১৫ জুলাই ২০২১

রেবেকা সুলতানা ( রেবা )

 

স্বরচিত কবিতা পাঠে কবি    রেবেকা সুলতানা ( রেবা ) 





তুমিই শুধু  বুঝলে না


তোমার মুছকি হাসির মাঝে লুকিয়ে 

 থাকা দুষ্টুমির ভাষা আমি বুঝি।

তোমার গোম্ভিরতার মাঝে লুকিয়ে

থাকা অভিমানের ভাষা আমি পড়তে পারি।

তোমার মিথ্যে ভালো থাকার পিছনে

কষ্টের ব্যাথাগুলো অল্পতেই যে বুঝে ফেলি।

তোমার হেঁটে যাওয়ার পায়ের শব্দে 

আমি তোমায় চিনতে পারি যে!

সেলফোনের ওপাসে কেমন আছো তুমি

বুঝতে আমার একটুও দেরি হয় না রে।

চোখ বুঝলেই তোমার বদন খানি

আঁকতে পারি নিমেষেই

শুধু পারিনা ছুঁতে তোমায়।

হৃদয়ের ভাজে ভাজে তোমার নামে

বৃষ্টি ঝরে অঝর ধারায় 

তাই তো এতো কিছু বুঝতে পারি। 

শুধু তুমিই বুঝলে না আমায়

 নিরব শব্দের ব্যথার পাহাড়

শহর জুড়ে আছে আমার

বুকের বাঁ পাসের যন্ত্রনার  খবর 

কেউ  রাখেনা এখন  আর।

আইরিন মনীষা

 বিরহী অশ্রু


বিরহী অশ্রুর  আঁখিতে  ভরে

চেয়েছিনু  আমি তোমারি পানে,

অপেক্ষার প্রহরের যবনিকা টেনে

এইতো বুঝি কবি শুধালে কাব্য শানে. 


