১১ মার্চ ২০২২

কবি সানি সরকারের কবিতা




পোড়া পাখি
সানি সরকার



আমার জ্বর হয়েছে। পুড়ে যাচ্ছি 

অতঃপর, দেখলাম 
আমাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল 
গলিয়ে ফেলা হল ধাতুর মতন... 

আমার কান্না পেল না 
আমার শুধু দেখতে ইচ্ছে হল 

তোমাকে 

পাখিটি ডাকছে? 
পাখিটি ঘুমিয়ে পড়েছিল? 

ঘুম ভাঙার পরে পাখিটি ডাকছে আবার?

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৩০




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৩০
পরান বীণা সুরে সুরে ভরে যাক
মমতা রায় চৌধুরী

যাক বাবা শেষ পর্যন্ত রাজি করানো গেল।এবার শুভস্য শীঘ্রম। শেষ পর্যন্ত পরিণতি পাক এটাই প্রার্থনা। আজকে পার্থ কত খুশি ছিল ।সত্যিই তো তাই। মনের মানুষকে যদি কাছে পায়,আরো আপন করে পায় । তার চেয়ে সুখী আর কে আছে। রেখা মনে মনে বারবার বলতে থাকলো 
'ভগবান ওদেরকে সুখী করুন। ওদের দাম্পত্য জীবন মধুর হোক,সুখের হোক ,আনন্দের হোক,বিশ্বাসের হোক ,বন্ধুত্বের হোক। এভাবে ওদের পরান বীণা সুরে সুরে ভরে যাক।
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকছে। বাড়ির দরজা হাট করে খোলা।কে এসেছে রে বাবা।
রেখা আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢোকার মুখেই শুনতে পেল মনোজের মগজ ধোলাই হচ্ছে।
'এত আস্কারা দিস না বউকে।একে তো চাকরি করে, তারপর সব ব্যাপারে যদি সাপোর্ট করিস বুঝতে পারছিস??'
মনোজ বললো 'ওএমন কিছু করে না তো যার জন্য ওকে সাপোর্ট করবো না?'
', মা ভাইকে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই। ওর ভালো ও বোঝে না। ওরে আমরা কি তোর  শত্রু।'
'কি বলব বলো তো?'
'এই যে পাড়া-প্রতিবেশী যে যখন ডাকছে অমনি তাকে চলে যেতে দিস ।পাড়া-প্রতিবেশীরা ওর মাথা খেতে পারে না ?'

