উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৬৭
শুভেচ্ছা ভালোবাসা প্রাপ্তি
মমতা রায় চৌধুরী
মনের ইচ্ছেগুলোকে নীল খামে তে পাঠিয়েছিল কোন এক অজানা উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই অজানা পুরীতে স্বপ্নরা ডানা মেলেছে নীল প্রজাপতির পাখনায়। দুনিয়াতে সব কিছুর দাম বেড়েছে শুধু কমেছে মানুষের সততা আর মূল্যবোধ প্রতি
ক্ষণে ।তবুও তার মধ্যে থেকে বেঁচেথাকার রসদগুলো খুঁজে নিতে এর মধ্যে থেকেই। এসব ভাবতে ভাবতেই রেখা বাড়ির গেটটা খোলে। আর প্রতিদিনের ক্লান্তি অবসাদ এর অবসান ঘটিয়ে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে একটা এক্সট্রা এনার্জি দেয় মিলি আর ওর বাচ্চারা। নইলে তো যান্ত্রিকতার যুগে যেমন মানুষের সবুজ প্রাণ ক্রমশ গ্রাস করে নিয়েছে ধূসরতা। সব সম্পর্ক গুলো কেমন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে রেখা ওদের আদর করে।ওদের আদর পর্ব শেষ হলে তবে রেখার ছাড়।বাড়িতে কলিংবেল বাজানো হল কিন্তু কেউ দরজা খুলল না। তখন রেখা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। বাড়িতে ঢুকতেই চারিদিকে ফুলের বৃষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানান হলো। রেখা সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই এতটা অবাক হয়ে গেলযে ভাষা হারিয়ে গেল। ইতিমধ্যে চৈতির মা ,পার্থ, মনোজ, পার্থর দাদা, সোনাই, সোনাইয়ের মা, কাকিমা, সেন্টুদা সবাই একসঙ্গে হ্যাপি বার্থডে উইশ করলো মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখাকে । রেখা খুশিতে আত্মহারা রেখার জন্মদিনএই ভাবে পালিত হবে ভাবতেও পারে নি। আর জন্মদিনটা যে স্পেশাল হবে কে জানতো ?আসলে কিছু কিছু প্রত্যাশা এভাবেই বোধ হয় পুরন হয়ে যায় ।
কাকিমা কে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়া হলো। কাকিমা বললেন' সুখে থাকো, ভালো থাকো দীর্ঘজীবী হও।"
পার্থ এসে 'একটা কবিতার বই। কবির নাম স্বপ্নীল ভট্টাচার্য।'
রেখা নামটা দেখে আঁতকে উঠল।
'তাহলে এটা কি ঈশ্বরের মহিমা। স্পেশাল দিনের স্পেশাল উপহার।'
রেখা ভাবতে পারছে না। রেখা শুধু বলল"তোমরা এসব করবে আমাকে জানাওনি তো?'
পার্থ আর মনোজ বললো"তাহলে আর সারপ্রাইজ কি থাকল?
পার্থর মা মানে কাকিমা বললেন 'যাও এবার ফ্রেশ হয়ে নাও।"
রেখা বললো "তাহলে খাবার দাবার অ্যারেঞ্জ করেছ তো?
"হ্যাঁ সব করা আছে। তোমার কোন চিন্তার কারন নেই।'
চৈতির মা বলল'সে আর বলতে দিদি। ওই ব্যাপারে আমরা কোন ভুল করবো না ।সে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।"
সবাই মিলে হো হো হো করে হেসে উঠলো।
রেখার হৃদয়-মন আজকে শুধু ময়ূরের মতো নেচে উঠল ।সত্যি এত প্রাপ্তি ,এত আনন্দ 40 পেরিয়ে যাওয়া এক নারীর কাছে অভাবনীয়।
কাকিমা বললেন "আজকে কিন্তু তোমার কাছ কবিতা শুনবো।??
পার্থ বলল' না ,না মা । শুধু ও হলে তো হবে
না ।আরো কিছু চাই..।"
পার্থ অন্যদের দিকে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জানতে চাইল 'তারা কি চায় ?বলো আরো কিছু চাই?"
