ইউএন মিশনে হাইতিতে গমন
( ২য় পর্ব )
আব্বা, সহধর্মিনী আর ছোট বাবুকে বিদায় দিয়েই আকাশযানের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কালে আমার সহধর্মিণী ক্ষুদেবাবুর হাত নেড়ে আমাকে বিদায় জানালো কিন্তু যে ঘটনা কোনদিনই ঘটেনি দুর্ভাগ্যক্রমে সেই ঘটনাটিই ঘটে গেলো। আমার আব্বাকে আমি এত বড় হ'য়েছি কিন্তু কোনদিন কাঁদতে দেখিনি। সেদিন তাঁর চোখের এক কোণায় পানি জমা দেখেছিলাম।
এই পানির মর্মকথা সেদিন বুঝতে না পারলেও কিন্তু বুঝলাম এগার মাস পরে যেয়ে। হয়তবা আমার আব্বা আগেই টের পেয়েছিলেন তাঁর শেষ পরিণতির কথা। এ ব্যাপারটা পরে বলি। যাহোক, সবাইকে বিদায় দিয়ে আকাশতরীতে উঠার জন্য অতঃপর ধীর পদক্ষেপে এগুতে থাকলাম আর বার বার বউ-বাচ্চার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম প্রাণপ্রিয় শ্রদ্ধেয় আব্বার কথা। আব্বার তেমন কোন বয়স হ'য়েছিলো না। মাত্র ৫৭বছর। যাহোক, যাত্রার উদ্দেশ্যে ঢুকলাম সেই ঢাউসপ্রমাণ এয়ারক্রাফ্টে। সে যেন এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
পাঁচ-ছয়শ' মানুষ আমরা, আমাদের সামরিক সরঞ্জাম আর ব্যক্তিগত অস্ত্র, সাব মেশিনগান নিয়ে বসলাম আমরা নিজ নিজ সিটে। ভারী বিচিত্র এ এয়ারক্রাপ্টটি। এর আসন যেন স্বাভাবিক আসন নয়। ভাবলাম, এত বড় শক্তিধর তা আবার পরাশক্তিগুলোর মধ্যে এক নম্বর দেশ তারা কেন এমন অস্বস্তিকর ঢাউস বিমানটি বানালো, কিইবা তাদের উদ্দেশ্য?
যাহোক, ঠিক সকাল দশটায় আকাশে উড়লো আমাদের সেই দৈত্যসম ভারী আকাশযান শন শন শব্দে পূর্ব দিগন্তে। হিসেব কষলাম, কেন পশ্চিমে নয়। গন্তব্যটা তো অনেকটা মধ্য আমেরিকাতে বা ক্যারাবিয়ান দ্বীপের একটা ছোট দ্বীপ দেশ হাইতিতে।
কিন্তু তখনও জানতামনা যে আমাদের একটা পনের দিনের প্রশিক্ষণ পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পোর্টোরিকোর ক্যাম্প সান্টিয়াগোতে যাত্রাবিরতি ক'রতে হবে। যাহোক, পরে জানতে পারলাম ভারতের আকাশ ব্যবহার করা নিষেধ, সেই দেশে প্লেগরোগ নাকি মহামারীরুপে দেখা দেওয়ায় এ নিষেধাজ্ঞা ছিল।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাকই ভাল জানেন, আকাশ দিয়ে যাবো আর তার সাথে প্লেগের আবার কি সম্পর্ক থাকতে পারে? বোধ হয় সবেমাত্র মিয়ানমার পার হ'লাম। এরপর পূর্ব দিকের সর্বশেষ দেশ জাপানের গুয়াম পার হ'য়ে একেবারে প্রশান্ত মহাসাগর ধ'রে হাওয়াই দীপের রাজধানীতে হনুলুলুতে গন্তব্য আমাদের যাত্রার প্রথম ধাপ। হ'নুলুলুর কথা মনে হ'তেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সেই পার্ল হারবারের কথা মনে পড়ে গেলো। যাহোক, ঘন্টা তিনেক এভাবে বিরতিহীনভাবে উড়ার পর সূর্যমামাটি ডুবে গেলো এবং হঠাৎ ক'রেই সন্ধ্যে ঘনিয়ে ঘোর অন্ধকার নেমে এলো।
চলবে.......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much