২২ নভেম্বর ২০২০

রণজিৎ সরকার



ক্যানভাস

তোমার এক চিলতে অনুভব ক্যানভাস জুড়ে

স্পন্দনে কাঁপে হৃদয়, দাঁড়িয়ে একটু দূরে

কে বলে তুমি নেই আছ বক্ষমাঝারে

সদা হাস্যে-লাস্যে কাটে সময় প্রহরে প্রহরে

কী বলে ডাকব তোমায় বল গোপনোচারী মনে 

ঘন তমসায় হৃদয় অরণ্যে আলোর বিচ্ছুরণে

স্ফুলিংগে খুঁজে ফিরি মুখ সতত কম্পিত মনে

দেখেছি বিরহডোরে নত আঁখি অনাভরণে

অলোক দাস এর মুক্তগদ্য

 একটি ছোটো স্বপ্ন

যার যা কাজ, ওপরে যা নিয়ম, এখানে ও তাই, সবাই ওরা সুখতারার দেশে, তবে "নায়ক " ছবিতে উত্তম ছাড়া হয় নাকি? সত্যজিৎ বাবু ঠিক করেছেন, কেউই চিরদিন এখানে থাকেনা চিরদিন, যেতেই হয় একদিন, তবুও মোন যেতে নাহি চায় এই পৃথিবী হতে, সিস্ট্রি, স্থিতি ও প্রলয়, এ চলেছে আদিকাল হতে, এটা বিধাতার নিয়ম, তাই ব্যাস্ত থাকা ভালো, মোন চলো নিজো নিকেতনে, যখন উত্তম ছিলো না, রমা রমা ডাকটা হেমন্ত দিয়ে  দিয়েছিলো, কেউ বুঝতেই পারলো না, এখন সৌমিত্রদা এমন  শুন্যতা দিয়ে গেলো, এ শুন্যতা পূরণ আর হবে না, আজ বাংলা সিনেমা জগৎ এক অভিবাবক কে  হারালো, কে লিখবে কবিতা যা প্রাণবন্ত, কে করবে পাঠ, সব কিছুই এখানে এলোমেলো, জন্ম ও মৃত্যু যে স্বাভাবিক l 


শুভমিতা বিশ্বাস


 রূপকথা

মনে পরে যায়,

সেই সূর্যাস্তের কুসুম রঙের উঠোনে দুটো ঝলমলে মেয়ের কথা। 

আমি তাঁদের হৃদয়ের পথে ভ্রমন করেছি,

যান্ত্রিক লেন্স থেকে সব ছবি চুরি করেছি দিনের পর দিন।

কে ওঁরা?

ওদের সাথেই তো  রুপকথার গল্পের মতো আমি বেড়ে উঠেছি,

 আবার কখোনো, শালিকের মতো একসাথে আচার খেয়েছি,

বায়নার রঙিন কাঁচ চোখের ওপর বসিয়ে,পার্কস্ট্রীটের  চাঁদ তাঁরা দেখেছি


মনে পরে যায়,

 সবুজ শাড়িটাকে যে, শাড়ির প্রতিটা ভাঁজে চুপচাপ বসে আছে,

 দিদির গন্ধ... 

ধুলোর দর্পনের সামনে গিয়ে দেখি, এখনো তিনটে চেয়ার একসাথে বসে ঝগড়া করছে 



মনে পরে যায়,

 কোনো এক ডিসেম্বরের রাস্তায়,লাল টুপির, দিদির আঙুল আঁকড়ানোর ছবিটা।


ধোঁয়াশার ভেতর থেকে

এখনো প্রতিদিন কাঠের টেবিলটা রোজ উড়ে আসে আমার কাছে

দেবাশিস সাহা'র দুটি কবিতা

রোদচশমা 

ঘরের কোনো ব্যাপারে 
নাক গলায় না রোদ
অভিমান হলে
জ্যোৎস্না ডেকে আনে

ভাঙা আয়নায় বাসা বাঁধে
শোক দুঃখ আর সংকট 
রোদ হাতে বের হই
কাজের খোঁজে 

জানালা খোলা পেয়ে
রাত ঘরে ঢোকে
রোদে ঝলসে যাওয়া মনে
লাগিয়ে দেয় ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান

