২০ নভেম্বর ২০২১

মোঃ সেলিম মিয়া'র ছোট গল্প"স্বপ্ন প্রদীপ ও রঙিন বাসর"





স্বপ্ন প্রদীপ ও রঙিন  বাস


                                                                   ☕চায়ের কাপে চুমুক দিতেই নিজের অজান্তে  ঠোঁটের ভিতর থেকে চক চকে সাদা দাঁত বেড়িয়ে এক চিলতে হাসি পেলো ঠিক  বুঝতেই পারলাম না । 
কি আর করার? 
মুখ চেপে মুচকি হাসি অর্থাৎ শব্দ বিহিন হাসি হাসবার চেষ্টা করছি মাত্র। 
চায়ের পেয়েলায় গরম চা সাজিয়ে বিবি সাহেবান কখন যে পাশে দাঁড়িয়ে প্রহর গুনছিলেন  ঠিক ঠাহর করতে পারছিলাম না। 
কি ব্যপার জামাই বাবু?
 খুব বেশি  ফুরে ফুরে মনে হচ্ছে? 
ভাবতাব কি? 
মুখ চেপে ফিক ফিক করে হাসছো কেন?
 মতলবটা কি? 
এক সাথে এতো প্রশ্ন কোনটির জবাব দিবো? 
আরে গিন্নি  এখন যে বয়স প্রায়  পঞ্চাশের কোঠায় - কাজেই  মতলবের কি আছে? 
সন্দেহ করার মতো কোন ঘটনা নাই। 
তয় একা একা ফিক ফিক করে হাসছো কেন?
 আর বলোনা গিন্নি শেষ রাত্রে কি যে এক স্বপ্ন দেখেছি তা  স্মৃতি চারণ করে এখন ফিক ফিক করে হাসি পাচ্ছে। 
তাতে আমার কি দোষ বলো? 
এতো কথা বলার ফাঁকে চায়ের কাপে মাত্র একবার  চুমুক পড়েছে। 
চায়ের স্বাদ অনেকটাই শরবতের মতো মনে হচ্ছে। 
হবেনা কেন?
 এক কাপ চা' খেতে যদি আধো ঘন্টা কাল ক্ষেপন করতে হয় তাহলে চায়ের স্বাদ কি আর চায়ে থাকে? 
কি জামাই বাবু বললেন না তো কি মধুর স্বপ্ন দেখেছেন? 
ও হ্যা বলছি তয় উপহার হিসেবে আমায় আরো এক কাপ গরম চা দিতে হবে  তার সাথে বেশি দুধে কড়া চিনি 
জামাই বাবু ঠিক তাই হবে হা-হা-হা😂😂😂
হঠাৎ পাশের বেড রোম থেকে কোন কিছু পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার  শব্দ কানে ভেসে আসলো ঠিক ঠাহর করতে পাচ্ছিলাম না।
 এই সেড়েছে বাবা সাত সকালে তোমার মেয়ে কি যেন ভেঙ্গে ফেলেছে! 
বলতে বলতে জোর কদমে ঐতুরীর মা বেড রোমের দিকে এগিয়ে গেলেন।
 দেখো মা আমি কিচ্ছু করিনি হঠাৎ করে মেকাপ বক্সটি ড্রেসিং টেবিল থেকে পড়ে  গিয়ে এই দশা! 
আমার কোন দোষ নেই মা। 
একথা বলতে বলতে ঐতুরী ভয়ে আঁটু সুটু হয়ে পাশে নিরবে বাক হীন শব্দে  দাঁড়িয়ে  রইলো।
কোন অপরাধী অপরাধ করে বিচারকের সামনে দাঁড়ালে যে দশা ঐতুরীর ক্ষেত্রেও ঠিক সেই দশা!
 মামুনি আমি কি তোমায় কিছু বলেছি? 
 কাঁদছো কেন ? 
চোখের জ্বল খুব সস্তা তাইনা? 
এই বলে ঐতুরীর মা হাতের  কাছে রাখা টিস্যু বক্স থেকে এক ফালি টিস্যু নিয়ে  মেয়ের দু'চোখ মুছে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। 
আদরের দুলালি  বলে কথা! 
 বড় কষ্টের নাড়ি ছেড়া ধন যে! 
কৈগো ঐতুরির মা চা' কি হলো? 
জাষ্ট মিনিট এইতো নিয়ে আসছি। 
ঐতুরীর বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে পত্রিকার কলাম গুলো চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন এমন সময় অন্ধভক্ত ফুটবল প্রেমীদের কান্ড কীর্তি দেখে আবারও নিজের অজান্তেই  এক গাল😁 হাসি হাসলেন। 
বি- বাড়িয়া বলে কথা! 
আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল দু'দলের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া এবং শেষ মেষ হাসপাতালে ভর্তি!
 যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পরশির ঘুম নাই, 
ব্যপারটি ঠিক  সে নিয়মেই গড়িয়েছে এবার।
মেসি শ্রেষ্ঠ কিনা নেইমার শ্রেষ্ঠ এ নিয়েই যতো কান্ড!
 দর্শক আপনারাই বলুনতো মেসি আর নেইমার কি জানে বি-বাড়িয়ার কিছু আতেল তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিতেছে? 
যেখানে সাড়া বিশ্ব জানে মেসি ও নেইমার যুগল বন্ধু! 
যাকে বলে পেটের বন্ধু!
 যেখানে চায়ের এক কাপে দু'বন্ধু মহব্বতের ঝড় তোলে সেখানে ভায়ে ভায়ে নেক্কার জনক কাঁদা ছুড়া ছুড়িঁ সত্যি যেন পাগলের পোদ্দারি! 
ঐতুরীর মা চায়ের কাপ হাত বাড়িয়ে দিতেই আবির সাহেব আবারও ফিক করে হাসলেন। দেখো বাবু এ ভাবে বার বার আমায় দেখে হাসতে থাকলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। 
আচ্ছা ঠিক আছে বাবা আপনাকে আর অপরাধী মনে করতে হবে না। 
এবার মনোযোগ দিয়ে শুনো-
গত রাত্রে যে স্বপ্ন দেখলাম তাতে তুমি আবারও ছেলের মা হয়েছো এই ভেবেই ফিক ফিক করে 😁 হাসছি মাত্র ! 
একথা শুনা মাত্র ঐতুরীর মা খুশিতে কি যে গদো গদো না দেখলে কাউকে বুঝানো যাবেনা হয়তো!
মনে মনে ঐতুরীর বাবাও যে কম খুশি হয়েছে তা কিন্তু্ু নয়! দু'জনের মনের অনুভূতি একই গোছের কন্যার পাশাপাশি আরও একটি ছেলে সন্তান হলে মন্দ কিসে?
ছেলে এবং মেয়ে এক সাথে  এক সংসারে থাকলে  সোহাগের ঝলক থাকে  ভরপুর!
ছেলে মেয়ে এক সাথে দৌঁড়ঝাপ চিল্লা চিল্লি প্রতি টি মুহূর্তে ঘর থাকে সরগরম! 
সত্যি করে বলতে কি কারো মনে  আবসুসের আর কোন লেস থাকে  না। 
সমাজে প্রতিটি মুহূর্তে কেউ না কেউ অনেক স্বপ্নে বিভোর থাকছি। 
কেউবা ঘুমের ঘরে আবার কেউবা জেগে জেগে!
কেউবা ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখে সকালে চায়ের কাপে ঝড় তুলে ☺ হাসি তামাশায় দিন ফুঁড়িয়ে দিচ্ছি অবিরত।
 যে স্বপ্নের কোন ভিত নেই, বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই কিংবা নেই কোন আশার আলো!
কাজেই  সেটা কোন স্বপ্ন হতে পারে না । 
সেটা নেহায়েত দুঃস্বপ্ন মাত্র !
সমাজে যারা বাস্তব বাদী সত্যিকার অর্থে তাঁরা কখনো ভাগ্য দোষে দোষান্বিত নন। 
তাঁরা কখনো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন না, তাঁরা স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্বপ্নের বাসর খুঁজেন না। 
তাঁরা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন এবং  প্রতিনিয়ত প্রতিটি মুহূর্তে বাস্তব রুপ দিতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে তিল তিল করে সেই স্বপ্নকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নে রূপ দান করেন। 
জীবনের শেষ ✊ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে সেটা সফলকাম করে ছাড়েন। 
এ ব্যপারে শত শত মনিষীদের সার্থক  জীবনী উপজীব্য। 
দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত প্রতিটি বুদ্ধি দীপ্ত  প্রানি ঘুমের ঘুরে কিংবা জেগে জেগে স্বপ্নে বিভোর থাকি তা তো অস্বীকার করার কোন জো নেই?

