২১ ডিসেম্বর ২০২০

ভবেশ বসু


অনন্তকালের নিচে বসে আছি 


আজ আর কোথাও নয়,বসে আছি অপরাহ্ন বেলায়

ঘাস ঘন সবুজ নদীতীর,পৃথিবী সমান সোনা রূপায়

কান পেতে কথা শুনি,নিরীহ নিরাশ্রয় লতারও প্রেম

প্রতিশ্রুতি, নড়ে উঠে পাতা একে অপরে দুঃখ ভুলায়।


আমি বসে আছি শালুক পাশে,জলে জলে জল খেলা

রূপকথার শিশিরে শিশির,এই অকৃত্রিম ভাঙন বেলায়

বসে আছি জীবনের কান্না ও সুখে,প্রতিটি ঢেউ স্রোতে

কামনার বুক চলকে যায় তোমারই হলুদ মাখা হাতে।


অনন্তকালের নিচে বসে আছি,অবিকল সেই উৎসব

অনন্তকালের নিচে বসে আছি,অবিরাম সেই উৎসাহ

আমায় সজাগ সচেতন রাখে কুয়াশার বুকে কুয়াশা

আমায় সজাগ সচেতন রাখে আমারই মৌন আকাঙ্খা।


কোথাও নয়,তোমার ঘুমিয়ে পড়া মাটি ছুঁয়ে আছি

চার চোখ আমাকে দেখায় কতটা অবহেলা করেছি !

ওয়াহিদা খাতুন

 


ঘুমের দেশে খোকন


খোকন গেছে বিয়ে করতে নোনাজলের দেশে,

সঙ্গে আছে চিত্রল হরিণ ঘোটক বাবু বেশে;

বানর,ভোঁদড় বেয়ারা সেজে পালকি কাঁধে নিয়ে,

বুনোহাতি শুঁড় তুলেছে টোপর মাথায় দিয়ে ;

লালকাঁকড়াতে বাজায় বাঁশি বালুচরে হেসে--

ডুলি কাঁধে সঙ সেজেছে কুমির জলে ভেসে--;

বাঘ এসেছে গন্ধ পেয়ে মাথায় ধরে ছাতা,

হালুম সুরে বললো ডেকে আমায় দেনা পাতা;

প্রাণ পণে সব ছুট দিয়েছে পড়লো খোকন শেষে,

মা ডাকতেই চেঁচিয়ে বলে ছিলাম ঘুমের দেশে!

দেবব্রত ভট্টাচার্য্য

 



তুমি 

       

এতদিন দেখেছি তোমার ভালোবাসাকে শরতের মেঘে 

বিকেলের রামধনু অথবা শিশির ভেজা ঘাসে। 

তোমার গভীর হাসি খুঁজে পেয়েছি 

দিগন্তে হারানো সবুজ ধানের দোলায় দোলায় 

অথবা প্রজাপতির রঙ বাহারি পাখনার ছোঁয়ায়। তুমি ছুঁয়ে আছো সন্তান কোলে মায়ের মনকে 

কোন ভিখারী হাত পেতে পাওয়া খাবারের অংশ 

যখন পথ কুকুরের মুখে তুলে ধরে 

তুমি সেই পাত্র খানি ছুঁয়ে থাকো ভালোবাসায়। 


আজও তোমার ভালবাসার ছোঁয়া পেলাম 

রোগদীর্ন মুমূর্ষু প্রাণের অন্তর জুড়ে 

আমার স্বপ্নে যেমন ছিলে, তেমনি বাস্তবেও 

তোমার প্রেমের জিয়ন কাঠি ছুঁয়ে আছে 

মানুষের বিশ্বাসে অবিশ্বাস, আলো অন্ধকারে। 

যমুনার স্রোতেও তুমি ,অরন্যের দাবনলেও তেমনি 

যন্ত্রণার উৎসে। ধংসের বহ্নিশিখায় 

তোমার প্রেমে দেখেছি, যেমন মোনালিসার হাসিতে।

গোলাম কবির

 



ভালবাসার পরিত্যক্ত বাড়ি 


ভালবাসার সুরক্ষিত দেয়াল যেনো

আজ শতবর্ষের পরিত্যক্ত পুরনো বাড়ি,

এখানে ওখানে নোনাধরা পুরনো বাড়ির

 ভাঙা ইঁট উঁকি দিয়ে জানাচ্ছে নিজের

 অস্তিত্ব, চারিদিকে ঘিরে আছে ঘন সবুজ

 বটের ছায়া ছড়িয়ে শিকড় যত্রতত্র! 

এখানে এখন মাঝেমাঝে কিছু পর্যটকের

 দেখা মেলে, যারা একসময় ভালবাসা

 ছিলো বলে লুকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবং

 মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করে 

সেইসব পুরনো দিনের ইতিহাস! 

