২৩ জানুয়ারী ২০২২

কবি সালমা খান এর কবিতা





অধরা
সালমা খান

তুমি  যদি  হও নদী  
তোমার  স্রোতের  ধারায় চলবে
আমার  গতি
দুকূল ভেঙে যায়  যদি,
তবু  ও চলবো নিরবধি । 
তুমি  যদি  হও শিশির বিন্দু 
ভোরের  আলোয় চুষে  নেব তোমার অশ্রু বিন্দু ।
ধুলাঝরা কুয়াশায় খেলবে রোদের পাতা
মনের গহীনে লুকিয়ে  রাখি  বুক 
ভরা  সব ব্যথা ।
যদি হও বৃক্ষ  ,আমার 
নিঃশ্বাসে তোমার  নির্যাস ।
তোমার সবুজ  পাতায় জমানো রয়েছে আমার দীর্ঘশ্বাস । 
যদি  হও মৃত্তিকা
তোমার  জঠরে শস্য দানা হয়ে  জড়িয়ে 
রাখবো আমার  গায়ে ।
নিখাদ বিশ্বাস নিয়ে নির্জীব মাটির 
রুক্ষতাকে সাজাই সরেস ফুলে।
যদি হও শুষ্ক মরুভূমি 
আমি  লু - হাওয়ায় ধুলো উঠা ঝড় ,
হয়ে, ভরিয়ে  দেব আকাশ  চূমি।
ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণি  পাকে  কাটবে 
আমাদের  বেলাভূমি ।
সমুদ্র হয়ে যদি  এসো  
ঢেউ হয়ে তোমার বুকে ভাসবো 
সারাবেলা 
পর্যটক রা করবে ভিড়,শিশু রা 
করবে খেলা ।
মাছের নেশায়, পাখিরা করবে 
মেলা ।

কবি অভিজিৎ রায় এর কবিতা




সাধন-সঙ্গী
অভিজিৎ রায় 

মৌনতা চরম ধর্ম!  এই মেনে চুপ আছ তুমি?
নাকি এসব সাধনা? তুমি কি বলতে পারো বোষ্টমী?

আমার সাধনসঙ্গী হবে বলে জন্ম নিয়েছিলে?
অথচ ভরেছ মুঠো শুধু গর্ভ নিরোধক পিলে।

যন্ত্রণা শব্দের আর ছন্দ চিনে মায়াবী পৃথিবী 
ভিখারিকে প্রশ্ন করে, বল আর কী কী নিবি?

চুপ করে আছে সব; চারপাশে কত লোভ, মোহ
অথচ শব্দের খেলা হৃদয়ে চলছে অহরহ।

এত কথা কোন পথে হারানোর রাস্তা খোঁজে জানো?
তুমি কি সাধন সঙ্গী নাকি শুধু পথ হাতড়ানো? 

শব্দ শুধু প্রশ্ন করে; উত্তর দেবে কি নীরবতা? 
অথচ কান্নার দাম লিখে রাখে চেনা কথকতা। 

অনন্ত মুহূর্ত নিয়ে গর্ব করে, যদিও মুহূর্ত 
ঈর্ষার ডানায় ভর দিয়ে রোজ পরজন্মে উড়ত।

