উপন্যাস
টানাপোড়েন ১৭৪
ওদের ভালোবেসে
মমতা রায় চৌধুরী
উফ্ বাপরে বাপ অবশেষে কুড়িটা খাতা দেখা হলো। ও বাবা শিরদাঁড়াটা যেনো সোজা হচ্ছে না। মাথাটা এদিক ওদিক করে একটু এক্সারসাইজ করে নিল ।রেখা হাতের এক্সারসাইজটাও করে নিল। যন্ত্রণাটা যেভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ যেন করোনাকেও হার মানাবে । আজকে মরণপণ প্রতিজ্ঞা করেছিল রেখা যে করেই হোক কুড়ি টাকা খাতা দেখতেই হবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রেখা রাত সাড়ে বারোটা বাজে । এ বাবা এ যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ,বেশ মুষলধারে বৃষ্টি।
রেখার মনে হল' কি ব্যাপার কুই কুই আওয়াজ হচ্ছে? ওরা কি (তুলি, মিলি ,পাইলট) বৃষ্টিতে ভিজছে,?
শব্দের উৎস সন্ধান এর জন্য রেখা দরজাটা খুলে দেখে' হ্যাঁ ,যা ভেবেছিল তাই । ব্যাটারা বৃষ্টিতে ভিজে একসার হয়েছে।
কিন্তু আজকে ওরা বাইরেই বা কেন?
কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর ভাবল আজকাল তো ওরা ভেতরে থাকতে চায় না হয়তো ওই জন্যই মনোজ গেটের বাইরে রেখেছে। সারা রাত পাহারা দেয় ।নেহাতই বৃষ্টিটা এসে পড়াতে বেচারাদের শেল্টার ছিল না ,তাই এরকম আওয়াজ করছে।
রেখা তাড়াতাড়ি গ্যারেজ ঘরটা খুলে দিল।
আর একটা গামছা দিয়ে ওদের গা মুছে দিল।
তারমধ্যে রেখা ভালো করে বস্তা বিছিয়ে দিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করে যেই গেট বন্ধ করতে যাচ্ছে ঠিক তখনই তুলি এসে কুঁইকুঁই কুঁইকুঁই আওয়াজ করছে।
রেখা বলল' কি হয়েছে?'
তুলি তো লেজ নাড়তেই থাকে আর কুঁই কুঁই আওয়াজ করতেই থাকে।
রেখা কতগুলো বিস্কিট নিয়ে এসে দিল। ওরা সবাই খেলো দুটো একটা । আবার দরজা বন্ধ করে ভেতরে আসতে যাচ্ছে ঠিক তখনই আবার তুলি কুই কুই আওয়াজ করতে থাকে।
রেখা কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না ও কি বলতে চাইছে?
তারপর রেখা বলল' তুই কি ভেতরে
ঢুকবি? ''বলেই রেখা ভেতরে ঢুকলো তার পেছু পেছু তুলিও ঢুকলো।
ও বাবা রেখার রুমেই এসে ঢুকলো।
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দুটো বাজে।
রেখা আর তুলিকে বাইরে বের করার জন্য জোরজবস্তি করলো না।কারণ মনোজ কিছুই বলবে না ও ওদেরকে খুব ভালোবাসে আর এখন তো বাড়িতে শাশুড়ি মা নেই সেটা অসুবিধে হবে না। তাই ভেবে চিন্তে দেখল ঘরেই থাক । ওদের ভালোবাসায় রেখা অন্ধ।তাই এই নিয়ে ভাবার অবকাশ ছিল
না ।এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে এবার ঘুমোতে হবে ।বাইরে তখনও বৃষ্টি হয়ে
যাচ্ছে ।মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ।ভুলে গেছে দেখেছো ওদিকে জানালাটা খোলাই ছিল কতটা জল চলে এসেছে রুমে কি করবে জল জমে থাকবে ।জানালার কাছে গিয়ে জানলাটা বন্ধ করলো । জানালাবন্ধ করতে করতে রেখার চোখেমুখে কিছুটা জলের ঝাপটা এসে লাগলো। রেখা ঘর মোছার নেতা টা এনে জলটা মুছে নিল। মুছতেই হত, না হলে তুলির গায়ে এসে পৌঁছাত।রেখার শরীর আর চলছে না।
এবার বিছানায় পড়লেই দু'চোখ ঘুমে অন্ধকার হয়ে আসবে।
ঠিক ঘুমোতে যাবে তখনই তুলির দিকে নজর পড়লো । রেখা দেখছে তুলিটা থর থর করে তখনও কাঁপছে ।রেখা তখন একটা বস্তা এনে ওকে চাপা দিলো ।
এবারে ঘুমাতে গেল কিন্তু মাথায় রয়ে গেল সারা রাজ্যের চিন্তা। আগামীকাল স্কুলে যেতে পারবে কিনা কে জানে?
বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দিতে এই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল রেখা। ঘুম ভাঙলো কলিং বেলের আওয়াজে।
কলিং বেলের আওয়াজ হচ্ছে" ওম জয় লক্ষ্মী মাতা….।
রেখা ঘুমের জড়তা কাটিয়ে দুচোখ দুহাত দিয়ে ডলতে ডলতে দরজা খুলল।
দরজা খুলে দেখতে পেল মাসি দাঁড়িয়ে।
মাসি বলল 'তোমার আজকে ঘুম হয়নি?"
রেখা বলল' কেন বলতো মাসি?"
'তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।'
"একদম ঠিক ধরেছ মাসি?"
'খাতা দেখেছি অনেক রাত পর্যন্ত।
তারপর তুলি মিলিদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।"
মাসি ঘর ঝাড় দিতে দিতে বলল 'কেন ওরা আবার কী করল?'
'ওরা কিছু করে নি ।তবে বৃষ্টি ওদের করিয়েছে ।
এত বৃষ্টিতে ভিজেছে ওদের আওয়াজে আমাকে বাইরে বেরোতে হয়েছে।"
'হ্যাঁ যা রা ত থেকে বৃষ্টি টা হল, সকালে যদি না কমতো, কি করে কাজে আসতাম কে জানে?"
রেখা চা করতে গেল এবং চা নিয়ে এসে মাসিকে দিল নিজে এক কাপ নিয়ে বসল।
আজ স্কুলে যেতে ভালো লাগছে না। শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে ।
মাসী বললো" আজকে রেস্ট নাও।"
রেষ্ট নোবো কিন্তু পরীক্ষা থাকলে তো যেতে হবে দেখিতো হোয়াটসঅ্যাপটা খুলে। আবার ভাবছে বড়দিকে ফোনটা করবে?"
কিন্তুএত সকালে ডিস্টার্ব করাটা কি ঠিক হবে?
থাক একটু পরে করতে হবে।'
একবার শুভ্রাকে মেসেজ পাঠাল পরীক্ষার ডিউটি লিস্ট টা তোর কাছে থাকলে একবার আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাস।'
শুভ্রা লিখলো ,"ঠিক আছে আমি সেন্ড করছি।"
মেসেজ ঢোকার আওয়াজ পেল
রেখা সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপটা চেক করলো।
রেখা দেখলে সত্যি সত্যি ডিউটি লিস্ট টা পাঠিয়েছ।
রেখা তারিখ মিলিয়ে দুজনের চেক করে দেখলো হ্যাঁ ডিউটি লিস্টের ছবি।। সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ টা চেক করে নিজের ডিউটি দেখতে পেলে সেকেন্ড হাপে আছে।
তাহলে কিছুটা সময় পাবে রেখা।
সেই আনন্দে যেন অর্ধেক ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। রেখা হাতের কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরে নিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে মনোজকে ডাকতে গেল গিয়ে দেখছে তুলি আরামসে ঘুম দিছে।
রেখা চা নিয়ে গিয়ে মনোজকে ডাকলো কিগো আজ উঠবে না উঠবে না?"