এখনো চোখে ভেসে ওঠে সেই ক্ষণ

সেই তোমার ডাগর কালো চোখের চাহণী,

সহাস্যে হেসে বলতে তোমাতেই হারিয়েছি মন

অথচ, কি আশ্চর্য আজ সেসব কেবলই ধুসর অতীত। 


এখন আর বেলকনিতে বসে আমার কাকাতুয়াটি ডেকে ওঠেনা

ভুলে গেছে  সে আমার প্রিয়জনের নাম ধরে ডাকতে,

ক্লান্ত বিকেলে একাকী প্রহরে আসেনা তোমার ফোন

পাইনা আমি নীল খামে পাঠানো তোমার সেই চিঠি।


কতদিন যাইনি সাঁঝের বেলায় সূর্যের রক্তিম আভা দেখতে

যেখানে করে গোধুলী আলো খেলা একান্ত আপন মনে,

তৃষিত আঁখিতে আজ ওঠেনা সুন্দরের সান্নিধ্যে শাণিত জোয়ার

সব যেন ধুসর বিবর্ণ ঝরাপাতার অপাংক্তেয় কথন।


বাদল দিনের বৃষ্টি ফোঁটায় সঞ্চারিত হয়না তোমার দেওয়া কদম

তুমিই তো এক সময় পরম আনন্দে ভালোবাসায় আমার খোঁপায় গুঁজে দিতে,

আর গুন গুনিয়ে বলতে আমায় বড়ই ভালোবাসি

যেখানে হতো প্রশন্ত বারিধারায়  প্রকৃতির সাথে আলিঙ্গন।


বসন্তের মাতাল সমীরণে বাসন্তী রঙে আর সাজা হয়না

পায়না শোভা বাসন্তী রঙে ম্যাচিং করে সাজগোঁজ

সবই এখন কষ্টের নোনাজলে ভেসে একাকার 

জানিনা কবে আমার এই বিরহী প্রহর হবে শেষ বা আদৌ হবে কিনা।


কি পেলাম আর কি পেলাম না তা নিয়ে ভাবি না আর

আমার বিরহী প্রহরে আমিই আমাতে হাসি কাঁদি,

আমার কষ্টের প্রহরের ভাগ কাউকে দিইনা আর দিতে চাইও না

আমার কষ্ট আমার বিরহী ক্ষণে একান্তই আমার অধিকার।

মমতা রায় চৌধুরী


মেঘ বালিকা


মেঘ বালিকা, মেঘ বালিকা

আজ তোমায় দিলাম ছুটি।

মেঘভেজা রোদদুর এসে

হাত বাড়িয়েছে দুটি।

টগর ,লিলি ,কেতকী

স্মিত হাস্যে উঠেছে মাতি।

ওদিকেতে পুকুর জলে

ভাসছে মোরোলা, সরপুঁটি।

মেঘ বালিকা ,মেঘ বালিকা

এবার তোমার ছুটি।

তাই বলে ভাই মনে রেখো,

আসছে আষাঢ় শ্রাবণে-

উড়িয়ে মেঘের ভেলা।

বৃষ্টি হয়ে ঝরে প'রো

অভিসারিকার পথে।

মেঘ বালিকা ,মেঘ বালিকা

এবার তোমার ছুটি।

নীলাম্বরী শাড়ি পরে,

আনমনে যাও তুমি।

অনেক দূর যেতে হবে

আরো অনেক পথ।

এমনই তো ছিল -

তোমার আমার শপথ।

শ্যামল রায়

ভালোবাসা দেবে না তুমি?


তোমাকে শোনাব সমুদ্রের গর্জন

তোমাকে দেবো নির্ভেজাল

 একটা উঠান ভরা ভালোবাসা

ভালোবাসা দেবে না তুমি?

তোমাকে দেবো একটা সকাল বেলা

তোমাকে দেবো শিউলি ফুল বাগান

কখনো তুলে দেব শিমুল পলাশ

কৃষ্ণচূড়া জুঁই ফুলের ডালি

হ্যাঁ গো ?তুমি ভালোবাসা দেবে না আমায়?

বলো বলো একবারের জন্য হলেও বলো

আমিতো সর্বক্ষণ অপেক্ষায় থাকি

 তোমায় একটু ভালোবাসা দেবো

একটুখানি ছোঁয়া লাগিয়ে বলবো

আমি অনেকটাই পাহাড় টপকে যেতে পারবো

তোমার খুব কাছাকাছি বসবো পাশাপাশি

একটা বিকেল বেলায় সবুজ ঘাসে

বলো বলো তুমি আমায় ভালোবাসা দেবে না?

তুমি ভালোবাসা দিলে আমি ঝর্ণায় ভিজতে পারি

তুমি ভালোবাসা দিলে রোদ্দুরে অপেক্ষা করতে পারি

তুমি ভালোবাসা দিলে নদী সাঁতারে  ছুতে পারি

তুমি ভালোবাসা দিলে এক চাদরে ঘুমোতে পারি

তুমি ভালোবাসা দিলে রাত জেগে ভাবতে পারি

তুমি ভালোবাসা দিলে দেশ ও গড়তে পারি

দায় বোধে দায়িত্ব  নিয়ে লড়তেও পারি

তোমায় একটু ভালোবাসার জন্য

তোমার জন্য রোদ্দুরে দাঁড়াতে পারি

তোমার জন্য ঝড়ি বৃষ্টিতে ভিজতেও পারি

শুধুই তুমি একটু ভালোবাসা দিয়ো

বলো বলো তুমি কি ভালোবাসা দেবে না?

মোহাম্মাদ আবুহোসেন সেখ


 বর্ষার ছবি



বর্ষা এলে পানিতে ডোবে

     পুকুর নদী খাল,

মাঠের বুকে শ‍্যাপলা ফোটে

   তোলে খুঁকির দল।

চারিদিকে থৈ থৈ পানি

    জেলে ধরে মাছ,

রাখল বালক গুরু নিয়ে 

   বর্ষায় মাতে গান।

মাঠ ভর্তি নানান পাখি

আসছে উড়ে অজানার দেশ থেকে,

  অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি

মুখ ফেরাতে হয়না ইচ্ছে।

বর্ষা হলে বীজ রোপন 

  করতে হবে ভাই,

কোদাল হাতে কাঁধে লাঙল

  চলেছে চাষির দল।

নদীর বুকে নৌকা চলে

     তুলে রঙিন পাল,

বৃক্ষ রাজি ফিরে পায়

   মুচকি হেঁসে কয়।

ইকবাল বাহার সুহেল ( ইংল্যান্ড )


 রক্তহীন বুক



আমি শকুন দেখেছি 

তোর চোখের সাথে মিলিয়ে 

আমি শকুন দেখেছি ! ছিড়ে খাওয়া চোখ 

দেখেছি রাতের আধারে সাদা রক্তহীন বুক !


আমি শকুন দেখেছি 

স্রোতে ভেসে যাওয়া মৃতদেহের ওপর দাঁড়ানো 

একটা আত্মতৃপ্ত, অহংকারী ধরনের শকুন ! কফিনে কাপড় জড়ানো !