'কি যে বলো না মা ,এতদিনকার সম্পর্ক পার্থদের সঙ্গে।  ওর মা রেখাকে ভালবাসে ।যেতে দেবো না?'
''তোকে কে বোঝাবে বল বাবা। তোকে যে বুঝিয়ে রেখেছে এর বাইরে তো তুই যাবি না । যোগ,বিয়োগ গুন ,ভাগ সবই করে রেখেছে আর কি করবি?'
মনোজ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে । ভূত দেখার মত দেখে রেখা কে।
একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে' তুমি কখন আসলে?'
'এইতো এক্ষুনি ঢুকলাম।'
'ও আচ্ছা।'
'মিলিরা কিছু খেয়েছো গো?'
'না কিছু বিস্কিট দিয়েছি ওদের।'
রেখা যেসব কথা শুনতে পেয়েছে মনোজকে হাবে ভাবে বুঝতে দিলে হবে না।
 বিষ যেমন করে কন্ঠে ধারণ করেছিল নীলকন্ঠ, ঠিক তেমনি করেই রেখা ও মনের ভেতরে সব রেখে দিল।
মনোজ মনে মনে ভাবল 'যাক শুনতে পায়
 নি ।না হলে কি ভাবতো? থ্যাংকস গড।'
জোড়হাত করে প্রণাম করে ভগবানের উদ্দেশ্যে।
রেখা বলল' কি হল?'
মনোজ বলল হেসে' কিছুই না।'
'কি খাবে তোমরা আজকে?'
'কি আবার রুটি।'
'কী সবজি বানিয়েছ গো সকালে?'
"ব্রকলি উইথ আলুভাজা।'
"বাহ, বেশ বেশ ।'
"মায়েরা কি খাবে?'
'দাঁড়াও জিজ্ঞেস করি।'
বলেই মনোজ  ঘরের ভেতরে গিয়ে বলল
' মা ,দিদি তোমরা কি খাবে রাত্রে?'
'আমরা তো ভাত খাই।
ভাত করবে আর  দুপুরে তরকারি করাই ছিল।'
মনোজ বলল 'ঠিক আছে'
।মনোজ রেখাকে এসে বলল ' ভাত খাবে?
রেখা বলল' ঠিক আছে। রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আবার ফিরে এসে বলল শোনো একটা কথা আছে।'
উৎসুকভরে মনোজ বলল' কি কথা গো?'
'কালকে কিন্তু আমি স্কুলে যাব কামাই করব না।'
'হ্যাঁ অবশ্যই যাবে।'
"রান্নাবাড়া?'
'যেটুকু পারবে তুমি করে রেখে যাবে। বাকি মা 
দিদিরা করবে ।'
'ঠিক আছে এটাই বলার ছিল।'
রেখা রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো এমনিতেই লেট হয়ে গেছে। ভাত চাপিয়ে দিয়ে মিলিদের
তরকারি গরম করলো। তারপর মিলিদের খাবারটা দিতে গেল।
"পাইলট তুলি উঠে পড়ো সোনা খাবার খেয়ে নাও।
সবাই লেজ নাড়তে নাড়তে এসে আগে রেখাকে একটু আদর করল তারপর খাবার খেতে শুরু করল।
ইতিমধ্যে রেখা পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে মনোজ এসে দাঁড়িয়ে।' একি তুমি?'
'হ্যাঁ l দেখতে আসলাম।'
'তাহলে তুমি দেখো। আমি যাই।'
রেখা চলে যাচ্ছে, তখন মনোজ বললো
"  অ্যাই রেখা ,শোনো, শোনো।'
