২৬ মার্চ ২০২২

মমতা রায়চৌধুরীর ধরাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪২




উপন্যাস 

টানাপোড়েন ১৪২
আনমনে বিয়ে বাড়ি
মমতা রায়চৌধুরী


ঘরটা কেমন গুমোট লাগছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে কল্যাণের কল্যাণের। খোলা জায়গায় যেতে পারলে খুব ভালো হতো, এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না ।সানাইয়ের সুরে আনন্দের বন্যায় ভেসে যাওয়ার কথা ছিল। এই দিনটার জন্যই  চির আকাঙ্খিত ছিল মন প্রাণ । যে দিনটার প্রত্যাশায় এতগুলো দিন গুনেছে। অথচ কেমন যেন একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে ভেতরে ভেতরে। কল্যান ভাবছে 'তবে কি  শিখাকে চায় নি?
এখনও কি মনে মনে   প্রভাকেই চায়।
এরপর  পাগল হয়ে যাবে। অথচ প্রভা ও তার জীবনটাকে নিয়ে খেলেছে ।বিশ্বাসের মর্যাদা রাখে নি। যে দুরন্ত ঝরনার বেগে এসেছিল। সেই গতিতে কল্যান ও ভেসে গেছিল।
আজকে কেন এসব কথা মনে করছে, এটা তো একদমই ঠিক হচ্ছে না। বিয়ের পরপরই যেতে হবে চেন্নাই ।ফ্লাইট এর টিকিট কাটা হয়ে গেছে। গলাটার কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে।
ঘরেতে মন টিকছে না।
বিকেল বেলায় ছাদে পায়চারি করে আসি। সারা বাড়ীতে লোকজন ভর্তি কোথাও একটু একা থাকার উপায় নেই ।আজকে বড্ড একা থাকতে ইচ্ছে করছে। এই কথা ভাবতে ভাবতে কল্যাণ তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে এমন সময় সরজু বলল"আরে এই সময় কোথায় যাচ্ছিস?"
একা কোথাও যাবিনা।'
'ওহ,দিদি, আমি তো একটু ওপরে যাচ্ছি।'
'তাহলেই বা তুই একা কেন যাবি? তোর জাইবু কোথায় গেল?
এই লোকটাকে নিয়ে আর পারা যাবে না, কতবার বলেছি এই সময় কল্যাণের কাছে কাছে থাকবে আমার কোন কথা শোনে?'
কল্যান মনে মনে ভাবছে 'একটু একা থাকতে চাইছে। ,দিদি ,আবার কি যে করতে চাইছে না একদম ভালো লাগে না।'
'ঠিক আছে সন্ধ্যার আগে নেমে আসবি।'
'তোর জাইবুর কপালে ভীষণ কষ্ট আছে, দেখ না?'
', জাইবু ,দিদি হেব্বি ক্ষেপে আছে। আজ তোমার কপালে চরম কষ্ট। সত্যি বাবা, বিয়ে করা মানে একটা ঝুঁকি আর অধিকার ফলানো ,ওহো।'
ছাড়া পেয়ে কল্যান উপরে চলে আসলো ।ছাদে দাঁড়িয়ে দিগন্তবিস্তৃত আকাশটাকে দেখল।
একদল পাখি উড়ে যাচ্ছে বেলা শেষে তারা নিজেদের ঠিকানায়।
কল্যান উদাস দৃষ্টিতে যতদূর দেখা যায় তাদের ততদূর পর্যন্ত দেখল।
তারপর ভাবল প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে স্থান আছে। কল্যাণের ও ছিল ।কল্যান চাইতো এরকম একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থান থাকুক যেখানে তারা পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে ।ভালোবাসার ,বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হবে। সারাদিন ক্লান্তি শেষে নিশ্চিন্ত একটা আশ্রয় যেখানে আলতো করে ভালোবাসার ছোঁয়া ঝরে পড়বে চোখে মুখে।
শিখা কি সেই জায়গাটা তৈরি করতে পারবে?শিখা খারাপ মেয়ে নয়। যতদূর তাকে দেখেছে, তাতে মনে হয়েছে পরিবারের প্রতি সঠিক দায়িত্বই পালন করবে এ তার বিশ্বাস।'
কিন্তু…?
'সিগারেট খাওয়া বারণ আছে কিন্তু বিকেলের এই মুহূর্তে যে সিগারেটের নেশাতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে আরো নস্টালজিক হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।'
'প্রভা যত তোমাকে সরিয়ে দিতে চাইছি, প্রভা ততই আমার সারা শরীরে দ্যুতি ছড়াচ্ছ'।
