একান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক। তার নিত্যদিনের আসা যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কথা নিয়ে কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন " চলবে...
টানাপোড়েন ৫৩
মায়ের রূপ
সবেমাত্র মনোজের ফোনটা রেখা কেটেছে, তখনই ভোলা কাকা এসে বলল" ছোট বৌদি বুলু বৌদির পাগলামিটা আবার বেড়েছে।'
কাকিমা বললেন 'কেন রে হঠাৎ করে আবার বাড়লো মাঝে তো বেশ একটু মনে হচ্ছে ঠিক হয়েছিল?'
ভোলা কাকা বলল 'কি জানি, কিছু বুঝতে পারছি না ।এখন তো বাড়িতে যাওয়া আসায় অনেক বিধিনিষেধ হয়েছে ।ফলে ভেতরে কি হচ্ছে ,না হচ্ছে কিছুই জানা যায় না।'
কাকিমা বললেন ' হ্যাঁ ,তা যা বলেছিস ,।বাড়িটা কত সুন্দর ছিল পঞ্চা'দা মারা গেলেন বুলুদিও কেমন যেন হয়ে গেলেন।'
ঘরের ভেতর থেকে কাকা বললেন ' কি হয়েছে রে ভোলা ?কি হয়েছে?'
কাকিমা ভোলাকে একটু রেগে বললেন 'কথাটা একটু আস্তে বলতে পারিস না হতচ্ছাড়া।জানিস তো একজনের কান কতটা খাড়া। এবার নাও ঠ্যালা বোঝো?'
ভোলা বলল ' হ্যাঁ, ছোটবৌদি ভুল হয়ে গেছে। আসলে ওই কথাটা শোনার পর, আর উত্তেজনা চেপে রাখতে পারি নি।'
কাকিমা বললেন ' না ভুল আমিও করেছি , তোর ওপর মিছিমিছি রাগ করলাম। কি করব বল আমরা তো প্রত্যেকে ভালোবাসি। তাই আপন জনের কিছু হলে সত্যিই খারাপ লাগে?'
কাকু আবার বললেন 'তোমরা আমাকে কিছু বলবে কি হয়েছে, ননী ননী?'
রেখা তো কাকিমার মুখের দিকে তাকাল আর ইশারায় বোঝাতে চাইল কি বলবে কাকাকে?
কাকিমা বললেন ' ননী এখানে নেই। কি চাইছো বলো তো?'
কাকা বললেন ' কিছু চাইছি না ।কি হয়েছে সেটা জানতে চাইছি?'
কাকিমা বললেন 'কোথায় কি হয়েছে? তুমি আজকাল একটু বেশি শুনছো মনে হচ্ছে? কিছুই হয়নি।''
কাকা বললেন , 'ভোলা এসে,কি বলছিল?'
কাকিমা বললেন, ' বলছিল, ননীকে নিয়ে বুলু দিদির বাড়ি যাব কিনা?'
কাকা বললেন ' ও, আমি ভাবলাম আবার বুলু বৌদির কিছু হল কিনা? দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।'
কাকিমা এবার রেখার দিকে তাকিয়ে বললেন 'দেখলি তোর কাকার অবস্থা?'
রেখা একটু হাসল আর ভাবল ' কাকিমা কিভাবে এতসব কিছু ম্যানেজ করে ।সত্যি বাবা ,কাকিমা বলেই সম্ভব।'
কাকিমা বললেন 'কি রে ননী,কি ভাবছিস ? আয় তো চটপট খাবারটা খেয়ে নে মা।'
ভোলা কাকা বলল 'একটু বৃষ্টিটা ছাড়লো । কাল থেকে যেভাবে বৃষ্টি ।কোথাও কেউ বের হতে পারছে না।'
কাকিমা বললেন 'তা যা বলেছিস ভোলা ?মেয়েটা এসেছে ।একটু গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখবে ,একদিনে তো সম্ভব নয়?'
ভোলা কাকা বললেন 'হ্যাঁ, মামনি। এতদিন পর আসলো ওর তো সত্যিই দেখতে ইচ্ছে করবে?'
রেখা বলল 'ভোলা কাকা, ময়নাদি কেমন আছে গো '
কাকিমা ইশারায় রেখাকে বোঝাতে চাইলে এসব ব্যাপারে কথা না বলতে?
