২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১১

অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করবার মতো আকর্ষণীয়  মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" পড়ুন ও অপরকে পড়তে সহযোগিতা করুন   



                                              টানাপোড়েন (১১)

                                                                   অস্পষ্ট ধ্বনি


রেখার বৃষ্টি ভেজা রাতে একটা দুশ্চিন্তা তো মনকে গ্রাস করেইছিল। কিন্তু হঠাৎই পাশের বাড়ির ছেলেটার আবার গলা পেল  'রিমঝিম গিরে শাওন।সুলাগ সুলাগ যা এ মন।.. মরসুম মে ...।'গানটা কেমন মাদকতা এনে দিল রেখার শরীরে ও মনে। রেখা আস্তে করে জানলাটা খুলে বাইরের পরিবেশটা দেখার চেষ্টা করল। বৃষ্টির ছাট এসে চোখে মুখে পড়ছে।রেখা হাতটা জানলা দিয়ে বার করলো কি অসাধারণ একটা অনুভূতি রেখাকে নিয়ে গেল ছয় বছর আগের জীবনে। অনেক পুরুষ তার জীবনে এসেছে। সেভাবে কারো ডাকে সাড়া দিতে পারে নি। কি বিয়ের আগে ,কি বিয়ের পরে। ঘটনাটা বিয়ের পরে ঘটেছে। সবেমাত্র স্বামীকে ছেড়ে স্কুল-কলিগদের সঙ্গে কাটিয়ে এসেছে বিষ্ণুপুর ।বিষ্ণুপুর এর ঐতিহাসিক ঘরানায় আর সঙ্গে মুকুটমণিপুরে গিয়ে বসন্ত মরসুমে লাল পলাশের সমারোহ ,আদিবাসীদের আনাগোনা। নির্জন বনানীতে কয়েকবার তো বসেই পড়ল রেখা । লাল পলাশ ফুলগুলোকে হাতে তুলে চোখেমুখে মাখছে , রিম্পা দি ও পায়েল বলল ' কিরে তোর কি নতুন করে প্রেম এসেছে? দাঁড়া মনোজদাকে বলছি
 ফোন করে।