রেখা পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে' কি হলো?"
মনোজ কাছে এসে ফিসফিস করে বলল 'এই পার্থদের ওই ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে মাসিমা?'
রেখা হেসে  বললো 'অনেক কষ্টে রাজি করে নিয়েছি ।দেখা যাক।'
এদিকে মনোজ আর রেখা খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলছে ,সেটা মনোজের দিদি আর মা দেখে  মনোজকে একসাথে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছিলো না । কিন্তু মনে মনে গজগজ করতে করতে ঘরে ঢুকে গেল। মনোজ বলল 'তাহলে এতদিনের স্বপ্ন ওদের পূরণ হবে বলো?'
রেখা বলল'সে রকমই তো হবার কথা। আজকে পার্থকে দেখে যেটা আমার মনে হয়েছে, এতোদিন একটা চিন্তায় ছিল ওদের ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে কিনা সংশয় ছিল মনে। তবে আজ ওকে দেখে আমার যেটা মনে হল ওর সমস্ত হৃদয় আকাশ সোনালীর ভালোবাসা। মনোজের  স্বপ্নচূড়া জুড়ে রয়েছে।'
'যাক একটা ভালো খবর শোনালে।'
অন্যদিকে মনোজের মা বাজখাই গলায় বলল'হ্যাঁরে মনু তোদের গল্প হল ।এদিকে ভাতের অবস্থাটা কি হচ্ছে দেখতে বল বৌমাকে।'
এতক্ষণে গায়ের জ্বালাটা যেন পারলো
 জুড়াতে ।
রেখা দ্রুত রান্না ঘরে এসে দেখলো ভাতের জল অনেকটা কমে গেছে।
তাড়াতাড়ি ভাতে জল দিল।
এমন  সময় রেখার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের আর্তনাদে রেখার শাশুড়ি মা  বিরক্ত হয়ে বলল
"হ্যাঁরে মনু কার ফোন বাজছে?'
"মনু অ্যাই মনু ,মনু…"
মনোজ বাথরুম থেকেই সাড়া দিলো 'আমি বাথরুমে আছি মা'।
রেখা ঘরে গিয়ে ফোনটা ধরল।
'হ্যালো'
'হ্যাঁ বৌদি, পার্থ বলছি।"
"হ্যাঁ বল ভাই।'
'অনেক ধন্যবাদ।'
'ও বুঝেছি আগে পুরো কাজটা করতে দাও।'
'মনে তো হচ্ছে পুরো কাজটাই হবে।'
'ঠিক আছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হবে না।
তোমাদের ভালোবাসা পরিণতি পেলে আমারও খুব ভালো লাগবে।'
'এই জন্যই তো এতটা দিন অপেক্ষা করছি বৌদি।
ওকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে গ্রহণ করতে পারতাম না।"
'তবে একটা কথা বলি ভাই সোনালীকে বলে দিও এ বাড়িতে এসে মাসিমার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করতে।মাসিমাকে আপন করে নিতে চেষ্টা করে যেন।'
"সে কথা আমি ওকে বলেছি বৌদি ।'