কাকিমা এবার ভোলাকে বলল 'ভোলা ব্যাগ নিয়ে যা দেখ তো,বাজারে কি ভালো জিনিস আছে ?একটু মাশরুম পাওয়া যায় কিনা ,দেখিস তো? ননী,মাশরুম খেতে খুব ভালোবাসে'।
ভোলা বলল – হ্যাঁ ,এই যাই ছোটবৌদি ।বাজারের ব্যাগটা..?
কাকিমা বললেন ,ভোলা আজকাল দেখতে পাচ্ছি তোদের সবার বয়স হয়েছে ।শুধু আমার বয়স বাড়ে নি ।'
ভোলা হেসে বলল 'তা অবশ্য ঠিকই বলেছ ছোট বৌদি।'
কাকিমা বললেন 'বাজারে যাবার আগে খেয়ে যাবি ।আবার কখন আসবি তো ঠিক ঠিকানা নেই ।
এদিকে তো গ্যাস অম্বলে ভুগছিস?'
ভোলা বলল 'পরে এসে খাই ছোট বৌদি?'
কাকিমা বললেন 'না ,একদম না। খেয়ে যা ।দেখ ,এমনিতে দাদাকে নিয়ে ... এরপর
যদি তোর কিছু হয় , তাহলে আমার কি অবস্থা হবে বল তো?'
ভোলা কাকা কথা না বাড়িয়ে বলল 'ঠিক আছে। দাও।'
ভোলা কাকাকে খাবারটা দিয়ে কাকিমা এবার রেখাকে বলল' নে,ননী। তুইও খেয়ে নে।'
রেখা বলল 'তুমি খাবে না?'
কাকিমা বললেন 'ওরে বাবা, আমি ঠিক খেয়ে নেবো ।তোরা খা না?'
ভোলা কাকা বলল 'না মামনি, ছোটবৌদি এরকমই বলে ।ছোট বৌদি এখন আর টাইমে কিছু খাবার খেতে পারে না । কাজ কাজ করে?'
কাকিমা বললেন 'নে,তোকে আর শিবের গাজন গাইতে হবে না । তাড়াতাড়ি বাজারে যা।'
রেখা বলল ' না কাকিমা ,এটা কিন্তু একদমই ঠিক নয় ।তোমাকে তো সুস্থ থাকতে হবে বল?
কাকিমা বললেন 'হ্যাঁ রে ,বাবা ।আমি সুস্থই আছি ।অত ভাবিস না তো।'
রেখা মনে মনে ভাবছে' সত্যিই মানুষটা অন্নপূর্ণা। মা যখন বেঁচে ছিল, তখনও দেখেছি সেই একই রকমভাবে এরা এই ভাবেই সংসারের জন্য কাজ করতেন,এখনো সেই একই ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। কি করে পারেন? কোথা থেকে এত স্ট্যামিনার আসে ?মনের জোর অনেক বেশি কাকিমার।'
কাকিমা বললেন 'ওই যে বসে বসে ভাবছিস ননী? এত কি আকাশ-পাতাল ভাবছিস বল তো?'
রেখা বলল 'না কাকিমা। আমি শুনবো না ।আমি এই দু'দিন আছি। তোমাকে আমার সঙ্গে খেতে হবে। নইলে কিন্তু আমি খাব না?'
কাকিমা বললেন ' কাজের সময় যদি তোরা এরকম আবদার করিস ,ভালো লাগে বল?'
রেখা বলল 'আমি একদমই শুনবো না,যদি তুমি..? আমি খাব না?'
কাকিমা বললেন 'ঠিক আছে, নে বাবা,। খেতে আয় ,আমারও নিয়েছি।'
এবার রেখা হেসে বলল 'ঠিক আছে। তুমি আগে খাও ।তারপর আমি খাবো?'
কাকিমা বললেন 'কোথা থেকে আমার পাকা বুড়ি মা এসেছেন রে ,মেয়ের যত্ন নেবার জন্য ।কতদিন পর আসলে মা?'
রেখা বলল 'না কাকিমা। সত্যি সময় পাই না ।এবার আসব?'
কাকিমা বললেন 'ওখানে গিয়ে আবার আমাকে ভুলে যাবি না ?আসবি তো মা ঠিক?'
