২৭ জুলাই ২০২২

কবি মামুন তালুকদার এর কবিতা "তোমাকে মনে পড়ে"






তোমাকে মনে পড়ে
 মামুন তালুকদার 

অলস দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে
তোমাকে মনে পড়ে,
মুষল ধারে বৃষ্টিতে একলা ছাতা মাথায় দিয়ে 
তোমাকে মনে পড়ে। 
কারণে-অকারণে মনে পড়ে,
যখন তখন একশো বার মনে পড়ে। 
ক্লান্তিময় কর্তব্য শেষে পথের মোড়ে মোড়ে
তোমাকে মনে পড়ে। 
রবি ঠাকুরের শেষের কবিতায় 
তোমাকে মনে পড়ে। 
পিচ ভেজা রাস্তায়
হুড খোলা রিকশায়,
তোমাকে মনে পড়ে। 
পূর্ণিমার জ্যোসনায়
রাজহংসী নৌকায়
তোমাকে মনে পড়ে। 

সমুদ্র কল্লোলে কেমন হাহাকার জাগানিয়া শব্দে
তোমাকে মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে।
গোধুলির স্নিগ্ধতায় চুল ওড়া বাতাসে
তোমাকে মনে পড়ে, 
উদাসীন বিকেলে ঢেউ তোলা চায়ের কাপে 
তোমাকে মনে পড়ে। 
পাহাড় চুড়ায় মেঘের ছোঁয়ায়
তোমাকে মনে পড়ে।
জোনাক জ্বলা পাহাড়ী রাতে 
তোমাকে মনে পড়ে, ভীষণ মনে পড়ে। 
কথার খইয়ে তুরি মেরে উড়িয়ে দেয়া
বিরক্তিকর যানযটেও তোমাকে মনে পড়ে। 
অকারণে একশো বার যখন তখন মনে পড়ে,
তোমাকে মনে পড়ে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস উপন্যাস টানাপোড়েন ১৯৮




