১৬ ডিসেম্বর ২০২১

অলোক দাস




মুক্তিযোদ্ধা 




স্বাধীনতা যে কি, তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ বাংলাদেশ I মুজিবর না থাকলে সোনার বাংলা স্বাধীন হোতো না I একাত্তরের মিছিল ময়দানে I মঞ্চে মুজিব ও ইন্দ্রিরা I শুধু কালো মাথা I আমার আসন সবার পেছনে I একটাই আওয়াজ মুজিবের, আমরা হাতে নয়, ভাতে মারবো I আজ স্বাধীন বাংলাদেশ I পঞ্চাশ বছর পার I যাদের মাতৃভাষা একটাই বাংলাভাষা I বিশ্ব কবির ও নজরুলের বাংলা আজ স্বাধীন I দুই বাংলা একদিন এক হবেই I বেড়াটা আর নয় I একটাই সুর সোনার বাংলা I চলো যাই বাংলাদেশ I যেথা মোদের মাটির টান I

মমতা রায় চৌধুরী /৭০







উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৭০
প্রতারণা
মমতা রায় চৌধুরী



                                                           শিশির ভেজা সিক্ত সকাল, সোনালী রোদ্দুর,  ঘাসের আলতো নরম ছোঁয়া -এ ভাবনা শহরে হবে না ,শুধু ফ্লাটের ব্যালকনিতে বসে বসেই ভাবা ছাড়া কিছু নয় । রয়েছে শুধু ক্লান্তি, দূষণ ,ব্যস্ততায় মোড়া  শহর। সেখানে কোথায় চেনা মানুষের সেই আবেগ জড়ানো কন্ঠ, কোথায় রয়েছে সেই নদীর কুলুকুলু শব্দ ,কোথায় পাওয়া যাবে বিজনে বসে অরন্যের একরাশ সবুজ স্নিগ্ধ ভালোবাসা। তবু এরমধ্যেই থাকা। এই ভাবনার ভেতরেই আলোড়ন তোলে ফোনের রিংটোন'যদি জানতেম আমার কিসের ব্যথা, তোমায় জানাতাম।'
হঠাৎ মনোজ 'রেখা রেখা' বলে ডাকার পরেও  সাড়া না দেওয়াতে বারান্দায় এসে রেখার কে ধাক্কা দিয়ে বলল' কি ব্যাপার তুমি শুনতে পাচ্ছ না? তোমাকে ডাকছি।'
রেখা বলল-কেন কি হয়েছে?
মনোজ বলল' তোমার ফোন বাজছে।'
রেখার কানেও আওয়াজটা একবার এসেছে কিন্তু রিংটোনটাতে এতটা নিমগ্ন হয়েছিল যে ,ফোনের  কাছে যাবার প্রয়োজন বোধ করে নি।
মনোজ বলল"এ রিংটোন আবার তুমি কবে লাগালে?'
রেখা বলল 'কেন তোমার ভালো লাগছে না?'
মনোজ হেসে বলল' রবি ঠাকুরের গান তো ভালো লাগবেই'।তবে ভাবতে অবাক লাগছে যদি জানতাম তোমার কিসের ব্যথা ,তাহলে তোমায় ব্যথা উপশমের মলম দিতাম।"
রেখা মনোজকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল 'যাও তো সবসময় ইয়ার্কি মেরো না তো।'
মনোজ বলল  'বাহ রে আমি কি খারাপ কথা বললাম ?আ মি তোমার স্বামী । আমার দায়িত্ব নেই।'
রেখা বলল' তা বেশ মহাশয়, সে দায়িত্ব পালন ক'রো,আগে তো নিজে পুরোপুরি সুস্থ হও ।তবে তো?'
এর মধ্যে আবার ফোন বেজে উঠল'জানতেম আমার কিসের ব্যথা....?'
রেখা বলল 'না ,দেখি কে ফোনটা করছে?'
রেখা ফোনটা রিসিভ করল বলল 'হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে এক ভদ্রমহিলা এক ভদ্রমহিলা বললেন ' কিরে ননী কোথায় ছিলিস মা?এতবার ফোন করলাম?'
রেখা বল ল 'একটু ব্যস্ত ছিলাম কাকিমা।
তোমরা সবাই ভালো আছো তো?'
রেখার কাকিমা বললেন' হ্যাঁ ভালো আছি। শুধু তোর কাকার একটু ঠান্ডা লেগেছে।'
রেখা উদ্বেগ কন্ঠে বলল 'সে কি! কাশি হচ্ছে নাকি কাকুর?'
ফাতিমা বললেন অত চিন্তা করতে হবে না ওষুধ খাওয়াচ্ছি।
রেখা বলল 'তা হলেও।'
কাকিমা বললেন তোকে একটা খবর দেবের আছে।
খবর জায়গার নাম শুনেই বুকটা ধড়াস করে উঠল কার কি হলো?
ঠাকুরমা বললেন'আমাদের গ্রামে বিপাশার কথা মনে আছে?'
রেখা বললো 'মনে থাকবে না।
 ওই তো আমাকে ফোন করে বলেছিল তোমাদের কথা যে একবার গিয়ে দেখা করে আসা উচিত।'
কাকিমা বললেন 'মেয়েটা কত ভাল ,মেয়েটার কত কোয়ালিটি ছিল। বিয়ের পর থেকে ওর বাড়িতে ওকে নিয়ে ঝামেলা লেগেই রয়েছে। শুনেছি ওর স্বামী দীপক সুচারু নয়।'
রেখা বলল-কেন কি হয়েছে কাকিমা?'
কাকিমা বললেন' কি বলবো আর বল মেয়েটি যেমনি শান্তস্বভাব, তেমনি চরিত্রে আবার কোয়ালিটিও ছিল প্রচুর।'
 রেখা বলল 'সে তো আমি জানি? কিন্তু তুমি আজ হঠাৎ ওর কথা বলছ ?ওর কিছু খবর দিতে চাইছো আমার কাছে?'
কাকিমা বললেন' ' একদমই ঠিক।'
রেখা বলল " কি হয়েছে?'
কাকিমা বললেন 'আরে' ওর স্বামী চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা কেসে ফেসেছে।'
রেখা বলল ''সে কিগো?'