     অলঙ্করণ: সোমাশ্রী সাহা

রেখা বলল  'আমার বয়েই গেছে, আমরা সবাই রাজা এই রাজার রাজত্বে, বলেই নাচতে শুরু করলো। ব্ল্যাক জিন্স আর গোলাপি গেঞ্জিতে কি অসাধারণই নাকি লাগছিল? এটা অন্যান্যরা বলেছিল। তিন-চারদিন হইহুল্লোড় করে ওখানে কাটিয়েছিল ।জীবনে এই প্রথম একাকী কোথাও যাওয়া পরিবারের সদস্য ছাড়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে একটা গলায় কাঁটা বিঁধে ছিল সেটা হল বোর্ডের খাতা । এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইছে না রেখা ,মনেও করতে চাইছে না। তবুও মনে পড়ে। ওখান থেকে ফিরে আসার পর সেই খাতার জন্যই ঘটেছিল তার জীবনে এক স্মরণীয় ঘটনা। ফেরার  একদিন পরে হেড এক্সামিনারের বাড়িতে খাতা জমা দিতে যেতে হবে ।এমনিতেই বাড়ি থেকে বেরোতে লেট হয়ে গেছে। ট্রেন পায়নি ।শেষ পর্যন্ত ভাবল ব্রেক করে করে বাসে যাবে। নির্দিষ্ট টাইম এ বাসস্টপে এসে বাস না পেয়ে সে ভাবল বাইপাস থেকে বাস ধরবে। কিন্তু সেখানে যেতে হলেও একটা অবলম্বন দরকার ওই সময় সে দিশেহারা হয়ে গেছিল।এমন সময় একটি ছেলে বাইক করে যাচ্ছে ,অনেকক্ষণ ধরেই রেখাকে ফলো করছিল। প্রথম দিকে একটু বিরক্তি লেগেছিল। তারপর দাঁড়িয়ে রেখা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিসে যাবে? 
তখনই কাছে এসে ছেলেটি বলল ' আপনি কি লিফট চাইছেন?
রেখা কোন কথার উত্তর দিল না। এমন সময় ফোন আসলো 'হ্যালো'
ফোনের ওপার থেকে প্রশ্ন এলো'আপনি কখন খাতাগুলো নিয়ে আসবেন?'
হাঁ স্যার, একটু দেরী হবে আমি ঠিক পৌঁছে যাব।
সে তো আসবেন আমাদের তো একটা সময় আছে কোথাও না কোথাও সিডিউল করা থাকে।
রেখা বলল 'স্যার এ বারটা ক্ষমা করে দিন।
ছেলেটি তখন নির্লজ্জের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে আর মিটমিট করে হাসছে। 
আবার কাছে আসলো এবং হেসে এসে বলল 'ম্যাডাম আপনি স্কুল টিচার? দেখুন আমি কিন্তু আপনার উপকারই করতে চেয়েছি। ফোনে বলছিলেন  খাতার ব্যাপারে আপনার লেট হয়ে যাচ্ছে, তাই..?
তখন রেখা মনে মনে ভাবল তাই তো লিফট  নিলে কি অসুবিধা আছে? এবার একটু হেসেই রেখা বলল  ' হ্যাঁ। আসলে আমার হেড এক্সামিনারের বাড়িতে যেতে হবে।'
ছেলেটি আবার হেসে বলল  'সে জন্যই তো বলছি চলুন ,আপনাকে লিফট দিচ্ছি।'
রেখার একটু কিন্তু কিন্তু ছিল কিন্তু অপারগ হয়েই শেষ পর্যন্ত চেপে পড়ল বাইকে। এই বাইকে চাপা  যে পরবর্তীকালে তার কাল হবে কে জানত?
  ছেলেটি জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল ' কোথায় যাবেন?
রেখা বলল 'আপনি আমাকে বাইপাসে নামিয়ে দিলেই হবে। '
তারপর ছেলেটি নিজেই যেচে নিজের পরিচয় দিতে লাগলো। আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। আমার নাম সমীরন। 
বয়স খুব বেশি নয়।কথাবার্তা বেশ ভালই লাগলো রেখার।
শেষে ছেলেটি  জিজ্ঞেস করল ' ম্যাম আপনার নাম?'
 রেখা কিছুতেই নামটা বলতে চাইছিল না কিন্তু পরবর্তীকালে ভাবল এতটা উপকার করল নামটুকু বললে কি এমন হয়ে যাবে? 
তখন সে বলল  'আমি রেখা ।
এবার ছেলেটি হঠাৎ করেই গাড়িটা এমন ব্রেক কষলো রেখা ছিটকে ওর গায়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিল। 
ছেলেটি বলল  ' আমাকে ধরে বসুন না। হাতে লাগেজ আছে?'
রেখা বলল 'না না আমি ঠিক আছি।'
এরপর ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল 'আপনার কি নতুন বিয়ে হয়েছে?'
রেখা এ প্রশ্নের কোন উত্তর দিলে না।
আবার ছেলেটি প্রশ্ন করল  'আপনার বাচ্চাকাচ্চা আছে?'
রেখা ভাবছিল কি অদ্ভুত ব্যাপার লিফট দিয়েছে বলে তাকে এত কিছু বলতে হবে নাকি ?
আবারো রেখা চুপ।
এবার ছেলেটি বলল  'কেন আমাকে বললে কি আপনার কোন অসুবিধা আছে?'
এবার রেখা বলল  'হ্যাঁ ।সে তো আছেই। হঠাৎ আপনি গায়েপড়ে এতগুলো কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
ছেলেটি বলল  'ম্যাম রেগে যাচ্ছেন? ঠিক আছে আপনাকে বলতে হবে না।'কথা বলতে বলতেই বাইপাসে এসে গেল। 
রেখা বলল  'ঠিক আছে আপনি এখানে নামিয়ে দিন। নেমে একটা থ্যাংকস জানাল। 
ছেলেটি কিন্তু বাইকটা নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো। রেখা এবার বারবার ঘড়ি দেখছে ।বাসের টাইম? বাইপাসের ধারে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞেস করল দূরপাল্লার গাড়ি কি বেরিয়ে গেছে, বহরমপুর যাওয়ার?
অচেনা ব্যক্তি বললেন এই তো একটু আগেই গেল আপনার আসার মিনিট দুয়েক আগে। এবার রেখা ভারি চাপে পড়ে গেল। ছেলেটি কিন্তু তখনও মিটিমিটি হাসছে। পাশে অনেক যুবক-যুবতী এমন গায়ে পড়ে সাথে গায়ে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে কেমন অসহ্য লাগছিল। পাশে এক পেঁপে বিক্রেতা পেঁপে নেবে নেবেন বলে হাঁকছে। পাশে  এক আখের রস বিক্রেতাকে ছেলেটি বলল  'দু গ্লাস আখের রস দিন।'একটি গ্লাস নিজের হাতে অপরটি রেখার  কাছে এগিয়ে ধরল। বলল 'এই নিন আখের রস খান। চিন্তায় আছেন তো? রিল্যাক্স করুন।'