পরিশেষে সবার প্রতি আকুল আবেদন - আসুন সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হই এবং প্রজ্বলন করি স্বপ্ন প্রদীপ! 
 প্রতি নিয়ত  ঘুমের ঘুরে স্বপ্ন না দেখে  জেগে জেগে স্বপ্ন বুনি এবং যে স্বপ্ন সত্যিকার অর্থে আপনি আমাকে চোখের ঘুম কেড়ে নিবে! 
 সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে জেগে জেগে রঙিন স্বপ্ন স্বাধ প্রস্ফুটিত হোক আর যেন ঘুমের ঘুরে স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্নের মৃত বাসর না সাজাই এই আকাঙ্খা বিরাজমান থাক আপনি আমি সবার মাঝে এই প্রত্যাশা নিরন্তর!!!

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৪৮

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 





"টানাপোড়েন"৪৮
অনুভবে


                                                         গাড়িতে চেপে যখন আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা অতিক্রম করল তখন মনোজ  সঞ্জুকে বলল ' সঞ্জু কেমন লাগলো?'
সঞ্জয় বললো ' ভালোই তো দাদা।'
মনোজ বলল 'গ্রামের মানুষ খুব আন্তরিকতা সম্পন্ন হয়।'
সঞ্জয় বললো' একদম ঠিক। এর মধ্যে কোন ভেজাল নেই।'
মনোজ বলল  ' অনেক রাত হবে গো সঞ্জু।'
সঞ্জু বলল  'আর কি করা যাবে ।বৌদির ভেতরে একটা টানাপোড়েন ছিল আসবে কি আসবে না? যাক থেকে গেল। ভালোই লাগবে।'
মনোজ বলল  'হ্যাঁ ।ও তো কোথাও যায় না ।মা -বাবা মারা যাবার পর তো, পুরো একাকী হয়ে গেছে। তবুও এই কাকা- কাকিমা ভীষণ ভালোবাসেন ,।থাক দুদিন কি বল সঞ্জু?'
এরমধ্যে মনোজের ফোনে ফোন বেজে উঠল। মনোজ চমকে উঠলো 'এখন আবার কার ফোন?'
মনোজ ইচ্ছে করেই ফোন ধরল না এবং তাকিয়ে ও দেখল না নম্বরটা ।আবার ফোন বেজে উঠলো। এবার  ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখল কার ফোন? দেখল রেখার ফোন।
 ফোনটা রিসিভ করে বলল ' হ্যালো'।
মনোজ বললো  'কি ব্যাপার, ফোন করলে?'
রেখা বললো  'এখন কত দূরে আছো?'
মনোজ বলল 'বড়শুল।'
রেখা বলল  'ফিরতে অনেক দেরি হবে না গো ?'
মনোজ বলল 'সে তো হবেই?'
রেখা বলল-'আমার মিলি আর ওর বাচ্চাদের কথা খুব মনে হচ্ছে?'
মনোজ বলল  'সে তো মনে হবেই ।তবে অত চিন্তা ক'রো না ।দুদিন ওখানে থাকো, ওই দিকে ধ্যান দাও।'
রেখা বলল  'হ্যাঁ তোমার জন্য ও  তো চিন্তা হচ্ছে ।খাওয়া-দাওয়া?'
মনোজ বললো 'তাহলে আর তুমি থেকে যেতে না?'
রেখা বললো 'তুমি কি বলছ?'
মনোজ বলল  'না ,না।  আমি জোক করলাম ।তুমি তো কোথাও যাও  না ।ঠিক আছে ।দুদিন থাকো ।তোমারও ভালো লাগবে ।কাকু-কাকিমার ও ভাল লাগবে ।তাই না?'
রেখা বলল' ঠিক আছে তুমি কিন্তু পৌঁছে ফোন করবে?'
