২৪ জানুয়ারী ২০২২

কবি রুকসানা রহমান এর কবিতা



আমাদের কোন বসন্ত নেই

রুকসানা রহমান


আজ বসন্তেরজোয়ারে হলুূূদ আর লাল আবিরের প্রজাপতির ঢেউএর মিছিল শহর ময়। 
আর ঐ -ফুটপাতের মেয়েটি মাকে বললো ওরা একটা ফুল দিলোনাগো মা। 
মাথায় হাত রেখে বলে -ঐদিকে  তাকিওনা,এই যে দেখছো আকাশ
 সেই ছাদের নীচে ধুলো মাটি আবর্জনা আমরা
আমাদের আকাশের রঙ নেই,স্বপ্ন নেই। 

ওদের সাথে আকাশ আর মাটির মতন দুরন্ত
 ঐযে চাঁদ, ওটা ও ফ্যাকাসে আত্মার আলো নেই।

 এই শহরের, ঝলমলে রাতের শহর ও অন্ধকার  ঐযে দেখছো, ভদ্রলোক যারা
আমাদের ঘৃণা করে ওরাই রাতের আঁধারে নারী খেকো হায়না।কখন যে তোকে আমাকে ছিঁড়ে খাবে তাও জানিনা।
আমাদের সম্বল শুধু নিংশ্বাস।
তাই আমাদের জীবনে কোন বসন্ত কোনদিন আসবেনা।

কবি মীরা সুলতানা'র কাবিতা




আধখান শশ
মীরা সুলতানা 

দিগন্তে বালিয়ারীতে হেঁটে যায় সতর্ক পা চোরাবালির নিমগ্ন  হাতছানি দিগন্ত জোড়া

সৌরকিরন  ভরে রাখে  বুক পকেটে 
আহ্লাদী জ্যোৎস্নায় গা ভাসিয়ে কেউটেরা আনন্দ খুঁজে!

একাকী রাতের প্রহর তাঁরা অবিচল     স্তব্ধতায় খাবি খায় ষোড়শী ঢল!

সামুদ্রিক  ফেনা রাশির  ধেয়ে আসা ঘাম
শুদ্ধতার প্রমান নিয়ে  এলো নীল খাম। 

মায়াবী আকাশের ভেজা ঠিকানায় 
আদ্রতা শুষে নেয়া ডাকপিয়ন, নিমিষে  পৌছায়;
 
মধ্য বয়সী নারীর হৃৎপিন্ডে বুলেট বিঁধে কাঁপে থরথর ,
করতলে ধীর পায়ে হেঁটে চলে  কুয়াশা যাযাবর। 

 পৃথিবীর  বুক ঘেষে বয়ে চলা এক সরীসৃপ পাল,
 কস্মিন কাল ছুঁয়ে বয়ে আসে এক অতীত মহাকাল! 

কেউটেরা স্বর্বেস্বর্বা সর্ব জ্ঞানী, মহাঋষী
আঙ্গুলের ফাঁক  গলে  উঁকি মারে  আধখান শশী ।

কবি নীলাঞ্জন কুমার এর কবিতা




অভাব 

নীলাঞ্জন কুমার 

অভাবের ভেতর থেকে যদি 
জমে ওঠে হতাশা 
তবে নিঃস্ব হওয়ার চিত্রকলা 
চোখের সামনে ভেসে ওঠে ।


অভাবী জীবন নিয়ে আমাকে 
কেউ কোন কথা বলে না।
শুধু ছুঁয়ে থাকে চোখ বাসনায় 
যা অবলীলায় ধরা পড়ে যায় ।




উপন্যাস 


টানাপোড়েন৯৮

দুঃসহ আঠারো বছর

মমতা রায়চৌধুরী


নদী অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে মায়ের কেবিনের দিকে তাকিয়েছিল, কখন ডাক্তারবাবু বেরোবেন একটা মনের ভেতরে অশান্ত উদগ্রীব কাজ করছিল ।  তবে  যাই করে থাকুন না কেন মায়ের এই কন্ডিশনে উনি তো পাশে আছেন ।আজকে আর কোনো বিরক্তি, ঘৃণা কিছুই নেই ,লোকটার প্রতি ।আজকে শুধু মনের ভেতরে একটাই প্রতিক্রিয়া তার মায়ের সুস্থ হওয়া।
হঠাৎই ডাক্তারবাবুর কথা কানে আসলো মিস্টার মালহোত্রা জিজ্ঞেস করলেন  'কী বুঝছেন ডাক্তারবাবু?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'আপনাদের তো আগেও বলেছিলাম যে ঠিক আছে, উনাকে এখন টেনশন মুক্ত রাখুন ।কোন অবস্থাতেই যেন কোনো টেনশন না কাজ করে ,হাসি খুশিতে রাখুন আর আমরা তো নার্সিংহোমে রয়েছি..।'
মিস্টার মালহোত্রা বললেন ' এবার কী আমরা ভেতরে ঢুকতে পারি?'
ডাক্তারবাবু বললেন 'অবশ্যই পারেন তবে এক সঙ্গে কেউ জটলা করবেন না?'
 মালহোত্রা বলেন' থ্যাংক ইউ ডাক্তারবাবু।'
মিস্টার মালহোত্রা ডাক্তার বাবুর সঙ্গে কথা বলার পর প্রথমে তিনিই এগোতে লাগলেন মায়ের কেবিনের দিকে।
নদী  সব দেখতে লাগল। কিন্তু আজ যেন নদী প্রতিবাদ করতে পারলো না  ।নদীর প্রতিবাদী হওয়া উচিত ছিল ,সেই প্রথম মায়ের কাছে যাবে বলে ।কিন্তু আজকে  সমস্ত বিরক্তি, রাগ , দ্বেষ, ঘৃণা, আক্রোশ, কোথায় ধুলিস্যাৎ হলো ?শুধু মনের ভেতরে রয়ে গেল মায়ের জন্য শুভকামনা।'