মনে পড়ে একদিন সেই রাতের কথা। প্রভার কথা। বলা যায় অনেকটা জোরজবস্তি করেই প্রভা কল্যানের ফ্ল্যাট দেখতে এসেছিল। সেটাও বেশ খানিকটা রাত্রে। ওর ভেতরে যে কি ছিলো  কিছুতেই না করতে পারতাম না। ওর চোখের দিকে তাকালেই যেন সবকিছু এলোমলো হয়ে যেত।
কত সন্তর্পণে সেদিন  আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছিলাম।
রুমে ঢুকতেই প্রভা বুকের কাছে আছড়এ পড়েছিল ।কল্যাণের ভেতরেও রক্ত ক্রমশ গরম হয়ে উঠছিল কেমন যেন একটা নাচন ধরে গেছিল। প্রভা কল্যাণকে আরো পাগলের মতো আঁকড়ে ধরে ছিল ,ঠোঁটের উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছিল সারা অঙ্গে ।কল্যান কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না ।সত্যি ভেবে উঠতে পারছিল না কি করা উচিত? কল্যাণের ভেতরেও তখন কালবৈশাখী ঝড় সবকিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে পারে বাধা , রীতিনীতির আড়ষ্ঠতা,সংযম। কিছু একটা বিপর্যয় যখন তখন ঘটে যেতে পারে এমন সময় বেজে উঠল ফোন দুজনাই ছিটকে গেল পরস্পরের কাছ থেকে। সত্যি সেই সময় যদি ফোনটা না আসতো তাহলে যে কি ঘটত ঈশ্বর ও বোধহয় জানেন না। তারপর অনেকক্ষণ পরস্পর পরস্পরের দিকে তারা তাকিয়ে ছিল হাতে হাত রেখে ।প্রভা যেন তার চোখের হাসিতে অনেক কিছু বোঝাতে চেয়েছিল কিন্তু কল্যাণ আর বুঝতে চায় নি ।কারণ কল্যান জানে এটা কখনো সম্ভব নয়। সেদিন রাতের বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছে দুজনে ই ।হয়তো ঈশ্বর সেটা চেয়েছিলেন নইলে আজকে কি  নিজেকে  ক্ষমা করতে 
পারত ? যদিও সেদিনের বিপর্যয় ছিলনা কোন ভন্ডামী ।ছিল না কোন ভেতরের কলুষতা। দুটি মন দুটি হৃদয় এক সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছিল। পাগল পাগল লাগছে প্রভা ।আমি আজও তোমাকে ভুলতে পারিনা ।তোমার সেই আঁকড়ে ধরা তোমার সেই ভালোবাসায় একে দেওয়ার টিকা। আমি পারি না ।ভুলতে পারিনা। আমি জানি না কি করে আমি সংসারী হব। হয়তো সংসারী হব কিন্তু মনের ভেতরে হয়তো তুমি থেকেই যাবে। কেন এরকম করলে তুমি আমার সাথে ?প্রভা আমি তো কখনো তোমাকে ধোঁকা দিতে চাই নি ।অথচ তুমি আমার সাথে কেন জীবনটা  নিয়ে খেললে ?আমি তোমাকে তো ভীষণ ভালবেসেছিলাম প্রভা। আজও হয়তো ভালোবাসি ,নইলে তোমার কথা কেন বারবার আমার মনটাকে নাড়া দিয়ে 
যায় ।বসন্ত আসলে বাসন্তিক  নানা রঙ যেন আমার মন প্রাণ গ্রাস করে। পলাশ শিমুল আমাকে পাগল করে দেয় প্রভা ।তুমি যে জীবনটা বেছে নিয়েছ তাতে কি তুমি সুখে আছো ?অথচ আমরা তো চেয়েছিলাম ছোট্ট একটা ভালোবাসার নীড় গড়ে তুলবো পরস্পর পরস্পরে। কেন করলে তুমি এসব?
কল্যাণের চোখে তখন জল ।বুকটা যেন ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় ছাদে আসার কারোর আওয়াজ পেল 'হ্যাঁ ঠিক  তাই জাইবু কারো সঙ্গে কথা বলতে বলতে উপরে উঠে আসছে।'
'কিরে তোদের কি খবর? তোরা এখনো আসলি না কবে আসবি?
বিয়ে পেরিয়ে যাক তারপর আসিস। ফাঁকা মাঠে গোল দিস।'
অপরপ্রান্ত থেকে কি বলছে বুঝতে পারছে না। তবে অনুমান করতে পারছে কল্যান ।যাই হোক কাউকে বিয়েতে আসার জন্য বলছে।'
"আরে নিশা কে নিয়ে তুই আসবি কিনা আগে
 বল ?বাসর রাতে কিন্তু নিশার গান শুনবো মাথায় রাখিস ।আমি কোন কথা শুনতে চাই না জমিয়ে আড্ডা দেব কালকে আসবি তো?
'দেখি না ,তোদের আগেই বলেছিলাম এক সপ্তাহ আগে আসতে আর  বিয়েএসে গেল তবু তোদের পাত্তা নেই।'