রেখার ডাকেতে তুলি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল তারপর আবার ঘুমিয়ে পরল।
মনোজ সাড়া দিল" কি হয়েছে?"
"বলছি উঠতে হবে তো নাকি?'
মনোজ বলল ঠিক টাইমে উঠবো।'
রেখা বললো" ঠিক আছে তোমার যখন সময় হবে তুমি উঠ .,পরে আবার আমাকে বোলো না যেন ডেকে দিই নি কেন,?"
এরইমধ্যে মাসি কাজ সেরে যাবার পথে বলল "বৌমা আসছি গো?
দরজাটা বন্ধ করবে তো?"
রেখা বলল'হ্যাঁ মাসি তুমি এসো। আমি যাচ্ছি।"
রেখা দেখল মনোজের এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই ।ওর যখন সময় হবে ,তখন ঠিকই উঠবে। আর খাবারটা নিয়ে তুলি কে ডাকল।তুলি কথা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসলো। তারপর রেখা সকলকে খাবার দিল।
রেখা স্নান করতে যাবে ঠিক তখনই আবার ফোন।"
*"কে ফোন করলো কে জানে?"
থাকাটা বেসিনে রাখতে রাখতে আবার ফোনের আর্তনাদ 'কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে যেন আমায় ,কে যেন ডাকে ….।,"
ফোনটা রিসিভ করে বলে ,"হ্যালো"
"ম্যাম আমি সুনীপা বলছি?"
"কে সুনীপা?"
'ম্যাম আমি এবার 11 ক্লাস পরীক্ষা দিচ্ছি।"
'হ্যাঁ কি হয়েছে?'
"বলছি ম্যাম আমি তো প্রজেক্ট দিইনি…কথাটা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই রেখার মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেল বলল আমি কবে তোমাদের প্রজেক্ট দিয়েছি এখন অব্দি প্রজেক্ট দাওনি তোমরা জানো প্রজেক্ট না দিলে পরীক্ষায় তোমরা ফেল করে যাবে?'
সুনীপা বলল" হ্যাঁ ম্যাম।'
সব জেনে বুঝে তোমরা এরকম কাজ করো বলো?'
"আসলেই ম্যাম আমি জানতাম না কি প্রজেক্ট দেয়া হয়েছে?'
"মানে ,মানে টা কি! জানো না মানে?"
"তখন স্কুলের গ্রুপে দিয়ে দেয়া হয়েছিল।"
"আসলে ম্যাম আমার ফোনটা খারাপ ছিল তাই?,"
"তা বেশ এখন কি করবে ভাবছো?"
"আমি জমা দেবো?"
"জমা দেবে তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও?'
'আসলেই ম্যাম কার কাছে জমা দেব আপনি তো স্কুলে নেই।"
রেখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে হ্যাঁ 11টা বাজে।
ও আচ্ছা আচ্ছা তুমি এক কাজ করো অন্য কারো জিজ্ঞেস করো 'আমি কোথায় বসি। তাছাড়া তোমরা চেন তো আমি কোথায় বসি । অয় টেবিলে এর উপর রেখে যাও।x
"ওকে ম্যাম"
"ঠিক আছে।"
রেখা ফোনটা রাখতে যাচ্ছে তখন আবার বলল ম্যাম ?
রেখা বলল 'আবার কি হলো?
" বলছি ম্যাম আমি কেটু ফ্রম ফিলাপ করবো কার কাছ থেকে নেবো।'
*তোমরা কন্যাশ্রী নো ডাল টিচারের কাছ থেকে নেবে।"
"থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম।'
'ইটস ওকে।'
এবার রেখা মনে মনে বলল' স্কুলে না গিয়েও শান্তি নেই। ঠিক বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করবে।'
রেখা ভাবতে ভাবতেই ওয়াশ রুমের দিকে গেল।