০৭ ডিসেম্বর ২০২১

কবি সানি সরকার এর কবিতা



একশো আটটি পদ্মের দিব্যি 



কী করতে পারি এ মুহূর্তে 

অন্ধ হয়ে যাব 
একজন অন্ধ কতবার অন্ধত্ব গ্রহণ করতে পারে 

আমার বাগানে একটিই ফুল গাছ 
শীতের শিশির মেখে ঠাণ্ডায় কাঁপছে শব্দ করছে 

অথচ 
এক্ষুণি ছুটে গিয়ে খুব আস্তে 
যাতে আঘাত না লাগে 
ওঁর পাপড়ির ওপর মাথা রাখব কীভাবে 

কষ্ট হচ্ছে খুব 
    হৃদিপদ্ম কাঁপছে বারবার, তবুও  
আমার ফুল আমাকে বলেছে, 
            চুপ, কান্না করবে না 
তুমি কাঁদলে আমার ভেতর ভেঙে যায় 

এই হাতে ধরেছি হাত 
এই ওষ্ঠ ছুঁয়েছে গভীর যতটা 
এই হৃদয় মিশে গিয়েছে হৃদয়-বায়ুতে 
ওঁর একশো আটটি পদ্ম ছোঁয়া আদেশ 
আমি অমান্য করব সে সাধ্য আমার কোথায় 

আমি কী করব এখন 
আমার কী করা উচিৎ 

গুহার ভেতর যাওয়া হবে না 
বরফের চাদরের ওপর যাওয়া হবে না 

তরঙ্গের মধ্যিখানে এত ঢেউ, মৃত্যুর মতন 

অনন্তকাল তোমার কোলের ওপর মাথা রেখে 
গান শুনব, গাও

রেওয়ার বর্ষপূর্তি উৎসব ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান

অজিতেশ মঞ্চে রেওয়ার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন



স্বপ্নসিঁড়ি : এক জাঁকজমকপূর্ণ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ৫ ডিসেম্বর সোমবার সোমবার দমদমের অজিতেশ মঞ্চে পালিত হল রেওয়ার বর্ষপূর্তি উৎসব। রেওয়ার কালচারাল প্রেসিডেন্ট মণিদীপা চক্রবর্তী, কালচারাল সেক্রেটারি জয়িতা বল চ্যাটার্জী এবং সম্পাদক নির্মাল্য বিশ্বাসের সুচারু পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় এক সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যা উপহার দিল সাহিত্য- সংস্কৃতি- বিনোদনমূলক পত্রিকা রেওয়া। সাহিত্যের সাথে সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছে রেওয়া। অনুষ্ঠানে ছিল তারই কিছু ঝলক। 



সাহিত্য জগতের প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের পাশাপাশি সঙ্গীতজগতের স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র।



 এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক অজিতেশ নাগ, কবি শ্রী সদ্যোজাত এবং পুরপিতা দেবরাজ চক্রবর্তী। নাচ, গান, কবিতাপাঠের পাশাপাশি ছিল গুণীজন সম্মাননা। 



সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রেওয়া সারস্বত সম্মাননা পেলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী নূপুরছন্দা ঘোষ। মানবসেবা ও জনসচেতনতা সম্মাননা পেলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও মেন্টাল কাউন্সেলর দীপিকা তরফদার। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুধাশ্রী দত্ত পেলেন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন সম্মাননা। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নূপুরছন্দা ঘোষের সঙ্গীত পরিবেশন। 


আমন্ত্রিত সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশনায় মুগ্ধ করেন দেবাদৃত চট্টোপাধ্যায়, রাখী সেন, সুবিদিতা বোস ও কাজল চৌধুরী। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশনায় দর্শকদের মন জয় করে নেন মৌমিতা ধর, তিথি সেনগুপ্ত, শুক্লা ব্যানার্জী, মৌসুমী দাস, তপশ্রী চক্রবর্তী, নন্দিতা দত্ত, কাকলি সেনগুপ্ত, সোহম সেনগুপ্ত, সানন্দা কর চাকি।



অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন প্রজ্ঞাবন্তী ব্যানার্জী ও শর্মিলি বিশ্বাস। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন সৌরিপ্রভ ব্যানার্জী। কবিতাপাঠে ছিলেন পিয়ালী ঘোষ, নিখিলেন্দু চক্রবর্তী, সায়নী  ব্যানার্জী ও
সুমনা  মিশ্র। অনুষ্ঠানে বাচিকশিল্পী সম্মাননা পেলেন মৌতৃষা চৌধুরী, আবৃত্তিশিল্পী সম্মাননা পেলেন পূরবী রায় ও রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সঞ্চালক সম্মাননা পেলেন জয়া চৌধুরী ও পর্ণা গুপ্ত।