কাকিমা বললেন 'হ্যাঁ রে পেপারে নাম বেরিয়েছে।'
রেখা বললো 'কোথায় চাকরি দিতে চেয়েছে?'
কাকিমা বললেন 'আরে আইআরসিটিসি তে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করেছে।'
রেখা বলল 'কাকে চাকরি দিতে চেয়েছিল?'
কাকিমা বললেন হাবরার বাসিন্দা এ ,আলী  মন্ডল এর অভিযোগ।
রেখা বলল' কি সাংঘাতিক গো কাকিমা?
কত টাকা নিয়েছিল?'
কাকিমা বললেন'ওই তো এ আলীর কাছ থেকে 58 হাজার টাকা নিয়েছে।
রেখা বলল 'তা কি করে বুঝলে যে ,ওই লোকটাই হচ্ছে প্রতারক?'
কাকিমা বললেন 'দাবিমতো টাকা দেয়ার পরও চাকরি না হয় এ আলী বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
রেখা বলল' কি বলছ এ সব কথা?'
কাকিমা বললেন ' চলতি মাসে টাকা দেয়ার পরও চাকরি না হ ওয়ায় এ. আলী বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন?'
রেখা বলল 'ভাবতেই পারছি না গো?'
কাকিমা বললেন 'জানিস ননী।এমনকি অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ,একসময় মোবাইল ফোনের সুইচ অফ করে দেয়।'
রেখা বলল' কি সাংঘাতিক ব্যাপার গো?'
কাকিমা বললেন 'তা ছাড়া আর কি বলি বল তো মেয়েটা এসেছিল ওর মুখের দিকে তাকানো যায় না'
রেখা বলল ' সে তো স্বাভাবিক যে মানুষটার সঙ্গে এতদিন ঘর করল।তার মনের খবর বোঝা গেল না।'
কাকিমা বললেন' চলতি মাসের 22 তারিখ নাগাদ এ .আলি মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ।যার ভিত্তিতে 22 অক্টোবর  মুচিপাড়া থানার পুলিশ প্রতারণার মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।
রেখা বলল ' তারপর কি হয়েছে গো কাকিমা? কিছু জানলে?'
কাকিমা  বললেন'শুধু' আইআরসিটিসি তে নয়'?
রেখা বলল তাহলে?
কাকিমা বললেন 'সম্প্রতি কলকাতায় মেট্রো রেলে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।'
রেখা বলল' কি অবাক কান্ড বল?
রেখা বলল 'এখন ও  কি করবে?ওর স্বামী যখন জেল হেফাজতে।'
কাকিমা বললেন'সেটাই তো।'
রেখা বলল 'ওর কয় ছেলে মেয়ে?'
কাকিমা বললেন 'ওর মেয়ে নেই, ওর দুই ছেলে। ছেলে দুটো কি সুন্দর দেখতে জানিস তো?'
রেখা বলল 'তাই?
কাকিম বললেন হ্যাঁ রে ,গ্রামে যখন আসে একবারের হলেও,আমার সঙ্গে হলেও দেখা করে যায় ।আর তোর কথা খুব জিজ্ঞেস করে?'
রেখা বলল 'ভাবো কি ভালো মনের মেয়ে' তার কপালে এই? '
কাকিমা বললেন ' সেটাই তো দেখছি?'
রেখা বলল ' প্রতারকদের শাস্তি হওয়া উচিত  ।'
কাকিমা বললেন 'সে তো ১00 বার। শুধু ভাবছি মেয়েটার কথা কি অথৈ জলে পড়ে গেল।'
রেখা বলল' আমি যতটুকু বিপাশাকে চিনি কাকিমা , তাতে দেখেছি ওর যা মনের জোর ,আর ওর মা 
কোয়ালিটি আছে ও দেখবে ঠিক ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।'
কাকিমা মা বললেন' ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি, ও যেন সব সামলে উঠতে পারে।'
রেখা বললো "ভালো দে সং কিছু হতে পারে না। বরং আঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আরও মনের জোর তাকে বাড়িয়ে দেয় ,তাকে শক্ত করে।'
কাকিমা বললেন 'ননী, তুই আবার কবে আসবি মা?'
রেখা বলল "ও একটু সুস্থ হোক। তারপর যাব কাকিমা ।তোমরা বরংএকদিন এসে ঘুরে যাও ।ভালো লাগবে টানা এক জায়গায় থাকো তো?''
কাকিমা বললেন" হ্যাঁ ,আমাদের আর যাওয়া রে।"
রেখা বলল" কেন তোমরা কি মেয়ের বাড়িতে আসতে পারো না?"
কাকিমা বললেন  'ঠিক আছে রে ননী ,রাখছি ।ওই দেখ ,তোর কাকা ও ঘর থেকে ডাকছে ,কিছু লাগবে বোধহয় ।ঠিক আছে ।ভালো থাকিস মা।'
কাকিমার ফোনটা কাটার পর রেখা ভাবতে লাগল সত্যি আজব শহর। শহরে চলে প্রতারণা- পেশা নিয়ে ,মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে, প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ,মাতৃত্ব নিয়ে ,পিতা মাতাকে নিয়ে, আরো কত কিছু আছে এই শহরে। আজকাল বোধহয় এই  শহরের ঢেউ গ্রামেতেও আছড়ে পড়ছে।'
 ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে হল যা মিলিদের খাবারটা তো দেয়া হয় নি। যাই একবার বাচ্চাগুলোকে আদর করে আসি ,খাবারটাও খাইয়ে আসি । আর সোনালী দিনের আশায় এইভাবেই দিনগুনে চলি।

