১৪ নভেম্বর ২০২১

সাফিয়া খন্দকার রেখা ( গল্প)




আসবেই দিন সূর্যিত আলোর


ভর দুপুরে মজিদ বারে বারে আকাশের দিকে তাকায় সূর্য তার মস্ত ঘড়ি সুর্য দেখে মজিদ একদম সঠিক সময় বলে দিতে পারে সেই ছোট বেলা থেকেই।  পূর্ব পুরুষ থেকে জমিজিরাত না পেলেও এই গুণ পেয়েছে,  মজিদের দাদা মোবাশ্বের নাইয়ার এই সূর্য দেখে সময় বলে দিতে পারার গুণ ছিলো বিধায় দাদাকে গ্রামের মানুষ জ্ঞানী ব্যক্তি মনে করতো।  দিন বদলাইছে মজিদ সূর্য দেখে সময় বলতে পারে এই কারণে গ্রামের বন্ধুরা দুষ্টুমি করে ওকে ডাকে " ঘড়ি মজিদ "।

মজিদের বাবার নিজের জমিন ছিলো না মেম্বারের বাড়িতে ফরমায়েশ খাটতো,
মেম্বার সাহেবের মা বেগম আয়নামতির খুব দয়ার শরীর ছিলো তিনি মৃত্যুর আগে তার বাগান বাড়ির কিছু অংশ মজিদের বাপের নামে সাফ কওলা করে লিখে দিয়েছিলেন,  ঘর তুলতে একটা বড় গাছও দিয়ে বলেছিলে ঘর বান্দিস মফিজ কতদিন মানুষের ঘরে থাকবি সংসার ছেলেপুলে হইলে কি আর আমার বাড়ি থাকতে পারবি? আয়নামতি বেগমের দয়ার কারণেই একখান ভালো ঘরে থাকে মজিদ বউ বাচ্চা নিয়া।  সমস্যা হয় যখন বছরের একটা সময় কোন কাজ থাকেনা তখন সুদে টাকা আনতে হয় ভাতের জন্যে।  যখন ধান পাটের কাজ থাকে তখন ভালোই আয় হয় কিন্ত সুদের টাকা শোধবোধ করতে সব শেষ হয়ে যায়।
মজিদ মনে মনে ভাবে দাদার মতো নাও লইয়া জাল লইয়া নদীতে যাইতে পারলে অভাব থাকতো না সূদে টাকা আনা লাগতো না।  নিজের জীবন যেমন গেছে আর কয়দিন পরে সন্তান আসতেছে সেও যেনো মজিদের মতো কষ্টে না থাকে তারে স্কুলে পাঠানো আর নিজের ছোট একখান জমিনের স্বপ্ন ছাড়া মজিদের আর কোন কিচ্ছু চাওয়ার নাই আল্লার কাছে।

রাত্তিরে বিছানায় শুয়ে নিজের স্বপ্নের কথা যখন বউকে বলে নুরবানু তখন তাকে সাহস দেয়।  মজিদ ভাবে এতো সুন্দরী আর এমন জ্ঞানী বউ আল্লায় তারে কেমনে মিলাইয়া দিলো।
হুনেন আফনে এতো চিন্তা কইরেন নাতো
আমারে মায় বিয়ার সময় এক জোড়া মুরগী দিছিলো দ্যহেন এহন আমার চৌদ্দডা মুরগী, 
আল্লায় দিলে অবস্থা ঘুরতে সময় লাগে না।
তয় আমার একটা স্বপ্ন আছে, 
কি স্বপ্নরে বউ কওতো গরীব হইলেও মন তো গরীব নারে বউ, 
যদি কোন দিন সুযোগ হয় তোর স্বপ্ন আগে পূরণ করবো। 
আমারে একটা গাভী কিননা দিবেন এইযে দুইডা মুরগী দিয়া চৌদ্দডা মুরগী তেমনি একটা গাভী দিয়া অনেক গাভী হবে দুধভাত খাবে আমাদের সন্তান আর দুধ বেঁচা টাকা জমাইয়া আমরা ছোড একখান চাষের জমিন কিনমু।
স্বপ্ন সংক্রামক রোগের মতো নুরবানুর স্বপ্ন মজিদ নাইয়ার মস্তিষ্কের ভেতরে ধাক্কায় দিনরাত। 

মজিদ - নুরবানুর পাঁচ বছরের মুজিব স্কুলে যায় ফ্রী প্রাইমারী স্কুলে যায়, মজিদ মিয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় 
আজকাল শরীরে আগের মতো শক্তি পায়না মজিদ বউ রাত্তিরে কপালে হাত দেয় প্রত্যেক রাত্তিরে মজিদের শরীরে জ্বর আসে।  ক্ষেতের কাজে যেতে পারেনা মজিদ 
সূদের টাকা বাড়ে মজিদের অসুখ বাড়ে....একদিন ভোরে মজিদের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। 
সূদের টাকা শোধ দিতে নুরবানুর ঘর মুরগী সব মহাজনের কাছে..এক হাতে কাপড়ের পোটলা অন্য হাতে মুজিবের হাত ধরে রাস্তায় নামে নুরবানু গন্তব্যহীন

ও মা আমরা কই যাই?
জানিনা বাপ
ও মা আমার ইশকুল? 
গরীবের পেটে ভাত নাই স্কুলে কেমনে যাবি বাপ!
মা তুমি কাইন্দো না একটু খাড়াও আমার বইগুলা নিয়া আসি
কি করবি বই দিয়া!
তুমি চিন্তা কইরো না আমি ক্লাশ থ্রিতে পড়ি 
একটা না একটা কাজ করা যাবে 
দেইখো মা একদিন আমাগো আবার ঘর হবে 
আমি একখান জমিন করবো নিজের জমিন 
এত্তোবড় আল্লার দুনিয়ায় আমাগো জন্য কোথাও না কোথাও জমিন আছে মা

