২৮ অক্টোবর ২০২১

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"৩৫


কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "





টানাপোড়েন ৩৫
চোখের বালি



                                                          সারারাত জ্বরে কাতরিয়েছে রেখা। কাশিটাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মনোজ সেই যে ফোন নিয়ে অশান্তি করলো ,তারপর ওষুধগুলো কাছে রেখে দিয়ে কোথায় যে আছে কে জানে?
রেখার খুব জল তেষ্টা পেয়েছে ।কোনরকমে উঠে দেখছে টেবিলের ওপর জলটা আছে ।গ্লাস টেনে নিয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল। শরীরটা প্রচন্ড উইক লাগছে। বাথরুমে যেতে হবে। কোনরকমে উঠল রেখা ।উঠে বাথরুমে গেল। এসে আবার খাটের উপর বসে পড়লো ।বসে বসে ভাবতে লাগল  'মনোজ কোথায় গেল,?রাতে কি তবে এই ঘরে শুতে আসে নি। '
রেখা ভাবতে ভাবতে আবার শুয়ে পড়লো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা বাজে। ভোর হয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে মর্নিংওয়াক করা পথচারীরা কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। 
তাহলে মনোজ কোথায় গেল?
না ,সত্যি কালকে রেখার ফোন ধরাটা উচিত হয় নি।
মনোজ সাধারণত রাগ করে না কিন্তু এবার যে কি হলো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

