১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মনি জামান এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১০




ধারাবাহিক উপন্যাস

সেদিন গোধূলি সন্ধ্যা ছিল
( ১০ম পর্ব ) 
মনি জামান

এ দিকে সংবাদিক ফিরোজ বাড়ি এসেই ছুটলো জিকুদের বাড়ি,তারপর কাকিমা ককিমা বলে ডাকতে শুরু করলো,জিকুর মা মোমেনা বেগম ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখলো ফিরোজ দাঁড়িয়ে আছে,মোমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলো কিরে ফিরোজ ডাকছো কেন কি হয়েছে।
ফিরোজঃ কাকিমা খুশির সংবাদ দিতে এলাম,মোমেনা বেগমঃ কিসের খুশির সংবাদ ফিরোজ ?
ফিরোজঃ কাকিমা জিকুর ছেলে হয়েছে জিকুর মা খবরটা শোনার সাথে সাথে হাস্যউজ্জ্বল মুখে ফিরোজেকে জিজ্ঞেস  করলো জিকুর ছেলে হয়েছে?কবে হলোরে ফিরোজ?দেখতে কেমন হয়েছে আর আমার দাদু ভাইয়ের শরীর কেমন,জিকু  কেমন আছে।
ফিরোজঃ জিকুর ছেলে খুব সুন্দর হয়েছে কাকি মা ঠিক আপনার বৌমার মতো সুন্দর আপনার দাদু ভাই ও ভালো আছে, জিকুর মা পুতা ছেলের খবরটা প্রথমে শুনে যতটা সহাস্যমুখ ছিল বৌমার আসমার কথা শুনে ততোটাই মুখটি ভার হয়ে গেলো,মোমেনা বেগম নিজের ছেলের খোঁজ খবর নিলো ফিরোজের কাছ থেকে,কিন্তু মোমেনা বেগম এক বারও জানতে চাইলো না ফিরোজের কাছে তার বৌমা আসমা কেমন আছে।
মোমেনা বেগম যখন আসমার কথা একবারও জিজ্ঞেস করলো না ফিরোজের কাছে,তখন ফিরোজের মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো,এটা ভেবে যে জিকুর মা মোমেনা বেগমের এই অহঙ্কারী মনোভাব ফিরোজকে ব্যথিত করলো,ফিরোজ মনে মনে ভাবলো হে আল্লাহ তুমি মানুষ মানুষের মধ্যে কেন এত ব্যবধান,কেন এত ভেদাভেদ করে সৃষ্টি করেছো?আর করেছো যখন তখন ধনী দরিদ্রের বিবাহকে হারাম করলে না কেন?আসমা সে একটা মেয়ে হলেও তো একজন মানুষ,যদিও গরীব পিতা মাতার সন্তান সে তবুও তো সে এখন মোমেনা বেগমের ঘরের বউ।
ফিরোজ ভাবছে সমাজের এই বৈষম্যের কথা,কত বিচিত্র এই জগত উচুতলা নীচুতলার বিভাজন,মানুষ মানুষকে করেছে অমানুষ,ফিরোজের অনেক মন খারাপ,সে বাড়ি চলে গেলো।ফিরোজ চলে যাওয়ার পর মোমেনা বেগম ঘরে এসে বড় ছেলে আমেরিকা প্রবাসী ইয়াকুবের কাছে ফোন করে জিকুর ছেলে হওয়ার সংবাদটা জানালো,ইয়াকুব সব শোনার পর মা'কে অথাৎ মোমেনা বেগমকে তার মতামত জানালো মা'কে ইয়াকুব বলল,মা জিকুর বউ বাচ্চা সহ বাড়ি আনার ব্যাবস্থা কর,আমাদের তিন ভাইয়ের প্রথম ছেলে নয়ন,আরো বললো আসমার বাবা গরিব মানুষ তাতে কি হয়েছে যতদুর জেনেছি আসমা সুন্দরী শিক্ষিত মেধাবী একজন মেয়ে।
জিকু যদি ঘর সংসার করতে পারে বউকে নিয়ে তাতে আমাদের আপ্তির কি আছে, সংসার করবে জিকু,আর বাড়ি ঘর জমি জায়গা তো জিকুই দেখাশোনা করবে।মোমেনা বেগম বড় ছেলের সব কথা শুনে ইয়াকুব কে বলল,ঠিক আছে বাবা আমি নিজে গিয়ে ওদের বাড়ি নিয়ে আসব,তুমি যখন বলছো তখন আমার আপ্তির কি আছে বলে ফোনটা কেটে দিলো।
দুইদিন গত হলো এ দিকে আসমা আর জিকুকে ফিরোজ ফোন করে জানিয়ে দিলো যে,দুই একদিনের ভিতর তোর মা আর আমি আসছি তোদের বাসায়,তোদেরকে বাড়ি আনতে।
খবরটা শোনার সাথে সাথে জিকু আনন্দে আসমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমি জানতাম একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,
