০৩ মার্চ ২০২১

মধুমিতা রায়


 


মন পথের গল্প...


যে সমস্ত কিছু আমার বলে জমিয়েছিলাম

আজ শমন এল সেসব কিছু আমার নয়।


অথচ কী গভীর বিশ্বাস ছিল!

বিশ্বাস ছিল সেই প্রিয় নামের বর্ণগুলো 

অন্তত আমার আছে।


অন্ধকার ভোরে উঠোনে নেমে দেখি

সমস্ত বর্ণগুলো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে

চারিদিক।


প্রয়োজন ফুরালে ব্যস্ততার শহর জাগে

আলো গুলো ছিঁড়ে খুঁড়ে ঝমঝম শব্দে

ব্রীজ কাঁপিয়ে পিষে দেয় পথের গল্প।


পথের ধুলো মেখে গাছ ভাবে

কেউ তো ফিরুক

কেউ তো কাছে বসুক দুদন্ড

বলুক... ছিলাম তো। তুমিই বুঝতে পার নি।



গোলাম কবির




পরিতাপের বিষয় 


এই পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য সবাই উদার! নদীতে যখন বান ডাকে মুসলিম না হিন্দু এলাকা কোনো বাছবিচার করে না, 
অবলীলায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব এলাকাই। 
বৃক্ষ যখন ছায়া দেয়,  
তখন সেও কোনো হিসাব রাখে না - 
তার ছায়াতলে হিন্দু না মুসলিম প্রাণ জুড়ালো কিংবা তার ফল কোন ধর্মের লোকে খাবে 
তা বোঝে না সে, সব এলাকার ফলের স্বাদ 
একই থাকে। 
বন্য হিংস্র পশু যখন কাউকে আক্রমণ করে, 
তখন কোন ধর্মের লোককে আক্রমণ করবে সেজন্য কোন পক্ষপাত করে না। 
ফুল যখন ফোটে, তখন তার সৌন্দর্যে ও সৌরভে ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আকুল হয়। 
এমন তো শুনিনি কোথাও কখনো যে - 
হিন্দু এলাকার বেলি ফুলের ঘ্রাণ মুসলিম এলাকার বেলি ফুলের ঘ্রাণ হতে ভিন্ন কিছু! 
শুধু মানুষই বিভাজন করে মানুষকে ধর্মভেদে, কুলীনতা ভেদে, অথচ একজন মানুষ যখন 
জন্ম নেয়, তখন সে মানবশিশু হিসেবেই 
জন্ম নেয়! পরে সে হয় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান বা অন্য ধর্মের। 
পরিতাপের বিষয় এটাই, যে -
ভুলে যায় সে যে মানব ছিলো সে কথা, 
তার রক্ত বা অন্য কোথাও মানব ছাড়া 
অন্য কোনো ধর্মের অস্তিত্ব লিখা নেই, 
যার ধর্ম সে পালন করে বলে মনে করে - 
তাঁর অবস্থান এই হৃদয়ের মাঝেই, 
তাঁকে ভালবেসে তাঁর সৃষ্টির সবকিছুই 
ভালবাসতে হয়, নয়তো 
এই ভালবাসার মানে নেই কোনো !

