২৬ জানুয়ারী ২০২১

সানি সরকার




ঈশ্বরের খিদে ও শীতকাল 


শীতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঈশ্বররা হাসছেন 

এই হাসির ভেতরে খিদে চেপে রাখার 

ওষুধ মেশানো আছে? 


পথ চলতি একজন ব্যক্তি বললেন : 

শীতের রাস্তায় 

এতগুলি মানুষ 

তাঁদের শীত করে না... 


পাশ থেকে আরেকজন বললেন : 

কোনও কোনও মানুষদের 

শীত করতে নেই, খিদে পেতে নেই 

আমরা সকলেই জানি, কখনও কখনও 

ঈশ্বরের শীত ও খিদে থাকতে নেই... 


শীতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঈশ্বররা হাসলে 

আমাদের শীতকাল ফুরিয়ে যায় 

ওঁদের দেখে আমাদের শীত, তেষ্টা ও খিদে মরে যায়

আনার কলি ( টোকিও, জাপান )




 মনোযোগ 


তোমাকেই দেবো সবটুকু 

অম্ল, বিষ , সুধা যা কিছু।

প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প , সুনামি 

অতঃপর যতটুকু বেঁচে যাই আমি। 

ঊষার আশা , গোধূলির শেষ চাওয়া 

অবশেষ তার যতটুকু যায় পাওয়া। 

জানতো আমার আছে সামান্য রতন 

ক্ষয়ে যাওয়া আয়ু , মুক্ত মন। 

যা কিছু আমার দেবো তোমায়

শুধু মনোযোগটুকু দিও আমায়।

হামিদুল ইসলাম



পাঞ্জা

          

              

বৃষ্টির শব্দে আজ মুখরিত হৃদয় 

        প্রতিটি শিরায় শিহরণ

           মাতৃদুগ্ধে স্বাদ নেয়

                    ইতিহাস ।।


বৈরিতার শঙ্খচূড়ায় হতাশাগ্রস্ত জীবন 

       বিভেদের ছায়ারা সজাগ

         প্রতারণা বন্ধুর গলায় 

                   বারোমাস ।।


হেলায় হারিয়ে ফেলি চেতনার রোমকূপ

      শ্বাপদদের সাথে বাঁধি ঘর

        মৃত‍্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ি

                    নিরন্তর ।।

শান্তা কামালী




প্রথম বসন্ত দিনে 



তোমার বক্ষে যুগল শঙ্খচূড় উদ্ধত 

ভঙ্গিমায় ডুব দেয় বারেবারে... 

তখন তুমি সান্ধ্য সিনানরতা

হেমাগ্নি সরোবরে... 


দূর হতে আমি দেখেছি

 অরূপ  রূপ,

মদন জ্বরে পুড়েছি একাকী 

নীরবেতে নিশ্চুপ। 


ভ্রমর হতে চেয়েছিলো মন 

অনুক্ত প্রলোভনে,

ঢেউ গুলো যেমন জড়িয়ে ছিলো 

নিবিড় আলিঙ্গনে... 


তেমন ই ভাবে চেয়েছিলো 

আমার এই বাহু দুটি 

তখনই প্রস্ফুটিত শাপলা কোঁড়কে 

অকাল কুজ্ঝটি...


নিঃজ্ঝুম চারিপাশ.... 

হাঁপড়ের মতো ফুলে ওঠে ফুসফুস,

কি এক ঝড়ের পূর্বাভাস। 


সমাপ্ত হলো স্নান... 

আমার বুকের শুকপাখী টা

গায় পুরাতনী গান...


"নিশীথ জাগিয়া রয়েছি বঁধুয়া.... 

আমি শুক তুমি সারি...

