১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

শামীমা আহমেদর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৬০




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৬০)
শামীমা আহমেদ 

শিহাব হাতের ঘড়ির দিকে এক নজর দেখে নিলো।ঘড়ির কাঁটায় তখনো চারটা বাজতে আরো প্রায় দশ মিনিট বাকী। গাড়িতে বসেই শিহাব শায়লাকে জানালো, সন্ধ্যে হতে এখনো বেশ সময় আছে। চলো,এখানে একটু বসি। এই রেস্তোরাঁটিতে আমি প্রায়ই আসি। খোলামেলা পরিবেশে সাত তলার উপরে আলো বাতাসে খুব ভালো লাগে। শায়লা শিহাবের অনুরোধ রাখতে উবার থেকে বেরিয়ে এলো। শিহাব উবার ভাড়া মিটিয়ে গাড়ি থেকে নামল। যদিও শায়লার একটু কেমন যেন ভয় ভয় করছিল তবুও শিহাবের প্রতি যখন বিশ্বাস এনেছে এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার কিছু নেই। যদিও বিশ্বাসটা সময়ের সাথে সাথে ভেতরে বেশ শক্ত একটা জায়গা করে নিয়েছে। ধীর পায়ে হেঁটে  দুজনেই লিফটে উঠল। শিহাব সেভেন বাটনে পুশ করে গন্তব্য স্থির করলো।এ সময়টা একটু ফাঁকাই আছে। লিফটে মানুষের যাতায়াত কম । ছোট্ট লিফটে খুব হলে চারজনের জায়গা নিবে। শায়লা শিহাব খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কিন্তু মনের ভেতরে দুজনারই অতীত ভবিষ্যৎ আর বর্তমানের হিসেব নিকেশ চলছে সে বুঝা যায়। চারপাশে কাঁচঘেরা লিফটের ভেতর দুজন দুজনকে স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে। দুজনেরই চোখে চোখ পড়তেই শিহাব শায়লার হাতটি শক্ত করে ধরে চোখে অভয়  জানালো। এখন যেন শায়লার মাঝে একটু ক্লান্তি এসেছে।একেবারে অপরিচিত একটি পরিবারের সাথে সারাদিন  নানানভাবে মিশতে হয়েছে।অনেক কিছু বুঝতে হয়েছে। রিশতিনার আগমনের ঘটনাটিও তাকে বিব্রত করেছে।মনের ভেতর বিক্ষিপ্ত ভাবনায় সে অপরাধবোধে ভুগেছে। এর সাথে নিজের জীবনের যোগ বিয়োগও ভাবতে হয়েছে।ক্ষনিকের আবেগের প্রকাশ  যে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারে শিহাবের সাথে চলতে গিয়ে আজ সেটাই মনে হচ্ছে। একজন অচেনা মানুষ  সময়ের স্রোতে কতটা আস্থা অর্জন করে নিতে পারে। শায়লা গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। 
শিহাব জানতে চাইল, শায়লা কি ভাবছো? 
শায়লা নিজের মাঝে ফিরে এলো!
না, না কিছু না।
কিছু না বললেও আমি সব বুঝি শায়লা।তুমি রক্ষনশীল ঘরের মেয়ে তোমার জন্য এ বিষয়টি অস্বস্তিকর হতেই পারে।উপরে চলো, ওখানকার পরিবেশে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।শায়লা মনকে ফ্রি করে নিলো।
লিফট সাততলায় থামতেই শিহাব শায়লার হাত ধরে একসাথেই বেরিয়ে এলো।শায়লা যতটা  ভয়  পেয়েছিল জায়গাটা তেমনটি নয় একেবারে। বলা যায় নিজ বাড়ির ছাদে গাছপালা ঘেরা থাকলে আর কিছু বসার ব্যবস্থা থাকলে যেমনটি হয়। চারদিকে নানান ধরনের গাছ দিয়ে ঘেরা।  কিছু বড় বড় গাছ দিয়ে একটু আড়াল করাও হয়েছে। যেনো অতিথিরা নিজেদের প্রাইভেসি রাখতে পারে। শায়লা সবুজের মাঝে গিয়ে একটা দীর্ঘ  নিঃশ্বাস নিলো। সারাদিনের ক্লান্তি চলে গেল্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কয়েকটি বসার আয়োজন। দুজন, চারজন, তিনজনের এমন করে খুব অল্প অল্প দুরত্বে বসার ব্যবস্থা। বসার চেয়ার, টেবিলগুলোও মনকে টেনে নিলো।  রুফ টপের এমন সুন্দর আয়োজনে শায়লার মন ভালো হয়ে গেলো। শিহাব শায়লার মুখের প্রতিক্ষণের  অভিব্যক্তি নজরে রাখছিল।এখন শায়লার মুখের ভালোলাগা প্রকাশে শিহাব একটু নিশ্চিন্ত হলো। শায়লা একবার চারপাশে দেখে নিলো।বেশ সুন্দর কিছু বাতিও আছে।উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া। অনেকদিন পর শায়লা এমন খোলামেলা কিন্তু আবার একটু নির্জনতায় শায়লার খুব ভাল লাগল। দুজনের জন্য বসার টেবিলে ওরা বসলো। এখনো তেমন ভরাট হয়নি। শুধু ঐদিকে আরেকটি কাপল বসে কথা বলছে। ওরা কথা বলছে।আসলেই দুজনার বোঝাপড়ার জন্য এমন একটু  জায়গা খুবই  মন কেড়ে নেয়। বেশ শৈল্পিকভাবে সাজানো সবদিক। একপাশে কিচেন ও ফ্রন্ট টেবিল কর্ণার। সেখানে খাবার অর্ডার করতে হয়। শায়লার মনে হলো নিশ্চয়ই কোন বিদেশি রেস্টুরেন্টের আদলে এটা সাজানো হয়েছে। ওপাশের  ছেলেটি প্রচুর স্মোক করছে।  সবুজ পরিবেশে এমন ধোঁয়া নিঃশ্বাসে  ঢুকে যাচ্ছিল। শায়লার এ বিষয়টি ভালো লাগলো না একেবারে। এ জায়গটা স্মোক ফ্রি জোন করে দেয়া উচিত।এখানে  এসেও যদি রাস্তার সেই কালো ধোঁয়াই ঢুকল তবে আর এত সবুজের আয়োজনে কি হবে? শায়লা বেশ বিরক্ত হলো মনে মনে। মানুষের একটু কমনসেন্স আসা উচিত।
