০৫ ডিসেম্বর ২০২০

চৈতালী দে



প্লাসমাইনাস

কালো ! সেদিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল

সৌন্দর্যের বিস্তারিত আকাঙ্ক্ষা পূরণে

মধ্য রাতে প্রিয় মানুষটি বলে উঠেছিল 

একি ! তুমি কালো !

তোমার সাথে আমার যায় না

হয় না 

আরো কত কি অজুহাত 

কালো সৌন্দর্যের বর্ণনা করে

সেদিন সেই প্রিয় মানুষটি চলে যায় ....

অন্ধকার ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলো

সেদিনের সেই কালো ।


নিজেকে আয়নায় রেখে অনেকক্ষণ দেখে

সুন্দর দেহ

কালো চেহারায় নিজেকে চিনতে কেমন যেন ভুল হয় 

প্লাস মাইনাস হিসেব করে !

অংকের ফল মেলে না

সৌন্দর্য আর কালোর পার্থক্য খোঁজে .....

খোঁজে ব্যতিক্রম  .... ভিন্নতা 

এগিয়ে চলে 

সীমানা ছাড়িয়ে

আকাশ পানে 


জানালার বাইরে সেদিন জোৎস্না ছড়ানো চাঁদের আলো

নিজের প্রিয় মানুষটিকে সে আর খোঁজে না

আজ সে হতে চায় চাতক পাখি

যার দৃষ্টি থাকবে সব সময় ওপরের দিকে !


টোকা পরে জীবনের অন্য এক দরজায়

বাইরেটা বড্ড অন্ধকার 

কে যেন দাঁড়িয়ে 

বলে আমি সেই প্রিয় মানুষ

নিজেকে আলাদা করার প্রয়াস চালাচ্ছি 

অন্যের কাছ থেকে ভিন্ন হবার .....

আজ আমি ব্যর্থ কালো প্রেমিক !


প্লাস মাইনাসের হিসেবে

অংকের ফল মেলে

ইজ ইকুয়াল টু

*অহংকার !

রাতের অন্ধকারে সৌন্দর্য আর কালোর পার্থক্যে

আজ সবাই কেমন সমান .....

এখন শুধু কে আগে আর কে পরে !

মোফাক হোসেন



পুরোনো মাঠের দোলা

রক্তাক্ত পায়ে সুদীর্ঘ পথ পেরিয়ে

পুরোনো মাঠের গন্ধে আজও

আমার কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে

আগুনের ফুলকি জ্জ্বলে ওঠে।


কখন যে আকাশের কালো আঁচল

খোলা শরীরে,ভিজিয়ে দিয়ে যায়।

আমার শুকনো ভাঙা উঠোন,আর

রুগ্ন পলেস্তারা। ব্যাথার পিয়ালা থেকে

ভেসে যাচ্ছে স্বর্গে-র পৃথিবী

পুড়ে যাওয়া ঘর।


বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত সিঁড়ি ভেঙে

সমস্ত রাত হেঁটে চলেছি নিস্তব্ধ আনমনে,

ফিরে আসবো নতুন চশমা- টানে।

ব্যাথায় কুঁকড়ে যাওয়া ঘর,

পড়ে আছে অন্ধকার টেবিলে।


যদি ভালো লাগে বলবেন?

ওয়াহিদা খাতুন



চাই সাম্যের অধিকার

ক্ষমতার সমতা হোক ন্যায্যের দাবি,

আর্য-অনার্য মিলে সবাই করি পণ,

মনুষ্যত্বের হাতে আসুক যক্ষ-চাবি;

ফসলের ভাণ্ডার হোক সম বন্টন,

কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ নয়--মন করো সাদা--

বিত্ত-ভৃত্যের পার্থক্য অনেক তো হলো;

বন্ধু,অন্তর দহনে আর নয় কাঁদা--

সবাই হেসে বাঁচবো উচ্চ শিরে বলো;


পুত্র-কন্যা,অজ্ঞ-বিজ্ঞ,সব তাঁর দান--

 জাতি-ঈর্ষা,উচ্চ-নীচ মুছে দাও ভাই-- 

নিছক ক্ষোয়াচ্ছ কেনো মানব কল্যাণ?

মনুষ্যত্বের উপরে আর কিছু নাই;


ভুলে যাও বৈষম্য সাম্যের করো জয়--!