হ রে বাপ স্বপ্ন আছে তো আমাগো.....
ক্লান্ত নুরবানু হাঁটতে হাঁটতে মুজিবের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মুজিবের চেহারা অবিকল মজিদ মিয়ার মতো। কথা বলার ভঙ্গি, স্বপ্ন দেখার সময়ে মজিদের চোখগুলো যেমন জোনাক পোকার মতো জ্বলজ্বল করতো মুজিবের চোখ গুলাও ঠিক তেমন জ্বলছে।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ২৩

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 




বনফুল 
                  ( ২৩ তম পর্ব ) 

জুঁইয়ের বাবা-মা বেশ খুশিই হলো মেয়ের পছন্দ দেখে,
জুঁইয়ের বাবা বললেন মেয়ের আমার পছন্দ আছে বলতে হবে।
জুঁইয়ের মা মনোয়ারা বেগম বললেন কার মেয়ে দেখতে হবে তো,আমিই কি তোমাকে মন্দ পছন্দ করেছিলাম...?

ঐদিকে বাসায় পৌঁছে পলাশ সৈকত দুজনেই হাত মুখ ধুয়ে
হাল্কা ডিনার খেয়ে  বিছানায় শুয়ে আলোচনা শুরু হলো। সৈকত বললো জুঁই মেয়েটি বেশ লক্ষ্মী, কি বলিস? 
পলাশ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো, 
সৈকত আরো বললো তোর ভাগ্য অনেক ভালো যে, পড়াশোনায় নাম্বার ওয়ান স্কলারশিপ এবারেও তুই পাচ্ছিস।
ওদিকে, রাত দশটা বাজতেই জুঁই নিচে নেমে এলো,
জুঁইয়ের বাবা-মা দুজনেই গল্প করছেন আর টিভি দেখছেন। জুঁইও এসে ওদের সাথে যোগ দিলো,
প্রায় এগারোটা বাজতেই ময়না টেবিলে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা  করে এসে বললো, খালাম্মা খেতে আসেন।
খাওয়া শেষ করে জুঁই বাবা-মাকে গুডনাইট বলে উপড়ে উঠে গেল।
দাঁত ব্রাশ সেরে, পোশাক চেঞ্জ করে মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পলাশকে ফোন করলো।
ওপাশ থেকে পলাশের কণ্ঠস্বর, কেমন আছো জুঁই? 
কি করছো সুইট হার্ট? 
জুঁই বললো, শোয়ার প্রস্তুতি... ভাবলাম তুমি হয়তো আজ আর ফোন দেবে না, তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমিই তোমাকে ফোনটা দিই। 
থ্যাংকস জুঁই, পলাশ প্রশ্ন করলো জুঁই আমি ফিরে আসার পরে আন্টি,আঙ্কেল কিছু বললেন?  
জুঁই হুম,বললো তো!
কি বললেন? 
তোমায় বলবো কেন?
বাহঃ রে, আমার ব্যাপারে কথা, আমাকে বলবে না!
না,বলবো না....।
কেন?
সব কথা কি মুখে বলতে হয়,না বলা যায়?
তবে আমি কি করে বুঝবো?
সেটা তোমার ব্যাপার। তবে তুমি যদি কাছে থাকতে,
তাহলে  ঠিক বুঝতে পারতে?
কি ভাবে? তুমি তো কিছু বলবে না  বলেছো।
না বললেও পারতে,এই যে আমার বুকের বাঁপাশ টায় মাথা টা চেপে ধরতাম, তুমি সেখানে কান পাতলেই সব শুনতে পেতে।
তাই না-কি? 
হুম,শাহজাদা তাই,বুঝতে পারলে কিছু? 
বুঝলাম....। 
কচু বুঝেছো,ওনারা তোমার খুব প্রসংশা করেছেন।
তাই? কি রকম, শুনি....
আজকে নয়,এরপর একদিন আবারও আসবে যেদিন একা,সেদিন আমার ঘরে কানেকানে বলবো সে সব কথা। তবে শর্ত আছে।
কি শর্ত শুনি...
না,এখন সেটা ও বলবো না।
সেদিন হাতে করে কিছু আনবে না।আর আমি যা চাইবো,তক্ষুনি সেটা দিতে হবে, দেরি সইবো না।
তার মানে? 
তারমানে বুঝে নিন বাবুসাহেব, আর কিছু ভাঙবো না।
পলাশ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো.....
তার আগে ই জুঁই বললো এখনো রাখছি শুভ রাত্রি, বলেই জুঁই ফোন কেটে দিলো।
পলাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকিয়ে দেখে সৈকত ঘুমিয়ে পড়েছে।


চলবে...