রেখাবলল ' হ্যাঁ কাকিমা ।আসতে তো আমাকে হবেই তোমরা যে অবস্থায় আছো ,তোমাদেরকে কে দেখার কে আছে বল,,,?'
কাকিমা বললেন ''ননী ,তুই যে এই কথাটুকু বলেছিস মা ,তাতেই আমরা খুশি ।তোরা ভালো থাকিস এটুকুই চাই।'
রেখা কাকিমার চুলের দিকে তাকিয়ে বলল 'কাকিমা তোমার চুল এ দু'দিনে তো দেখা হয় নি ।আজ দেখছি এখনও সে রকমই ঘন লম্বা ,শুধু একটিমাত্র জিনিস চেঞ্জ, পাক ধরেছে এই যা।'
কাকিমা বললেন ' আর চুল চুলের যত্ন নিতে কোথায় পারি রে?'
রেখা বললো 'ভগবান যত রূপ,গুণ , সব তোমাদের দিয়ে রেখেছে ।মেয়েদের তো একটু দিতে পারতো বলো?'
কাকিমা এবার রেখার কাছে এসে, রেখাকে কাছে টেনে নিয়ে বললো "দেখো আমার ক্ষ্যেপি মেয়ের কথা ।তোরা কত সুন্দর ?কে বলে রে আমার মেয়েরা সুন্দর নয়, গুণ নেই।'
রেখা হেসে বলল ' সে যাই বলো না কেন ,?কাকিমা তোমার মেয়েদেরকে দেখতে তোমরা সবথেকে ভালো মেয়ে বলবে কিন্তু..?'
কাকিমা বললেন 'কিন্তু নয় ননী? বিশেষত আমার এই মেয়ে সম্পর্কে যদি কেউ কিছু বলে সেটা তো মেনে নিতে পারবো না ।'
রেখা কাকিমার কোলে মাথা দিয়ে বলতে লাগলো 'এ যেন স্বর্গীয় সুখ কাকিমা। এ সুখ কোথায় পাবো?'
কাকিমা রেখার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল ' চুল গুলো এরকম হয়ে গেল কি করে মা? কত চুল ছিলো তোর মাথায়?'
রেখা বলল 'অনেক স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেতে হয়েছে কাকিমা। তোমাদের তো কিছু জানাই নি।'
কাকিমা বললেন 'সে কিরে?'
রেখা বললো 'হ্যাঁ, কাকিমা ।'
কাকিমা বললেন 'কি হয়েছিল?'
রেখা বলল ' অন্যসময় ,সময় করে বলব। এখন তো তোমার প্রচুর কাজ?'
কাকিমা বললেন' হ্যাঁ রে ,বেলা বয়ে যাচ্ছে। তারপর ভোলাকাকার দিকে তাকিয়ে' এই ভোলা তুই বসে বসে এখনও আমাদের কথা শুনছিস ?কখন বাজার করবি ?কখন রান্না করবো?'
ভোলা কাকা জিভ কেটে বলল 'এক্ষুনি যাচ্ছি ছোট বৌদি?'
কাকিমা বললেন 'দেরি হলে, আজকে তুই রান্না করবি?'
ভোলা কাকা বলল 'সে তো আমি রান্না করতে চাই ।তুমি অসুস্থ হলেই রান্না করতে দাও না ,আর এখন তো মামনি এসেছে ।তুমি রান্না করতে দেবে আমাকে?'
কাকিমা বললেন 'সে তো ঠিকই। আমার মেয়েটা এতদিন পরে এসেছে ।আমি নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াবো ।অন্যকারো হাতে তো ছাড়তেই পারবো না।'
ভোলা কাকা বলল 'মামনি কথাটা মিলে গেল তো?'
কাকিমা বললেন' আর মেলা বকিস না । '
রেখার চোখে জল দেখে, কাকিমা বললেন' কী হয়েছে রে, ননী। কাঁদছিস কেন?'
রেখা শুধু মাথা নাড়িয়ে বলল 'এমনি ।'
আরবলল' মা তো মা ই হয়। তুমি আমার আরেক মা।
'কাকিমা রেখাকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন'যতদিন বেঁচে আছি ততদিন কোন কিছুতেই টেনশন করবি না। নিজেকে দেখিয়ে বললেন' আছি তো?'