শায়লা শিহাব টেবিলে মুখোমুখি বসলো। খুব কাছাকাছি দুজন।শিহাব কথা বললো, আজতো আমাদের বাসায়  নিজেদের কোন কথাই হলোনা।  একটু কথা বলতে তাই এখানে এলাম। শায়লা, আমাকে তোমার যা বলার আছে এখন তুমি সব বলতে পারো।মোবাইলে কথা হলেও  সব কথা বলা হয় না,চোখে চোখ রেখে কথা বলায় অনেক গভীরতা আর বিশ্বাস থাকে। থাকে কথা দেয়া নেয়ার শপথ।কিন্তু ওপ্রান্তে শায়লা নীরব হলেও কেমন যেন  নিজেকে পূর্ণ  মনে হচ্ছে।শিহাবকে নিয়ে কোন প্রশ্নই তার মাঝে আসেনা। সন্দেহ করার মত কোন কিছু সে শিহাবের মাঝে দেখেনি। শিহাবের এই স্বচ্ছতা মনে কোন প্রশ্ন আনেনা নাকি তার নিজের সরলতায় কোন জিজ্ঞাস্য আসে না? মনে হচ্ছে সে যেন শিহাবকে এতটা কাছে পেয়েই তৃপ্ত হয়ে গেছে।আর কিছু জানার নেই, বলার নেই।তবে মাঝে মাঝে সবই স্বপ্ন মনে হচ্ছে সবকিছু। আবার অজানা আশংকায়  ভেতর ভেতরে হু হু উঠছে, চোখ জলে ভরে যাচ্ছে। 
শিহাব  একটু ব্যস্ত হলো। সে মোবাইল বের করে রাহাতকে কল দিলো। সারাদিন আর কোন আপডেট রাহাতকে দেয়া হয়নি।নিশ্চয়ই ওরা অপেক্ষায় আছে।
রাহাত আর মা আজ সারাদিন উৎকন্ঠায় কাটিয়েছে।সারাদিন পর শিহাবের কল পেয়ে রাহাত এক রিংয়েই রিসিভ করলো।  তবে 
শিহাবই প্রথম কথা বলে উঠলো। 
--রাহাত এইতো আমরা একটু আগে উত্তরায় ঢুকেছি। তোমার আপুকে নিয়ে আমি টেবিল টপে আছি। চিন্তা করোনা, আমরা বিকেলটা এখানে থাকবো। শায়লা সন্ধ্যার আগেই বাসায় পৌঁছে যাবে। 
রাহাতকে নিয়ে সেদিন শিহাব এখানেই দেখা করেছিল। রাহাতের কাছে ভালোই লেগেছে। রাহাত বুঝে নিলো।হ্যাঁ, ওদের দুজনের একটু একান্ত সময় প্রয়োজন।  
রাহাত জানালো, জ্বী আচ্ছা ভাইয়া।কোন অসুবিধা নেই। আমি বাসায় আছি।শিহাব শায়লার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলো।
এই নাও, শায়লার সাথে কথা বলো।
শিহাব তার মোবাইলটা শায়লার দিকে এগিয়ে দিলো। 
শায়লা রাহাতকে বেশ হাসিখুশিতেই জানালো, রাহাত আমরা এইতো রুফটপের রেস্তোরাঁয় আছি। সন্ধ্যের আগে চলে  আসবো।
ঠিক আছে আপু,বলে রাহাত শায়লাকে আনতে যেতে হবে কিনা জানতে চাইলে শায়লা জানালো, না আমি নিজেই চলে আসতে পারবো।
এবার শিহাব পুরোপুরি শায়লার দিকেই মনোনিবেশ করলো। বলো শায়লা কিছু বলো আজ আমাদের বাসার সবাইকে কেমন লাগলো? আমি তোমার কাছে থেকে কিছু শুনতে চাই।
শায়লার সবার আগেই ভাবীর কথা বললো।ভাবীকে আমার খুব ভালো লেগেছে।কিভাবে ভাবী সবদিক ম্যানেজ করছেন।
হ্যাঁ, শায়লা ভাবী আছে বলেই সবাইকে নিয়ে এতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছি। ভাবী হলেও সে আমার কাছে বন্ধুর মতো। আমার সবকিছুই ভাবীর জানা। শুধু,,
শুধু? শায়লার মুখ ফুটে শব্দটা বেরিয়ে এলো।
শুধু তোমার কথাটাই বলা হয়নি সেভাবে। 
কেন জানতে পারি?
আসলে শায়লা আমি বুঝতেই পারিনি তোমার সাথে এত দ্রুত সবকিছু ঘটে যাবে।একসময় জীবন নিয়ে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।আরাফকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। বাবা মায়ের দিকে তাকাতে পারছিলাম না।ভাবীও নীরবে সবদিক সামলে যাচ্ছিলেন।নিজেকে বেশ অপরাধী লাগছিলো।আর এখন কি জানো শায়লা?
কি?
এখন  মনে হয় তোমার উপর আমি যেন আমার  সবটা নির্ভরতায় রেখেছি। শায়লা তুমি আমাকে একা করে কোনদিন চলে যেও না।
শায়লা বুঝতে পারলো,রিশতিনার চলে যাওয়ার আঘাত আজো শিহাবের অবচেতন মনকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগাচ্ছে। বারবার শায়লার প্রতি তার আকুলতায় নিজেকে সমর্পন করছে। শায়লা নিজেও জানেনা,দুজনার জীবনে  কিভাবে দুজনের নির্ভরতার ভরসা হলো।
ওয়েটার পাশে এসে দাঁড়াতেই দুজন যেন এই জগতে ফিরে এলো। শিহাব দুটো কোল্ড কফির অর্ডার করলো। শায়লাকে জানালো,ওদের কোল্ড কফিটা খুব ভালো হয়।
শায়লা সম্মতি জানাতেই শিহাব মিষ্টি হেসে শায়লার হাতের উপর হাত রাখলো। 
শায়লা দেখলো, অপূর্ব এক  মায়াভরা চাহনীতে শিহাব তার দিকে তাকিয়ে।


চলবে...