শ্যামল রায়




আমি ঘর হতে চেয়েছি


আমি ঘর হতে চেয়েছি

খুঁজে নিতে চাইছি

 একদিকে সূর্য অন্যদিকে জোসনা রাত।

কিন্তু যৌবনে স্বপ্ন দেখাটা, একটু বাড়তি 

 ইছামতি নদীর মতো

কখনো বহতা

কখনো বালির চরা।

কোলাহলের কাছে উড়ে বেড়ায়

এক ঝাঁক প্রজাপতি

প্রিয় সন্ধ্যা নামলে সিঁদুর পরা নারী

নির্ভেজাল ভালোবাসাটা ভুলে যায়

পেরিয়ে যায় সকাল থেকে রাত

পালটায় হাত, ঠোঁট ,গোটা শরীর

আমি তোমার ঘর হতে চেয়েছি

আমি মেঘ হতে চাইনি

আমি প্রজাপতির ডানা হতে চাইনি

যৌবনের স্বপ্ন দেখায়

নির্ভেজাল কবিতা হয়ে ঘর খুঁজছি।

অলোক দাস




 শ্রদ্ধা 


 যে মানুষটা বললো, কাল আসছেন তো? চেষ্টা করবো I পরের দিন বাড়ি গিয়ে দেখলাম, রাজার বাড়ি থমথমে I কারো মুখে  কোনো কথা নেই I শান্তিনিকেতন থেকে সাদা পাঞ্জাবী এনেছিলাম I মহারাজ খুশি হবে বলে I মেয়েকে বললাম, এটা উনাকে পরিয়ে দেবেন I আর বলবেন, আমি এসেছিলাম I খালি বলতেন, তুমি হলে আমার অরিজিৎ I কাজের মধ্যে থাকবেন I বাঁচবেন তো একবার I সবার হৃদয়ে দাগ রেখে যান I ইতিহাস আপনাকে কোনোদিন ভুলবে না I সবায়ের জন্যে আপনার গান ও কবিতা I দুয়ারে দুয়ারে ছড়িয়ে যাবেই I

স্বপন কুমার ধর




কবি ও কবিতা



আমি অক্ষর আর তুমি মাত্রা,

আমাদের নিয়েই হয় শব্দ।

আমরা যদি মিলেমিশে না থাকি,

তবে সব কবিরাই হন জব্দ।


নিজস্ব কল্পনা আর বাস্তবের মিলন ঘটিয়ে,

আমাদের সাজিয়ে অলংকৃত করেন কবি।

আর হয়ে যাই গল্প, উপন্যাস, কবিতা,

যা অলংকারিকের হবি।


কবিতা বিনা হয় না কবির জীবনী,

অনেকে তাই লেখেন, নিজের বিবরণী।

কবিতা বিনা কাটে না তাদের দিন,

তাই তো লিখে চলে তারা, কবিতা প্রতিদিন।


কবিরা করে সমাজের থেকে,

একটু খানি আশা,

কবিতার সাথে তারা যেন পায়,

সমাজের ভালোবাসা।

মমতা রায় চৌধুরী




আবছা হলে তুমি


একটা সময় ছিলে,

অনেক মনের কাছে।

এখন তুমি অনেক দূরে,

গোধূলি  ম্লান আলো।

ক্রমশ তুমি  আবছা হলে,

ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

হঠাৎই স্পষ্ট হলে,

এক মনোজ্ঞ সেমিনারে।

আমি কেমন এলোমেলো, 

 জট পাকাচ্ছে ভাবনাগুলো।

তুমি মনের ভাষা এক পলকে

পড়তে গিয়ে হোঁচট খেলে। 

তাতে ছিল না কোন আবেগ,

ছিল না কোন প্রত্যাশা।

শুধুই ছিল জিজ্ঞাসা?

আবছা তুমি আবছা।

বলতে পারি নি কেউ কাউকে।

তবু চোখের ভাষার ধূসরতা 

খুঁজে পেতে চাইলো সেই সজীবতা।

মোহাঃ হাসানুজ্জামান




ছোট্ট জিজ্ঞাসা


আমার স্বপ্ন গুলোকি রবে স্বপ্ন হয়ে

নাকি দেখব নতুন ঊষার কিরণ,

পৃথিবীটা আমাকে করেছে কোনঠাসা

ফুরাবে কবে আমার দুঃসময় ?


অন্তস্হলে নেই আমার কঠিন জোর

করিনি কভু আমি মানবতা লঙ্ঘন,

তবু দুচোখে যেন বিষাদের স্বপ্ন

অস্তিত্বের গহীনে আবেগি মন।



রৌদ্র ভরা দুপুরে আমার পিপাসিত প্রান

স্বার্থ বাদীদের মিথ্যাচারে নিপীড়িত ধ‍্যান,

তবুও মনের মাঝে পরিস্ফুটিত আশা

নতূন দিনে আসে যদি পূবালী ঝড়।


বিক্ষিপ্ত হৃদয়ে আমার দিশাহীন গগন

নির্ভাবনায় আসবে কবে দীপ্ত সন্ধিক্ষণ,

সুস্হিরতা ফিরবে আমার হবে বিরহ দূর

সুখের তৃপ্তির মাঝে রাঙ্গা ফাগুন।

মোঃ শাহিনূর রহমান শাহিন




বিশ্বাস ভেঙ্গনা

  


মন ভেঙ্গে গেলে একবার,

জোড়া লাগেনা আর!

              হয়না মনের সেলাই,

কিছু ভুল - হয়না মাশুল 

           বিশ্বাস ভাংতে নাই!

অবিশ্বাসে অশান্তির সংসার,

দেহ মন ভাঙ্গে সবার!

