া এসে মিতালি পাতায়

ঝোরাটির সাথে


বিকাশ নিবিড় হবে ঢলে পড়া বিকাশের রাতে


এখন আলোটি আসে মরে

মোষের গাড়িখানা ভরা হল সোনারঙ খড়ে

ভেসে আসে গেঁয়োগুৰ্বো পাখিদের ভাওয়াইয়া গান 


ফাঁসির মড়ার ভিতর যেন জেগে ওঠে প্ৰাণ


ওরে ও পাখির দল তোদের কাছে ঋণী

ওরে ও বৃক্ষকাতার তোদের কাছে ঋণী

ওরে ও অমল ঝোরা তোদের কাছে ঋণী

ওরে ও মুখর গান তোদের কাছে ঋণী


তোদের কাছেই প্ৰাণভিক্ষা করে যায় আমার জীবনী

লিমা সুলতানা মায়াবতী



তোমায় খুব মনে পড়ে


জানো আজ খুব বেশি মনে পড়ছে তোমার কথা,আজ খুব ভোরে যখন পাখির গানে ঘুম ভাঙ্গলো আমার,তখন চোখ খুলতেই ভোরের সূর্যটাকে দেখলাম।

তখন কেন জানি মনে হলো সূর্যটাতে তোমার অবয়ব ভেসে উঠলো,জানো তখন আমার কি যে ভালো লাগছিলো।

মনে হচ্ছিলো তুমি আমার সূর্য দেবতা বিশ্বাস কর তুমি সেটাই,আজ খুব বেশি মনে পড়ছে তোমাকে।

ভোরের সূর্য যেমন আলো দিয়ে রাত্রিকে বিতাড়িত করে,ঠিক তেমনি যেন তুমি আমার সব দুঃখ কষ্ট মুছে দিয়ে একটি প্রভাত প্রভাময় সকাল এনে দিলে।

রুমা বিশ্বাস

 


অনুকবিতা


নেশার মাদকতায় হইনি আমি আসক্ত, নির্লিপ্ত চোখের চাহনিতে আমি আমৃত্যু মাদকাসক্ত।

রাতের নির্লিপ্ত অন্ধকার পেরিয়ে

অস্ফুট কাব্য ব্যাঞ্জনায়,

পৃথিবী দেখবো বলে আমার পরিশ্রান্ত ফোয়ারার মতো দুটি চোখ....

ছবি সিনহা বসু




এমন দিন কি আসবে?



রাজার কাপড় নেই তা জানি

তবুও বলি সূক্ষ্ম অতি!


ছেলেটা আজ হারিয়ে গেছে

হারিয়েছে জনগণের মতি।


যে আসে এই লঙ্কাতে সে

হবেই হবে মহীরাবণ।


জনগণ আজ আঙুল চোষে

রাজনীতিকের সুখযাপন!


বাঁদরের চাই মুক্তোমালা

যতোই তুমি নারাজ থাকো।


বিড়াল বলে মাছ ছোঁবনা

গন্ধ শুঁকেই দিন কাটাবো!


মূর্খ মন্ত্রীর শ্লোগানেতে 

মঞ্চ জুড়ে ঝড় ওঠে!


পেটের ভেতর বোমা মারলে

ক অক্ষর  ফুটবে না যে!


তাদের কতো মিটিং মিছিল 

জনগণের ভাল ভেবে !


মূর্খ  নেতা তা দেয় গোঁফে

এইবেলাতে গুছিয়ে নেবে।


আঁতাত আছে তাদের মাঝে 

আমরা কি আর বুঝিনা তা !


জনগণের কাঁধে চড়ে 

তোমরা যে দেখাও কেতা।


নীচের থেকে উপর তলায়

শুধুই  ঘুষের কেরামতি।


এমন দিন  আসবে কি আর

যেদিন ফিরবে নেতার মতিগতি ?