 কবি সম্মাননা পেলেন প্রদীপ গুপ্ত, তুষারকান্তি রায়, সানি সরকার, দেবব্রত সরকার, পবিত্র চক্রবর্তী, অঙ্কুর মজুমদার, শম্পা রায় বোস, অমৃতা রায় চৌধুরী। সুখময় সাহা পেলেন কবি ও সমাজসেবী সম্মাননা। রেওয়া পরিবার সম্মাননা পেলেন পার্থ রায়, পার্থ ঘোষ, শ্যামলী চ্যাটার্জী, পৌলমী দেব, রোজমেরী উইলসন, রাজকুমার ঘোষ, বনশ্রী চক্রবর্তী ও স্নেহাশিষ রায় চৌধুরী। রেওয়া আয়োজিত মিউজিক ফেস্টিভ্যালের পুরস্কার প্রদান করা হয় এদিন। 



পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম স্থানাধিকারী ডিজে এস আর এল এবং তৃতীয় স্থানাধিকারী পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী ও ষষ্ঠ স্থানাধিকারী সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। 




এছাড়াও বিশিষ্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেওয়ার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য কুন্তল দে, বাচিকশিল্পী মধুমিতা বসু ও চিত্রপরিচালক জয়দেব ঘোষ, দ্বারিক গ্র্যান্ড সন্স এর কর্ণধার সিদ্ধার্থ ঘোষ  প্রমুখ।

সাকিল আহমেদ





চাঁদ


কাঁচের একটি টুকরো পড়ে আছে তোমার ছাদের কার্নিশে।আমাদের প্রতিবেশী ছাদ।ছাদ বাগান।চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে বাখুলের উঠোন।সন্ধ্যা মালতি ফুটেছে ছাদ বাগানের টবে।

আবার কবে দেখা হবে চাঁদ  ? তুমি তো চাঁদের উপমা।দুটো বাড়ি এখন হোম কোয়ারেন্টাইন সেন্টার।
কাঁচের টুকরো থেকে বের হচ্ছে যেন হীরক দ্যুতি।মনে হচ্ছে তোমার ছাদে ফেলে যাওয়া নাকছাপি আমাকে চকিতে ডাকছে ইশারায় ।আসলে মনের সব ইশারা গুলো যেন ফ্রেম বন্দি।
লক ডাউনের পর কতবার হৃদয়ে  ডাউনলোড করেছি তোমার অপলক চেয়ে থাকা।তারপর মেগা বাইট আর জিগা বাইটে ভাগ করেছি ভালবাসার এমবি।জানিনা কত জিবি তে দাঁড়িয়ে আছে হৃদয়ের পারদ।
চাঁদ জানে কতটা ছল আর ছলনা ঘুমিয়ে থাকে রাতে।তোমার খোলা চুলের ইশারায় কতবার অন্ধকার এঁকেছি বুকে।সে অন্ধকার জ্বলছে যেন রাত নিশুতির বৈভব।একবার স্বপ্নে তুমি নেমে এসো চাঁদ, আমার ভালবাসার কলঙ্ক ঘোচাতে।

তুমি আমার চাঁদ, চাঁদের উপমা।ছাদ বাগানের জুঁই, বেলি, কনকচাঁপা আমাকে ডাকছে।আমি তাদের বেদনার গান শোনাবো।তুমি হিংসে করোনা না চাঁদ।
আমাদের রাত নিশুতির তারায় তারায় জ্বলছে তোমার মন জয় করবার নেশা।