'কিছু মনে করো না ভাই  । কেননা মাসিমার মনে তো একটু দ্বিধা আছে ,হয়তো মাসিমা তাড়াতাড়ি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে না ।সোনালীকে চেষ্টা করতে হবে সেটা।'
'একদম ঠিক কথা বলেছো বৌদি।'
'ঠিক আছে ভালো থেকো সবাই।'
মনোজ টাওয়ালে   হাত মুছতে মুছতে বলল 
"কে ফোন করেছিল গো।'
ফোনটা কেটে রেখা বলল 'ও  পার্থ করেছিল।'
"খুব খুশি না পার্থ ।'
রেখা একগাল হাসল।
'শোনো শিখার বিয়েতে কিন্তু যেতে হবে।'
'কবে বিয়ে আছে গো?'
'এই তো এ মাসেই বিয়ে।'
'দেখি কি হয়?'
'দেখলে হবে না সুরো কিন্তু ভীষন রাগ করবে আর মাধুও ।'
"শিখা তো তোমার একজন পরম ভক্ত। না গেলে হয়।'
রেখা ঘাড় নাড়লো তারপর বললো' ঠিক আছে যাই ,ওদিকে ভাত হয়ে গেলো  তোমাদের খাবার ব্যবস্থা করি।'

রেখা রান্নাঘরে গিয়ে ভাতের ফ্যান ঝরিয়ে ঝটপট রুটি করে ফেলল।
আবার ফোন বেজে উঠলো মনোজের ফোনে।
মনোজ ফোনটা ধরে বলল ''হ্যালো'।
"হ্যাঁ রে সুরো বলছি।'
'হ্যাঁ বল সবাই ভালো আছিস?'
'ভালো আছি। আজকে  রেখাকে পাবো তো নাকি রে।"
'পাবি রান্নাঘরে আছে ।দেখছি দাঁড়া।'
মনোজ চেঁচিয়ে বলল ', রেখা, রেখা, অ্যাই রেখা তোমার ফোন আছে।'
'যাই ।আবার কে ফোন করল?'
বেসিনের কল টা ছেড়ে আটার হাতটা তাড়াতাড়ি  ধুয়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ছুটে আসলো
' কে ফোন করেছে?'
'ফোনটা ধরো তাহলেই বুঝতে পারবে।'
' হ্যালো'।
"রেখা আমি সুরঞ্জনদা বলছি।'
:'হ্যাঁ দাদা বলুন  ভালো আছেন সবাই।'
'সবাই ভালো আছি  আরো ভালো থাকবো, যদি তোমরা সবাই আমার বাড়িতে আসো শিখার
 বিয়েতে। শিখার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো তো?'
"হ্যাঁ, দাদা শুনলাম।'
"শুনলে তো হবেনা এবার এসে তো সবকিছু অ্যারেঞ্জ করতে হবে ।মাধু একা পড়ে যাবে
 তো । তোমরাএসো তাহলে খুব ভালো লাগবে আর না কথাটা কিন্তু শুনবো না ।ঠিক আছে।'
"তা অবশ্যই চেষ্টা করব।'
'চেষ্টা করব কথাটা বলো না রেখা। বলো যাব আর শিখা কিন্তু তোমার একজন পাঠক হিসেবে ভীষণ ভক্ত। সুতরাং তুমি না আসলে ও খুব কষ্ট পাবে।'
'হ্যাঁ দাদা যাব। শিখাকে আমার অনেক ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা জানাবেন।'
'সে আমি জানিয়ে দেবো কিন্তু তোমাকে কাছে এসে জানাতে হবে।'
রেখা হো হো হো করে হাসতে শুরু করলো তারপর বললো '
"মাধু বৌদি কেমন আছে দাদা?'
' শিখার বিয়ে বলে কথা ।ওকে তো ননদ হিসেবে কখনো দেখেনি ।মেয়ে হিসেবে দেখেছে। আনন্দ যেমন হচ্ছে তেমনি ভেতরে একটা কষ্ট রয়েছে চলে যাবে শ্বশুর বাড়ি  সব মিলিয়ে রয়েছে।'
'ঠিক আছে রাখছি তাহলে। তোমাদের কিন্তু অবশ্যই এক সপ্তাহ আগে আসার কথা। তোমারা সেই ভাবে প্রিপারেশন নিয়ে আসবে।'
রেখা আশ্চর্য হয়ে বলল' কি ?এক সপ্তাহ!'
সুরঞ্জন বলল' আমি বলেছি যখন…..আমি কোন কথা শুনব না ।রাখলাম ।সবাই ভালো থেকো আর তাড়াতাড়ি চলে এসো।'
মনোজ বলল 'দেখলে না গেলে হবে?'
রেখা সংশয় আর চিন্তাগ্রস্থভাবে বলল 'সে তো বুঝলাম কিন্তু আমার এই বাচ্চাগুলোর খাবার দাবারের ব্যাবস্থা।'
মনোজ বলল' সে ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবে
 না ।আমি সেটা ভেবে রেখেছি ।সেটা করেও দেবে দরকার হলে কিছু টাকা পে করে দেব?'
রেখা বলল' কে গো?'
"কেন আমাদের গৌরী সেন দা",।
রেখা হাসতে হাসতে বলে' তুমি পারোও বটে। এসো এসো খাবে এসো। সে পরে ভাবা যাবে।'
কতদিন পরে যেন রেখার মনে হল প্রাণখুলে মনোজ হাসল। রেখার মনের থেকে চাপ অনেকটা কমলেও মনোজকে এভাবে হাসতে দেখে খুব খুশি হলো রেখা। মনজ কি কোন কিছুতে জড়িয়ে আছে ,যার জন্য মাঝে মাঝে এরকম ব্যবহার করে পরিষ্কার করে তো কিছু বলেও না।'
যাক টানাপোড়েনে মনের কালিমা দূরীভূত হোক।
সকলের হৃদয় বীণা সুরে সুরে ভরে উঠুক 