মিস্টার মালহোত্রা কেবিনে একা ঢুকেছেন ।মায়ের সঙ্গে কি কথা হচ্ছে ,নদী সেসব ভাবতেই চাইল না।
তারপর নদীর বন্ধুরা বলল' হ্যাঁ রে, নদী ,আমরা তাহলে চলি । আন্টি তো আগের থেকে ঠিক আছেন। কালকে খোঁজ নেব কেমন থাকেন না থাকেন।
 বন্ধুরা সবাই বলল' 'প্রয়োজন হলে ডাকিস কেমন, কোন দ্বিধা করিস না?'
এরমধ্যে বন্ধুরা ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলো, যেটা নদীর কানে আসলো ।
রথীন বলল ' হ্যাঁ রে মালটা কে রে আন্টির কেবিনে ঢুকলো?'
তীর্থ বলল 'আরে বাবা, আন্টি যে অফিসে কাজ করেন ,সেই অফিসের বস।'
প্রত্যেকে কেমন যেন একটা আলাদা ইঙ্গিতে হেসে উঠলো। সমুদ্র অবশ্য ওদের কথায় কোন রেসপন্স করে নি।
নদীর কানটা যেন গরম হয়ে উঠলো কথাগুলো শুনে কিন্তু তারপরও নদী যেন কেমন নিষ্প্রাণ,নির্বাক হয়ে রইল। তার ভেতর থেকে যেন কোন কথা বের হয়ে আসলো না।
রথীন তীর্থ সবাই সমুদ্রকে বলল  'কিরে তুই কি এখনো তীর্থের কাকের মত বসে থাকবি?'
সমুদ্র কি বলতে যাবে তার আগেই রথীন বলে উঠলো 'না না তুই একটু থাক। আমরা এগোতে থাকি ।একটা অদ্ভুতভাবে হেসে উঠলো।'
নদীর এ কথাগুলো হজম করতে বেশ সময় লাগলো।
সমুদ্র রথীনদের উদ্দেশ্যে বলল  'আমিও তো যাবো ,ওয়েট কর না একটু।'
সমুদ্র নদীকে বলল  'আমি চলে যাব নদী ,নাকি থাকবো ?
তোকে বাড়ি পৌঁছে দেব?'

নদীর মনে মনে তার বন্ধুদের কথা ভাবছিল এরা তার প্রকৃত বন্ধু না। এরা প্রকৃত বন্ধু হতে পারে 
না ।সাময়িক হতে পারে। যদিও সমুদ্র ওদের থেকে অনেকটাই আলাদা। সমুদ্রর খামখেয়ালিপনা রয়েছে ভেতরে। মাঝে মাঝে বড্ড
ছেলে মানুষি কাজ করে ফেলে সমুদ্র।
নদী শুধু একটুখানি হাসল সমুদ্রের প্রতি আর মনে মনে ভাবল,তবু সমুদ্রের ভেতরে একটা সরলতা আছে।
নদী শুধু ঘাড় নেড়ে  সম্মতি জানালো ।
এর মধ্যেই ঝরনা মাসি বলে ওঠে' মামনি ,মামনি , আমরা কিসে ফিরব?
নদী কেমন অবাক হয়ে যায় ।কিসে ফিরবে মানে, অ্যাম্বুলেন্সে এসেছিলে তো?
ঝর্ণা বললো' হ্যাঁ?
নদী বলল 'হয় কোন ট্যাক্সি ধরব, না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে যেতে হবে।'
এরমধ্যে মিস্টার মালহোত্রা বেড়িয়ে আসলেন।
মিস্টার মালহোত্রা বললেন 'নদী তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে?'
নদী শুধু ঘাড় নেড়ে তার মতামত জানাল।
মিস্টার মালহোত্রা বলল ' ঠিক আছে যাও। তুমি গিয়ে তোমার মাকে দেখে এস আর তোমাদের বাড়ি ফেরার জন্য একটা গাড়ি বলে দিচ্ছি কেমন?'
নদী শুধু ঘাড় নাড়লো আরেকটু ম্লান হাসলো।
মিস্টার মালহোত্রা বেরিয়ে গেলেন যাওয়ার সময় ঝর্নাকে বলে গেলেন আপনাদের জন্য গাড়ি ওয়েট 
করবে। আপনারা বাড়িতে চলে যাবেন।'
 ঝরনাও ঘাড় নাড়লো 
মিটার মালহোত্রা চলে যাওয়ার দিকে ঝরনা আর নদী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।
 ঝর্না এবার নদীকে কাঁধ ধরে ঝাঁকালো ', চলো, চলো মামনি, তোমার মায়ের কাছে।
নদীর যেন চমক ভাঙ্গলো তারপর বলল 'হ্যাঁ, মাসি চলো।'