৫ .৩০তে কলিংবেল বেজে উঠল"জয় গনেশ ,জয় গনেশ, জয় গনেশ দেবা...।"
সাত সকালে কে আসলো,? আমার তো ক্ষমতা নেই উঠে গিয়ে দরজা খোলার। মনোজ কি শুনতে পাচ্ছে না আওয়াজটা। বেজেই চলেছে। কি আশ্চর্য। দরজা নক করে ডাকছে " বৌদি ,বৌদি"।
রেখা কান খাড়া করে শোনে'।আরে ,এতো, সুমিতার গলা মনে হচ্ছে।  নির্ঘাত সুমিতা।
 বাবা ,সাতসকালে এসে হাজির। কি ব্যাপার, কে জানে? পরে রেখার মনে পড়ল আজকে তো সুমিতা মাইনে চেয়েছিল অ্যাডভান্স, এবার বুঝতে পারল ।কেন এত তাড়াতাড়ি সে কাজে এসেছে?
কোনরকমে উঠে গিয়ে দরজাটার কাছে গেল। দরজাটা খুলল 'কি ব্যাপার সুমিতা ,এত তাড়াতাড়ি আসলে?''
সুমিতা বলল  'ও বৌদি, আমি বাড়ী থাকবো না‌ ।এক জায়গায় যাব। সে জন্যই তাড়াতাড়ি আসলাম।"
রেখা মনে মনে ভাবল টাকা নেওয়ার না থাকলে  আজকে কাজে ই আসতো না।
সুমিতা বলল ' বৌদি তোমার শরীর খারাপ?'
রেখা বলল ' হ্যাঁ গো। তুমি আজকে ফিরবে তো?'
সুমিতা বলল 'দেখি।'
রেখা বলল 'তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো যে আমার শরীরটা খুব খারাপ। কাজে না আসলে কতটা অসুবিধায় পরবো বলো তো?'
সুমিতা বলল 'যদি ফিরি, তাহলে কাজে আসব।'
রেখা বলল 'হ্যাঁ ,একটু চেষ্টা ক'রো।'
সুমিতা কোন কথার উত্তর না দিয়ে ঝাঁটা দিয়ে 
ঝাঁটাতে শুরু করল।
রেখা ও  কোন কথা বাড়ালো না । আস্তে আস্তে ড্রইংরুমের দিকে গেল,  দেখল মনোজ শুয়ে আছে।
টেবিলে Black label পাশে কাঁচের গ্লাস। ফোনটা সমানে বেজে যাচ্ছে।
এ সমস্ত দেখে রেখা আকাশ থেকে পড়ল। এ কোন মনোজকে দেখছে। এই কি তার স্বপ্নের পুরুষ যাকে এত ভালবেসেছে? মনে হচ্ছে যেন রেখা ওখানেই পড়ে যাবে ।নিজেকে সামলাতে পারছে না। সঙ্গে সঙ্গে মনোজের পাশে খাটে গিয়ে বসে পড়ল। চোখ থেকে জল পরছে। আর কি কি যে আছে কপালে, কে জানে? কেন হচ্ছে এসব? কি করেছে রেখা?'
রেখা কি ফোনটা রিসিভ করবে?'
ফোন নিয়ে যা অশান্তি হয়েছে গত রাত্রে ।তাতে রেখা সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু এখন তো মনোজ অঘোরে ঘুমোচ্ছে ।ফোনটা রিসিভ করলে ,ও টের পাবে না।
কিন্তু ছলনার আশ্রয় নেওয়া  কি ঠিক হবে? নাকি একবার সুরঞ্জনদাকে ফোন করবে? মাথায় কিছুই খেলছে না। এমন সময় 'বৌদি বৌদি বৌদি ইইইই'।'
রেখা ভাবলো 'সূমিতা এত চেঁচাচ্ছে কেন?'
কোন রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রেখা সাড়া দিল - 'কি হলো সুমিতা। সাতসকালে এত চিৎকার করছো কেন?'
সুমিতা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল 'কলতলায় যেতে পারছি না ।মিলি চিৎকার করছে।'
রেখা অবাক হয়ে বলল  'কেন? ও তো তোমাকে দেখে কিছু তো বলে না ।হঠাৎ আজকে কেন তোমাকে দেখে চিৎকার করবে? তুমি কিছু করেছ নাকি?'
সুমিতা বলল   'না গো বৌদি, ওর বাচ্চাগুলো যেখানে আছে, ওখানে ছাইয়ের কৌটো আছে। তাই ছাই আনতে গেছিলাম।
রেখা বলল  'তাই বলো ।তুমি ছাই আনতে গেছ তো ,তুমি আমাকে বলবে তো?এ‌ সময় ও কাউকে এলাও করবে না ।বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আগলে বসে থাকে।
রেখা বলল  'ঠিক আছে ,আমি যাচ্ছি ।আমার শরীরটা খারাপ জানো , তবুও আমাকে এত তোমরা হয়রানি করাচ্ছ না? '
আস্তে আস্তে মিলির কাছে গেল রেখা । কাছে গিয়ে  ডাকল  'মিলি ,মিলি ,মিলি ।' মিলি তখন লেজ নাড়ছে। রেখা গিয়ে ছাইয়ের  কৌটোটা আনলো। মিলি কিন্তু কিচ্ছু বলল না।