মোঃ সেলিম মিয়া





চাঁদের বুড়ি


চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে
মেঘ গেছে সব ছুটি!
চাঁদে বসে কাটছে বুড়ি
রঙিন সূতোর ঘুড়ি। 
ঘুড়ির পিঠে বসে বুড়ি
নামবে নাতির দেশ,
সাত সাগর আর তেরো নদী 
খাল পেড়োবে বেশ।
সুন্দর বনের তরু সুন্দরী 
 বাঁধবে বুড়ির ক্ষুপা,
শাপলা ফুলে গাঁথিয়ে বেনী 
গলে পড়াবে মালা।
পাহাড় পর্বত উঁচু টিলা 
চুম্বন দিবে গালে!
ময়না টিয়া কোকিল দোয়েল
গাইবে মনের টানে।
বানর বাবাজী বাজাবে ঢুল
বেশম বাজনার তালে।
ময়ূর পঙ্খী পেখম মেলে
নাঁচবে হেলেদুলে। 
 হাতি ভাল্লুক বাঘ শিয়াল সব
সাহস যোগাবে মিলে;
তাই শুনে সব হরিণের দল
লাফিয়ে ছুটে চলে।
 তিড়িং বিড়িং লাফায় হরিণ 
বড্ড খুশির লাজে,
চাঁদের বুড়ি কাটবে ছড়া
খুশির আমেজে! 
চাঁদের বুড়ি দৃশ্য পটে
অবাক তাকিয়ে রয়,
দুনিয়া দারি এতো সুন্দর 
অবাক বিশ্বয়!
চরকা কাটা ছেড়ে দিবো
মিশবো গানের তালে,
জীবন করবো আরও রঙিণ
বুড়ি বলবে না সকলে।
ভালো বাসার প্রতিদান
কেমনে সুধাই আজ?
নিত্য নতুন ছড়া কেটে
ভাসাবো উল্লাস! 
বয়স আমার অনেক বেশি 
আদতে হয়েছি বুড়ি,
আমার জন্য নয়তো দুনিয়া 
চরকা কাটায় সুনাম কুড়ি!!!

শারমিন সুলতানা


 


মনোহর কল্যাণী হেমন্ত 



বাংলা বর্ষ পঞ্জিতে হেমন্তের বিলম্বিত রূপ 
যেনো শুরু হয় কার্তিক অগ্রহায়ণে,
ক্ষেতে খামারে, রাশি রাশি ধানে ভরে দিয়ে যায় 
স্নিগ্ধ শিশিরের মতো নিঃশব্দ চরণে।

চারদিকে অন্তহীন কর্ম ব্যস্ততা হেমন্তের মনোহর আহ্বানে, 
সে চতুর্থ শিল্পী উদাসীন, পৌঢ় বিষণ্ন 
ধূসর কুয়াশায় নয়ন ঢেকে ফসল ফলানোর 
বৈচিত্র্যে, নিঃসঙ্গ সাধনায় থাকে নিমগ্ন। 

শরৎ রাণীর বিদায়কালে হেমন্ত এসে হাজির হয়
হিমের ঘন ঘোমটায় আবৃত হয়ে,
কৃষকের পরিতৃপ্তির সুর ভাসে সার্থকতায় 
যেনো নবান্নের ধুমধাম আনন্দ উৎসব নিয়ে।

মাহমুদা মৌ




এক মুঠো রোদ্দুর 



নীলাকাশ পাহাড় সমুদ্র 
পাহাড়ি জলধারার শব্দ  
বয়ে চলা নদ-নদী সবুজ বন-বনানী 
ওরা সন্নিকটে টানতে জানে ।
ধূসর মলিন সময়কে 
সতেজ করে তোলে । 
রাত জাগা ডাহুক ভোর দেখায় 
হেরে যাওয়া নিয়তিকে ডেকে তুলে 
এক মুঠো ঝলমলে রোদ্দুর উপহার দেয় । 
বলে না ভুলের পদ্মপুকুরে ঝাঁপিয়ে
আত্মহত্যা করতে । 
করে না আহত ছুরির মুকুট চালিয়ে 
চায় না জখম করতে তিক্ততা বাড়িয়ে ।
ওরা পৃথিবীর বুকে স্নিগ্ধতা ছড়ায়, 
অসময়ে বসন্ত বাতাস ছড়ায় সর্বত্র ।
ওদের ফুরফুরে বাতাসে ঢেউ তোলে
মিষ্টি প্রেমের স্বপ্নগুলোয় উম্মীলিত 
ভালোবাসার ছায়াতলে 
সময়ে অসময়ে ঘুরে ফিরে ।

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৪২




টানাপোড়েন (৪২)