ঝরনা আর নদী পর্দা সরিয়ে কেবিনের ভেতরে ঢুকলো।
নার্স বললেন' বেশি কথা বলবেন না আর আপনারা একসঙ্গে দুজন ঢুকলেন কেন?'
ঝরনা আর নদী রুপসার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
কেবিনে ঢুকতেই নাকে একটা মৃদু ওষুধের গন্ধ কেমন যেন একটা নীল চাদরে ঢাকা রূপসার লম্বা গোলাপি ফর্সা শরীর বিছানায় যেন অসহায় নিষ্প্রাণ। জানলার দিকে মুখ করে আছে।
কেবিনে ঢুকে ঝর্ণা বললো' বৌদি, ও বৌদি?'
রুপসা মুখ ফেরাল ঝরনা আর নদীর দিকে।
ঝরনা আর নদীকে দেখে রুপসা হাসার চেষ্টা  করলো
ঝর্ণা বললো 'এখন কেমন?'
রুপসা ঘাড় নেড়ে জানাল একটু ভালো।
রূপসা নদীর দিকে তাকিয়ে। নদী মায়ের দিকে তাকাতে পারছে না। কেন যে সেদিন মাকে এতগুলো কথা বলতে গেল নদী এটাই বারবার ভাবছে।
রুপসা ঝর্ণার দিকে ইঙ্গিত করল মেয়েকে কাছে আসার জন্য।
ঝর্ণা বললো' মামনি, মায়ের কাছে
 যাও । একটু  বসো মায়ের কাছে।'
ঝর্ণা নদীকে হাত ধরে টেনে মায়ের কাছে বসালো।
নদী মায়ের কাছে বসলে রুপসা নদীর হাত দুটোকে চেপে ধরল।
নদীর দুচোখ বেয়ে তখন জল পরছে। নদী শুধু বলল _ব্যাথাটা এখন কম?'
রুপসা একটু অন্যমনস্ক ভাবে ঘাড় নাড়ল।
রুপসা তখনও নদীর হাতদুটো বুকের কাছে নিয়ে আছে। রুপসা কেমন অসহায় ভাবে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। নদী মাকে দেখার পর কেমন যেন একটা অনুভুতি হল।
নদীর চোখে জল দেখে রুপসা হাত দিয়ে জল মোছার চেষ্টা করল।
নদী মায়ের হাত দুটো চেপে ধরল। এই দুটো হাত পরস্পর পরস্পরের কাছে এতটাই চেপে বসে আছে যে অসহায় দুটো জীব যেন পরস্পর পরস্পরের কত কাছে একে অপরের ভরসার পাত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।
নদী মায়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল ' একটু বেটার?'
রুপসার যেন মনে হলো তার গোটা আকাশটা তার ওইটুকু মেয়ের 
ভেতরে ,সেটাই হাতের মুঠোয় ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। তার ওইটুকুই আকাশের ফালি নিয়ে সে সারাটা জীবন বাঁচতে চায়।
রূপসার ভেতরে যে মেয়েকে নিয়ে ভয়ের একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছিল, একটা যন্ত্রণা সেটা দাঁতে  ঠোঁট কামড়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল।
আর নদী ও তার চোখের সামনে দেখতে পেল তার সামনে রাখা ক্যানভাসে মায়ের অভিব্যক্তি যেন একটা দুটো রঙের
 আচড়কাটছে, তুলিতে ধরা দিতে
 চাইছে। সে আছে তার মায়ের ,মা আছে তারই সঙ্গে ।দুটো চোখ একে অপরের দিকে পলকহীন । কোন নেশা তার বুকের ভেতরে চেপে বসেছিল মাকে না মানার। 
মনে পড়ে যায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা লাইন
'' আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ,
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি।
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ,
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয়উঁকি।
আঠারোবছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা  নোয়াবার নয়।
হয়তো এই বয়সের জন্য এসে করেছি ভুল মায়ের প্রতি বিশ্বাস আস্থা সব এক নিমেষে হয়েছিল বিলীন।
তাই আজ মাশুল দিতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে শুধু মাকে হারানোর ভয়। দুচোখ তাই জলে ভরে ওঠে। চোখের ভাষাতে সেকথাই সে বোঝাতে থাকে।
রুপসা মেয়ের চোখের ভাষা বুঝতে পারে তাই মেয়েকে তার বুকের কাছে টেনে নিতে চায়। তাই আচমকাই নদীর বুক যেন হুহু করে ওঠে ।নিজের খেয়ালে 18 বছরের  নদী একটা খেলা খেলতে চেয়েছিল ।আজ তাই তার বুকে বুমেরাং হয়ে গেছে ।তাই নির্ভয়ে চোখ শুধু বিশ্ব ঘুরে এসে দেখছে তার কাছের , ভরসার  শৈশবের সেই মাকে খুঁজে পেতে চাইছে।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬





ধারাবাহিক উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
মনি জামান
(পর্ব ছয়)