সুমিতা অবাক হয়ে দেখল আর বলল 'ও বৌদি ,ও কিচ্ছু বলল না তোমাকে?'
রেখা বললো  'আমাকে কেন বলবে? তোমরা নিশ্চয়ই ওর সঙ্গে কিছু বদমাইশি করেছ।।
সুমিতা বলল  'না গো বৌদি?'
রেখা বলল 'ঠিক আছে ।আর কথা বাড়িও না ।কাজ করো।
সুমিতা আপন মনে গজগজ করতে করতে বাসন মাজতে লাগলো।
রেখার মনে এখন সন্দেহের বীজ  দানা বাঁধতে লাগলো । এমন কি নিজের শরীর খারাপের কথাও এখন ভুলে গেল। মনের ভেতর যেন একটা আলাদা জোর এসেছে ।এই রহস্য তাকে উদ্ধার করতেই হবে।
রেখা আবার মনোজের ঘরে ঢুকলো ফোনটা তেমনি বেজে চলেছে ।
এবার রেখা ফোনটা রিসিভ করল  কিন্তু 'রেখা কোন কথা না বলে চুপচাপ থাকলো।
অপরদিকের কন্ঠ ভেসে এলো 'তুমি ফোনটা রিসিভ করছো না কেন? আজকাল আমার ফোন ধরতে তোমার খুব কষ্ট হয় ,তাই না?
রেখা তো অবাক হয়ে যাচ্ছে ।এ যে এক মহিলা কন্ঠ।এসব কি বলছে ?ফোনটা কি ক্রস কানেকশন হয়ে গেছে ।তবু কান পেতে শোনে আর কি বলে।
'আমার এখন কি উপায় হবে তার ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে।'
রেখা ভাবছে ' ব্যবস্থা কি ব্যবস্থা?'
আবার বলছে মেয়েটি  'কি হলো মনোজ ?কথার সাড়া দাও ।শুধু আমি বকে যাচ্ছি। তুমি  চুপ করে থাকলে তো চলবে না।'
রেখার তো এবার শরীর কাঁপতে লাগল ।পায়ের তলার মাটি যেন সরে যেতে লাগলো ।আকাশ যেন তার মাথায় ভেঙে পড়ছে ।কি শুনছে? কে এই নারী ?যে মনোজকে তুমি তুমি করে কথা বলছে। কে ?কী রহস্য ?কিছুই বুঝতে পারছে না।
রেখা ফোনটা ধরে রাখতে সাহস পেলো না ।আর কি কথা বলে ফেলবে কে জানে ?ফোনটা রেখে দিল।
রেখা সেখানেই কিছুক্ষণ বসে চিন্তা করতে লাগল।কী পরিণতি এর, কিছুই জানে না? কেন তার স্বামী এরকম করছে আর মেয়েটির সঙ্গে তার স্বামীর ই  বা কি সম্পর্ক ?কাকে জিজ্ঞেস করবে ?এই মেয়েটি কি তার চোখের বালি হয়ে যাবে শেষপর্যন্ত ?তার সুখ-শান্তির সংসারে কি  আগুন লাগতে চলেছে ।যার জন্য আজ মনোজ রেখার সঙ্গে এত দুর্ব্যবহার করছে ।অথচ রেখা জীবনে মনোজকে এতটা প্রাধান্য দিয়েছে ।রেখার জীবনেও তো কম পুরুষের আগমন হয় নি । কিন্তু সেভাবে তো কিছুই ভাবে নি।  তার সমগ্র হৃদয়াকাশে হয়তো কেউ কেউ জায়গা করতে চেয়েছে কিন্তু বিরাজ করেছে মনোজ ই ।ভাবতে পারছে না কি করবে?
এরমধ্যে সুমিতা এসে বলল ' বৌদি আমার মাইনের টাকাটা দাও।'
সুমিতা তাড়াতাড়ি উঠে এলো তার মধ্যেও দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল সুমিতা।
সুমিতা বলল   'ও বৌদি, দাদা আজকে ওই ভাবে শুয়ে আছে কেন গো ?তোমাদের মধ্যে কি কিছু অশান্তি হয়েছে নাকি ?বাবা ,আমরা ভাবি শুধু আমাদেরই ভিতর অশান্তি আছে ।তোমাদের ও  ভিতর অশান্তি?'
রেখা বলল  'কি বলছ? কিসের অশান্তি হবে আমাদের মধ্যে ?আমার শরীর খারাপ ছিল, তাই একটু নিশ্চিন্তে এই ঘরে এসে শুয়েছে । এতে অশান্তির কি আছে সুমিতা ?আগ বাড়িয়ে  বেশি কথা বলো না তো ?এই নাও তোমার মাইনে । (রেখা ২000 টাকা হাতের মধ্যে ধরিয়ে দিল)।
রেখা জানে তো কাজের মেয়েগুলো এরকম ই ।এরা যা দেখবে সারা পাড়া গিয়ে  রটাবে। 
কিন্তু শেষরক্ষা কি হবে? রেখার' চোখের বালি'যে কখন অজান্তে বোপিত হয়েছে এবং তা বৃক্ষে পরিণত হতে চলেছে। তা বুঝতেই পারে নি। রেখার হৃদয়াকাশে কালোমেঘের ঘনঘটা। হয়তো রেখাকে অতি বর্ষণে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ?রেখা কি তরী তীরে নোঙ্গর বাঁধতে পারবে? নাকি ভেসে যাবে কোন অজানায়।নিজেকে কি বাঁচাতে পারবে?