ভালোবাসার ছাদবাগানে 
পাহারাদার প্রিয় রোদচশমা। 


চাকা+চাকা=দাম্পত্য 

দুটো চাকার যোগফল দাম্পত্য 
চাকা বসে গেলে
শুরু হয় দাম্পত্যকলহ

প্রতিটি দাম্পত্যের 
একটি ওপেন জানালা থাকে

জানালার এপাশে ঘর
চাকার ঘর্ষণে 
ঘর ভরে যায় অভিমানে

ওপাশে নদীর শয়নকক্ষ
নানা রঙের বাতাসের যাতায়াত 

কখনো-সখনো 
রাস্তা ভুল করে মুক্ত বাতাস
এসে পড়ে জানালার এপাশে
যেভাবে সুগন্ধি ভালোবাসা 
গড়িয়ে যায়

গতি বেড়ে যায় চাকার
দুটো চাকার এলোমেলো গতিপথে 
এসে পড়ে বালি

অনেকগুলো চাকার যোগফল 
মেনে নেওয়া
মানিয়ে নেওয়া 

চাকা বিয়োগ হলে
ঘরে ঝুল পড়ে
ঝুল সরাতে
এসে যায় ছোট বড়ো 
নানা সাইজের চাকা 

সামান্য দাস



অবৈধ গল্প 

হেলমেট পরা যুবকটা দ্রুত গতিতে ছুটে গেল, 

তবুও প্রেমিকা অন্তঃসত্ত্বা ।

অসহায় বাবা বাজার যাইনি কিছু দিন! 

ভাই ট্রাফিকসিগ্নালে, প্রেমিকটা বেপাত্তা।


ছুরি কাঁচি লজ্জা ঢেকে দিল 

ছোট্ট  ক্ষত রেখে, 

প্রেমিকা আবার মেয়ে হল................. 

চোখের কোনে শ্যাওলা নিয়ে, 

ভালোবাসা নিখোঁজ শুধু কার যেন মৃত্যু হল ।

মেহেদী পাতা



অ্যালবাট্রস সব জানে 

রাত এক দুই তিন প্রহর 

চণ্ডাল আমাকে পরাচ্ছে পরকীয়া মুণ্ডমালা 

তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই আমার 

একদৃষ্টে চেয়ে দেখছি তোমার উত্তাল সঙ্গম

উত্থিত হচ্ছো, ভাঙছো

লাল পাথরে তোমার সাদা ফেনা

ঠিক যেন কুমারীর প্রথম রজোঃস্রাব

আমি বসেছিলাম ততক্ষণই 

যতক্ষণ তুমি আমার কাছে ছিলে

অনিবার্যভাবে ঘুমিয়ে পড়লে তুমি রমণক্লান্ত

এক ঝাঁক অ্যালবাট্রস অন্ধকার নিয়ে গেল ডানা মুড়ে 

আমার ঠোঁট থেকে বিষ শুষে জাতে উঠলে তুমি চণ্ডাল

পিছু হেঁটে তুমিও অতীত হলে সমুদ্র।

হাবিবুর রহমান হাবিব



অক‌বির অ‌চিত্র

ভিসু‌ভিয়া‌সের আ‌গ্নেয়‌গিরীর লাভার মা‌ঝে কি কোন প্রেমহীন ভালাবাসা বা প্রশা‌ন্তির চিহ্ন আ‌ছে ? যা শুধু নি‌র্মোহ, নির্লিপ্ত, ক্ষ‌য়ে চ‌লে‌ছে কা‌লের পর কাল ।

 সুনা‌মি‌তেও ভা‌সি‌য়ে ছিল ঘর,বাড়ী,আমা‌দের খেয়া তরী।

তবুও ম্লান হ‌য়ে যায়‌নি পাতা ঝরা সেই সব স্বপ্ন গু‌লো ।

হিটরা‌রের গ‌্যাস চেম্বা‌রেও যাওয়া হয়‌নি,‌সে তো পরাজ‌য়ের ই‌তিহাস,পু‌ড়ে গে‌ছে অ‌নেক স্ব‌প্নের ই‌তিকথা ।

গত জ‌ন্মে যারা  বে‌ধে‌ছিল পড়ন্ত বি‌কে‌লের পা‌খির বাসা, সে কি এখ‌নো আ‌ছে ?  না‌কি পাহড়ী কোন ঝর্ণায় প্রস্ফু‌টিত স্নিগ্ধ ভো‌রের শি‌শির মাখা ,কোন অজানা ফু‌লের উপর চিরকা‌লের পাথর চাপা দি‌য়ে আ‌ছে ?