টানাপোড়েন ১৯৮

সুমিতার হঠকারিতা

মমতা রায় চৌধুরী


রেখা আজ স্কুল থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে।বড়দিকে আগেই বলেছিল। বড়দিও ছেড়ে দিয়েছেন। আর দেবেনই না কেন?রেখাকে যখন যে অবস্থাতে যে কাজ করতে বলেছেন যেখানে যেতে বলেছেন ,সে ছুটে গেছে ।কাজেই একটা কৃতজ্ঞতাবোধ বলেও তো কাজ করে.। আজ একটি ক্লাসিক্যাল ডান্স প্রোগ্রাম সিডিউল ছিল অর্থাৎ"Inauguration of festival,6.30 p m
এটা রেখার কাছে ছিল একটা লোভনীয় প্রোগ্রাম কারণ  ওর ক্লাসিক প্রোগ্রামগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে আর সেখানে যদি সে আমন্ত্রিত হয়ে যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই। ভারতনাট্যম প্রেজেন্টেশন বাই দা ওয়ার্কসপ এটেন্ডেস এন্ড স্টুডেন্ট অফ নিত্য তরঙ্গিনী। ভারতনাট্যম বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীUTtiya Barua., Odissi  Reebdhita barua এবং kuchipudi  বিশিষ্ট নৃত্য শিল্পী Biraj Roy এবংSandip Kundu 
ভিতরে ভিতরে একটা উত্তেজনা কাজ করছিল কতক্ষণে সেই প্রোগ্রামের যেতে পারবে কতক্ষণে সেই আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যেতে পারবে এসব ভেবেই রেখা কেমন রোমাঞ্চিত হয়ে পড়ল।
বাড়িতে এসেই ঝটপট ফ্রেশ হতে যাবে ঠিক করছে ঠিক তখনই তুতু ,মিলি পাইলটরা চেঁচিয়ে উঠলো । রেখা ভাবল" কি হলো ?"এজন্য বাইরে বেরিয়ে আসলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না । আবার যখন ভাবল যে এবার ফ্রেশ হবে ওয়াশ রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক তখন আবার
 চেঁচালো । রেখা আবার বাইরে বেরিয়ে আসলো তখন দেখতে পেল একদল ছেলে অকারণে লাঠি হাতে একবার এপাশ একবার ওপাশ করছে। রেখা  বললো ", তোমরা এই দিক দিয়ে লাঠি হাতে যাচ্ছ কেন?"
ছেলেগুলো বলল" আমাদেরকে তাড়া করছে '
রেখা  বলল
" অকারণে  ওরা কাউকে তাড়া করে না, কেউ বদমাইশি করে থাকলে তবেই কিন্তু তাড়া করে "
 আর তোমাদের বাড়ি কোথায় তোমরা এত  ঘোরাঘুরি করছো কেনো ?"
ছেলেগুলো কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।
রেখা গেটটা লাগাতে যাচ্ছে ঠিক তখনই তুতু পেছন থেকে কিউ কিউ করে উঠলো ।
 রেখা বললো "ওরে আমার সোনা বাচ্চা,। আমি তো তোমাকে খেয়ালই করি নি ।চলো ,চলো, চলো তুমি তো ভেতরে ছাড়া থাকবে না ।"তুতু সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকে এলো।
রেখা ফ্রেশ হতে গেল। ওয়াশরুমে ঢুকে বারবার মনে করছে যে ,মাসি কাজে আসবে তো ?আর একদিকে রয়েছে সেই অনুষ্ঠানে যাবার টানটান উত্তেজনা  চলছে ভেতরে ভেতরে । অন্যদিকে একটা টানাপোড়েন। 
 রেখা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো  একটু নাস্তা করবে বলে ফ্রিজে খুলে দেখল কি খাবার 
 আছে ।সেরকম কোন খাবার চোখে পড়ল
 না ।তবে চিকেন রেজালা টা ছিল তাই দিয়ে  ভাবলো যে ঠিক আছে একটু রুটি করে নিয়ে   চিকেন রেজালা দিয়ে খেয়ে নেবে।
 রুটি করতে করতে ই কলিংবেলের আওয়াজ তখন ভাবল নির্ঘাত মাসি এসেছে । রেখা ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখা গেল মাসি ই  বটে কিন্তু মুখটা যেন থমথমে কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকলো ।
" কি হল মাসী ,তোমার কি কিছু হয়েছে ?"
"আমাদের বস্তিতে তো এখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ।"