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"২০

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 





উদাসী মেঘের ডানায়
( পর্ব২০)


রাস্তার ঘটনাটা তৃষ্ণাকে খুব ভাবিয়ে তুললো কি হচ্ছে
এসব,সামান্য এক ড্রাইভার এতোটা সাহস কোথা থেকে পায়, কারা ওরা?
হঠাৎ মায়ের ডাকে ভাবনা ছুটে গেলো
- তৃষ্ণা খাবিনা মা রাগ প্রায় দশটা বাজতে চললো
তখন থেকে দেখছি বাসায় ফিরে কি ভাবছিস
তৃষ্ণ- চলো খাবো কিছু ভাবছিনা মা, অযথা চিন্তা করোনা।
খাওয়া শেষ করে দেখে সারে দশটা বাজে অপু এখনো
ফোন করছেনা আজ নিজেই কল করে অপুকে সারপ্রাইজ দেবে এই ভেবে ফোন করলো।
অপু- সরি তৃষ্ণা একটু রাত হয়ে গেলো জানি প্রতিক্ষায় ছিলে।
তৃষ্ণা- মোটেই তা নয়, এমনি ফোন দিলাম আজ।
অপু- সত্যি বলতে লজ্জা পাচ্ছো,তাহলে রেখে দেই।
তৃষ্ণা- না রেখোনা, অপেক্ষা করিতো, রাত হয়ে গিয়েছে ফোন করছোনা, শরীর খারাপ হলো কিনা
জানার জন্য।
অপু-আমি দিব্যি ভালো আছি, যাক তাহলে আমার জন্য তোমার চিন্তা হয়।
তৃষ্ণা- এবার কিন্ত আমি লাইন কেটে দিবো।
অপু- না মহারানী না, রাখবেনা, আমি ছাদে বসে ছিলাম কখন যে খোলা প্রকৃতির হাওয়া আমাকে
আনমনা করে তুললো,রিংটোনটা বাজতেই ভাবনা ছুটে গেলো,দেখি তুমি, এও এক বিরাট পাওয়া আমার
জীবনে আজ তুমি নিজে কল করলে।
তৃষ্ণা- উদাসী হাওয়ায় কি ভাবছিলে?
অপু- ভাবছিলাম আমার জীবনের সাথে তেমাকে জড়ানো কি ঠিক হলো, আবার এও ভাবছি ভালোবাসার অধিকার কি আমার নেই।
তৃষ্ণা- অবশ্যই আছে, একটি প্রতারণার জ্বালে দীর্ঘ পাচঁটি বছর তুমি যে ধোর্যের পরিচয়,দিয়েছো তার পুরস্কার ও তুমি পাবে।
অপু- পুরস্কারটা বিধাতা দিয়েছেন সে হলো তুমি
হয়তো দেরি হলেও দূর্বিসহ জীবনের এতোটা পথ পাড়ি,দিয়ে আজ মুক্তির পথে দুজনাই হাঁটছি এও কি
কম পাওয়া,,আমার জীবনে বিশাল কিছু পাওয়া।
আর তোমার গুছানে সুন্দর কথা গুলোই আমার বেঁচে
থাকার অনুপ্রেরণা।
তৃষ্ণা- আমিও সব স্বপ্ন হারিয়ে ছিলাম ভেবেছি কষ্টের
জলে স্বপ্নরা বাঁচেনা, সেই জল থেকে ভাসালে তুমি
নতুন স্বপ্ন একেঁ।
অপু- তোমার প্রতি দিনদিন আমি এক তীব্র আকষর্ণে
জড়িয়ে থাকি কবে আসবে তুমি আমার ঘরে
অয়কান্ত মনির মতন তুমি আমাকে কেবলই টানছো।
মাঝেমাঝে বড় ভয় হয়।
তৃষ্ণা-কিসের ভয়?
অপু- তোমাকে সুখী করতে পারবোতো।
তৃষ্ণা- কেন পারবেনা, এসব ভাবতে নেই,আমিও যদি
একই কথা বলি।
অপু- তুমি আমাকে যা দিয়েছো পাচঁটি বছর নিরবে সরে গিয়ে কয়জন পারে দিতে সুখ শান্তি সবই দিয়েছো,বাকি আছে আমার কাছে একেবারে চলে আসা,আসবেনা?
আসবো খুব তাড়াতাড়ি, মা ও তাড়া দিচ্ছে,সামনের
মাসে ছাড়া ছুটি পাবোনা, একটা মাস আর একটু
ধোর্য ধরো।
ধরেই আছি গো মোনালিসা।রাত একটা বাজে সকালে
অফিসে যেতে হবে আমাদের আজ রাখি
ভালো থেকো
তৃষ্ণা- তুমিও