gds

LOVE

মমতা রায়চৌধুরী ৬২




টানাপোড়েন ৬২
আবার আসিব ফিরে



                                                                 ঘুম থেকে উঠেই আজ রেখার একরাশ ক্লান্তি ,চিন্তা হেরাফেরি করতে লাগলো। সূর্যের লাল আভা আজ তার মনকে কেড়ে নিতে পারল না। নগরজীবনের ক্লান্তি যেন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
ভাবতে ভাবতেই রেখার ফোন বেজে উঠলো। রেখা উদ্বেগগ্রস্ত ভাবে রিসিভ করে বলল ' হ্যালো'।
পার্থ বলল 'বৌদি।'
রেখা বলল ' কি হয়েছে?'
পার্থ একটু আমতা আমতা করে বলল' না মানে দাদার জ্বরটা কিন্তু কমছে না । 
রেখা বলল 'কি বলছ গো?'
পার্থ বলল 'হ্যাঁ বৌদি ।একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে?'
রেখা বলল' কিরকম?'
পার্থ বলল' দাদা বলছে মুখে কোন টেস্ট নেই। এমন কি কোনো গন্ধ পাচ্ছে না?'
রেখা আতঙ্কগ্রস্থ ভাবে বলল' সে কি?'
পার্থ বলল'আমি কিছু ভেবে পাচ্ছি না বৌদি। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।'
রেখা বলল 'ডাক্তার কাকাকে ফোন করেছো?'
পার্থ বলল 'হ্যাঁ এবং উনি কতগুলি টেস্ট করাতে বলেছেন ।'
রেখা বলল আজকে ওগুলো টেস্ট হবে তো?
পার্থ বলল' হ্যাঁ বৌদি।'
রেখা বলল'পার্থ ভাই তুমি গাড়ি পাঠাচ্ছো তো?'
পার্থ বলল 'হ্যাঁ বৌদি ,গাড়ি রওনা হয়ে গেছে। আপনি রেডি হয়ে থাকুন।'
কাকিমা বললেন' কি হয়েছে?'
রেখা অত্যন্ত করুণ ভাবে বলল' যেটা মনে মনে আশঙ্কা করেছিলাম কাকিমা। মনে হচ্ছে সেটাই?'
কাকিমা বললেন'অত ভেঙ্গে পরিস না সব ঠিক হয়ে যাবে সঠিক চিকিৎসা নিয়ম মেনে চললেই হবে।'
রেখার চোখে জল।
কাকিমা কাছে টেনে বললেন' মা গো জীবনে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বার বার পড়তে হয় ।দিশেহারা হতে নেই ,দিক ,লক্ষ্য স্থির রেখে সঠিক কর্ম করো ।তাহলে দেখবে সঠিক দিশা খুঁজে পাবে।'
রেখা কাকিমার বুকে আছড়ে পড়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল।
কাকু কান্নার আওয়াজ শুনে বললেন' ননী, কাঁদছে কেন?'
কাকিমা বললেন  'এমনি? চলে যাবে তো?'
কাকু বললেন 'জামাই এর কিছু খবর এসেছে নাকি?'
কাকিমা বললেন 'দেখলি ঠিক  কানে পৌঁছে যায় ।তোর মিথ্যে বলে উপায় নেই।'
কাকু আবার বললেন 'কি গো?'
কাকিমা বললেন 'হ্যাঁ।'
কাকু বললেন'কি এক্সপেক্ট করছেন ডাক্তার?'
কাকিমা বললেন ডাক্তার কতগুলো টেস্ট দিয়েছেন‌ আজকে করাবে?'
কাকু বললেন 'অত চিন্তা করতে হবে না, সুস্থ হয়ে যাবে ।যাই হোক না কেন?'
রেখা বলল' কাকু ,কাকিমা তোমরা সাবধানে থেকো।'
কাকিমা বললেন ' আমরা  সাবধানে ই থাকবো, তুমি বেশি চিন্তা ক'রো না।'
রেখা বলল 'সকালবেলায় রোজ কিন্তু ওই চা টা করে খাবে আর লেবু দিয়ে খাবে কিন্তু?'
কাকু বললেন 'ননী, কি চা খেতে বলছে?'
কাকিমা বললেন'বলছে আদা, গোলমরিচ ,লবঙ্গ ,তুলসী পাতা এইসব মিক্স করে ভালো করে ফুটিয়ে চা বানিয়ে সেটাকে খেতে ?'
কাকু বললেন 'দেখলে আমার মেয়েটার মাথায় কত বুদ্ধি ।এগুলো ইমিউনিটি পাওয়ার করে না কি রে মা?'
রেখা বলল' হ্যাঁ,এইগুলো খাবে। তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাবে।'
কাকু কাকিমা কে উদ্দেশ্য করে বললেন 'হ্যাঁ ওটাই করবে। আমার মেয়ে যখন বলেছে ,ওটাই কিন্তু করবে ?'
কাকিমা বললেন 'তুমি একবার যখন শুনে নিয়েছো, না করে উপায় আছে?'
 রেখা বলল'কাকিমা ব্যাগগুলো গুছিয়ে নিই।'
কাকিমা বললেন 'তার আগে একটু খেয়ে নে।'
রেখা বলল ' আমার খাবার ইচ্ছে নেই কাকিমা।'
কাকিমা বললেন 'না মা তা বললে হয় না ।তুমি কমজোর হয়ে গেলে তো হবে না ।এই সময় তোমাকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে ।পেটে তো কিছু দিতে হবে বলো?'
রেখা চুপ করে আছে।
কাকিমা বললেন 'আমি দুপুরের খাবার বানিয়ে দিচ্ছি ।ওটা তুমি বাড়িতে নিয়ে যাবে।'
রেখা বলল 'কাকিমা তোমাকে এত কিছু করতে হবে না।'
কাকু শুনতে পেয়ে ভেতর থেকে বললেন 'কেন করতে হবে না ,কেন মা? তুমি বাড়িতে কি আবার হাত পুড়িয়ে রান্না করবে?'
কাকিমা বললেন 'তোর কাকু ঠিকই বলেছেন।'
রেখা চুপ করে রইলো।
ইতিমধ্যেই রেখার ফোন আবার বেজে উঠল দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুরমর্দিনী'।
রেখা ফোনটা রিসিভ করল'হ্যালো'।
পার্থ বলল 'বৌদি গাড়ি পৌঁছে গেছে?'
রেখা বললো 'কই এখনো তো এসে পৌঁছায় নি।'
পার্থ বলল 'তাহলে এর মধ্যেই পৌঁছে যাবে দেখুন।'
ফোনটা কাটার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি এসে ঢুকলো।
ইতিমধ্যে কাকিমার সব রান্নাবান্না রেডি হয়ে গেছে।
গাড়ি এসে স্টার্ট বন্ধ করলো ,ড্রাইভার নামল। গেটটা খুলে দিলো রেখা ।ক্যাচ করে আওয়াজ হল গেটে।
রেখা বলল 'আসুন আসুন ভেতরে আসুন।'
ড্রাইভার বলল 'বৌদি আপনি রেডি তো?'
রেখা বললো 'হ্যাঁ আমি রেডি।'
ড্রাইভারকে বসার ঘরে বসতে দিল সোফাটায়।
কাকিমা ড্রাইভার এর জন্য চা, জল, নাস্তা নিয়ে এসে হাজির ,বললেন' এতটা পথ এসেছে বাবা ,কিছু খেয়ে নাও।'
ড্রাইভার বলল 'না কাকিমা, এখন কিছু খাবো না।'
কাকিমা বললেন 'তা বললে তো হবে না ।আমার বাড়িতে এসেছো। না খেয়ে চলে যাবে ?সেটা তো হবে না।'
বাধ্য হয়ে ড্রাইভার তখন জল, একটু মিষ্টি আর চা খেলো।'
অন্যদিকে কাকিমা রেখার জন্য খাবার টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে  দিল। যাতে মেয়েকে হাত পুড়িয়ে গিয়ে রান্না করতে না হয়।
এরপর এল বিদায়ের পালা মেয়ে ও কাঁদছে ,কাকিমা কাকু ও কাঁদছে। রেখার বারবার মনে হচ্ছে'সেই গানটি
'আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে? বসন্তের
বাতাসটুকুর মতো। সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে। ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত। সে চলে গেল বলে গেল না, সে কোথায় গেল ফিরে এল না।'আজ এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বারবার এই গানটি অনুরণিত হতে লাগল রেখার মনে প্রানে। বেদনাতুর মন নিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে তার চেনা ব্যস্ততার সেই বাঁধাধরা জীবনে। গাড়িতে উঠল গাড়ি স্টার্ট করল রেখা জানলা দিয়ে বারবার কাকু কাকিমা আর গ্রামের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে লাগলো । আর হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে উঠতে লাগলো'আবার ফিরে আসবো, আবার ফিরে আসবো এই শান্তি সুধা ধামে।'সকালের ভোর যদি দেখতেই হয়, তবে ফিরে আসতেই হবে জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো ভালোবেসে এই গ্রামে'
'ভোর;
আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল,
চারিদিকে পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ।
একটি তারা এখনো আকাশে...।'