মনোজ বলল 'জো হুকুম ম্যাডাম।'
রেখা বলল  'ফোন রাখছি তাহলে।'
মনোজ বলল ফিসফিস করে ' আমিই বা তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকবো বলো ?ঠিক আছে ,রাখ।'
ফোনটা ছেড়ে দিয়ে মনোজের মনে হল যেন সত্যিই কতদিন পর রেখার সঙ্গে দেখা হবে ।রেখাকে ছেড়ে যাবার বিচ্ছেদ -বেদনা যেন তাকে অনেক কষ্ট দিতে লাগল। কিন্তু তবুও মেনে নিলো আর তো দু'দিন পর ফিরে আসবে। বাড়িতে গেলে সর্বত্রই শুধু রেখার স্মৃতি ।এ দুটো দিন মনোজের খুব কষ্টে কাটবে।
রেখার ফোনটা ছেড়ে দিয়ে মনোজ এর জন্য খুব মন খারাপ হতে লাগল ।বিয়ের পর আর মা -বাবা মারা যাবার পর মনোজকে ছেড়ে একটা রাতও সে বাড়ির বাইরে কাটায় নি কিন্তু তা হলেও আজকে গ্রামের বাড়িতে এসে মনটা একটা আলাদা প্রশান্তিতে ভরে আছে।
হঠাৎ করেই রেখা আবার জিজ্ঞেস করল  'কাকিমা ,নীলুদা কি আর এখানে আসেই না?"
কাকিমা রান্নাঘর থেকে আওয়াজ দিল প্রথম প্রথম আসতো ,এখন তো আসেই না।
কাকিমা রান্নাঘর থেকে বলে যেতে লাগলো' ' এখানে মেয়ে দেখা হলো বিয়ের জন্য ।কিন্তু ও বিয়েতে রাজি হলো না। দেশে আছে এখন কি করছে কে জানে ঘর-সংসার আদর করলো কিনা কেউ জানা যাচ্ছে না।
রেখার মনে পড়ে গেল শৈশব বেলা ও স্কুল লাইফের কথা। গ্রামের সবাই একসঙ্গে বড় হয়েছে খেলাধুলা করেছে নীলুদা রেখা থেকে এক বছরের বড় ।রেখা থেকে এক ক্লাস উপরে পড়ত । পড়ার জন্য মাঝে মাঝে নিজের কাছে থাপ্পড়ও খেয়েছে ।নীলদা বরাবরই মেধাবী ছাত্র ছিল ।তাই সব বিষয়ে তার তীক্ষ্ণ নজর ছিল ।বিশেষত রেখাকে একটু ছোট থেকেই অন্যভাবে যেন দেখতো ।ছোটবেলায় যা কিছু খাবার খেতো দুজনে ভাগ করে খেত। এরপর যখন স্কুলে গেল সেই স্কুলে দেখা গেল যে রেখা কি করছে, কি পড়ছে ,কার সাথে গল্প করছে সবকিছু এসে রেখার মায়ের কাছে এসে বলে দিত। এজন্য মাঝে মাঝে রেখা মনোজের উপর বিরক্ত হতো ,রাগ হ'ত।'
আরে এই তো গাঙ্গুলী বাড়িতে মনসা পুজোর সময়
কদিন ধরেই ঝাপান গান হতো। একদিন গাঙ্গুলীর পুকুর পাড়ে হঠাৎই দেখা যায় নীলু দাকে । তখন ক্লাস কত হবে? নীলুদা তখন  দশম আর রেখার নবম শ্রেণীর।'
হঠাৎ রেখা নীলু কাছে গিয়ে দুই হাত দিয়ে চোখ টিপে ধরল কিন্তু একবারে নীল দা বলে দিয়েছিল ননী ইয়ার্কি মারবি না কিন্তু বলে দিলাম।
 রেখা কিন্তু তখনও চোখ ধরে আছে ।