                                                                                                    চলবে...

নওশাদ আলম




মানবপূজা


মানবপূজার সেরা মন্দিরে ঢুকছে মানুষ দলে-দলে,
চামচামি আর চাটুকার হয়ে ঈমান হারায় ছলেবলে।
জানোয়ার রূপে সম্মান পেতে সামনের সারি করে ভারী,
কুলষের নীড়ে শিরক জমিয়ে বিবেক করছে মনোহারি।

সবখানে দেখি ব্যক্তির পূজো শিরক হচ্ছে ছড়াছড়ি,
খাদ্য জ্বালায় মরছে মানুষ ধূলোর বিছানায় গড়াগড়ি।
মানবপূজারি তারাতো কখনো দেখায় না কেউ মানবতা,
স্বার্থের দোর দিবানিশি খুঁড়ে গরিবের বুকে দেয় ব্যথা

কুর্ণিশে তার নেই সংকোচ পদোন্নতির পেলে চিঠি,
পায়ের ময়লা চেটেপুটে খায় ভেবে অমৃত মাখা পিঠি।
স্কুল-কলেজ অফিস কাছারি সবখানে দেখি একরেশ
স্বাধীনতা সব করেছে হরণ, পশুতে চালায় যেই দেশ।

স্বার্থপ্রেমিক আমলার কাছে প্রতারিত হয় দেশবাসী,
বংশের ছাঁইয়ে মাখন মাখিয়ে "দিবস" তৈরি করে রাশি।
রাজস্বখাতে লালবাতি জেলে মানবপূজাকে করে জয়,
দেশের কপালে দুর্দশা দেখে দেশবাসী মনে পোষে ভয়।

মুসলিম দেশে মানবপূজারি তারাকি পড়েনি কোরআন?
কুরআনহীন মানব শরীরে বসত করে যে শয়তান।
মানবপূজারি শয়তান থেকে মুক্তির রাহে পথধরো
কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে শিরকমুক্ত জীবন গড়ো।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ১৬

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল





বনফুল 
                            ( ১৬ তম পর্ব ) 


