হাসপাতাল থেকে কয়েকটা প্রলাপ
(১)
সিঁড়িটা ঝক ঝকে, উঠে যাচ্ছে উপরের দিকে,
কিছুটা থমকে যাই, আমিও, নিষ্প্রাণ পুতুল ,
রক্ত কিছু দিতেই হবে l শার্সির ওপরে কিছু মেঘ -
আমি বাধ্য শিশুর মতো অসহায় এক নিস্তব্ধতা -
ডাক্তারবাবু এখন ঈশ্বরের মতো আবেগহীন পুতুল
কি যে বললেন ? মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যায় -
বসেই রয়েছি l কখন যে ডাক আসবে ...
এখন ঢুকে যাবো, কি সব পরীক্ষা নেবে, যন্ত্রের মন-
একটা লাইন কবিতা নেই
কার কাছে আয়ু চাইবো দশটা বছর l
যন্ত্রের ভাষা এ জীবনে শেখাই হলনা l
(২)
আমাকে বসিয়ে রেখে, কারা যেন চলে গেছে দূরে -
পাশে যে বসে আছে, তাঁর ভাষা আমি বুঝতে পারিনা ,
হাসপাতাল কোন কালে মন্দির ছিলোনা l
একটা কথা বলছেনা কেউ, সারি সারি স্টিলের চেয়ার -
শুশ্রূষার ভাষা এখন অভিধানে নেই -
মুখ ফেরানো কার অভিমান ?
দেখা যাক যন্ত্র কি বলে ?
আমি বসেই রয়েছি l
আশ্চর্য এক অপেক্ষায় কাল, আমাকে অপদার্থ অচল করেছে l
(৩)
আমার চারপাশে কবিতার বই নেই,
শব্দ আছে রোগহীনতার, এখানে ভাষণ নেই l
কাউন্টারে টাকার বান্ডিল I
রিপোর্ট বগলে করে ঢুকে যাই ঈশ্বরের ঘরে l
কয়েকটা ওষুধ লিখে দেন l
শরীর থেকে কেন যে বেরিয়ে যাচ্ছে সমস্ত আমিষ ?
আমি সারাদিন নিরামিষ কবিতার কাছে থেকে থেকে
আমিষ শব্দ শিখতেই পারিনি l
ঝকঝকে স্টিলের চেয়ারটা আমার ব্ন্ধু মনে হয় l
(৪)
বেরিয়ে এসেছি রাস্তায় l এক কাপ কফি চলতে পারে -
দ্রুত গতিতে ধাবমান রাস্তার সময় -
আমি এখন গতিমান কোনো বস্তু পৃথিবীর নই,
হতাশার জল বিন্দু নেই, আকাংখার সিঁড়ি নেই আর -
এই মুহূর্তে শুধু কফির কাপ এবং চিনিহীন উষ্ণতা,
সামনে হাসপাতালের বিসাল বিল্ডিং , তাজমহলের মত জেগে আছে l
আমি সব গেট পার হই l তেঁতো কপি রক্তের ভিতর -
সাদা এ্যাপ্রোন ডেকে নেয় , দেখি বোবাদের ঘর -
সচল হয় USG মেশিন l পর্দায় নীল ছবি কবিতা আঁকেনা
কয়েকটা মুহূর্ত আমি কফিনের শব -
য়ার স্বপ্ন l কয়েকদিন বাঁচা ছাড়া আর কিছু নেই
সামন্য সময় , মনে হয় অনন্ত আলোকবর্ষের কোন জীব l
(৫)
তিনটে ওষুধ ছমাস খাবেন,
আমি তিন ভুবনের কথা ভাবি -
আমার ভ্রমণে হাসপাতাল যুক্ত ছিলনা ,
কবিতার বইয়ের বদলে ,দিন গুনে গুনে ,নিতে হবে নিম ক্যাপসুল -
আমার ব্ন্ধু প্রেমিকা কি গান পাঠালো ?
আকাশে কান পেতে, জানাই হলো না ,
তপ্তদিনের উদ্দেশ্যে বলি , আমি ভালো আছি কিনা বোঝাতে অক্ষম ,
তোমার চন্দন গন্ধ জ্যোৎস্নায় ভিজিয়ে দিও l
বাইরে বেরিয়ে দেখি , দিনের কুসুমে স্বপ্নের গন্ধ লেগে আছে -
সাদা এ্যাপ্রোন পরে কে যেনো দাঁড়িয়ে অদৃশ্য ছায়ায়
(৬)
হাসপাতাল সৌন্দর্য নেই , সাধ আছে বেঁচে থাকবার -
নিভু নিভু প্রদীপের মতো l
শরীর মহাশয় ছিলো l আরও কিছু যত্ন যত্ন খেলা !
এবেলা ওবেলা কিছু করেছি কি ?
মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে , কথাহীন , কি যে বলবে ?
আধুনিক যন্ত্রের ভাষা ?
কিছুই বুঝিনা আমি ,
পড়ে আছে মন খারাপের খাতা , শূন্য স্থান নেই -
বোবা আয়নার কাঁচে দুটো কথা লিখে রাখি -
যে কথা উচ্চারণ হয়নি জীবনে -
লেখা হয়নি , লেখা হয়নি ,জীবন্ত গাছের মতো আয়ু .....
(৭)
রাষ্ট্রের মতো প্রতিশ্রুতি দিতে শিখেছে
হাসপাতলের নিজস্ব প্রতি রক্তের কনা ,
গিলছে সবাই l এ জীবন , এই বেঁচে থাকা খুবই সুন্দর l
তাই এই ছোটা ছুটি l দুরন্ত আবেগ l
এখানে জমিয়ে আছে মহাজাগতিক বেচা কেনা , ভালো হয়ে যাবে -
যন্ত্র বলছে, দেবে শত বর্ষের আয়ু ....
বেঁচে থাকা বড় বিস্ময় l
ব্যাসদেব লিখেছেন কবে ? তার চোখে ছানি নেই
তার দেখা স্থির হয়ে আছে l
লাল এবং সবুজ আলো সর্বত্র ছড়ানো -
আমি ধীরে ধীরে সবুজ আলোর কাছে যাই l