মমতা রায়চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১২৯




উপন্যাস 


টানাপোড়েন  ১২৯
মনের হদিশ কে বা জানে
মমতা রায়চৌধুরী

রেখার গোধূলি বেলা আজ শুধু অন্য ভাবনায়
কেটেছে। সন্ধ্যেবেলাটায়  রয়ে গেল তার রেশ। একরাশ টাটকা বাতাস এসেছিল বহুরূপী নৃত্য প্রদর্শনে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার সময়  হঠাতই বেখেয়ালি মনে আসে ঢাকঢোল পেটানোর আওয়াজ ,ভাবনা চলে যায় অন্য
 জগতে ।তাড়াতাড়ি উঁকি দিয়ে  দেখতে থাকে কি হচ্ছে। মিলি, চুনু,কটা ওরা এত জোরে চেঁচাচ্ছে
 বাধ্য হয়েই তাকাতে হল ,ব্যাপারটা কি ,দেখার জন্য।
'ও বাবা কতদিন পর বহুরূপী।'
এই সব শিল্পীদের কদর কোথায়? হারিয়ে যেতে বসেছে।
বহুরূপ  ধারণ করে কিছু টাকা উপার্জন করে তারা যেভাবে  মানুষের মনোরঞ্জন করছে, উপরী পাওনা হিসেবে মানুষের মনের খিদেটা উপশম হয় বটে
কিন্তু যারা বহুরূপী সেজে মনোরঞ্জন করল তাদের ভাড়ারে কি থাকলো? এটা আমরা কেউ চিন্তা করিনা।
দু এক টাকা দিতেই হাত কেঁপে ওঠে।
রেখার ইচ্ছে হয়েছিল কিছু টাকা ওদের দেয় কিন্তু টাকা বের করে নিচে নামতে নামতে ই বেরিয়ে যায়।
'একজন '' আরেকজন' পার্বতী 'বেশ দারুন লাগছিল?
হঠাৎই শাশুড়িমা আর মনোজের চিৎকারে রেখার ধান ভাঙ্গে।
রেখা ব্যালকনি থেকে কান খাড়া করে শোনে
'বুঝলি মনু চা কিন্তু আর সঠিক সময় পেলাম না?'
মনোজ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তাইতো কি করছে রেখাটা মা এসেছে কোথায় একটু তাড়াতাড়ি করে দেবে তা নয়।
মনোজ আবার ডাকে' রেখা ,রেখা ,রেখা।'
রেখা বেলকনি থেকে উত্তর দিল 'কি বলছ?'
মনোজ বেশ নিচু গলায় বলল 'চা টা দাও?'
'হ্যাঁ দিচ্ছি।'
রেখার শাশুড়ি মা আবার পিএনপিসি শুরু করে দিল। "হ্যাঁ রে মনু ,তোকে কি এই ভাবেই চেয়েছে চা খেতে হয়?
'কেন বলতো?
'না তাই বলছি।'
'না তো?'
"তাহলে কি আমাদের দেখে চা করতে লেট করছে?'
'কোন কিছু করছিল হয়তো?
'ওরকম নয় মা তুমি ওরকম ভেবো না।'
মনামী ওর মাকে ধাক্কা দিয়ে ইশারা করে দেখালো 'দেখলে রেখার নামে কিছু শুনতে চায় না।'
রেখা চা করতে গেল একদিকে চায়ের জল বসিয়েছে অন্যদিকে কুকিজ বিস্কুট নিয়ে গিয়ে মিলি তার বাচ্চাদের খাওয়ালো।
তারপর যথারীতি চা বানিয়ে প্লেটে করে সাজিয়ে নিয়ে গিয়ে দিল।
শাশুড়ি মা প্লেটের দিকে তাকিয়ে কিছু স্নাক্স দেখতে  না পেয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল আজ বোধহয় চায়ের সাথে বিস্কুট খেতে হবে বুঝলি?
তাই তো দেখছি।
কথা শুনে তারপর বাইরে এসে রেখাকে বলে চায়ের সাথে কিছু বানিয়ে দিলে না কেন?
রেখা কোন কথা বলে না তারপরেই ফিশ ফ্রাই  শাশুড়ি, ননদ, মনোজকে দেয়।
মনোজ বলল 'দেখলে মা তোমাকে বলতে হবে না ও কিন্তু ঠিকঠাক সাজিয়ে দেয়,.'
রেখা তখন রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিল সব কথা কানে আসে।
ফিশ ফ্রাই টা কেমন হয়েছে রে দিদি!
হয়েছে একরকম।  
মনোজ বাইরে বেরিয়ে এসে রেখাকে জিজ্ঞেস করল 'হ্যাঁগো ফিশ ফ্রাই কাকে দিয়ে আনালে?'