ধাতব মাটির সুরে বেজে ওঠে সব আর্তনাদ 
মৌনতার প্রবঞ্চনা নিয়ে বাঁচে সাধন-প্রমাদ।

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস ৯৭




উপন্যাস 

টানাপোড়েন৯৭
অসহায়তা

মমতা রায়চৌধুরী


নদী উদভ্রান্তের মতো ছুটে এসেছিল নার্সিংহোমে। সমুদ্র দ্রুত বাইক চালিয়েছিল কিন্তু তাতে কি হবে ট্রাফিক জ্যাম ও প্রচুর। 
নদী শুধু সমুদ্রকে বলতে লাগলো 'একটু তাড়াতাড়ি চল?'
সমুদ্র বলল 'আমি চেষ্টা করছি তো বাবু।'
নদী আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল
'আমার জন্যই বোধহয় সবকিছু হলো।'
সমুদ্র মেডিকেল কলেজ থেকে  ছুটে গিয়েছিল নদীকে ধরার জন্য ।তারপর দ্রুত বেগে গাড়ি নিয়ে উডল্যান্ড নার্সিং হোম এর দিকে। 
রূপসার হঠাৎ ভীষণভাবে গল গল করে ঘাম  দেখে ঝরনা ঘাবড়ে  যায় ঠিকই কিন্তু দ্রুত ছুটে এসে বলতে থাকে 'বৌদি ,বৌদি ,কি হয়েছে তোমার? কি হয়েছে বলো ,একবার আমাকে বল?'
রূপসার তখন বুকের ভেতরে একটা তীব্র যন্ত্রণা যেন কাঁকড়া বিছের  মত কামড় তার হৃদপিন্ডে বসিয়েছে। কোনমতে তার নিজের বুকটাকে হাত দিয়ে দেখাতে পেরেছে ঝর্নাকে।
ঝরনা অত্যন্ত উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারিণী। সে কাল বিলম্ব না করে তার বৌদির ফোন থেকে ফোন করেছে তাদের অফিসের বস মিস্টার মালহোত্রাকে।'
রূপসার ফোন থেকে ফোন যেতেই মিটার মালহোত্রা অত্যন্ত প্রসন্ন কণ্ঠে বলেন 'হ্যাঁ রেস্ট হলো ,কেমন আছো?'
এ প্রান্ত থেকে ঝরনা বলে ওঠে ' আমি রুপসা বৌদির বাড়ির কাজের মেয়ে।'
মিস্টার মালহোত্রা বলেন' ও ।কিছু কি হয়েছে?'
ঝরনা বলে' হ্যাঁ ,স্যার ।বৌদির হঠাৎ করেই বুকে যন্ত্রণা ।কি করব বুঝে উঠতে পারছি না?'
মিস্টার মালহোত্রা বলেন 'সেকি কথা ইমিডিয়েট অ্যাম্বুলেন্স খবর করুন। আচ্ছা, ঠিক আছে আপনাকে করতে হবে না ।আমি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
ঝরনা ভরসার কন্ঠে বলে 'ঠিক আছে, স্যার। তাই হোক  কোথায় নিয়ে যাবেন?'
মিস্টার মালহোত্রা বলেন 'উডল্যান্ড নার্সিং হোম।'- বলেই ফোনটা কেটে দেন।
অ্যাম্বুলেন্স আসার মাঝের সময়টিতেই ঝরনা ফোন করে দিয়েছিল নদীকে, তার মায়ের কন্ডিশনের কথা জানিয়ে।
এর মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়ে
 যায়। রুপসাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স  দ্রুতগতিতে নার্সিংহোমে পৌঁছে যায়। 
ওখানে পৌঁছাতেই মিস্টার মালহোত্রার তদারকিতে রুপসাকে প্রথম ইসিজি করা হয়। ইসিজি রিপোর্টে দেখা যায় এটা ততটা মারাত্মক নয় । হার্টে ধাক্কা লেগেছে ঠিক ই কিন্তু প্রাচীর তার অক্ষত
 আছে। তখন সবাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস 
ফেলে ।
ডাক্তারবাবু ,মিস্টার মালহোত্রাকে বলেন 'এটা এতটা মারাত্মক নয় ।টোটাল বেডরেস্ট এর প্রয়োজন আর শরীর মনটাকে ঠিক রাখার জন্য এখন ডাক্তারদের তদারকিতে রাখতে হবে ।সে ক্ষেত্রে নার্সিংহোম সবথেকে উপযুক্ত নিরাপদ জায়গা।'
মিস্টার মালহোত্রা বললেন ' আপনারা যেটা বুঝবেন ,সেই ভাবেই কাজ করা হবে।'

