ধারাবাহিক উপন্যাস
সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
মনি জামান
(পর্ব ছয়)
আজ সকাল থেকেই যেন মেঘের আনা গোনা গোটা আকাশ জুড়ে,নিলয় মেবিন আর চারু সকালের নাস্তা সেরে নিয়েছে। চারু ড্রাইভার কে ফোন করলো গাড়ি বের করতে,তারপর মেবিন ও নিলয়কে গুছিয়ে নিতে বলে চারু নিজের রূমে চলে গেল।একটু পরে ওরা তিনজন নিচে নেমে এলো ড্রাইভার অপেক্ষা করছিল ওরা এলে গাড়ির দরজা খুলে দিলো সবাই গাড়িতে উঠে সীটে বসে বেল্ট পরলো,ড্রাইভারঃ আপুমনি কোথায় যাবেন,
চারুঃ মার্কেটে যাব।
গাড়ি স্টার্ট হলো এবার চলতে শুরু করল প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি মার্কেটে এসে পৌছাল,নিলয় মেবিন আর চারু গাড়ি থেকে নেমে চারুঃ নিলয় এসো ভিতরে ওরা মার্কেটের ভিতরে একটি দোকানে গিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলো তারপর বাইরে বেরিয়ে এলো তিনজন, তখন আকাশ মেঘে অন্ধকার হয়ে আছে মাঝে মাঝে বিকট গর্জন করছে আকাশ।
চারুঃ মেবিন আকাশের অবস্থা খুব খারাপ চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরি,
মেবিনঃ চল ঝড় বৃষ্টি হতে পারে,আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে ওরা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো,ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল আধাঘণ্টা পর ওরা বাসায় ফিরে এলো।তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বিদ্যুত্ চমকাচ্ছে আর বিকট শব্দে বজ্রপাত হচ্ছে।বাসায় এসে ওরা তিনজন ফ্রেস হয়ে ওয়েটিংরুমে গল্প শুরু করলো,আজ যেন কোথাও হারিয়ে যেতে মানা ওদের।
আস্তে আস্তে মুসুল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো প্রায় দুই ঘন্টা মত বৃষ্টি হয়েছে ওরা আজ আর কোথাও বেরুতে পারলো না।
দুপরের খাবার খেল সবাই আকাশ একটু একটু ভালোর দিকে যাচ্ছে,কিছুক্ষণ পর আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল।
চারুঃ যাক অবশেষে আকাশ ভালো হয়ে গেল এবার চলো আমরা সমুদ্র সৈকত দেখতে বেরোয়,
মেবিনঃ হ্যাঁ চল বলে ওরা তিনজন যার যার রূমে গিয়ে সব গুছিয়ে নিতে নিতে প্রায় দুইটা বেজে গেলো,ড্রাইভার এলো গাড়ি নিয়ে ওরা তিনজন গাড়িতে উঠলো।চারুঃ ড্রাইভারকে বলল সমুদ্র সৈকত যাব আপনি গাড়ি ছাড়েন,ড্রাইভার গাড়ি ছাড়লো প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগলো ওদের সমুদ্র সৈকতে পৌছাতে।গাড়ি থেকে নেমে ওরা হাটা শুরু করলো সমুদ্র সৈকতের বালুর উপর দিয়ে হালকা হালকা ঢেউ এসে যেন ওদের পা দুটো ছুঁয়ে দিয়ে গেলো।
চারুঃ মেবিন তুই আর নিলয় তোরা ঘুরে দেখ আমি কিছু কিনে তারপর আসছি বলেই হন হন করতে করতে অন্য প্রান্তে চলে গেলো।
নিলয় মেবিনের হাতটা ধরে হাঁটছে খালি নগ্ন পা ওদের দুজনের অন্যরকম এক অণুভূতি হচ্ছে আজ দুজনের ভিতর,সমুদ্রের পাগলা হাওয়া ওদের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে কখনো বা দুর্বার গতিতে ধেয়ে আসা সমুদ্রের বিশাল ঢেউ ওদের পা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, অপূর্ব সুন্দর মূহুর্তটা দুরে ঝাউ বন যেন সবুজ বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে।
জল কবুতর আর গাঙচিলের আনা গোনা অদ্ভূত ভালো লাগার একটা পরিবেশ
ওদের দুজনকে আড়োলিত করলো, সমুদ্রের গর্জন আর একটার পর একটা ঢেউ আচড়ে এসে পড়ছে,
মেবিনঃ নিলয় তুমি আর এই সমুদ্র আমার কাছে এক মনে হচ্ছে,
নিলয়ঃ কেমন সেটা কাক পাখি।
মেবিনঃ তুমি যেমন আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষ তেমনি এই সমুদ্রটাও আমার কাছে আজ খুব প্রিয় লাগছে,
নিলয়ঃ একগাল হেসে তোমার দর্শনটা ভালো দেখো আবার যেন দার্শনিক না হয়ে যাও।