গল্পের আদি, মধ্য, অন্তের ধারাকে ভেঙে দিয়েছিলি যখন ! আমি শকুন দেখেছি 

মীমাংসা না করেই তুই তোর অসমাপ্ত গল্পটা শেষ করতে চেয়েছিস ! ঘৃণিত হয়েছিস।

তরুণকুমার পাল


 জারজ ও নিষ্পাপ মানব



সভ্য যুগের অচেতচিত্ত মানব অসভ্য আদিমতায় মত্ত-

বিবেকচ‍্যুত মানুষ কি জলাঞ্জলি দিয়েছে মনুষ্যত্ব?

নিকষ অন্ধকারে অন্তরালে চলে সভ্য জীবনের নষ্টামি - 

কখনো পথের পাশে পোড়োবাড়ির অন্দরে ঝোপঝাড়ে- 

কখনো দেখি বা শুনি নোংরা ডাস্টবিনে -

পড়ে থাকা সদ্যপ্রসূত পরিতক্ত শিশুর ক্রন্দন। 

অনিচ্ছা সত্বেও হিংস্র জন্তুর বলাৎকার -

জবরদস্তি ধর্ষণ- নখ দংশনে আত্মসমর্পণ।

হয়ে যায় চরম ক্ষতি কুমারী সতীত্বের মরণ- 

এক নিষ্পাপ প্রকৃতিও সহসা হলো গর্ভবতী যেন -

শেষে নষ্ট ভ্রুণ- নয়তো ভূমিষ্ঠ এক অপুষ্ট সন্তান- 

পরিচয় হীন হয়ে ঘৃণা সহে বেঁচে থাকে সারাজীবন।

নিষ্পাপ শিশুর আজীবন কলঙ্ক হতে নেই পরিত্রাণ-

সে জানলো না কি তার পরিচয় কাদের সে পাপের ফল-

যতদিন বেঁচে রবে অন্তর্দাহে বয়ে যাবে অশ্রু অনর্গল।

কেউ বলবে অনাথ কেউ বলবে জারজ বা বেজন্মা-

এ জীবন তার যেন অভিশাপ অসহন অনুতাপ -

আজ মানুষ হয়েও কেন হই আমরা এতো অবুঝ?

এতো নিষ্ঠুর অমানবিক এই বিচার কি সঠিক? 

সভ্য মানুষের সভ্য সমাজের এহেন ব‍্যবহারে শত ধিক।

মানুষের কি থাকবে না এতোটুকু বিবেচনা হুঁশ?

অনাথ বেজন্মা সেতো নয় সেও নির্দোষ নিষ্পাপ- মানুষ!

তারও সম্মানের সাথে বাঁচার অধিকার এই পৃথিবীতে-

সেও বাঁচুক সবার আশ্বাসে বিশ্বাসে ক্ষতি কি তাতে?

কি দোষে করবো আমরা ঘৃণা অপমান তারে- 

ভাঙি অন্তস্তল বারেবারে, আঘাত হানি কেন, -বলো কেন?

এসো বন্ধুরা ভাবতে শিখি,অবোধ‍ে,অধর্মের অবিচারে নয়

আমরা দিই এবার সত্যিই শিষ্ঠাচার মানুষের - পরিচয়।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান


মধ্যম পন্থা



জগ‌তে‌ কোন জি‌নিস মাত্র‌ারিক্তভা‌বে বে‌ড়ে গে‌লে; হোক সেটা পরস্পর জানা‌শোনা, যোগা‌যোগ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, ভাললাগা, কিংবা সন্মান প্রদর্শন অথবা হৃদ্যতা তা এক ঝাপোটেই ভে'ঙ্গে কাঁ‌চের দেওয়া‌লের মত খান খান হ‌'য়ে যে‌তে পা‌রে এক নি‌মি‌ষের ম‌ধ্যেই।


অথচ এখা‌নে মো‌টেই পরস্পর পরস্প‌রের ম‌ধ্যে তেমন বিবা‌দের কোন কারণ কিংবা নী‌তির কোনই উ‌ল্লেখ‌যোগ্য পার্থক্য নাও থাক‌তে পা‌রে। 