তখন নীলু রেখার হাত দুটি ধরে বলেছিলো' আমি তোর গায়ের গন্ধ বুঝতে পারি। কাজেই চোখ দুটো ছেড়ে দে ।আমি জানি ননী এসেছে ।এই বলে দুজনে পুকুরপাড়ে এসে বসে ছিল ।আনমনে দুজনেই কাগজের নৌকা ভাসিয়েছে ,কখনো কখনো মাটির ঢিল ছুড়েছে নিস্তব্ধ জলে আলোড়ন তুলেছে দু'জনা ।কিন্তু কখন যে মনের গভীরে তারা পৌঁছে গেছে দুজন দুজনায় ।সে হিসেব তারা কখনও রাখে নি ।এভাবেই মাঝে মাঝে তাদের ভেতরে খুনসুটি হত। যখন এগারো ক্লাসে পড়ে তখন তখন নীলুর কাছে কয়েকটি বই চেয়েছিল রেখা ।প্রথম সেই বই যখন রেখা কালেক্ট করে ।তখন সে বইয়ের ভেতর  লক্ষ্য করে যে একটা চিরকুটে লেখা আছে  ইতি তোমার নীলুদা। 'রেখা কিন্তু এটার কোন মানে উদ্ধার করতে পারে নি । সে বইটা রেখে দিয়েছিল এবং তার মা যখন বইটা খুলে ছিল মা রেখাকে খুব বকেছিল এবং বলেছিলেন  'তোমাদের যতটা স্বাধীনতা দেয়া যায় ,তোমরা সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে উৎশৃংখল হয়ে যাও। আর নীলুর সাথে কথা বলবে না?'
মায়ের সেই দিনের কথাটা শুনে রেখার ভেতরে একটা প্রতিবাদী অনন্য সত্তার জাগরন হয়েছিল।'
রেখা বলল  'কেন মা?'
মা বলেছিলেন 'কথায় কথায় এত প্রশ্ন করো কেন ,যা বলছি তাই করবে?'
রেখা সেদিন মনে মনে একটু ক্ষুন্ন হয়েছিল কারণ রেখার মনের যত কথা নীলুদাকে বলতো ।
নীলুদা বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে, অনেক সময় দেখা গেছে বকুনিও খেতে হয়েছে। কিন্তু তবুও নীলুদাকে না বললে রেখার মন ভালো হতো না। প্রথমদিকে মায়ের কথাটা মনে কষ্ট দিলেও মায়ের কথা তো অমান্য করা যায় না। তাই সে কথা বলত না।
কিন্তু সে কথা না বললে কি হবে নীলুদা তো কথা বলতো ।সে শুধু ঘাড় নেড়ে সাড়া দিত।
 একদিন তো নীলুদা বলেই ফেলল স্কুলে যাবার পথে তখন নীলু দা সাইকেল নিয়ে পাশে পাশে' 'অ্যাই ননী, ননী?'
রেখা তবু সাড়া দেয় না।
নীলুদা বলল 'এই তুই সাড়া দিচ্ছিস না কেন রে ?খুব পা ভারী হয়েছে না তোর?'
রেখা তবু সাড়া দিল না।
নীলুদা বলল-'এই আমি কি করেছি রে? বল আমার অপরাধ টা কি হয়েছে?'
রেখা শুধু ইশারায় জানালো 'সে কথা বলতে পারবে না।'
নীলুদা বলল-'এই আজকে আমি স্কুলে যাব না। তোকে এই কথাটা জানালাম ।স্কুলে যদি ভালো করে পড়াশোনা না করেছিস আর যদি আজকে জানতে পারি কারোর থেকে যে তুই কোন একটা পড়া পারিস নি কোনো টিচারের? তাহলে কিন্তু তোর কপালে অনেক কষ্ট আছে ,মনে রাখিস।'
রেখা শুধু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিল।
কিন্তু রেখা জিজ্ঞেস করতে পারে নি 'কেন আজকে নীলুদা স্কুলে যাবে না?'
রেখার সেদিন স্কুলটা মোটেই ভাল লাগে নি। নীলুদা থাকলে কখনো কখনো দেখা গেছে নীলুদা যা খেত সবকিছুই রেখাকে শেয়ার করত। বলতো টিফিনে চলে আসবি? কোথায় আসবি বল তো ?ঠিক কদম গাছের নিচে। 