সমুদ্র নদীকে নিয়ে বাইক দ্রুতগতিতে চালিয়ে মেডিকেল কলেজ থেকে রবীন্দ্রসদনে পৌঁছায় উডল্যান্ড নার্সিং হোমে।
নদী  উদভ্রান্তের মতো এসে নার্সিংহোমে যখন ঢোকে, তখন দেখতে পায় নার্সিংহোমের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে ঝরনা। একটা অশান্ত উদ্বেগ চোখেমুখে।
নদীকে দেখে ঝরনা বলে'
'মামনি ,বৌদি ভিতরে। এখন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। বাইরে ওয়েট করো।'
নদী ঝর্ণাকে বলে' মাসি আগে বলো মা কেমন আছে?'
ঝরনা বলে 'বললাম তো ঠিক হয়ে যাবে , অতটা মারাত্মক নয়।'
নদী বলে 'কি হয়েছে মায়ের?'
ঝরনা বলে' হার্ট অ্যাটাক।'
নদী খেয়াল করল মিস্টার মালহোত্রা এসেছেন। কিন্তু আজকে মিস্টার মালহোত্রাকে দেখে নদীর কোন বিরক্তি চোখে মুখে নেই। শুধু এই টুকুই প্রত্যাশা মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।
বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সকলে। নদীর যেন মনে হলো তার মায়ের থেকে সে আলোকবর্ষ দূরে আছে।
ঝর্ণা নদীকে বলল 'তোমার মাসিমনিকে ফোনটা করো খবরটা জানাও। দাদুকেও  খবর টা জানাও।
তোমার কাকাকে আমি ফোনটা করে দিয়েছি।'
নদীর পেছনে নদীর বন্ধুরাও এসে হাজির হয়েছে। মাসিমনির ফোনটা নম্বর ডায়াল করল রিং হতে লাগলো । একবার বেজে যাবার পর আবার রিং করলো ।
এবার অপরপ্রান্ত থেকে ফোনটা রিসিভ করে বলল ' হ্যালো।'
নদী বলল  'মাসিমনি আমি নদী বলছি।'
টুকাই ফোন ধরে বলল ', দিদিভাই তুমি ভালো আছো?
নদী বলল  'হ্যাঁ ,আছি একরকম। মাসিমনি আছে রে?'
টুকাই বলল' এক্ষুনি ডেকে দিচ্ছি তুমি একটু হোল্ড করো দিদিভাই।'
'মা ,মা.আ.আ.আ,মা…
বিপাশা রান্নাঘর থেকে আওয়াজ দিল
' কি হলো এভাবে চিৎকার করছো কেন?'
টুকাই বলল 'দিদি ভাই ফোন করেছে।'
বিপাশা বলল' হ্যাঁ ,যাচ্ছি দাঁড়া।'
বেসিনের কল টা বন্ধ করে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে তাড়াতাড়ি চলে আসলো এবং ফোনটা রিসিভ করে বললো' হ্যাঁ বল স্রোতস্বিনী। কেমন আছিস?'
নদী ডুকরে কেঁদে উঠে ।
বিপাশা বলে' কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল আমাকে?
নদী বলে 'মাসিমনি, মা ,মা, মা বলতে বলতেই গলা ধরে আসে।
বিপাশা বলে" কি হয়েছে দিদি র।'
নদী বলে মাকে ' নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।'
বিপাশা বলে 'সে কিরে ?এখন কেমন? ঠিক আছে সব?'
নদী বলে 'ডাক্তারবাবু বলেছেন অতটা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। মাকে এখন চেকাপ করা হচ্ছে  কমপ্লিটলি নাকি বেড রেস্টে থাকতে 
হবে ।অবজারভেশনে থাকবে নার্সিংহোমে।
বিপাশা বলে 'থ্যাংকস গড ।ঠিক আছে কাঁদিস 
না ।আমরা আগামীকাল যাব ।রাতে খবর নেব কেমন থাকে বলিস ।'
নদী বলল 'কালকে আসবে মাসিমনি?
বিপাসা বলল 'এত রাত হয়ে গেছে, বাচ্চাদের নিয়ে...।'
নদী বুঝল 'তাই তো মাসিমনি ও   সংকটের মধ্যে আছে।'
 তারপর বলল  'ঠিক আছে।'
ইতিমধ্যে মিস্টার মালহোত্রার সঙ্গে ডাক্তারবাবু হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন ঘরে ।
নদীর হাতের  চাপ অজান্তেই ঝরনার হাতের ওপর পড়েছে ।খরস্রোতা নদীতে মানুষ যখন ডুবে যেতে বসে তখন যেমন সে ভাসমান কচুরিপানা দেখলে তাকে আঁকড়ে ধরতে চায়, ঠিক তেমনি।
কতটা অসহায়ত্ব ছুঁয়েছিল নদী আর ঝর্ণাকে। ঝরনা বুঝেছিল সত্যিই ঝর্নার না যতটুকু বিপদ হবে , বিপাশা না থাকলে, তার থেকে বেশি বিপদ হবে নদীর ।কারণ ঝরনা একটা জীবন পার করে এসেছে ।সে নিজেকে কোনমতে মানিয়ে নিতে পারবে কিন্তু এই বিপুলা পৃথিবীতে নদীর কি 
হবে? কারণ নদী যতই মাকে নির্লিপ্ত ভাবুক না  কেন ?তার মাথার উপর ছাতা হয়ে রয়েছে। 'শিকড় উপড়ানো অসহায়তার কাছে নিজের কষ্ট অভিমানগুলো সবকিছুই যেন মনে হলো আজ তুচ্ছ।
দুজন অসহায় জীব পরস্পর পরস্পরকে হাতে হাত রেখে জীবনের গিরিখাত , ধ্বস পার করতে চাইছে। চলো দুজনে বলতে চাইছে ' আয় বেঁধে বেঁধে থাকি"।
মিনিট দশেক পরে ডাক্তারবাবু বেড়িয়ে আসলেন এবং বললেন ঘাবড়াবার কিছু নেই ।একটা টেনশন থেকে বোধ হয় এরকম কিছু একটা ঘটেছে।
মিস্টার মালহোত্রা এসে নদীর মাথায় হাত রেখে বললেন 'টেনশন নিও না। আমরা আছি।'
যে লোকটার প্রতি এতটা বিরক্ত, এতটা ঘৃণা জমে ছিল ,নদীকে সেই লোকটাই  মাথায় হাত রেখে আশ্বাসবাণী শোনাচ্ছেন ।নদীর মুখ যেন অনেকটা স্বাভাবিক ।শুধু মাঝে মাঝে ঠোঁট দুটো অল্প নড়ে উঠলো ।কিছু বলতে পারলো না।
ঝরনা খেয়াল করছিল নদীকে। নদী আবার না কোন সিনক্রিয়েট করে ফেলে ?
কিন্তু না, নদী আজ কিচ্ছু করে নি। নদীর সে অবস্থাও নেই ,সেরকম কিছু করার। আজকে তার কাছে তার মায়ের মুল্য অনেক বেশি মনে হয়েছে।
 আজ নদীর বুকে উথাল পাথাল ঢেউ ঢেউ। কি করলে  শান্ত হবে  , ঝড় থেমে যাবে ,বৃষ্টির বেগ কমে যাবে । নতুন ভাবাবেগের উচ্ছ্বাসে  মেতে উঠবে আবার স্রোতস্বিনী। নাকি কোনো অন্ধকার অধ্যায় শুরু হবে তার জীবনে ?সে কি হারিয়ে যাবে কোন পঙ্কিল আবর্তে যেখানে সহস্ত্র শৈবালদাম এসে বাসা বাঁধবে। নিজের মনের আশঙ্কা ছাপিয়ে তাকে যেন ক্রমশ সেই অসহায়তা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। নদী শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার মায়ের কেবিনের দিকে। নদীর চোখ জলে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে ।সে শুধু মনে মনে ভাবে তার মায়ের উপর নির্ভর করছে তার জীবনটা। সে কি এবার বিশাল জনসমুদ্রে একলাই হাঁটবে নাকি তার মা তার পাশে থাকবে সর্বদা ।সন্ধ্যায় শহরে যখন রাস্তার বাতিগুলো এক এক করে জ্বলে
 ওঠে ।তখন মনে হয় নদীর এই শহরে কেউ এমন  কি আছে যে তার সত্যি কারের বন্ধু হতে
 পারে ?হৃদয়ের জমা কষ্ট, অভিমান, যন্ত্রণা গুলোকে তার কাছেই শুধু বলতে পারে।