ধুত্তোর রাখ তো তোদের কাজ। সারা জীবনই কাজ থাকবে।,, লোক ,-লৌকিকতা ও  তো রাখবি নাকি?
'ঠিক আছে ,ছাড়ছি  যদি না আসবি আর তোদের সাথে কোন কথা নেই।'
কল্যাণ ভাবছে জাইবু তো রীতিমতো একদম রাশিয়া-ইউক্রেন এর মতো একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে।
ফোন ছেড়ে দিয়ে কল্যাণের দিকে তাকিয়ে বলল "ভাইয়া আজকে তোমার দিদির কাছে যা ঝাড় খেয়েছি জীবনেও ভুলতে পারবো না ।বাপরে বাপ।'
"দিদি তোমাকে বকেছে জাইবু ?"
"হ্যাঁগো ভাইয়া, দাঁড়াও তুমিও ফাঁসির দড়ি পড়তে চলেছ। তখন এত হাসা বেরিয়ে যাবে আজ আমাকে দেখ হাসছো তো  'ঘুটে পোড়ে গোবর হাসে।'
শিখা ,আসুক তারপর তোমার হবে।
থাক তোমাকে আর বেশি কথা বলতে হবে না তোমার তোমার গলার অবস্থা।'
"এবার ভাইয়া বলতো হঠাৎ চুপি চুপি ছাদে কেন আসলে? কল্যাণ মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল এমনি।
না না কিছু তো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। তাই তো তুমি বাবা ছাদে এসেছিল  কাউকে আবিষ্কার করতে?'
কল্যান মনে মনে ভাবছে 'একি জাইবুর চোখে ধরা পড়ে গেল?'
চলো, চলো, চলো, নিচে চলো ।তোমার দিদি কিন্তু রেগে লাল হয়ে যাবে ?'
'তোমায় তো কিছু বলবে না? যা কিছু আমার জন্যই তোলা আছে ।'
কল্যান  বলল'জাইবু তুমি কি দিদি কে ভয় পাও,,?
কি বলছিস ?
'ওই অবলা নারীকে
এমন সময়  দিদি এসে বললো'তোমরা চা নাস্তা চা নাস্তা খাবে তো?
আরে ভাই তুই কি খাবি?
দিদি, ধমকের সুরে জাইবু কে বলল,, কি হল তুমি উঠলে না। ফোনটা একটু রাখো না কাজের কথা বলছি তো?
গজ গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে 
গেল । এমন সময় হইহই করে ঢুকলো ঢুকলো ছোটো পিসি।
কই রে সরজু,কল্যাণ সব কোথায় তোরা?
ওরে বাবা ছোটো পিসি এসে গেছে।
যাই  না হলে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে দেবে।
এই তো পিসি যাই।
 সরজু গিয়ে ছোট পিসি কে প্রণাম করলো।
বেঁচে থাক মা ,কল্যাণ হোক।
কল্যান টা কোথায় গেল রে? নাকি ওর বিয়ে বলে খুব পা ভারী হয়েছে।'
'না গো পিসি ওর গলাটা তো ভালো নেই ,সেজন্য একটু মুষড়ে আছে।'
বিয়ে তো অতটা উচ্ছ্বাস নেই।'
"সে কিরে গলায় কি হয়েছে ?কিছু জানাসনি তো?"
"গলার একটা কড গেছে একদম।
অপারেশন করাতে হবে।'"
বিয়েটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম।যাই হোক শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হচ্ছে ।না বাবা ,এখনও বলবো না কারণ যতক্ষণ না হয়।'
"না ,মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল রে ।ডাক্তার দেখিয়েছিস তো ?যাইহোক ডাক্তার যেভাবে বলেছেন সেভাবে চলতে হবে।'
"লাগেজ গুলো কোথায় রাখবো?"
"ঐতো পাশের ঘরটায় রাখো। "শোন,আমি যখন এসে গেছি। বিয়ে হবেই, হবে ।এখন বিয়ের যাবতীয় সব প্রস্তুতির জন্য যা করার দরকার সেগুলো তো এখন কোমর বেঁধে লেগে পড়ি।
তত্ত্ব সাজানো অনেক কাজ বাকি আছে।"
তোমরা এসেছ এটাই ভরসার কথা। চলো আগে ফ্রেস হও , নাস্তা পানি খাও।তার পরে গুছিয়ে নিও।"
"ছোট পিসি অমিত দা আসলো না।"
 ছুটি পায়নি?'
'না রে ছুটি পায় নি ।তাই তোর পিসেমশাই আর অমি আসবে বিয়ের দিন।' 
মেহেন্দি লাগাকে রাখনা…, ডো লি সাজাকে রাখনা…।'
গান করতে করতে পিসি বাথরুমের দিকে 
গেল ।
'পিসি সেই আগের মতই  স্প্রিট ধরে রেখেছে পিসি না আসলে যেন বিয়েবাড়ির আড্ডাটাই জমে না।