মমতা রায় চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১০৭





উপন্যাস 


টানাপোড়েন১০৭

ভ্যাকসিন পর্ব

মমতা রায় চৌধুরী



রেখা কলম থামালো আর মনে মনে বলল 
'যাক বাবা ,সম্পাদকের কথা রাখতে 
পেরেছি ।অবশেষে উপন্যাসের আজকের পর্ব টা লিখে শেষ করা গেল ।ক'টা বাজে দেখি তো? তাড়াতাড়ি টাইম টা দেখল ওরে বাপরে, রাত্রি 12:30। এখনই তো পাঠাতে হবে লেখাটা। এ বাবা ফোনটাই খুলে দেখা হয়নি। ওরে বাপরে কতগুলো মেসেজ এসেছে। লাস্ট মেসেজ এসেছে 'আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি ।তাড়াতাড়ি লেখা পাঠান।'
রেখা মনে মনে ভাবল ছি: ছি: ছি: একবারও দেখা হয়নি ফোনটা খুলে। রেসপন্স করে নি। ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে।'
রেখা ভাবল' না, আগে উপন্যাসের আজকের পর্ব টা পাঠাই তারপর ক্ষমা চেয়ে নেব।'
গল্পটা পাঠিয়ে দিল।
সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ আসলো 'থ্যাংক ইউ সো মাচ 💕'
রেখা মেসেজ পাঠালো "খুবই দুঃখিত।'
আবার মেসেজ আসলো' আমার মেসেজের জন্য?'
রেখা মেসেজ পাঠাল' আরে বাবা, না ,না, 
না ।এসব বলে লজ্জা দেবেন না।
সম্পাদক লিখলেন 'তাহলে?'
রেখা লিখল'আমার লেখা পাঠাতে দেরি হলো ,আপনাকে অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হলো এজন্য।'
তিনি লিখলেন' ভালো লেখার জন্য হাজার বছর ধরে ওয়েট করা যেতে পারে।'
রেখা লিখল "আর লজ্জা দেবেন না। সত্যিই খুবই দুঃখিত।'
তিনি লিখলেন 'এভাবে বলবেন না তো কষ্ট লাগে।'
রেখা লিখল' ঠিক আছে, আপনাকে থ্যাঙ্কস জানাচ্ছি।"
তিনি লিখলেন' আমার জন্য তো আপনাকে কতটা সময় নষ্ট করতে হচ্ছে বলুন ?খুব খাটাচ্ছি আপনাকে।'
রেখা লিখল 'এইটার জন্য আমি যে ভিতরে ভিতরে কতটা সমৃদ্ধ হচ্ছি এটা জানেন না?'
সম্পাদক লিখলেন ', না ম্যাডাম  আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না ।শুভরাত্রি ।কালকের জন্য আপনাকে তো আবার রেডি করতে হবে। একটু না ঘুমুলে হবে না ,ঘুমান।'
রেখাও লিখল 'শুভরাত্রি।'
ফোনটা রেখে রেখা এক গ্লাস জল খেলো। ভাবল মনোজএখনো ওঘরে কি করছে ?আজও কি ওই ঘরেই থাকবে ও?'
একবার বিছানাটা দেখে নিল কি অসহায় ভাবে পড়ে রয়েছে। রেখা নিজের দিকে তাকালো নিজের কি কি পরিবর্তন হয়েছে, তার চেহারার কোনো পরিবর্তন হয়েছে, নাকি মনের পরিবর্তন হয়েছে ?বোঝার চেষ্টা করল ।ওর সাথে এরকম করছে তবে কি তিথির সর্বনাশা উর্ণজালে  বন্দি?অথচ এই ঘরটাতে একটা সময় ছিল ভালোবাসার বন্ধন, স্পর্শ ,যেন সাড়া দিত।
এক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমাতে গেল নিজের বিছানায়। আর মনে মনে ভাবল কেন নিজের বিছানা বলছি বিছানাটা ছিল দুজনার ।কখনো যে  দুটো বালিশ এক হয়নি কেবা খবর রাখে আর এখন দুটো বালিশ এর মাঝখানে যেটুকু ফাঁক,সেটাকে মনে হয় লক্ষ যোজন ফাঁক ।ছোঁয়া যায় না ,ধরা যায় না ,অনুভব করতে হয় ভেতরে ভেতরে। মনের ক্যানভাস এর রং তুলির আঁচড় দিয়ে শিল্পী আঁকার চেষ্টা করছে কিন্তু  সেই মনের সন্ধান কোথায় আছে !কোন গহীন বনে আছে জানে না'। স্মৃতিরা ভিড় করে আসে। রেখা মনে করে  যদি সেই সময়টা ফিরে পাওয়া যেত। হয়তো অনেক কিছু শুধরে নেয়া যেত।'
এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত-অবসন্ন চোখ দুটি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসে।
ভোরের আলো ফুটতে ই রেখা ঘুম থেকে উঠে পড়ে, তাকিয়ে দেখে পাশে সেই শূন্য বিছানা। পাশে মনোজের বালিশটাকে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে তাঁকে আলতো করে হাত বোলাতে থাকে আর ভাবে কেন এরকম হয়ে যাচ্ছে সময় গুলো, কেন দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বালিশে ছড়িয়ে থাকা সেই গন্ধ ভেতরে  নেবার চেষ্টা করে  এক সময় এই গন্ধটা পাগল করত যখন দূরে কোথাও মনোজ যেতো ।সারাক্ষণ রেখা মনোজের এটা ওটা নিয়ে নাড়াচাড়া করত আর তার ভেতর থেকে গন্ধ নিয়ে ভাবার চেষ্টা করত , মনোজ তার পাশেই 
আছে ।অথচ আজ দেখো একটা ঘরের পরেই অথচ হাত বাড়িয়ে তাকে ধরা যায় না।'
রেখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে পড়ে ঝটপট মেনে নিতে চেষ্টা করে আর ভাবে ' না  ওয়েট করলে হবে 
না ।আজকে ভ্যাকসিন আছে। ঝটপট প্রাতঃক্রিয়া সেরে নেয় সে। তারপর ছোট্ট গোপালকে তুলে তার ভোগচাপিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে। শুধু তার গোপাল নয়  আরো ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে ।