মিতালি চক্রবর্তী




সংকোচ


পলাশচারা আছে তোমার

আছে পদ্মের নাল

তোমার সাথে পালাতে চাই একটা গোটা সকাল।


বিল বাঁওরের আশে পাশে মাটির গভীরে

ঘুমিয়ে যাব তোমার সাথে বৃষ্টি নিবিড়ে


মাঠের মাঝে কেউ কেউ দেখে ফেলতে পারে


তোমার আমার কথার টুকরো অসীম আব্দারে।


ধরো, কোন ফলন্ত ক্ষেত উর্বরতার গানে


তোমাকে আর আমাকে সামিল করতে চায় স্নায়বিক টানে,,,


মাটিমাখবে বৃষ্টি ছোঁয়া রং এর আশকারা,


আমাদের সঙ্গোপনের পিছুটানের তাড়া

গোলাম কবির




কোথাও কেউ থাকে না "

  
 কেউ কী আছে, বেঁচে? 
 ভালবাসা মরে গেলে! 
 না, কোথাও কেউ থাকে না!
 ভালবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাস,  
 থাকে সাপের খোলসের মতো 
 শুধুই নিরর্থক দেহ! 
 নিদ্রাহীন রাত, স্বপ্নেরা সব উধাও!
 বিরক্তিকর একটানা অপেক্ষা করতে থাকা    শুধুই অনন্তের দিকে পাড়ি দেবার! 
 গহীন আঁধারে ডুবে গিয়ে সাপলুডু খেলা
 স্মৃতির সমুদ্র তীরে বসে 
 আছড়ে পড়া ঢেউ এর সাথে! 
 আবার আসে দিন, আসে রাত!
 ভালবাসা হারিয়ে গেলে 
 সত্যিই, কোথাও কেউ থাকে না!
 সাপের মতো পরিত্যক্ত খোলসটাই 
 শুধু থাকে, আর কিছু নয়, কিচ্ছুই নয়!

মোহাঃ হাসানুজ্জামান

 



আমরা প্রবীন

   

আমরা তো চাই সম্মান মাত্র

আর একটু সহানুভূতি-

দিয়েছি তো মোরা সাধ‍্যমত

ভূলেছে কি তাহা জাতি!

 

যখন তোমরা সদ‍্যজাত 

করেছি তোমাদের যত্ন

ভূলেছো কি তোমরা সেদিনের কথা

তোমরা তো মোদের হৃদয়রত্ন।


তোমরা চলো প্রগতির পথে

মোরা চাই শুধু একটু স্হান

সঙ্গে একটু পোষাক দিও 

ঢাকতে শরীরের মান।


ক্ষুধার টানে দুমুঠো অন্ন দিও

বাঁচার তাগিদে প্রান-

তোমরাও হবে প্রবীন একদিন

তাই রেখো মোদের মান।


আশির্বাদ তোমাদের সদাই করবো 

পাবেনা কভূ ভয়-

আমাদের একটু সম্মান করো

জীবনযুদ্ধে সর্বদা তোমাদের হবে জয়।

প্রেমাংশু শ্রাবণ কবির

 


ভালোবাসার জন্মদিন এক


কখন জানি জানালার পাশে বসে কবিতার বই হাতে

বিকেলের গন্ধমাতাল।


বুক ভরে বেখেয়ালি বাতাসের ঝড়,

আর চিবুকে তোমার কিছু

এলোমেলো চুলের আল্পনা।


বাহিরে বৃষ্টি,

ভেজা পাতায় ভেজা পাখির ঘর,

উষ্ণ নিঃশ্বাসে ঝাপসা জানালার কাচ,

ধোয়াটে আকাশে টুকরো মেঘ,

ঘরের বাইরে আর এক ঘর।


আর একদিকে--

আমরা যুবক যুবতী, ছুঁয়ে দেবার সংকোচে বিলীন।

অনন্তকালের মুঠোয় কয়েকটি ভেজা মুহূর্ত! 