শিবনাথ মণ্ডল





উকুনের জ্বালা



আগের দিনে শিক্ষকরা
ছিলেন ভীষণ কড়া
শিক্ষকদের ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা
করতো ভালো  পড়া

স্কুলেপড়া নাহলে শিক্ষকরা
মারতো বেতের বাড়ি
কখনো আবার স্কুল থেকে
দিত বারকরি।

এখন শিক্ষকরা মারেনা বেত
দেয়না কান মুলে
ছাত্র ছাত্রীরা মোবাইল  ঘেঁটে
পড়াযায় ভুলে।

শিক্ষক বলে তোরমাথায় কিস‍্যুনেই
ক্লাশথেকে দেবো বারকরে
ছাত্রিটি রেগে মাথা থেকে 
উকুন দিলোছুরে।

ঝাঁকড়া চুল মাষ্টারের  মাথায় 
উকুন গিয়ে পরে
অনেক  চেষ্টা করেও উকুন
পড়লনা ঝড়ে।

শিক্ষককের কথারভুলে
ঘটল এমন বিপদ
বাড়ির সবার মাথার মধ‍্যে
ঘুরছে এই আপদ।

অনেক চেষ্টা করেও উকুন
তবু নাপালাই
বাড়ি ভর্তিলোক জ্বলে মরছে
উকুনের জ্বলায়।।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান/৮ম পর্ব






ইউএন মিশ‌ন হাই‌তি‌তে গমন 
( ৮ম পর্ব ) 
মোঃ হা‌বিবুর রহমান

সা‌র্জেন্ট এ‌সেই শু‌ভেচ্ছা জা‌নি‌য়ে তার ব্য‌ক্তিগত ফি‌রি‌স্তি তু‌লে ধর‌লো এবং সে যে দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত হ‌'য়ে গন্তব্যস্হল পো‌র্টোরি‌কো আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দর পর্যন্ত আমা‌দের‌কে দেখভাল ক'র‌বে সে‌ কথাটা এক নিঃশ্বা‌সে জা‌নি‌য়েই আমা‌দের‌কে সা‌থে সা‌থে প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্য‌মে জান‌তে চাই‌লো যে, আমা‌দের তরফ থে‌কে তার নিকট এমূহু‌র্তে কোন জিজ্ঞাস্য আ‌ছে কিনা? আমরা কোন রকম অযথা বাক্য ব্যয় না ক‌'রে শুধ‌ুমাত্র তার দরাজ গলার ছোটো-খা‌টো একটা বক্তৃতা কানে শ্রবণ ক'রলাম মাত্র। 

বলাবাহুল্য, ভূ-পৃষ্ঠ হ‌'তে এই ৪০ হাজার ফুট উপ‌রে এমআরই (MRE)এর কিন্তু অভাব নেই। ভাল না লাগ‌লেও খে‌তে হ‌'চ্ছিল কারণ, পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে জল্লাদ ও চামার ব্য‌ক্তিটি‌কে মানা‌নো গে‌লেও দে‌হের সব‌চে‌য়ে স‌ক্রিয় অংশ পেট নামক চামড়ার যন্ত্র‌টিকে অদ্যাবধি কেউ তার ক্ষুধা নামক একমাত্র চ‌া‌হিদাটি পূরণ না ক'রে এই সুন্দর দু‌নিয়ায় দীর্ঘ‌দিন টি‌কে থাক‌তে পারে‌নি। 

পা‌নি আর কতক্ষণ খে‌য়ে  থাকা যায়? তাই আবার এমআরই এর দি‌কে নজর গেলো। ‌কিন্তু এমআরই এর প্যা‌কেট খু‌লে গলাধকরণের বি‌শেষ লক্ষ্য নি‌য়ে নি‌জের নিতান্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যেন খাওয়া শুরু ক'রলাম। ত‌বে এটা ঠিক যতদূর এমূহু‌র্তে ম‌নে প'ড়‌ছে, প্র‌তি প্যা‌কে‌টে মোট ১৪/১৫ টি আই‌টে‌মের ম‌ধ্যে ৪/৫ আই‌টেম খুবই সুস্বাদু ছি‌লো। এসবগুলোর কথা এখনও ম‌নে হ‌'লে চিহ্বায় পা‌নি এ‌সে যায়। 

বি‌শেষ ক‌'রে ক্য‌া‌শিও নাট' চকলেট, বিন, কো‌কো চক‌লেট, সুগার বার, মিল্ক‌শেক এবং বি‌ভিন্ন উপাদা‌ন মি‌শ্রিত বিস্কুট বড্ডই উপা‌দেয় ছিল যা এখন না খে‌য়েও এ মূহু‌র্তে ভাব‌তেও যে‌নো বেশ ভা‌লই লাগছে। যেন এভা‌বে বলা যায় ‌যে, খেলামই না কিন্তু লাগলো ভা‌লো। 

শুধ‌ু এক জায়গাতেই ভয়, সেটা হ‌লো পর্ক প্যাকেট না বিফ প্যা‌কেট? এটা প্যাকে‌টের গা‌য়ে য‌দিও ভালভা‌বে স্পষ্ট অক্ষ‌রে লেখা থা‌কে তবুও ভালমত পর্যবেক্ষণ তথা পরীক্ষা-‌‌নিরীক্ষা ক‌'রে একদম শতভাগ নি‌শ্চিৎ হ‌'য়েই সাহস ক‌'রে প্যা‌কেটের গা‌য়ে হাত স্পর্শ করা লা‌গে। ম‌নে ম‌নে অ‌নেক ভাবনা-চিন্তা করার পর বার বারই ম‌নে হ'য়ে‌ছে ‌যে, আর যাই হোক বাঙ্গালী‌দের মত নিঃশ্চয় মা‌র্কিনীরা কোন ভেজাল খাওয়া‌বেনা, তারপ‌রেও মানু‌ষের মন‌তো? কি জা‌নি বাপু, য‌দি ভুলক্র‌মে বি‌ফের প্যা‌কে‌টে পর্ক ঢু‌কেই যায়? ত‌বে বিশ্বাস খুব  গুরুত্বপূর্ণ জি‌নিস আর তাই কথায় ব‌লে না "‌বিশ্বা‌সে মিলায় বস্তু ত‌র্কে বহুদূর"।