আজ সকাল থেকেই যেন মেঘের আনা গোনা গোটা আকাশ জুড়ে,নিলয় মেবিন আর চারু সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছে। চারু ড্রাইভার কে ফোন করলো গাড়ি বের করতে,তারপর মেবিন ও নিলয়কে গুছিয়ে নিতে বলে চারু নিজের রূমে চলে গেল।একটু পরে ওরা তিনজন নিচে নেমে এলো ড্রাইভার অপেক্ষা করছিল ওরা এলে গাড়ির দরজা খুলে দিলো সবাই গাড়িতে উঠে সীটে বসে বেল্ট পরলো,ড্রাইভারঃ আপুমনি কোথায় যাবেন,
চারুঃ মার্কেটে যাব।
গাড়ি স্টার্ট হলো এবার চলতে শুরু করল প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি মার্কেটে এসে পৌছাল,নিলয় মেবিন আর চারু গাড়ি থেকে নেমে চারুঃ নিলয় এসো ভিতরে ওরা মার্কেটের ভিতরে একটি দোকানে গিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলো তারপর বাইরে বেরিয়ে এলো তিনজন, তখন আকাশ মেঘে অন্ধকার হয়ে আছে মাঝে মাঝে বিকট গর্জন করছে আকাশ।
চারুঃ মেবিন আকাশের অবস্থা খুব খারাপ চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি,
মেবিনঃ চল ঝড় বৃষ্টি হতে পারে,আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে ওরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো,ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল আধাঘণ্টা পর ওরা বাসায় ফিরে এলো।তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বিদ্যুত্ চমকাচ্ছে আর বিকট শব্দে বজ্রপাত হচ্ছে।বাসায় এসে ওরা তিনজন ফ্রেস হয়ে ওয়েটিংরুমে গল্প শুরু করলো,আজ যেন কোথাও হারিয়ে যেতে মানা ওদের।
আস্তে আস্তে মুসুল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো প্রায় দুই ঘন্টা মত বৃষ্টি হয়েছে ওরা আজ আর কোথাও বেরুতে পারলো না।
দুপরের খাবার খেল সবাই আকাশ একটু একটু ভালোর দিকে যাচ্ছে,কিছুক্ষণ পর আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল।
চারুঃ যাক অবশেষে আকাশ ভালো হয়ে গেল এবার চলো আমরা সমুদ্র সৈকত দেখতে বেরোয়,
মেবিনঃ হ্যাঁ চল বলে ওরা তিনজন যার যার রূমে গিয়ে সব গুছিয়ে নিতে নিতে প্রায় দুইটা বেজে গেলো,ড্রাইভার এলো গাড়ি নিয়ে ওরা তিনজন গাড়িতে উঠলো।চারুঃ ড্রাইভারকে বলল সমুদ্র সৈকত যাব আপনি গাড়ি ছাড়েন,ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগলো ওদের সমুদ্র সৈকতে পৌছাতে।গাড়ি থেকে নেমে ওরা হাটা শুরু করলো সমুদ্র সৈকতের বালুর উপর দিয়ে হালকা হালকা ঢেউ এসে যেন ওদের পা দুটো ছুঁয়ে দিয়ে গেলো।
চারুঃ মেবিন তুই আর নিলয় তোরা ঘুরে দেখ আমি কিছু কিনে তারপর আসছি বলেই হন হন করতে করতে অন্য প্রান্তে চলে গেলো।
নিলয় মেবিনের হাতটা ধরে হাঁটছে খালি নগ্ন পা ওদের দুজনের অন্যরকম এক অণুভূতি হচ্ছে আজ দুজনের ভিতর,সমুদ্রের পাগলা হাওয়া ওদের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে কখনো বা দুর্বার গতিতে ধেয়ে আসা সমুদ্রের বিশাল ঢেউ ওদের পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, অপূর্ব সুন্দর মূহুর্তটা দুরে ঝাউ বন যেন সবুজ বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে।
জল কবুতর আর গাঙচিলের আনা গোনা অদ্ভূত ভালো লাগার একটা পরিবেশ
ওদের দুজনকে আড়োলিত করলো, সমুদ্রের গর্জন আর একটার পর একটা ঢেউ আচড়ে এসে পড়ছে,
মেবিনঃ নিলয় তুমি আর এই সমুদ্র আমার কাছে এক মনে হচ্ছে,
নিলয়ঃ কেমন সেটা কাক পাখি।
মেবিনঃ তুমি যেমন আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষ তেমনি এই সমুদ্রটাও আমার কাছে আজ খুব প্রিয় লাগছে,
নিলয়ঃ একগাল হেসে তোমার দর্শনটা ভালো দেখো আবার যেন দার্শনিক না হয়ে যাও।