          প্রেমের হয়রে ক্ষতি,

প্রেম ছাড়া - মন মরা

         জীবনে সবার দূর্গতী!

অসতী অসতের জন্যে,

সতী সততার ভাগ্যগুণে!

          সতী সুখ সমৃদ্ধি,

সংসারে শান্তি - থাকেনা বিভ্রান্তি 

        সত্য মতে প্রেম বৃদ্ধি!

প্রেমিক কে দিওনা ফাঁকি,

একদিন হয়ে যাবে একাকি?

         বিশ্বাসের দাও প্রতিদান,

বিশ্বাস সত্য - প্রেমে নিত্য 

          স্বপ্ন সাজায় মনপ্রাণ!

বাঁধা ঘর ভেঙ্গে যায়,

যদি বিশ্বাস ভয়ে পালায়!

         নিত্য মৃত্যু প্রেমে সবার,

প্রেম হীন - রাত দিন 

        কষ্টে - জীবন করে পার!

নাজনীন নাহার




সুখ নিদ্রা 



মিষ্টি একটা গল্প হবি? হতেই তো পারিস, 

তোর ইতল-বিতল গল্প শুনে 

নিদ্রা যাবো রাতের কোলে!


নিদ্রা গেলে স্বপ্ন হবি? হয়েই দেখিস,

স্বপ্নে থাকবো কপল ছুঁয়ে 

ঘুম ভাঙবে সেই আবেশ নিয়ে!


আবেশ গুলোকে মেখে নিবি? নিয়েই দেখিস,

পুলক জাগা তনুমনে 

সকাল কেমন স্নিগ্ধ লাগে!


সকাল বেলার সুখ নিবি? নিতেই তো পারিস, 

চোখের তারায় এক নিমেষে 

ভরিয়ে দিবো রৌদ্র সুখে!


রৌদ্রমুখর দুপুর হবি? হতেই তো পারিস, 

শীতল ছায়ায় উত্তাপ রেখে 

ডাকবো তোকে রোদ্দুর বলে। 


রোদ্দুর তুই গোধূলি হবি? এটুকু তো হতেই পারিস, 

লাল সূর্যের সৌন্দর্য ছেড়ে 

সন্ধ্যা হবি আমায় নিয়ে। 


সন্ধ্যা ক্ষণে উদাস হবি? মাঝে মধ্যে হতেও তো পারিস,

বসবো দুজন নিবিড় করে 

মন খারাপে রাত জড়িয়ে। 


আবার রাতের গল্প হবি? নতুন গল্প হতেই পারিস,

জনম জনম তোর গল্প শুনে 

সুখ নিদ্রা যাবো আমি মরণে।

মোঃ সরোয়ার হোসেন



অহং



আমি এমন কেন?

রঙহীন ,বিবর্ণ,

ঘোলাটে, ধোঁয়াটে, তামাটে। 

সবকিছু কেমন যেন পোড়া পোড়া

ভস্ম, দগ্ধ স্থির পবনে

চারদিক কুয়াশ চাদরে মোড়ানো 

কেমন যেন চাপ দিয়ে চলছে অবিরত।

আমি যতবার বেড়িয়ে আসতে চাই

ঝাঁটকা দিয়ে জাল চিরে 

তত'ই গভীরে চরম বিষাদে 

আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়ি।


আমি এমন কেন? 

নির্জীব, প্রাণহীন, হিম-শীতল অথবা পাথর, নিথর। 

অস্তাচল নাবিকের মত হাল ছাড়া, পাল ছেঁড়া 

কালের স্রোতে ভেসে চলা এক নর

যার চারপাশে বিশাল জলরাশি

গভীর নিভৃত পায়ের নিচে। 

আশাহীন অসাড় মস্তিষ্ক 

নয়নের মণি দুটো নিষ্প্রভ মলিন 

ঝাপসা আর গোলকধাঁধায় যারা স্বপ্নহারা। 


আমি এমন কেন?

যদ্যপি চাই সবকিছু খাঁখাঁ, ধূসর 

বিষন্ন মরুভূমির মত জীবনহীন শুষ্ক। 

যেন, বেলাভূমির উপর দাঁড়িয়ে থাকা 

যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মত ক্লান্ত কায়ায়  পালিয়ে আসা এক পলাতক। 

যে ছুটে চলেছি মরীচিমায়ায়।

হিতাহিত জ্ঞান শূন্য 

অহং বলে আজ আর 

আমার নেই কিছু অবশিষ্ট! 

আমি,এমন কেন?