'পার্থ কে বলেছিলাম।'
'আমি একটু পার্থদের বাড়ি যাচ্ছি।'
মনো জ বললl' কেন?
আরে সেদিন বলল না যে আর কথা তারপর তো আর যাওয়া হয়নি। ফোনেও আবার বলল।
যাও গিয়ে দেখো কিছু করতে পারো কিনা?
আমার যদি একটু ফিরতে দেরী হয় তাহলে মিলিদের একটু খাবার টা দিয়ে দিও।
ঠিক আছে।
পার্থদের বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে মা মেয়ে দুজনেই কানাকানি শুরু করে দিল।
একটা কেমন অশালীন ইঙ্গিতও করলো।
রেখা দেখেও না দেখার ভান করল।
রেখা বেরিয়ে গেল পার্থদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রাস্তায় যাওয়ার সময় চৈতির মার সঙ্গে দেখা।
ও দিদি কোথায় চললেন গো?
এইতো পার্থদের বাড়ি যাচ্ছি।
কেন কিছু হয়েছে?
চৈতির মার সব সময় একটা কেমন যেন কৌতুহলী মনোভাব সবকথা জানতেই হবে এই জন্য মাঝেমাঝে রেখা চৈতির মার ওপর একটু বিরক্ত হয়।
"না না ওর মা ডেকে পাঠিয়েছে?'
'ও তাই বলুন।'
'তোমরা কবে ফিরলে?'
এইতো গতকাল।'
চৈতি রা কেমন আছে?
ভালোই আছে।
ঠিক আছে ,দিদি আসছি।
রেখাও ঘাড় নাড়লো। তারপর পার্থদের বাড়ি ঢুকলো।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে পার্থ এসে দরজা খুলল।
পার্থ একগাল হেসে বলল এসো বৌদি, এসো।
দরজা লাগাতে লাগাতে বললো ও মা মা, দেখ কে এসেছে?
পার্থর মা শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল টিভির আওয়াজ টা কমিয়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে বলল কে এসেছে?
বলতে বলতেই রেখা গিয়ে হাজির হল 
পার্থর মা বললো' ওমা ,ওমা তুমি?'
যেন একেবারে ভূত দেখার মত দেখল।
আজকাল তো আসই না। ভুলে গেলে বৌ মা?
রেখো এক গাল হেসে বলল কি যে বলেন না মাসিমা?
তাহলে আসলাম কি করে বলুন?
এসো মা এসো, আমার পাশটায় বলেই হাত ধরে টেনে বসান।
তোমার শাশুড়ি মা এসেছে শুনলাম।
হ্যাঁ মাসিমা।
উনারা এখন থাকবেন এখানে?
হ্যাঁ শাশুড়ি মা থাকবেন।
থাক ।ছেলে, ছেলে বউ থাকতে অন্য জায়গায় থাকতে ইচ্ছে করে ?ভুল করেছিলেন।
গলাটা বাড়িয়ে পার্থর মা পার্থকে উদ্দেশ্য করে বলল 'হ্যাঁ রে যা না বাবা।'
'হ্যাঁ মা যাচ্ছি।'
পার্থ কোথায় যাচ্ছে মাসিমা?
কোথাও না তুমি বস তো।
না মাসিমা কিছু আনাবেন না যেন।
আরে না না সন্ধ্যেবেলায় আমরা তো কিছু খাবো নাকি?
হ্যাঁ সে আপনার খান।
বেরোনোর সময় পার্থকে রেখা বলল ও পার্থ তুমি কিন্তু আমার জন্য কিছু এনো না ।তুমি তো জানো বাড়িতে তুমি এত কিছু পাঠিয়েছো!
আরে না বৌদি তোমার অনারে যদি কিছু হয় আমাদের।
বলেই হাসতে শুরু করলো।
"কতদিন আসনা মা?'কদিন ধরেই ভাবছিলাম মাসিমা আসব আসব আসার হয়ে উঠল না এদিকে শাশুড়ি মা ,ওরা এসেছেন। তাই আজ সন্ধ্যাবেলায় বেরিয়ে আসলাম হুড়মুড়িয়ে। তোমরা কিছু উল্টোপাল্টা ভাবতে বসে আছে কিনা কে জানে?
কি আর ভাববে তুমি তো আমাদের বাড়িতে এসেছো না?
আসলে স্কুল থাকে তো মাসিমা?
 হ্যাঁ সেইতো রোজ এত সকাল সকাল বেরিয়ে যাও স্কুলে আবার স্কুল থেকে ফিরে এসে কাজকর্ম থাকে তারপর হুটোপুটি করে ছুটে আসা বড় পরিশ্রমের ব্যাপার।