রেখা খাবে কি খাবে না দোটানায় পড়ল। ছেলেটি এমন ভাবে হাতের কাছে এনে দাঁড়িয়েছে ,না করতে পারছে না ।শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে নিতে হলো গ্লাসটি। তারপর টাকা মেটানোর সময় রেখা নিজের থেকেই দেখল এটা তার ভদ্রতায় লাগে ।তাই বলল দামটা রেখাই দেবে। 
ছেলেটি বলল  'কেন আমি তো আপনাকে অফার করেছি ।দামটা আমি দেব। '
রেখা বলল  'না আমি দেবো।'
শেষে ছেলেটি বলল  'ঠিক আছে ।আবার যদি কখনো দেখা হয় ,তখন আপনি আমাকে খাওয়াবেন ওটা due থাক। রেখাকে হার মানতে হলো।
 ছেলেটি বলল  _ম্যাডাম এখন কি করবেন?
রেখা একটু চিন্তিত মুখে বলল ' হ্যাঁ, তাই তো ভাবছি।'
ছেলেটি ভরসার সঙ্গে বলল  'নিজেকে দেখিয়ে আমি আছি। '
এবার রেখা সত্যি সত্যি হেসে ফেললো। ভাবলে ঠিকই তো ,তার জীবনে যেন উদ্ধারি দূত হয়ে এসেছে। ছেলেটি বলল  'চলুন আপনাকে পৌঁছে দেবো আপনার হেড এক্সামিনারের বাড়িতে।'
রেখা বলল 'আপনি কেন যাবেন আমার জন্য।'
ছেলেটি বলল 'সেটা তো বলতে পারি না। তবে কেমন যেন মনে হলো আপনার উপকারটা করি।'
এবারে রেখা হেসে বলল  ' ঠিক আছে চলুন। থ্যাঙ্ক ইউ।'
ছেলেটি বলল  'থ্যাঙ্কস কিসের জন্য? আগে আপনাকে পৌঁছে দিই ।তারপরে না হয় থ্যাংকস জানাবেন।'
রেখা বলল  'ঠিক আছে। আপনার সঙ্গে আমি কথায় পেরে উঠব না ।চলুন।'
যেতে যেতে হঠাৎ বৃষ্টি ।রেখা!তো ভিজে একাকার হয়ে গেছে। ছেলেটি বলল আপনার তো খাতা আছে। কি হবে ।এদিকে তো ভিজে গেছেন। কিছু মনে করবেন না ম্যাম একটা কথা বলব?
রেখা বলল  'হ্যাঁ বলুন না?
বলছি আমার কাছে রেনকোট আছে কিন্তু আমি তো গায়ে দিলাম না ।কারন আপনি ভিজে যাচ্ছেন।আমি কি করে গায়ে দিই বলুন? তারচেয়ে রেনকোটটা দিয়ে আপনার ওই খাতাগুলোকে গার্ড করুন। বলেই নিজের থেকে খাতাগুলো আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে রেনকোট দিয়ে মুড়িয়ে দিলে। আর বললে এবার ও কি আমাকে ভয় করছে?'
রেখা একদম ঝাঁসির  রানীর মত উত্তর দিল। ভয় ,ভয় পাবো কেন ?আপনি বাঘ, না ভাল্লুক?
ছেলেটি উত্তর দিলো হেসে 'আমিও তো সেটাই জানি আমি বাঘ না ,ভাল্লুক নয়। তবে আপনার সঙ্গে আজকের এই দীর্ঘ সময়ের  রাস্তাটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে ।'
রেখা বলল  'কেন আপনি কখনো এরকম কাউকে নিয়ে বাইকে চাপান নি?'
ছেলেটি বলল্য' হ্যাঁ মিথ্যে বলব না ।চাপিয়েছি কিন্তু আপনার সঙ্গে একটা আমার অন্যরকম অনুভুতি হলো ।জানি না কেন হল, এ প্রশ্নের কোন ব্যাখ্যা নেই। বলতে বলতেই গন্তব্য স্থানে এসে গেল। 
রেখা বলল  'এখানেই নামিয়ে দিন।'
 ছেলেটি বলল 'একটা সত্যি কথা বলবো?'
 রেখা জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকালো।
আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।
রেখা তো অবাক হয়ে গেল ,একটু হেসে চলে গেল।
ছেলেটি পিছু ডাকলো শুনুন? বলেই একটা ভিজিটিং কার্ড রেখার হাতে ধরিয়ে দিল। রেখা আবার উৎসুক ভরে তাকিয়ে । 
ছেলেটি বলল  'রাখুন কখনো যদি প্রয়োজন লাগে।'
রেখা মনে মনে ভাবল, আর কি প্রয়োজনে লাগবে আর তোমার সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে না চাঁদ।'
রেখা একটা থ্যাঙ্কস জানিয়ে চলে গেল।
 কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে তার জীবনে ছেলেটি কিভাবে জায়গা করে নিয়েছিল ।সেটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে ফোনের আওয়াজে রেখা ফিরে আসলো তার আসল জায়গায়।
ফোনটা রিসিভ করল '
হ্যালো'।
মনোজ বলল  'এই রেখা আজকে আমি ফিরতে পারবো না ।তোমাকে কিছুতেই ফোনে পাচ্ছিলাম না।'
এদিকে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। রাত হয়ে গেছে কালকে অফিস করে একেবারে বাড়ি ফিরব। তারপর বলব।'
রেখা বলল ' ঠিক আছে।'
অন্য সময় হলে মনোজকে রাগ দেখাত ,অভিমান করতো ।কিন্তু আজকে তার সেই মন কোন কথাই বলল না। সে যেন আজকে একাকী থাকতে চাইছে আর পুরনো স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতে চাইছে। আজ তার ঘুম আসবে না বোধ হয় ।মাথার ভেতর সহস্র ধুনি যেন কেউ জ্বালিয়ে দিয়েছে ।শরীরের ভেতরে রন্ধে রন্ধে যেন অসহ্য জ্বালা। অন্ধকার বৃষ্টির রাত তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ছয় বছর আগে ঘটে যাওয়া দিনগুলোতে। আবার ফোনটা বেজে উঠলো, হ্যালো।
কিন্তু বৃষ্টির শব্দ আর ফোনের লাইনের ডিস্টার্ব এর জন্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না। অস্পষ্ট ধ্বনি গুলো যেন তার কাছে নুতন করে স্পষ্ট হতে চাইছে।

ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১১ ক্রমশ

জাফর রেজা'র ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত "

আজ  থেকে শুরু হলো নতুন ধারাবাহিক লেখক জাফর রেজার ছোট গল্প "ক্ষণিক বসন্ত




ক্ষণিক বসন্ত


( ম পর্ব ) 

                       সারাদিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পর, এখন যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। এয়ারপোর্টে কিছু কাজ ছিল, কাজ শেষ করতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল। বাসায় ফিরছি, বৃষ্টির  জন্য গাড়ি আস্তে চালাচ্ছিলাম।
লন্ডনের ফাকা রাস্তা বৃষ্টির জন্য মনে হয় আরও ফাকা হয়ে গেছে।
হটাৎ চোখে পরলো বাস ষ্টপে একটি মেয়ে হাত তুলে লিফট চাইছে। দ্বিধা দন্ধ নিয়ে গাড়ি থামালাম, আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো আপনি কোন দিকে যাবেন, কোথায় যাব বলতেই সে বললো তার বাসাও ঐ দিকেই, বাসের জন্য অনেক্ষন অপেক্ষা করছে কিন্তু বাস পাচ্ছেনা, এখন আমি যদি দয়া করে তাকে লিফট দেই খুব উপকার হয়। দরজা খুলে দিয়ে বললাম উঠুন।
মেয়েটির দিকে তাকালাম, সম্ভবত বাংলাদেশী অথবা ভারতীয় হবে। আলাপচারিতায় জানলাম উনি ভারতের জলপাইগুড়ির মেয়ে, এখানে পড়ালেখা করতে এসেছে। দেশ থেকে যা শুনে এসেছে এখন দেখছে তার সাথে কোন মিলই নেই। এখানে থাকার মতো মুটামুটি একটি জায়গাও নেই, এক রুমে ওরা ৪ জন থাকে।  একটা চাকুরীও যোগার করতে পারেনি। ওর কথা শেষ হতে হতে তার বাসার সামনে এসে পরলাম। 

           ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিলাম, নামার আগে বলল ধন্যবাদ, আমার সেল নাম্বারটি চেয়ে নিল। ওর বাসা আমার বাসা থেকে দুরে নয় মাত্র ৫ মিনিটের ড্রাইভ। কেটে গেল দুটো দিন। বিকালে অফিসে হিসাব মিলাচ্ছি এমন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে কল, রিসিভ করলাম, অপরিচিত মেয়েলি কন্ঠ, নাম জানতে চাইলাম, বলল, বুলা বলছি, সেই রাতে যে লিফট দিয়েছিলেন, মনে নেই, জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন, বলল ভাল নেই আমাদের কি একটু দেখা হতে পারে?  বললাম কোথায়, বলল হোয়াইয়চ্যাপলে একটা কফি সপ আছে ওখানে চলে আসুন ঠিক ৬ টায়, বললাম ঠিক আছে। কফি সপের সামনে গিয়ে দেখি বুলা দাড়িয়ে আছে, জিজ্ঞেস করলাম দাড়িয়ে কেন ভিতরে বসলেই পারতেন, বলল,  কোন অসুবিধা হচ্ছেনা,   বললাম চলুন ভিতরে গিয়ে বসি। দুজনে মুখোমুখি বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম কফির সাথে কি খাবেন? বললো শুধু কফি। বুলা ভারতের জলপাইগুরির মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে , বাবা সরকারি চাকুরীজীবি মা গৃহিনি দুই ভাই বোন, ভাই ওর ছোট, কলেজে পরে। বাবার জমানো টাকা আর কিছু ধার দেনা করে স্টুলন্ড ভিসায় লন্ডন এসেছে। লন্ডনে এক রুমে ও আর তিন মেয়ে থাকে। বুলা একটি পার্টটাইম  কাজ করে, সাপ্তাহিক বেতন খুবই সামান্য যা দিয়ে ওকে হিমসিম খেতে হয়। ওর কথা শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম,  বুলা বললো কিছু বলছেন না যে, আমি বললাম এখানে মোটামুটি ভাবে চলতে গেলে আপনাকে পড়ালেখা ছাড়তে হবে,  আমার কথায় আপনি যদি আঘাত পেয়ে থাকেন তবুও এটাই বাস্তবতা। কারন আপনি না দিতে পারবেন টিউশন ফি না পারবেন ঘর ভাড়া আর খাওয়া ও যায়ায়ত খরচ তো আছেই।  বুলা অনেক্ষন চুপ করে থেকে বলল এখন আপনই বলুন আমার কি করা উচিৎ। পড়া লেখা যে চালিয়ে যেতে পারবেন না তা তো অবশ্যই বুজতে পারছেন, এখন কি করে এই দেশে  একটু ভালভাবে থাকা যায় সেই চেস্টাই করা উচিৎ।  বুলা আবারও অনেক্ষন চুপ করে রইল তারপর মুখ তুলে আমার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,  পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারবনা তা জানি।