কবি ইকবাল বাহার সুহেল এর কবিতা "ইলাময় প্রমের ডায়েরি থেকে" 




ইলাময় প্রমের ডায়েরি থেকে 
ইকবাল বাহার সুহেল 
( ইংল্যান্ড ) 

‘চন্দ্র কথা’ কি জানি 
হঠাৎই কাল রাতে জানি না
কেনো নিজের ছায়া পড়লো চাঁদের উপর 
বিগলিত তুমি রাতের গভীরে আমন্ত্রণ জানালে
‘চন্দ্র কথা’ তোমার জোস্না পাণে কেনো জানি ,জানি না
‘শরাবী হলাম’ বললে পাণিগ্রহণ করে যেনও হাত রাখি বুকে  
জড়িয়ে গেলে মাতাল করে চুষে চুষে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলে ,
‘চন্দ্র কথা’ নদীতে জল ছিল অনেক তবুও আবদার করলে জল ঢেলে ভরিয়ে দিতে
তাই হলো ঝরণার জল নদীতে মিশে কখন যে সাগরে মিশে গেলো বলতে পারি না !

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা "মা"




মা 
মোঃ ইসমাঈল 

মা শব্দটির মধ্যে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর সকল সুখ
জীবনের সকল ঝড় -ঝামেলা যায় যে ভুলে দেখলে মায়ের মুখ। 
মা মানেই সন্তানদের জন্য বিশাল এক বটবৃক্ষ যেখানে আছে প্রশান্তির ছায়া, 
মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমালে চলে যায় সারাদিনের ক্লান্তি। 

মা মানেই নতুন স্বপ্নের আশা
বিধাতার কি বন্ধন মা-সন্তানের ভালোবাসা।
যে সম্পর্কে নেই কোনো চাওয়া- পাওয়া। 


দশ মাস আর দশ দিন কতনা কষ্ট সহ্য করে রেখেছিলেন গর্ভে,
কি আছে প্রাপ্তি আর কি আছে অর্জন, এত বেদনা সহ্য করার ? 
প্রাপ্তি যে শুধুই ঐ টুকু সন্তানের মুখ থেকে ডাকটা শোনার। 

কতনা কষ্টে লালন করে বড় করে সন্তানদের
জীবনকে উৎসর্গ করে দেন সন্তানদের জন্য নিজেদের।
নিজে সয়ে যান সকল বেদনা, লাঞ্চনা, দুঃখ, কষ্ট সন্তানদের জন্য
সন্তানের কিছু হলে হোন দিশেহারা। 

নিজে না খেয়ে খাওয়ায় সন্তানদের
সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে গড়ে তুলেন সুন্দর জীবন আমাদের।
মা প্রত্যেক সন্তানের কাছেই মহান
মায়েদের দোয়ায় প্রত্যেক সন্তান মহীতে আজ মহীয়ান।

কবি সেলিম সেখ এর কবিতা ""বদেহ





শবদেহ
সেলিম সেখ

বাতাসে মিশে গেছে
পোড়া লাশের গন্ধ,
বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেনো
হয়েছে কি তারা অন্ধ?