না পরিশ্রম আর কি এইটুকু আসবো সেটা নয় সময় করে উঠতে পারছিলাম না মাসিমা।
এবার পার্থ রোজি বলে মা ডেকে পাঠিয়েছে মা ডেকে পাঠিয়েছে?
আজকে দেখলাম না  আজকে স্কুল ছুটি ছিল।
ওদিকে আবার কাকিমা ফোন করেছিল যেতে বলেছে?
কেন গো উনারা সবাই ভাল আছেন তো?
মুখে তো বলছেন মাসিমা ভালো আছেন কাকার শরীরটা তো এমনিতে ভালো নেই এইবার যেতে হবে। আসলে মানুষের হুট করে যাব সেটাও ভাবছি..
পার্থনা রেখাকে কাছে টেনে বললেন এত চিন্তা ক'রো না বৌমা ।যাওয়া তো আর হয় না । উনারা এসেছেন বুঝবেন নিশ্চয়ই তোমার অধিক তাও তো দেখতে হবে বল?
হ্যাঁ সেই আর কি?.
তারপর মাসিমা বলুন কি জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন?
পার্থর বিয়েটা নিয়ে বড্ড ভাবাচ্ছে গো বৌমা?
এদিকে ও তো ঐ মেয়ে ছাড়া আর বিয়েও করবে না বলছে,?
কিন্তু তুমি তো জানো ওদের বাড়ির কথা।
হে মাসিমা বাড়ি যাই হোক না কেন মেয়েটা কিন্তু ভালো।
আমি চেয়েছিলাম বৌমা আমার ছেলের বউ সুন্দরী হবে ,শিক্ষিতা হবে, ঘরোয়া হবে ভালো ঘরের মেয়ে।
মেয়েটা সুন্দরই না হোক দেখতে খারাপ নয় কিন্তু?
হ্যাঁ ওইতো ফোলা ফোলা ঠোঁট চাপা গায়ের রং গালদুটো টোপা টোপা..
হ্যাঁ মাসিমা তবে মেয়েটার চোখ দুটো দেখেছেন বেশ সুন্দর ,টানাটানা ।অনেকটা চিতল হরিণ এর মত।
আর বাড়ির অবস্থা একটু খারাপ তাতে কি হয়েছে মেয়েটা গ্রাজুয়েট তো। শিক্ষিতা।
পার্থ মা চুপ করে থাকে।
এই আর আপত্তি করবেন না।
তাছাড়া ছেলের যখন পছন্দ। সংসার করবে ওরা। ওদের দিকে তাকিয়ে মেনে নিন।
তবু তবুও পার্থর চুপ করে থাকে।
মাসিমা কিছু বলছেন না?
আমার তো আর একটা ছেলে নেই যে তাকে দিয়ে মনের আশাটা পূর্ণ করব?
সব বুঝতে পারছি মাসিমা কিন্তু কি আর করবেন তবে এটুকু বলতে পারি মনে হয় খারাপ হবে না মেয়েটার সাথে এমনি কথা বলে দেখেছি আমি ।
মাসিমার হাত দুটো ধরে রেখা বলল  'মেনে নিন।
এরমধ্যেই পার্থ এসে হাজির।
ওমা গরম গরম সিংয়ের কচুরি, আলুর দম আর রসগোল্লা।
হ্যাঁ প্লেট নিয়ে আয় তো বাবা।
পার্থ রান্নাঘর থেকে আওয়াজ দিলেইতো নিয়ে যাচ্ছি।
পার্থ প্লেট এনে হাজির করল।
রেখাকে প্লেটে সাজিয়ে দিলো বললো খাও বৌমা।
এটা ঠিক হলো না মাসিমা আমি বললাম যে আমি খাব না।
পার্থ বলল' বৌদি, তোমার অনারের বলেছি না এজন্য আমরা ওই দুটো খাচ্ছি।'
সে ঠিক আছে তুমি এত কিছু এনেছো কেন?
আরও মা শোনো ভোলা ময়রার দোকান থেকে পান্তুয়া ও এনেছি।ওই দেখো ওই প্যাকেটে আছে।
আমি আর খেতে পারব না মাসিমা।
পার্থ বলল তা বললে তো হবে না বৌদি ভোলা ময়রার নাম জানো না আমাদের এখানে ওর দোকানের পানতোয়া শেষ হয়ে যায় আমি অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। একটা তো খেতেই হবে।
পার্থর মা বলল' খেতে হবে বললে হবে ,দে ওকে।'
পার্থ প্লেটে দুটো পা দিতে যাচ্ছিল তখন বললো ঠিক আছে আমাকে একটা দিয়ে দাও।
পার্থর মা বলল' তোর প্লেট টা নিয়ে যা বাবা।'
রেখা বলল ' আপনারটা মাসিমা?'
মায়ের জন্য ছানা এনেছি বৌদি।