শান্তা কামালী





বনফুল
( ৩৪ পর্ব ) 
শান্তা কামালী

ময়না গিয়ে দেখে জুঁই তখনও আধঘুমন্ত অবস্থায়, ময়না কাছে গিয়ে  কপালে হাত দিয়ে আস্তে করে ডাকলো আপা....
জুঁই ময়নার দিকে তাকালো, ময়না বললো আপা পলাশ দাদাবাবু এসেছেন খালাম্মা বলছেন আপনাকে নিচে আসতে। 
জুঁই বললো ময়না তুমি যাও আমি আসছি।
 জুঁই চোখে মুখে কয়েক ঝাপটা পানি দিয়ে টাওয়েলে মুখ মুছে নিচে নেমে এলো। জুঁই হেসে বললো তুমি?  কই সকালে বলোনি তো তুমি আসবে! 
পলাশ বললো  তুমি যখন বললে তোমার শরীরটা ভালো না তখন থেকেই মনটা অস্থির হয়ে ছিলো.... যত সময় যাচ্ছিলো খারাপ লাগা বেড়ে যাচ্ছিলো, তাই অপেক্ষা না করে.....
 চলে এসে কি ভুল করেছি? 

 জুঁই বললো আমি কি তোমাকে তাই বলেছি?  পলাশ বললো না মানে এভাবে চলে এসে কাজটা ঠিক করছি কি না বুঝতে পারছি না....!
জুঁই বললো একদম ঠিক করেছ।হঠাৎ জুঁই খেয়াল করছে ওর পরনে টিশার্ট টাওজার, এই ড্রেসে পলাশের সামনে একটু লজ্জা পাচ্ছে৷ সে ….। 
পলাশ অবাক হয়ে দেখছে আজ যেন জুঁইকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে...! 
পলাশ জুঁইয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখতে পেলো হালকা জ্বর আছে, জুঁই তুমি তো সকালে যখন কথা হলো বললে না তোমার জ্বর!  

