২৬ ডিসেম্বর ২০২০

মধুমিতা রায়



নীলখাম 


কুয়াশার ভিতর হেঁটে চলি

প্রিয়জনের চিঠি ডাকে

পার করি ঘন আস্তরন।

হাত কাঁপে

নীলখামে নীলবিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে


ঠোঁট চোখ সব নীল

কুয়াশা পাতলা হয়ে আসে

ম্যাড়ম্যাড়ে ধূসর মাঠে 

তালগাছ একা সেই।


সোনালী শস্য ফুরিয়েছে কবে

নীলখামে আঁকাবাঁকা বিষ অক্ষর

আঙুলে দহন ছড়ায়

মস্তিষ্কের শিরাজুড়ে নীল নদী।


একতারা হাতে কে গায় রবিবাউল!

পথের ধারে ঘাসফুল হেসে ওঠে

রামধনু ফ্রক পরে সেই মেয়ে

ছুটে যায় আলপথ দিয়ে।



টোল খাওয়া গালে তার

হেসে ওঠে ভোর


খাম থেকে ঝরে পড়ে

সহস্র বকুল।

সুশান্ত দাস



মৃত্যু নয় যুদ্ধ চাই!


আজ আর বারুদের গন্ধ নেই

রুদ্ধদ্বারে অপেক্ষারত সৈনিক

তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।


আজ শুধু যুদ্ধের ঘোষণা

অস্ত্রহীন বারুদহীন কথার খেলা

তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।


যুদ্ধ নয় শান্তি চাই অর্থহীন

বারুদের কালো ধোঁয়া নেই

তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।


ধ্বংসে হতাহতের স্তূপ নেই

সৈন্যের রণসাজ নেই

তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।


আমি তুমি আমরা অসহায়

রাজা-মহারাজা সব কাজ করছে

তবুও অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল।

সুপ্রভাত মেট্যা




অন্ধকার সমস্ত জীবন


অন্ধকার সমস্ত জীবন .....

সড়ক রাত দীর্ঘ হয়ে চলে গেছে দূরে ।

কোথাও কোনও ভাই নেই , বন্ধু নেই ,অল্প বিস্তর আলো,নক্ষত্রের ছুঁড়ে দেওয়া ,ওই পড়ে আছে ধুলায়। সেই আলোতে আমি তোমাকে দেখি অপরূপ সুন্দরী , ভয়ে ভয়ে কবিতা হেঁটে আসছ, গুটি গুটি পায়ে ,চুপি চুপি, আমার দিকে। আমার না - খেয়ে বড় হয়ে ওঠা জীবন স্তব্ধ তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে। দিগন্ত পাহারায় লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আমার বিশুদ্ধ চেতনা।  ঝড় কিংবা    প্রবল ঝাপট এলেও একটা পাহাড় বোঝাপড়া করে নেবে সে নিজের ভিতর ।

এখন রৌদ্র উঠলে ,

তোমার গল্প শুরু হবে জানি। পিছিয়ে পড়ার গল্প , ভাতে নুন মাখানো অনেক দুঃখের তোমার পৃথিবী - গল্প , আর অনেক  অনেক ভালোমানুষীর ভেসে যাওয়া তোমার কবিতার গল্প ।





আইরিন পারভীন




কায়া


শরীরী বা অশরীরী

অনেক আত্মার আনাগোনা,

মনের ভিড়ের মাঝে আমি খুঁজে চলেছি তারে যারে পাইনা।

শূন্য মাঝেই এঁকে রেখেছি পূর্ণতার জলছবি,

শুন্য মাঝেই খুঁজে নেব বন্ধু আমার প্রতিচ্ছবি।

তুমি আলোর পথে এগিয়ে গিয়েছো অনেক দূরে!

