পোস্টগুলি

নভেম্বর ৮, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বিকাশ সরকারের তিনটি কবিতা

ছবি
তাড়ি রুগণ ঢেঁকিটির ওপর ভোরবেলার রোদ বসে আছে ঘুম ঘুম চোখে সকলে চলেছে ধানখেতের দিকে কচি সবুজ ধান ছুঁয়ে ছুঁয়ে এখানে বাতাস বাজায় সরোদ এমন উল্লাসেও বন্যার কথা মনে এলে খুব ভয় করে যুবতী এক কেমন নরম নরম করে তুলে নেয় ডগা কলমির আরেকটি মেয়ে তারে বোনা সাজিতে তুলছে স্থলপদ্মগুলি চড়ুইয়েরা অকারণ ঠোঁটে রোদ নিয়ে লাফালাফি করে  এখন উল্লাস খুব, বন্যার কথা কেউ এখন মনে এনো না বকুলতলায় মোষ দুইছে এতোয়ার দুই নম্বর বউ লাইফবয় মেখে স্নান করছে কাঠকলের মাদ্রাজি শ্রমিকেরা আর ঢেঁকির ওপর যে রোদ বসে বসে ওম নিয়েছিল সে এখন ধীরে ধীরে তাড়ি হচ্ছে বীরেনকাকুর খেজুরের রসে পাপক্ষয় তুলসিপাতাকেও জলে ধুয়ে পবিত্র করে নিতে হয় তাহলে পবিত্র লুকিয়ে আছে জলের ভিতর তাহলে আমাদের দুজনেরই অনেক পবিত্রতা আছে রোজ দুবার করে পার হই আংরাভাসা নদী রোজ ওপারে যেতে হয় হাঁটুজল মেখে রোজ ফিরেও আসি আরও কিছু হাঁটুজল মেখে তাহলে এই বনও পবিত্র হবে বলে বাষ্প হয়ে ওঠে জল হয়ে গড়িয়ে যায় আস্ত আকাশ পাহাড় তাই মেঘ হয়ে উঠছে নভোনীলে তাহলে তোমার চোখের জলে আমারও কিছু পাপক্ষয় হলো হ্যালুসিনেশনের টিলা যে-হাতে ছিঁড়েছি জীবন, সেই কালকুচ্ছিত হাতে হাত রেখে তুমি ছুটে যাচ্ছ ভাত ও ভাল

ফাল্গুনী চক্রবর্তী

ছবি
    শিলং ফাইল -52 চাঁদনী তলার মাঠে ঝর্ণা শুয়ে আছে পাহাড়ের সাড়াশীতে তার চুপবেলা বেহালায় বুঝি দর্দ রাখলো কেও  ধুয়ে যাওয়া রং এর দীঘিতে পারদ  নেমে আসছে ফের মফলা এর  সূর্যোদয় প্রজাপতির ডানা বয়ে আনে  পোস্তুতরোদ সাজান বাঁশের ছাউনিতে  আদরের লুকোচুপি ভালবাসা পণ  পাইনের পিংলা পথ ----নিঃশ্বাসের পাঠ  মনের জানলায়  অসংখ্য নাসপাতি প্লাম  কমলা আর পীচ মাখা বেলার উথলে  পড়া ---উপজাতির বস্তি ঘিরে ভালবাসার  নদী বইছে ------ জাতীয়তাবাদের নির্বিশেষে  সোনায় এতোটুকু খাদ নেই ---

অমলেন্দু বিশ্বাস

ছবি
ঘুমকথা জমে থাকা নিষ্প্রদীপ অন্ধ -তন্দ্রাঘরে  এনে ছুঁয়ে দিল সেই দীর্ঘতর ঘুম l  ঘুমের পরাগ এসে চোখের বিবরে  মেধার বিতানে ক্রমে জমা হলে  অতিপরিচিত পৃথ্বী আর থাকেনা ভূঁ l  অচেনা তমসা এসে ক্রমে ছুঁয়ে দিলে  জাগরী আলোর রেখা লীন হতে থাকে  মনে পড়া ভৈরবীর হারানো অন্তরা কিছুতেই আর মেলানো যায় না তবে l  দীর্ঘতর ঘুমপরী মায়াঞ্জন খুলে  পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ডুব মারে ইঁদারায় l  এসব বল্কল আর লৌকিক শেকল  বিশুদ্ধ কবিতা হৃদে ভাষায় গহনে l