সবাই এক বাক্যে বললো 'আরো কিছু চাই, আরো কিছু…..।"
সোনাই কে জিজ্ঞেস করল বাকিরা "তোমার কি চাই?"
আগের মত সোনাই যদি থাকতো ,বলতো চকলেট চাই ,খেলনা চাই ,আরো কত কিছু?'
সোনাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রেখার দিকে। রেখা বলে "তোমার কি চাই?'
সোনাই ও "বলল" তোমার কি চাই?'
চকলেট নিয়ে ওর হাতে দিল তারপর বলল" আমার সোনাই, সোনাই এর আরো চকলেট চায় ।আরো চকলেট তাই তো?"
সোনাই শুধু ঘাড় নাড়লো।
মধুজার মুখটা পাংশে হয়ে গেল।
রেখা বলল" মধু যার কাছে গিয়ে হাতে হাত রেখে" অত চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।'
চৈতির মা বললো" বাকীরা আর কি
চাই ?কি চাই ?কি চাই ? বলে চেঁচালে এবার সেটা কি তা বল?"
আমরা গান শুনতে চাই।
"আজকের বার্থডে গার্ল সুন্দর গান শোনাবে, 'পার্থ বলল।
আসলে মধুজা ওর ছেলে সোনাই কে নিয়ে খুব টেনশনে আছে।
চৈতির মা কথাটা বলাতে পরিবেশটা বেশ হালকা হলো মনে হলো।
কাকিমা বললেন ' বৌমা যাও তো তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। সেই কখন স্কুল থেকে ফিরেছো।'
পার্থ বলল 'একদম ঠিক বলেছ।'
বউদি যাও এবার ফ্রেশ হয়ে নাও।একপর কেক কাটা আছে।"
রেখা বললো 'এখনো বাকি আছে?'
পার্থ বলল 'পিকচার আভি বাকি হ্যায়
আগে আগে দেখতে রহ হোতা হ্যায় কিয়া'।
কাকিমা বললেন "নে ছার ।আচ্ছা বল তো মনোজ কোথায় গেল ?আচ্ছা ছেলে বাবা একাই সবকিছু করতে গেল নাকি? যা না কোথায় গেল তাকে সাহায্য কর।'
পার্থ বলল 'সত্যিই তো আমি তো বললাম আমি যাব সাথে। একাই চলে গেল নাকি?'
এতক্ষণ পর সোনাই বলল'আমি যাব।'
মধুজা সোনা এর কথা শুনে খুব খুশি হলো আর বলল "তুমি যাবে সোনা। তুমি কাকাইয়ের সাথে যাবে?'
"আমি কাকা ইএর সাথে যাব আমি কাকাই এর সাথে যাব।"
সোনাই আজকাল যে কথা বলছিল না তারপর কাউন্সিলিং করাতে করাতে যে কথাটা এখন বললে সেই কথাটা বারবার রিপিট করে যায়।
মধুজা ওতেই খুশি। খুব উৎসাহিত হয়ে বলল
'ঠাকুরপো ওকে নিয়ে যাও।'
পার্থ বলল" বাবা তুমি যাবে আমার সাথে।"
সোনাই বলল "আমি কাকাইয়ের সাথে যাব।'
"তা বেশ চলো আমার সাথে।;
এর মধ্যেই রেখা ফ্রেশ হয়ে গোপালকে ভোগ চাপিয়ে নিচে নামল।
কাকিমা বললেন" লক্ষ্মীমন্তবউ দেখিনি বাইরে যায়, সংসার এ কাজ করে আবার দেখো পূজা-অর্চনা ও ঠিকঠাক করে।"
চৈতির মা বলল 'একদম ঠিক বলেছেন কাকিমা আপনাদের বাড়িতে তো দুটো বাড়ির পরে আমরা তো তার পাশেই থাকি ।এই দিদি যেখানেই যাক যত রাত্রেই ফিরুক ঠাকুরকে কিন্তু সেই সময়ে ভোগ চাপাবেন এসে।'
কাকিমা বললেন "কী করবে একা মানুষ ঈশ্বর বুঝবেন যে উপায় নেই তাই যে সময়ে কাজে থেকে আসে সেই সময়ে তাকে ভোগ নিতে হবে।
চৈতির মা বললেন ও বাবা এ বাড়ির কাকিমা তাই নিয়ে কত কথাই না দিদিকে শুনিয়েছেন।'
কাকিমা বলেন"ওই দিদি চিরকালই ঐরকম বলতে নেই কিন্তু বলতেই হয় মাঝে মাঝে ,নিজে কাজটা ঠিকঠাক করেন না কিন্তু অথচ বউ
খুঁ ত ধরার জন্য পেছনে পড়ে আছেন।'
"তা আর বলতে কাকিমা আজকে যদি ওই কাকিমারা বাড়ি থাকতেন এত ঘটা করে কিছু হতো?"