 ওদের কেউ তো খাওয়াতে হবে। এরমধ্যে তো একজন জানান দিয়েই দিয়েছেন চিৎকার করে আগে লিলিটা বেশী চিৎকার করতো খিদে  পেলে। আর লিলির কথা ভেবে কি হবে? লিলি তো ছেড়ে চলে গেল রেখাকে।
ঝটপট দুধের প্যানটা বসিয়ে দেয় গ্যাসের একটি চুল্লিতে অন্য আরেকটি তে বসিয়ে দেয় চায়ের জল। ফ্রিজ থেকে আটা মাখা টা বের করে নিয়ে ঝটপট কয়েকটা রুটি করে ফেলে তারপর দুধ গরম হলে রুটিগুলো তাতে ফেলে হাত দিয়ে একটু চটকে নিয়ে দিয়ে আসে বাচ্চাগুলোকে।
এদিকে জল ফুটতে থাকে চায়ের এসে চায়ের পাতা গুলো দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে  চাটাকে নামিয়ে নেয় ।একটা কাপের চা নিজের জন্য ঢালে আর বাকিটা ফ্লাক্সে রেখে দেয় ।কারণ মনোজ কখন উঠবে তারতো কোন ঠিক নেই।  অন্য একটি পাত্রে ডিম সেদ্ধ বসিয়ে দেয় আজ কাল সকালে মনোজএকটা একটা করে ডিম সেদ্ধ খাচ্ছে। এর মধ্যেই কলিংবেল বাজতে থাকে 'জয় শ্রী কৃষ্ণ, জয় শ্রী কৃষ্ণ, জয় শ্রী কৃষ্ণ।'
রেখা সবেমাত্র চায়ে মুখটা দিয়েছে ,তারপর ঘড়ির দিকে তাকায় এখন কে আসবে ? মাসির আসার এখনো তো সময় হয়নি। চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই হাউসকোটটা গায়ে বুলিয়ে নেয় নাইটি পড়ে দৃষ্টিকটু লাগে। দরজাটা  খুলেই তো অবাক "ওমা মাসি, এত সকাল-সকাল?'
মাসি বলল 'মাগো ,আজকে এক জায়গায় যাব?'
রেখাব হেসে বললো ও তাই? তা বেশ করেছো।
মাসী বললো তোমায় একটু অসুবিধেয় ফেললাম নাগো বৌমা?
রেখা বললনা মাসি ,অসুবিধা কি? আমি তো উঠে ই যাই। বরং তুমি এত সকাল-সকাল ,তোমার শীতকাল তো। তাই বলছি।
মাসী বললো" আর আমাদের শীত, গ্রীষ্ম,বর্ষা।'
রেখা চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলল 'এই নাও মাসি চা খাও আজকে। কি খাবে চায়ের সাথে বিস্কুট , না মুড়ি খাবে?'
মাসী বললো  বৌমা  মুড়ি খাবার আজকে সময় নেই গো?'
রেখা বলল' তা বেশ ,তাহলে বিস্কিট খাও।'
মাসি বলে' এতগুলো বিস্কিট দিলে?'
রেখা বলল 'ও মা তোমার পেট ভরবে?
মাসী বললো তাহলে তোমার মুড়ি খাওয়াই ভাল ছিল সে তো একই সময় লাগবে।
রেখা বলল 'কিছু সময় লাগবে না খাও তুমি।'
মাসী বললো' কত আদর করে বল বৌমা তুমি কত জায়গায় কাজ করেছি এইভাবে কেউ আপন করে কথা বলে না গো সবাই কাজের লোক বলে কেমন যেন একটা দূরত্ব রাখে।
রেখা কোন কথা বলে না শুধু মাসির দিকে তাকিয়ে হাসে
মাসী বললো তুমি আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো গো মা?
রেখা বলল তোমায় দেখছি.।
মাসি বলেছে তো আমি বুঝতেই পারছি কি দেখছ এতো কি লেখা আছে?
রেখা বলল 'কি লেখা আছে? লেখা আছে তোমার যে বয়স হয়েছে তোমার এখন কাজ করা উচিত নয় কিন্তু দেখো মানুষকে পেটের জন্য কিনা করতে হয়?
মাসী বললো 'আমার কপাল বৌমা।'
রেখা বলল তোমার কয় ছেলে মেয়ে?
মাসী বললো ছেলে তো একটাই মেয়ে আছে।
রেখা বলে তোমার ছেলে কি করে?
মাসি পড়লো ছেলে তো কাজ করতো ভালোই কিন্তু ছেলের স্ট্রোক হয়েছে একটা দিক প্যারালাইজড পড়ে আছে ঘরে আমার উপরে সংসারটা।
রেখা  বলল ' ও বাবা।'
মাসি বলল "ছেলের বউটাকেও কাজ করতে হচ্ছে।'
মাসি বলল ওই দেখো কথায় কথায় কত দেরি হয়ে গেল।
রেখাও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল হ্যাঁ মাসি, আমারও দেরি হয়ে গেল। অন্য দিন শুনবো।
মাসি বলল আমাদের  দুঃখের বারোমাস্যা কে শুনবে গো বৌমা,?
রেখা বলল সে দেখা যাবে।
রেখা ঝটপট তরকারি কাটাই ছিল বাটা মাছের ঝাল, পালং শাকের ঘন্ট ও ধনেপাতা চাটনি এই করবে বলেই মনে স্থির করলো ।সেইমতো গ্যাসের চুলায় কড়াই বসিয়ে দিল। রান্নার তোড়জোড় করল।
রান্না কমপ্লিট হতে হতেই রেখা মনোজকে গিয়ে চা দিয়ে আসলো আর বলল তুমি আজকে অফিস যাবে না?
মনোজ সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বলল  'না ।"
রেখা বলল জলখাবার রাখা থাকলো খেয়ে নিও আর দুপুরে ঠিক সময়ে খাবার খেয়ে নিও । তারপর মিলিদেরও খাবার ঠিক করে দিয়ে দিও। কথাগুলো বলে একমুহূর্ত দাঁড়ালো না রেখা।
রেখা ঝটপট স্নান করে, পুজো করে ,খাবারটা খেয়ে ,স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ট্রেন ঢুকে গেছে দেখতে পেল। দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠল ।ট্রেন থেকে নেমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হসপিটালে পৌঁছে গেল। 
রেখা হসপিটালের গেটে পৌঁছাতেই ফোন বেজে উঠলো ।
রিংটোন বেজে উঠলো তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম...।
রেখা ব্যাগ্ হাতরে হাতরে ফোনটা বের করলো ।বের করে দেখছে বড়দির ফোন।