জ্বলুনি


                                                  তদিন পর রেখাকে মনোজ বাহু বন্ধনে জড়াল। মনোজের বুকে মাথা রেখে মনে হচ্ছে জীবনটা এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারলেই সার্থক ।
মনে হচ্ছে যেন প্রশস্ত আকাশের অফুরন্ত ভালোবাসা। এ ভালোবাসা আদি-অন্তহীন। 'প্রেমের ও জোয়ারে ভাসাবে দোঁহারে ,বাঁধন খুলে দাও ।দাও দাও দাও...।
রেখা গুনগুন করে গান গেয়ে ওঠে।'
হঠাৎই মনোজ  বলে ওঠে'আমার নাটোরের বনলতা সেন )'।রেখার মুখটা নিজের মুখের কাছে তুলে ধরে চেয়ে থাকে)।
রেখা  বলে ' কি দেখছ'?
মনোজ  বলে  ''তোমাকে‌।
আরো বলে জানো তো রেখা, তোমাকে দেখার যেন আদি, অন্ত নেই ।সীমাহীন।'
রেখা বলে ' তাই?'
এবার মনোজ গান গেয়ে ওঠে'ভুলিবো  ভাবনা, পিছনে চাবো না। পাল তুলে দাও..।
হঠাৎই রেখা মনোজের দুই বাহু বন্ধন থেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে।
মনোজ বলল ' কি হলো? এত সুন্দর রোমান্সের মুহূর্ত আর তুমি...?'
রেখা ব্যগ্রভাবে বলল' আওয়াজ পাচ্ছ না কিছুর?'
মনোজ বলল 'কই না তো ।'(কান খাড়া করে)
রেখা বলল  'আরে বাবা, বাচ্চাগুলোর আওয়াজ পাচ্ছ না?'
মনোজ বলল 'কার বাচ্চা, কিসের বাচ্চা?'
রেখা মনোজকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে  'মানেটা কি?'
মনোজ এবার হেসে বলল  'হ্যাঁ ,তাই তো।'
এবার রেখা দরজার কাছে ছুটে গিয়ে  দেখে বাচ্চা গুলো সব লাইন দিয়েছে ,সিঁড়িরওপর দিয়ে উঠে আসার চেষ্টা করছে।
রেখা চিৎকার করে বলল  মনোজকে  'এসো। দেখবে এসো।'
মনোজ গিয়ে দেখে তার মধ্যে রেখা দুটোকে কোলে নিয়ে উপরের দিকে আসার চেষ্টা  করছে ।
মনোজ বলল  'ও কি করছো?'
রেখা বলল ' কি আবার করছি ।তুমি ওই দুটোকে নাও।'
মনোজ বললো  ,'অ্যাই ,পাগল নাকি? আমি অত ছোট বাচ্চা নিতে পারি না।'
রেখা একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বলল  'নিজের বাচ্চা হলে কি করে নেবে?'
মনোজ বলল  'কি যে বলো না ?নিজের বাচ্চা আর...?
রেখা অবাক হয়ে বলল  ,'আমি তোমার কাছ থেকে এরকম আশা করি নি।'
মনোজ হাত দুটো ধরে বলল  'আ্যাই রেখা ,আমি ঠিক ওভাবে বলতে চাই নি।'
রেখা বলল  'ঠিক আছে ব'কো না, এবার  কর্নেল ও পাইলটকে নাও।'
মনোজ হেসে বলল 'ও বাবা তুমি বোঝো কি করে গো,কোনটা কে?'
রেখা বলল ‌' বুঝতে হয় গো মশাই। বুঝতে হয়।'
মনোজ ব্যস্তভাবে বলল 'অ্যাই রেখা, দেখো দেখো পড়ে গেল ।ধরো ,ধরো ,ধরো।'
রেখা রেগে বলল  'তুমি কি গো কোন কাজ ঠিক করে করতে পারো না ।(ছুটে গিয়ে কর্নেল ও পাইলটকে ধরল।)
মনোজ বলল-এই রেখা এভাবে আমাকে ব'কো না। তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম যে ,আমি এত ছোট...।'
রেখা বলল ( হাত দেখিয়ে) ' থাম ,থাম, অনেক হয়েছে।
মনোজ বললো ' রাগ করছো?'
রেখা বললো  'তাহলে কি আমার করণীয় ছিল নেত্য করা ।
মনোজ বলল 'ঠিক আছে ।আমি চেষ্টা করছি। আমি একজন একজন করে নিচ্ছি।'
রেখা হাতজোড় করে বলল 'থাক তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না।দয়া করে এদের দুজনকে ধরতে পারবে তো ?আমি ক্যাপ্টেন আর তুলিকে আগে রেখে আসি । তারপর এদের কে নিয়ে যাব।'
মনোজ বলল ' জো হুকুম ম্যাডামজি।'(বলেই কর্নেল পাইলটের গায়ে হাত বুলাতে লাগলো)।
রেখা বলল 'ধ্যান দিও।('সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো)।
রেখা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতেই শুনতে পেল মনোজের ফোনের রিংটোন ' যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে....'
রেখা মনে মনে ভাবল এই রিংটোন আবার কার জন্য লাগলো। যা করে করুক গে বলেই রেখা তুলি আর ক্যাপ্টেনকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে ওপরে চলে আসলো।
এরমধ্যে মনোজ বিরক্তিভরে ফোনটা রিসিভ করল
'হ্যালো'‌।
অপরপ্রান্ত থেকে কন্ঠ ভেসে এলো 'কেমন আছো ?খবর কি?'
মনোজ বললো  'ভালো আছি'।
অপরপ্রান্ত থেকে আবার কণ্ঠ ভেসে আসলো ' কি ব্যাপার ,তুমি যে আর আমার সঙ্গে দেখা করলে না?'
মনোজ বলল 'দেখ ,তিথি ।সব সময় তোমার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয় ।আমার তো সংসার আছে ,তুমি জানো তো?'
তিথি বলল ' তা আর জানি না। তুমি মনের সুখে সংসার করবে আর আমি এখানে..?'
মনোজ এবার রেগে গিয়ে বললো 'বাজে কথা একদম বলবে না ,তিথি। তোমাকে সংসার করতে কেউ বারন করে নি।'
তিথি বলল 'সে তো তুমিই কারণ। তা কি তুমি জানো না?'
মনোজ এবার উঠে দাঁড়ালো কর্নেল আর পাইলটকে ছেড়ে দিয়ে' আলবত জানি।'
রেখা বলল' তবে আর আমাকে কেন প্রশ্ন করছো?'
মনোজ বলল 'হ্যাঁ'সে জানায় দুজনার মধ্যে পার্থক্য আছে বৈকি।'
এরমধ্যে কর্নেল আর পাইলট দুজনে বাইরের বারান্দার দিকে চলে গেছে।
রেখা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো ' কই দাও । কর্নেল আর পাইলটকে আমার কাছে দাও।'