রণজিৎ সরকার এর তিনটি লিমেরিক

ছবি
মুয়ে আগুন কী কতা কন আপনেরা আপনাগো ক্যাঁতায় আগুন বাঁচতি যেদি চান তয় ইহান থিকা এহনি ভাগুন গরম আচে বিবির মেজাইজ পাড়া মাতায়ে ফালামু আইজ ঢং কইরা কামের ভয়ে শুইয়া থাহা মিনসার মুয়ে আগুন ভুলেভাট্টা হাট্টা দিয়ে সাট্টা খেলুন বউ বেচারা ভোঁ-কাট্ট গভীর রাতে ঘুম ভাঙিয়ে ডাণ্ডা চাপুন মিঠে-খাট্টা মিঁউ মিঁউ করবে পায়ে ঢলে ঢলে পড়বে গায়ে ভুলেও যেন ভাববেন না করছি আমি ঠাট্টা জাল্লিকাট্টু আরে ভাই ভিড় বাসে ঠেলেন কেন থামুন দেখি দন্ড জাল্লিকাট্টু খেলতে এসে হবেন দেখি মণ্ড পাশের সিটে আছেন বসে মহিলা কেমন করে চাপি তারে হবেন কুপিলা ওদিকেতে আগুন চোখে বউটা আমার শালু দেখা ষণ্ড

কাকলী দাস ঘোষ এর অণুগল্প

ছবি
   নীলকণ্ঠ মায়া  অনন্ত এক নীল সরোবরে স্নান করছিল। হঠাৎ সেখানে এল এক নীলকণ্ঠ পাখি। পাখিটা খুব কাঁদতে কাঁদতে গান গাইছিল। অনন্তর পাখিটাকে  দেখে খুব মায়া হল। ও পাখিটার কাছে গিয়ে বলল ,  "নীলকণ্ঠ পাখি, তুমি কাঁদছ কেন?" পাখিটা বলল, "দেখ মা দুর্গা যেকদিন আমার পৃথিবীতে ছিল আমি রোজ মায়ের পূজা দিতাম। আর মায়ের কাছেই থাকতাম। কত গল্প করতাম মায়ের সঙ্গে। সবাই মাকে দেখতে এসে আমাকেও দেখত। আর এখন ওরা আমাকে মায়ের থেকে দূরে উড়িয়ে দিল । মাকে বিসর্জন দিল। এখন  কেউ আমার দিকে দেখে না। আমার নীলকান্তমণির মত রঙ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এই অখ্যাত জীবন নিয়ে আমি আর বাঁচতে চাই না। তাই এই সরোবরে ডুবে আমি প্রাণ বিসর্জন দেব।" অনন্ত পাখির কষ্ট বুঝল। আসলে ও-ও যে মাহারা।  ও পাখিকে বলল,  "তুমি কেঁদো না। খ্যাতি অখ্যাতি সব সাময়িক। ভেবে দেখ তো সেই বহুযুগ আগের কোন সভ্যতা -হয়তো বা সুমেরীয় সভ্যতা -সেখানে কে কজন বিখ্যাত ছিল আজ কে বা মনে রেখেছে? আর মা যে তোমার হৃদয়ে আছে গো। ওরা তো মায়ের মূর্তি ভাসিয়েছে। এটা নিয়ম। এই মহাবিশ্বের সব অণু-পরমাণুতেই যে মায়ের বাস।  তুমি চোখ বন্ধ কর। মায়ের মুখটুকু ভেবে গান ধ

মো. আরিফুল হাসান

ছবি
  সময় ডুবে যায় সময় ডুবে যায় অস্তাচলে চলে নিশি আগামী সন্ধ্যায় হরিদ্রাভ নীলে ঝলমলিয়ে উঠুক জোয়ার হাজর খালে বিলে কাদার ভেতর পাইক নির্ভেজাল এক দীপ্ত রথে নগরজুড়ে স্ট্রাইক স্ট্রিমিং পাওযার অফ অল্পতে যে গল্প থাকে তার পেছনে গলফ খেলে চলে প্লেয়ার নিঝুম নিশি শান্ত হলেও মনটা বড়ো গোয়ার বাঁধ মানে না আর রাতের অস্তাচলে রাতের সে মিসমার অন্ধকারের সাথে জমছে জুয়া নাটের হাটে নিষিক্ত দৈরথে তিনগুটিতে দান খানিক থাকে শূণ্যের উপর খানিক প্রাণিধান আরাধনার শেষে রাতের শেষে সকাল আসে ঘোর অন্ধকার বেশে

