১৩ নভেম্বর ২০২০

অমিত কাশ‍্যপ



ব‍্যস্ততা

কার্তিকের শেষে এক মায়া লেগে আছে 

তুমি অবুঝ হয়ে না, গ্রাম আর গ্রাম নেই 

শীত রোদ মখমলের মতো বসে যাবে 

উত্তুরে হাওয়ার মাঝে উঠোনে তোমার 


এইভাবে সরল ভাবনা আর নেই যেনো 

বিশ্বাসযোগ্য শব্দটা মনে মনে উচ্চারণ করতে পার

পাশে বসা ভদ্রলোকটি নিপাট ভালোমানুষ

পাড়ার গোবিন্দদা ভালোমানুষ নাও হতে পারেন 


পড়শি অমলকাকু, সজ্জন বলা যায়, তবে মন খুলে 

কোনো কথা বলা যায় না 

প্রাচীন প্রবাদে ছিল, দেওয়ালেরও কান আছে 

এখন প্রবাদ, মন নেই, ব‍্যস্ততা গিলে খাচ্ছে সব

নূরজাহান শিল্পী

টেমস নদী 

স্রোতস্বিনী চির যৌবনা টেমস ।

রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার 

টেমস নামকরণে ইতিহাসে অমর নাম যার ।


ইতিহাসের অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী 

অক্সফোর্ড , কিংসটন , রিডিং,

উইন্ডসর রিচমন্ড ঘেঁষে টেমস সঙ্গমে মিলেছে উত্তর সাগরে

প্রেম ও প্রণয়ের নৈসর্গে।

পাশ জুড়ে সুরম্য অট্টালিকার 

কংক্রিটের যান্ত্রিকতা।

স্বপ্নঘেঁষা দর্শক ক্যাফের আড্ডায়  মশগুল।

আলো ছায়ার বিনির্মাণ সুখে ,

স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে জানান  দেয় 

টাওয়ার ব্রিজ ।

বিগ বেন ঘড়ির 

 ঢং ঢং আওয়াজে 

জেগে উঠে অলস বিছানা 

আড়মোড় ভাঙা  বিষণ্ণ  কঙ্কালগুলো ।

বাতাসের বেহালা উড়িয়ে নিয়ে যায়,

 ধূসর পাতার বিবর্ণ রূপরেখা ।

  

মুগ্ধতার ঝলকানিতে জেগে উঠে আকাঙ্খার স্বরলিপি ।

  তার মাঝে কারো কারো দীর্ঘশ্বাসের গোপন বাতাস খেলে, যায় বিসর্জনের খেলা ।

কুলকুল ধ্বনিতে মৌনতা পুড়ে, ছাই হয় রমণীর লাল টিপে ।

পথচারী  হেঁটে যায় আগুন নিয়ে আঙুলের ডগায় ।

যেথায় একদা ঘোড়া হাঁকিয়ে বেড়িয়েছেন রাজা রানী রাজপুত্ররা ।

দুনিয়ার সব বিচ্যুতি থেকে মুক্তি পেতে কারো  ছুটে আসা ।

 ছুটে আসা শান্তির খুঁজে টেমস এর নীড়ে ।

জলধারার ক্যানভাসে গুঞ্জরিত টেমসের কল্লোল অববাহিকায় ।

অলীক গভীরতা মাপতে মাপতে, জীবন দান ছেড়ে আসা নারী, সনাতনী দুঃখগুলো জমা রাখে টেমসের পৌত্তলিক গহবরে ।

এখানেই হয় সূর্যোদয় ।

এখানেই সূর্যাস্ত।

টেমস নদী।

                                                                 ( যুক্তরাজ্য ) 

শ্যামল রায়

আকাশ হয়ে থাকুক


আমি বুঝতে পারি

কিছুটা হলেও জানতে পারি

নদী -পাহাড় ও ঝর্ণার কথা।

জড়ো করা দুঃখগুলো

সবুজ করতে উড়ে যেতে পারি

কিন্তু, কেন যাবো?

সারমর্মে জীবন ছাড়া যুক্তি নেই

শুনতে গেলে লাগাম ছাড়া হবে,

যতসব আছে চিহ্ন গুলো মুছে যেতে পারে।

তাই উষ্ণতা নিতে

 মানুষের কাছাকাছি যাবো----

ওখানে সোহাগ আছে, অন্তর আছে।

চলো --বৃক্ষের কাছাকাছি গিয়ে বসি

থাকতে চাই বলতে চাই

ফ্যাকাশে যতসব আছে সবুজ করবো

প্রেমিকারা হৃদয়ের অন্তপুরে

আকাশ হয়ে থাকুক।

মধুমিতা রায়



চাঁদগন্ধী


আহ্লাদি চাঁদটা নারকেল পাতায় দোল খেতে খেতে মাঝে মাঝে টুপ করে দুচারটে আলোর দানা ছড়িয়ে দিল উঠোনের শিউলি গাছটার তলায়।


পরদিন সকালেই ম্যাজিক!

