০৫ এপ্রিল ২০২১

সুচিতা সরকার




ব্রাত্য



দলা পাকানো আবেগগুলি, 

এদিক ওদিক পরে আছে ছড়িয়ে।

ঠিক যেন পরন্ত শীতের , 

শুকনো ঝরা পাতা।


বহুকাল হয় রঙ লাগেনি ওতে।

কোনো এক বৃষ্টির সন্ধ্যায়,  

ঝলসে গেছিল গোটা শরীর, 

বিদ্যুতের ঝলকানিতে।


হঠাৎ ঝড়ে উপড়ে গেছিল শিকড়,

খসে পড়েছিল মনমাঝির রঙীন মুখোশটা।

ছেঁড়া পালটাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল

বহুদূর সেদিন, স্রোতের তীব্র টানটা।


ঋতু বদলের হাত ধরে , 

পাল্টেছে শহর, বদলে গেছে সব রঙীন গল্প।

পুরোনো অনুভূতিরা লুটায় অবহেলায়,

 ওরা আজ ব্রাত্য।

কবি মিশ্র




দেখা


রোজ তোর সঙ্গে দেখা হয়, রোজ

সকালে গরম চায়ের সঙ্গে

বিকেলের ঘুম ভাঙা আলসেতে

দুপুরে খাওয়ার টেবিলে এক

 টুকরো মাংসের সঙ্গে...

রোজ তোর সঙ্গে দেখা হয়, রোজ।


তারপর যখন রাতের অন্ধকারে

 আমি একা জোনাকির আলোর

 পেছনে ধাওয়া করি..

রিমঝিম বৃষ্টি দিনে একটা

 দুটো ফোঁটা মেখে নিই

 নিজের মধ্যে..

তখন ও...

তোর সাথে দেখা হয়...

এভাবে অনেকের সাথেই রোজ দেখা হয় .. রোজ

 

ছেলের পিয়ানোর টুং টাং শব্দে ঘুম ভাঙলে

জানালায় বুলবুলির খুটখুট শব্দে

ঝড়ের দাপটে পাশের আমগাছের ডালটা ভেঙ্গে পড়লে...

ফিঙে পাখির ডিমগুলো পড়ে যাওয়ায়.. চিৎকার করে জানান দেয় প্রকৃতিকে..


রোজ তোর সঙ্গে দেখা হয়.. রোজ..


অদৃশ্য উপস্থিতি, অজানা আতঙ্ক, অব্যক্ত যন্ত্রনা

সন্দেহ, সাবধানতা, সচেতনতা..


 এভাবেই নতুন করে খুঁজে ফিরি বাঁচার তাগিদে...


রোজ তোর সঙ্গে দেখা হয়... রোজ...

ওয়াহিদা খাতুন




 সনেট  স্রষ্টা নারীরও


বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব সৃষ্টি-ই স্রষ্টার,

পুরুষতান্ত্রিক এ সমাজ ব্যবস্থায়

সর্বকালেই নারী বঞ্চিতা,অসহায়;

তাদের উপরে চলে যত অত্যাচার,

ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা সর্বক্ষণ

জীবনসঙ্গিনীকে বানাই কৃতদাসী ;

সতীত্বের নামে নারী হয় বনোবাসী;

ধর্ম-ভয়ে সহ্য করে সব নির্যাতন !


আত্ম বিসর্জনে নারীর জান্নাত হয়,

ধর্মে-বিরুদ্ধচারী কার্যে পুরুষ লিপ্ত;

পাশবিক অত্যাচারে নারী থাকে ক্ষিপ্ত;

অজ্ঞতাবশত মনে সদা ধর্ম-ভয়;


নারী নয় ভোগ-বস্তু আছে তার মান--!

জ্ঞানচক্ষু দিয়ে দেখো শাস্ত্রের-বিধান--!!

বাহাউদ্দিন সেখ





নিশ্বাস

                


গরীব-ধনী উঁচু-নিচু জাতি ভেদা ভেদ

 বৈষম্য তুলেছে মানব কন্ঠের গান

 এই পৃথিবীর বন্দী ঘরে

কয়েকটা দিন

 রয়েছে আমাদের প্রাণ।

ভাঙ্গছে মসজিদ মন্দির অহংকারে

 বলো আল্লাহ ভগবান

একে অপরে মাঝে একি ধর্ম জাতি 

একই রক্ত

ভিন্ন ভিন্ন রক্তের অভিমান।

দিক বেদিকে চলছে একটি নদী

তবু তার শত শত ভিন্ন ভিন্ন নাম

কারো যাই মৃতদেহ লাশ হয়ে

 শ্মশানঘাট 

কারো বা যাই কবরস্থান...

