২৬ ডিসেম্বর ২০২১

কবি শারমিন সুলতানা'র কবিতা




হয়তো একদিন 

শারমিন সুলতানা 


আমিও মানুষ আমারও মন খারাপ হয় তাই
বেশি ভালোবাসি বলেই হয়তো
বেশি কষ্ট পাই।

তোমাকে পাবো আশ্বাসে বিশ্বাসে
এ টুকুইতো চাওয়া ছিলো রাই
কষ্টে ভরিয়ে দিবে জানি তবুও
ইচ্ছে করেই তোমাতে হারাই।

অবহেলার বিনিময়ে খুব করে ভালোবাসি 
একা আমারই যেনো দায়,
হয়তো একদিন বুঝবে ঠিকই
তখন দেরি না হয়ে যায়

দুর অজানায় হারিয়ে যাবো 
সবকিছু ছিন্ন করে হায়
তেপান্তরে পারি জমাবো চিরতরে 
খুঁজবে শুধু এই আমায়।

সকল সুখ হোক যে তোমার
ভালো থেকো প্রাণের সই
এক বুক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে না হয়
আমিই মাটির বহরে পরে রই।

মমতা রায় চৌধুরী /৭৭ পর্ব




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ৭৭
রেখার স্কুল যাবার পথে
মমতা রায় চৌধুরী