এখানে এখন স্বাধীনভাবে বাস করে

 বাদুড়ের দল, প্যাঁচা এবং তক্ষকের

একটা ব্রিগেড! শুধু ভালবাসাই নেই

 মানুষের মধ্যে, ওরা এখন এক একটা

 খেলনা রোবটের মতো! অথচ একদিন!

 আহা! ভালবাসা ছিলো মানুষের জন্য

 মানুষের, প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের,

নদীর, বৃক্ষলতা পাতা , পাহাড়ের, সমুদ্রের,

 সবুজ ঘাস, পাখিদের কলকাকলি মুখর দিনের, শিশির ভেজা সকাল ; এসবের জন্য

 ছিলো মানুষের কী ভীষণ মায়া!

আইরিন মনীষা



বিজয়ের চেতনা

তেইশ বছরের শোষণ নিপীড়ন

সয়েছিলো বাঙালী জাতি,

যায়  না ভুলা সেইসব  নির্যাতন 

রাজাকার ছিলো যেথা সাথী।


সাম্য সমতা ন্যায্যতার দাবীতে

হয়েছিলো বাঙালী সোচ্চার,

যুদ্ধ বেঁধেছিলো এই   ভাটিতে

হানাদার হঠাতে বারবার।


বায়ান্ন ছেষট্টি ঊনসত্তর পেরিয়ে

হয়েছিলো বাঙালীর একতা,

সত্তরের নির্বাচনে জয়কে ছাড়িয়ে

পেয়েছিলাম নতুন বারতা।


বঙ্গবন্ধু দিলেন স্বাধীনতার ডাক

আপামর জনতা জড়ালো যুদ্ধে,

স্বাধীনতার চেতনায় পেলো নতুন বাঁক,

১৬:ই ডিসেম্বর বিজয়ের ছন্দে।


চেতনায় শাণিত আমাদের বিজয়ে

শান্তি সম্প্রীতিতে আছি তো বেশ,

বাংলার আলো বাতাসের স্নিগ্ধ বলয়ে

জুড়াই সদা প্রাণের রেশ।

অলোক দাস



স্বদেশী

  'জয়দেব ' তুমি এখনো বেঁচে, নাগরিক হয়েও তুমি " বিদেশী "I হাল ছেড়ো না বন্ধু, লড়ে যাও I একমাত্র ছেলেকে হারালে, মরলো ক্যান্সারে I তোমার গায়ে এ দেশের সেঁধো মাটির গন্ধ I লোকে বলে আইন নিতে নেই নিজের হাতে, পুলিশের সাহায্য নিন, জন্ম তোমার এই দেশে, তবু পাছো পদাঘাত I কি যে হচ্ছে, কে জানে? লোকে বলে দেহ, মন ও মুক্তি I মুক্তি তোমার নেই, যদিও তুমি সেঁধো গন্ধে ভরা নাগরিক I কে বলে সংখ্যা লগু I এদেশে নেই তোমার সম্মান, মরে প্রমান করো এদেশ তোমারি ছিলো, ইতিহাস জানুক "জয় হিন্দ "I তুমি ছিলে স্বাধীন, বিদেশী নয় I সম্পূর্ণ খাঁটি স্বদেশী I

সৈয়দা আইরিন পারভীন

 


সন্দেহবাতিক একটি রোগ


সন্দেহবাতিক একটি রোগ। যারা একবার এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়ে তারা আর মুক্তি পায় না। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারিদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তারা অহেতুক ফেসবুকের বন্ধুদের নিয়ে নানা সন্দেহে এটা ওটা অনুমান করে নিচ্ছে। ফেসবুকে কতজন কতরকম মন্তব্য করে, করতেই পারে। সবার চিন্তা তো এক ছাঁচে তৈরি না। শিক্ষা-সংস্কৃতি বোধও আলাদা আলাদা। নারীদের স্ট্যাটাসে অনেক পুরুষ অনেক রকমের চটুল মন্তব্য করে। সেসব মন্তব্যকে গভীরভাবে দেখার কোন মানে নেই। এটি খুব তাৎক্ষণিক ব্যাপার। ফেসবুক আমার কাছে বিনোদন মাত্র। ফেসবুকপ্রেমী হলেও এটিকে জীবনের সবকিছু মনে করি না। কত ফেবু বন্ধু কতরকম লেখে তা কি গণনা করা যায়? জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য-রাজনীতি নিয়ে অনেক লেখা থাকে। তার মাধ্যমে অনেক শেখার আছে। আমি সেসব থেকে শিখিও। কঠিন বিষয় এড়িয়ে চলি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হলো বিনোদন। প্রচুর লাইক কমেন্টে ভরে যায়। এর মধ্য থেকে কারো কোন কমেন্টকে কেন্দ্র করে যদি কেউ স্ট্যাটাসদাতার সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক আবিষ্কার করে বসে এবং তা নিয়ে গবেষণা করে, তবে তা অন্যায় বলে মনে করি। কতজনের সঙ্গে কত ঠাট্টা-মশকরা চলে, তার মানে কি তারা পরস্পর প্রেমে পড়ে গেছে? প্রেম কি অতোই খেলনা যে চাইলেই মুদি দোকানে মিলে যাবে? মানুষ লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে উদার মানসিকতার পরিবর্তে যদি এরকম সন্দেহগ্রস্ত হয়ে অন্যের মধ্যে খুঁত খুঁজে ফেরে তাহলে সে শিক্ষা অর্থহীন।