মনোজ ফোনটাকে হোল্ডে রেখে বলল 'এ বাবা, এরা দুজন আবার কোথায় গেল?'
রেখা বলল  'তোমাকে কোন কাজ দিয়ে আমার শান্তি নেই ।'
মনোজ বলল  'রেখা আমি ধরেছিলাম ,সত্যি বলছি।'
রেখা বলল 'বলে গেলাম যে ওদেরকে একটু সামলে রেখো, দেখো ।আবার ওইদিকের বারান্দায় চলে গেলে ঝগড়া- অশান্তি শুরু হবে। '
রেখা বারান্দার দিকে পা বাড়ালো। মনোজ পিছু পিছু গেল। মনোজ ততক্ষণে ফোনটা কেটেও দিয়েছে।
ওদিকে রেখার জ্যেঠি শাশুড়ি জোর চেঁচাচ্ছে'কুকুর তোমাদের ভাল লাগে তোমাদের জায়গায় রাখো না বাপু...।'
রেখা মনোজের দিকে তাকিয়ে বলল 'এবার ষোল কলা পূর্ণ হলো তো ?যে ভয়টা আমি পেয়েছিলাম সেটাই।'
মনোজ বিনীতভাবে বলল ' আমি কি করে বুঝবো বল রেখা?'
রেখা রেগে বলল  'থাক ,তোমাকে আর সাফাই গাইতে হবে না।
রেখা কর্নেল আর পাইলটকে গিয়ে কোলে তুলল। আর বলল'আমার সোনা বাচ্চারা তোমরা কেন দুষ্টু দুষ্টু করো। কত কথা আমাকে শুনতে হচ্ছে।'
ওইটুকু ছোট দুটি অবলা জীব রেখার কথাগুলো যেন মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর এমন মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।মনোজ দেখে অবাক হয়ে গেল।
ওদিক থেকে রেখার এই কাণ্ড দেখে জ্যেঠি শাশুড়ি আর জা টিপ্পনি কাটছে 'মরে যাই এসব আদিখ্যেতা দেখে। বাচ্চার স্বাদ তো পেল না। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছে ,বুঝলে বৌমা।'
অন্য সময় হলে রেখা হয়তো দু চার কথা বলত কিন্তু মাতৃত্ব নিয়ে কথা বললে রেখা সেখানেই যেন থেমে যায় ও যেন কোনো কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় না ।
বুকের ভেতরে কষ্টের হাতুড়িগুলো যেন দড়াম দড়াম ঘা মারতে থাকে।
রেখা ভাবে  'তার মা হওয়ার সময় কি পেরিয়ে গেছে ?'অথচ তাকে এই ভাবে প্রতিনিয়ত কটাক্ষ করা হয়। চোখ জলে ভরে ওঠে।
মনোজ সেটা খেয়াল করে রেখাকে বলে  ' বাজে কথা শুনতে নেই , গায়ে মাখতে নেই।ভেতরে চলো।'(ঠেলে ভেতরে নিয়ে গেল)।
মনোজ বলে  'সত্যিই আমার ভুল হয়েছে রেখা। আমি তোমার কথা রাখতে পারলাম না ।আসলে একটা ফোন এসে গেল।'
এরমধ্যে আবার ফোন বেজে ওঠে। কিন্তু মনোজ ফোনটা রিসিভ করে না।
আবার বেজে ওঠে  'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে...
রেখা বলে 'তোমার ফোন বেজে যাচ্ছে। ফোনটা তোলো।'
মনোজ বলে' বাজুক গে।'
আবার ফোন বেজে ওঠে
মনোজ বলে ' দু'দণ্ড শান্তিতে থাকতে দেবে না।'
রেখা মনে মনে ভাবে তার মানে সেই ভদ্রমহিলার ফোন ।এখনো মনোজকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে?'নির্লজ্জ- বেহায়া হলে এসব পারে?'
মনোজ এবার বাধ্য হয়ে ফোনটা তোলো
'হ্যালো।'
তিথি বলে 'অ্যাই ,এতক্ষণ ফোন ধরছিল না কেন গো?'
কথাটা শুনে মনোজের গা একদম রাগেতে রি রি করে উঠলো।
মনোজ বলল  'সে কৈফিয়ৎ আমি তোমাকে দেবো কেন?'
তিথি বলল  'দিতে বাধ্য তাই।'
এরমধ্যে রেখা বলল  'স্কুলে যেতে হবে আজকে তো ওই ট্রেনটা পাব না ।লেট ই হয়ে যাবে।'
মনোজ ফোনটাকে হোল্ডে রেখে বলল ' আজকে স্কুলে যেতে হবে না।'
রেখা মনোজের দিকে তাকিয়ে বলল' কেন?'
মনোজ বলল  'আমি বলছি তাই ?আজকে তো আমি অফিস যাব না।'
তিথি সমস্ত কথাগুলো শুনছে আর রাগেতে জ্বলছে।
মনে মনে ভাবছে আজকে তিথির ই মনোজের  বউ হয়ে থাকার কথা ছিল ।সেখানে অন্য একটি মেয়ে সেই জায়গাটা দখল করেছে ।মনোজের হৃদয়াসনে  তিথিই শুধু থাকবে। রেখা নয়। তার জন্য যা যা করা দরকার ।তিথি করবে।
তিথি বললো 'বাবা ব উ এর জন্য এত  দরদ। এদিকে আমি তোমাকে কবে থেকে বলছি আমার সঙ্গে দেখা করার কথা..।
মনোজ বললো  'বাজে কথা বলবে না তিথি। আমি তোমাকে একবারও বলি নি ,আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে যাবো । আর তাছাড়া বউ তো বউই হয়।'
তিথি বলে  'তুমি বল নি?'
মনোজ  বলে 'হ্যাঁ বলেছিলাম, কোন সমস্যা হলে ব'লো ।তাহলে যাব।'
তিথি বললো  'আমি তো সমস্যাতেই আছি।'
রেখা বলল  'তোমরা কথা বলো আমি রান্নাঘরের দিকে যাই। মিলিদের খাবারের সময় হয়ে গেল।'
মনোজ শুধু ঘাড় নাড়লো।
তিথি বললো ' বাহ ,তোমার বউটা তো খুব ভালো ।অচেনা একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছ, কিছুই বলল না।'
মনোজ বলল  'এই কথাটা তুমি একদম ঠিক বলেছ ।রেখার মত মেয়ে হয় না।'
তিথির কথাটা শুনে গা জ্বলে গেল।
মনোজ বলল 'এখন ফোনটা রাখছি।'
তিথি বললো  'তাহলে কখন ফোন করবে?'
কথাটা শুনে মনোজ  আরো জ্বলতে শুরু করলো।
মনোজ বলল ' আমি কেন তোমাকে অকারণে ফোন করতে যাব ,বল তো?'
তিথি অবাক হয়ে বললো  'অকারণ !।আমি তোমার কাছে অকারণ?'
মনোজ রেগে ফোনটা কেটে দিলো এবং ফোনটাকে নট রিচেবল করে  দিল।'
মনোজ মনে মনে ভাবতে লাগল সেই আমাদের দুজনের মুডটাকে অফ করে দিল ।বিরক্তিকর। কবে যে  এর থেকে মুক্তি পাব কে জানে?
এরপর তো এই জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে আমিই শেষ হয়ে যাবো?'