আজ সকালের বৃষ্টি শেষে আকাশটা লাল আভা ছড়াচ্ছে অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজকের সমুদ্র সৈকতের বিকেলটা,
নিলয় আর মেবিন হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র সৈকতে একটা সি বেঞ্চে বসলো দুজন। সমুদ্র জয়ের উন্মত্ত বাসনায় গাঙচিলের উড়া চলা সারা সমুদ্র জুড়ে,এটা নিলয় আর মেবিন অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
একের পর এক ঢেঁউ আছড়ে পড়ছে ওদের পায়ের উপর,যতদুর ওদের দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে ততো দুর শুধু দেখতে পাচ্ছে সমুদ্র আর ঢেউ যেন এক সাথে মিলে মিশে একাকার।
আকাশ আজ গোধূলি রঙ ছড়াচ্ছে নিজের মত করে,সমুদ্রের নীল জলরাশি আজ ভয়ানক উত্তাল এক একটি দানব যেন ঢেউ হয়ে ধেয়ে আসছে তীরের দিকে।
অদ্ভূত রোমাঞ্চ জাগিয়ে দিচ্ছে নিলয় আর মেবিনকে,পরস্পর গা ঘেঁসে বসে আছে ওরা দুজন আর সমুদ্রের নোনা জলের স্পর্শ মাখছে দু'পায়ে।
হঠাৎ মেবিন দেখতে পেল কি যেন একটা লাশের মত ভাসছে ঢেঁউয়ের সাথে এবং ওদের দিকে ভেসে আসছে।
মেবিনঃ নিলয়কে ডেকে বলল এই দেখ ঐ যে ওটা কি?নিলয় মেবিনের আঙুল অনুসরণ করে ভাল করে লক্ষ করে দেখে বললঃ মনে হয় এটা কোন মানুষের লাশ।ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে ওরা যেখানে বসে আছে ঠিক তার সামনে এসে বালুর উপর আটকে পড়লো লাশটা,নিলয় ভাল করে খেয়াল করে দেখে মেবিনকে বললঃ এটা একটা বিশ পঁচিশ বছর বয়সী একটা মেয়ের লাশ হবে,লাশটা এখনো প্রায় অক্ষত কিন্তু ফুলে গেছে কিছু কিছু জায়গায় পচন শুরু হয়েছে,কোথাও কোথাও খুবলে খেয়েছে জলজ মাংসাশী কোন প্রাণীরা।
মেবিনঃনিলয়কে বলল কি জানি কোন হতভাগী কোন মেয়ের লাশ হবে হয়তো এটা,কোন নির্যাতন সইতে না পেরে হয়তো আত্মহত্যা করেছে অথবা যৌতুকের বলি হয়ে হয়তো কোন পাষণ্ড স্বামী হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
নিলয় বললঃ হয়তো হবে তবে এই মৃত লাশ দেখে আমার আজ একটি কাহিনীর কথা খুব মনে পড়ছে,আমি দৈনিক কাগজে পড়েছিলাম খুব মর্মান্তিক ছিল সে কাহিনী।
মেবিনঃ তাই!বলো কি সেই কাহিনী আমি শুনবো,
নিলয়ঃ ঠিক আছে বাসায় ফিরে বলবো,
মেবিনঃ না এখন বলো আমি শুনবো,
নিলয়ঃ পরে এক সময় তোমাকে সব বলবো। 
কিন্তু মেবিন নাছোড়বান্দা সে কাহিনীটা শুনবেই,
নিলয়ঃ এই কাক পাখি এই জন্য তোমাকে আমি কাক পাখি বলি,বলছি তো বাসায় যেয়ে সব বলবো।
মেবিনঃ অভিমানের সুরে বলল ঠিক আছে আমি আর শুনবো না তোমার সেই কাহিনী,বলেই মুখটা ভার করে বসে রইলো অন্য দিকে মুখ করে।
নিলয়ঃ মেবিনকে কাছে টেনে নিয়ে আর অভিমান করতে হবে না সোনা পাখি আমার দিকে ফিরে তাকাও আমি বলছি।
মেবিন নিলয়ের বুকে আলত করে মাথাটা রেখে আবেগ মাখা কন্ঠে মেবিনঃ বলো নিলয়,
নিলয় মেবিনের মাথায় হাতটা রাখলো এবং চুলের ভিতর আঙুল গুলো খেলা করতে শুরু করলো,মেবিনের মনে হলো পৃথিবীতে বোধহয় ভালোবাসার মানুষের বুকটাই একমাত্র নির্ভাবনার,এ বুকে যেন সারাজীবন সে এমনিভাবে মাথাটা রাখতে পারে,নিলয়ের ভালবাসা মেবিনকে এতটাই আপ্লুত করেছে যেন যুগ যুগ ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল মেবিন।
নিলয়ঃ কাহিনীটা তুমি শুনলে কাঁদবে না তো আগে বলো,
মেবিনঃ কেন কাঁদবো আমি কি শিশু !নিলয় আদর করে মেবিনের চোয়ালটা আলতো করে টেনে দিয়ে বললোঃ এই জন্য তোমাকে এত ভালোবাসি,মেবিন নিলয়কে আজ খুব আদর মাখা কন্ঠে বললঃ প্লীজ বলনা সেই কাহিনীটা আমি শুনবো,
নিলয়ঃ ঠিক আছে কাক পাখি বলছি তবে আমাকে একটু আদর করে দাও,
মেবিনঃ হেসে বললো তুমি ইদানিং খুব দুষ্ট হয়ে গেছো,বলার সাথে সাথে নিলয় হেসে উঠলো এবং বললঃ তাহলে কাহিনী শোন,নিলয় কাহিনীটা বলতে শুরু করলো,ভবদা গ্রামে আসমা নামের এক মেয়ের করুন কাহিনী।