যুগ যুগ ধরে আমাদের দু'জনা

বাইবো জীবন তরী।

শ্যামল রায়ের দুটি কবিতা




 মানুষই ভগবান 


মানুষের ধর্ম মানে আদর্শবোধ মূল্যবোধ সততা

মানুষের পাশে দাঁড়ানো সাহায্য করা

এর প্রকৃত অর্থ ধর্ম যার নাম মানবিকতা

এখানে সম্পূর্ণ হতে পারি আমরা

বিভিন্ন নামে ডাকতে পারি

কখনো ভগবান কখনো আল্লাহ কখনো যীশু খ্রীষ্ট।

যে সব মানুষের বিবেক ও চেতনাবোধ নেই, 

তারা সম্পূর্ণ মানুষ নয়। ধর্মের নামে কুৎসা শুধু হয়।

চেতনা বোধ না থাকলে

মনুষত্ব তৈরি হয় না

তাই বেঁচে থাকার মাঝে নানান কিছু ভাবি আমরা

কখনো নানান উক্তি করে থাকি

 চিত্রা না থাকলে বলি জ্ঞান নেই, তাই পশু। 

আবার কখনো কোন  মানুষ 

জ্ঞানরুপ দেশলাই দ্বারা 

সংসারের তথা মানুষের 

অজ্ঞানতা দূর করে আলোর

পথ যারা দেখিয়ে থাকেন তারা মানুষ

  নাম হতে পারে ধর্ম ,যিনি দিশা দেখান,

 তিনি হচ্ছেন ভগবান আল্লাহ

 বা যীশু খ্রীষ্ট হতে পারেন।

 এই ভাবনাটা এখন অনেকটাই দিশাহীন 

তাই মাতামাতি ধর্ম নিয়ে মানবিকতা নেই। 



সবকিছুই ডাকছে

 

 সমুদ্রর ঢেউ ডাকে

আমরা বলি গর্জন করছে

আমরা সকলেই ডাকি

তারমধ্যে এরকমটা হতে পারে

পাখি ডাকছে চঞ্চল অচঞ্চল পরিবেশে 

কুকুর কাঁদছেতো কাঁদছেই চারপাশ জুড়ে

গরু ডাকছে, বিড়াল কাঁদছে 

শিশু কাঁদছে কৃষক কাঁদছে 

পাশের বাড়িতে কাঁদছে।

কেঁদে ওঠার সুর সব কিছুতেই 

 চারপাশ জুড়ে।

আমি-তুমি দেখেও দেখছি না, শুনেও শুনছি না।

প্রতি ঘরের দেয়ালে কান পেতেশোনো, দেয়ালও কাঁদছে। 

তুমিঝ দ‍্যাখো, শুনেও শুনছে না, কেউ

গুমরে গুমরে কাঁদছে সবাই

শুধুই দেখছি ,ভাবছি না কেউ ই

যারা ভাবছি ,করার নেই কিছুই--- 

কান্নায় শুধুই  এখন জল ।




মুন চক্রবর্তী




মাটির সন্ন্যাসী শপথ


এই মাটির শপথে এসেছিল ছাব্বিশ জানুয়ারি 

যাঁর শুধু অনুরাগ ছিল না,ছিল বিপ্লবী আগুন

স্বরাজের মিছিলে বুলেটে বুক দিয়ে গেছে অগনন

সমতার জয়গানে কলম লাঙল মাটির আলিঙ্গনে।


হাজার প্রাণের বলিদানে প্রজাতন্ত্রের বিজয় তিলক 

মাটির সন্ন্যাসী শপথে ভাগবত,ভগবতী,ভাগীরথী মৌন সাধক।


রক্ত ফেনিল উচ্ছাসে ভেঙেছে সব প্রাচীর, কণ্যা কুমারীর বুকে মগ্ন তাপস।

এই মাটিতে "হল বলরাম স্কন্দে উপাড়ি ফেলিব বিশ্ব' কবির হুংকারে ঘর ঘরে বীর বীরাঙ্গনা কাজী নজরুল।


শস্য শ্যামলার প্রজারা পৃথিবীর মানচিত্রে শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি 

লাল কার্পেটে হাঁটছে যখন দলাদলির দালাল

বুকের রক্ত ঝরছে নির্বোধ কাঙালের,সমতার বিচার রাখছে ইতিহাস।

মাটির সন্ন্যাসী শপথ বিপুল সম্ভারের সম্ভবনা নিয়ে 

রৌদ বৃষ্টি ঝরে ভোটের বাক্সে বন্দী অরাজকতা।


রক্ত দিয়েছে ঢেলে তারুণ্যের সকাল,গোধূলিতে শ্মশান কবরে শুকনো ফুলে--

বৈরাগ্যের মৃত্যু সাজিয়ে মুনি ঋষির তপ ভূমি প্রজাতন্ত্রে বেশ আছে

সব ভুলেছে মিছিলের অভুক্ত প্রজা,মাটির সন্ন্যাসী শপথে।


জাতীয় পতাকা বিক্রির বাজারে ছেলে মেয়েরা 

শহিদ তর্পনে ছেঁড়া কাপড়ে মূখের  হাসিতে

মিলেছে নির্বাক শপথ জাতীয় পতাকার নীচে 

"জন গন মন" তেরঙ্গায় কবিগুরুর মাটির সন্ন্যাসী শপথ।

সুলতানা চৌধুরী পারু ( ইংল্যান্ড )



জন্ম হোক নতুন গল্পের 



সবাই তো ভালোবেসে দিতে চায় 

আমি না হয়.একটু আঘাতই দিব


দেখতে চাই তোমার কলম থেকে 

কতো ভালোবাসার কালি ঝরে.! 