অদ্ভুত ভাবে রাখা শিয়রে তোমার হাত,

ঝলমলিয়ে ওঠা হাতের চুড়ি

আর লাল,নীল,হলুদ বেলুনের সারি

জানান দিচ্ছে

আজ এই ঘরে উৎসব।


আজ প্রেমের জন্মতিথি। 

আজ থেকে বহুকাল আগে,

গুহা মানবের রাত্রিরে,

অথবা ঠিক এমনি বৃষ্টির ঝাপসা কোনো বিকেলে

অথবা সন্ধ্যায়

প্রথম কোনো মানব ভালোবেসেছিলো

কোনো মানবিকে।


ওরা প্রেমিক প্রেমিকা,

বিবর্তনের উপহারে আমরা ভালোবাসার মোহ এনেছি,

আমরা এনেছি এই পৃথিবীর জন্য

স্পর্শকাতর প্রেমের ঐশ্বর্য। 


২ এভাবেই আমরা

------

এভাবেই আমরা চিরটাকাল পরস্পরকে 

জড়িয়ে থাকবো

তবু মিলবো না কিছুতেই।

আমাদের চোখ দুটো দেখবে না আমাদের

এতোটা দূরত্বে থাকবো যে

জানবো না

কখন তোমার দিন অথবা আমার রাত্রি!


তোমার শূন্য হাত কখনো  থাকবে না খালি

বরাবরের মতো নতুন চুড়িতে

ভরে উঠবে ড্রয়ার।


তুমি হেসে উঠবে একই রকম

তুমি একই ভাবে ভাসতে থাকবে নোনাজলে,

একই ভাবে এলোমেলো হবে

তোমার বসন

প্রায় একই রকম হবে আমারো।


আমার বা-দিকে হেসে উঠবে নতুন কন্ঠ।


রেস্তোরাঁগুলো কিছুটা বদলে যাবে

চেনা রাজপথে বাতির রঙগুলো যাবে পাল্টে

বুঝবো,সিংহাসনে বসেছে নতুন অধিপতি।


এবং আমরা পরস্পরকে জড়িয়ে থাকবো চিরটাকাল।

তবুও মিলবো না কিছুতেই। 


আমাদের সময়গুলো আর ছুটবে না

একসাথে।

বদলে যাবে আমাদের প্রিয় গানের সুর!


তবু দেখা করবো না

সাহসী অভিসারে উঁকি দেবো না দরজায়।


ডান,বামকে জড়িয়ে আরো কিছুক্ষণ 

পড়ে থাকবো বিছানায়


তুুমি আর আমি আরো খানিটা যাবো সরে,

তবু ছোঁব না কিছুতেই

আমাদের সযত্নে লুকিয়ে রাখা সিন্ধুক।


জমানো অভিমান আর কিছু

মেঘময় স্পর্শ 

হয়তো পাতকুয়া থেকে গড়িয়ে পড়বে

খানিকটা অশ্রুবিন্দু।


তবুও মিলবো না কিছুতেই

কোনো ভাবেই স্থাপিত হবে না

কোনো সংযোগ

অথচ,বারবার আমরা আটকা পড়ে যাবো

সেখানে

তুমি

আর

আমি

শুরু করে ছিলাম

যেখানে



শ্যামল রায়ের একগুচ্ছ কবিতা

 



তোমাকে পেলে যা হতো


তোমাকে পেলে এলোমেলো বাতাস হতাম

 তোমাকে পেলে বরফের মধ্যে

উষ্ণতা খুঁজে নিয়ে নির্মাণ করতে পারতাম

একটি সুন্দর দেশ।

তোমাকে পেলে যা হতো।

তোমাকে পেলে খোলা জানালার পর্দা সরিয়ে

দুচোখ দিয়ে শুধুই দেখতাম তোমাকে

পাখি আছে আছে নামিদামি নানান গাছ

চারিদিক শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ

তোমার আঁচল পেতে দুজনা বসতাম

আলতো করে ছুঁয়ে দেখতাম

তুমি কেমন আছো?