কবি আলেয়া ফয়সাল এর কবিতা




বাবাদের ইতিকথা
আলেয়া ফয়সাল

নিয়ে কাঁধে সংসারের বোঝা 
দাঁড়িয়ে যিনি থাকেন সোজা 
বাবা তাঁর নাম। 
সয়ে কষ্ট হাসি মুখে
লুকিয়ে দুঃখ রাখতেন বুকে
শ্রমে তাঁর রক্ত হয়েছে ঘাম।
বাঁচতে ভুলে নিজের জন্যে
আরাম, অবসর করে পণ্য
বিকিয়ে দিতেন রোজ।
কার,কখন,কি প্রয়োজন 
সেই বিষয়ে সারাক্ষণ 
 ঠিকই রাখতেন খোঁজ। 
ধরে হাল শক্ত হাতে 
সামলিয়েছেন সংসার দিনেরাতে 
উফফফ করেন নাই তবু।
আশা-ভরসার শীতলছায়া
 ছড়িয়ে দিতে স্নেহের মায়া 
 ক্লান্ত হয় নাই কভু।
সকল বাবা থাকুক ভালো 
সঙ্গে নিয়ে খুশির আলো 
দুঃখ করুক জয়। 
আছে  বাবা  যত
আমার বাবার মত 
যেন তাঁরা সেরা বাবা হয় ! 
বাবা তুমি ভালো  থেকো  ঐ 
আকাশের বুকে। 
মিস করি বাবা তোমায় আমি তুমি নাই বলে।