রেখাদের স্কুল ছিল কোয়েট স্কুল ।স্কুলে প্রচুর গাছ ছিল ।গাছগুলোর যত্ন আত্তি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের করতে হতো। ওয়ার্ক এডুকেশন ,ফিজিক্যাল এডুকেশনের ক্লাসে দেখা যেত একটা ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে কখনো গাছে রং করানো ,কখনো নতুন চারা লাগানো এইগুলো রতন মাষ্টার মশাই করাতেন।
আর যেদিন নীলুদা স্কুলে যেত না ,টিফিনের ঘন্টা পরলেও রেখা সেদিন কিছুতেই রুম থেকে বের হতো না ।
বিপাশা এসে জিজ্ঞেস করতো ' কি রে রেখা, আজকে তুই টিফিন খেতে গেলি না ?'
এবার অন্য মেয়েরা পুষ্পা ,তৃণা ওরা খুব হাসতো আর বলতো  'যাবে কিরে ?আজকে তো নীলুদাকে দেখতে পেলাম না।'
ছোটবেলার দিনগুলো, স্কুলের দিনগুলো কেটেছে কত হাসি মজা করে ।আজকে গ্রামে এসে এত বছর পর আবার কেন নীলুদার কথা মনে পড়ছে ?নীলুদার সঙ্গে তার জীবনের ইতি তো অনেকদিন আগেই হয়ে গেছে ।শৈশবের দিনগুলো তার বড় বয়সে গিয়ে বিয়ের আগে পর্যন্ত তার সমস্ত জগৎ শুধু নীলুদাকে নিয়ে হয়েছিল ।কিন্তু কখনো প্রকাশ করতে পারে নি রেখা যে, তার ভেতরেও একটা সফট কর্নার তৈরী হয়ে গিয়েছিল নীলুদার জন্য।
নীলুদা মাঝে মাঝেই তার সফট কর্নারের কথা প্রকাশ করেছে কিন্তু রেখা কখনো প্রকাশ করতেই পারে নি ।হঠাৎই কাকিমার কথায় চমক ভাঙ্গে  'জামাই বাবাজি এখন কত দূরে আছে ?'
রেখার কিন্তু তখনও কানে কথা ঢোকে নি ।
আবার কাকিমা জিজ্ঞেস করলেন  'কিরে জামাই বাবাজি কতদূর?'
হঠাৎই ব্যস্ত হয়ে রেখা বললো ' কি কাকিমা?'
কাকিমা বললেন  'হ্যাঁ রে ,জামাই এর কথা চিন্তা করছিলি ।আসলে বিয়ের পর তো তোর মা চলে যাওয়ার পর একদিন ও ওকে ছেড়ে থাকিস নি তাই না ?'
রেখা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।
 কিন্তু না এখন তো মনোজের কথা রেখা ভাবছিল না ।এখন তো তার মনের মনাকাশে জুড়ে রয়েছে নীলুদা ।তারপর বললেন 'কাকিমা  'হ্যাঁ রে, একবার জামাইয়ের খোঁজ নে না কত দূরে আছে?'
 রেখা বলল  'কাকিমা আমাকে বলেছে বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে জানিয়ে দেবে ।'
কাকিমা বললেন ' ঠিক আছে। একবার অন্তত ফোন করে জানা দরকার না ,মা ?'
তারপরেই কাকাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ' কি গো তোমার খাবারটা দেবো?'
কাকু বললেন ' না আজকে সব একসাথে খাবো।' ‌'কাকিমা বললেন ' তুমি কি করে খাবার টেবিলে বসবে ?তোমাকে তো ওখানেই খাইয়ে দিতে হবেকাকু কাকু বললেন  'হ্যাঁ তাই তো ভুলেই গেছি আসলে ননী আসাতে আর আনন্দে আমার যেন সব যন্ত্রনা কষ্ট কোথাও উধাও হয়ে গেছে ।মেয়েটা এত ভালো।আর নিজের সন্তানদের দেখো? কি আর বলি ।আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ।
 কাকিমা বললেন ছাড়ো ওসব কথা ভেবে ভেবে কষ্ট পেয়ো না ।ননী   এসেছে দুদিন থাকুক আমরাও একটু তার সঙ্গে আনন্দে থাকি।'