তাই বিশ্বাস ক‌রেই মা‌র্কিনীদের তৈরী প্রোডাক্ট একমাত্র এমআরই খে‌য়েই ব'ল‌তে পা‌রেন, নাস্তা, দুপুরের লাঞ্চ ও নৌশ‌ভোজের চা‌হিদা পূরণ ক'রে‌ছিলাম। ই‌তিম‌ধ্যেই সবার মা‌ঝে রাষ্ট্র হ‌'য়ে ‌গে‌ছে যে, আগামী এক মাস না‌কি আমরা ভা‌তের মুখ দেখ‌তে পা‌রবো না। ভাবলাম, কি ব‌লে? পাগ‌লের কি মাথা খারাপ হ‌য়ে‌ছে? আমরা বঙ্গ দে‌শের মানুষ, ভাত ছাড়া কি বাঙালী বা‌ঁচে? 

এম‌নি‌তেই আপনজন‌দের ছে‌ড়ে চ'লে‌ছি হাজার হাজার মাইল দূ‌রে ‌যেন এক অচীনপু‌রে, পাকা এক বছর যেন বনবা‌সে থাকার মন মান‌সিকতা নি‌য়ে, আর এর ভিত‌রে এক মাস যাবৎ ভাত না পাবার খবরটা যোগ হ‌'য়ে এখন যেন সমগ্র মন খারা‌পের যোগফলের সম‌ষ্টি প্রায় দ্বিগু‌ণের কাছাকা‌ছি পৌ‌ঁছে গেলো। এ যেন "মরার উপর খাড়ার ঘা"। পরবর্তী থা‌পে পো‌র্টো‌রি‌কোয় ১৫ দি‌নের বসবাসকালীন সময় আমার মত অ‌নেক ভে‌তো বাঙালীর কি হাল হ‌য়ে‌ছি‌লো সেই চিত্র আ‌মি কিছুটা চিত্রা‌য়িত করার চেষ্টা ক'র‌বো ইনশাল্লাহ্। ‌বোধ করি এক মাস ভাত‌বিহীন বাঙালীর কষ্টটা আপনারা কিছুটা হ‌'লেও তখন উপল‌ব্দ্ধি ক'র‌তে পার‌বেন।

"সময়‌ তো বহতা নদীর মত", আবার সিংহভাগ লো‌কের কা‌ছে "সময় ও নদীর স্রোত এ দু‌'টিই না‌কি কানো জ‌ন্যেই অ‌পেক্ষা ক‌রে না"। তাই এত কিছু শু‌নে বা জে‌নে আমার এখন সম‌য়ের কা‌ছেই জান‌তে ই‌'চ্ছে ক‌রে, হে ভাই সময় না‌মের অমূল্য রত্ন, আপ‌নি ‌নি‌জে কারও জন্য অ‌পেক্ষা ক‌রেন না ঠিক আ‌ছে কিন্তু আপ‌নি আপনার নি‌জ প্রয়োজ‌নের জন্যও কি একট‌ু অপেক্ষা ক‌'র‌তে পারেন না? আস‌লে দেখ‌তে দেখ‌তে প্রায় এরই ম‌ধ্যে দশ ঘণ্টা পার হ‌'য়ে গে‌ছে। স্হানীয় সময় যতটা ম‌নে প‌ড়ে তখন দুপ‌ুর বু‌ঝি সা‌ড়ে ব‌া‌রো থে‌কে একটার মত ‌বে‌জেছিল।

সি-৫ তখনও সমগ‌তি‌তে চ'ল‌ছে ও একই উচ্চতায় বাতাসে ভে‌সে‌ ভে‌সে পো‌র্টো‌রি‌কোর ‌দে‌শে শো-‌শো ক‌'রে এ‌গি‌য়ে চ‌'লে‌ছে। মা‌ঝে মা‌ঝে শু‌ন্যে পথ চলার সময় বহ‌ুবারই প্রিয় ধরণীর দি‌কে অপলক দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে‌ছি আর আমরা কখন ঠিক কোন মুল্লু‌কে পৌঁছালাম কিংবা কোন সাগর বা মহাসাগর অথবা বীর দ‌র্পে কোন পর্বতমালায় মাথার উপর দি‌য়ে উড়ার স্পর্ধা দেখা‌চ্ছি সেটা জরীপ ক‌'রে ফে‌লে‌ছি। 

মা‌ঝে মা‌ঝে প্লে‌ইনের ম‌নিট‌রে সেগু‌লো কড়ায়-গন্ডায় হি‌সেব মি‌লি‌য়েছি। বহুবারই ভে‌বে‌ছি, হে সুন্দর ধরণী‌ তোমা‌কে বহুঘণ্টা ধরেই একটানা ‌মিস ক‌'রছি, জান‌তে চে‌য়ে‌ছি তোমার সন্তা‌নেরা আদম সন্তান খ্যাত ওর‌ফে মনুষ্যজা‌তি এখন ধরায় ঠিক কেমন আ‌ছে, কি কর‌ছে? এভাবে আবার বহুবার অ‌ক্ষিদ্বয়ের দৃ‌ষ্টি নিব‌ন্ধিত হ‌'য়ে‌ছে আকা‌শের গা‌য়ে জ‌মে থাকা প্যাঁচা‌নো তুলাসম মে‌ঘে‌র ভেলায় য‌দিও অ‌ধিকাংশ দৃ‌ষ্টিবানই ছি‌লো আমার সোজা‌সো‌জি ধরায়, যার কৃ‌তিত্ব ছিল যেন পুরাটাই সে‌দিনকার প‌রিস্কার আবহাওয়ার।