কবি জাবেদ আহমেদ এর কবিতা




নবোদয় 
জাবেদ আহমেদ 

এই  বারবার
শতবার
লক্ষকোটি বার
উদয় হও আমার আকাশে। 

এই নিশিতে পূর্ণিমার চাঁদ
শুভ্র তারা 
প্রাণবন্ত সকাল হও।

বেলিফুলের মালা হও
বর্ষার আকাশে
মেঘ কেটে হাসো।

শরতের সকালে
দূর্বাঘাসের উপরে
ছিকছিক করো

বসন্তের বাগে
ফুল ফোঁটাও।

নদীর খুলে জলমল
জল হয়ে গীস্মে থাকো।

বারবার সুখ ষাতনায়
তোমারই নবোদয় হোক
প্রাণের চাওয়া এই আমার নন্দিনী। 

ভালোবাসা'র নবোদয় তুমি
এই,,,শুনছো কি তুমি!
অনুভূতির পাগলিনী।

শামীমা আহমেদ এর ধারা বাহিক উপন্যাস পার্ব ৫৫





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৫৫)
শামীমা আহমেদ 

রাহাতের সাথে কথা শেষ  করে তাকে বাসায় নামিয়ে ঘরে ফিরতে ফিরতে শিহাবের  প্রায়  রাত সাড়ে দশটা বেজে গেলো। সপ্তাহ শেষে   দুজনে  একসাথে আজ বেশ কিছুটা সময় কাটালো  "টেবিল টপ" রেস্টুরেন্টটায়। শিহাব রাতের মত কিছু খাবার খেয়ে নিয়েছে। সেখানে রাহাতকে ডিনার করাতে চাইলেও একেবারেই রাজি  করানো গেলো না।রাহাত জানালো,সারাদিনের ক্লান্তির পর সে বাসায় ফিরবে।মা আর শায়লা আপুর সাথে রাতের খাবার খাবে।শিহাব জানালো,আমার জন্যতো এখানে আর কেউ অপেক্ষায়  নেই। আমাকে এভাবেই জোড়াতালি দিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে।এভাবেই মানিয়ে নিতে হচ্ছে।
রাহাত শিহাবের কষ্ট  বুঝতে পারলো।তাকে আশ্বাস দিলো, শীঘ্রই আপু আপনার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষায় থাকবে। দিনশেষে আপনি যখন ঘরে ফিরবেন আপু আপনার দরজা খুলবে। আপনাকে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতে কাপড় এগিয়ে দিবে।আপনার পছন্দের খাবার রান্না করবে।আপনারা একসাথে বসে কফি খাবেন।একসাথে ঘুরে বেড়াবেন! রাহাতের কথায় শিহাবের চোখ চকচক করে উঠছিল!  সুন্দর আগামীর আশায় তার মনে স্বপ্নেরা উঁকি দিচ্ছিল।শিহাব বুঝতে পারলো হয়তো এতদিন সে রাহাতের মতই কাউকে মনে মনে খুঁজছিল যার কাছে মন খুলে সব কথা বলা যায়। যে তার না বলা কথাগুলোর বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে।চমৎকার কিছু সময় কাটলো দুজনের। শিহাব মনের ভেতর অপার এক আনন্দ নিয়ে আজ ঘরে ফিরলো।মনে হলো সত্যিই পৃথিবীটা খুবই সুন্দর! এখনো সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ভালবাসার জন্য মানব হৃদয় উদ্বেলিত হয়।এখনো নিঁখাদ ভালোবাসার মূল্যায়ন হয়। তার  মনে হলো  নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙে সে কোন ভুল করেনি।হয়তো এমনই হয়,খারাপ সময় খুব বেশিদিন থাকেনা।শুধু শক্ত মনে দুঃসময়টাকে মোকাবেলা করতে হয়।শিহাব শায়লাকে ভেবে স্বপ্নের দোলায় দুলছে আজ।মনে হচ্ছে শায়লা তাকে ঘিরে আছে।শায়লার নিঃশ্বাস,শায়লার মাঝে গোলাপের সুরভির উন্মাদনা খুঁজে পাচ্ছে। খালি ঘরটাতে ঢুকেও  শিহাবের মনটা  আজ  আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আছে! যেন ঘরময় শায়লার উপস্থিতি সে টের পাচ্ছে।যেন এক্ষুনি শায়লা এসে বলবে, আহ! শিহাব,কত ক্লান্ত তুমি আজ, এ কথা বলেই হাতটা এগিয়ে সবকিছু নিয়ে শিহাবকে ভারমুক্ত করবে। আর শিহাব শায়লার অমন অপরূপ মায়াভরা কান্তির মুখাবয়াবে তাকিয়ে দিনের সব ক্লান্তি ভুলে যাবে। চট করে সে এক টানে শায়লাকে বুকে টেনে নিবে।শায়লার শত আপত্তিতেও একটি গাঢ় চুম্বনে তাকে আবেশিত করবে। শায়লার ছাড়িয়ে নেয়ার শত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে শিহাব শক্ত করে তাকে বুকের সাথে বেঁধে রাখবে। যেন কত যুগের জমাটবাঁধা ব্যথার বরফ শায়লার বুকের উষ্ণতায় গলতে শুরু করবে। 
রাহাত আজ এমনি করে শায়লাকে কাছে পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।বয়সে ছোট হলেও  রাহাত সবই বুঝতে পারছে।শিহাবের মন চাইছিলো রাহাতকে অতীতের সব খুলে বলতে কিন্তু রাহাত যেন শিহাবের সব কষ্ট বুঝে নিয়ে তা লাঘব করার জন্য নিজেকে প্রত্যয়ী করে তুললো। শিহাব ভাবলো,
রাহাতের মত এমন একটা ছোট ভাই আছে বলেই শায়লাকে পাওয়ায় আর কোন বাধা থাকলো না। আর শায়লার মত বোন যার আছে সেই ভাইতো পৃথিবীর ভাগ্যবানদের একজন। এমনি নানান ভাবনায় শিহাব মনের অজান্তেই নিজেকে শায়লার পরিবারের একজন ভেবে নিলো। বহুদিন শিহাব নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।মা,বাবা,আরাফ, ভাবী,ভাতিজা, ভাতিজি, ভাইয়া  সবাইকে ভীষণভাবে মিস করছে আজ। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা নিজেদের বাড়িঘর এলাকা সব ফেলে এসে অচেনা মানুষজনের সাথে থাকতে হচ্ছে।তবে শিহাব আশায় বুক বাঁধলো,শায়লাকে নিয়ে আবার তাদের পরিবার হাসি আনন্দে মেতে উঠবে। রিশতিনার সেই ঘটনাটির পর শিহাবদের পরিবারের আনন্দ যেন থমকে আছে।শায়লার প্রতি শুধু শিহাবের অগাধ বিশ্বাস শায়লা সবাইকে আপন করে নিবে,মা ভাবী তারাও শায়লার আপনজন হয়ে উঠবে! শিহাবের মনে হলো চারদিকের ছড়ানো ছিটানো সব দুঃখ কষ্ট গুলো যেন নিমেষেই দূর হয়ে যাচ্ছে, এক সুখের হাতছানিতে সবকিছু  এক কেন্দ্রে একীভুত হচ্ছে। শিহাবের মনের ভেতর নানান কথার ঝড় উঠেছে।শায়লাকে সব বলতে হবে।আজ রাতেই শায়লাকে সব বলবে সে।