রেখা ফোনটা রিসিভ করে বলল 'হ্যাঁ 'বলুন।
বড়দিদি বললেন তুমি পৌছে গেছো রেখা?
রেখা বলল হ্যাঁ দিদি এই তো হসপিটালে।
বড়দি বললেন আমাকে টেনশন মুক্ত করলে রেখা যদিও আমি জানি তোমাকে যখন কাজটা দিয়েছি তুমি ঠিক আসবে আসলে আমার টেনশন হচ্ছিল তোমার কাজ আছে বলছিল ওই জন্য যাই হোক এটলিস্ট এসেছ তো।
রেখা বলল হ্যাঁ দিদি কথা যখন দিয়েছি আসবো তো অবশ্যই।
বড়দি বললেন আমি জানি আছে রেখা শোনো আমি তাহলে পঞ্চমীর হাতে পাঠিয়ে দিচ্ছি হ্যা পোর্টালের খাতাটা আর ব্ল্যাংক পেজ ও পাঠিয়ে দিচ্ছি ওদের নাম রোল নাম্বার সেকশন সিগনেচার করিয়ে নিও ঠিক আছে।
রেখা বলল ঠিক আছে দিদি
বড়দি বললেন তুমি আমাকে আপডেটগুলো জানাতে থেকো আর কোনো অসুবিধা হলে আমাকে অবশ্যই কিন্তু ফোন ক'রো কেমন?
রেখা  বললো ' ঠিক আছে দিদি।'
এরমধ্যে রেখা দেখতে পেল কতগুলো মেয়ে ড্রেস পড়ে আসেনি জিজ্ঞেস করল এই তোর এড্রেসটা আছে সেখানে বরদি কথাটা শুনতে পেয়ে বললেন ওদের কে বাড়ি পাঠিয়ে দাও রেখা বল ডেসি না পড়িলে ভ্যাকসিন হবে না।
রেখা বল তাহলে ভাবুন দিদি কি অবস্থা তার মধ্যে কিন্তু গার্জেন হয়েছেন সঙ্গে।
বড়দি বললেন আগে স্কুলের কিছু নিয়মকানুন শিক্ষকরা তবে ভ্যাকসিন নেবে।
রেখা বলে তুমি ভ্যাকসিন নেবে আগে ড্রেস পড়ে আসো।
অভিভাবক বললেন ওর একটু অসুবিধা আছে লেখা গুলো কিসের অসুবিধা না আমাদের হসপিটালে আসলে তো সব জামা কাপড় কাচতে হয় সেজন্য ভাঁজ করা শাড়িটা পরবে।
রেখা কেমন অবাক হয়ে গেলো কথা শুনে গুলো বলেন কি আপনি স্কুলের হয়ে এসেছে ভ্যাকসিন নিতে সেখানে ড্রেস পরে আসবে না আর হসপিটাল এসেছে কাজ করবেনা এটা কখনো হয়?
না আমাদের বাড়িতেও তো একটা নিয়ম আছে অভিভাবক বললেন।
রেখা বলল 'দেখুন বাড়ির নিয়ম বাড়িতে। স্কুলের নিয়ম স্কুলেতে ।স্কুলের হয়ে যেহেতু এসেছে স্কুলের নিয়মটা মানতেই হবে ।lরেখা সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক মেয়েকে মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাড়াতে বলল আর এক হাত দুরত্ব রেখে  দাড়ালাম ।প্রত্যেকের আধার কার্ড চেক করতে লাগল তারপর নাম এন্ট্রি করে ভ্যাকসিনের জন্য মেয়ে পাঠাতে লাগলো।
হসপিটাল কর্তৃপক্ষ কুড়িটা করে মেয়ে রেডি রাখুন ভ্যাকসিন এর জন্য কুড়ি জনকে কিন্তু লাগবেই এখানে কোন ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
রেখা বলে ঠিক আছে তাই হবে।
হসপিটালের যিনি সিনিয়র নার্স ছিলেন তিনি বললেন বাহ । নিয়েছে আপনার মতো তো কেউ সিস্টেমেটিক ভ্যাকসিন নিতে পারেনি খুব ভালো লাগলো।
ছাত্রীরা কথাটা শুনতে পেয়ে বললে আমাদের এখানে ভীষণ নিয়মনিষ্ঠ নিয়মের এদিক ওদিক হতে দিতে চান না এবং ভীষণ সিস্টেমেটিক কাজ করেন।
সিনিয়র নার্স বললেন" হ্যাঁ সে তো দেখে বোঝাই যাচ্ছে তোমরাও ম্যামকে দেখে অনেক কিছু শিখতে পারবে ওনাকে ফলো করো কেমন।,
এর মধ্যে একজন মেয়ে ইনজেকশন নিতে ভয় পাচ্ছে বলছি ম্যাম লাগবে লাগবে আমি ইনজেকশন নেবো না। রেখা ওকে অনেক করে বোঝালো যে দেখ কোন কিছু লাগবে না আমি তোর পাশে গিয়ে বসব। দেখ আমার সঙ্গে একটা দুটো কথা বলতে বলতে কখন যে তোর ভ্যাকসিন হয়ে যাবে তুই বুঝতে পারবি না।
 মেয়েটির নাম সোহানা খাতুন।
ওর যে গার্জেন এসেছেন উনি বলছেন ম্যাম আমার মেয়ে খুব ভয় পাচ্ছে।
সোহানার মাকে আশ্বাস দিয়ে বলল" কোন ভয়ের ব্যাপার নেই ,আমি ওর পাশে থাকব।'
শেষ পর্যন্ত 142 টি মেয়ের ভ্যাকসিন হলো। টোটাল নবম শ্রেণীর ছিল দেড়শ জন ।তার মধ্যে কারো বয়স হয়নি আবার কারোর জ্বর, ঠান্ডা লেগেছে বলে ভ্যাকসিন নিতে পারল না।
 রেখা বড়দিকে ফোনে জানাল কতগুলো মেয়ের ভ্যাকসিন হয়েছে। 
বড়দি বললেন' হয়ে গেল রেখা? '
রেখা বলল' হ্যাঁ দিদি, আজকের মত
 কমপ্লিট ।আমাদের যে কটি মেয়েছিল ,তার মধ্যে 142 জন মেয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছে।'
বড়দি বললেন 'এর জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।'
রেখা বলল না দিদি এভাবে বলবেন না। এটা তো আমারও একটা দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে পড়ে স্কুলে আছি যখন।'
বড়দি বললেন"এই কারণে আমি তোমার জন্য গর্ববোধ করি।'
ফোনটা রাখার পর রেখার আজ চোখের সামনে মিছিলের মতো একে একে হাসপাতালে ছবিগুলো যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল মনের ক্যানভাসে। আর ভ্যাকসিনের রেশ, সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে রেখা অবশেষে তার আস্তানার দিকে পা বাড়ালো ।