জুঁই ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে কতো কি ভাবছে,প্রথম দিনের হঠাৎ দেখা, তারপর থেকে আজকে রেস্টুরেন্টের বিল মেটানো। 
পলাশের পরিক্ষার দিনগুলোর কথা।
ঐ দিকে পলাশও জুঁইয়ের কথা ভাবছে পড়ার টেবিলে।
তারই ফাঁকে তিথিও শিমুলের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিল সে।
এমন সময় পলাশের ফোন বেজে উঠল, পলাশ বন্ধু সৈকতের ফোনে আনন্দে আত্মহারা.... রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সৈকত," দোস্ত কেমন আছিস? "
 উত্তরে পলাশ বললো ভালো, দোস্ত তুই কেমন আছিস?  ভালো, কিন্তু পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে সময় কাটছে না। 
পলাশ বললো দোস্ত এক কাজ করতে পারিস, তুই ঢাকা চলে আয় মজা করে সময় কাটানো যাবে।
সৈকতের বাড়িও ঢাকায় বাড্ডা তে। স্কুল থেকে কলেজ এক সাথে পড়াশোনা...
সৈকতের বাবার বদলি হয়ে যাওয়ায় সৈকতে আর ঢাকা ভার্সিটিতে পড়তে পারেনি। বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়তে হলো।
সৈকত বাবা-মার একমাত্র ছেলে। 
যেই কথা সেই কাজ ব্যাগে কিছু জানা কাপড় গুছিয়ে সকালের ট্রেন ধরে চলে এলো সৈকত। 
পলাশের মা শাহানা খাতুন বললেন বাবা এইবার অনেক দিন পরে এসেছো।
সৈকত বললো আন্টি পড়াশোনার চাপ ছিলো তাই আসা হয়ে উঠেনি, তবে যখনি পলাশের সাথে ফোনে কথা হতো আপনাদের সবার খবরাখবর নিতাম।
সৈকত তোমার আব্বু আম্মু ভালো আছেন?  জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ।
দুই বন্ধুতে জমিয়ে আড্ডা হচ্ছিল, রাত এগারোটা হয়ে গেছে, পলাশের ছোট ভাই শিমুল এসে বললো ভাইয়া আম্মু তোমাদেরকে খেতে ডাকছে। 
শাহানা খাতুন সাধ্য মতো ভালোমন্দ রান্না করেছেন, সৈকত ডাইনিং টেবিলে খেতে খেতে বললো আন্টি অনেক দিন পরে আপনার হাতের মজার রান্না খাচ্ছি। 
খাওয়া শেষ হলো, আরো কিছু সময় ধরে গল্পগুজব হলো, শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওরা,ঠিক সেই সময়ে পলাশের ফোন বেজে উঠল।
ওপাশ থেকে জুঁই, হ্যালো কিরছো?  আজ যে আমাকে ফোন দাওনি! 
জুঁই আমার  এক বন্ধুর কথা তোমাকে বলেছিলাম, চট্টগ্রামে থাকে নাম সৈকত,
 ও এসেছে আজ সন্ধ্যায়, একটু ব্যস্ত ছিলাম।
 স্যরি জুঁই... 
জুঁই বললো ঠিক আছে স্যরি বলার কিছু নেই, আমি রাখছি সুইট হার্ট।
পলাশ বললো সেইম টু ইউ।



                                                                                        চলবে....

নূরুজ্জামান হালিম




অপেক্ষা 


প্রজার স্বপ্ন ভঙ্গের পরেও
বিশ্বাসঘাতক রাজা পাশাতেই ব্যস্ত।

নিরুপায় মধ্যবিত্ত 
আলু, পটল অথবা ধান গমে নিরাশ বারোমাস, 
স্বচ্ছলতা নেই কোথাও কানাকড়ি। 

প্রেমে একলা চল নীতি একেবারেই মূল্যহীন 
ন্যূনতম দুজনকে চলতে হয় হাতে হাত রেখে।

কেউ কেউ পা চাটা কুকুর পোষে
কেউ কেউ পা চাটা কুকুরও হতে চায়
উচ্ছিষ্ট ক্ষমতার লোভে।

উন্নয়ন অনেক হয়েছে, 
উন্নয়নের রোশনাই ঝলমল করছে চতুর্দিকে, 
তবুও বৃদ্ধ বাবা- মা অবহেলায় 
বীতশ্রদ্ধ হয়ে চলে যাচ্ছে
অসীম আকাশে।
প্রজারা কাতর রাষ্ট্রীয় অ্যাজমায়।

একটি ঘুড়ি হাতে অবোধ বালক বসে আছে
মৃয়মান সবুজ দিগন্তে
আকাশে বাতাসের বালাই নেই
তবুও নিরন্তর অপেক্ষা রোজ।

কাউসার আলী ( সিডনি অষ্ট্রেলিয়া )