পার্থ একেবারে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে মনোজদের বাড়ির দরজায এসে কলিং বেল বাজালো 'জয় গনেশ ,জয় গনেশ, জয় গনেশ দেবা... ।'বেশ কয়েকবার কলিংবেল বেজে গেল। লিলি ,পাইলটদের ভৌউ ভৌউ গলা শোনা যাচ্ছে।
 পার্থ ভাবছে 'কি ব্যাপার বৌদিরা দরজা  খুলছে না কেন?'
এবার পার্থ জোরে জোরে ডাকতে লাগল 'ও মনোজদা ,মনোজদা .আ.আ ,মনোজদা...।
রেখা বাথরুমে ঢুকেছিল আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরোতে গিয়ে দরজায় এমন জোরে ধাক্কা লাগল , জান মনে হচ্ছে বেরিয়ে যাবে।শীতকাল তো খুব কষ্ট হচ্ছে । যন্ত্রণাগ্রস্থ অবস্থায়  এসে দরজাটা খুলল।
দরজা খুলেই রেখা বলল 'ও পার্থ তুমি?'
পার্থ বলল' কি বৌদি কখন থেকে আপনাদের ডাকছি।'
রেখা বলল ' আর বোলো না ভাই, আমি একটু বাথরুমে ছিলাম বেরোতে পারছি না। দরজার কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি কিন্তু কি করবো বলো?'
পার্থ বলল' মনোজ দা কোথায়?'
রেখা বলল 'আজকে একটু বলল ওর এক বন্ধুর বাড়িতে যাবে।তাই সকাল সকাল একটু বের হল?'
রেখা বলল ' দরজায় দাঁড়িয়ে কথা কেন ?ভেতরে এসো।'
পার্থ ভেতরে ঢুকে আসলো।
রেখা চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বলল 'এখানে বসো।'
পার্থ চেয়ারটায় বসে বলল'বৌদি, আজকে তো ভাইয়ের  কাজ ।সকাল সকাল বাড়িতে আসবেন কিন্তু?'
রেখা বলল 'কিন্তু আজকে তো আমাকে একটু স্কুলে যেতে হবে ভাই?'
পার্থ বলল' আজকে স্কুলে যেতেই হবে বৌদি?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ভাই।'
পার্থ বলল 'তাহলে দাদাকে অন্তত পাঠিয়ে দেবেন।'
রেখা বলল' হ্যাঁ ভাই ।সে তো যাবেই।'
পার্থ বলল ' মা কিন্তু আপনার জন্য ওয়েট করবে।'
রেখা বলল' মাসিমাকে একটু বুঝিয়ে বলে দিও।'
পার্থ বলল 'তাহলে আর বেশিক্ষণ বসবো না বৌদি ।কথাও বাড়াব  না। আপনাকে যে তুই স্কুলে যেতেই হবে ।আপনার তৈরি হবার ব্যাপার রয়েছে।'
রেখা  শুধু হেসে সম্মতি জানায়।
পার্থ বেরিয়ে গেল রেখা দরজাটা দিল । তারপরই মিলির আর বাচ্চাদের খাবারটা গিয়ে দিয়ে আসলো।
মিলি আর ওর বাচ্চারা কত প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে রেখার দিকে' ।যেন ওদের আশাভরসা সবকিছু রেখা।
আজকে রেখার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদেরকে খাওয়ানোর সময় ছিল না। তাই খাবার থালা টা রেখে দিয়ে আসলো তারপর দুপুরের খাবারটা রেডি করল। পার্থ আসার আগেই গ্যাসে চাপানো ছিল তরকারি বেশি কিছু করতে পারে নি ।ডিমের কারি, ইলিশ মাছ ভাজা আর পালং শাকের ঘন্ট।
এবার ব্রেকফাস্ট রেডি করল। একটা ডিমের পোচ তৈরি করার জন্য একটা প্যান বসিয়ে দিল, তারপর কিছুটা পরিমাণ বাটার দিয়ে দিলil একটু নাড়াচাড়া করতেই ডিমটা ফেটিয়ে ওর উপর দিয়ে দিল, তার ওপর গোলমরিচের গুড়ো , একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে ডিমের পোচ রেডি করে দিল। এরপর ঝটপট টোস্টার মেশিনে ব্রেডগুলো সেঁকে নিল। 
রেখা ভাবতে লাগলো ' মনোজ এখনো আসলো না পোচটা তো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এরপর গাজরের জুস কাঁচের গ্লাসে ঢেলে টেবিলে র ওপর রেডি করে রাখল।
তারপর ফেসওয়াশ দিয়ে  ফেস ক্লিন করার সময় হঠাৎ দরজায় কলিংবেল আওয়াজে চটপট মুখটা ধুয়ে নিয়ে দরজাটা খুলল।
 খুলে দেখল মনোজ।
রেখা বললো 'কি ব্যাপার এত দেরি করলে?'
মনোজ বলল' এতদিন পর গেছি ,বন্ধুকে কাছে পেয়ে
ছাড়তে কি চায়?'
মনোজ রেখা বলল' 'তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তোমার তো ব্রেক ফাস্ট টাইম হয়ে গেছে। ওদিকে ডিমের পোচ করেছি ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ।
মনোজ বলল 'হ্যাঁ যাচ্ছি ,ভেতরে ঢুকে জুতোটা বারান্দায় রেখে একবার ভালো করে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত মুখ ভালো করে  ধুয়ে নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে খাবার টেবিলে বসলো।
মনোজ বলল' আজ ব্রেডের সাথে ডিমের পোচ ?
কাঁচের গ্লাসে কি রেখেছো?'
রেখা ঘরে থেকে সাড়া দিলো ।তাই রাখলাম দেখো বাস্কেটে কলা আছে নিয়ে নাও।'
মনোজ বলল' কাঁচের গ্লাসে ওটা কি রেখেছো? জুস?
রেখা বলল হ্যাঁ। গাজরের জুস।
মনোজ বলল' অ্যাই রেখা ,গাজরের জুস খাবো না।
 প্লিজ।'
রেখা বললো "তা কি করে হয় ছোটদের মতো বায়না করলে তো হবে না ।তোমাকে খেতে হবে।'
মনোজ আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ নাস্তা করতে লাগলো। জানে ,রেখা যদি একবার বলে দিয়েছে তার কথার নড়চড় হবে না।
রেখা বললো 'মিলিদের খাবারটা তুমি দিয়ে দিও দুপুর বেলায়। যদি অসুবিধা হয় ,বাচ্চারা তো বড় হয়েছে ।তাহলে তোমার ওই গৌরীসেন দাদাকে ডেকে নিও।'