আলোর কণা গুলো হয়ে গেছে

ফুল! 


এসব কিছু অলকানন্দার ঝোপে বাসা বাঁধা মৌটুসিটা দেখেছিল।সে তার ছানাদের ওম দিতে দিতে চাঁদকে বলেছিল...আরে এদিকেও কিছু আলো চাই।


ব্যস,

অলোকানন্দার ঝোপ ভরে ফুটে উঠলো হলুদ হলুদ আলো।

ম্যাজিক!


জানলায় বসে বিষন্ন মেয়েটি তাকিয়েছিল

মাঝরাতে চাঁদের দিকে।

..... কই তুমি?

এ প্রশ্নের জবাব আসেনি আজ।


..... এই তো

মোবাইলের স্ক্রিনে সকাল হল।


আবার ম্যাজিক!

বিষন্ন মেয়ের গালে টোল

চোখে আলো

চাঁদ ঘুমোবার আগে রেখে গেছে বুঝি!

জয়ন্ত দত্ত

পাতা খসে যায়

ক্যালেন্ডারের পাতা খসে পড়ে

মানুষের পদচিহ্ন পড়ে থাকে

পথের ধূলায়


কাল যার সাথে কথা হল

আজ সে সুদূর ঐ

                 বাঁধের ওপারে

পড়ে আছে শুধু দীর্ঘশ্বাস!


চলে যাওয়ার কত যে রঙবেরং-এর অজুহাত!


স্তব্ধ রাত্রিতে একাকী নিজের সাথে

কথা বলছি...কে যেন হঠাৎ-ই

দরজা খুলে দাঁড়ায়...

মমতা রায়চৌধুরী



 আদ্যাশক্তি মহাকালী


হে আদ্যাশক্তি, মহাকালী

মুক্তকেশী, চৈতন্যময়ী ,

মুণ্ডমালিনী করালিনী।

তোর নাম স্মরণে

সর্ব পাপ যায় যে ঘুচে।

তোর নাইকো বরণ  

নাইকো আবরণ।

অথচ রূপেতে তোর

 পাগল যে ভোলা মহেশ্বর।

হে দয়াময়ী ,সদানন্দময়ী,

তোর স্নেহ সুধায় তেমনি 

গদাধর ,বামাক্ষ্যাপা ,আর    

ভবাও  হয়েছে পাগলা,

আর যত সব রয়েছি অভাগা।

হে প্রলয়ংকারী , জগৎ জননী 

তাই অশেষরপে প্রকট হ দেখি।

এ পৃথিবীতে অন্যায় -অবিচারে,

হিংসা-দ্বেষ কলুষতায় যে ভরে।

আজ মানুষ যে বড়ো বিপন্নতায়

কাটছে সময় তাদের অসহায়তায়।

তাই হে আদ্যাশক্তি, বরাভয়ী মা,

তোর খড়গে ঝলসা  ঘৃণ্যকর্মটা।

তুই কালোর  বুকে আনতো  মা

সকল আলোর বন্যা।

মানুষ হিংসা বিদ্বেষ যাক ভুলে 

সংহতির চেতনায় উঠুক জেগে।

পৃথিবীর যত কলুষতা ধুয়ে মুছে

আবার সকল গৃহকোণ আলোর   

রোশনাইতে  উঠুক ভরে।

হে মা আদ্যাশক্তি,  মহাকালী

  তাই দুর্দিনে তোর নাম যে স্মরি।

জাফর রেজা

সীমান্তের সীমানা


আমি সীমান্ত, 

ভবঘুরে আমার পরিচয়, 

আমি ঘুরছি নগরীর অলিতে-গলিতে 

কখনও রাজপথের ফুটপাত ধরে;

আমি ছুটছি 

যুগ থেকে যুগান্তরে

ক্লান্তিহীন যুবকের মতো ,

প্রাণহীন শহরে ছুটে চলি

ভালবাসা নয় জীবিকার খোঁজে ,

মেঘ ভাঙা রোদে ঘর্মাক্ত শরীর 

দেহের সবটুকু শক্তি 

হয়তো এখুনি হবে নিঃশেষ

তবুও চলতে হবে।


নিজেকে প্রশ্ন করি

সীমান্ত তোমার সীমানা কতদূর।

জেবুননেসা হেলেন এর দুটি কবিতা

তাড়না 

সুখ কখনো আমার ছিলো না।


 সুখের সু আর খাদ্যের খ 

আমি কখনো ভাগে পাই নি

সুখাদ্য নিজে না তৈরি করলে।


যদিও ঘ্রাণ আলোড়নে আমার ক্ষুধার

জন্ম হয়েছে বহুবার।


সুখ আর খাদ্য এই শব্দাবলীর

পেছনে ছুটেছি অহর্নিশ...