মুক্তচিন্তায় বিশ্ব,হোক আলোকময়--!!



রচনাকাল:--২২/১০/২০২০ দুপুর ১টা ৩ মিনিট! (সনেট নং ৩০)

শামীম রেজা



পড়েনা কি মনে

সুখ ছিলো বুকের মাঝে

শান্তি ছিলো মনে,

সেই শান্তি কেড়ে নিলো

অন্য আর এক জনে।

তাই বড় কষ্টে আছি

মনে নাই সুখ,

চোখের জলে নদী হয়ে 

ভেসে যায় বুক। 

তোমার লাগি কতো কষ্ট 

করলাম এই জীবনে,

হায়রে বড় পাষান তুমি 

পড়েনা কি মনে।

রোজ বিকেলে বসতে পাশে

মাথা রেখে বুকে,

আমায় ছেড়ে কেমন করে

থাকো তুমি সুখে।

রেবেকা সুলতানা রেবা



স্বপ্ন দেখা নাহি হয় 

কতোটুকু জানলে বলা যায়?

তুমি সব টুকু জেনেছো আমায়

তোমার অজানা হাজারো আমির

ভেতর লুকিয়ে আছি এই আমি।

আমি কে?  কতোটুকু জানো আমায়?

মুখোশ পরে এক আমি 

মুখোশের আড়ালে আরেক আমি,

বাস্তবতায় এক আমি

আবার কল্পনায় আরেক আমি

এই হাজারো আমির গহীন অতলে

হারিয়ে গেছি সেই আমি।

বলা হলো না আর আমার

হৃদয়ের না বলা লুকানো ব্যাথা।

সুখ স্মৃতি  হাতড়ে বেড়াই মেলে না কভু

নীল খামে মোড়ানো ভালোবাসার প্রভু,

দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না সুধুই অনুভব করা যায়

কিছু ভুল ফুল হয়ে ফুটে আছে হৃদয়ে

কিছু কিছু ভুল রং হয়ে মিশে আছে সাথে।

মেনে নিতে পারিনা মানিয়ে নিতে হয় 

তাই তো এখনো স্বপ্ন দেখি বেঁচে আছি তাই

বাঁচার জন্য স্বপ্ন দেখা কভু নাহি হয়।

নজরুল ইসলাম খান


রক্ত ঝড়া জলসা

গুমোট মেঘে বন্দি আকাশ 

আড়ালে তার আলো,

 অশান্ত এই মনের ঘরে

 বয়ে  আঁধার কালো।


বিবেক বন্দি  ভুলের ফাঁদে

পায়না খোঁজে ভাষা,

চতুর মনে বিদ্রোপ  হাসি

উল্লাস তারি নেশা।


পাথর চোখে জমাট বাঁধা 

মিছে সকল মায়া,

বিষাদ  মনে খোয়াব ভাসে 

ধূসর লাগে ছায়া।


স্রোতের তালে নাচে আবার 

বাজে পায়ের মল,

অরাধ্য সেই ভ্রান্তি বিলাস

নিছক তারি ছল।


কালো মেঘের ডানায় মেলে

আঁধার এলো নেমে,

পথের ভুলে বিভুঁই ঘুরে

উচ্ছাস গেলো থেমে।


রক্ত ঝড়ায় ঐ জলসা

অশুভ তার মেলা,

নষ্ট প্রহর কষ্টে পোড়ায় 

চিত্তে দারুণ জ্বালা।

ফারাবী আক্তার


নীলাদ্রি

শত সহস্র মাইল 

পথ হেঁটে চলেছি নীলাদ্রি

কখনো এক সেকেন্ডের

জন্যও ভুলিনি,

তোমার আমার 

মনের দূরত্ব ছিলো

বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে 

তর্জনী পর্যন্ত,

শাখা থেকে 

শেকড় যত দূর।

জানো নীলাদ্রি

প্রতিরাতে ঘুম ঘুম চোখে 

জেগে থেকেও 

তোমার উষ্ণতার ছোঁয়া 

পেতে মন ব্যাকুল।

নিঝুম রাতে 

জালানার পাশে থেকে

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে 

নিরবধি একা দাঁড়িয়ে,

খানিকটা কল্পনার রাজ্যে 