এরই ম‌ধ্যে সিট‌বেল্ট বাধার কড়া নি‌র্দেশ আস‌লো পাইল‌টের পক্ষ থে‌কে। ম‌নিটরের দি‌কে তীক্ষ্ণ দৃ‌ষ্টি দি‌তেই দে‌খি আকাশতরীর গ‌তি ঘন্টায় ১,০০০ কিঃমিঃ এর নী‌চে নে‌মে এ‌সে‌ছে, অল্টিচ্যুডও ঘন্টায় ২৫,০০০ এর নী‌চে নে‌মে‌ছে, বুঝ‌তে আর বাকী থাক‌লো না যে, আমা‌দের সেই কা‌ঙ্খিত অচীনপু‌রের খুব কাছাকা‌ছি পৌঁ‌ছে গে‌ছি। হা, যেটা বল‌বো বল‌বো ক‌রে বলাই হয়নি-ঐ সেই পাস‌পো‌র্টের দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত আমা‌দের বাঙালী সা‌র্জেন্ট কখন যেন ভু ক‌'রে এ‌সে ছো-মে‌রে আমা‌দের সব পাস‌পো‌র্টগু‌লো নি‌মি‌ষের ম‌ধ্যেই জব্দ ক‌'রে নি‌য়ে গেছে।

যা‌হোক, সি-৫ এর এমন ধীর গ‌তি দে‌খে বি‌স্মিত হ‌'য়ে আবার দৃষ্টি দিলাম ভূ-পৃ‌ষ্ঠের দি‌কে। বসতবা‌ড়ি, ভবন, অট্টা‌লিকা কিংবা সৃ‌ষ্টির সেরা মানুষগুলো এ‌কেবা‌রে লি‌লিপু‌টের মত দৃ‌শ্যমান হ‌'তে থাক‌লো। সি-৫, এরই ম‌ধ্যে তার সাম‌নের ঠ্যাং না‌মি‌য়ে দি‌লো। কিছুক্ষণ ম‌নিটর দে‌খি আবার বাস্ত‌বের মিল খুঁ‌জি-‌ঠিক এমনিভা‌বেই অব‌শে‌ষে আমরা পোর্টোরি‌কোর মা‌টি স্পর্শ ক'রলাম। 

১৯৯৪ সনের ০৬ সে‌প্টেম্বর বেলা ঠিক দশটা বা‌জে বাংলার রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর থে‌কে রওয়ানা দি‌য়ে আমরা একই তা‌রিখ স্হানীয় সময় দুপুর আড়াইটা কিংবা বিকাল তিনটার দি‌কে আমা‌দের একান্ত কা‌ঙ্খিত গন্তব্যস্হ‌লে আল্লার ওয়া‌স্তে সেফ ল্যান্ড ক'রলাম, আলহামদু‌লিল্লাহ্। এরই ম‌ধ্যে বির‌তিসহ আমরা ৩৮ ঘণ্টাকা‌লের ২৯ ঘন্টাই অন্তরী‌ক্ষে আর বাকী ০৯ ঘন্টাকাল যাত্রা‌বির‌তি‌তে কা‌টি‌য়ে‌ছি হাওয়াই দ্বী‌পে কিন্তু বাস্ত‌বে আমরা সময় হা‌রি‌য়ে‌ছিলাম মাত্র সা‌ড়ে চার ঘণ্টা কিংবা ৫ ঘণ্টার ম‌ত। দক্ষ পাইলট এত বড় সি-৫ এর মত শ‌ক্তিশালী আকাশযানকে পুরোদ‌স্তুর থা‌মি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন কিন্তু আমা‌দের নামার আদেশ তখন অব‌ধি ‌মেলে‌নি।

চল‌বে......

মোঃ নাহিদ হাসান মজুমদার






চাকর 


চাকর শব্দটি শুনতে কেমন জানি লাগে? যারা অঢেল বিত্তশালী অনেকেই গর্ভবোধ করে বলেন, আমার বাড়ির কাজ কর্ম চাকর বাকররাই দেখবাল করে। চাকরের সাথে বাকরও সংযুক্ত হলো। 
* আমি তখন প্রাইমারিতে পড়ি।  
  ঐ সময়টাতে বাবাকে চাকর নিয়ে প্রশ্ন করলাম। যে কাজ করে তাকে চাকর বলে কেনো ? বাবা আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বাবাকে বললাম তুমি এভাবে
তাকিয়ে কেনো আমার দিকে ? কোন অন্যায় করিনিতো ? বাবা বললেন না তুমি কোন অন্যায় করোনি। আমি ভাবছি তোমার প্রশ্নটা নিয়ে। আমি বললাম ভাবার কি আছে। যারা কাজ করে তাদেরকে 
কাজের লোক বলবে এখানে চাকর শব্দটি আসলো কোত্থেকে আবার অনেকে চাকরের সাথে বাকরও বলে।
  বাবা হেসে বললেন আচ্ছা চাকরের ইংরেজি জানো ? আমি বললাম Servant. বাবা বললেন Thanks. 
বৃটিশ যখন আমাদের শাসন করে তখন তাদের ফরমায়েশ পালন করার জন্য আমাদের দেশের তথাকথিত নিম্ন বর্নের লোকদের নিয়োগ দিতেন এবং তাদেরকে  Servant বলতেন। তখনও  servant এর বাংলা অর্থ ছিলো না। 
 বললাম তাহলে চাকর শব্দটি ? বাবা বললেন বলবার 
সু্যোগ দেবেতো?  আচ্ছা বলো বাবা, শোন ইংরেজদের 
আমলে সামন্ত বাবুরা জমিদার ছিলেন তাদের ফরমায়েশ যারা করতো তাদের চাকর বলতো। বললাম কেন? বললেন তখন জমিদারদের যারা খাজনা দিতে আসতেন তাদেরকে চা আপ্যায়নের জন্য ফরমায়েশকারিকে লক্ষ করে বলতেন এই চা - কর ( চা তৈরী কর) তা থেকে ক্রমাগত চলে আসছে চাকর  শব্দটি এবং বাংলা অভিধানেও সংযুক্ত হলো। এ যাবৎকাল পর্যন্ত চাকরের অন্য কোন সংজ্ঞা আমি পাইনি। 
বন্ধুগন ভুল ত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