চারিদিকে খুনোখুনির রাজ 
চলছে বাংলার বুকে,
শান্তির এই বাংলায়
অশান্তি গেছে ঢুকে।

বাংলার মানুষ দেখল
অগ্নিদগ্ধ কত শব,
চোখেতে অশ্রু মোর
জমেছে অনেক ক্ষোভ।

ঘৃণ্য রাজনীতির বলি
তরতাজা কত প্রাণ,
এমন দৃশ্য দেখল দেশ
থাকল কি রাজ্যের মান।

রাজনীতির করালগ্রাস
আনছে ডেকে মরণ,
একে অন্যের নিচ্ছে প্রাণ
এটাই কি রাজনীতি ধরন? 

কত যন্ত্রণায় গিয়েছে প্রাণ
ভাবলে কষ্ট হয়,
করছে যারা এমন কাজ
তারা কি মানুষ নয়!

মানব হয়ে মানব হত্যা
কত যে ঘৃণ্য কাজ,
বুঝলে এমন পাপে 
লিপ্ত হত না আজ। 

রাজনীতি হোক শান্তি প্রিয়
ঝরুক শান্তিধারা, 
জাগ্রত হোক মানবপ্রেম
কেউ যাবেনা মারা।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৭৭




ধারাবাহিক উপন্যাস 

শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৭৭)
শামীমা আহমেদ 

অফিসে নিজ রুমে পৌঁছাতে  শিহাবের প্রায় সকাল এগারোটা বেজে গেলো। শিহাব দ্রুতই তার মেইল চেক করতে বসে গেলো। গতকাল বেশ কিছু বায়ার ফ্যাক্টরী পরিদর্শন শেষে  মেইলে তাদের মতামত জানাবে বলে বিদায় নিয়েছে।আর এর সাথে শিহাবের ফ্যাক্টরির  জন্য অনেক অর্ডার প্লেস হওয়াও জড়িত। শিহাবের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল তাদের স্যাটিসফাই করার। দেখা যাক,তাদের কেমন রেস্পন্স আসে। তবে এখনো কোন মেইল ইন করেনি। শিহাব অপেক্ষায় রইল। কবির এসে নাস্তার কথা জেনে গেলো।
শিহাব নান রুটি আর বুটের ডাল আনতে বলে একটু রিল্যাক্স ভঙ্গিতে  চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। শিহাব নিজের জীবনের সবকিছু খুব গভীরভাবে ভাবছে। শায়লা  আর রিশতিনা, অতীত আর বর্তমানের মাঝে শিহাব নিজেকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে। এই একার জীবনের অবসান ঘটাতে চাইছে। নাস্তা আনার আগে কবিরকে এক কাপ কফি দিয়ে যেতে বললো। কবির কফি রেডি করে সামনে দিতেই শিহাব জানতে চাইলো, আচ্ছা কবির তুমি কি আমাকে বলবে জীবনটা কি সহজ না জটিল ? মাঝে মাঝেই শিহাব কবিরের কাছে এমন ভাবনার কথাগুলোর মতামত নেয়। শিহাব জানে,যারা স্বল্প আয়ের মানুষ  তাদের কাছে জীবনের অর্থ খুবই সহজভাবে ধরা দেয়।খুব বেশি চাওয়া পাওয়া তাদের থাকে না।কবির বুঝতে পারলো,স্যারের মনটা আজ বোধহয় ভালো না।কবির জানালো, স্যার জীবনটারে সহজভাবে দেখলেই জীবন সহজ আর জটিলতারেও সহজভাবে নিয়ে সমাধান করলে পেরেশানি কম হয়।কথাগুলো বলে কবির নাস্তা আনতে বেরিয়ে গেলো।  
শায়লাকে একটা  কল করতে হবে। বেশ কয়েকদিন হলো, শায়লার সাথে ঠিকমত কথা হচ্ছে না। শিহাব মোবাইল হাতে নিতেই মেইলের নোটিফিকেশন এলো।শিহাব হাত থেকে মোবাইল নামিয়ে রেখে ল্যাপটপ স্ক্রিনে  চোখ দিতেই মোবাইল বেজে উঠলো।  শিহাব আড়চোখে দেখে নিলো।শায়লার কল।কিন্তু মেইলটা দেখা জরুরি। শিহাব কলটি কেটে দিয়ে কাজে মনযোগী হলো। 
ওপ্রান্তে শায়লা ভীষণভাবে বিব্রত হলো। আজ এতদিনের পরিচয়ে শিহাবতো কখনো তার কল কাটেনি।ব্যস্ততায় রিসিভ করতে না পারলে পরে কল দিয়েছে।শায়লা বুঝতে পারছে না কেন শিহাব এমন করছে ? কেন তাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে ?  তবে কি সে রিশতিনার প্রতি কোন সিদ্ধান্তে এসেছে ? শায়লার ভেতরে ক্রমাগত নানান প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে। শিহাবকে না পাওয়ার আশংকায় ভীষণ উৎকন্ঠা হচ্ছে। কিন্তু  যা-ই হউক না কেন, এ ব্যাপারে শিহাবের সাথে তার কথা হতেই হবে। তার কাছ থেকে সরাসরি শুনতে হবে সে কি চাইছে ? সে তার নিজের পরিবারের মান সম্মানের দিকে না তাকিয়ে শিহাবের জন্য কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে। আর শিহাব  ঘরে রিশতিনাকে  নিয়ে তার সংসার জীবন যাপন করছে ? শায়লা অস্থিরতায় ঘরের এপাশ ওপাশ করছে। শায়লা আবার শিহাবকে কল দিলো। তিনবার রিং হওয়াতেই শিহাব কল রিসিভ করলো। আর হ্যালো বলেই শায়লার উত্তরের