তারপর তো শুনেছি চৈতির মা উনি নাকি বৌমার ঘরটা এসেই দখল করেছেন।
একদমই ঠিক শুনেছেন।
রেখাটা ও তেমন কি দরকার ছিল ছাড়ার।
চৈতির মা বলল "দিদি ওরকমই।
চিরকাল শুধু নিজেরটা ছেড়ে দেবেন।
এর মধ্যেই রেখা ভোগ চাপিয়ে নিচে এসে দাঁড়ালো।
কাকিমা বললেন "বৌমা এসো ,আমার পাশে বসো তো মা। "
এর মধ্যে মনোজ পার্থ হই হই করতে করতে ফিরল সঙ্গে একটা বড় কেক।
কাকিমা বললেন" বৌমা (মধুজা) টেবিলটা সাজিয়ে ফেলো।
চৈতির মা আর মধুজা বলল" হ্যাঁ ,তাড়াতাড়ি সাজিয়ে ফেলুন এত দেরি হয়ে গেল।'
কাকিমা বললেন"দাদুভাই ,তুমি কোথায় গিয়েছিলে? তোমার হাতে কি ওটা?"
চকলেট চকলেট।
দাদুভাই আমার কোলে এসো।
সোনাই কাকিমার ভুলে গিয়ে বসলো।
বৌমা দেখ ওখানে পায়েস রাখা আছে ওটা দিয়ে ফেলো।
রেখা বললো 'কাকিমা পায়েস করেছেন?'
কাকিমা বললেন আমার এই মেয়েটার জন্য আমি পায়েস করব না ?যখন জানতে পেরেছি।'
জানেন কাকিমা আজকে না আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে মাও কিভাবে পায়েস করে দিতেন আজকে যেন আপনাদের মধ্যে দিয়ে ফিরে এসেছেন।
কাকিমা রেখাকে কাছে টেনে বুকে টেনে নিলেন মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বললেন' হ্যাঁ তো মা আমরা তো মায়ের মতই।'
পার্থ আর মনোজ বলল আর মেয়েকে আদর করতে হবে না আজকে অনেক স্পেশাল এবার ছাড়ো।
তারপর যথারীতি টেবিলে কেক সাজিয়ে পায়েসের বাটি রেখে জন্মদিনের সেলিব্রেশন হল তবে প্রথমে কাকিমা বললেন আগে পায়েস খাওয়ানো হোক। তারপরে কেক কাটা হবে। যতই হোক আমরা বাঙালি তো না কিরে?"
মনোজ আর পার্থ বলল 'একদম ঠিক কথা।"
কাকিমা মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন।
সঙ্গে একটা ভাগবত গীতা উপহার দিলেন।
বাকিরা যেগুলো আমি পছন্দ করি সে রকমই উপহার সাজিয়ে দিলেন আজকের দিনটা উপহার পাওয়ার চেয়েও বিশেষ দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করা হলো এটাই যথেষ্ট নইলে তো নিজের জন্মদিনের কথা ভুলেই যেতে বসেছিল। শুধুমাত্র কাকিমা আছেন বলে জন্মদিনের দিন প্রতি বার মনে করিয়ে দেন আশীর্বাদ দেন ।এবার নতুন করে এখানকার কাকিমা, চৈতির মা ,পার্থ আরো যারা আছে ওদেরও মনের কুঠুরীতে আমার জন্মদিনের তারিখটা মনে থাকবে।
রেখার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মায়ের উদ্দেশে প্রণাম করলো।
এবার পার্থ বলল এবার বৌদি একটা গান।
রেখা বললো 'আবার গান?'