" কেন কি হয়েছে ?পুলিশ এসেছে ।পুলিশ
 কেন ?কেউ কি চুরি করেছে ,না ডাকাতি করেছে যে পুলিশ এসেছে? নাকি সুইসাইড কেস?"
মাসি বলে" একটু জল খাওয়াবে বৌমা ।রেখা তো হ্যাঁ, বলে এক গ্লাস জল দিলো।
 তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে  মাসি বললো" কি বলবো তোমায় ,সুইসাইড ঠিক নয় ।তবে এতক্ষণ
বোধ হয় মারা গেছে।"
"কে মারা গেছে?"
" আরে তোমাদের বাড়িতে কাজ করত 
না ?,"
"কে কাজ করত ।বেশ কয়েকজন কাজ করে গেছে । কার  কথা বলছো তুমি?"
বিরক্ত স্বরে মাসি  বলল' তোমাদের বাড়িতে কাজ করে গেছে আমি আসার আগে।"
" সুমিতার কথা বলছো ?"
""হ্যাঁ গো ,হ্যাঁ।"
" কেন ওর আবার কি হয়েছে?"
"কেন ও মারা গেছে?"
মাসি বললো" মারা যায়নি তবে ও এবার মরবে।"
"ভনিতা করা ছাড়ো তো ,কি হয়েছে সেটা খুলে বলবে প্লিজ ,আর আমারও তাড়া আছে 
কিন্তু ।"
" হ্যাঁ সেই জন্যই তো ,কাজে আসলো ।না হলে কি আজকে বেরোতাম। আজ আমাদের পাড়ায় গিয়ে দেখ কি অবস্থা।"
" কি হয়েছে?"
" আরে সুমিতার সম্পর্কে তো তোমরা কিছুই জানো না। সুমিতা তো ওই খারাপ পাড়ার মেয়ে ছিল  ওকে তবু  বিয়ে করে এনেছিল
 জীবন নতুন জীবন দেবে বলে। কিন্তু জীবন দু'বছর পর চলে যায় ওকে রেখে।"
রেখা আশ্চর্য হয়ে বলে "সে কিগো?"
" তবে মেয়েটা এমনি ঠিকই ছিল ও সংসার করছিল ।দেখ বৌমা কেউ তো আর স্বভাবদোষে ওখানে যায় না ।নিশ্চয়ই কোন সমস্যা 
ছিল ।জানিনা অতটা ইতিহাস ।"
 "তারপরে বলো কি হয়েছে ?"
"ও মেয়ে তো নতুন জীবন পেয়ে খুশি ছিল কেনই বা খুশি হবে না বলো কোঠি ঘরের জীবন কি ভালো?"
রেখা ভাবতে লাগল মনে মনে সত্যিই সুমিতা কেন যে মাঝে মাঝে এরকম ব্যবহার করত এবার বুঝতে পারছে।
মাসি আপন মনে বকেই যেতে লাগলো।
রেখার দিকে তাকিয়ে দেখল রেখা আপন মনে যেন কি ভেবে যাচ্ছে তখন বলল "ও বৌমা শুনতে পাচ্ছ,?"
রেখা বলে" হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।"
" বাচ্চাকে রেখে জীবন চলে গেল রেখাকে অথৈ জলের মধ্যে ফেলে দিয়ে।"
রেখা বলল" ব লো কি গো?"
এবার তো ওর খাওয়া জোটে না ঠিক করে ।তারপরে তো বাড়ি বাড়ি কাজ ধরিয়ে দিল , আমাদের পাড়ারই একটি কাজের মেয়ে।*
"আমার বাড়ি, তেও  তো করতো।
তবে কাজ ওর পরিষ্কার ছিল না গো মাসি আর এত মিথ্যা কথা বলতো।"
মাসি বললো," কেন যে মিথ্যা কথা বলতো আমরাও জানি না ।তবে কিন্তু মেয়েটা এমনি খারাপ ছিল না। নাটক এর মধ্যেই কুশীলব হিসেবে ঢুকে পড়ে  বনোয়ারিলাল বলে একজন লোক  । প্রতিদিন ওর বাড়ি আসতে লাগলো ।ওর আনাগোনা নিয়ে যখন পাড়া-প্রতিবেশী প্রশ্ন তুলল  তখন সুমিতা বলেছিল ওর বর   পাঠিয়েছে, উনার হাতে টাকা পাঠানোর জন্য, দেখভাল করার জন্য। ওই লোক নাকি ওর  বরের বন্ধু।"
'এখন তো কালকের ঘটনার পর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে আসলে ঐ লোকটার  কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল ওর বর। আর কিছু টাকা সুমিতাকে দিতে বলেছিল । অথচ দেখো এই লোক প্রথমে বলেছিল দুর্দিনের বন্ধু হিসেবে এসেছে আর সে এখন গলার ফাঁস লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল  "।
"মানে কি গো?'
"কি বলবো বৌমা, এই তো গত রাত্রের ঝড়জলের সময় সুমিতা দরজা বন্ধ করে ছিল ।দরজা বন্ধ করে দিয়ে থাকার কথাই ব টে । থাকেনা কেউ তার উপর বৃষ্টি। এই দুর্যোগ ।সেই সময় দরজায় বারবার ধাক্কা দেয় ।"