শিহাব ফ্রেশ হয়ে স্লিপিং স্যুট পরে নিলো। ঘুমানোর আগে এক কাপ র'কফি হলে দারুন হতো।কিন্তু আলসেমিয়ে তা আর হলোনা।এখন শায়লার দিকেই মনের পাল্লা ভারী হয়ে আছে।কাল সকালে শায়লাকে নিয়ে জিগাতলার বাসায় যাবে। শায়লার সাথে এ ব্যাপারেও একটু কথা বলে নিতে হবে।ওকে মানসিকভাবে তৈরি  করে নিতে হবে।তবে বাসার সবকিছু আগে থেকে জানাবে না,তাহলে শায়লার কাছে কোন কিছুই নতুন মনে হবে না। আরাফের সাথে শায়লার প্রথম দেখা হওয়ার ক্ষণটার জন্য শিহাব উদগ্রীব হয়ে আছে। শায়লাকে বলবে কাল তুমি সবুজ রংয়ের একটা শাড়ি পরবে।শিহাবের মায়ের সবুজ রংটা খুব পছন্দ।
শিহাব ঘড়ি দেখলো। রাত প্রায় বারো টা ছুঁইছুঁই।নিশ্চয়ই শায়লা অপেক্ষায় আছে।শিহাব দেখেছে যত রাতেই শায়লাকে সে নক দেয় না কেন,শায়লা থেকে তার রিপ্লাই আসবেই।কিভাবে যে  ঘুমায় বুঝিনা! সে নাকি জেগে জেগে ঘুমায়! এ এক অদ্ভুত জীবনযাপন!
শায়লা ঘুমিয়েছো?
উহু,,
কেন ঘুমাওনি?
তোমার জন্য অপেক্ষায়। 
আমি যদি নক না দিতাম?
সারারাত অপেক্ষায় থাকতাম।জেগে থাকতাম।
কি বলো? এমনটি করলে শরীর খারাপ করবে।
হউক,তোমার জন্য আমি জেগেই থাকবো।
তারপর সারাদিন ঘুমাবে? তাহলে সংসার দেখবে কে? 
রাতজেগে থাকাটাই আমার আসল সংসার বুঝলেন জনাব।
শিহাবের হাতে মেসেজ লিখে যেন মন ভরছে না। লেখায় কি আর সব অনুভুতি প্রকাশ করা যায়? শিহাব কল দেবার অনুমতি চাইল।
শায়লা সম্মতি জানাতেই মেসেঞ্জারে শিহাবের মুখটা ভেসে উঠলো।যে মুখটা দেখবার জন্য শায়লা দিনরাত অপেক্ষায় থাকে,কিছুদিন না দেখলে আকুল হয়ে উঠে,একটিবার দেখবার জন্য মন ছটফট করতে থাকে।
শায়লার নীরবতায় শিহাব কথা বলা শুরু করলো,
শায়লা তুমি কি বুঝতে পারছো আমরা একটু একটু করে কোনদিকে এগিয়ে যাচ্ছি?
কোনদিকে আবার? ভাললাগছে এটাইতো সব! এই যে কথা বলছি, আর কি লাগবে ?
নাহ,এটাই সব না। কাল আমাদের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় হবে এরপর তুমি শুধুই আমার হবে,শুধুই আমার।
কথাগুলো বলতে বলতে যেন শায়লাকে তার খুব কাছে পাওয়ার অনুভুতিতে  শিহাব ওপ্রান্ত থেকে অস্ফুট এক মায়াজড়ানো কন্ঠে শায়লাকে জড়িয়ে নিতে চাচ্ছে।বারবার বলছে,শায়লা আমি টের পাচ্ছি তুমি আমার খুব কাছে চলে এসেছো। আমি তোমার সবটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি । 
শায়লা বুঝতে পারছে না শিহাবের এই মনের অবস্থায় তার কি করা উচিত। তার ভেতরেও অনেক কিছু ভেঙে মুচড়ে যাচ্ছে। অনেক অপ্রকাশিত অনুভুতির প্রকাশে শায়লাকে আপ্লুত করে তুলছে। দেহের শিরা উপশিরায় রক্তের স্রোত বাড়ছে। হৃদ কম্পনের আওয়াজ যেন শুনতে পাচ্ছে,আর তা ক্রমশই বেড়ে চলছে। শায়লা বুঝতে পারছে না কেন তার নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।অন্ধকারেও শায়লার চোখ শিহাবকে দেখতে পাচ্ছে।মনে হচ্ছে শিহাব তার খুব কাছে এসে বসেছে।খুব কাছে,নিঃ শ্বাসের দূরত্ত্বে তাকে উষ্ণতায় বাঁধতে চাইছে। শায়লা শক্ত করে চোখ বন্ধ করে অনুভবের পূর্ণতায় এক সুখানুভবে নিজেকে ভরিয়ে নিলো।
দুজনেই কিছুক্ষন নীরব  রইল। শায়লা কল কেটে দিলো। বেড সুইচে ঘরে আলো জ্বালালো। মুখে হাত বুলিয়ে দেখলো বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। নিজেকেও কেমন যেন নিস্তেজ লাগছে। গলা শুকিয়ে কাঠ! শায়লা পাশে রাখা এক গ্লাস পানি গলায় চালিয়ে নিলো।ভীষণ ইচ্ছে করছিল,এখন শিহাবকে কাছে পেতে। হঠাৎই আয়নায় চোখ পড়লো শায়লার।নিজেকে দেখে নিযেই লজ্জা পেয়ে গেলো।শায়লা দ্রুত ঘরের  বাতি নিভিয়ে দিয়ে দু'হাঁটুর উপর মাথা গুঁজে বসে রইল।ভেতরে এক চাপা উত্তেজনা।যেন শিহাবের ছুঁয়ে যাওয়া অনুভব! শায়লার ভেতর থেকে কান্নার সাগর উগড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজেকে অসহায় লাগছে।শিহাবের কাছে আশ্রয় খুঁজে ফিরছে। শায়লা মনের অজান্তেই কয়েকবার শিহাব শিহাব বলে ডেকে উঠলো।কিন্তু শব্দগুলো যেন কন্ঠ থেকে বেরুলো না তবুও শায়লার এ ডাক যেন শিহাবের কানে গিয়ে ঠিকই পৌছুলো। 
তক্ষুণি শিহাবের মেসেজ এলো।
শায়লা কি করছো?আমি তোমার ডাক শুনেছি।এইতো আমি, দেখো তাইতো সাড়া দিলাম!
শিহাব এক মূহুর্ত দেরি না করে  আবার মেসেঞ্জারে কল দিলো। শিহাবের ভরাট কন্ঠে 
শায়লা ! ডাকটিতে শায়লা যেন আরো বেশি আবেগাপ্লুত হলো! শায়লা বুঝতে পারে  না, কেন, যত রাত বাড়ে আর ততই আবেগের এমন চেপে বসা। এমন আবেগী কন্ঠে নিজেকে সঁপে দেয়া।বাইরে রাতের আঁধার যতই ঘন হতে থাকে চাওয়া পাওয়ার প্রাবল্য ততই যেন ঘিরে ধরতে থাকে ।মনে হয় যেন শত্রুপক্ষের প্রবল আক্রমণে প্রতিপক্ষকে জয় করে নিতে চাইছে।শায়লা বুঝেনা,  দিনের আলোয় লুকিয়ে থাকা অনুভুতিগুলি যেন রাত হলেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ওদের পাওনাগুলো বুঝে নিতে চায়। বিনিময়ে জীবনাতিপাতে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়।শায়লা জীবনের এই বাঁকগুলো  ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।কেন দিন আর রাতের এই বৈষম্যের খেলা? কেন একজন মানুষের ক্সছেই সবটা সমর্পিত থাকে।কেন হাজারো মানুঢের চলাচলেও শুধু একজিন মানুষই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসবের উত্তরে শুধু শিহাব ন্সমটই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে! শায়লা কোথায় যেন  ভাবনার অতলান্তে ডুবেছে সাথে কিছু লজ্জাও মিশেছে।
শিহাব ওপ্রান্তে অপেক্ষায়।শায়লা,আমি তোমার জন্য নতুন করে বাঁচবার প্রেরণা পেয়েছি।তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না।