তাহলে বৌমা ,তোমাকে তাহলে একদিন যেতে হবে আমাদের সাথে।
সময় করে আমাকে ব'লো। আমি সেইভাবে তাহলে কথা বলব।'
ঠিক আছে মাসিমা আমি জানিয়ে দেবো।
তাছাড়া বিয়ে দিলে তো তোমার সামনের বৈশাখ ছাড়া হবে ও না। ফাল্গুন মাস ওর জন্ম মাস।
ঠিক আছে।
খেতে খেতেই রেখার ফোন বেজে উঠলো'আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা...।'
পার্থ বলল বৌদি তোমার ফোনের রিংটোন দারুণ করেছ?
ভালো লাগছে পার্থ?
অসাধারণ।
দেখো কে আবার ফোন করলো।একবার ফোন হয়ে কেটে গেল।
মাসিমা বল্লো হুটোপাটি করে খেও না তো পরে ফোন ধরবে। 
না মাসিমা বাড়ি থেকে ফোন করছে কিনা কে জানে?'
করুক না?
রেখা এসে দেখল' হ্যাঁ ,স্কুল থেকে একটা ফোনএসেছিল?'
স্কুল থেকে ফোন করেছে।আমি ফোনটা করে নিই।
রেখা ফোন ধরাল। রিং হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিভ করলেন।
হ্যাঁ বড় দি ফোন করেছিলেন?
হ্যাঁ কালকে স্কুলে আসবে তো?
ইচ্ছে তো আছে বড়দি।
ইচ্ছেটাই যেন থাকে অনিচ্ছা যেন না হয় হাসতে হাসতে বলেন বড়দি।
কালকে তোমাকে স্কুলে আসতেই হবে যে করেই হোক ভাষা দিবস আছে প্রোগ্রাম সেট করবে?
ঠিক আছে বড়দি।
রাখি।
 হ্যাঁ দিদি, রাখুন।
পার্থর মা বললেন' মেয়েটার এত চাপ কেনো তুমি না গেলে কোন কিছুই হবে না?'
আসলে  প্রোগ্রামগুলো আমি অ্যারেঞ্জ করেছি তো জয়েন করার পর থেকেই আমার ওপর বাড়তি একটা চাপ রয়েছে।
পার্থ বলল 'ও মা, বৌদির আর একটা গুণ আছে জানো?'
পার্থ-মা উৎসুক ভরে ছেলের দিকে তাকিয়ে তারপর বললেন 'কি?
'বৌদি তোমাদের লেখিকা।'
পার্থ মা অবাক হয়ে বললেন লেখিকা বাহ খুব ভালো তো।'
'আমাকে লেখা পাঠিও তো বৌমা?'
'পাঠাবো।'
ইবাবা সাড়ে আটটা বাজে এখন উঠতে হবে 'মাসিমা। 
' উঠবে?'
'ঠিক আছে এসো তাহলে ওই কথাই থাকলো।'
'হ্যাঁ মাসিমা ,আপনি মনের থেকে ওইগুলো তাড়িয়ে দিন ওর ভেতরের ভালো গুণগুলো খোঁজার চেষ্টা করুন ।দেখবেন, একেবারে মনের মত হয়ে যাবে।'
আসলে আমি মনের মতো চেয়েছিলাম বৌমা?
'মনের হদিস কে বা জানে.. কি আছে তার মনের ঘরে, কেউ জানেনা কেউ জানেনা।'
'সে ঠিক আছে ওই আপনার মনের মত হয়ে যাবে দেখবেন।'
'তাই যেন হয় ঈশ্বরের কাছে তোমরাএই প্রার্থনা ই করো।
'তাহলে আসি?'




তুই নামুক অসুখ-
মিতা নূর



যদি আমি সব ব্যথা ভুলে যাই.....   
যদি ভুলে যাই তোর দেওয়া আঘাত.... 
তবে প্রতি রাতে তোকে ভেবে, শিশির চোখে কাঁদবে কে? 

যদি ভুলে যাই তোর দেওয়া, তোর প্রিয় নাম
যদি পুড়িয়ে ফেলি জমিয়ে রাখা,স্মৃতিদের খাম
তবে দিন শেষে একাকীত্বের ভার সইবে কে? 

যদি ঢেকে দেই হৃদয়ের আয়নায় রাখা, তোর প্রিয় মুখ...
যদি বেছে নেই ফের, নতুন কোনো সুখ...
তবে আমার মতো করে, তোকে ভালোবাস কে, শত বকুনি খেয়েও হাসবে কে..? 
তার চেয়ে ভালো, আমার ভেতরই থাকুক...
খুব করে , তুই নামুক অসুখ !!