ঝরে পড়ে পড়ুক অনবরত 

শিলা বৃষ্টির মতো

বৃষ্টি হয়ে ;


পৃষ্ঠা গুলো ভিজে গিয়ে কবিতার জন্ম হোক -জন্ম হোক নতুন গল্পের।

ঈমাম উদ্দিন




বিদ্রুপ প্রেম 

 


আমি কতবার পুড়েছি বিদ্রুপ প্রেমের 

উল্লাসে,  

বাড়াস না তুই আমার সেই পুরনো 

মনের ক্ষত,প্রেম প্রেম প্রহসনে  

চিতার দহনে জ্বলছি,জ্বলছি অবিরত।


তুমি কি নিয়েছ কখনো নিঃশ্বাসে  অন্তর 

পুড়ার বিকট গন্ধ,কেন কখনো কি 

পড়নি তুমি বিরহ গাথা কবিতার 

ছন্দ,হয়ত প্রেম মানেই দিয়ে যাওয়া 

ফিরে চাওয়া মন্দ। 


প্রেম বলতে নেই কিছু মনে হয় গল্প 

প্রেমে কি সুখ আছে নাকি সব কল্প 

কত চঞ্চলা মন স্তব্ধ করে ভালো 

বাসার তন্ত্র,প্রেম মানে কাছে পাওয়ার 

কাঙালের মূলমন্ত্র।

জয়িতা বর্ধন




 হে নূতন



নূতন বছর নূতন বছর

 নব রূপে এসো ,

তুমি আমার মর্মে মর্মে  মেশো।।

 নূতন বছর তুমি মোছাও গরিবের চোখের জল ।

মানব মনের দারুন দোলাচল৷

 নূতন বছর তুমি যেন হও সুখের কারিগর ।

তোমার ছোঁয়ায় পায়ে যেন      সব ....

সুখী হৃদয়ের ঘর ।

নূতন বছর নারীলোলুপ ধর্ষকদের দাও উচিত শিক্ষা, দাও তাদের মানবতার দীক্ষা। তুমি অন্ধজনের হাতটি ধরো মনে জোগাও বল,

 তুমি যেন হও নতুনত্বের দৃঢ় ফলাফল।

 গৃহহীনে দাও ঘর,

 তুমি হয়ো নাকো পর।

 নতুন বছর

 তুমি পলাশ দিও 

রাঙিয়ে দিয়ে মন ।

হয়ে ওঠো মোর পরম আপনজন৷

তুমি হও শিমুল ফুল

জীবনের রঙে রঙ ছবি হয়ে ভরে উঠুক হৃদয়ের দুকুল৷ হাসি দিয়ো  দিও ভালোবাসার সুর ।

 আর দিও একমুঠো সজীবতার রোদ্দুর ।

হুমায়ুন কবির সিকদার




হৃদয়কুঞ্জে


হৃদয়ের গোপন ঘরে যে জন করে বসবাস 

কী এমন সাধ‍্য আমার তাকে করি উপহাস?


দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না, যায় না কথাবলা 

অনুভবে প্রতিক্ষণে তার পথেই চলা।


হবে দেখা বলবো কথা স্বপ্ন দেখি রোজ

খুঁজে বেড়াই জগতজুড়ে পাইনি আজো খোঁজ।


চুপি চুপি হৃদয়ে হাঁটে পাইনি পদচিহ্ন 

প্রতিনিয়ত তার ধরন পাল্টে হচ্ছে ভিন্ন।


শব্দগুলো ফাটল তোলে বাজে হৃদয়-কানেও 

সুর বাজেনা মনকাড়েনা অমরগাঁথা গানেও।


বুকের খাঁচার অচিনপুরে অচিন পাখির বাস

সকাল বিকাল খুঁজে ফিরি বছরের বারোমাস।


আপনমনে একলাই যে কত কথা শুনতে পাই

চেতন ফিরে দেখি আবার মন-মাধুরী পাশে নাই।


একতারাটা যখন বাজে শুনছি নিত‍্য করুণসুর

বেহালাটা বলছে কানে তার বসবাস অচিনপুর।


সুর সোহাগের জাদুতে বোনা ভালোবাসার গদি

তার বিহনে হৃদয়কুঞ্জে বইছে বিষাদনদী।