অপেক্ষা না করেই বললো, শায়লা আমি একটু বিজি।একটা টেলি কনফারেন্স চলছে। শেষ হলেই আমি কল দিচ্ছি। বলেই সে কল কেটে দিল।রাগে দুঃখে অপমানে শায়লা ঝরঝর করে কেঁদে দিলো।শিহাব যে একরাতেই এমন করে বদলে যাবে শায়লা তা ভাবতে পারছে না। 
তাদের বাড়িতে তার বিয়ের আয়োজন চলছে। তার জন্য গোটা বাড়ি উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। যেখানে শায়লার মন পেতে নোমান সাহেব বারংবার শত কাকুতি মিনতিতে শায়লার কান ভারী করে তুলছে আর সেখানে শিহাবের এমন অবজ্ঞা ভরা আচরণ, শায়লাকে ভীষণ অবাক করে দিচ্ছে।  
দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ মিনিটের টেলিকনফারেন্স শেষ করে বিভিন্ন দিকে শিহাব তার প্রয়োজনীয় মেইল পাঠালো। ঘড়ির কাটা তখন দুপুর বারোটা পার হয়ে গেছে।টেবিলে নাস্তা পড়ে আছে। শিহাব ওয়াশরুম থেকে  ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তায় হাত লাগাতেই শায়লার কলের কথা মনে পড়লো।শিহাব ভাবলো, একেকদিন যে কেমন ব্যস্ততা যায় ! 
সে নাস্তা খেতে খেতেই শায়লাকে কল করলো। 
এই ফোন কলটি শায়লার ভীষণ রকম কাঙ্খিত  হলেও, শিহাবের প্রতি প্রচন্ড অভিমানে শায়লার চোখের  জল উপচে পড়লো।একবার সম্পূর্ণ কল হয়ে যাবার পর দ্বিতীয় কলে শায়লা রিসিভ করলো।কিন্তু নীরবতায় মনের কষ্ট বুঝাতে চাইলো যেন!
শিহাবই প্রশ্ন করলো, শায়লা আমি দুঃখিত তখন তোমার কলটি ধরতে পারিনি।দেখো, অনেক ব্যস্ততা ছিল। তাইতো এই এখন সকালের নাস্তা করছি। শায়লা ভীষণ অবাক হলো। দুপুরের খাবারের সময় হয়ে এলো,আর শিহাব কিনা এখন নাস্তা করছে ! তাহলে শিহাব তাকে এড়িয়ে যায়নি, সত্যিই ব্যস্ততা ছিল। আর সে কিনা শিহাবকে নিয়ে কতকিছুই ভাবলো। 
কেমন আছো তুমি শায়লা ? 
আমি ভালো আছি কিন্তু আমার মনে হয় তুমি আমার চেয়ে আরো বেশি ভালো আছো !
কেন এমন কথা শায়লা? তোমাকে দূরে রেখে তোমার চেয়ে কেমন করে ভালো থাকবো ? 
কেন? আমাকে ছাড়াওতো ভালো থাকা যায়, আর সেটা দোষেরও কিছু না। শায়লার কণ্ঠে অভিমান ঝরে পড়লো।
শিহাব বুঝতে পারছে না কেন শায়লা তার সাথে আজ এভাবে কথা বলছে?কিন্তু বরাবরই শিহাব শায়লার সাথে সব ব্যাপারে  স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলছে।তার বুঝতেই হবে আজ কেন শায়লা তার সাথে এতটা বৈরী আচরণ করছে ? তবে কি সে তার কাছ থেকে সরে যেতে চাইছে ? শিহাবের জানা মতে শায়লার স্বামী শীঘ্রই দেশে আসছে।তবে কি শায়লা তার সিদ্ধান্তে কোন পরিবর্তন এনেছে? নাহ! শায়লার সাথে এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলা প্রয়োজন। শিহাব কথাটি ভাবতেই শায়লার দিক থেকেই প্রস্তাব এলো,শিহাব তুমি আমার সাথে আজ একটু দেখা করতে পারবে।শায়লা দেখলো, শিহাব খুব সুচারুভাবেই রিশতিনার প্রসংঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছে।
শিহাব বললো, অবশ্যই, তবে এখুনি বেরুতে পারবো  না।আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট আরো কিছু মেইল আসবে।তুমি চাইলে আমার অফিসে চলে আসতে পারো।চলে আসো। আমার অফিসটা দেখে যাও।একসাথে দুজনে কফি খাই। 
শায়লা শিহাবের কথায় অবাক হলো। শিহাব যদি তাকে এড়াতেই চাইতো তবে তো তাকে অফিসে যেতে বলতো না! মূহুর্তেই শায়লার মনে শিহাবকে নিয়ে সব দ্বন্দ্ব ঘুচে গেলো,তবে রিশতিনার বিষয়টি আড়ালেই রইল।
শিহাব পুনরায় শায়লাকে তার অফিসে আসতে অনুরোধ করলো। শায়লা রাজী হয়ে শিহাবের কাছে প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়ে নিলো। কারণ  এখন বাড়ির  বাইরে যেতে হলে বাড়ির লোকজনকে ম্যানেজ করতে হবে। যেভাবে রুহি খালা তাকে নজরবন্দি করে রেখেছে। শায়লা বাইরে যাওয়ার অনুমতি পেতে  রাহাতকে কল করলো।

