২০ নভেম্বর ২০২১

মোঃ সেলিম মিয়া'র ছোট গল্প"স্বপ্ন প্রদীপ ও রঙিন বাসর"





স্বপ্ন প্রদীপ ও রঙিন  বাস


                                                                   ☕চায়ের কাপে চুমুক দিতেই নিজের অজান্তে  ঠোঁটের ভিতর থেকে চক চকে সাদা দাঁত বেড়িয়ে এক চিলতে হাসি পেলো ঠিক  বুঝতেই পারলাম না । 
কি আর করার? 
মুখ চেপে মুচকি হাসি অর্থাৎ শব্দ বিহিন হাসি হাসবার চেষ্টা করছি মাত্র। 
চায়ের পেয়েলায় গরম চা সাজিয়ে বিবি সাহেবান কখন যে পাশে দাঁড়িয়ে প্রহর গুনছিলেন  ঠিক ঠাহর করতে পারছিলাম না। 
কি ব্যপার জামাই বাবু?
 খুব বেশি  ফুরে ফুরে মনে হচ্ছে? 
ভাবতাব কি? 
মুখ চেপে ফিক ফিক করে হাসছো কেন?
 মতলবটা কি? 
এক সাথে এতো প্রশ্ন কোনটির জবাব দিবো? 
আরে গিন্নি  এখন যে বয়স প্রায়  পঞ্চাশের কোঠায় - কাজেই  মতলবের কি আছে? 
সন্দেহ করার মতো কোন ঘটনা নাই। 
তয় একা একা ফিক ফিক করে হাসছো কেন?
 আর বলোনা গিন্নি শেষ রাত্রে কি যে এক স্বপ্ন দেখেছি তা  স্মৃতি চারণ করে এখন ফিক ফিক করে হাসি পাচ্ছে। 
তাতে আমার কি দোষ বলো? 
এতো কথা বলার ফাঁকে চায়ের কাপে মাত্র একবার  চুমুক পড়েছে। 
চায়ের স্বাদ অনেকটাই শরবতের মতো মনে হচ্ছে। 
হবেনা কেন?
 এক কাপ চা' খেতে যদি আধো ঘন্টা কাল ক্ষেপন করতে হয় তাহলে চায়ের স্বাদ কি আর চায়ে থাকে? 
কি জামাই বাবু বললেন না তো কি মধুর স্বপ্ন দেখেছেন? 
ও হ্যা বলছি তয় উপহার হিসেবে আমায় আরো এক কাপ গরম চা দিতে হবে  তার সাথে বেশি দুধে কড়া চিনি 
জামাই বাবু ঠিক তাই হবে হা-হা-হা😂😂😂
হঠাৎ পাশের বেড রোম থেকে কোন কিছু পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার  শব্দ কানে ভেসে আসলো ঠিক ঠাহর করতে পাচ্ছিলাম না।
 এই সেড়েছে বাবা সাত সকালে তোমার মেয়ে কি যেন ভেঙ্গে ফেলেছে! 
বলতে বলতে জোর কদমে ঐতুরীর মা বেড রোমের দিকে এগিয়ে গেলেন।
 দেখো মা আমি কিচ্ছু করিনি হঠাৎ করে মেকাপ বক্সটি ড্রেসিং টেবিল থেকে পড়ে  গিয়ে এই দশা! 
আমার কোন দোষ নেই মা। 
একথা বলতে বলতে ঐতুরী ভয়ে আঁটু সুটু হয়ে পাশে নিরবে বাক হীন শব্দে  দাঁড়িয়ে  রইলো।
কোন অপরাধী অপরাধ করে বিচারকের সামনে দাঁড়ালে যে দশা ঐতুরীর ক্ষেত্রেও ঠিক সেই দশা!
 মামুনি আমি কি তোমায় কিছু বলেছি? 
 কাঁদছো কেন ? 
চোখের জ্বল খুব সস্তা তাইনা? 
এই বলে ঐতুরীর মা হাতের  কাছে রাখা টিস্যু বক্স থেকে এক ফালি টিস্যু নিয়ে  মেয়ের দু'চোখ মুছে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। 
আদরের দুলালি  বলে কথা! 
 বড় কষ্টের নাড়ি ছেড়া ধন যে! 
কৈগো ঐতুরির মা চা' কি হলো? 
জাষ্ট মিনিট এইতো নিয়ে আসছি। 
ঐতুরীর বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে পত্রিকার কলাম গুলো চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন এমন সময় অন্ধভক্ত ফুটবল প্রেমীদের কান্ড কীর্তি দেখে আবারও নিজের অজান্তেই  এক গাল😁 হাসি হাসলেন। 
বি- বাড়িয়া বলে কথা! 
আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল দু'দলের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া এবং শেষ মেষ হাসপাতালে ভর্তি!
 যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পরশির ঘুম নাই, 
ব্যপারটি ঠিক  সে নিয়মেই গড়িয়েছে এবার।
মেসি শ্রেষ্ঠ কিনা নেইমার শ্রেষ্ঠ এ নিয়েই যতো কান্ড!
 দর্শক আপনারাই বলুনতো মেসি আর নেইমার কি জানে বি-বাড়িয়ার কিছু আতেল তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিতেছে? 