দিলারা রুমা ( যুক্তরাজ্য )



সুন্দর সবুজ নগর 

আবার আগের মতো ছুটে চলছে মানুষ

যেন করোনা বলতে কিছুই নেই

মনের গহীণে ধুক ধুক করে 

 কখন কার শরীরে করছে এর বাস।


হঠাৎ করে থমকে গেলো কেমন করে পৃথিবী

 করোনা থামিয়ে দিলো

 এক এক করে বিশ্ব নগরের প্রতিটি কল কব্জা। 


 কতজন বিদায় নিলো  কতজন সুস্থ হলো 

 এলোমেলো হয়ে গেলো জনমন 

আতংকের করাল গ্রাসে  বন্দী

 আমি তুমি আমরা। 


দিন দিন বাড়ছে করোনার প্রভাব 

তবুও মানুষ কি করবে 

বিশ্বজুড়ে উপায়ান্তর হীন বিবেক

 এখন যেন ঠিক আগের মতো 

বিষ জেনেও মধু ভেবে করছে পান 

 প্রয়োজন অপ্রয়োজনে গাইছে গান 

শুধু নিজেকে শান্তনা দেয়া 

ছাড়া কিছু নয়।


 আধুনিক যুগে  যুদ্ধ মহাসরঞ্জামের কালে

 স্তব্ধ বিজ্ঞান নিরব দার্শনিক, 

কোথাও কোন কলরব নেই 

ভাষাহীন বিশ্ববিবেক।


 প্রতিটি মানুষ চোখ বুঁজে নিরবে

 বলে অন্তর্যামি ক্ষমা করো 

ফিরিয়ে দাও সুন্দর সবুজ নগর।

উদয় শংকর দুর্জয়



সবই ছায়া হয়তো আবছায়া

সেপথ অনেকটা দূর পার করে এসে দ্যাখে, এক আকাশ মায়াচ্ছন্ন ছায়া ফেলে গ্যাছে ভুলো পাখি। সব ছায়ারই একটা 

আলাদা গল্প থাকে। একটি অস্তিত্বের বাহ্যিক অবয়ব 

যাকে আমরা ছায়া মনে করে পায়ের নিচে পিষে ফেলি। 

তা আদতে একটি অস্তিত্ব, একটি সৃষ্টির প্রকাশ। 

একটি রঙের আড়ালে আরেকটি রঙ।


চাঁদ যেমন পাশাপাশি হেঁটে যায় ঠিক ছায়াও। 

আলোরা নেমে আসে ঝর্নামাদলের দল নিয়ে, 

ছায়ারা লুকিয়ে যায়া উতসবের আড়ালে। বিহবলের 

বৃষ্টি নামলে বৈধব্যের রঙ মুছে আবার নামে ছায়ান্ধাকার। 

শোকেরও তাপ থাকে, মেঘের অনুযোগ থেকে 

পাতায় ভর করে ছায়াপরাগ নামে। 


মৃত্যুর হয়তো কোনো ছায়া নেই, আবছায়া আছে। 

কোনো বর্ণ নেই, কিন্ত নিবিড় কলতান আছে। 

কোনো কিছু অতিক্রম করার নেই। শুধু পড়ে থাকে 

অস্পষ্ট হ্রদ দীর্ঘ ছায়ার মতো, যেখানে পারা ওঠা আয়নায় 

লেগে থাকে ঝাপসা চোখ।

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী

কূলবধূ 

রক্তাভ পড়ন্ত বিকেলে গিয়েছিলাম

মেঘনা নদীর চরে,

দেখা মিললো এক সুন্দরী কূলবধূর,

দাঁড়িয়ে আছে চরঘেষা নদীর তীরে ঘোমটা ধরে! 

শুধালাম- 

"কে গো সুন্দরী, দাঁড়িয়ে আছো মেঘনার বালুচর গাঁয়ে?"

শাঁখা-সিঁদুর পরা স্বর্ণলতা,

লাজে মরি মরি বললো পূরনারী-

"এসেছি ঘটে জল নিবার তরে।