মোঃ হা‌বিবুর রহমান




কষ্ট



কথায় ব‌লে "কষ্ট না কর‌লে কেষ্ট মে‌লে না"। আবার এও ব‌লা হ‌য়ে থা‌কে "ক‌ষ্টের প‌রে আরাম আ‌সে, দুঃ‌খের প‌রে সুখ" কিংবা "‌মেঘ দে‌খে তুই ক‌রিসনা ভয়-আড়া‌লে তোর সূর্য হা‌সে" ইত্যা‌দি।


মানু‌ষের জীব‌নে নানা ধর‌নের কষ্ট থা‌কে। কারো জীব‌নে হয়ত টাকার কষ্ট নাও থাক‌তে পা‌রে ‌কিন্তু এ‌মন মনঃকষ্ট আ‌ছে যে তা তার সারা জীব‌নের উপা‌র্জিত টাকা পয়সার বদ‌লেও সেই কষ্ট নিবারণ করা কোনভা‌বেই সম্ভব নয়। 


আবার কষ্ট না ক'‌র‌লে কি "সুখ লাভ হয় কি শুধু মহী‌তে"? ক‌ষ্টে ধৈর্য্য ধরা উত্তম ও বু‌দ্ধিমা‌নের কাজ। সৃ‌ষ্টিকর্তা, আল্লাহপাকও সেই রকম নি‌র্দেশই দি‌য়ে‌ছেন। কখনও নিরাশ হ‌ওয়া উ‌চিত হ‌বে না। 


আশা ক‌রি কষ্ট কি, মানুষ কেন কষ্ট পায় ও জগ‌তে কত ধর‌নের ক‌ষ্টে মানুষ কষ্ট পে‌য়ে থা‌কে সেই তপসারা গাঁ‌ঙে ছুঁ‌ড়ে ‌দি‌য়ে জ‌লে ভা‌সি‌য়ে দেই আজ ঠিক এ মুহূর্ত থে‌কেই। 


জগ‌তের সব মানুষ সু‌‌খে থাক; এমন‌কি পরম শত্রুও থাক সদা দু‌ধে-ভা‌তে।

স্বপন কুমার ধর



পসার


যখন বেণী ছোট ছিল,

মুখে থাকতো হাসি,

চারিদিকে আমরা সবাই,

বেণীর পিসি মাসী।

আলতো আলতো বলতো কথা,

সবারই মনে,আছে গাঁথা।

তারপরে সে স্কুলে গেল,

পড়াশুনায় মন দিল।

বড় হয়ে বিলেত গেল,

বাবা তার,জমি বিকোল।

মা বলেন - "যা আছে,যাক-

ছেলে আমার প্রতিষ্ঠা পাক"।

‌বিলেতে সে ডাক্তার হলো,

দেশে এসে পসার জমালো।

বাবা-মা তার বিয়ে দিলো,

মনের সুখে সে সংসার পাতলো।


বছর দশেক পরের ঘটনা,

বৃষ্টি পড়ছিল, সেদিন একটানা।

"বাবার ভীষণ শরীর খারাপ" -

চিঠিটা পড়েই যে,তার বিরক্তিভাব।

গ্ৰামে কী আবার যেতে হবে!

কে জানে ক'দিন কাটাতে হবে?

দিবারাত্রি দেখে সে পয়সার আলো,

রোগীর ভিড় যে হেথা,বাড়ছে ভালো।

চিঠি কয়েক এল মা'র,

সময় যে আর,কাটেনা তার।

সব চিঠিতে একই কথা,

"বাবার সাথে কিছু সময় কাটা,

সে যে তোকে দেখতে চায়,

শেষ বেলাতে তাই,তুই আয়"।


বাড়ির চাকর ভজু-টাকে,

বেণী পাঠাল অবশেষে।

গ্ৰামে পৌঁছে দেখে ভজু,

সবাই কেমন কাঁচুমাচু।

বুঝতে ভজুর হয় না দেরি,

মা'র পরনে যে,সাদা শাড়ি।

চোখের কোনে পড়েছে কালি,

সজল নয়নে বললেন খালি -

"বাবার হাতের শেষ লেখাটা,

ডাক্তারকে দিস এই চিরকুট টা"

তাতে ছিল লেখা - "প্রিয় বেণী,

কোনও দিন আমি স্বপ্নে ভাবিনি,

করেছি নিজেকে সদা নিঃশেষ,

পসার হোক তোর,অপার অশেষ"।

প্রেমাংশু শ্রাবণ এর দুটি কবিতা





বরষের তালপাতায় লেখা


শ্রীমতী খনার কথামালা
বরষের তালপাতায় লেখা
সভাসদগন বলেছেন অশ্বত্থগাছের ছায়ায়-----

ক্লান্তিহীন খনা তাকিয়ে আছেন
সংশয় ভরা আকাশের দিকে
আজ তার প্রবচন পরীক্ষার দিন।

উদ্দাম ঝড়ো বাতাসে খনা কাঁদলো,
দীর্ঘ বিরহের পর!
মেঘ কমারী ঝরালো বাণী ও প্রকরণের
অশ্রুবিন্দু!