অবাক হবার কিছু নেই পার্থ মনোজ বাকি সবাই বলল। নাও নাও শুরু করে দাও।
দেখা গান ধরল রবীন্দ্র সংগীত প্রাণ ভরিয়ে,তৃষা হরিয়ে, মোরে আরো আরো দাও প্রাণ…।'
কি অসাধারণ গাইলে রেখা ।রেখার গলা তো খুব সুন্দর ।কাকিমা বলেন প্রাণটা জুড়িয়ে গেল রেখা। "এবার বাকিরা বলল এবার একটা কবিতা শুনিয়ে দাও। তোমার কবিতা না অন্য কারোর কবিতা করবে?
রেখা বলল" না, আমার কবিতা আমি বলব না সেটা তোমাদের পড়ে নিতে হবে সকলকে। আমি কবি' দেবব্রত সরকারের 'কবিতা আবৃত্তি করছি"'
গভীর রাতের কবিতা
"আকাশটা বিদ্রোহী হয়ে আছে আমার দিকে
….
..
…
তুমি চেয়ে থাকো আশা ও চাওয়ার মাঝে শুধু রাত আর দিন ভাগ করে দিয়েছো কিন্তু গুনতে দাও নি।
তাই বলে আমার বোধের ঘরে যে আঁচড় দিলে
তাকে তুমি মাফ করে দিও সে যে নির্বোধ ছিল।"
অসাধারণ অসাধারণ বৌমা,
তুমি সৃজনশীলতায় রত থেকো।
মধুজা এসে রেখাকে জড়িয়ে ধরল।
চৈতির মা বলল 'সাবাস সাবাস।'
পার্থ বলল" বৌদি আপনার ভেতরে লক্ষ্মী-সরস্বতী দুটোই কাজ করছে।'
মনোজ বলল "আর বোলো না পার্থ, ওর কিন্তু গর্বে এমনিতেই বুক ফুলে গেছে এবার বুক যদি 34 ইঞ্চি হয়ে যায় তাহলেই মুশকিল আমার পক্ষে ।(হেসে হেসে )।
ঠিক আছে এবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কি কি মেনু হয়েছ
ঐতো মটন বিরিয়ানি, চিকেন চাপ।
কাকিমা বললেন আমি কিন্তু আসলে মাছ মাংস খাব না।
পার্থ বলল' সেটা কি আমরা জানি না
মা ।তুমি যে বাবা মারা যাবার পর থেকে এসব খাও না।,'
তোমাদের জন্য ফাইড রাইস আর হচ্ছে পনির রেজালা।
বাবা এত কিছু?
পার্থ বলল আরো আছে মিষ্টি আছে আইসক্রিম আছে, পান আছে।'
সব খাওয়া দাওয়া সকলে বাড়ি চলে গেল।
রেখা মনোজকে বলল 'হ্যাঁগো আমাদের বাচ্চাগুলো খেয়েছে?"
"হ্যাঁ ওইতো বাইরে বেরোনোর সময় ওদের কেউ খাবার খাইয়ে দেয়া হয়েছে।'
মনোজ রেখার কাছে এসে বললো' কি তুমি হ্যাপি তো?"
রেখা মনোজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রেখাকে কাছে টেনে কপালে একটা মিষ্টি উষ্ণ চুম্বন এঁকে দেয়।
রেখা মনোজের বুকে মাথা রেখে বলল "আজকের দিন টা সত্যিই এত কিছু যে আমার প্রাপ্তি ছিল ,আমি ভাবতে পারি
নি।
মনে ছিল এখন সেটা বুঝতে পারলে তো?
রেখা বলল 'একদম ।আজকের স্বর্ণালী সন্ধ্যার শুধু ভালোবাসা ,শুভেচ্ছা প্রাপ্তির রেশ রয়ে যাবে দীর্ঘ ক্ষণ। এটা আমার মনকে আরো বেশি এনার্জিটিক করে দিল।
'
মনোজ রেখাকে দুই হাত দিয়ে গাল দুটো ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল'; তাই???