চলবে....

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা





গ্রামের ছেলে
 সেলিম সেখ 
 

ওই যে চলে গ্রামের ছেলে
মেঠো পথ বেয়ে,
মনের সুখে কাটায় দিন
পল্লী গীতি গেয়ে।

গ্রামের ওই পুকুরেতে 
দিচ্ছে তারা ডুব,
গ্রামের ছেলেরা মিলে 
করছে মজা খুব।

গ্রামের ওই ছেলেরা দেখি
করছে কৃষিকাজ আজ,
এভাবে দিন কেটে যায় 
নেইকো তাদের লাজ।

গ্রামের ওই রাস্তা ঘাট
সবই তাদের চেনা,
গ্রামের ওই ছেলেগুলো
হয় যে দেশের সেনা।

গ্রামের ওই গাছগাছালি
মেটায় মনের সুখ,
এভাবেই যায় গো দিন 
থাকেনা কোন দুঃখ।

গ্রামের ছেলের মনেতে
থাকে না কোন খেদ,
সকল কাজের পিছেই থাকে 
তাদের উদ্যম-জেদ।

গ্রামের ছেলে বলে আজ 
করছো তাদের হেলা,
ভেবে দেখো ওদের সাথেই 
কাটিয়েছ শত বেলা।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস ৫ম পর্ব




উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
(৫ম পর্ব)