খনার জটবাঁধা ধূসর কেশে
বৃষ্টির ফোটা ফোটা স্বর্ণকণা,
চোখে মুখে মুক্তির অভিমান এবং
প্রাপ্তির প্রচ্ছায়া।

খনা এখন দুরন্ত প্রকৃতিবালা
তার পেছনে ছুটছে
সভাসদরা-----
পালালো অন্ধকারে......

খনা আজও মূর্তিমতী।




সাঁতার জানে না নদী

পলাতক পাখির পালকে কুয়াশা ভরে নিলে 
উড়ে যায় দিগন্তের চিল 
নিশি স্রোতে ভেসে যায় 
দীর্ঘ সব মাতাল দেবদারু। 

দূর বনগ্রামে
ময়ূরের ডাকে জমা হয় মেঘ

প্রতিটি বৃষ্টির পর পরিত্যক্ত জলে 
পিঁপড়ের আশ্রম ভেঙে
গাঢ় হয় রাত

জাহাজ ডুবির পরে জেগে থাকে 
শুধু ঝিঁঝিঁর সাম্রাজ্য

জলডাকা রাতে 
সাঁতার জানে না নদী।

রেবেকা সুলতানা রেবা




 তবুও তুমি ভালো থেকো


সেই ছেলেটা ততোদিনি খুব ভালো ছিলো যতো দিন তুমি শব্দ টা তার সাথে মিলেমিশে  ছিলোনা। 

চুপি সারে এলো জানান দিয়ে  চলে গেলো 

ক্যানো এলো ক্যানো গেলো আজও জানা হলো না।


চলে গেলো ঠিকি তবে দিয়ে গেলো ব্যাথা বুকের ব্যাথা মুখে বলা  কি এতো সোজা?গভীর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গার কারন সে কোন দিন জানলোনা। 

তবুও তুমি ভালো থেকো।


তোমাকে ধরে  রাখার ক্ষমতা আমার নেই 

 কিন্তু ভালোবাসার ক্ষমতা তো  আমার আছে।


চলে যাচ্ছ যাও আমার ভালোবাসার সীমানা পেরিয়ে 

মনে রেখো এমন একজন কে তুমি পিছে ফেলে সামনে এগোলে সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে এখনো মোনাজাতে রাখে তার ভালোবাসা হয়তো তখন তোমার খুব প্রয়োজন ছিলো এখন হয়তো আর নেই।


রাতে যদি ঘুম না আসে 

বেলকুনির জানালা খুলে রেখো

ঝিরিঝিরি বাতাসে ঘুম আসবে 

দেখে নিও ঠিকি।


খুব যদি একা লাগে গান শুনো

মন ভালো হবে দেখে নিও।

তবুও তুমি ভালো থেকো।

ওয়াসিম খান




তবু চেয়ে থাকি 


তুমি যদি যোগ করো 

আমি করি গুন।

প্রেম প্রেম করো তুমি 

আমি খুঁজি মন । 


তুমি দেখ ভেদ ফল 

আমি দেখি ভাগ। 

তুমি হলে বিচ্ছেদ 

আমি অনুরাগ ।


তুমি কষো গনিতের 

লাভ ক্ষতি সূত্র। 

আমি লিখি স্মৃতিকথা

আবেগের পত্র। 


তুমি যাহা প্রেম ভাবো

শ্রাবণের বৃষ্টি।

আমি ভাবি ভালোলাগা

কামনার দৃষ্টি । 


তুমি আমি এক নয়, 

তবু চেয়ে থাকি ।  

দেখি আছে আর কত ?

রহস্য বাকী।

রাকিবুল হাসান




প্রার্থনা


দ্রষ্টা তুমি স্রষ্টা তুমি

তুমি মহীয়ান!


খালিক তুমি মালিক তুমি

তুমি গরিয়ান!


নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী

ওগো বিজয়দানকারী

ওগো উন্নতকারী!


আমি শূণ্য,নিরান্দ

নিরাশ্রয়

আমি কল্মষ

ওগো মার্জনাকারী

আমার দুষ্কার্য তুমি মার্জনা করো!


3শত দশ দিন পরে

এসে পৃথ্বীর বুকে

তোমার নাম শুনেছি মায়ের মুখে।


বলেছে খোঁকা!

আমি তোর মা- 

তবুও আমার কাছে কিছুই চাইবি না

চাইবি তোর স্রষ্টার কাছে-সে সর্বত্রময়!

সে মহৎ কৃপাময়!


তারই উপসনা করবি-বায়না ধরবি তার কাছে

ডাকবি বারংবার।


ওগো কল্যাণকারী 

অমুখাপেক্ষী

ওগো প্রার্থনা শ্রবণকারী

তোমার মায়াময় অঙ্গনে আমাদের আশ্রয় দাও

তোমার অনুকম্পাহীন আমরা যে এক্কেবারই নিরবলম্ব!