        
    অলঙ্করণ : প্রীতি দেব

                              বুলার দিকে তাকালাম, সাধারণ এক বাঙালী মেয়ে, কিন্তু মুখখানি যেনো ভোরের সূর্যের মতো, মায়াবী চোখ দুটোতে যেনো নতুন দিনের ইশারা।
ভাবলাম এই মেয়ে যার ঘরে যাবে, তার ঘর আলোয় ভরে যাবে।
বললাম, এখন কি করবেন ঠিক করেছেন ? আবারো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, কি আর করবো একটা ফুল টাইম কাজ নেবো, তারপর দেখি।
আমরা দুজনেই চুপ করে রইলাম। নিরবতা ভেঙে বুলা জিজ্ঞেস করলো, আপনি কোথায় থাকেন?  বললাম আপনার কাছাকাছি।
জিজ্ঞেস করলাম, এখানে আপনার আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কেউ নেই ? বললো, আছে দূরসম্পর্কের এক পিসি যোগাযোগ নেই।
জিজ্ঞেস করলাম উনি জানেন আপনি লন্ডন আছেন ?
বললো, তা জানেন।
বুলা চলুন উঠা যাক।
রাতে শোবার আয়োজন করছিলাম এমন সময় বুলার কল, জিজ্ঞেস করলো শুয়ে পরেছেন, বিরক্ত করলাম না তো ?
বললাম, না এখনো শুইনি, শোবার আয়োজন করছিলাম, বুলা আপনি বলুন।
--- একটি কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো ?
--- বুলা আপনি বলুন।
বুলা খুব অসহায় কণ্ঠে বললো, আপনি কি আমাকে একটা কাজ যোগার করে দিতে পারবেন ?  যাতে মোটামুটি ভাবে চলতে পারবো । 



ক্রমশ

হা‌বিবুর রহমান এ‌র লেখা "সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা"৬

ঘরের ভিতর থেকে কবি ধরেছেন দৃশ্যকথা গদ্যের ভাষায় ধারাবাহিক ভাবেই প্রকাশিত হয়ে চলেছে তাঁর অসাধারন সৃষ্টি। লিখতে সহোযোগিতা করুন লাইক ও কমেন্ট করে । পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল পাঠক পাঠিকা লেখক লেখিকা সকলের জন্য রইলো অনন্ত শুভেচ্ছা



সহধ‌র্মিণীর হুঁ‌শিয়ারী বার্তা 
(ষ্ঠ পর্ব)
  


                                জ অ‌ব্দি সহধ‌র্মিণীর কোন কা‌জেই খুব একটা সাহায‌্য কর‌তে পা‌রি‌নি। তি‌নি সব সময় আমার স্বাস্থ‌্য রক্ষার ব‌্যাপা‌রে নানান পরামর্শ দেন আর সম‌য়ে সম‌য়ে নিয়‌মিত সুষম খাবার গ্রহ‌ণের কথা ব‌লে ভগ্ন স্বা‌স্থ্যের কুফল সম্প‌র্কে সতর্ক ক‌রে থা‌কেন। ত‌বে এবার তাঁ‌কে সতর্ক করার পালা আমার নি‌জের। গতকাল তাঁর স‌হোদর ভাই‌বো‌নেরা এ‌সে একরকম মন খারাপ ক‌রে গে‌ছে তাঁর শরী‌রের এমন দূরাবস্থা দে‌খে। এমন‌কি ছোট ভাই‌দের সহধ‌র্মিণীগণও তাঁর এমন ভগ্নস্বা‌স্থ‌্য দর্শনে মনক্ষুন্ন হ‌য়ে‌ছেন। 