আরে আমি তো এখনোও বুঝতে পারছিনা যে আমার জ্বর......।
 পলাশ বললো, আমি এসে শুনেছি তুমি দুপুরে কিচ্ছু খাওনি। চলো আমি কিছু খাবার এনেছি তুমি খাবে।

জুঁই ময়নাকে ডেকে বললো খাবারগুলো প্যাকেট থেকে খুলে পরিবেশন করতে। পলাশ জুঁই দুজনেই টেবিলে বসলো, পলাশ জুঁইয়ের প্লেটে তুলে দিচ্ছে যে খাবার গুলো জুঁইয়ের পছন্দ।
পলাশও অল্প কিছু খেলো জুঁই তেমন কিছুই খেতে পারলো না। ময়না ট্রেতে করে চার কাপ কফি নিয়ে এলো জুঁই বললো ময়না আব্বু আম্মুকে ডাক, মনোয়ারা বেগম পলাশকে দেখেই রাতে খাওয়াদাওয়ার এ্যরেঞ্জমেন্ট রেডি করে নিয়েছেন। মনোয়ারা বেগম এসেই বললো বাবা তুমি রাতে খেয়ে যাবে।

আন্টি খাওয়ার ঝামেলা কেন? আঙ্কেল, জুঁই কিন্তু তেমন কিছুই খেলো না।

জুঁই বললো, আব্বু খেতে ইচ্ছে করছে না, কি করবো বলো। জোর করে কিছু খেতে গেলে বমি হবে...। 
 কফি খাওয়া শেষ করে মনোয়ারা বেগম রান্না ঘরে চলে গেলেন।
জুঁই পলাশ উপরে উঠে গেলো
জুঁই রুমে ঢুকে বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।পলাশ জুঁইয়ের মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল...। দুজনেই দারুণ গল্প জুড়ে দিলো কখন যে রাত দশটা বেজে গেল খবর নেই। 
ময়না এসে বলে গেল টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে, পলাশ জুঁই দুজনেই নিচে নেমে এলো জুঁই কিছুই খেতে পারলো না। পলাশ খাওয়া শেষ করে আন্টি আঙ্কেলকে সালাম জানিয়ে বিদায় নিলো।

চলবে....

শামীমা আহমেদ





শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ২৫)
শামীমা আহমেদ 

সারাদিন নানান ব্যস্ততায় কেটে গেলেও ভেতরে ভেতরে শিহাবের কোথায় যেন একটা চাপা ব্যথা। অপ্রকাশিত অভিমান। কিছু হারিয়ে যাওয়ার উৎকন্ঠা,যেন ভেতরে বয়ে চলেছে প্রিয়জন হারানোর বেদনা,চারিদিক শোকে মুহ্যমান। সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই লগ্নে শিহাব যাবতীয় দ্বায়িত্ব সেরে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলো।বেরুনোর আগে মোবাইলে আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।নাহ! কোন মেসেজ নেই। বুঝা গেলো শায়লা খুবই অভিমানে আছে। শিহাব দোষটা, দায়টা নিজের উপরেই নিলো। শায়লাকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না,শায়লাকে অপেক্ষায় রেখে তার ভেতরেও কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে।
না, এভাবে দিনদিন একটু একটু করে সম্পর্কটা কোনদিকে এগিয়ে যাচ্ছে? শেষটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? শায়লা বিবাহিতা,একজনের জীবনসঙ্গী।এভাবে তাকে, তার মনকে এখন শিহাবের দিকে ফেরানো মোটেও কোন যুক্তিযুক্ত কাজ হচ্ছে না। শিহাব নিজেকে চিনতে পারছে না।নাহ! সেতো কখনো এমন অসংলগ্ন কাজ করেনি। পরিবারে সে যথেষ্ট দ্বায়িত্ববান একটি ছেলে তার এমন দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করা ঠিক হচ্ছে না।কিন্তু তার জীবনে শায়লার এই সহসা আগমন, কথায় কথায় এতটা জড়িয়ে যাওয়া যেমন একটা পূর্ণতা এনে দেয় আবার শায়লার নীরবতা, অনুপস্থিতিও তার মাঝে একটা শূন্যতায় ভরিয়ে দেয়। সারাদিনে শায়লার একটা খোঁজ না নিলে মনের ভেতর অস্বস্তি লাগতে থাকে,তাকে ভেবে শায়লা কতইনা গভীরে চলে যায়, তার অতীতের কষ্টটা ভুলে থাকতে শায়লার একটু  কন্ঠের ছোঁয়া শিহাবকে প্রানবন্ত করে তোলে, শায়লার সাড়া না পেলে অভিমানে তার মনটিও ভরে যায়।মনের কোনে কোথায় যেন এক অদৃশ্য টানে বারবার শায়লার কাছে ফিরে আসা। তবে কি শায়লাকে সে বাঁচার অবলম্বন ভাবছে? একাকী জীবনে সঙ্গী করে পেতে চাইছে?
নয়তো কেন এমন অনুভুতি অনুভব?বুকের ভেতর কোথায় যেন একটা অধিকার জন্মাচ্ছে ধীরে ধীরে।নাহ! নিজেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। শায়লাতো ঠিকই করছে। যার কখনো কোন বাস্তবরূপ হবে না, শুধু মনের মায়ার টানে কেন মিথ্যে আশায় তাকে বাঁধা?
মনের এমনি নানান ভাঙা গড়ায় শিহাবের ভেতরে সিদ্ধান্তহীনতা। 
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শিহাব বাইকে স্টার্ট দিলো।মনের ভেতর নানান প্রশ্ন আর উত্তরের দোলাচলে শিহাব এগিয়ে চললো।