মনোজ বলল' ঠিক আছে।'
রেখা বলল'আর শোনো পার্থর ভাইয়ের আজকে কাজ আছে। পার্থ এসেছিল ।তুমি একবার ওখানে দেখা করে এসো কেমন?'
মনোজ বলল 'আজকে তোমাকে স্কুলে যেতেই হবে?'
রেখা বলল 'হ্যাঁ। এত মেডিকেলে নিয়ে নিলাম।আজকে যেতে হবে এই কারণেই সবার প্রশ্ন জমা পড়ে গেছে ।12 ক্লাসের যে 50 নম্বরের প্রশ্ন করেছি সেই প্রশ্নটা তো আমার জমা দেয়া হয় নি ।এদিকে সামনে টেস্ট পরীক্ষা।"
রেখা বাইরে বেরিয়ে এসে জুতো পড়ে পরতে পরতে বলল 'আসছি। সাবধানে থেকো।'
মনোজ বলল' তুমি খেয়েছ?'
রেখা বলল 'না খাবার সময় পাই নি ।আমি টিফিন বক্সে নিয়ে নিয়েছি।'
মনোজ বলল ''তা কি করে হয়? এতটা বেলা হয়ে গেছে, না খেয়ে চললে?"
রেখা বললো' 'আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি ঠিক খেয়ে নেবো।"
মনোজ বলল 'ঠিক আছে সাবধানে।'
রেখাবলল"আমি কলাপসিবল গেট টেনে দিয়ে যাচ্ছি। তুমি খেয়ে উঠে লক করে দিও।'
বাড়ি থেকে বেরিয়েই দেখতে পেল অটো ।রেখা হাত নেড়ে বলল' অটো দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও।'
অটোআলা কাছে আসতেই দেখতে পেল রেখার পরিচিত মুখ বিধান।
অটো ড্রাইভার বিধান বলল' দিদি ,আপনি এতদিন পর?'
রেখা বলল'-কিছুদিন স্কুলে যেতে পারি নি গো।'
বিধান বলল 'ভাল ছিলেন তো?'
রেখা বলল "হ্যাঁ ছিলাম এক রকম।'
স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনের খবর হয়ে গেল দু নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন আসছে। রেখা ছুটতে শুরু করলো।
ট্রেন থামতেই রেখা যাত্রী নামার পর  উঠে পড়ল গাড়িতে ।তারপর জিজ্ঞেস করতে লাগল কে কোথায় নামবে ।
এক যাত্রী বলল 'সে মদনপুর নামবে। 
রেখা  তার দিকে মুখ করে দাঁড়াল আর বলল'আমাকে জায়গাটা দেবেন দিদি।'
 রেখা তার জায়গার দিকে দাঁড়িয়ে  একটা ফোন করল রিম্পাদিকে।রিম্পাদির ফোন কল হয়ে গেল সাড়া দিল না।
এরপর রিম্পাদি নিজেই ঘুরিয়ে রেখাকে ফোন করল
। রেখার ফোন বেজে উঠল' 'আমি কার, কে আমার ,কি যে তার আমি হই..?'
রেখা ওই সময় ব্যাগের থেকে ফোন বের করতে করতেই ফোনটা কেটে গেল ।ইতিমধ্যে সেই দিদি মদনপুরে নামার জন্য তৈরি হতে লাগল । লাগেজ গুলো সব নিজের কাছে রাখলো,উপর থেকে  নামাল এবং ধীরে ধীরে গেটের কাছে এগোতে লাগল।ভদ্রমহিলা উঠে যেতেই রেখা সেই জায়গায় বসল ।এরপর নিজে মিসকলটা দেখে ফোন করলো।রিং হতেই রিম্পাদি ফোন তোলৈ।
রেখা জিজ্ঞেস করল' তুমি কি কৃষ্ণনগর লোকালেই  আছো?'
রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ আছি।'
রেখা বলল 'সামনের লেডিসে আছো, না পেছনে লেডিসে আছো?'
রিম্পাদি বলল 'সামনের। তুই?'
রেখা বলল' পেছনের।'
রিম্পাদি বলল 'ঠিক আছে।'
রেখা সে বলল ' স্টেশনে নেমে কথা হবে।'
রিম্পাদি বলল' হ্যাঁ রে ,তোদের কম্পার্টমেন্টে 
স্মৃতিদি আছে?'
রেখা  বলল 'কই নজরে পড়ছে না তো। কেন কিছু দরকার আছে?'
রিম্পাদি বলল 'আরে গত বছর যে সোয়েটারগুলো নিয়েছিলাম ।মনে আছে তোর ব্লু কালারের?'
রেখা বলল' হ্যাঁ ,তুমি আমি সেম কালারের নিয়েছিলাম।"
রিম্পাদি বলল  'আর ও  দুটো কালার নেব আমি ।সেটা এবছর আছে কিনা?'
রেখা বললো' তোমার নিজের জন্য ,না অন্য কারো জন্য?'
রিম্পাদি' আরে না। মাসতুতো ননদ নেবে।'
রেখা হেসে বলল 'আচ্ছা।'
রিম্পাদি বলল 'যদি দেখা হয় তাহলে এই কথাটা বলে দিস ,কেমন?'
রেখা বললো' ঠিক আছে। রাখছি।
রিম্পাদি বলল 'ওকে'।
রেখা জায়গাটাকে পেয়ে ঘুম দেবে বলে চোখটা বুঝলো।
ক্লান্ত শরীরে ঘুম এতটাই পেয়েছিল যে স্টেশনে গাড়ি পৌঁছালে সব যাত্রী খালি হয়ে যাবার পর হঠাৎ বাইরের প্যাসেঞ্জার সব উঠতে শুরু করলে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি রেখা নেমে পড়ে।
কিছুটা দূর স্টেশনের দিকে এগোতে রিম্পাদি দেখল সেই পুরনো জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি একটু এগিয়ে আসলো তারপর দুজনে হেসে কথা বলতে শুরু করল ওভার ব্রিজ পেরিয়ে এবার টোটো ধরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
রিম্পাদি বলল জানিস তো'কাল এ আই অফিস থেকে যে নতুন স্যার এ আই হয়ে এসেছেন। তোর কথা খুব জিজ্ঞেস করছিলেন?'
রেখা বুঝতেই পারল একাধিক যার কথা বলছে সে তার কত পরিচিত।
রেখা কোন উত্তর করলো না।
রিম্পাদি বলল 'কিরে শুনতে পাচ্ছিস কি বললাম?'
রেখা বলল' হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি।'
রিম্পাদি বলল ' বারবার বড়দিকে জিজ্ঞেস করছিলেন আপনাদের রেখা ম্যাম নেই?'
বলতে বলতেই টোটো এসে স্কুল গেটের কাছে দাঁড়াল।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান





ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন শেষ পর্ব 
মোঃ হা‌বিবুর রহমান




পো‌র্টো‌রি‌কোর স্হানীয় সময় তখন বি‌কেল পাঁচটা। যতদূর ম‌নে প‌ড়ে সে‌দিন ছি‌লো ২০ সে‌প্টেম্বর ১৯৯৪ সাল। 

টানা দু'ঘণ্টা উড়ার পরও কোন খবর নেই, ব্যাপারটা কি? ছোট প্লেইন তাই এর জানটাও ছোট। আমা‌দের সব লাগেজ ও সাম‌রিক সরঞ্জামা‌দি‌তে সে‌দিন সমস্ত এয়ার ক্র্যাপ্টটাই অ‌নেকটাই জ্যামপ্যাক্ট হ‌'য়ে গি‌য়েছি‌লো।

আ‌গেই ব‌লছি, মা‌র্কিনীদের দে‌খে আমরাও  প্র‌য়োজ‌নে কিংবা অপ্র‌য়োজ‌নে বেশ কিছু‌দিন ধ‌'রে‌ই যেন বোত‌লে প‌া‌নি খাওয়ার একটা বড় অভ্যাস খুব ভালভা‌বেই রপ্ত ক‌'রে ফে‌লে‌ছিলাম। কিন্ত‌ু এই ভাল অভ্যাস‌টিই সে‌দিন আবার আমা‌দের জন্য কিছুটা কাল হ‌'য়ে দাঁড়ি‌য়ে‌ছি‌লো। তিন ঘণ্টা পার করলাম, তাহ‌'লে হাই‌তির রাজধানী ভূ-পৃ‌ষ্ঠের মান‌চিত্র থে‌কে কি কোথাও উধাও হ‌'য়ে গে‌লো? 