এতটাই দূরে যে

তোমার অবয়ব মনে নেই

শুধু প্রতিচ্ছবি টুকু ধরা আছে হৃদয়ের দেয়ালে।

শুধু তোমার প্রতিচ্ছবি দেখলে ক্ষনিকের নিরাশায়

আজও মিথ্যে বেঁচে উঠতে ইচ্ছে করে'''''''

জন্ম হোক প্রতিচ্ছবি, যেই প্রতিচ্ছবির প্রতিবিম্বে ঝলক পড়বে হাজারো আলোর হাজারো আলোকিত প্রতিচ্ছবি।

মাসুদ আহমদ চৌধুরী



তাসের ঘর


ক্ষণস্থায়ী ভবের মাঝে

কেনই বাঁধিস ঘর,

আপন আপন ভাবিস যারে

সেই হবে তোর পর।


আপন নয় তোর ভিটেমাটি

নয়তো দালান ঘর ,

চোখ বুজলে শুইতে হবে

অন্ধকার কবর।


পাড়া পড়সি কাঁদবে সবে

শুনিয়া খবর ,

তনের খাজনা দিতে কেহ

 করিওনা  কসর।


রঙ্গের ঐ দালানবাড়ি

রঙ্গের এই সংসার,

সবকিছু রইবে  পড়ি

সঙ্গে যাবে ঈমান আমল পূন্য আছে যার।

রীনা দাস

 


উল্টো পাল্টা


চেরা গলায় কালো কাক

শাঁখ বাজিয়ে আসে

ময়না পাখি উড়তে গিয়ে

বসে পরে ঘাসে ৷


কাঠ ঠোকরা গাছ ঠোকরায়

ঠক্ ঠকাঠক্ ঠক্

এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে

সাদা একটা বক ৷


কোলা ব্যাঙে মাঠ ভর্তি

ডাকছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ্

ছেলেরা সব মজা পেয়ে

মারছে তাদের ল্যাঙ্ ৷


হাতে লাঠি চলে দাদু

গুটি গুটি পা

কাছাকাছি গেলে দাদু

দেয় এক ঘা ৷


রোববারে জন্ম আমার

শনি,মঙ্গলে নয়

তাইতো আমায় দাদু বলে

ভেরি গুড্ বয় ৷

মনি জামান




বর্ণমালা 


অঞ্জলিতে চুম্বন ছিল আশিসের পেলবতা, সৃষ্টির উল্লাসে বর্ণগুলো আজও কাঁদে।

শব্দতে পঙ্কতি মালা অঙ্কনে তুমি মিলে মিশে এক হলে অঞ্জলি তুমি,ইথার কম্পিত মেঘের গর্জন প্রবল বৃষ্টি,আশিস বিন্দুতে এক ফোটা জল বিন্দু বিসর্গ তুমি। 

বর্ণতে মহিষী প্রেমে তিলোত্তমা,বায়ান্ন পঙ্কতি লেখে ইতিহাস সে অঞ্জলি কাব্য কথা। 

একুশে বাসর সাজে অ আ ক খ অঞ্জলিতে গান গাই,

"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে

ফ্রেরুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি" 

অদৃশ্য প্রেমে দৃশ্যত তুমি আমার আদরের বর্ণমালা।

শর্মিষ্ঠা মজুমদার


তুমি আমার


তুমি আমার বর্ষাদিনের ঝলসানো রোদ্দুর
ঘরেফেরা সৈনিকের চেনা নূপুরের সুর,
তুমি আমার প্রথম প্রেমের  লজ্জা মাখানো হাসি
চুপিচুপি মনেমনে বলা ভালোবাসি,ভালোবাসি।

তুমি আমার শীতের ভোরে গরম গরম চা
সবটুকু দুঃখ কেড়ে নেওয়া সুখের ছোঁওয়া,
তুমি আমার হঠাৎ পাওয়া হারানো মেয়েবেলা
বহু ভিড়ে যাকে  মন শুধু পেতে চায় একলা।।

শ্যামল রায়


কিন্তু কেন হাঁটবো?