কবি আইরিন মনীষা'র কবিতা





নিঃসঙ্গতা 

আইরিন মনীষা 


আজ কতদিন হয়ে গেলো 
একাকীত্বের সাথে আমার নির্লিপ্ত বসবাস
যেখানে ধুসর বিবর্ণ আকাশের হাতছানি 
এভাবেই বেদনায় আশাহত অন্যায্য সহবাস। 

রঙ্ধনুর সাত রঙ আজ বড়ই ফিকে
যেখানে আর রাঙেনা আমার অধরা স্বপ্নের পালক,
একসাথে পথ চলার সেই আকাঙখিত আশার প্রতীক্ষায়
নিঃসঙ্গতার পথ চলায় আমিই আমার চালক। 

নগ্ন পায়ে শিশিরের সাথে স্পর্শ 
যেখানে ছিলে তোমার অবাধ বিচরণ, 
বিমুগ্ধ নয়নে আমার হাত দুটি ধরে হাঁটতে
শিহরণে যেথায় তোমাতেই চাইতাম বাঁচতে। 

বাদল দিনের রিমঝিম ছান্দিক বারিধারায় 
কি দারুণ এক সুখানুভুতি হাতছানি দিতো,
যেথায় আমার আরাধ্য হারানো দিনের গান
বাজতো গ্রামোফোনে যেথায় আমার মন কেড়ে নিতো। 

বসন্তের মাতাল সমীরণে সেই উদ্দীপনা 
এখনো আমায় কাছে টানে একান্ত একাকীত্বে
ভুলা কি যায় তারে মধুময় স্মৃতি মাখা ক্ষণ
আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী তব বিরহী বিস্মৃতির   সম্ভিতে।

কবি জান্নাতুল ফেরদৌস  এর কবিতা




লেনাদেনা

জান্নাতুল ফেরদৌস  

কিছু প্রাপ্তি আর কিছু অপ্রাপ্তি
কিছু শান্তি আর কিছু অশান্তি
কাটছে সময় দূর-বহুদূর।

কিছু আশা আর কিছু নিরাশা
কিছু তৃপ্তি আর কিছু পিপাসা
ঢেউয়ে ঢেউয়ে বিশাল সমুদ্দুর।

কিছু দেনা আর কিছু পাওনা
কিছু লেনা আর কিছু বায়না
চকচকে ভাসে হৃদয়ের আয়নায়।

কিছু কান্না আর কিছু আনন্দ
জীবনের ভাজে থাকে মৃদু মন্দ
কখনোও আবার হয় নিরানন্দ। 

কখনোও আলো কখনোও আঁধারে
ভেবে যায় মন সদা চরাচরে
ভালো,মন্দ হয়ে কভু ধরা পড়ে।

কখনোও আকার,কখনোও নিরাকার
খুঁজে ফিরে মন সকল ঠিকানায়
ধরা পরে কখনোও শুধু মরিচিকায়।

যতক্ষণ বায়ু থাকছে আনাগোনা
প্রত্যাশা তাঁর কভু শেষ হবে না।
নিয়তির খেলায় থাকবে লেনাদেনা।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা




আমার কবিতা
 সেলিম সেখ
 

ভুবন মাঝে ধরেছি কলম
লিখব বলে তাই,
প্রকৃতির কোলে লিখে সদা 
মনের সুখ পাই।

মোর কবিতায় ফুটছে দেখো 
প্রকৃতির সেই ফুল,
পাঠক সমাজ বলছে তাই
পায় না খুঁজে কূল।

একটি একটি করে দেখি
জমেছে শত কবিতা,
এগুলো দিয়ে গড়ছি জীবন
হৃদয় মাঝে রবে তা।

মোর কবিতা পাঠে পাবে 
বাস্তবতার ছাপ, 
এভাবেই চলবে জীবন
কমবে সবার চাপ। 

কবিতা হলো সন্তানসম যত
করোনা কেউ তা চুরি,
জানলে তুমি অবাক হবে
আছে সেথা প্রাণ জুড়ি।

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১০




ধারাবাহিক উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ১০ম পর্ব ) 
মনি জামান