চলবে....

কবি তাহমিনা সিদ্দিকা ' র কবিতা





প্রেম বিভ্রাট
তাহমিনা সিদ্দিকা

শব্দের হাটে অপূর্ব তুমি,
দু'চোখের বিভ্রাট হয়তো 
ভুল ছিল আমার।
চাঁদকে ভেবেছি আমার দেবতা,
কিন্তু উপমার সব শব্দ অভিধান শূন্য।
আকাশ গগনে দেখি প্রিয়তমার মুখ,ভাবনার তরীতে বড় অদ্ভূত।
শব্দ বিশেষণে ধৃষ্ঠতা আমার,
কবিতার খাতা আজ যেন সব ফাকা।
অদ্ভূত সুন্দর ঐ দুটি চোখ,বাহুলতায় পেলবতা মধু মাখা মুখ।
ঝিরি ঝিরি বাতাস অপূর্ব দুলুনি,শব্দ বিভ্রাট আজ সব কবিতার খাতা।
চঞ্চলতায় অগ্নি পুরুষ,
ভিরু ভিরু মনে যেন জ্বলে কামনার আগুন। 
অসহনীয় করে রাত্রি দিন,
কালপুরুষ সে। 
চোখে প্রেম তার প্রেম,
অপূর্ব আহবানে সে আমায় ডাকে
বারে বারে।
শব্দ হাটে সব শব্দ বিভ্রাট, 
যেন কবিতার সব উপমার আকাল,
আশার রথে কবিতা আজ সব
ফাকা।
প্রেম খোঁজে শব্দের হাটে,
প্রেম বিভ্রাটে।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৫৬