সারা‌দিন সাংসা‌রিক কাজকর্ম যথা রান্নাবান্না সহ ছে‌লেমে‌য়ের দেখভাল করা‌র মধ্যেই যেন তাঁর পরমান্দ নি‌হিত আ‌ছে। বাস্ত‌বে দিন‌শে‌ষে যা ঘট‌ছে তা হ‌লো- একজন গৃ‌হিণী বা গৃহকত্রী হি‌সে‌বে ‌একটু সময় ক‌রে নি‌জের উপর যেন খেয়াল করার মত তাঁর কোন সময়ই নেই। তাই এখন তাঁ‌কে সতর্ক করা আমার জন‌্য একটা অপ‌রিহার্য বিষয় হ‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে‌ছে। 

ছে‌লের প‌দোন্ন‌তির সাফ‌ল্যে একজন মা যে এমন খু‌শি হ‌তে পা‌রেন তা সহধ‌র্মিণীর কথা ও কা‌জে প্রমাণ মিল‌লো অার এমন বাস্তব উদাহরণ‌টি চাক্ষুশ দর্শনে ধন‌্য হলাম। ভাবলাম, স‌ত্যিই ভাগ‌্যবান আ‌মি এবং আমার ছে‌লেমে‌য়েও। সহধ‌র্মিণীর প্রতি খুবই অ‌বিচার করা হ‌বে য‌দি আ‌মি এক‌টি বা দু‌টি প্রসঙ্গ না উ‌ল্লেখ ক‌রি য‌দিও বিষয়‌টি খুবই ব‌্যক্তিগত।


    অলঙ্করণ : প্রীতি দেব

প‌রিণ‌য়ের প‌রে আমা‌দের সংসার জীবন শুরু হবার সা‌থে সা‌থে তি‌নি সংসা‌রের সকল কাজক‌র্মের দায়-দা‌য়িত্ব নি‌জে নি‌জেই অ‌নেকটা স্বয়ং‌ক্রিয়ভা‌বেই নি‌জের কাঁ‌ধে তু‌লে নেন। ‌সেনাবা‌হিনীতে চাকুরীর সুবা‌দে বি‌ভিন্ন সেনা‌নিবা‌সে তিন বছর পর পর বদলী হবার কার‌ণে বাবা মা'র সা‌থে যৌথ প‌রিবা‌রে একসা‌থে তেমন একটা থাকা হ‌য়নি। মা‌ঝে মা‌ঝে আমরা ছু‌টি নি‌য়ে যেতাম বাবা, মা সহ অন‌্যান‌্য ভাই‌বোন ও আত্মীয় স্বজন‌দের দেখ‌তে। আবার কোন কোন সময় বাবা মাও বেড়া‌তে আস‌তেন তা‌দের বড় সন্তান ও বউমা‌কে দেখ‌তে।

যেটা বল‌বো বল‌বো ক‌রে এখনও বলা হয়‌নি সেটা হ‌লো, সংসার জীব‌নের একদম শুরুর দি‌কে রান্নাবান্না শে‌ষ ক‌রে আমার অ‌ফিসে গম‌নের প্রাক্কা‌লে আমা‌র দুপা‌য়ে মোজা প‌রি‌য়ে দি‌তেও কোন‌দিন কু‌ন্ঠিতবোধ ক‌রেন‌নি আমার সহধ‌র্মিণী। এখন তি‌নি এমন‌টি কর‌তে উদ‌্যত হ‌লে আ‌মি তা‌কে বাধা দেই, নি‌ষেধ ক‌রি। জা‌নিনা এখনকার কোন বউ এমন‌টি ক‌রে কিনা? 

সহধ‌র্মিণীর অন‌্যান‌্য ‌বি‌শেষ গুণাবলী আগামী প‌র্বে বলা যা‌বে। ঘরের বউ‌টি য‌দি ভাল ম‌নের হয় আর সেসা‌থে স্বামী‌টিও য‌দি সমমনা হয় তাহ‌লে তো সোনায় সোহাগা। আর স্বামী স্ত্রীরএম‌ন মধুর সম্পর্কটি কোন ক‌বির নজ‌রে পড়‌লে ক‌বি তাঁর লেখনী‌তে নিশ্চয় ম‌নের মাধুরী মি‌শি‌য়ে নি‌মোক্ত চরণগু‌লো বেশ জো‌রে‌সো‌রেই আওড়া‌‌বেন আর সেটাই তো স্বাভা‌বিকঃ

"কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহু দূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতেই সুরাসুর।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে।"





ক্রমশ

সুবর্ণ রায়


 