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"১২

ধারাবাহিক  শামীমা আহমেদ এর  ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"



শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১২)
   শামীমা আহমেদ 


                               বিয়ের পরে যেখানে সবাই হাসি আনন্দে দিন কাটায় সেখানে তাদের দুজনকে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছে। কি জানি কখন বাবা তার লোকবাহিনী পাঠিয়ে মেয়েকে তুলে নেয়। কিন্তু বেশ অবাক করে দিয়ে রিশতিনার বাবা বিয়ের একমাসের মাথায় বিয়েটা মেনে নেয়। সবাই ভেবে নিলো যতই হউক মেয়ের জন্য পিতার হৃদয়তো কাঁদবেই।নিশ্চয়ই মেয়ের সুখের চেয়ে বেশি কিছু বাবা মায়েরা চাইবে না।
একদিন বেশ আয়োজন করেই মেয়ের বাড়ি এসে মেয়ে জামাইকে নিয়ে যেতে চায়।কিন্তু শিহাব একেবারেই যেতে রাজী হলোনা। আর এখানেই একটা বিরাট বড় ভুল করে ফেললো শিহাব।
সেই যে রিশতিনা বাবা মায়ের হাতে বন্দী হলো আর তাকে নিজের করে পাওয়া হলো না। রিশতিনাও অভিমানে শিহাবের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। আড়ালে শিহাবকে রিশতিনার বাবা ভীষণভাবে অপমানিতও করেছিল আর যেন তার মেয়ের কাছে না আসে। তাই শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও নিজের স্ত্রীর অধিকারে আর রিশতিনাকে ফিরে পাওয়া হলো না।এমন জাঁদরেল ব্যারিস্টার বাবার সাথে আইনি লড়াইয়ে জিততে পারাও অসাধ্য। যেখানে তাদের কাছে আইনের সব ফাঁক ফোকড় সবই জানা।শিহাবের সেই সব কষ্টকর দিনগুলোর সাক্ষী এই সুমাইয়া ভাবী। তার কাছেই সকল দুঃখ জমা রেখেছে আর সান্ত্বনা  খুঁজেছে।বাবার বাড়িতে বন্দী আর স্বামীর সাথে অভিমানীনি রিশতিনা। বেশ কয়েকমাস পরে বুঝা যায় সে তিনমাসের অন্তঃস্বত্তা। শিহাবের সাথে বিচ্ছেদ আর অতিরিক্ত টেনশনে রিশতিনার জীবন হুমকির মুখে চলে যায়।  রিশতিনার শারীরিক অবস্থার চিন্তা করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে  রিশতিনার বাবা সেই সন্তানের জন্মটা
মেনে নেয়।  এক মাসের শিশু সন্তানকে শিহাবের বাবামায়ের হাতে তুলে দিয়ে তার মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। শোনা যায় সেই ছাত্রের সাথেই তাকে বিয়ে দিয়েছে। শিহাবের সাথে রিশতিনার সকল যোগাযোগ চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সেই 
থেকে শিহাবের একার জীবন। আর আরাফকে  মাতৃস্নেহে বড় করছে সুমাইয়া ভাবী। তাঁর কাছে শিহাবের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কেমন করে একটা মেয়ে বিয়ের পর অচেনা একটি বাড়ি তথা বাড়ির মানুষদের জন্য নিজেকে এতটা উজাড়  করে দিতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সুমাইয়া।সুমাইয়া শিহাবকে
একেবারে রাতের খাবার খাইয়ে 
তবেই বেরুতে দিল। আরাফ ঘুমিয়ে গেলে 
শিহাব রাত প্রায় সাড়ে দশটায়  ঝিগাতলা থেকে উত্তরার দিকে রওনা হলো।শিহাব ভাবলো,রাত যত বাড়ে রাস্তা ততই ফাঁকা পাওয়া যায়।
একটানা বেশ লম্বা সময় বাইক চালিয়ে, প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে ফিরে, শিহাব কাপড়চোপড় না ছেড়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিল।ভেতরের অনুভবে কেমন যেন একটা অপরাধবোধ।মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিহাব অস্থিরতায় ছটফট করতে লাগলো।অসহ্য এ যন্ত্রণা! সারা সপ্তাহ নানান কাজেবনিজেকে ডুবিয়ে রাখা কিন্তু সপ্তাহটা শেষ হয় সেই কষ্টের স্মৃতি স্মরণে আনা।একদিকে রিশতিনার অভিমানী মুখখানি,আরেকদিকে মা হারা সন্তানের মায়া ভরা মুখ! সবকিছুর জন্য শিহাব নিজেকেই দায়ী করে। কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না। রিশতিনাতো সব ছেড়েই তার কাছে এসেছিল।কেন সে তাকে ধরে রাখতে পারলনা।এই অক্ষমতায় বারবার নিজেকে ধিক্কার দেয়।নিজেকে একজন ব্যর্থ স্বামী ভেবে  ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যায়।
হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠলো!  শিহাবের ভাবনার ঘোর কাটল। ওহ! আজ পৌঁছে মাকে ফোন দেয়া হইনি। উত্তরার বাসায় ফিরে মাকে কল না দেয়া পর্যন্ত মা ঘুমায় না। 