শান্তা কামালী/৪২ তম পর্ব






বনফুল
( ৪২ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

জুঁই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে যায়।মনে বুঝি তার ইচ্ছাপূরণ না হওয়ার বেদনার জ্বালা। পলাশ বললো আন্টি বললেন, অহনা আর সৈকত নাকি কালকে সন্ধ্যা বেলায় আমি চলে যাবার পরে তোমাকে এসে দেখে গেছে,
আমাকে বলোনি তো?
তোমাকে আর কিচ্ছু বলবো না, তুমি আমাকে একটুও....। 
জুঁই য়ের চোখ ভিজে যায়।পলাশ তার পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছে দিয়ে বলে, পাগলী.....। আমার কি জুঁই ছাড়া আর কোনো বেলী,মালতী রজনীগন্ধা আছে না-কি, যে তোমাকে ছাড়া.... কথা শেষ হওয়ার আগেই জুঁই দুম দুম করে দু-চারটে কিল লাগিয়ে দেয় পলাশের বুকের মধ্যে। পলাশ হা হা হা করে হেসে আবারও বলে পাগলী।
এবারে জুঁই ও হেসে ফেলে। 
কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যায়।
পলাশ বলে, ডাক্তার তো বলেছেন,সামনের জুম্মা বারে তোমার ট্রাকশান নেওয়া বন্ধ করে দেবেন। তারপর তুমি যতো খুশী কিল মারতে পারবে।আর আমারও ভিসা ততোদিনে হয়ে যাবে।তারপর, ফ্লাইটের টিকিট পেলেই....। জুঁই পলাশের দুটো কাঁধে শক্ত করে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে, এই শোনো না, তুমি আমাকে রোজ ভিডিও কল করবে তো?
পলাশ বলে, নিশ্চয়ই করবো।
কতোবার করবে, বলো?
যতোবার সময় পাবো,ততোবারই করবো।তোমার সাথে ছাড়া আর কারোর সাথে তো তা-না হলে বাঙলায় কথা বলাই যাবে না।আর বাঙালায় কথা না বললে কি মনে শান্তি পাবো,বলো?
জুঁই খুব প্রসন্ন চিত্তে বলে,ময়না কে কফি দিতে বলি,কফি খেয়ে তবে বাড়িতে যাবে  রাত সাড়ে আট টা বেজে গেছে। 

এইভাবেই আরো দশটা দিন কেটে গেলো। জুঁই এখন একদম স্বাভাবিক হয়েছে। পলাশের ও অন লাইন এডমিশন হয়ে গেছে। দুদিন বাদেই ফ্লাইট। অহনা আর সৈকত এসে গেছে সি-অফ করবে বলে।পলাশের আম্মু,আব্বু,ভাই-বোন সবাই কে নিয়ে জুঁই আর তার আম্মা আব্বু সবাই এয়ারপোর্টে যাবে বলে জুঁই য়ের আব্বু বড়ো বড়ো দুটো গাড়ি বুক করে দিয়েছেন।
চলবে....

শহিদ মিয়া বাহার





পরখ কর এ আমাকে 


এখানে একটুখানি বস চোখের শার্শিতে
রাতের পল্লবী হৃদয় ছুঁয়েছে আমার শরীর 
ওখানে  হাত রাখ, ছুঁয়ে দেখ 
তোমাকে পাবে
কত যতনে তোমাকে রেখেছি 
শো-কেসে যেমন রাখে প্রিয় প্রসাধনগুলো
একটুখানি বসলেই পেয়ে যাবে বাসন্তিক চোখের শালুক, 
তোমার চুলের তরঙ্গ নহর
আমার অতনু শরীর,  
থরে থরে সাজানো 
সুগন্ধি ভালবাসার পূর্ণ-পেয়ালা শিশির
শিশিরের ভাঁজে ভাঁজে 
 মুক্তা দানাদের আলোকিত জলমহল ।

একটুখানি হাত ধরো 
অথবা যতটুকু তুমি চাও 
ছুঁয়ে দেখ এ আমাকে 
দেখ তুমি আছো এ হাতে, 
হাতের তালু, তর্জনীতে
হৃদয়ে - হৃদয়ে
ছুঁয়ে দেখ
পরখ কর এ আমাকে
যতখানি তুমি চাও আমি তাই আছি কিনা। 

এখানে একটুখানি বস 
বৈষ্ণবী হাতে ছুঁয়ে দেখ বুকের চৌকাঠ 
তোমার প্রতীক্ষায়
মন্জিলে মন্থিত চন্দ্রিমা নিলয় আমার।