সৌরভ সুবাস


হাস্যজ্বল তোমার কাঁধে মুখ

লুকিয়ে কাঁদে পাশবিক প্রেম।

হেম গুলো গড়িয়ে পড়ে চোখের তারার জ্যোস্না হয়ে।


এমন হাসো কেমন করে?


পানসে পানসি সামলে নিতেই হাসির খেলায় 

জ্যোতি কুড়াই।


নিশুতি শিশুতোষ হাসির ভেতর

তুমি এসে কলোচ্ছোলিত 

লজ্জায় কেমন কেমন যে 

সোহাগ মাখো! উফ!

আশিস চক্রবর্তী'র অনুগল্প



পুরাতন ভৃত্য


ভোর বেলা মিত্র বাবুর বাড়ি হইচই পড়লো। ঘরের আলমারি ভেঙ্গে সব উধাও। ওনার স্ত্রী, হেঁড়ে গলায় কান্না জুড়ে বললেন - এ নিশ্চয় বুড়ো চাকরটার কাজ, আজ সারাদিন পাত্তা নাই। দাঁড়িয়ে দেখছো কি ! পুলিশে খবর দাও!

বউ এর কথা মতো মিত্র বাবু চাকরের বাড়ি পুলিশ নিয়ে গিয়ে দেখলেন ঘর ফাঁকা, কেউ নেই । এতে সন্দেহ টা আরো গাঢ় হলো।


হঠাৎ , ঘর ফিরতি রাস্তায় চাকর টার ছেলে টাকে দেখে ,রাগে দিক বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে কলার ধরতে যাবেন , এমন সময় দেখলেন, তার পরনে সাদা থান । ছল ছলে চোখ নিয়ে ছেলেটা বললো -- সব শেষ। বাবা আর নেই। আপনাদের বাড়ি খবর পাঠাতে পারিনি। চিন্তা করবেন না , বাবার জায়গায় কয়েকদিন পর থেকে আমি কাজে যাবো।

সুরভি জাহাঙ্গীর



পটচিত্র

পটচিত্রের চিত্র তুমি.. কল্পনার মাধুরী!

বাহবার বাহাদুরি.. কেয়াবাৎ আহামরি!

সৌন্দর্যেরর আঁধার তুমি.. কবিতার রূপ কুমারী!

চিত্র শিল্পীর গুনমুগ্ধ মালোবিকায় মরি মরি!


যত মত,তত ভেদে সাজায় মনিমালায় মনিপুরী!


কেউ বলে চোখ যেন কথা বলে..বনলতা আঁখি মেলে!

রাতজাগা পাখির করুণ কাকলী..কাহিনীর কুসুম কুমারী!

গাঁয়েতে সুগন্ধ জড়িয়ে কেঁদেছিল মায়ামৃগ কস্তুুরী!


কেউ বলে ঠিক যেন হাসি রেখা যাদুকরী.. এক ফালি চাঁদ আঁকি!

কত না বলা অভিমানে বেদনার রাশি রাশি চিক চিক হাসি হাসি!

কেউ বলে, এলোচুল.. মিশ কালো মেঘদূত!

মাতাল বন উতাল সমীরণ.. না বোঝে পাগল মন!


দর্শকের করতালি,চাপা পড়ে রূপনগরের ঘটনার রচনার পদাবলি!


শিল্পী এঁকেছিল মনের মত.. মনন চিত্রালী!

চোখেতে লিখন এঁকেছিল..যাদুকরী মায়াবতী কাজলী কৃষ্ণকলি!

মুখেতে মাখিয়েছিল.. ঘন সবুজের শেওলা অর্কিড রকমারি!

হাসিতে হেসেছিল সঙ্গীত সুরে..ইরাবতী নদী ছন্দ চাতুরী!

চলনে নুপূরের ধ্বনিগতি  প্রতিছিল.. হিজলের টুপ টুপ জল তরঙ্গের সুর!

মাদলের নেশার মহুয়ার অঙ্গের অঙ্গার..রূপবতী হীরামতি চুপ চুপ!


অবশেষে হেসেছিল অন্তরজামি.. গেয়েছিল গান আমি জানি জানি!

সুরের সাক্ষী শ্রোতা হৃদয়ে তুলেছিল..পদ্মরাগের সুরকলি!

মন ঘরে নেচেছিল চন্দ্রমূখী.. ঠমকে ঠমকে ঠুমরী!


সেই রাতে এসেছিল প্রেমিক পাগল দেবদাস!

চুপি চুপি বলেছিল..ঠিক তুমি রাতের রাণী রজনীগন্ধা উপহার!


ঢুলু ঢুলু ঘুম  ভাঙ্গে..রাতের বাহবার কেয়াবাৎ!

কাঁদে যত কত রাত.. সকালের সূর্যমুখীর লজ্জার সুগন্ধি অনাহার!