ফোন রিসিভ করে জানালো, হ্যাঁ, মা আমি ভালোভাবে পৌছেছি।
ঠিকাছে বাবা কাপড় ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
সন্তানদের নিয়ে মায়েদের উৎকন্ঠা আজীবন।
তাহলে রিশতিনা কিভাবে ভুলে আছে তার সন্তানকে।ঐটুকু দুধের শিশুকে ফেলে গেলো! এ কেমন মা! এজন্য তারও  রাগ ক্ষোভ জমে আছে রিশতিনার প্রতি।মনে হয় কখনো দেখা হলে সে জানতে চাইবে কোনপ্রাণে নিজের সন্তানকে ফেলে গেছো উচ্চশিক্ষা আর উন্নত জীবনের আকাংখায়?
এমনি শত প্রশ্ন ভীড় করে শিহাবের মনে।কেন তার জীবনটা এমন একাকীত্বে কাটছে?এমন নিঃসঙ্গ জীবনে যখন হাঁপিয়ে উঠে তখন একা একা বাইক নিয়ে বহু দূরে চলে যায়। কোন অচেনা গাঁয়ের নির্জন কোন খোলা জায়গায় একা একা বসে থাকে।মনে হয় প্রকৃতি যেন তার কথা শুনছে। সবাইকে লুকিয়ে চোখের জল ফেলে।রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয়।  কেবলি হেডফোন  লাগিয়ে নানান ধরণের গান শুনে ভেতরের কষ্ট গুলোকে সেচে ফেলতে চায়।কিন্তু দুঃখের চোরাবালি বারবার তাকে অতলে তলিয়ে নেয়।
তাইতো দুঃসহ স্মৃতিগুলো ভুলে থাকবার জন্য পৈতৃকবাড়ি থেকে দূরে থাকা।মাকে এক সাগর কান্নায় ভাসিয়ে 
ব্যবসায়িক প্রয়োজনের অজুহাতে শিহাবের উত্তরায় চলে আসা।অবশ্য এতে  অচেনা জায়গায়,  নতুন পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে  কিছুটা হলেও কাজে ডুবে থাকা যায়।
নাহ! উঠতে হবে,
শিহাব আলসেমি ছেড়ে বিছানা থেকে উঠলো। নিয়তির লিখনের কাছে আমরা অসহায়। শিহাব ভাবে,কতজনের অন্তর কত কারণে এভাবে ধিকিধিকি জ্বলছে! কার খোঁজ কে রাখে।শুধু যার যার ক্ষত দগদগে কাঁচা ঘাঁয়ের মত হয়ে আছে। জীবনে কার কী অপ্রাপ্তি,কার জীবনে কী চেয়ে কী পায়নি, কে পেয়েও মূল্য বুঝেনি, কে সবটা উজার করে  দিয়ে হয়েছে নিঃস্ব। কেবলি দিয়ে যাওয়ার আনন্দেই নিজের পাওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে বেশ অনুযোগের সুরেই শিহাব বিধাতার কাছে প্রশ্ন রাখে,দিয়ে যদি নিয়েই যাবে,তবে কেনইবা দিয়েছিলে?
কত সন্তানহীনা মায়ের ক্রন্দন,  আবার কত শিশু মায়ের বুকে ঘুমানোর ভাগ্য নিয়ে আসে না।এ বৈষম্য বুঝাবার ক্ষমতা মানুষের মত ক্ষুদ্র প্রাণীর নেই।
শিহাব সব রাগ ক্ষোভ অভিমান অনুযোগ বিধাতার কাজে পেশ করে  আলসেমি ভেঙ্গে বিছানা থেকে উঠল!
হঠাৎ মেসেঞ্জারের শব্দে মোবাইলে তাকালো।উফ! সেই মহিলার মেসেজ! খুব বিরক্ত করছেন মহিলা।শুধু যে মেয়েরা ছেলেদের দ্বারা  হ্যারাস হয় সেটা নয়,
সিঙ্গেল পুরুষদেরও অনেক যন্ত্রণা সইতে হয়।কোনভাবে কেউ জানতে পারলে আর পিছু ছাড়তে চায় না।মেসেঞ্জারে 
সুমাইয়া ভাবীর মামাতো বোন রুবানা ।একবার ভাবীর বাসায় দেখা হয়েছিল।এরপর থেকেই ভীষণভাবে শিহাবের পিছু নিয়েছে। সে বেশ লোনলি ফিল করে। স্বামী দীর্ঘদিন প্রবাসে।আদৌ কোনদিন ফিরবে কিনা! কোন যোগাযোগ আছেই কিনা! তার সময় কাটে না একেবারে। কিন্তু শিহাবতো এই জীবনে আর কাউকে জড়াবে না, সে ব্যাপারে খুবই কঠোর মনভাবে।আজো কোথাও বেড়াতে গেলে  মুরুব্বিদের একই প্রশ্ন এখনো বিয়ে করোনি! আমাদের দেশে কী মেয়ের অভাব? আরে রানাবান্নার জন্যও তো একটা লোক লাগে,শিহাব এইসব কথাগুলো 
খুব ঘৃণার চোখে দেখে। শিহাব রুবানার মেসেজ সিন করে রেখেদিল।কোন উত্তর দিল না। 
ওহ! ভুলেই তো গিয়েছিলাম! নতুন পরিচিত ভদ্রমহিলার সাথে তো সারাদিন আর কথাই হলোনা।নাহ! একটা মেসেজও রাখেনি।কেমন কাটখোট্টা স্বভাবের হায়! শিহাব কে কেউ এড়িয়ে গেছে,সেটা তার পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব। বরাবরই সে মানুষের এটেনশঅন পেয়েছে।
শিহাব কাপড় বদলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিল।খাটের কিনারায় বসে একটা বেনসন স্টিক ধরালো।প্রতি রাতের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে এটা। 
এয়ারকুলারটি সাতাশে সেট করে এস্ট্রেতে সিগারেট ফিল্টারটি পিষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল।
সকালে ঘুম ভাঙল শায়লার মেসেজের শব্দে--
কাল বিকেলে ফ্যামিলির সাথে খুব ঘুরে বেড়ালেন বুঝি?,,, 
চলবে....