তোমার জন্য 


তোমার জন্য আকাশপ্রদীপ 
তোমার জন্য সন্ধ্যেবেলা 
তোমার জন্য করবীগুচ্ছ 
তোমার জন্য রথের মেলা 

তোমার জন্য সেই প্রতিধ্বনি 
তোমার জন্য মিথুনময় 
তোমার জন্য কী হাপিত্যেশ 
তোমার জন্য এই নিশ্চয় 

তোমার জন্য রোদন রাত্রি 
তোমার জন্য রাত্রিবেলা 
তোমার জন্য হা-হুতাশ লেখা
তোমার জন্য এমনি খেলা  

তোমার জন্য আকাশগঙ্গা 
তোমার জন্য নেবুলা জয় 
তোমার জন্য কবিতাগুচ্ছ 
তোমার জন্য-ই আয়ুক্ষয় 



                      অলঙ্করণ : সানি সরকার

রিক্তা হাসান




এই আমি


এই যে আমি 
এমন কেমন,এমন আমি ছিলাম না তো!
সকাল সকাল হাসির টোপর,দুপুর বিকাল দূরুন্ত মন
রাতের চাঁদে আলসে ঘুমে একশ একটা ভুল স্বপন!
তারপরে যে কি হলো
হঠাৎ করে বক্ষজুড়ে প্রজাপতির পাখনা পেলো
উড়ে উড়ে কেবল দূরে
তারপরে যে কি হলো
মন হারালো,চোখ জুড়ালো
আস্ত একটা আকাশ ছেলে
সামনে এসে 
কেবল হাসে!
আমি কি আর এমন ছিলাম
দুষ্টু হাসির মিষ্টি কথার 
বৃষ্টি জলে ভিজতে যেতাম!
তারপরে যে কি হলো-
চোখের পরে,মুখের পরে
আকাশ ছেলের আদর পেতে
আমার মনের পা বাড়ালো;
আমি কি আর এমন ছিলাম!
হাত বাড়ালেই প্রেমিকা হতেম?
সেই ছেলেটা আকাশ হয়ে
সকাল বিকাল রোদের বুকে 
মেঘ উড়িয়ে
মেঘ ভাসিয়ে 
জল নামিয়ে
কেমন করে 
চোখ পাকিয়ে
প্রেম গুঁজে দেয় 
কানের ফুলে
দুঃখ নীলে
একশ ভুলে!

আমি কি আর এমন ছিলাম?
প্রেমিক বললেই
প্রেমিকা হতাম!
তারপরে যে কি হলো
আকাশ ছেলের 
চতুর্দিকে মন আগালো
হাতের আঙুল তাও আগালো
আমায় রেখে আমার শরীর ভিড় জমালো
আমি এখন শূন্য একা কোথায় যাবো!কার আদলে!
আমি কি আর এমন ছিলাম
বসতে বললেই 
মন বিছাতাম!

তারপরে যে কি হলো
মন বিছালাম
চোখ বিছালাম
প্রেম বিছালাম
আর যা ছিল 
আমার একার 
একে একে সব নুয়ালাম;
তারপরে যে কি হলো
ভালোবাসা'র অভিশাপে
আকাশ ছেলের নামের তরে
সাতটা জনম সাতটা মরণ লিখে দিলাম!

শানজানা আলম




ছোট্ট কিছু ইচ্ছা


ছোট্ট একটা বাসা হোক,
দু কামরা হোক না, এক চিলতে হেঁসেল,
এক টুকরো বারান্দা আর
আর আর আর, বিশাল একটা আকাশ!
ছুটির বিকেলে দু পা হেঁটে একটা আইসক্রিম
অথবা দূরে কোনো নদীর ধারে একটু বসা!
অথবা অচেনা রাজপথে গন্তব্যহীন একটু রিক্সা যাত্রা!!
রোজকার রুটিনে পোলাও না হোক!
ডাল ভাতের সাথে ছোটো মাছের চচ্চড়ি,
শাক ভাজা সাথে কুমড়োর ছক্কা!!
আচ্ছা, এসব কি খুব দামী কোনো চাওয়া ছিল?
কেউ কেউ সবটা পায়, আর কেউ কিচ্ছু পায় না!
চাওয়া পাওয়ার হিসেবটা এত বেশি গোলমেলে কেন!!
কী পেয়েছি, তার হিসেব না করি!
ছোট্ট করে বলি,
পেয়েছি অনেক তবে তা চাইনি মোটেও!
চেয়েছি এক সমুদ্র ঢেউ!
এককাপ চায়েও দোলা দেয়নি কেউ!