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৫৬)
শামীমা আহমেদ 

উত্তরা থেকে একঘন্টার মধ্যেই উবার জিগাতলায় পৌছে গেলো।শিহাব উবারের ভাড়া চুকিয়ে শায়লাকে নিয়ে তাদের বাড়ির গেটে নামল। দুজনেই গাড়ি থেকে নামলো।শিহাব দেখলো সবুজ শাড়িতে শায়লাকে খুব সুন্দর লাগছে। শায়লা তাকিয়ে দেখলো বাড়ির গেটটি বেশ বড় আর খুব সুন্দর!  শায়লার প্রথমেই ভালো লেগে গেলো। উপরে তাকাতেই  দেখলো  দক্ষিনমুখী চারতলা বাড়ির সামনের বারান্দা।শিহাব তাকে এগিয়ে নিলো।
শিহাব দরজায় নক করতেই বাড়ির কেয়ার টেকার রুহুল আমিন দরজা খুলে দিলো। শিহাব শায়লাকে রুহুল আমিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আজ অনেক বছর যাবৎ রুহুল আমিন চাচা আমাদের বাড়িতে।সেই আমাদের ছোটবেলা থেকে।আমাদের বিল্ডিং এর পিছনের যায়গায়  তার ফ্যামিলি  নিয়ে থাকে।মা ওদের ঘর তুলে দিয়েছে। শায়লা খুব মনযোগ দিয়ে শিহাবের কথা শুনছিল। শায়লাকে দেখে রুহুল আমিনের চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছে! কিন্তু তেমন একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ নেই একেবারে! 
রুহুল আমিনকে উদ্দেশ্য করে  শিহাব বললো, চাচা ও শায়লা।আজ আমাদের সাথে সারাদিন বেড়াবে। চাচা মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।  শিহাব শায়লার হাত ধরে বাড়ির ভিতরে সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলো।জানালো,আমাদের বাড়িটি অনেক বছরের। সেই  আমাদের স্কুলে পড়বার সময় বাবা এই বাড়িটি বানিয়েছেন।বাবা তখন আমেরিকায় থাকতেন।  বাড়িতে লিফটের ব্যবস্থা করা হয়নি। তোমাকে কষ্ট করে পায়ে হেঁটে উঠতে হবে। শায়লা চোখের ভাষায় জানালো,কোন অসুবিধা নেই।শিহাব জানালো, নিচতলা আর দোতালায় ভাড়াটিয়া আছে।তিনতলায় বড় ভাইয়া ও ভাবির ফ্ল্যাট আর চারতলায় আমার জন্য।মা বাবা আরাফ সেখানেই থাকে। আর ছাদে ভাবীর করা চমৎকার বাগান আছে।বিকেলে সেখানে বসে আমরা চা খাবো। শায়লা তোমার কি ভালো লাগছে এখানে এসে?আমার কিন্তু অনেক ভালো লাগছে।আজ সকাল থেকেই জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে।বহুদিন পর এই বাড়িতে আমি, দুজন মিলে একসাথে এলাম। আর হ্যাঁ, শায়লা তোমাকে জানিয়ে রাখি,চারতলায় আমার রুমটা কিন্তু তেমনি আছে।বাবা মা অন্য রুমে থাকছে। যদিও বাড়ির ফিটিংসগুলো বেশ আগের তবুও সিঁড়ির স্পেস অনেক চওড়া ।বাইরে থেকে সূর্যের আলো সিঁড়িতে পড়েছে।দিনের বেলা লাইট লাগছে না একেবারেই। নীচতলা দোতালা পেরিয়ে ওরা তিনতলায় পৌছুতেই দেখলো দরজায় সুমাইয়া ভাবী দাঁড়িয়ে। শায়লা যেন শিহাবের আড়ালে লুকাতে চাইছে। শিহাব শায়লাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে ভাবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ভাবী ও শায়লা। শায়লার কথা তোমাকে তেমন করে বলা হয়নি।কেমন করে যেন খুব দ্রুতই  সব কিছু ঘটে গেলো।তুমি কিন্তু মনে কিছু রেখোনা৷ শায়লা খুব ভালো মেয়ে।কথা বললে তোমার ওকে খুব ভালো লাগবে।শিহাব একা একা বকেই যাচ্ছে। ভাবী একেবারেই নিরুত্তর। কেমন যেন চোখে মুখে থমথমে ভাব"। শিহাব ভাবলো প্রথম দিন একটু এমনি হবে।সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।অনেকক্ষন কি যেন ভেবে সুমাইয়া এবার কথা বলে উঠলো। কেমন আছো শায়লা? দেখো কতক্ষন হলো, তোমাদের দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখেছি।প্লিজ তোমরা ভেতরে আসো।
শিহাব মৃদু আপত্তি জানালো। এখন না ভাবী।আগে মায়ের সাথে শায়লার দেখা করিয়ে আনি। শায়লা
আরাফকেও দেখার জন্য খুব আগ্রহ করে আছে। সুনায়রা আর আরুশ ওরা কোথায়? ওদের ডাকো।ওদের জন্য খেলনা আর চকলেট এনেছি।বলেই শিহাব ভাবীকে ব্যাগ এগিয়ে দিলো। ভাবী বেশ জোর দিয়েই বললো, না, শায়লা প্রথম এসেছে আমাদের বাসায়। এভাবে উপরে যাবে না।তোমরা আমার এখান থেকে সকালের নাস্তা করে তারপর উপরে যাবে। ভাবী এত করে বলছে। শিহাব তাই মেনে নিল। আর তাছাড়া শায়লাই তো আজ অতিথি। ভাবী তাকে আপ্যায়ন করতে চাইছে সেটাতো গ্রহন করতেই হয়।আরাফের জন্য ভাবী এতদিন পর্যন্ত  মায়ের সব ভুমিকাই পালন করেছে।আজ শায়লাকে দেখে হয়তো আরাফের জন্য মায়াটা কষ্ট  দিচ্ছে। শিহাব শায়লাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসলো।ভাবী, ভাইয়া উঠেনি? উঠেছে।বাইরে গেছে।তোমাদের ভাইয়ারা কয়েকজন মিলে একটা কন্সট্রাকশন ফার্মে ইনভেস্ট করছে। তারই একটা মিটিং হচ্ছে আজ গুলশানে একজনের বাসায়।শিহাব ভাবলো, ভাইয়া চিরকালই তার ব্যাপারে উদাসীন। এটা কি শিহাবের প্রাইভেসি মেইন্টেন করা নাকি নিজেকে দুরত্বে রাখা শিহাব বুঝে উঠতে পারে না। ভাবী  শায়লা শিহাবকে ডাইনিং টেবিলে ডাকলো।অনেক নাস্তার আয়োজন! ভাবী বেশ যত্ন করে ওদের নাস্তা করালো।শিহাবের মনের ভেতর আরাফকে দেখার জন্য অস্থির লাগছে। এখনো কি ঘুম থেকে উঠেনি আরাফ? শিহাবের প্রশ্ন সুমাইয়াকে। হ্যাঁ,উঠেছে তো।একবার আমার এখানে ঘুরে গেছে ওর দাদীর সাথে।এখন বোধহয় খেলছে।শিহাব বুঝতে পারছে না অন্যদিন আরাফ তার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। কখন আসবো কল করতে থাকে অথচ আজ চুপচাপ হয়ে আছে। সুমাইয়া ওদের চা দিলো।দুজনে চায়ে চুমুক দিতেই শিহাব  শায়লাকে জানালো,
শায়লা, ভাবী আমাদের পরিবারের জন্য একজন নিবেদিত প্রান মানুষ।ভাইয়াকে দেখে, নিজের সন্তান সংসার দেখেও বাবা মা আরাফেরও সমান যত্ন নেয়।তারপর বাড়ির যাবতীয় ঝুট ঝামেলা সবই ভাবী সামলায়। আমাদের জীবনে ভাবী একটা আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন।সুমাইয়া শিহাবকে থামিয়ে বললো, এভাবে বলছো কেন? এটাতো আমারও সংসার। সবাইকে নিয়ে থাকতে আমার  ভালো লাগে। 