আ‌মি অ‌নোন্যপায় হ‌'য়ে সরাস‌রি কক‌পিটে পাইলট‌কে জিজ্ঞাসা ক‌'রে প‌রিস্কার হ'লাম যে, বাহামা দ্বীপপু‌ঞ্জে সামু‌দ্রিক ঝড়ের সৃ‌ষ্টি হওয়ার দরূনই যত এ বিপ‌ত্তির কারণ। তাই পাইলট‌কে এখন বাহামা দীপপুঞ্জ বাইপাস ক‌'রে ফি‌দেল কা‌ষ্ট্রোর দেশ সুদুর কিউবা হ‌'য়ে ডি‌টোর মে‌রে পূণরায় ঘু‌রে হাই‌তি‌তে ঢুক‌তে হ‌'চ্ছিল। 

এ‌দি‌কে, হাইতিগামী যাত্রী‌দের প্রাত‌ঃক্রিয়া দারুনভা‌বে অনুভূত হওয়ায় খ‌ুব একটা মু‌স্কিলে প‌ড়ে‌ছি‌লো প্রায় সবাই। আস‌লে গাদাগা‌দি ক‌'রে সরঞ্জামাদি রাখার দরুনই টয়‌লেট ঢে‌কে যাওয়া হেতুই এই কঠিন সমস্যার উদ্ভব। 

অবশে‌ষে, দীর্ঘ সা‌ড়ে চার ঘণ্টা পর যুদ্ধ বিধস্ত হাই‌তির রাজধানীর আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দ‌রে আমরা সেইফ ল্যান্ড ক'রলাম, আলহামদু‌লিল্লাহ্।

অগ্রগামী দ‌লে পূর্ব হ'তেই আমার বন্ধ‌ু মেজর সিরাজ হাই‌তি‌তে আগমণ করায় সে এবং তার দ‌লের সদস্যরা আমা‌দের জন্য তাঁবুর ব্যবস্হা ক‌'রে রে‌খে‌ছি‌লো। তবে সে‌দিন রা‌তে হাই‌তির পুরা আকা‌শে ছিল মে‌ঘের ঘনঘটা এবং ল্যান্ড করার ‌বেশ পূ‌র্বেই তুমুল বর্ষণ হ‌'য়ে‌ছি‌লো। 

অব‌শে‌ষে, যুদ্ধ বিধস্ত ‌দেশ হাই‌তির আন্তর্জা‌তিক বিমান বন্দ‌র, পোর্ট অব প্রি‌ন্সের ঠিক অন‌তি দূ‌রেই সা‌রিভা‌বে স্হাপিত তাঁবুর দি‌কে আমরা ছুটলাম। তখনও মিশ‌ন শেষ হবার কিন্তু ৩৫০ দিন বাকী।

‌বিঃদ্রঃ আপনা‌দের সবার একান্ত অনু‌প্রেরণায়ই সম্ভব হ‌'য়ে‌ছে শত ব্যস্ততার ম‌ধ্যেও কিছ‌ু সময় যোগাড় ক‌'রে বেশ ক‌য়েক‌টি পর্ব লি‌খে সময় মত আপনা‌দের‌কে পোষ্ট করা। ভুলত্রু‌টি মার্জনা ক‌'রে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃ‌ষ্টি‌তে দেখবেন সে বিশ্বাস আ‌মি রাখ‌তেই পা‌রি, কি বলেন ?