এ দিকে সংবাদিক ফিরোজ বাড়ি এসেই ছুটলো জিকুদের বাড়ি,তারপর কাকিমা ককিমা বলে ডাকতে শুরু করলো,জিকুর মা মোমেনা বেগম ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখলো ফিরোজ দাঁড়িয়ে আছে,মোমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলো কিরে ফিরোজ ডাকছো কেন কি হয়েছে।
ফিরোজঃ কাকিমা খুশির সংবাদ দিতে এলাম,মোমেনা বেগমঃ কিসের খুশির সংবাদ ফিরোজ ?
ফিরোজঃ কাকিমা জিকুর ছেলে হয়েছে জিকুর মা খবরটা শোনার সাথে সাথে হাস্যউজ্জ্বল মুখে ফিরোজেকে জিজ্ঞেস  করলো জিকুর ছেলে হয়েছে?কবে হলোরে ফিরোজ?দেখতে কেমন হয়েছে আর আমার দাদু ভাইয়ের শরীর কেমন,জিকু  কেমন আছে।
ফিরোজঃ জিকুর ছেলে খুব সুন্দর হয়েছে কাকি মা ঠিক আপনার বৌমার মতো সুন্দর আপনার দাদু ভাই ও ভালো আছে, জিকুর মা পুতা ছেলের খবরটা প্রথমে শুনে যতটা সহাস্যমুখ ছিল বৌমার আসমার কথা শুনে ততোটাই মুখটি ভার হয়ে গেলো,মোমেনা বেগম নিজের ছেলের খোঁজ খবর নিলো ফিরোজের কাছ থেকে,কিন্তু মোমেনা বেগম এক বারও জানতে চাইলো না ফিরোজের কাছে তার বৌমা আসমা কেমন আছে।
মোমেনা বেগম যখন আসমার কথা একবারও জিজ্ঞেস করলো না ফিরোজের কাছে,তখন ফিরোজের মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো,এটা ভেবে যে জিকুর মা মোমেনা বেগমের এই অহঙ্কারী মনোভাব ফিরোজকে ব্যথিত করলো,ফিরোজ মনে মনে ভাবলো হে আল্লাহ তুমি মানুষ মানুষের মধ্যে কেন এত ব্যবধান,কেন এত ভেদাভেদ করে সৃষ্টি করেছো?আর করেছো যখন তখন ধনী দরিদ্রের বিবাহকে হারাম করলে না কেন?আসমা সে একটা মেয়ে হলেও তো একজন মানুষ,যদিও গরীব পিতা মাতার সন্তান সে তবুও তো সে এখন মোমেনা বেগমের ঘরের বউ।
ফিরোজ ভাবছে সমাজের এই বৈষম্যের কথা,কত বিচিত্র এই জগত উচুতলা নীচুতলার বিভাজন,মানুষ মানুষকে করেছে অমানুষ,ফিরোজের অনেক মন খারাপ,সে বাড়ি চলে গেলো।ফিরোজ চলে যাওয়ার পর মোমেনা বেগম ঘরে এসে বড় ছেলে আমেরিকা প্রবাসী ইয়াকুবের কাছে ফোন করে জিকুর ছেলে হওয়ার সংবাদটা জানালো,ইয়াকুব সব শোনার পর মা'কে অথাৎ মোমেনা বেগমকে তার মতামত জানালো মা'কে ইয়াকুব বলল,মা জিকুর বউ বাচ্চা সহ বাড়ি আনার ব্যাবস্থা কর,আমাদের তিন ভাইয়ের প্রথম ছেলে নয়ন,আরো বললো আসমার বাবা গরিব মানুষ তাতে কি হয়েছে যতদুর জেনেছি আসমা সুন্দরী শিক্ষিত মেধাবী একজন মেয়ে।
জিকু যদি ঘর সংসার করতে পারে বউকে নিয়ে তাতে আমাদের আপ্তির কি আছে, সংসার করবে জিকু,আর বাড়ি ঘর জমি জায়গা তো জিকুই দেখাশোনা করবে।মোমেনা বেগম বড় ছেলের সব কথা শুনে ইয়াকুব কে বলল,ঠিক আছে বাবা আমি নিজে গিয়ে ওদের বাড়ি নিয়ে আসব,তুমি যখন বলছো তখন আমার আপ্তির কি আছে বলে ফোনটা কেটে দিলো।
দুইদিন গত হলো এ দিকে আসমা আর জিকুকে ফিরোজ ফোন করে জানিয়ে দিলো যে,দুই একদিনের ভিতর তোর মা আর আমি আসছি তোদের বাসায়,তোদেরকে বাড়ি আনতে।
খবরটা শোনার সাথে সাথে জিকু আনন্দে আসমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমি জানতাম একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,
আসমাঃ কি হয়েছে এত খুশি খুশি লাগছে কেন তোমাকে,একটু বলো এত আনন্দ করছো কেন?জিকু আসমাকে খবরটা বললো,আসমা শুনেই আজ কেঁদে ফেললো এ কান্না অনেক খুশির,এতদিন ধরে আসমা অপেক্ষা করছে সব মান অভিমান ভুলে নিশ্চয় একদিন তার শাশুড়ি তাকে মেনে নেবে বৌমা হিসেবে,শাশুড়ি আসবে তাদের নিতে শুনে জিকুকে বলল,মা সত্যি কি আসবে?
জিকুঃ হ্যাঁ মা আসবে,আসমা নিশ্চিত হলো
আজ অনেক ভালো লাগছে আসমা আর জিকুর।নয়ন হয়েছে আজ চার মাস,কিন্তু কোন আত্মীয় স্বজন কেউ খবর নেইনি জিকু ও আসমার কষ্ট এটাই।
রাত নামলো আসমা আর জিকু মন খুলে গল্প করে রাতে খাবার খেয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে জিকু আসমাকে বলল,চলো দু'জন ছাদে গিয়ে পাশা পাশি বসি,
আসমাঃ চলো,জিকুঃ হ্যাঁ চলো,বলে জিকু আসমার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে খোলা ছাদে একটি বিছানা বিছিয়ে তার উপর দুজন বসলো,জিকুঃ জানো আজ পূর্ণিমা দেখ কত সুন্দর লাগছে সবকিছু, আজ পূর্ণ জোছনা রাত চারিদিক দেখ ঝলমলে আলো ছড়াচ্ছে অকৃপ ভাবে চাঁদ।
অপূর্ব লাগছে জোছনার আলোয় দুজন প্রেমিক প্রেমিকাকে, নির্জন পরিবেশ পাশাপাশি বসে আছে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে,উপরে খোলা আকাশ তারারা যেন সব অভিমান করে কোথাও আত্মগোপনে চলে গেছে।আকাশটা আজ যেন চাঁদের রাজ্যে, সে ছাড়া কারো অস্তিত্ব নেই,প্রকৃতি আজ যেন অন্য রকম শান্তির বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে ওদের দুজনকে।জিকু আসমাকে কাছে টানলো নিবিড় করে বলল,বুকে এসো আসমা জিকুর বুকে মাথা রাখলো, জিকু আসমাকে জড়িয়ে ধরে ছোট্ট একটা চুম্বন দিলো কপালে,জিকুর বুকে মাথাটা রেখে আসমা শুয়ে আছে,জিকু আসমাকে বলল,জানো তোমাকে আজ অন্য রকম লাগছে,আসমাঃ কেমন লাগছে,
জিকুঃ ঠিক আকাশের ঐ চাঁদটার মত।আসমাঃ হেসে বলল,ইদানীং তুমি যা ফাজিল হয়েছো না!বলেই জিকুকে দুষ্টমি করে চিমটি কেটে দিলো,জিকু আসমাকে জোরে জড়িয়ে ধরে বলল,খুব দুষ্ট হয়েছো তাই না?বলেই আসমার চুলে ধীরে ধীরে বিলি কেটে দিতে শুরু করলো।
আজ আসমা মন প্রাণ ভরে এই জোছনা প্লাবিত রাতে স্বামীর ভালবাসা উপভোগ করছে হৃদয় মন ভরে,আস্তে আস্তে  আসমার নিঃশ্বাস ভারী হতে আরো ভারী হতে শুরু করলো।
হঠাৎ রাতের নিস্তব্ধ খান খান করে দিয়ে কোথাও আম্রকুঞ্জের ভিতর থেকে একটা নিশাচর পাখি ডেকে উঠলো,হয়তো তার সঙ্গীকে ডাকছে,খোলা ছাদ নির্জন পরিবেশ দুজন প্রেমিক প্রেমিকা শুয়ে আছে কোন স্বর্গ ভূমিতে,দুটি দেহ যেন পরস্পরকে ক্রমান্বয়ে কাছে আর কাছে ডাকছে যেমন আকাশ মেঘকে,মেঘ বৃষ্টিকে।
নিস্তব্ধ নির্জন কোন কোলাহল নেই কোথাও দুটি গোক্ষরা সাপ যেন পরস্পরকে দংশন করে চলেছে,রাতের ঝলমলে আলো প্রকৃতির আজ কোন কার্পণ্যতা নেই,অকৃপণ চিত্তে দ্যুতিময় করে তুলেছে চারপাশের পরিবেশকে।
রাতের সব কিছু ছাপিয়ে নগ্ন দুটি দেহ আস্তে আস্তে পরস্পরকে কাছে টেনে নিলো তারপর মিলিত হতে শুরু করলো।নিলয় একটু বিরতি দিয়ে থামলো,মেবিন নিলয়ের মুখে যত জিকু আর আসমার গল্পটা শুনছে,ততো মেবিনের হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে যেন দাগ কেটে যাচ্ছে,মেবিন ও তো নিলয়কে প্রচণ্ড ভালবাসে। 
মেবিনঃ নিলয়কে প্রশ্ন করলো এরপর কি হলো বল,যেন আর তর সইছেনা মেবিনের।