রাহাত অফিসেই ছিল।শায়লার এমন আব্দারের কল পেয়ে রাহাত বেশ চিন্তিত  হলো। আবার কোন অঘটন ঘটে যাচ্ছে নাতো ? পরক্ষণেই শায়লার উপর তার আস্থা এলো। আপু যদি এমন কিছু করবেতো আর বাইরে যেতে তার অনুমতি চাইতো না। তাছাড়া শিহাব ভাইয়াও খুবই ভাল মানুষ  নিশ্চয়ই তিনি ব্যাপারটা বুঝবেন।ভাল লাগা ভালবাসা হঠাৎই  হতে পারে কিন্তু আমরাতো কেউ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নই।ফোন কলের জবাবে রাহাত শুধু এটুকুই বললো, আপু আমাদের পরিবারের মান সম্মান এখন তোমার হাতে আর দুদিন পরেই নোমান ভাইয়া আসছেন।বাড়িতে অনেজ লোকজন আত্মীয়স্বজন।
শায়লা রাহাতকে আশ্বস্ত করলো, এমন কিছুই ঘটবে না যা পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন করবে। শিহাবের সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।আমি দ্রুতই  ফিরবো। মনে রেখো, আমি চিরকাল নিজের  সুখের চেয়ে তোমাদের জন্যই বেশি ভেবেছি।
কথাটা শতভাগ সত্য বলে রাহাত একমত হয়ে নিশ্চুপ রইল।
শায়লা রাহাতকে অনুরোধ করলো, ঠিক আছে, মাকে  আর রুহি খালাকে কল করে জানিয়ে দিও যেন আমাকে বাধা না দেয়।আমি পার্লারে যাচ্ছি বলে বেরুবো। 
শিহাব ভাইয়া আর শায়লা আপুর জন্য রাহাতের মনটা কেঁদে উঠলো। রাহাত বেশ বুঝতে পারছে, শুধু তার একটু সহযোগিতা থাকলে আপু আর শিহাব ভাইয়াকে এক হওয়া থেকে কেউ ফেরাতে পারতো না। সবকিছু ভেবে রাহাত নিজেকেই দোষী ভেবে নিলো।
ফোন কল শেষ করে শায়লা তৈরি হওয়ায় ব্যস্ত হলো। ট্রুং করে মোবাইলে ম্যাসেজ এলো। শায়লা মোবাইল মেসেঞ্জার  ওপেন করেতেই মূহুর্তেই তার মনটা আনন্দে উছ্বসিত হয়ে উঠলো!
অফিস এড্রেসের সাথে  দারুণ এক সেল্ফি পাঠিয়েছে শিহাব ! পরনে কালো শার্ট, সামনে কয়েকটি বোতায় খোলা,আহ !  শিহাবকে মনে হচ্ছে যেন কোন মুভির হিরো ! তার অফিসের চেয়ারে বসে তোলা। শায়লা স্থির দৃষ্টিতে ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল।যেন শিহাবের চোখ কথা বলছে,...তাড়াতাড়ি চলে আসো শায়লা। আমি তোমার অপেক্ষায় আছি।