ভবেশ বসু

ছবি
ঠোঁট দাঁতের চুম্বন  পৃথিবী, তুমি কেমন আছো ? ইদানিং তোমার রঙ পালটে পালটে কালো হচ্ছে ছায়া ছায়া চাঁঁদনী পাখির ছানা অথবা কাঠবিড়ালির চোখ নেই,পাকা পেয়ারাটা গোটাই থাকে দিনভর---তারপর সবুজ ঘাসের উপর পড়ে,একটুও আদর নেই ঠোঁট দাঁতের চুম্বন দেখা যায় না বল তো মাকে একবার ডেকে দিই,মা বললে আবার পাখি খাবে তুমি জান না পৃথিবী এঁটো ফল কত মিষ্টি হয়,মাটি থেকে মা উঠে এলেই আবার শুরু হয়ে যাবে প্রজাপতির ওড়াউড়ি। মাকে খুঁজি দিনরাত,প্রথমে পোশাক পাই তারপর কাটা জিভ----সনাক্তকরণে কেউ চিনতেই পারে নি,ছাই দেখে জানা গেল মায়ের বয়স মাত্র উনিশ আঁধার বড় ভয় পেয়েছিল,আর আমার মা মুখ দেখাবে না বলে সীতার মতো তাড়াতাড়ি খোঁপা খুলে নিয়েছে--- মাটি দ্রুত দুভাগ হও,সন্তানেরা খুঁজবে তাদের বলো আর একবার কাঠে কাঠ ঠুকে আগুন করে নিতে। বেণী দুলিয়ে কে হাঁটে ? বেণী খোলা রেখে কোন রূপসীর তালাক ? এক মাথা সিঁদুরে কার চিতা জ্বলে ?  ধান মুখ খোলা,মেঘ ভেজা পাতা বোঝাই লাল মাটির মেয়ে------এ সবই রক্তাক্ত নদী,আমার মা কৈশোর যৌবনে হরিণের মতো পথে পথে ছোটে বাঘের তাড়নায় হে পৃথিবী,চাঁদের রাতে চাঁদ হয়ে দেখে নাও যারা শকুন বলে চিহ্নিত-----তাদের জন্যও মায়ের শরীরে রাখা ছি

কবি মিশ্র এর অনুলিপি

ছবি
অনুলিপি প্রিয় তুই,              আজ হঠাৎ মাসিমার সঙ্গে দেখা হল। মনে হয় একদশক পরে দেখলাম।  ৬.১৫ মেদিনীপুর লোকালটা ধরতে পারিনি, লেট হয়ে গিয়েছিল, অপেক্ষা করছি , দেখলাম মাসিমা কমলাদিকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আমি তো বেশ অবাকই হলাম। চিনতেই পারছিলাম না। মেসোমশায় মারা যাওয়ার পর যে এতটা পরিবর্তন হবে বুঝতেই পারিনি।  তবে সেই একই রকম আছে, সেই আগের মতো জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া। অত লোকের মাঝে একটু লজ্জাও করছিল। যেমন সেদিন পেয়েছিলাম... তোর মনে আছে তোর জন্মদিনের পার্টিতে তোর বাড়িতে প্রথম গেলাম, তুই পরিচয় করিয়ে দিলি তোর বন্ধু বলে, অত গেষ্টদের মাঝে যখন ঠিক এমনি ভাবে জড়িয়ে চুমু খেয়েছিল, লজ্জায় আমি তখন তাকাতেই পারছিলাম না, সবাই হাততালি দিচ্ছিল,  লাবণ্য, প্রতিভা, অতুল, মিতিল সবাই একগাদা ছবি তুলে ছিল, তুই শুধুই হাসছিলি। পরে ওই ছবি নিয়ে কত কাহিনী তৈরি হয়েছে বন্ধুদের মধ্যে। মাসিমা কিন্তু " মিমো "নামটা এখন ও ভোলেননি। ওই নামে একমাত্র আমার বাবা ডাকতো, ছোট বেলা আমি খুব রোগা, লাল চুল, ফর্সা, খয়েরি চোখ ছিলাম..তাই বাবা মিমো বলত..মেম থেকে মিমো... একবার গল্প করতে করতে ওই নামটা বলেছিলাম, মাসিমার খুব পছন্দ হয়েছিল..

সঞ্জয় আচার্য

ছবি
  গোড়া ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চলেছি দুপাশের হোর্ডিং এ সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ। আগে যারা ছিল তবু ক্রমশ ছোট হতে হতে বক হয়ে মিলিয়ে গেল খিদের টানে পিছনে যারা ছিল তারাও আগে চলে গেল। আমরা অবশ্য সময় খেতে খেতে পিছিয়ে পড়েছি এবং পিছিয়ে পড়তে চাইছি আপাতত এ গতির চেয়ে। আর একটু দূরে জাতীয় সড়ক থেকে ডানদিকে ঘুরে গেছে যে রাস্তাটা তারও ভিতরের দিকে ঢুকে যাবো যেখানে আস্ত একটা কাঁচা গ্রাম বেঁচে আছে আর দূর থেকে দেখা যাচ্ছে নীলুদের খড়ের চালে ছোট ছোট জালি ধরা লতাপাতা সংসার। আমরা যাচ্ছি ওর গোড়াটা আর গোড়ার মাটিটা দেখবো বলে…

মধুমিতা রায়

ছবি
  অসুখ সুর ধোয়া শব্দেরা শূণ্য থেকে টেনে তোলে। আমার অস্তিত্বের আগে আমার অস্তিত্বের পরে শূণ্যতা চারিধার। মাঝে কিছু পথ সুরের ঝলক। সুরফুল সুরআলো সুরনদী চারিধার। রোদে রোদে হেসে ওঠা সুর খন্ড খন্ড করে আঁধারের মুখ। আমি শুধু সাঁতরাই সুরেরই অসুখ |