চলবে...

কবি কপিল কুমার ভট্টাচার্য্য এর কবিতা




মহামারীতে প্রকৃতির প্রতি 

  কপিল কুমার ভট্টাচার্য্য
  

  প্রকৃতি তুমি আগের মত 
   আবার ওঠো হেসে,
   কালিমালিপ্ত দিনগুলি সব 
   যাবেই তাতে ভেসে------
   মানুষেরা উঠবে জেগে
    উঠবে হেসে ফুল,
    ভ্রমর-পাখি উঠবে নেচে
     গাইবে প্রাণীকুল।।

কবি মোঃ ইসমাঈলের কবিতা





অধিকার
মোঃ ইসমাঈল 

১৯৭১ এ করেছি যুদ্ধ হয়েছি স্বাধীন
আজ ২০২২ এ এসেও নিজ দেশে পরাধীন।
স্বাধীন আমরা হয়েছি যে কেবল কাগজে কলমে
নিজ দেশে নিজেরাই হচ্ছি শোষিত বর্তমানে। 

চাইনি তো আমরা হতে এমন স্বাধীন
বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে হয় মনে হয় যেন পরাধীন।
সমাজের প্রতিটি ধাপে শোষিত হয় গরীব অসহায় মানুষ
মনুষ্যত্ব বিহীন লোকেরা চোষণ করে, হয়ে নিষ্ঠুর ফানুস। 

যেখানে গরীব পারেনা বাঁচতে, খেতে পায় না ভাত
অসহায়ত্ব এবং দরিদ্রের জন্য পেটে যে পড়ে থাকে শূন্য হাত।
যেখানে গরীব শীতে পায় না বস্র শয়ে বেড়ায় অনড় শীত
তবে গুচবে না কভু শীতের কষ্ট শোনাও যত গীত। 

যেখানে বিত্তশালী কেড়ে নেয় অসহায়ের সর্বঃস্ব
সেখানে গরীব পৈতৃক ভিটেমাটি হীন নিঃস্ব।
যেখানে গরীব স্বাধীন হিসেবে পায়না সঠিক বিচার
তবে সইবে না কভু এই ভূবন এমন নির্মম অবিচার। 

কোথাও গিয়ে পায়না ঠায় আজ গরীব বলে
তাই তো গরীব ভূবনে সয়ে যায় লাঞ্চনা জঠর অনলে।
তবে কি এই মহীতে কখনোও কি গরীব পাবে না কোথাও দাম
আর কতকাল সইবে এইসব- দেখতে তো ধনী গরীবের সমান চাম। 

তবে কি আজ ভুলে গেলে ১৯৭১ এর কথা হয়ে স্বাধীন
এই গরীব,অসহায়,দিনমজুর,জেলে,তাঁতি না করলে যুদ্ধ থাকতে হয়ে পরাধীন।
কই! তখন ছিল ১৯৭১ সাল-- ছিল না তো কোনো বৈষম্য
তবে এখন কেনো আধুনিক হয়ে করো এমন রঙ্গ ?