তুমি আমি হাটতেই পারি 
কিন্তু কেন হাঁটবো?
তোমার আশ্বাস যদি
প্রজাপতির ডানা না হয়ে ওঠে
তোমার প্রতিশ্রুতি যদি স্বাদবদল না হয়
আমি যেতেই পারি বসতে পারি
তোমার পাশাপাশি আঁচল পেতে।
যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো?
সেখানে যদি ফ্যাকাশে সূর্য দেখা যায়
ফ্যাকাশে সবুজ ঘাস উঁকি মেরে তাকায়
কর্মসংস্থান হীন, প্রেমহীন হয়ে হাটি
তাহলে ওখানে যাব কেন?
আমি যেতে পারি, একটা সকালের জন্য
গোধূলি বেলায় পাশাপাশি হাঁটতে
আমি যাবো, তোমার পাশে বসবো
এক চাদরে ঘুমিয়ে পড়ে বলবো
এই --এই, উঠে দেখো
চোখ মেলে তাকাও
ওখানে সূর্য উঠেছে
ঠিকানা আছে
উঠোন ভর্তি জুই, শিউলি ফুল হাসছে
চলো ওখানে হাটি বেঁচে থাকার জন্য।

বৈশাখী দাস ঝিলিক


হৃদ আকাশে ধূ ধূ মরুভূমি 



পূর্ণিমার চাঁদের মতোই 
তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি 
কোনো এক অমাবস্যার রাতে
জানি কখনো আর ফিরে পাবো না, 
তবুও অধীর আগ্রহে নির্বাক চোখে বসে থাকি
বহুদূরের ঐ আকাশ পানে চেয়ে তারা দের মাঝে। 

ভালোবাসার বিষাক্ত বুলি শুনিয়েই তো 
এই অবুঝ মন কেড়ে নিয়ে ছিলে
কোন এক সুপ্ত প্রভাতে
তবে আজ কোন অজানা ঝড়ে 
মুখ ফিরিয়ে নিলে ?

সেই বেদনায় অন্তর আজ ধূ ধূ মরুভূমি 
চোখের কোণে অজস্র  শিশির বিন্দু 
তুমি তো চলেই গেলে! 
তবে...
কেন এতো স্মৃতি রেখে গেলে?
বেদনার ক্ষতে কাঁদানোর জন্যই বুঝি ?

এখানো গভীর রাতে আঁখি মেলে 
দু-চোখে তোমাকে নিয়েই স্বপ্ন আঁকি 
খুঁজে ফিরি মনের অজান্তেই। 
হঠাৎ কলিজার ভেতর থেকে ধ্বনিত হয়
সে তো তোমায় দিয়েছে প্রতারনার ফাঁকি।

অন্ধকার জীবন থেকে

কব দেবব্রত সরকার

দূরের পাহাড় থেকে নিয়ে আসা আলো সমতল সাজিয়েছে নদীর সাগরে
মানব জীবন হতে রাস্তা ডিঙাতে গিয়ে মায়ার বাঁধন কেটে কেটে পড়ে !
সেদিন চৈত্র মাস তোমরাতো ছিলে বুকে হৃদয়ে মাখিয়ে ভালবেসে আশা
এ জীবন্ত কায়ার উপর স্বরঋপু এঁকে মায়া ভেঙে চোখ ভাসা ভাসা
দুরাশার ভিড়ে গাঁথা অবুজ পাখির মতো খাঁচা ভেঙে মেলে দিলে ডানা
ছকে গাঁথা প্রতিটি জীবনের মতো সবুজদ্বীপের ছাদে মেঘ ভাঙা ভাঙা
চেয়ে দেখ আমি আছি প্রকৃতির ঘর ছেয়ে একাকীত্বর সাথে হেসে খেলে
ভেঙেছি ভেঙেছি অনেক ভেঙেছি নিজেকে সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলে খেলে
নির্জন অন্ধকার ঘেঁটে জলরঙ ক্যানভাসে তোমাদের হারিয়েছি তারাদের মাঝে
রূপালী স্বপ্নের ভেতর তারা ছিল এই আছে কলিজা দাপানো নরম হৃদয়ের খাঁজে !