কাকিমা আবার বললেন ' হ্যা রে ননী ফোনটা করলি ?
রেখা বলল  'না ,কাকিমা আচ্ছা করছি?'
রেখা ফোন ধরালো নম্বরটা নট রিচেবল বলছে।
রেখা আবার ট্রাই করলো এখনো ধরল না।‌
আপনি আবার বললেন ব্যস্তভাবে কিরে ফোনটা ফেলি?
রেখা বলল ' না কাকিমা?'
কাকিমা বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আবার পরে করিস। এই মা এবার একটু খেয়ে নে।'
রেখা বলল ' হ্যাঁ ,সবাই একসাথে খাব কাকিমা?'
কাকু বললেন " ননী আগের যে তাই ধরে রেখেছে ও ছোটবেলাতেই রকম করতো না সবাই একসঙ্গে খাবার খাব?
কাকিমা বললেন হ্যাঁ গো আমাদের নিয়ে একটু চেঞ্জ হয়নি।
রেখা আবার মনোজের ফোনে ফোন ধরালো একটু চিন্তা হচ্ছে কেন ফোনটা লাগছে না?
কাকিমা বললেন 'আয় মা ,খেয়ে নে। পরে আবার ফোন ধরাস।"।
রেখা বলল ' যাচ্ছে না কাকিমা,। আর রেখার খাবারটা কাকুর একটা ছোট টেবিলের পাশে দিল আর ডাইনিং টেবিলে না বসে রেখা মেঝেতে বসলো ।
কাকিমার তো হাঁটুতে ব্যথা  মেঝেতে বসতে পারবেন না ।তাই কাকিমার জন্য একটা আলাদা চেয়ার-টেবিল ব্যবস্থা করা হলো ।সবাই মিলে একসঙ্গে খাবার খেতে বসা হলো।
রেখা খেতে বসে দেখতে পেল প্রথমেই রয়েছে সেই মান কচু বাটা তারপর রয়েছে কলাইয়ের ডাল আর রয়েছে পোস্ত সঙ্গে রয়েছে কুমড়ো ফুলের বড়া।
রেখা খাবারগুলো দেখে বলে উঠল 'আরিব্বাস কাকিমা ,এর মধ্যে তুমি কোথা থেকে জোগাড় করলে?'
কাকিমা বললেন  ,'কেন রে ,বাড়িতেই তো ।পাশে মনে নেই আমাদের কত মান কচু গাছিল। এখন যদিও কমে গেছে আগের মত যত্ন নিতে পারি না তারপর কুমড়ো গাছ হয়েছে তার ফুল ফুটেছে ।তুই 
বললি বলে আমি এগুলো জোগাড় করে রাখলাম ।তোর ভালো লাগছে মা?'
রেখা বললো  'ভালো লাগবে না কাকিমা ,এগুলো যে আমার পছন্দের ।এগুলোর মধ্যে দিয়ে যে আমি তোমাদের গন্ধ খুঁজে পাই।'
কাকু মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন আর বললেন  'তোর কাকিমা মান কচুবাটা খুব সুন্দর বানায় তাইনা বল?'
রেখা বলল  'তা আর বলতে?-কাকিমার হাতে জাদু আছে।'
কাকু বললেন  'এই জন্যই তো তোর কাকিমাকে আমি এত ভালবাসি।'
হঠাৎ রেখার ফোনে রিং বেজে উঠল।
কাকু কাকিমা বললেন  'দেখ, দেখ ।জামাই ফোন কোরেছে বোধহয়?'
রেখা খেতে খেতে এসে বাহাতে ফোনটা ধরে বলল 'হ্যালো'।
মনোজ বলল ' এই পৌঁছালাম। এখন ট্রায়াড আছি ,রাখছি। পরে কথা হবে ।তুমি তো বেশ মজায় আছো।'
ফোন কেটে গেল রেখা ফোনটা রেখে ভাবতে লাগলো অনেক বছর পর একটু নিজের জগতে আছে। বেশ ভালো লাগছে। যা আছে শুধু অনুভবে, অনুরণনে।

h;lpi;

LOVE

gjklj

LOVE

fj,

LOVE

krfyi,

LOVE

dutjtj

LOVE

jtdtsu

LOVE

yjutd

LOVE

hsyt

LOVE