যেখানে সাড়া বিশ্ব জানে মেসি ও নেইমার যুগল বন্ধু! 
যাকে বলে পেটের বন্ধু!
 যেখানে চায়ের এক কাপে দু'বন্ধু মহব্বতের ঝড় তোলে সেখানে ভায়ে ভায়ে নেক্কার জনক কাঁদা ছুড়া ছুড়িঁ সত্যি যেন পাগলের পোদ্দারি! 
ঐতুরীর মা চায়ের কাপ হাত বাড়িয়ে দিতেই আবির সাহেব আবারও ফিক করে হাসলেন। দেখো বাবু এ ভাবে বার বার আমায় দেখে হাসতে থাকলে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। 
আচ্ছা ঠিক আছে বাবা আপনাকে আর অপরাধী মনে করতে হবে না। 
এবার মনোযোগ দিয়ে শুনো-
গত রাত্রে যে স্বপ্ন দেখলাম তাতে তুমি আবারও ছেলের মা হয়েছো এই ভেবেই ফিক ফিক করে 😁 হাসছি মাত্র ! 
একথা শুনা মাত্র ঐতুরীর মা খুশিতে কি যে গদো গদো না দেখলে কাউকে বুঝানো যাবেনা হয়তো!
মনে মনে ঐতুরীর বাবাও যে কম খুশি হয়েছে তা কিন্তু্ু নয়! দু'জনের মনের অনুভূতি একই গোছের কন্যার পাশাপাশি আরও একটি ছেলে সন্তান হলে মন্দ কিসে?
ছেলে এবং মেয়ে এক সাথে  এক সংসারে থাকলে  সোহাগের ঝলক থাকে  ভরপুর!
ছেলে মেয়ে এক সাথে দৌঁড়ঝাপ চিল্লা চিল্লি প্রতি টি মুহূর্তে ঘর থাকে সরগরম! 
সত্যি করে বলতে কি কারো মনে  আবসুসের আর কোন লেস থাকে  না। 
সমাজে প্রতিটি মুহূর্তে কেউ না কেউ অনেক স্বপ্নে বিভোর থাকছি। 
কেউবা ঘুমের ঘরে আবার কেউবা জেগে জেগে!
কেউবা ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখে সকালে চায়ের কাপে ঝড় তুলে ☺ হাসি তামাশায় দিন ফুঁড়িয়ে দিচ্ছি অবিরত।
 যে স্বপ্নের কোন ভিত নেই, বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই কিংবা নেই কোন আশার আলো!
কাজেই  সেটা কোন স্বপ্ন হতে পারে না । 
সেটা নেহায়েত দুঃস্বপ্ন মাত্র !
সমাজে যারা বাস্তব বাদী সত্যিকার অর্থে তাঁরা কখনো ভাগ্য দোষে দোষান্বিত নন। 
তাঁরা কখনো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন না, তাঁরা স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্বপ্নের বাসর খুঁজেন না। 
তাঁরা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন এবং  প্রতিনিয়ত প্রতিটি মুহূর্তে বাস্তব রুপ দিতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে তিল তিল করে সেই স্বপ্নকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নে রূপ দান করেন। 
জীবনের শেষ ✊ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও শেষ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছে সেটা সফলকাম করে ছাড়েন। 
এ ব্যপারে শত শত মনিষীদের সার্থক  জীবনী উপজীব্য। 
দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত প্রতিটি বুদ্ধি দীপ্ত  প্রানি ঘুমের ঘুরে কিংবা জেগে জেগে স্বপ্নে বিভোর থাকি তা তো অস্বীকার করার কোন জো নেই?

পরিশেষে সবার প্রতি আকুল আবেদন - আসুন সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হই এবং প্রজ্বলন করি স্বপ্ন প্রদীপ! 
 প্রতি নিয়ত  ঘুমের ঘুরে স্বপ্ন না দেখে  জেগে জেগে স্বপ্ন বুনি এবং যে স্বপ্ন সত্যিকার অর্থে আপনি আমাকে চোখের ঘুম কেড়ে নিবে! 
 সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে জেগে জেগে রঙিন স্বপ্ন স্বাধ প্রস্ফুটিত হোক আর যেন ঘুমের ঘুরে স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্নের মৃত বাসর না সাজাই এই আকাঙ্খা বিরাজমান থাক আপনি আমি সবার মাঝে এই প্রত্যাশা নিরন্তর!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much