মনি জামান


নিলয় আর মেবিন সারাদিন ঘুমিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে তারপর চারুর সাথে বের হলো ওরা তিনজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুটো রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে পড়লো চারুঃ নিউ মার্কেট মোড় যাবো,কিছুক্ষণ পর ওরা তিনজন রিক্সা থেকে নেমে শহরের একটি কফি হাউজে ঢুকলো,ঢুকেই চারু মেবিন ও নিলয় একটি টেবিলের পাশে চেয়ারে বসলো।
চারু তিনটে কফির অডার করলো বয় একটু পর কফি দিয়ে গেলো,ওরা কফি খেয়ে আবার বের হলো কফি হাউজ থেকে, তারপর শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরলো ঘুরতে ঘুরতে সময় কখন পার হয়ে গেল ওরা বুঝতেই পারিনি।
চারুঃ ঘড়ি দেখে বলল অনেক রাত হয়ে গেছে মেবিন,চল বাড়িতে যায় মা আবার অস্থির হয়ে পড়বে কালকে দিনের বেলায় এসে আমরা আবার ঘুরবো।
মেবিনঃ চল চারু বলেই ওরা বাড়িট দিকে রওনা হলো,কিছুক্ষণ পর রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো তখন রাত নয়টা বাজে।বাসায় এসে ওরা যার যার মত ফ্রেস হয়ে সোফায় এসে বসলো,চারুর মা ওদের খেতে ডাকলো ওরা খাবার টেবিলে এসে বসে পড়লো অনেক খিদে পেয়েছে মেবিনের।
চারুর মা খাবার টেবিলে খাবার পরিবেশন করলো,চারু ওর মায়ের সাথে নিলয় ও মেবিনের সম্পর্কের কথা নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল,নিলয় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো তারপরও পরিচিত হয়ে খুশিই লাগছে ওর।চারুর মা খুব অমায়িক এবং প্রাণ খোলা একজন মানুষ অনেক কথা জিজ্ঞেস করলো নিলয়কে,নিলয়ের মায়ের কথা বাবার কথা ওদের বাড়ির কথা,নিলয় সব বলল,চারুর মা সব শুনে খুব খুশি হল  তারপর বলল,তোমরা খেয়ে তারপর তিজন বসে গল্প কর এবং মনে করবে এটা তোমাদের বাড়ি বলেই উনি চলে গেলেন।
ওরা তিনজন খাওয়া শেষ করে চারুর রূমে  এসে বসলো,তারপর সমুদ্র সৈকত নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করলো কাল কখন যাবে সমুদ্র সৈকতে,সিদ্ধান্ত হল কাল বিকালে ওরা সমুদ্র সৈকত দেখতে যাবে।
চারুঃ তাহলে ড্রাইভার কে ফোন করে জানিয়ে দেই গাড়ি আনতে কাল বিকালে আমরা সমুদ্র সৈকতে যাব এটা,মেবিনঃ হ্যাঁ তাই বলে দে,চারুঃ ফোন করলো ড্রাইভারকে জানিয়ে দিল আগামীকাল বিকালে সমুদ্র সৈকতে যাবে সে কথা আপনি গাড়ি রেডী রাখবেন।
ড্রাইভারঃ ঠিক আছে আপা কালকে স্যারকে বলে গাড়ি নিয়ে আসবো।
চারু ফোনটা কেটে দিয়ে নিলয়ের রূমটা ঠিক করে দিয়ে তারপর মেবিনকে সাথে নিয়ে ওর রূমে ডুকলো,চারুঃ রাত অনেক হয়েছে মেবিন চল শুয়ে পড়ি,মেবিনঃ হ্যাঁ চল চারু আর মেবিন ওদের রূমে গিয়ে দুজন শুয়ে পড়লো,নিলয় তখন অন্য রূমে
একা একা শুয়ে ভাবছে মেবিনের কথা,ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেলো, ভোরে ফজরের আযান হচ্ছে নিলয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল ঘুম থেকে উঠে নিলয় অযু করে ফজরের নামাজ পড়ে আবার শুয়ে পড়লো এবং মনে মনে ভাছে মেবিন উঠেছে কি না, ভাবছে ট্রেন জার্ণির সেই রোমাঞ্চকর সময়ের কথা।
একটু পরে জানালার ফাক গলে ভোরের সূর্যের আলো নিলয়ের রূমে উকি দিল,নিলয় উঠে পড়লো এবং দরজা খুলে বাইরের রেলিং এ এসে দাঁড়িয়ে বাইরের অপূর্ব সকালের অপূর্ব দৃশ্য দেখে আবির্ভূত হয়ে গেলো,একদম নিরব শহর মনে হয় শহর ঘুমিয়ে আছে হয়তো একটু পরেই জেগে উঠবে আর কোলাহল নগরীতে পরিণত হবে।শহর প্রাণ ফিরে পাবে শহর হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন টোকা দিয়ে  চারুঃ এই যে মিষ্টার এখানে একা একা কি দেখছ,নিলয় পাশ ফিরে দেখলো চারু দাঁড়িয়ে আছে।
নিলয়ঃ মেবিন উঠেনি?চারুঃ উঠেছে তবে তোমাকে ডাকছে মিষ্টার,নিলয়ঃ চল তাহলে  বলে মেবিনের রূমে প্রবেশ করে দেখলো মেবিন শুয়ে আছে,নিলয় মেবিনের পাশে বসলো।
নিলয়ঃ ওর গায়ে হাত দিয়ে ডাকলো এই কাক পাখি এখনো শুয়ে আছো কেন উঠো,মেবিন নিলয়কে কাছে টেনে নিয়ে মেবিনঃ খুব মিস করছি সোনা তোমাকে।নিলয় ছোট্ট করে মেবিনের কপালে একটা চুম্বন দিলো, হঠাৎ চারু চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো,মেবিনঃ আর সময় পেলিনা চা নিয়ে আসার,চারুঃ  সামনে অনেক সময় পাবি মেবিন তখন----!
নিলয়ঃ হো হো করে হেসে উঠলো,চারুঃ হয়েছে চা খেয়ে উঠে পড় মনে আছে সমুদ্র দেখতে যাব আজ।
মেবিনঃ তোর কেমন লাগে নিলয়কে বলবি একটু,চারুঃ  নিলয় আসলেই সুন্দর মনের একটা ছেলে সেই প্রথমেই তো তোকে বলেছিলাম প্রেম করলে এমন ছেলের সাথে কর বলেই চারু হাসলো।
মেবিনঃ থাক হয়েছে আর গুনকির্তন করতে হবে না তোকে,চারুঃ ওমা সেকি কথা আমি কখন কির্তন গাইলাম।
মেবিনঃ হয়েছে তুই এক কাজ কর আমার জন্য পারলে এক কাপ গরম পানি নিয়ে আয় ঔষধ খাবো।
চারুঃ তোর এখনো ঔষধ খেতে হয়, মেবিনঃ জার্নি করলে একটু খেতে হয় ঠান্ডা লাগে আমার,চারু উষ্ণ গরম পানি আনতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো,এই সুযোগে নিলয় মেবিনের কাছে এসে বসলো,তারপর মেবিনকে জড়িয়ে ধরলো,মেবিনঃএই ছাড়ো ছাড়ো চারু এখুনি এসে যাবে ও যা শয়তান দেখলে আস্ত রাখবে না।
নিলয়ঃ চারু জানে আমাদের সম্পর্ক ও কিছু বলবেনা,মেবিনঃ ওহ নিলয় ছাড়ো না প্লীজ,এমন সময় দরজার বাইরে থেকে চারু দরজায় নক করলো,মেবিন তাড়াতাড়ি উঠে বসলো নিলয় ও মেবিনকে ছেড়ে দিয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলে দিল,চারু তখন মুচকি মুচকি হাসছে।


চলবে.....