আজ সকালের বৃষ্টি শেষে আকাশটা লাল আভা ছড়াচ্ছে অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজকের সমুদ্র সৈকতের বিকেলটা,
নিলয় আর মেবিন হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র সৈকতে একটা সি বেঞ্চে বসলো দুজন। সমুদ্র জয়ের উন্মত্ত বাসনায় গাঙচিলের উড়া চলা সারা সমুদ্র জুড়ে,এটা নিলয় আর মেবিন অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
একের পর এক ঢেঁউ আছড়ে পড়ছে ওদের পায়ের উপর,যতদুর ওদের দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে ততো দুর শুধু দেখতে পাচ্ছে সমুদ্র আর ঢেউ যেন এক সাথে মিলে মিশে একাকার।
আকাশ আজ গোধূলি রঙ ছড়াচ্ছে নিজের মত করে,সমুদ্রের নীল জলরাশি আজ ভয়ানক উত্তাল এক একটি দানব যেন ঢেউ হয়ে ধেয়ে আসছে তীরের দিকে।
অদ্ভূত রোমাঞ্চ জাগিয়ে দিচ্ছে নিলয় আর মেবিনকে,পরস্পর গা ঘেঁসে বসে আছে ওরা দুজন আর সমুদ্রের নোনা জলের স্পর্শ মাখছে দু'পায়ে।
হঠাৎ মেবিন দেখতে পেল কি যেন একটা লাশের মত ভাসছে ঢেঁউয়ের সাথে এবং ওদের দিকে ভেসে আসছে।
মেবিনঃ নিলয়কে ডেকে বলল এই দেখ ঐ যে ওটা কি?নিলয় মেবিনের আঙুল অনুসরণ করে ভাল করে লক্ষ করে দেখে বললঃ মনে হয় এটা কোন মানুষের লাশ।ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে ওরা যেখানে বসে আছে ঠিক তার সামনে এসে বালুর উপর আটকে পড়লো লাশটা,নিলয় ভাল করে খেয়াল করে দেখে মেবিনকে বললঃ এটা একটা বিশ পঁচিশ বছর বয়সী একটা মেয়ের লাশ হবে,লাশটা এখনো প্রায় অক্ষত কিন্তু ফুলে গেছে কিছু কিছু জায়গায় পচন শুরু হয়েছে,কোথাও কোথাও খুবলে খেয়েছে জলজ মাংসাশী কোন প্রাণীরা।
মেবিনঃনিলয়কে বলল কি জানি কোন হতভাগী কোন মেয়ের লাশ হবে হয়তো এটা,কোন নির্যাতন সইতে না পেরে হয়তো আত্মহত্যা করেছে অথবা যৌতুকের বলি হয়ে হয়তো কোন পাষণ্ড স্বামী হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে।
নিলয় বললঃ হয়তো হবে তবে এই মৃত লাশ দেখে আমার আজ একটি কাহিনীর কথা খুব মনে পড়ছে,আমি দৈনিক কাগজে পড়েছিলাম খুব মর্মান্তিক ছিল সে কাহিনী।
মেবিনঃ তাই!বলো কি সেই কাহিনী আমি শুনবো,
নিলয়ঃ ঠিক আছে বাসায় ফিরে বলবো,
মেবিনঃ না এখন বলো আমি শুনবো,
নিলয়ঃ পরে এক সময় তোমাকে সব বলবো।
কিন্তু মেবিন নাছোড়বান্দা সে কাহিনীটা শুনবেই,
নিলয়ঃ এই কাক পাখি এই জন্য তোমাকে আমি কাক পাখি বলি,বলছি তো বাসায় যেয়ে সব বলবো।
মেবিনঃ অভিমানের সুরে বলল ঠিক আছে আমি আর শুনবো না তোমার সেই কাহিনী,বলেই মুখটা ভার করে বসে রইলো অন্য দিকে মুখ করে।
নিলয়ঃ মেবিনকে কাছে টেনে নিয়ে আর অভিমান করতে হবে না সোনা পাখি আমার দিকে ফিরে তাকাও আমি বলছি।
মেবিন নিলয়ের বুকে আলত করে মাথাটা রেখে আবেগ মাখা কন্ঠে মেবিনঃ বলো নিলয়,
নিলয় মেবিনের মাথায় হাতটা রাখলো এবং চুলের ভিতর আঙুল গুলো খেলা করতে শুরু করলো,মেবিনের মনে হলো পৃথিবীতে বোধহয় ভালোবাসার মানুষের বুকটাই একমাত্র নির্ভাবনার,এ বুকে যেন সারাজীবন সে এমনিভাবে মাথাটা রাখতে পারে,নিলয়ের ভালবাসা মেবিনকে এতটাই আপ্লুত করেছে যেন যুগ যুগ ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল মেবিন।
নিলয়ঃ কাহিনীটা তুমি শুনলে কাঁদবে না তো আগে বলো,
মেবিনঃ কেন কাঁদবো আমি কি শিশু !নিলয় আদর করে মেবিনের চোয়ালটা আলতো করে টেনে দিয়ে বললোঃ এই জন্য তোমাকে এত ভালোবাসি,মেবিন নিলয়কে আজ খুব আদর মাখা কন্ঠে বললঃ প্লীজ বলনা সেই কাহিনীটা আমি শুনবো,
নিলয়ঃ ঠিক আছে কাক পাখি বলছি তবে আমাকে একটু আদর করে দাও,
মেবিনঃ হেসে বললো তুমি ইদানিং খুব দুষ্ট হয়ে গেছো,বলার সাথে সাথে নিলয় হেসে উঠলো এবং বললঃ তাহলে কাহিনী শোন,নিলয় কাহিনীটা বলতে শুরু করলো,ভবদা গ্রামে আসমা নামের এক মেয়ের করুন কাহিনী।
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much