শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব৪০)
শামীমা আহমেদ
প্রায় পাঁচদিন পর রাহাত আজ অফিসে যাচ্ছে।আপুকে বাইরে থেকে মোটামুটি সুস্থই লাগছে। যদিও ভেতরের সবটুকু তার জানা নেই।তবুও রাহাত আজ আপুকে রেখে অফিসে যেতে ভরসা পাচ্ছে। আর শিহাব সাহেব যেভাবে নিজ সিদ্ধান্ত দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিলো তাতে তো বিষয়টির বেশ কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।এখন রাহাতকেই একটা শক্ত স্টেপ নিতে হবে। আইদার অর,, এস্পার অউর ওস্পার! নো ইফ আর বাট! ব্যাপারটা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। দুজনারই আর সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। দুজনেরই একাকীত্বে জীবন থেকে অনেকখানি দিন চলে গেছে। আর রাহাতকেই এই অসাধ্যটা সাধন করে দিতে হবে।আর এজন্য এখন আপুর হাতে ফোনটা ফিরিয়ে দিতে হবে। দুজনায় কথা বলে একটা স্থির সিদ্ধান্তে তাদের আসতে হবে।
রাহাত তৈরী হয়ে শায়লার মোবাইল হাতে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সরাসরি শায়লার রুমে ঢুকল। শায়লা ঘুম থেকে জেগে বিছানায় বসে সকালের আকাশ দেখছে।নিশ্চয়ই আপুর মনে অনেক কথার ঢেউ।রাহাত শায়লাকে ভীষণভাবে বুঝে।যদিও ছোটবেলায় শুধু আপু অফিস থেকে ফেরার সময় আপু তার জন্য আজ কি আনবে শুধু সেই অপেক্ষায় থাকা হতো।কতই না এমন মধুর স্মৃতি আপুকে নিয়ে!
রাহাত শায়লার কাছে এগিয়ে এলো।রাহাতের অফিসের পোশাক দেখে শায়লা অবাক হলো! বুঝতে পেরে রাহাতই বললো,হ্যাঁ আপু,আলহামদুলিল্লাহ তুমিতো এখন সুস্থ হয়ে গেছো।আর আমার অফিসে যাওয়া জরুরী।বস খোঁজ করছেন।বুঝতেইতো পারো পরের চাকর আমরা, তার উপর প্রাইভেট সেক্টরের। একেবারে যেন মাথা কিনে নিয়েছে।একটু ঘাড় ঘুরানোর সুযোগ নেই। জীবন বান্ধা পইরা গেছে এই সকল জবে আইসা! যাই হউক আশা করি দ্রুতই আমি আগের আপুটাকে দেখবো। আর হ্যাঁ,এই যে তোমার মোবাইলটা। আমার কাছে কিছুদিন বেড়ালো! আজ ওকে বুঝে নাও! এ কথায় দুইভাইবোন একসাথে হেসে উঠলো!
শায়লা মোবাইল স্ক্রিনে এক ঝলক তাকালো।মনে হলো কাকে যেন খুঁজছে! নিশ্চয়ই শিহাব সাহেবের কল বা মেসেজ!
আপু তুমি শিহাব সাহেবের সাথে কথা বলো,,রাহাত চোখের ভাষায় এমনটি বুঝিয়ে দিলো শায়লাকে।শায়লাও ভাইয়ের এমন অনুমতিতে অবাকের চেয়ে বেশি কিছু হলো!