শায়লা সারাদিন মনের ভেতর একটা দৃঢ় সিদ্ধান্তে অটল রইল। শিহাবকে কিছু কথা বলবে ভেবে সে মনস্থির করলো।ভেবে নিলো নিজেকে ফেরাতে হবে এই মিথ্যে মায়া মরীচিকা থেকে। এই অলীক স্বপ্ন, কোনদিনই যার কোন বাস্তবরূপ আসবে না তার জন্য কেন এত অপেক্ষা, উৎকন্ঠা?যেখানে দুজনার জীবনের শুরুর পাঠ  আর শেষের গন্তব্য ভিন্ন,শুধুমাত্র ক্ষনিক সময়ের জন্য যার যার গন্তব্যের অপেক্ষমান ট্রেনের যাত্রী হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে  ক্ষনিকের দেখা। শায়লা বেশ বুঝতে পারে শিহাব তার নিজের জীবনকে একটি গন্ডীতে বেঁধেছে।হয়তো কখনো মনের কোন দূর্বলতায় শায়লাকে আপন ভেবেছে। আজ যখন শায়লা এগিয়ে গেছে শিহাব নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিচ্ছে।শায়লাও ভেবে নিলো সেও নীরব থাকবে।নিজেকে গুটিয়ে নিবে।শায়লা আনমনা হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।আকাশে চমৎকার চাঁদ উঠেছে!কিন্তু শায়লার মোটেও চাঁদটিকে ভালো লাগছে না।মনে  হচ্ছে  চাঁদটি কেমন যেন  তার দিকে চেয়ে উপহাসের হাসি হাসছে।শায়লা জানালার পর্দা টেনে দিয়ে বিছানায় চুপচাপ শুয়ে রইল।ঘরের বাতি দেয়ার আলসেমিতে ভর সন্ধ্যাও ঘরটি আলোহীন হয়ে রইল!

সন্ধ্যা ফুরিয়ে রাত্রি নেমে এলো।পথ ঘাট পেরিয়ে শিহাব  শহরের পানে ছুটছে। একটু থামতে হবে।সন্ধ্যার চা পানের তাগিদ অনুভব করাতেই একটা চায়ের দোকানে থামল। বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে শিহাব একটা স্টিকে আগুন ধরিয়ে চোখ বন্ধ করে বেশ একটা সুখটান দিতেই আচমকা শায়লার মুখটা ভেসে উঠল! আর চোখ খুলতেই শিহাবের চোখ আটকে গেলো আকাশের অমন বিশাল রূপার থালার মত চকচকে চাঁদের গায়ে ।সারাটা আকাশ একেবারে ধবধবে সাদা হয়ে আছে। যেন পৃথিবীর বুকে চাঁদ থেকে ঠিকরে আলো বেরিয়ে আসতে চাইছে।মূহুর্তেই
শিহাব জীবনের প্রতি তার সব মান অভিমান সঠিক ভুলের হিসেব নিকেশ ন্যায় অন্যায়ের ভেদাভেদ ভুলে গেলো। চট করে মোবাইলে শায়লার নাম্বারে কল দিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন শায়লার কন্ঠটা ভেসে আসবে!