শামীমা আহমেদ/পর্ব ৩৩





শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত 
( পর্ব ৩৩)
শামীমা আহমেদ 

---বেশ বেলা করেই শিহাব আজ ঘুম থেকে জাগলো।বাইরে রোদ ঝলমল করছে।ছুটির দিন হওয়াতে চারিদিকে গাড়ি চলাচলের শব্দ খুবই কম।ফেরিওয়ালার হাঁকডাক নেই। ওরাও কি তবে ছুটির দিন কাটায়? যদিও রাতে শিহাবের খুব ভালো ঘুম হয়েছে।তবুও আলসেমিতে বিছানা ছাড়া হয়নি।এপাশ ওপাশ করে ঘুমটা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিয়েছে।
ছুটির দিনের আমেজে তার মাঝে আলসেমি ভর করেছে।নিজেকে কেমন যেন  হালকা পালকের মত লাগছিল।মনের অবস্থাটা বেশ ফুরফুরে। অনেকদিন পর শিহাব  নিজেকে ভারমুক্ত ভাবছে। সে মোবাইলে সময় দেখে নিলো। সকাল সাড়ে দশটা। আজ ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার কথা আছে। যদিও লেবাররা কেউ আজ থাকবে না। ম্যানেজার ফারুখ সাহেবকে আসতে বলা হয়েছে। শিহাব যখন উত্তরা থেকে রওনা হবে তখন ম্যানেজারকে ফ্যাক্টরিতে আসতে বলবে। সে গাজীপুরেই একটি ছোট্ট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছে।তার বাড়ি কাপাশিয়ায়।লোকটা বেশ ভালো। খুবই পরিশ্রমী।দুটি বাচ্চা আছে। সে শিহাবকে বেশ সম্মান করে।অবশ্য মালিক বলে কথা! যদিও লোকটি শিহাবের চেয়ে বয়সে বড়ই হবে। হয়তো  শিহাবের জন্য আজ দুপুরে নিজের বাসায় খাওয়ার আয়োজনও করে রাখবে। শিহাবের অনুপস্থিতিতেও ফ্যাক্টরীটা সে বেশ চালিয়ে নিচ্ছে। শিহাব বেশ নিশ্চিন্ত মনেই উত্তরার অফিস দেখে। 
শিহাব কেয়ারটেকার বেলালকে কল দিলো। উপরে আসতে বলে শিহাব বিছানা ছাড়লো।বেলাল এলে একটি পাঁচশ টাকার নোট এগিয়ে দিলো। এক প্যাকেট বেনসন ও সামনের একটি ভালো হোটেল থেকে নাস্তা আর এক বোতল পানি নিয়ে আসতে বললো। সাথে একবক্স টিসু।
বেলাল নেমে গেলে শিহাব ওয়াশরুম থেকে
ফ্রেশ হয়ে এলো। শিহাব নিজের হাতে চা বানাতে বেশ পছন্দ করে। সে সোজা কিচেনে চলে গেলো।একেবারে ঝকঝকে তকতকে রান্নাঘর।কাজের বুয়া মহিলাটা ভালোই কাজ করে। কেয়ারটেকার বেলালের কাছে ঘরের চাবি দেয়া থাকে।বুয়া এলে খুলে দেয়।কাজ শেষে আবার তালা দিয়ে রাখা হয়। বুয়া শিহাব সম্পর্কে কিছুই জানেনা। বেলালকে তার শুধু একটাই প্রশ্ন সাহেবের বউ কবে আইবো?হে কি বিয়া শাদী করছে?

শিহাব চুলায় চায়ের কেতলি বসিয়ে দ্রুতই একমগ লাল চা বানিয়ে নিলো।শিহাবের নাস্তার আগে গরম চা না হলে সে নাশতা খেতেই পারে না। একট ট্রান্সপারেন্ট মগে চা নিয়ে বেশ আয়েশ করে বিছানার কোনায় বসলো। হাতে টিভি রিমোটটা নিলো।বহুদিন হলো টিভি দেখা হয় না।শিহাব চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে সকাল এগারোটার খবরে এসে থামলো। নিত্য নৈমিত্তিক খবরের পাশাপাশি একটা ছোট্ট খবর শিহাবকে বেশ চিন্তিত করে তুললো। 
"প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তরুণীর আত্মহত্যা।" সাথে বাবা মায়ের গগনবিহারী কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে উঠলো। শিহাবও সেই বাবা মায়ের কান্নাটা ফিল করতে লাগল।সন্তান হারানোর সেকি বেদনা! আর গতানুগতিক খবরের 
সেই একই সারমর্ম।  প্রেমিক ছেলেটি পলাতক।অবশ্যই সে গ্রামের প্রভাবশালী কারো পুত্র।আর এরাতো থানা পুলিশকে কিনে নেয়। 
শিহাব আত্মহত্যার তরুণীটি,যার নাম, রুনা আক্তার, সেই মেয়েটির নিষ্পাপ ভালোবাসাটা অনুভব করলো। কতটাই না সরল বিশ্বাসে সে ছেলেটিকে ভালোবেসেছিল।আর গ্রামে এসব ব্যাপার  একটুও চাপা থাকে না। 