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"২৬

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 




উদাসী মেঘের ডানায়,
( ২৬ তম পর্ব  )


অপু ও তৃষ্ণার মা দুজনে বিয়ের তারিখ ঠিক করা নিয়ে,ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। অপুর মা বললো- বিয়ান
আমরা সকাল ১০টার,দিকে  কলমাটা পড়িয়ে ফেলবো কি বলেন? 
তুষ্ণার মা-,তাহলে তো খুবই ভালো হয়। বিয়ে, বৈভাত
যখন একসাথে হচ্ছে।
এমন সময় তৃষ্ণা অফিস থেকে এসে দেখে দুই মা বেশ
গল্প করছে, মাকে আর ডাকলো না রুমে ঢুকে অফিসের ড্রেস চেন্জ করে হাতমুখ ধুয়ে বিছানায় এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো, কিছুক্ষণ পর সামিয়া,এসে ঢুকে বললো - বিয়ের মার্কেটিং কবে করবি তৃষ্ণা মাত্র তো হাতে একটি মাস।
তৃষ্ণা- হবে এতো চিন্তা করোনা তিনদিনে সেরে ফেলবো।
সামিয়া - খালা ডাকছে চা খেতে আয়।
তৃষ্ণা - তুমি যাও আমি আসছি।
চা খেয়ে মায়ের সাথে কিছুটা সময় গল্প করে রুমে চলে এলো বিয়ের সময় এগিয়ে আসছে যত তৃষ্ণা
কেমন জানি একটি ঘোরের ভিতর আজকাল ডুবে থাকে। অপুকে ফোন করতে ইচ্ছে করছে আবার কেন জানি একটু লজ্জা ও পাচ্ছে ভাবছে জীবনটা বড় বেশি  অদ্ভুত চিন্তাও করেনি অপু আবার তার জীবনে
ফিরে আসবে এভাবে নতুন করে ঘর বাঁধবে।
এযেনো এক নতুন জীবনের আলোর সন্মোহনের বাধঁনে আত্মহারা মন। হঠাৎ মনে হলো আমি তো অপয়া,অপুর কিছু হবেনাতে ভাবতেই শিউরে উঠলো।
আর চিৎকার করে কেঁদে বললো না কিছুতেই না আমার জীবন থাকতে অপুর কিছু হতে দিবোনা।
সামিয়া দৌঁড়ে ওর ঘরে এসে জড়িয়ে ধরে বললো- কি
হয়েছে কাঁদছিস কেন, কি বলছিস এসব।
তৃষ্ণা- আমার ভয় করে অপুুর কিছু হলে।
সামিয়া- এসব নেগেটিভ চিন্তা বাদ দিয়ে পজেটিভ ভাব, কেন হবে ওকি ড্রিংক করে গাড়ি চালায়।
- না
তাহলে লক্ষীটি এসব ভাবতে নেই, কিছু হবেনা যা চোখে মুখে পানি দিয়ে আয় আমি বরং গান করি
তুই বেহালা বাজাবি আজ কতদিন বাজাসনা বলতো
সামিয়া বেহালাটা নিয়ে এসে তৃষ্ণা কে দিলো
দু  বান্ধবী হারিয়ে গেলো সুরের গভীরে।
চলবে...

dfgzdfg

LOVE

hhf

LOVE