সফিক ইসলাম




দ্বৈত মন
 
                
পাখি ও পরাগের কী অবাধ স্বাধীনতা!                              
 কী অসীম পরাগায়ন আর যৌনাচার! 
 বাতাসে ভেসে যায় পরাগ রেনু, উড়ে যায় পাখি
 আমার এই মন আমি  কেমন করে বেঁধে রাখি! 
 বসন্ত এসেও  যাই যাই করে হয়ে যায় পার
পাখি ও পরাগ হতে নিভৃত মনে শুধু হাহাকার। 

এই মন  কখনো পাখি হয়, কখনো পরাগ
ফুল খুঁজে খুঁজে দিন চলে যায়
কান পেতে থাকি অপেক্ষায়, কবে দেবে পাখি ডাক!
সাইবেরীয় হিম লেগে থাকে পাখির ডানায়, 
তবুও পালকে নিরন্তর মেখে রোদ
পাখি তার জীবনের সন্ধানে নিজেরে হারায়।

আমার আমারে করি দুই ভাগে ভাগ 
এক ভাগে করি শুধু ফুলেরই চাষ 
 অন্তরে মাখি রোজ  ফুলের সুবাস
ফুলের সাথেই  তাই যত সংরাগ।
অন্যভাগে কাঁটাতারহীন উড়ুক্কু এক পাখিমন করে বাস                           
 ঠিকানা  অজানা জানি, তবুও খুঁজি মুক্তির আশ্বাস।

গৌরীশংকর মাইতি




 শরতে ফুলের মেলা


সাদা মেঘের আনাগোনা
নীল আকাশের কোলে
সবুজ লতানো গাছের ডালে
অপরাজিতা ঝোলে।

জল ভরা টলটলে দিঘি
শাপলা শালুকে ভাসি
বিলের জল পাতায় ঢাকা
শতদল রাশি রাশি।

ভোরের বেলায় শিশির বিন্দু
রোদ্দুরে হীরক ছটা
শিউলি তলায় ঝরা শিউলি
কমলা সাদা ফোঁটা।

সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে 
কামিনী থোকায় থোকায়
সন্ধ্যায় ফোটে ভোরে ঝরে
কামিনী সুগন্ধ ছড়ায়।

সবুজ পাতা ঢাকা পড়ে
সাদা টগর ফুলে
কাশের বনে কাশের মেলা
হাসে নদীর কূলে।

জুঁই, কেয়া, মালতি, মল্লিকা
রাধাচূড়া, নয়নতারা
শরৎকালের ফুলের মেলায়
হৃদয় আপন হারা।

গোলাম কবির





এলোমেলো ভাবনার কবিতা 

   খাশির চামড়া ছিলার মতো অত্যন্ত 
   ক্ষীপ্রতার সাথে পাকা কসাই এর মতো
   মানুষের বিবেক নিলামে উঠে যাচ্ছে!  
   রোদের তীব্রতাকে কুচিকুচি করে কেটে
   নিয়ে এখন ভয়াল কোনো সন্ত্রাসী যেনো
   পুরো পৃথিবীকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা
   বিষাক্ত বিষাদের নগরী বানিয়ে ফেলছে
   সহসাই। এদিকে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে
   একদল গৈরিক আলখেল্লাধারী ব্যক্তি
   সম্মিলিত ভাবে চিৎকার করছে, ওরা
   মানুষের হৃদয় ন্যায্যমূল্যে কিনে নেবে
   বলে বারবার আশ্বস্ত করছে কতোগুলো
  বোকাটে  লোককে, যদিও ঐ লোকগুলো
  আরো বেশি দাম পাবার আশায় ওদের
  সাথে দর কষাকষি করছে, হায় রে
  মানুষের হৃদয়! এদিকে একজন কবি
  অভিমানে আর কখনোই প্রেমের কবিতা
  লিখবেন না বলে নিজেই নিজেকে বারবার
  বলছেন, তবুও কে শোনে কার কথা! 
  এরই মধ্যেই কখন যে সকাল হয়ে গেলো, 
  আবার সন্ধ্যায় সূর্য ডুবে গিয়ে একাদশী
  চাঁদের আলোয় ঝলমল করে উঠলো
  উঠোন, নদীর বুকে জলের ঢেউয়ে
  চিকচিক করে উঠতে থাকলো মানুষের  
  আগামী সকালের ভাবনা গুলো!

দেলোয়ার হোসেন সজীব




এসো বন্ধু হই


এসো বন্ধু হই
বন্ধুত্বের হাত বাড়াই,
এসো কল্যানে
এসো ভালোবাসা বিলাই।

এসো প্রভুর ধ্যানে
দিনরাত্রি যাপন করি,
এসো মানুষের জন্য
সুস্থ্য সুন্দর সমাজ গড়ি।

এসো ভুল বুঝাবুঝি
ভুলের ঘরে ভুল ঝেরে,
এসো মানুষ হই
ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত করে।

এসো ভালোবাসি
মানুষ মানুষ ভাবি
এসো ভেদাভেদ ভুলে
মানবতার জয়গান করি।।