বিচরণ করে মন।

পাষাণ্ড পৃথিবী, প্রকৃতি,

আকাশ,চাঁদ-তারা সবই,

তোমার চলে যাওয়া দেখে 

আমায় নিঃস্ব করেছে।

নীলাদ্রী আমার কল্পনা,

প্রেম,রক্তের শিহরণ। 

আমার শূন্য রাজ্যে 

জাগরিত বিস্ফোরণ।

নীলাদ্রি

আর আমি ছিলাম 

এত গভীরে যে,

এক চোখ কাঁদলে 

যেমন অন্য চোখ কাঁদে

ঠিক নীলাদ্রি কাঁদলে 

আমার চোখেও কাঁদতো। 

আমি আগ্নেয়গিরির 

আগুন দেখেনি অতঃপর 

নীলাদ্রির চোখে 

ভালোবাসার আগুন দেখেছি;

শত প্রচেষ্টায়

অপেক্ষার শেষ প্রান্তে এসেও

নীলাদ্রিকে হারালাম।

খান রুহুল আমীন

 


কত দিন দেখিনা

তোমাকে দেখিনা এক যুগের বেশী সময়,

এত দিনে কত শত গুল্ম লতা হারিয়েছে তাদের জীবন,

কত অফিস আদালত পাল্টিয়েছে তাদের ঠিকানা,

কত প্রেমিক ঝরে গেছে গোলাপের পাপড়ির মত অনাকাঙ্ক্ষিত অনাদরে;


হারানো সময় স্তুপ হয়ে জমে গেছে  বরফের সাথে,

মিষ্টি সব আলাপন বাকহীন মানুষের কন্ঠে করেছে নিবাস,

অচল মুদ্রার সাথে শুয়ে আছে আমার সব দামী আবেগ,


রাস্তার মত একা অথচ দারুণ নিপীড়িত এই মন,

শীতের ধূলো গায়ে মেখে গাছের মত উদাসী বাউল,

গোবি মরুভূমির শূন্যতা নিয়ে বিকাল চুষে খায় বৃষ্টির ফোটার মত।

রিনা নাসরিন



দু'নয়নে তোকে স্বপ্নে আঁকি

মানুষ আমি নয়তো গরল 

সরল মনে বেসেছি তোকে ভালো,

যদি তুই একটু খানি ভালোবাসা দিস 

তবে, ভালোবাসার প্রতিদানের  

আশ্বাস নিস। 


তোর চোখে আমি কি সে কি তোর অজানা ? 


বুক ভরা ভালোবাসায় নেই কোনো কৃপণতা

তুই আমার ভালোবাসার অহংকার। 


নিগূঢ় বিশ্বাসে দাঁড়িয়েছি তোর পাশে

আজও আমার স্বপ্নের মতো লাগে!

তোকে আমি মনে প্রাণে বেঁধেছি দু’হাতে

সবুজ জমিনে এঁকেছি দু’নয়নে। 


আনমনে যখন একা বসে থাকি

দু’নয়নে তোকে স্বপ্নে আঁকি। 

তোর ভালোবাসার ছোঁয়ায় 

আমি কল্পনায় মেতে থাকি সারাক্ষণ।

সোহেল রানা




হিংস্র প্রেম

সখী তোমার হৃদয়ের স্পন্দনে বসন্তের পীড়া দেয়। 

সখী তোমারই বিরহে বিরহিনী হয়ে রই সারাক্ষণ। 

তবুও পথ চেয়ে রই, যখন তুমি অন্যকারোর সাথে থাকো। 

ঘরোয়া জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তোমার প্রেমেতে লিপ্ত হও। 

নিশীথের অন্ধকারে ডুবে তোমার ভাবনার বিভোর। 

নবপ্রেম নব পথিকে সাথে রও সারাক্ষণ। 

সখী আজও তোমার জন্য পথ চেয়ে রই, 

তোমার হৃদয়ে নব নব খুশির আর্তনাদ, 

তবুও হৃদয়টা স্পর্শ করে দেখো, 

তোমার জন্য জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব বিসর্জন করেছি, 

শুধু একটিবারের জন্য ফিরে এসো পিয়া। 

আজ  হিংস্র প্রেমিকের মতো পথ চেয়ে রই, 

সখী তোমার হৃদয়ে আজও বসন্ত বিরাজ করে।