সাবা সাবরিন

 



চেতনার ভাষ্কর্য


পাথরের ভাষ্কর্য ভেঙে ফেলা হয়তো সম্ভব। 

কিন্তু যে ভাষ্কর্য , হৃদয়ের লাল-সবুজের

বেদীমূলে চেতনা দিয়ে নির্মিত, সেই ভাষ্কর্য-

আজ পর্যন্ত কেউ কি ভাঙতে পেরেছে? 

না কোনদিন পারবে?


এই ভাষ্কর্য সবাই নির্মান করতে পারে না। 

পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়

বিশ্বাসী কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে তিনি

নির্মান করেছিলেন অত্যুজ্জ্বল এক ভাষ্কর্য।

যে ভাষ্কর্য থেকে দেশপ্রেমের দ্যুতি বের হয়ে-

ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের আকাশে, বাতাসে,

পথে, প্রান্তরে, অলিতে, গলিতে, রাজপথে।

যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি ছিনিয়ে 

এনেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

সেই চেতনার ভাষ্কর্য কি ভেঙে ফেলা যায়?


বঙ্গবন্ধুর চেতনার ভাষ্কর্য- ঊনপঞ্চাশ বছরে 

আরো কোটি কোটি ভাষ্কর্য নির্মান করেছে,

হৃদয় থেকে হৃদয়ে। হৃদয়ের লাল-সবুজের

বেদীমূলে নির্মিত সেই চেতনার ভাষ্কর্য, এভাবেই

হৃদয় থেকে হৃদয়ে ছড়িয়ে পরবে, প্রজন্ম থেকে

প্রজন্মে। হাজার বছর পরেও যে ভাষ্কর্য থেকে

দ্যুতি বের হবে দেশপ্রেমের।

 

বাংলাদেশের দেশপ্রেমী জনগণের হৃদয় থেকে 

বঙ্গবন্ধুর চেতনার ভাষ্কর্য নির্মূল করার সাধ্য -

কোন অশুভ শক্তির নেই। অমর, অক্ষয় হয়ে 

চিরদিনই দ্যুতি ছড়াবে বঙ্গবন্ধুর চেতনার ভাষ্কর্য।

হাকিকুর রহমান


চঞ্চলা কিশোরী


খেলিছে কিশোরী,

খেলিছে চঞ্চলা বালিকা-

ছাড়িয়া এলোকেশ নাচিয়া চলিছে,

গলাতে ঝুলিছে কুঞ্জলতার মালিকা।।


 চপল নয়না, নীরদ বসনা

হরিণী যেন হেঁটে যায়,

যুঁথিকা জড়ায়ে, সুবাস ছড়ায়ে

আড়ে আড়ে ফিরে চায়-

আঁচল ভরায়ে, কেমনে তুলিছে

চন্দ্রপ্রভা, শেফালিকা।।


ভাসালো কে কেয়া পাতার তরী

স্বচ্ছ ধবল ঝিলে,


শাপলা, শালুক উঠায় সেথা


সই-সখীরা মিলে-


কাজলা দীঘির জলেতে ভাসিছে


পদ্ম পাতার থালিকা।।

নাজনীন নাহার




হেমন্তিকা



ধানের শীষে ঝন ঝনাঝন হেমন্তিকা আসে

নতুন ধানের গন্ধে চাষি আপন মনে হাসে,

আমন ধান কাটে কিষাণ, নবান্ন মাঠে মাঠে

নতুন ধানের নতুন চালে উৎসবে দিন কাটে।


শিউলি, কামিনীর গন্ধ ভরা হেমন্তেরই হাঁটে 

বাড়ির আঙিনায় রং ছড়িয়ে হলুদ গাঁদা ফোঁটে,

শীতল হাওয়ায় বাজছে বাঁশি ভোরের শিশির বীণায়

দোয়েল, টুনটুনি, বুলবুলিরা সব মিষ্টি সুরে গায়।


নবান্নেরই খুশিতে মেয়ে নাইওরে আসে বাপের বাড়ি 

নতুন ধানের কত রকম পিঠা-পায়েস করা হয় তৈরি,

নানা রকম নৃত্য গানে বাংলার ঘর সাজে

হাসিখুশির রূপের ঝলক হেমন্তেরই মাঝে।


ধানের মাঠে নাচে দোয়েল ফিঙে প্রজাপতি 

শস্যশ্যামলা ভরা আমার বাংলা রূপবতী,

চাষির গড়া সোনার বরণ দেখতে লাগে বেশ

হেমন্তেরই খুশির দোলায় নাচে সোনার বাংলাদেশ।