ভাবী আরাফকে নিয়ে তোমার অনেক ঝামেলা আর ব্যস্ততায় দিন গেছে। এখন থেকে শায়লা আরাফের সব দায়িত্ব বুঝে নিবে।শায়লা আরাফকে না দেখেই অনেক আপন করেছে।আজ তাই দেখাতে নিয়ে এলাম।শিহাব বুঝতে পারছে না,ভাবী কথার মাঝে বেশ অন্যমনস্ক কখনো বিষন্ন আবার কখনো কেমন যেন ভীত চোখে মেইন দরজার দিকে তাকাচ্ছে। শায়লা নাস্তা পর্ব সেরে ভাবীর হাত ধরে বললো,ভাবী
আজ থেকে আরাফকে আমি মায়ের আদরে আপন করে নিবো।আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন। এবার সুমাইয়া বলে উঠলো, শুধু আরাফ? আরাফকেই আপন করবে? আরাফের বাবাকে, আমাকে আপন করবে না? 
ভাবীর দুষ্টুমিতে শায়লা লাজ রাঙা হয়ে উঠলো। ওরা বিদায় নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে এলো।
শিহাব আরাফকে দেখার জন্য বেচায়েন হয়ে উঠলো!
ভাবীকে এড়িয়ে দ্রুতই বেরিয়ে এলো। শায়লা ভাবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শিহাবের পিছু নিলো। পেছনে  দরজায় সুমাইয়া বেশ উৎকন্ঠিত চোখে শায়লা আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল।
শিহাব বেশ দ্রুতই সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গেলো।আরাফকে দেখার জন্য আর তার দেরি সইছে না। শায়লা শিহাবকে ফলো করে  একরকম দৌড়েই  পিছু পিছু গেলো।চারতলার দরজা খোলাই ছিল।শিহাব বাসায় ঢুকে পড়লো। ড্রইং ডাইনিং এ কেউ নেই।শিহাব শায়লাকে সরাসরি  মায়ের ঘরে নিয়ে গেলো।মা বিছানায় শুয়েছিলেন। শিহাব মায়ের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখতেই মা জেগে উঠলেন। শিহাব মাকে উঠে বসালো। শায়লাকে মায়ের কাছে নিয়ে গেলো।বললো মা দেখ ও শায়লা।দেখো কি মায়া ভরা মুখটা। মা তুমি আরাফের জন্য মা চেয়েছিলে,আমাকে সংসারী  হতে বলেছিলে। মা দেখো তোমাদের সবার চাওয়া ইচ্ছে আজ পূরণ হবে। শায়লা আমাদের সবার খুব আপন হয়ে থাকবে।আরাফ তার মায়ের আদর পাবে যেটা তুমি সবসময় চাইতে। শায়লা মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করলো।মা শায়লার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলো।
ভালো থাকো মা।বসো, বলেই শায়লাকে কাছে টেনে নিয়ে বিছানায় তার পাশে বসালেন। শায়লার হাত ধরলেন।কিন্তু পরক্ষনেই মা কেঁদে উঠলেন।শিহাবের জীবনটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমার দুইটি সন্তান তাও খোদার হিসেবে কেমন দুজনের ভাগ্য। আজ শায়লাকে পেয়ে হয়তো মা আনন্দে  কেঁদে ফেলছে। 
শিহাব বারবার ঘরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,মাকে প্রশ্ন করলো,মা আব্বাকে দেখছিনা,আব্বা  কোথায়? তাছাড়া আরাফ কোথায়? আজ যে আরাফ আমার কাছে দৌড়ে এলোনা? মা প্রসঙ্গ পাল্টে 
খুব হালকা স্বরে বললেন, তোর বাবা একটু বাজারের দিকে গেছে।
শিহাব এ কথা শুনে বেশ রাগান্বিতই হলো।
বেশ শাসনের সুরেই বললো,
মা বাবাকে কেন একা বাজারে যেতে দাও?এখন বয়স হয়েছে।রাস্তাঘাটে কখন কোন বিপদ হয়।রুহল আমিনকেতো বাসায়ই দেখলাম। ওতো বাবার সাথে যেতে পারে।
শিহাবের কথার জবাবে  মা বললেন,
ও গেলে গেটের খেয়াল কে রাখবে? পানি ছাড়তে হয়।ভাড়াটিয়াদের কত রকম চাওয়া থাকে। রুহুল আমিনের ছেলে রফিককে নিয়ে গেছে।
শিহাবের উৎসুক চোখ ঘরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
মা, আরাফকে দেখছিনা।আজ আমার কাছে আসছে না কেন? ও কোথায়? ওর জন্য খেলনা এনেছি,চকলেট এনেছি,নতুন ড্রেস এনেছি। শায়লা আরাফকে দেখতে এসেছে । শায়লা আরাফকে মায়ের আদরে আমাদের কাছেই রাখবে। শায়লাকে তোমাদেরও খুব ভালো লাগবে মা। ও খুব ভালো মেয়ে।
শিহাবের এমন কথায় শায়লা সলজ্জ হয়ে মাথা নিচু করে মায়ের পাশে বসে রইল।
শিহাব আরাফ আরাফ করে ডাকতেই মা বললেন আরাফ তোর ঘরে আছে।
আমার ঘরে? একা একা কি করছে? তোমরা ওকে একা ছেড়ে দিয়েছো কেন? বলেই শি্হাব হনহন করে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।শিহাব না থাকলেও ওর ঘরটা আগের মতই সাজানো আছে। জিগাতলায় এলে শিহাব পারতপক্ষে নিজের রুমে যায় না। শিহাব মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় মা বেশ অস্থির হয়ে উঠলেন।শায়লা লক্ষ্য করলেন মা খুব শক্ত করে শায়লার হাতটি ধরে রাখলেন।চোখে মুখে একটা আতংক ভাব! 
মায়ের রুমের পাশের রুমটাই শিহাবের। শিহাব  দরজায় যেতেই দেখে আরাফ তার বিছানায় বসে একা একা খেলছে।বিছানায় অনেক খেলনা ছড়ানো।জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়া।বিছানায় রোদ এসে পড়েছে।শিহাব বুঝতে পারছে না,বাচ্চাটিকে একা একা কিভাবে মা ভাবী এভাবে বিছানায় রেখে চলে গেছে?  শিহাব আরাফ বলে ডাকতেই বলে উঠলো,আব্বু মা এসেছে।
শিহাব বুঝতে পারছে না, আরাফতো এখনো শায়লাকে দেখেনি,কিভাবে বলছে মা এসেছে।
শিহাব কথাটা ভালোভাবে বুঝতে আবার বলে উঠলো,কোথায় তোমার মা? 
আরাফ হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল্য, ঐ যে!
শিহাব সেদিকে তাকাতেই একেবারে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়লো।
রিশতিনা!  কখন এলো?
রিশতিনা চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে।
আরাফ বলেই চলেছে ঐ যে মা,ঐ যে মা!
শিহাব কতকটা সময় যেন স্থির হয়ে রইল।নির্বাক নিরুত্তর।
রিশতিনার দিকে তাকাতেই রিশতিনা বলে উঠলো,  হ্যাঁ আমি,ভুল দেখছো না।আমি আজ সকালে এসেছি। আমি আমার স্বামী সংসার আর সন্তানের কাছে ফিরে এসেছি।আরাফ আমার সন্তান।আমিই আরাফের মা।
আরাফ ক্রমাগত বাবা বাবা ডেকেই চলেছে। রিশতিনা আর আরাফের মাঝে  শিহাব কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।


চলবে....