"বলো কি মাসি,?'
 সুমিতা তখন বলেছে যে এত রাত্রে কী করতে তখন বলেছিল যে দরকার আছে দরজাটা একটু খুলতে জীবনদা পাঠিয়েছে।'
সুমিতার সাদা মনে কোন কাদা নেই মাঝে মাঝে সাহায্য করে টাকা পয়সা দিয়ে ওর নিশ্চয়ই কিছু আবার টাকা পয়সা হয়তো পাঠিয়েছে স্বামীর কথা  বললে কে না দরজা খুলবে বলো? এদিকে মেয়েটার জ্বর কিছু খাওয়াতে পারছে না ,নানা দিক থেকে দিশাহারা ছিল।
এই অবস্থাতেই সেই সাংঘাতিক  ঘটনা।
রেখার মনে আরও কৌতুহল জন্মায় তখন সে বলে কি ঘটনা?"
গতরাত্রে ওকে জোরজবস্তি ভোগ করতে চাইছিল আর সুমিতা সেটা বাধা দিতে গিয়ে যখন পেরে উঠছিল  না তখন হাতের কাছে বটি ছিল হঠকারিতার সঙ্গে কোপ বসিয়ে দিয়েছে।"
রেখা তো আশ্চর্য হয়ে চক্ষু একদম চড়ক গাছ বলে 'হ্যাঁ সুমিতা করেছে?"
"হ্যাঁ গো ,তাছাড়া তো কোনো উপায় ও ছিল 
না।"
রেখামনে মনে ভাবল" হ্যাঁ তা ই তো ।ঠিক সুমিতা আত্মরক্ষার জন্যই করেছে  এতে তো খারাপ  কিছু দেখতে পাচ্ছে না ।"
মাসি বললো" বলো এতে কি খারাপ অভিসন্ধি ছিল? কপাল খারাপ  হলে যা হয়।"
"সুমিতার তাহলে চলবে কি করে গো?"
মিথ্যে  বলব না বৌমা। এতকিছুর মধ্যেও কিন্তু ও খারাপ রাস্তা বেছে নেয় নি বরং বাড়ি বাড়ি কাজ করে যেটুকু হতো ওই দিয়েই সংসার চালানোর চেষ্টা করত। তবু যেন ওর মুখে  হাসিতুকু লেগে থাকত।
রেখার মনে মনে আফসোস হতে লাগলো ছি :ছি :ছি : সুমিতার কাজ থেকে ছাড়ান ঠিক হয়নি তারপর আবার ভাবল কি করবে এত কামাই করত ।এত কামাই হলেও তো রেখার চলে না।
 সে তো অনেক সময় দিয়েছিল যাতে শুধরে যায় যাইহোক রেখা যেন মনে মনে সুমিতার ভাগ্য খারাপ এর পেছনে নিজেকেও একটু দায়ী মনে করল।
মাসি বলল "আমিও গেছিলাম দেখতে । যদিও সুমিতা  নিজেই এসেছিল ,মানে হাতে তখন রক্তের দাগ ।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম বললাম কি করে হয়েছে ?তখন ও হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিল এবং ঘটনাটি পুরোটা বলাতে তখন আমরা বলি এবার বডি  সরাতে পারবে না  জানাজানি হয়ে যাবেই । পুলিশকে তো খবর দিতেই হবে।
সুমিতা বলল এছাড়া  কোনো উপায় ছিল না  মাসি বললো য"খন এই কথাটা বলল ওর চোখ দিয়ে তখন জল পরছে ,।মনে মনে ভাবলো  যে মেয়েটা নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলো সে কি আদৌ   পারবে ?
' একটা যন্ত্রণার কাজ করছে যেন তো ওর ভেতরে রয়েছে যন্ত্রনা রয়েছে ।ওর যন্ত্রণা ।
মাসি বলল" আমাদেরও কষ্ট লাগছে তাই দেখি একটু দেখে তাড়াতাড়ি কাজ গুছিয়ে চলে যাব ওর কাছে।
রেখাও কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল ওর ভেতরে আজকে যে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে যাবে কিন্তু মনে যে টানটান উত্তেজনা ছিল ,ভালোলাগার বিষয়টা ছিল ।"
কিন্তু এই ঘটনা যেন অনেকটাই বিষণ্ণতায় ভরিয়ে দিল তারপর বললো "মাসি তুমি কাজ করো ।আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হই কেমন?"
মাসি বললো 'ওকে দেখে যা মনে হচ্ছিল যেন মনে হচ্ছিল  ডিমে সেদ্ধ হলে যে রকম অবস্থা হয়
সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন জানানো হয়েছে। বড়দিও এক কথায় ছেড়ে দিয়েছেন।
আর ছাড়বেন ই  ইবা না কেন বরদি যখন যেটা বলেন কোনো সারা না করে হাসি মুখে রেখে খুলে দেন সকালবেলায় কারণ এই কাজগুলো