ও প্রান্তে শত অভিমানেও  শায়লা ভেতরে ভেতরে একটা ফোন কলের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে ছিল। কল আসতেই সারাদিনের যত ভাবনা দূর্ভাবনা নিমেষেই জল হয়ে গেলো।
ফোন রিসিভ করেই শুনল শিহাবের কন্ঠ! 
শায়লা, কেমন আছেন?
শায়লায় চোখ  উপচে জল পড়লো।
ভালো নেই।
কেন? 
শায়লা কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে না পেরে কেমন করে যেন ভেতর থেকে দ্বিধাহীনভাবে কথাগুলো উঠে এলো আর মুখ ফসকে তা বেরিয়ে এলো,শিহাব আমি অসুস্থ। তুমি আমাকে দেখে যাও।তুমি এলেই আমার সব অসুস্থতা ভালো হয়ে  যাবে।আসবেতো?
ওপ্রান্তে শিহাব শায়লার এমন  আবেগী উত্তরে একেবারে জমে ঠান্ডা হয়ে গেলো। শরীরের রক্ত চলাচল মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো।
মনে হলো  লোহার মতন শক্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে সে দাঁড়িয়ে। আর ভেতরে উথাল পাথাল সমুদ্দুর।কেমন করে বুঝাবে সারাটাদিন তার কেমন কেটেছে। শিহাব খুব ভালো করেই জানে দুঃখের অমানিশা কেটে গেলে আসে আলোকিত রক্তিম ভোর।যা চিরকালীন সত্যি। মানুষ দ্বিধাহীন থাকলেও প্রকৃতিই তার সমাধান করে দেয়।শায়লার অমন স্পষ্ট উচ্চারণে শিহাব স্বপ্ন আর বাস্তবের উর্ধ্বে কোন এক বায়বীয় জগতে ভাসছিল।
কোন আগপিছ না ভেবে বলে উঠল, তোমার বাসার ঠিকানাটা জানাও আমি তোমাকে দেখতে আসবো।ওপ্রান্তে শায়লা কাঁদছে।
শিহাব ফোন বন্ধ করে হাতের জলন্ত সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিল। চোখ তুলতেই দেখলো চাঁদটি যেন তার পানে চেয়ে হাসছে। শিহাব দ্রুত মোবাইল ক্লিকে চাঁদের ছবিটি তুলে নিয়ে শায়লাকে পাঠিয়ে দিল।আর লিখলো "আজকের চাঁদ"।
শায়লা বুঝে নিলো,শিহাবই তাহলে চাঁদটিকে শায়লার কাছে পাঠিয়েছিল। শায়লা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখল আকাশের চাঁদটিতে শিহাবের মুখটি হাসছে!
শিহাব বাইকে স্টার্ট দিলো। আজ শায়লার সাথে দেখা করে তারপর বাসায় যাবে।মনে মনে বারবার বাসার ঠিকানাটা  আওড়ে নিলো।
চলবে..

ঝুম্পা দাস হালদার






অম্বা আমি 


আমি অম্বা,
আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিশোধের আগুন, 
গঙ্গা পুত্র ভীষ্মের মতো মহাবীর পরাক্রমীর মৃত্যুর ছায়াপথ আমি, 
যে ধ্বংস করেছে আমার ভবিষ্যতের আলো,
আমার প্রেম, 
আমার ভালোবাসার আস্বাদ, 
পরিবর্তে দিয়েছে আমায় প্রতিশোধের আগুন, 
তাইতো জন্মান্তরেও শ্রীখন্ডীনি রূপে অম্বা আমি,

আমিই শক্তি, 
     আমিই মৃত্যু, 
           আমিই প্রগতি,
                   আমিই নারী। 

আজও যুগে যুগে জন্ম নেয় আমার প্রতিশোধরূপী  আত্মা, 
   জন্মান্তরেও আমার হৃদয়ে জ্বলতে থাকে প্রতিশোধ বহ্নি, 
তাইতো, এক মুহুর্তে অস্ত্রহীন, বিকলাঙ্গ করে দিতে পারি আমি ভীষ্মের ন্যায় হাজারো বীর পরাক্রমী শক্তিকে। 
 
তাই, স্তব্ধ হও পৈশাচিক আস্ফালনে উন্মত্ত পিশাচদল, 
   জেনে রেখো....
বর্তমান নারীশক্তির মূলাধারও, 
  সেই আমি। 
   
না,মৃত্যু নেই , 
মৃত্যু নেই আমার
   যুগে যুগে আবির্ভূতা মৃত্যুর ছায়াপথরূপী 
            অম্বা আমি , 
        
      আমিই দামিনী, 
            আমিই মৃত্যু, 
                 আমিই প্রগতি,
                    আমিই নারী।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান




ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন
( ২য় পর্ব ) 


আব্বা, সহধ‌র্মিনী আর ছোট বাবু‌কে বিদায় দি‌য়েই আকাশযা‌নের দি‌কে অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কা‌লে আমার সহধ‌র্মিণী ক্ষু‌দেবাবুর হাত নেড়ে আমা‌কে বিদায় জানা‌লো কিন্তু যে ঘটনা কোন‌দিনই ঘ‌টে‌নি দুর্ভাগ্যক্র‌মে সেই ঘটনা‌টিই ঘ‌টে গে‌লো। আমার আব্বা‌কে আ‌মি এত বড় হ‌'য়ে‌ছি কিন্তু কোন‌দিন কাঁদ‌তে দে‌খি‌নি। সে‌দিন তাঁর চো‌খের এক কোণায় পা‌নি জমা দে‌খেছিলাম। 