মতিয়ার মিল্টন





ক্যালেন্ডার
 

ক্যালেন্ডারের বোটা থেকে 
প্রতিদিন খসে পড়ছে দিন।

সময়ের আঁচল খুলে 
খুচরা পয়সার মত 
খরচা হচ্ছে বয়স।

ক্যালেন্ডার ভর্তি স্মৃতি রেখে
উড়ো মেঘের মত উড়ে যাচ্ছে মানুষ।

এভাবে উড়তে উড়তে 
উজাড় হলে মানুষ;
ক্যালেন্ডার কাঁদবে দেয়ালে দেয়ালে।

শামীমা আহমেদ




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব৪০)
শামীমা আহমেদ 

প্রায় পাঁচদিন পর রাহাত আজ অফিসে যাচ্ছে।আপুকে বাইরে থেকে মোটামুটি সুস্থই লাগছে। যদিও ভেতরের সবটুকু তার জানা নেই।তবুও রাহাত আজ আপুকে রেখে অফিসে যেতে ভরসা পাচ্ছে। আর শিহাব সাহেব যেভাবে নিজ সিদ্ধান্ত দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিলো তাতে তো বিষয়টির বেশ কিছুটা অগ্রগতি  হয়েছে।এখন রাহাতকেই একটা শক্ত স্টেপ নিতে হবে। আইদার অর,, এস্পার অউর ওস্পার! নো ইফ আর বাট! ব্যাপারটা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। দুজনারই আর সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। দুজনেরই একাকীত্বে জীবন থেকে অনেকখানি দিন চলে গেছে। আর রাহাতকেই এই অসাধ্যটা সাধন করে দিতে হবে।আর এজন্য এখন আপুর হাতে ফোনটা ফিরিয়ে দিতে হবে।  দুজনায় কথা বলে একটা স্থির সিদ্ধান্তে তাদের আসতে হবে।
রাহাত তৈরী হয়ে শায়লার  মোবাইল হাতে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সরাসরি শায়লার রুমে ঢুকল। শায়লা ঘুম থেকে জেগে বিছানায় বসে সকালের আকাশ দেখছে।নিশ্চয়ই আপুর মনে অনেক কথার ঢেউ।রাহাত শায়লাকে ভীষণভাবে বুঝে।যদিও ছোটবেলায় শুধু আপু অফিস থেকে ফেরার সময় আপু তার জন্য আজ কি আনবে শুধু সেই অপেক্ষায় থাকা হতো।কতই না এমন মধুর স্মৃতি আপুকে নিয়ে! 
রাহাত শায়লার কাছে এগিয়ে এলো।রাহাতের অফিসের পোশাক দেখে শায়লা অবাক হলো! বুঝতে পেরে রাহাতই বললো,হ্যাঁ আপু,আলহামদুলিল্লাহ  তুমিতো এখন সুস্থ হয়ে গেছো।আর আমার অফিসে যাওয়া জরুরী।বস খোঁজ করছেন।বুঝতেইতো পারো পরের চাকর আমরা, তার উপর প্রাইভেট সেক্টরের। একেবারে যেন মাথা কিনে নিয়েছে।একটু ঘাড় ঘুরানোর সুযোগ নেই। জীবন বান্ধা পইরা গেছে এই সকল জবে আইসা! যাই হউক আশা করি দ্রুতই আমি আগের আপুটাকে দেখবো। আর হ্যাঁ,এই  যে তোমার মোবাইলটা। আমার কাছে কিছুদিন বেড়ালো! আজ ওকে বুঝে নাও! এ কথায় দুইভাইবোন একসাথে হেসে উঠলো!  
শায়লা মোবাইল স্ক্রিনে এক ঝলক তাকালো।মনে হলো কাকে যেন খুঁজছে! নিশ্চয়ই  শিহাব সাহেবের কল বা মেসেজ! 
আপু তুমি শিহাব সাহেবের সাথে কথা বলো,,রাহাত চোখের ভাষায় এমনটি বুঝিয়ে দিলো শায়লাকে।শায়লাও ভাইয়ের এমন অনুমতিতে অবাকের চেয়ে বেশি কিছু হলো! 
রাহাত অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
শায়লা অতি দ্রুত মোবাইল অন করলো!মনে হলো কতদিনের অভুক্তের সামনে খাবার এলে যেমন  চোখ চকচক করে উঠে তেমনি!  খুব দ্রুতই শায়লা  অনলাইন হলো। আঙুলে মেসেঞ্জারে টাচ করতেই শিহাবের একগাদা মেসেজ ভেসে উঠলো!  প্রতিদিনে অন্তত চারটি পাঁচটি করে মেসেজ।
শায়লা আজ তুমি কেমন আছো।
তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো।
আমার কথায় তুমি ভুল বুঝলে।
আমি তোমায় ফিরিয়ে দিয়ে বুঝেছি অনেক বড় একটা ভুল করেছি।
তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা বাইক নিয়ে ঘুরতে  যাবো ঐ দূরে, সুর্যাস্ত দেখবো।
এমনি আরো অনেক খন্ড খন্ড মেসেজ।শায়লার চোখ জলে ভরে গেছে।সে ঝাপসা দেখছে।সবশেষ মেসেজটায় শায়লার চোখ আটকে গেলো। আজ সকালের মেসেজ।
শায়লা আমি আজ ভাবনা নদীর কিনারায় নোঙর ফেলেছি তোমাতে আবাস গড়বো বলে,তুমি ফিরিয়ে দিলে চিরতরে  হারাবো ঐ নীল জলে।শায়লা আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না। সেই অলিখিত শর্ত আজ যেন মুখ লুকালো।শিহাব নিজেই নিজের দেয়া শর্তের অবাধ্য হলো।শায়লা  দ্রুতই শিহাবের প্রোফাইল পিকটাতে ফিরে গেলো। শায়লা অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগল।
আজ সকালে ঘুম ভেঙেও তো জানতো না এমনি এক হৃদয় কাড়া সংবাদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। গহীনের চাওয়া আলোর মুখ দেখছে। এক অপার আনন্দে শায়লা মন দুলে উঠলো। শায়লা খুব দ্রুতই ইউটিউবে গিয়ে তার খুব প্রিয় একটা রবীন্দ্র সংগীত সার্চ দিলো।
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
ত্যায়াগীলে আসে হাতে,
দিবাশেষে ধন হারায়েছি,
আমি পেয়েছি আঁধার রাতে।
গানটি বারবার বেজেই চলেছে। আর শায়লা
অজানা এক ভাললাগা সুখে বারবার শিহরিত হয়ে উঠছে!  চোখ বন্ধ করে সে শি্হাবকে  অনুভবে খুব কাছে নিয়ে এলো। শিহাবের অমন মিষ্টি মুখখানি শায়লার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে! এক স্বর্গীয় হাসিতে শায়লাকে চুম্বকের মত কাছে টানছে ! এক দীর্ঘনিঃশ্বাসে শায়লা যেন ফুলের সুবাসে ডুবে গেলো!শিহাবের প্রিয় সুগন্ধিতে শায়লার ঘর মৌ মৌ করছে। হঠাৎই মনে হলো শিহাব তার খুবই কাছে ঘেঁষে  দাঁড়িয়ে।তার হাত ধরতে চাইছে। 
শায়লা কল্পনায় যেন কোথায় হারিয়ে গেলো! 
মনে হচ্ছে দুজনে পাশাপাশি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঐ দূরে সূর্যাস্ত দেখছে। শায়লা একটি লালচে কমলা রঙের শাড়ি পরে আছে। শিহাব সবুজ শার্ট।অপূর্ব লাগছে।শায়লা সূর্য দেখবে না শিহাবকে দেখবে! সূর্যাস্তের লালচে সভায় শি্হাবের মুখখানি লাল হয়ে উঠছে! মনে হচ্ছে যুগ যুগান্তর  এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে!এমনি অনুভবে কেবল তখুনি ডুবে যায় মন প্রাণ যখন দু'প্রান্তে থেকেও দুজন দুজনকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে যায়।
হঠাৎই  মোবাইল রিংএ  শায়লার ভাবনায় ছেদ পড়লো।শায়লা একবারেই ভুলে গিয়েছিল সে এখন কোথায়! ভীষণ  চমকে গিয়ে দেখল 
স্ক্রিনে রাহাতের কল। শায়লা দ্রুতই কল রিসিভ করলো।
আপু কোথায় তুমি? শিহাব ভাইয়া কল দিয়েই যাচ্ছে ধরছো না কেন? তুমি কল রিসিভ না করাতে শিহাব ভাইয়া আমাকে কল দিলো।কী আপু কাকে ভাবছিলে? 
রাহাতের দুষ্টুমিতে শায়লা  লজ্জায় লাজ রাঙা হয়ে উঠলো! নাহ, এখন আর শিহাবকে কল ব্যাক করা  যাবে না। মা নাস্তা খেতে ডাকছেন। নাস্তা খেয়ে ফ্রি হয়ে শিহাবের সাথে কথা বলবে।কেমন যেন একটা মান অভিমান চাওয়া পাওয়া লাজুকতায় শায়লার ভেতরটায় কেমন যেন একটা উষ্ণ জলধারা বয়ে গেলো,,,নিজের কাছেই যেন নিজে ধরা পড়ে গেলো! লজ্জায় আয়নায় আর তাকানো গেলো না।


চলবে.....