কবি মাহাবুব টুটুল এর কবিতা "না দুঃখ না প্রেম"





না দুঃখ না প্রেম
মাহাবুব টুটুল 

অনুভূতি জড়ানো দুহাতে হাত রেখে 
সকাল কিনতাম ইচ্ছের দামে,
অবারিত সময়ের পরাগ মেখে 
মেলে ধরতাম ভাবনার আকাশ ।
নির্লিপ্ত মেঘের চোখে দেখেছি
অনন্ত পিপাসার শিহরণ ।
পাহাড় ধসের মত সময় ঢলে পড়ে
পশ্চিম দিগন্তের শেষপান্ত বিন্দুতে 
তবু আকাংখা প্রজাপতির প্রলেপ মাখায় 
মনের সংগোপনে।
বিকেলের পরাগ রেণু ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
বন্ধনকে দৃঢ় করে কংক্রিটের আবরণে 
জিঘাংসার পায়রা উড়তেই সন্ধ্যা নেমে আসে ।
রাত্রিতে ভাবনায় জড়ানো জিঘাংসার প্রতিধ্বনি 
আন্দোলিত করে প্রতি মুহুর্তে,
কিন্তু না দুঃখ, না কান্না, না প্রেম নাকি অন্য কিছু 
বুঝে ওঠার ছলে মেঘের ভূকটি মেলে ধরি
প্রাণের জড়িত শিহরণে
তখন,দুচোখ ভরে ভালবাসার নির্যাসে।

মো: আবদুল্লাহ আল মামুন রুনু এর প্রবন্ধ "ব্বইয়ের অনুভূতি"




প্রবন্ধ 

নব্বইয়ের অনুভূতি

মো: আবদুল্লাহ আল মামুন রুনু



লোকে বলে প্রথম সবকিছুই স্পেশাল। আমার জীবনে অনেকগুলো প্রথম আছে  নব্বই দশকে।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত গণ্ডির বাইরেও যে কারো জন্য বুকের ভেতরটা জ্বালা করে সেই প্রথম উপলব্ধি করা।
নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অস্তিত্ব সম্পর্কেও প্রথম অবগত হওয়া।
জীবনে প্রথমবার রিল লাইফের কারো জন্য চরম কষ্টে চিৎকার করে কাঁদা (কোথাও কেউ নেই'তে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি)।
জীবনে প্রথম রিল লাইফের কারো আনন্দে অভিভূত হয়ে খুশির কান্না (দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে'র শেষ দৃশ্য)।
প্রথম প্রেমপত্র লেখা!

আসলে তখনকার সবকিছুর মধ্যে আমি মিশে আছি। সত্যিকার আমি তাই ঘুরে ফিরে শুধু সেই সময়েই ফিরে যাই। কবি হলে বলতাম "আমি বারবার নিজেরে হারায়ে খুঁজি সেথায়""!
নব্বই দশকে ‘সেরাম’, ‘প্যারা’, ‘বিএফ’, ‘ব্রেক আপ’, ‘ক্রাশ খাওয়া’ এসব শব্দ ব্যবহৃত হতো না। তবু হৃদয়ের কথা সুন্দর করে বলা হতো।
সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না কিন্তু সম্পর্কগুলোতে অন্য ধরনের গভীরতা ছিল।
সেলফি তোলা হতো না অথচ ক্যামেরার ওই ৩৬টি ছবি হাতে পাওয়ার আনন্দ অপরিসীম মনে হতো।
পকেটে বা ব্যাগে আইফোন ছিল না তারপরেও মনে সুখ ছিল।
সেই সময়ের মানুষগুলোর মানসিকতা, আচার–আচরণ, জীবন–যাপন পদ্ধতি, হাসি–আনন্দ, দুঃখ–কষ্ট সবকিছুই বড় বেশি আপন। তখনকার নাটক–সিনেমা, নায়ক–নায়িকা, গল্প–কবিতা, গান–নাচ সবকিছু বড় বেশি সুন্দর, বড় বেশি প্রিয়। তখন গান শুনে গায়ে কাঁটা দিত। সিনেমা দেখে বই পড়ে অঝোরে চোখের পানি পড়ত।
এখন আর কোনো কিছুতেই সেই মুগ্ধতা কাজ করে না। সেই আবেগ আসে না। সবার মধ্যে অদ্ভুত এক অস্থিরতা। সবকিছু অতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। অনুভূতিগুলো যান্ত্রিক হয়ে গেছে।
সময়ের প্রলেপ মুছে দিয়েছে বহু কিছু। শুধু রয়ে গেছে সেই সময়ের অসাধারণ কিছু স্মৃতি। আজো প্রাণকে আলোড়িত করে তারা। করে হৃদয়কে আলোকিত। এক অসাধারণ মহিমায়, এক মায়াবী মাধুর্যে।
আহা নব্বই দশক, আহা ভালোবাসা!