এই পা‌নির মর্মকথা সে‌দিন বুঝ‌তে না পার‌লেও কিন্তু বুঝলাম এগার মাস প‌রে যে‌য়ে। হয়তবা আমার আব্বা আ‌গেই টের পে‌য়ে‌ছি‌লেন তাঁর শেষ প‌রিণতির কথা। এ ব্যাপারটা প‌রে ব‌লি। যা‌হোক, সবাই‌কে বিদায় দি‌য়ে আকাশতরী‌তে উঠার জন্য অতঃপর ধীর পদ‌ক্ষে‌পে এগু‌তে থাকলাম আর বার বার বউ-বাচ্চার দি‌কে ফি‌রে ফি‌রে তাকাচ্ছিলাম আর ভাব‌ছিলাম প্রাণ‌প্রিয় শ্র‌দ্ধেয় আব্বার কথা। আব্বার তেমন ‌কোন বয়স হ‌'য়ে‌ছি‌লো না। মাত্র ৫৭বছর। যা‌হোক, যাত্রার উ‌দ্দে‌শ্যে ঢুকলাম সেই ঢাউসপ্রমাণ এয়ারক্রা‌ফ্টে। সে যেন এক বি‌চিত্র অ‌ভিজ্ঞতা। 

পাঁচ-ছয়শ' মানুষ আমরা, আমা‌দের সাম‌রিক সরঞ্জাম আর ব্য‌ক্তিগত অস্ত্র, সাব মে‌শিনগান নি‌য়ে বসলাম আমরা নিজ নিজ সি‌টে। ভারী বি‌চিত্র এ এয়ারক্রাপ্টটি। এর আসন যেন স্বাভা‌বিক আসন নয়। ভাবলাম, এত বড় শ‌ক্তিধর তা আবার পরাশ‌ক্তিগু‌লোর ম‌ধ্যে এক নম্বর দেশ তারা কেন এমন অস্ব‌স্তিকর ঢাউস বিমান‌টি বানা‌লো, কিইবা তা‌দের উ‌দ্দেশ্য?

য‌া‌হোক, ঠিক সকাল দশটায় আকা‌শে উড়‌লো আমা‌দের সেই দৈত্যসম ভারী আকাশযান শন শন শ‌ব্দে পূর্ব দিগ‌ন্তে। হি‌সেব কষলাম, কেন প‌শ্চি‌মে নয়। গন্তব্য‌টা তো অ‌নেকটা মধ্য আ‌মে‌রিকা‌তে বা ক্যারা‌বিয়ান দ্বী‌পের একটা ছোট দ্বীপ দেশ হাইতিতে। 

কিন্তু তখনও জানতামনা যে আমা‌দের একটা প‌নের দি‌নের প্র‌শিক্ষণ পর্ব সুষ্ঠুভা‌বে সম্পাদ‌নের লক্ষ্যে পোর্টোরি‌কোর ক্যাম্প সা‌ন্টিয়া‌গো‌তে যাত্রা‌বির‌তি ক'র‌তে হ‌বে। যা‌হোক, প‌রে জান‌তে পারলাম ভার‌তের আকাশ ব্যবহার করা নি‌ষেধ, সেই দে‌শে প্লেগ‌রোগ না‌কি মহামারীরু‌পে দেখা দেওয়ায় এ নি‌ষেধাজ্ঞা ছিল। 

সৃ‌ষ্টিকর্তা আল্লাহপাকই ভাল জা‌নেন, আকাশ দি‌য়ে যা‌বো আর তার সা‌থে প্লেগের আবার কি সম্পর্ক থাক‌তে পা‌রে? বোধ হয় স‌বেমাত্র মিয়ানমার পার হ'লাম। এরপর পূর্ব‌ দি‌কের সর্ব‌শেষ দেশ জাপানের গুয়াম পার হ‌'য়ে এ‌কেবা‌রে প্রশান্ত মহাসাগর ধ‌'রে হাওয়াই দী‌পের রাজধানী‌তে হনুলুলুতে গন্তব্য আমা‌দের যাত্রার প্রথম ধাপ। হ'নুলুলুর কথা ম‌নে হ‌'তেই দ্বিতীয় মহাযু‌দ্ধের সেই পার্ল হারবা‌রের কথা ম‌নে প‌ড়ে গে‌লো। যা‌হোক, ঘন্টা তি‌নেক এভা‌বে বির‌তিহীনভা‌বে উড়ার পর সূর্যমামা‌টি ডু‌বে ‌গে‌লো এবং হঠাৎ ক‌'রেই সন্ধ্যে ঘ‌নিয়ে ‌ঘোর অন্ধকার নে‌মে এ‌লো।

চল‌বে.......