শান্তা কামালী /৪৯ পর্ব




বনফুল
(৪৯ পর্ব ) 
শান্তা কামালী

জুঁই শুয়ে এপাশ ওপাশ করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি!  আর যখন ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়িতে তখন  এগারোটা বেজে গেছে দেখে জুঁই একটু আশ্চর্য হলো.... এতো সময় ঘুমিয়েছি বুঝতেই পারিনি! নিশ্চয়ই আব্বু আম্মুর আমার জন্য অপেক্ষা করে নাস্তা খাওয়া হয়নি আব্বু নাস্তা না খেয়ে ই কাজে চলে গেছে। ওয়াশ রুমে ঢুকে জুঁই ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে এলো, মা মনোয়ারা বেগম জুঁইকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, জুঁই তোমার শরীর ঠিক আছে তো? প্রথমে ময়না এসে বলেছে তুমি ঘুমাচ্ছো, ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে আমি গিয়ে দেখলাম তখনো তুমি গভীর ঘুমে, তাই আমিও ডাকি নি। জুঁই বললো আম্মু অনেক ঝামেলা গেলো তো শরীর একটু  দূর্বল ছিলো মনে হচ্ছে, এখন আমি একদম ফিট্। জুঁই বললো আম্মু তুমি নাস্তা করেছো?  মা মনোয়ারা বেগম বললো তোকে ফেলে আমি কি করে নাস্তা করি বল? ময়না টেবিলে দুইজনের নাস্তা পরিবেশন করলো। জুঁই মাকে নিয়ে নাস্তা খাওয়া শেষ করে ডায়নিং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে ময়না এসে কফি দিয়ে গেল। মনোয়ারা বেগম বললেন জুঁই তুমি বসে টিভি দেখ, আমি একবার রান্না ঘর ঘুরে আসি তোমার আব্বু আসার সময় হয়ে যাচ্ছে....। 
আজ আর জুঁই নাস্তা খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে যায়নি। কলিং বেল বাজতেই জুঁই গিয়ে দরজা খুলে ওয়াজেদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললো স্যরি আব্বু, আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে বলে সকালে তোমার সাথে দেখা হয়নি!  আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না.....। 
বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, পাগলী মেয়ে এইটা কোনো ব্যাপার হলো?  ওয়াজেদ সাহেব ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসলেন। বাবা-মা মেয়ে হাহাহা হাহাহা হাহাহা করে হাসছে আর খাচ্ছে পুরো ডাইনিং রুম সরগরম। খাওয়া শেষ করে জুঁইয়ের আব্বু আম্মু রেস্টের জন্য রুমে চলে গেলেন, জুঁই ও নিজের রুমে গেল কিছুটা সময় বিশ্রাম নেবে বলে।


চলবে....

আব্দুল হাকিম 




আরতি 



যদি আঁধারের অতলে      পড়ি আমি বিরলে
                    তব কৃপায়  নিয়ো তুলে, 
সংসারের কোলাহলে        তোমায় যায় ভুলে
                   তবু স্মরিয়ো পলে পলে।
আমি যে অবোধছলে        কত যে পাতকানলে
                     সদা দোহিতেছি জ্বলে,
নিষিদ্ধ মোহকুলে                 মম বিচরণ চলে
                     পড়ি কুহক কবলে।
মোর পদ যুগলে                বেঁধে প্রেম শিকলে
                   এ সংসার মহলে,
তোমারই অনুকুলে            ফেরাও গো অর্গলে
                  তব প্রণয় ছায়াতলে।