চলবে....

কবি নাসিমা মিশু এর কবিতা "ভালোবাসি"




ভালবাসি
নাসিমা মিশু

ভালবাসি-
তোমার তুমির তুমিকে।
ভালবাসি-
তব না দেখা বিস্মৃতির অতলের তলে 
ডুবে থাকা তোমাকে দেখব বলে ।

ভালোবাসি- 
তব জীবন ধারায় অন্য সুরের মূর্ছনা এসে 
সুখ সুধায় তোমাকে জড়িয়ে নিবে তাতে নয়ন 
জুড়িয়ে নিব বলে ।

ভালোবাসি- 
তোমার তুমিকে নিয়ে দারাপরিবার সহ সুখ বাসরে 
স্থুত তা দেখে তৃপ্ত হবো বলে ।

ভালোবাসি- 
তব সকল আনন্দ ধারায়  আনন্দে তুষ্ট হবো বলে ।

ভালোবাসি- 
তব জীবনীশক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে পৃথিবী আলোকিত 
হবে তার দিপ্তী দেখব বলে ।

ভালোবাসি- 
তোমার তুমি তোমরা সুখী গৃহবাসী তার বিচ্ছুরিত বিকশিত বিকিরণ দেখব বলে। 

ভালোবাসি- 
তব ভালো লাগায় ভালোবাসাসম মানস সৌন্দর্যের 
পরিপূর্ণতার পরিস্ফুটন দেখব বলে ।

ভালোবাসি- 
তব অন্ত গহীন হৃদয়ের অব্যক্ত যে আবেগ তার দরদী 
গভীরতায় কতটা গভীর তা অনুভব করব বলে ।

ভালোবাসি- 
তব দেখার যে মমতা মাখা দৃষ্টি আমার তাতে শুধু 
ভালোবাসার অনুভবই অনুভূত হবে বলে ।

এ নয় বাড়াবাড়ি, 
এ পরিশুদ্ধ পরিচ্ছন্ন স্বচ্ছ এক আবেগ ।
এক অস্তগামী অদৃশ্য মানবের আকুতি ।

কবি আমিনা তাবাসসুম এর কবিতা





অথচ রৌদ্রের ঘ্রাণ 

আমিনা তাবাসসুম 

খুবলে খুবলে স্বপ্ন খাও তুমি
বাতাসের চিৎকার
ফুলের চিৎকার
হরিণীর চিৎকার
আগুনের আঁচে চেটেপুটে রোদ শুষে  রোজ

এখানে রূপের রহস্য রাঙা কই মাছ
এবং সমস্ত পৃথিবীর প্রাণে
         সেসবের ঘ্রাণ লেগে থাকে

রাত কেঁদে ওঠলে ঈশ্বর ভুলে যান
ইরা এবং ইরকের কথা

তখনও আমার চোখে অশ্রু থাকে
আর এখনও সেসব
         মিশে আছে চোখের চুমুকে