রাহাত অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
শায়লা অতি দ্রুত মোবাইল অন করলো!মনে হলো কতদিনের অভুক্তের সামনে খাবার এলে যেমন চোখ চকচক করে উঠে তেমনি! খুব দ্রুতই শায়লা অনলাইন হলো। আঙুলে মেসেঞ্জারে টাচ করতেই শিহাবের একগাদা মেসেজ ভেসে উঠলো! প্রতিদিনে অন্তত চারটি পাঁচটি করে মেসেজ।
শায়লা আজ তুমি কেমন আছো।
তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো।
আমার কথায় তুমি ভুল বুঝলে।
আমি তোমায় ফিরিয়ে দিয়ে বুঝেছি অনেক বড় একটা ভুল করেছি।
তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা বাইক নিয়ে ঘুরতে যাবো ঐ দূরে, সুর্যাস্ত দেখবো।
এমনি আরো অনেক খন্ড খন্ড মেসেজ।শায়লার চোখ জলে ভরে গেছে।সে ঝাপসা দেখছে।সবশেষ মেসেজটায় শায়লার চোখ আটকে গেলো। আজ সকালের মেসেজ।
শায়লা আমি আজ ভাবনা নদীর কিনারায় নোঙর ফেলেছি তোমাতে আবাস গড়বো বলে,তুমি ফিরিয়ে দিলে চিরতরে হারাবো ঐ নীল জলে।শায়লা আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না। সেই অলিখিত শর্ত আজ যেন মুখ লুকালো।শিহাব নিজেই নিজের দেয়া শর্তের অবাধ্য হলো।শায়লা দ্রুতই শিহাবের প্রোফাইল পিকটাতে ফিরে গেলো। শায়লা অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগল।
আজ সকালে ঘুম ভেঙেও তো জানতো না এমনি এক হৃদয় কাড়া সংবাদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। গহীনের চাওয়া আলোর মুখ দেখছে। এক অপার আনন্দে শায়লা মন দুলে উঠলো। শায়লা খুব দ্রুতই ইউটিউবে গিয়ে তার খুব প্রিয় একটা রবীন্দ্র সংগীত সার্চ দিলো।
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
ত্যায়াগীলে আসে হাতে,
দিবাশেষে ধন হারায়েছি,
আমি পেয়েছি আঁধার রাতে।
গানটি বারবার বেজেই চলেছে। আর শায়লা
অজানা এক ভাললাগা সুখে বারবার শিহরিত হয়ে উঠছে! চোখ বন্ধ করে সে শি্হাবকে অনুভবে খুব কাছে নিয়ে এলো। শিহাবের অমন মিষ্টি মুখখানি শায়লার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে! এক স্বর্গীয় হাসিতে শায়লাকে চুম্বকের মত কাছে টানছে ! এক দীর্ঘনিঃশ্বাসে শায়লা যেন ফুলের সুবাসে ডুবে গেলো!শিহাবের প্রিয় সুগন্ধিতে শায়লার ঘর মৌ মৌ করছে। হঠাৎই মনে হলো শিহাব তার খুবই কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।তার হাত ধরতে চাইছে।
শায়লা কল্পনায় যেন কোথায় হারিয়ে গেলো!
মনে হচ্ছে দুজনে পাশাপাশি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঐ দূরে সূর্যাস্ত দেখছে। শায়লা একটি লালচে কমলা রঙের শাড়ি পরে আছে। শিহাব সবুজ শার্ট।অপূর্ব লাগছে।শায়লা সূর্য দেখবে না শিহাবকে দেখবে! সূর্যাস্তের লালচে সভায় শি্হাবের মুখখানি লাল হয়ে উঠছে! মনে হচ্ছে যুগ যুগান্তর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে!এমনি অনুভবে কেবল তখুনি ডুবে যায় মন প্রাণ যখন দু'প্রান্তে থেকেও দুজন দুজনকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে যায়।
হঠাৎই মোবাইল রিংএ শায়লার ভাবনায় ছেদ পড়লো।শায়লা একবারেই ভুলে গিয়েছিল সে এখন কোথায়! ভীষণ চমকে গিয়ে দেখল
স্ক্রিনে রাহাতের কল। শায়লা দ্রুতই কল রিসিভ করলো।
আপু কোথায় তুমি? শিহাব ভাইয়া কল দিয়েই যাচ্ছে ধরছো না কেন? তুমি কল রিসিভ না করাতে শিহাব ভাইয়া আমাকে কল দিলো।কী আপু কাকে ভাবছিলে?
রাহাতের দুষ্টুমিতে শায়লা লজ্জায় লাজ রাঙা হয়ে উঠলো! নাহ, এখন আর শিহাবকে কল ব্যাক করা যাবে না। মা নাস্তা খেতে ডাকছেন। নাস্তা খেয়ে ফ্রি হয়ে শিহাবের সাথে কথা বলবে।কেমন যেন একটা মান অভিমান চাওয়া পাওয়া লাজুকতায় শায়লার ভেতরটায় কেমন যেন একটা উষ্ণ জলধারা বয়ে গেলো,,,নিজের কাছেই যেন নিজে ধরা পড়ে গেলো! লজ্জায় আয়নায় আর তাকানো গেলো না।
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
thank you so much