দুঃখের মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে।

তোমাকে পেলে যা হতো

উষ্ণতা থাকলে এসব ভাবতে পারতাম

তাই অপেক্ষায়----

সুন্দর দেশের জন্য তোমার মুখ দেখবো

তোমাকে পেলে যা হতো আজও তাই ভাবি।



অনুভব করি


অনেকটা দূরে আর থাকতে

ইচ্ছে করেনা রোজ

গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়

চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে

এসব যন্ত্রণার মাঝে

একটু শান্তি পেতে চাই

তাই অনুভব করি

খুঁজি ফিরি, অচঞ্চল মুখ

সুন্দরতা ময় ফুলের বাগান।


রঙ ছিলে

প্রথম কথা বলার সময়

তোমার নানান ধরনের রঙ ছিলো

মনের অন্তর জুড়ে ছড়িয়ে দিতে

আমি ভেসে বেড়াতাম ঢেউয়ের পর ঢেউ নিয়ে

শুধুই উষ্ণতায় উষ্ণতায়।

প্রথম কথা বলার সময়

শুধুই ভালোবাসা দিতে মনের বৃত্ত জুড়ে।

আজও দুঠোটের ছোঁয়া

শুধুই স্পর্শ করে যায়

দিন লিপির পৃষ্ঠা খুললে-----।



সুখস্মৃতি


সুখ স্মৃতি গুলো আজো বড্ড চঞ্চল করে

যা আগে কখনো ভাবি নি

আনকোরা ছিলে,  সেদিন তুমি 

হাসিটা ছিল সহজ সরল।

সে সময় তুমি দু ঠোটের বদল এর সুখ

ভাবোনি, প্রজাপতির ডানার মতো

তোমার দুচোখ তবুও মনের ছোঁয়ায়

একে দিই রোজ

সুখস্মৃতির অন্দরমহল জুড়ে 

ভাবি তুমি আজো আছো

খুব কাছাকাছি পাশাপাশি।



ভাবনার জায়গায় আজ


ভাবনার জায়গায় আজ

হাট বসেছে

পসরা সাজিয়ে নানান মানুষ

তাই ইচ্ছে করে গান গাইতে

তাই ইচ্ছে করে চিৎকার করতে

আমাকে বাঁচতে দাও স্বপ্ন দাও

দাও দু মুঠো ডালভাত, আটপৌরে শাড়ি

এই হাটে শুধুই হিসেব নিকেশ।

হৈ-চৈ যাতায়াত।

নেই আম

ধীমানপূরবী


 দুটি লিখিত গোলাপ


১।দুটি লিখিত গোলাপ শুয়ে শুয়ে ভেঙ্গে পড়ে বহুতল রাতে।তাতে তোমার অভিযোগ কোথায়.....?

কোন উত্তর নেই।

মগজ ভর্তি দিয়াশলাই দপ করে জ্বলে উঠল

হঠাৎ বুকের পঙক্তি ছুঁয়ে বললে রাগ করেছ?

কোন উত্তর নেই।

২।এ্যাস্ট্রের ধোঁয়ায় আজকাল নেশা হয়।নেশাটা বহুদিনের।

ডাক্তার বলেছে আমার হৃদরোগ,যখন তখন মরতে পারি....

৩।মোমবাতি আর আগুন খরচ করে ফেলেছি অনেক আগেই

এখন রোজ বমি হয়....

৪।কয়েকটা গুচ্ছগ্রাম জ্বালিয়ে রাখি যদি আগুন নিভে যায়?

হৃদয় দারুন অসুস্থ।

চোখ খাবার মতও আগুন নেই কোথাও,কখন কখন আগুন খুব দরকার

মানুষকে বাঁচাতে.....