আসমাঃ কি হয়েছে এত খুশি খুশি লাগছে কেন তোমাকে,একটু বলো এত আনন্দ করছো কেন?জিকু আসমাকে খবরটা বললো,আসমা শুনেই আজ কেঁদে ফেললো এ কান্না অনেক খুশির,এতদিন ধরে আসমা অপেক্ষা করছে সব মান অভিমান ভুলে নিশ্চয় একদিন তার শাশুড়ি তাকে মেনে নেবে বৌমা হিসেবে,শাশুড়ি আসবে তাদের নিতে শুনে জিকুকে বলল,মা সত্যি কি আসবে?
জিকুঃ হ্যাঁ মা আসবে,আসমা নিশ্চিত হলো
আজ অনেক ভালো লাগছে আসমা আর জিকুর।নয়ন হয়েছে আজ চার মাস,কিন্তু কোন আত্মীয় স্বজন কেউ খবর নেইনি জিকু ও আসমার কষ্ট এটাই।
রাত নামলো আসমা আর জিকু মন খুলে গল্প করে রাতে খাবার খেয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে জিকু আসমাকে বলল,চলো দু'জন ছাদে গিয়ে পাশা পাশি বসি,
আসমাঃ চলো,জিকুঃ হ্যাঁ চলো,বলে জিকু আসমার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে খোলা ছাদে একটি বিছানা বিছিয়ে তার উপর দুজন বসলো,জিকুঃ জানো আজ পূর্ণিমা দেখ কত সুন্দর লাগছে সবকিছু, আজ পূর্ণ জোছনা রাত চারিদিক দেখ ঝলমলে আলো ছড়াচ্ছে অকৃপ ভাবে চাঁদ।
অপূর্ব লাগছে জোছনার আলোয় দুজন প্রেমিক প্রেমিকাকে, নির্জন পরিবেশ পাশাপাশি বসে আছে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে,উপরে খোলা আকাশ তারারা যেন সব অভিমান করে কোথাও আত্মগোপনে চলে গেছে।আকাশটা আজ যেন চাঁদের রাজ্যে, সে ছাড়া কারো অস্তিত্ব নেই,প্রকৃতি আজ যেন অন্য রকম শান্তির বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে ওদের দুজনকে।জিকু আসমাকে কাছে টানলো নিবিড় করে বলল,বুকে এসো আসমা জিকুর বুকে মাথা রাখলো, জিকু আসমাকে জড়িয়ে ধরে ছোট্ট একটা চুম্বন দিলো কপালে,জিকুর বুকে মাথাটা রেখে আসমা শুয়ে আছে,জিকু আসমাকে বলল,জানো তোমাকে আজ অন্য রকম লাগছে,আসমাঃ কেমন লাগছে,
জিকুঃ ঠিক আকাশের ঐ চাঁদটার মত।আসমাঃ হেসে বলল,ইদানীং তুমি যা ফাজিল হয়েছো না!বলেই জিকুকে দুষ্টমি করে চিমটি কেটে দিলো,জিকু আসমাকে জোরে জড়িয়ে ধরে বলল,খুব দুষ্ট হয়েছো তাই না?বলেই আসমার চুলে ধীরে ধীরে বিলি কেটে দিতে শুরু করলো।
আজ আসমা মন প্রাণ ভরে এই জোছনা প্লাবিত রাতে স্বামীর ভালবাসা উপভোগ করছে হৃদয় মন ভরে,আস্তে আস্তে  আসমার নিঃশ্বাস ভারী হতে আরো ভারী হতে শুরু করলো।
হঠাৎ রাতের নিস্তব্ধ খান খান করে দিয়ে কোথাও আম্রকুঞ্জের ভিতর থেকে একটা নিশাচর পাখি ডেকে উঠলো,হয়তো তার সঙ্গীকে ডাকছে,খোলা ছাদ নির্জন পরিবেশ দুজন প্রেমিক প্রেমিকা শুয়ে আছে কোন স্বর্গ ভূমিতে,দুটি দেহ যেন পরস্পরকে ক্রমান্বয়ে কাছে আর কাছে ডাকছে যেমন আকাশ মেঘকে,মেঘ বৃষ্টিকে।
নিস্তব্ধ নির্জন কোন কোলাহল নেই কোথাও দুটি গোক্ষরা সাপ যেন পরস্পরকে দংশন করে চলেছে,রাতের ঝলমলে আলো প্রকৃতির আজ কোন কার্পণ্যতা নেই,অকৃপণ চিত্তে দ্যুতিময় করে তুলেছে চারপাশের পরিবেশকে।
রাতের সব কিছু ছাপিয়ে নগ্ন দুটি দেহ আস্তে আস্তে পরস্পরকে কাছে টেনে নিলো তারপর মিলিত হতে শুরু করলো।নিলয় একটু বিরতি দিয়ে থামলো,মেবিন নিলয়ের মুখে যত জিকু আর আসমার গল্পটা শুনছে,ততো মেবিনের হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে যেন দাগ কেটে যাচ্ছে,মেবিন ও তো নিলয়কে প্রচণ্ড ভালবাসে। 
মেবিনঃ নিলয়কে প্রশ্ন করলো এরপর কি হলো বল,যেন আর তর সইছেনা মেবিনের।

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much