বেলাল নাস্তা নিয়ে এলো। ডাইনিং টেবিলে টিসু বক্স, নাস্তা ও গ্লাসে পানি ঢেলে  টেবিল সাজিয়ে দিলো। বিছানার সাইড টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট আর বাকী টাকাটা রাখতেই বেলালকে বাকী টাকাটা নিয়ে যেতে বললো বখশিশ হিসেবে আর জানালো বুয়াকে ফোন করে জানিয়ে দিতে যেন আজ না আসে। আমি একটু নিজের মত করে থাকবো। বেলাল জ্বি আচ্ছা বলে নীচে নেমে গেলো।
শিহাব দরজা লাগিয়ে ঘরের দিকে ফিরতেই কেন যেন শায়লার মুখটা ভেসে উঠলো! সে বেশ অবাক হলো।।এতক্ষন  একটুও শায়লার কথা তার মনে পড়েনি! সেকি তবে শায়লাকে ভুলে গেছে। কিন্তু সেতো সম্পর্ক শেষ করেনি। অন্য চাওয়া পাওয়ার অধিকার না রেখে শুধু বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থেকে সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে চেয়েছে। শিহাব কাল থেকে শায়লার আর কোন খোঁজ নেয়নি। এতগুলো কথা হওয়ার পর শায়লার মনে অবস্থাটা কেমন গ্যাছে কে জানে? শিহাবের উচিত ছিল অন্তত ওর একটা  খোঁজ নেয়া মেসেজ বা কল করে বিষয়টা সহজ করা।নাহ! কাজটি ভালো হয়নি।শায়লাতো এতদিন ওর উপর অনেকটা আস্থা আর  নির্ভরতায় মিশেছে। গতকাল কথাগুলোর পর শায়লা কেমনভাবে কথাগুলো নিয়েছে সে প্রতিক্রিয়াটা বুঝে নেয়া উচিত ছিল। শিহাব কেন যেন নিজেকে অপরাধী ভাবছে। সেকি তবে কোন ভুল করলো?কিন্তু না, বাস্তবতার নিরিখে সে সঠিক কাজটিই করেছে।শিহাবের ভেতরে কেমন যেন কাঁটা বিঁধতে লাগল। টিভির খবরে তরুণীটির আত্মহত্যা হয়তো এমন কোন প্রেমের সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করাতেই হয়েছে। শিহাব নিজের ভেতরে নিজেই কথা বলছে,আমিওতো তবে তেমনি একই দোষে দোষী।শিহাব সেই বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকটির সাথে নিজেকে মেলাতে লাগলো।ক্রমন যেন অনুশোচনা বোধ করছে। আচ্ছা গতকালের কথার পর শায়লা যদি এমনি কিছু করে বসে? শি্হাবের প্রতি শায়লার ভালোলাগা ভালবাসাতো শিহাবই জন্মিয়েছে। শায়লাতো তার মত করেই ছিল। শিহাবইতো তাকে স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছে। না, ধিহাব নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না। খুব ইচ্ছা করছে শায়লার কন্ঠস্বরটা শুনতে।কিন্তু কোন মুখে সে তাকে কল দিবে? নিশ্চয়ই শায়লা একরাশ ঘৃনা নিয়ে শিহাবকে মন থেকে মুছে ফেলেছে।
শিহাবের ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠলো!  ভেতর থেকে এক অদম্য মনের প্রাবল্যে শিহাব নিনেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না,,সে মোবাইল হাতে নিয়ে শায়লাকে মেসেঞ্জারে কল দিলো।কিন্তু শায়লা অফলাইন।নিশ্চয়ই শিহাবের প্রতি অভিমানে 
অফলাইন হয়ে আছে। শিহাব এবার শায়লার নাম্বারে কল দিলো।পরপর তিনবার তিনটি ফুল রিং হলো। সে রিসিভ করলো না।শিহাবের ভেতরে কেমন এক অপরাধবোধ কাজ করতে লাগল।
এক অজানা আশংকায়  উৎকন্ঠিত হয়ে উঠলো সে!  সবশেষে চতুর্থ কলে ফোন রিসিভ হলো। শিহাব হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো।কে বলছেন?
আমি শিহাব,শায়লার বন্ধু।
ও আচ্ছা, আমি রাহাত শায়লা আপুর ছোটভাই।
শায়লা কোথায়? শিহাবের আর তর সইছে না।
রাহাত জানালো, দুঃখিত আপনার আগের তিনটি কলে ফোনটা ধরতে পারিনি। আমরা হাসপাতালে আপুকে নিয়ে খুব ব্যস্ততা আর উৎকন্ঠিত সময় পার করছি। 
শিহাব যেন ফোনের ভেতর ভেঙে পড়লো! কেন শায়লা কি হয়েছে? আপনারা ওকে হাসপাতালে এনেছেন কেনো?
আপু গতরাতে সেনস্লেস হয়ে যায়।দরজা না  খোলাতে আমরা সকালে বুঝতে পারি অনেক দেরিতে।ছুটির দিন হওয়ায় সবাই বেশ দেরি করে উঠি।আপু ঘুম থেকে না জাগাতে দরজা ভেঙে আপুকে বের করে আনি।
এরপর দ্রুত এম্বুলেন্স ডেকে আপুকে হস্পিটালে নিয়ে আসি।আপুর এখনো জ্ঞান ফিরেনি।স্যালাইন চলছে,,
শিহাবের ভেতরে উথালপাথাল করতে লাগল।গতকাল দুপুরে রেস্টুরেন্টে শায়লার সেই থমথমে মুখ আর চোখ ভরা জল সেই মুখচ্ছবিটি ভেসে উঠলো!বিদায়বেলায় শায়লার অমন আনমনা দৃষ্টিটা মনে হতেই শিহাব যেন কুঁকড়ে গেলো!
উফ! কত বড় ভুল হয়ে গেলো! শিহাব নিজেকে নিজে ধিক্কার দিতে লাগল। 



চলবে....

শ্রী স্বপন দাস






মিষ্টি ডিসেম্বর

চির সুন্দর বর্ষ বিদায়ী হে ডিসেম্বর,
তোমার প্রতি রইল প্রীতি পূর্ণ শুভেচ্ছা,অভিনন্দন,ভক্তিভর।
ভাবিত মন চিন্তা শীল সারাক্ষণ,
কখন আসিবে উক্ত মধু সন্ধিক্ষণ।
শীতের চাদরে পরিপূর্ণ প্রকৃতি ও পরিবেশ,
শিশিরের কনা সবুজ ঘাসের চাদরে
জড়ানো,নতুন আবেশ।
শুভ্র তুষার বেষ্ঠিত শৈল শিখর,
রবির আভায় ঝলকিত রূপের বহর।

ক্রিস মাসের কেক বড় দিনের আনন্দ দোলা দেয় মনে,
কেহ যায় পাহাড়ে কেহ যায় জঙ্গলে
কেহ যায় নদীতে, ভ্রমণের টানে।
ভাল মন্দ সুখ দু:খ মিলিয়ে 
কেটে গেল পুরো একটি বছর,
কত ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল
বর্ষ বিদায়ী হে ডিসেম্বর।।