এটা বোধ ক‌'রি প্রকৃ‌তির সূচী‌তে লি‌পিবদ্ধ থা‌কে যা সম‌য়ের প‌রিক্রমায় ক্রমধারানুযায়ী অহ‌র্নিশ একটার পর একটা ঘ'ট‌তে থা‌কে আর মান‌বের আন্তঃ‌রিকতা ও সততা য‌থেষ্ট থাকা স‌ত্ত্বেও সে‌টি‌কে নিয়ন্ত্র‌ণে রাখা আর সম্ভব হ‌'য়ে উ‌ঠেনা। 


এ প্রস‌ঙ্গে ইসলামেও সবসময় বলা হ‌'য়ে‌ছে  মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে। বাংলায় একটা প্রবাদ প্রচ‌লিত আ‌ছে যা আমরা তা সবাই জা‌নি, অ‌তি বাড় বে‌ড়ো না ঝ‌ড়ে ভে‌ঙে যা‌বে, অ‌তি খা‌টো হ‌য়ো না ছাগ‌লে মু‌ড়ে খা‌বে।

মহুয়া চক্রবর্তী


 অভিমানী আষাঢ় 



আষাঢ়ের আকাশে আজ কালো মেঘের ঘনঘটা

এমনও দিনে পড়ছে মনে পুরনো দিনের সব কথা।

যে পাতা ঝড়ে গেছে 

সে আর জুড়বে না কোন ডালে

কিছু কিছু কথা আজও আছে মনের অন্তরালে।

ব্যাথাগুলো সাজিয়েছি অভিমানী মন জুড়ে।

মাঝদুপুরে হঠাৎ যখন সন্ধ্যা নেমে আসে 

আকাশ কালো করে আসা নাছোড়বান্দা মেঘে

হঠাৎ করে তুমুল বেগে পাগল-করা বৃষ্টি শুরু হয়।


তোমার কি মনে পড়ে, 

আমাদের কথা ছিল সেই বৃষ্টিতে ভিজে নিজেদের ছেলেবেলায় ফিরে যাবার।

এমন দিনেই কথা দিয়েছিলাম 

একে অপরকে শহর ঘুরে দেখার।


বাইরে এখন বইছে ঝড়ো হাওয়া

তোমার কি মনে পড়ে,

আমরা কথা দিয়েছিলাম,

আমরা নিজেদের জীবনের 

ছোট বড় ঝগড়া গুলো ভুলে 

বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায়

আবার নিজেদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবো 

সেই পুরনো দিনে আর 

বন্ধ করে দেবো জানালা গুলো

যাতে ঝড়ো হাওয়া আর তছনছ করতে না পারে।


তারপর বৃষ্টির দুপুরে তুমি আমি পাশাপাশি বসে

তোমার আঙুলে আঙুল পেচিয়ে

নানা রঙের স্বপ্ন বুনবো।


তুমি কি ভুলে গেছো সে সব দিনের কথা

যদি আবার কোনদিনও এমন কোন দিনে দেখা হয়

কোন পথের বাঁকে

সেদিন কালো মেঘের মতো থমকে যেওনা

আকাশ তাহলে আর বৃষ্টি ধরে রাখতে পারবে না।

এরশাদ




 দীর্ঘশ্বাস 


কোন এক সন্ধ্যায় 

তোমার সমস্ত স্পর্শ ফিরিয়ে দেবো নারী।

দু'জনের কাতর চুম্বন,শরীরের সুনামী অথবা তোমার অধরের উদাম নৃত্য

রেখে দেবো তোমার কাতর চাহনীতে।


তোমার শিরদাঁড়া বেয়ে হিম শিহরণ 

আমাকে দিয়েছিলো যে উষ্ণতা! তোমার কপোলের রাঙা লালীমাও

আজ ফিরিয়ে দেবো।

কামোক্ত শরীর,গভীর নাভী বেয়ে বুকের বাঁ পাশে রাখা আমার রক্তাত্ত্ব ক্ষত

আজ ফিরিয়ে নেবো তোমার কাছ থেকে।


বুক বেয়ে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাস আজ অনেক ভারী হয়ে

তোমার ললাট রেখায় এঁকে দিয়েছে যে মানচিত্র

সেখানে এখন আমার বসবাস নেই নারী

তুমি এখন প্রেমিকা নও।

তুমি এখন নষ্ট রাত

তুমি এখন আযৌবনা নৈশপ্রহর

তুমি এখন শীতল রাতের বাষ্পিত ধোঁয়া

তুমি এখন অনন্ত পৌরুষের সু-নিপুন ত্রাশ!

নারী,তুমি এখন কামোক্ত শরীরের টাকায় কেনা দীর্ঘশ্বাস।