অনুভবের অনল 


কত দুরের পথ, তবুও পথ চলা,
শ্রান্ত নয়নে চেয়ে থাকা ।
আঁকা বাঁকা মেঠো পথ,
মস্তিস্কের কুটিলতায় বিরামহীন অপেক্ষা !
আঁটসাঁট বাঁধি মন,
যৌবনের ঝাউবন জৌলসতার।
আবৃত্তে ঝলসানো সাটার খুলে অপলক,
দেখি তেল চিটচিটে গহীন সুখ রুদ্ধ!!
ফুল ফোটাবো সন্তে মার্চের হানাদার,
কালো আঁধারের প্লাবিত শুষ্ক কপল। 
তবুও ভাঙে না বাঁধ-
দুকূলের পাঁড় বেশ পুরু!
এলোবাতাসে উড়ছে পরাজল,
চুষে নিয়ে হয় ঝিঙ্গেল।
কায়ার মাঝে হিয়া, হিয়ার মাঝে পাষাণ,
জল বিনে জানি নিভেনা অনল;
জল অনলে হৃদয় দহন!!
রবি শসির খেলার মাঝে চোখ ধাঁধানো,
রঙিন চশমা বিহনে-
অদ্য উন্মোচিত ভূ-মন্ডলের মরিচিকার থুপ্পা।।
যতকাল বুনিছে হৃদয় বাবুই পাখির বাসা,
অতি যত্নে লালিত পরক্ষণে ঠুনকো নিগুড় ভালোবাসা
ফুরাবে না পথ জানি, দিতে হবে দিগন্ত পাড়ি ।
বটমূলের শীতল ছায়ায় অবসাদের সুখ পেতে-
নীলিমার নীলপরী স্বপ্নের বারতায় বুলি দ্ব্যর্থহীন,
সময়ের চাহিদা যেখানে মূখ্য !!
পবিত্র ভালোবাসা, স্বতীত্ব সেখানে অর্থহীন।

লুৎফুর রহমান চৌধুরী রাকিব ( ইংল্যান্ড )




কুলষিত 


তাজা ফুলে গাঁজার গন্ধ
কেউ পারেনা বলতে
ভালো মন্দ বলতে গেলে
দেয়না কভু চলতে।

সমাজ করে খুব কুলষিত
হর হামেশা নিত্যে
সত‍্যে কথার ধার ধারেনা
থাকে নির্ভীক চিত্তে।

লুটতে গিয়ে পয়সা  কড়ি 
হয়ে যায় হন্য
ভাতের জন‍্য জাত মারিয়া 
নিজে হয় ধন‍্য।

গলায় ধরে মারে টিপা
বুকে পাথর চাপা
কষ্ট গুলো যায়না দেখা
যায়না কভু মাপা।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"৭





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত
                                   (পর্ব)
শামীমা আহমেদ 

                                                  জকাল মোবাইলের কল্যাণে অনলাইন শপিংয়ের মত অনলাইন বন্ধুও  বেছে নেয়া যায়।তা সে চেহারা দেখে,বা  না দেখেও বন্ধু হবার অনুরোধ পাঠানো যায়, তারপর চলে চেনা জানা, দেখাশুনা, চাই কি তা অনেকের অনেকদূর পর্যন্তও  গড়ায়। তবে শায়লার জীবনে তেমন কোন মিরাকল কিছু ঘটবে না সে ব্যাপারে শায়লা নিশ্চিত। কারণ শায়লা কোন কিছুই সহজে পায়নি। তেমন কোন বন্ধুও পাওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত । শায়লাতো তার স্বাভাবিক জীবন থেকে দলছুট হয়ে গেছে।সবার জীবনের মত তার প্রতিটি ধাপ  মেনে চলেনি।
আগের যুগের মানুষের, শুরুতে দেখাশুনা হতো,চেনা জানা চলাফেরা তারপর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা। এখন সবই পালটে গেছে।তবে আগের দিনে যে পত্রমিতালী হতো,আজকাল তার ডিজিটাল ভার্সন হচ্ছে টেক্সট, মেসেজ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার!
বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার কী মানুষের আবেগ বাড়িয়েছে নাকি কমিয়েছে?নাকি ভার্চুয়াল জগতে  মিথ্যের চর্চা চলছে, নাকি অচেনাকে চিনে নিতে সহজ করে দিয়েছে!
শায়লার মনের ভেতরের নানান দ্বিধাদ্বন্দ্ব
সত্ত্বেও সেই ছবিটায় "সততায় শিহাব" এই আরোপিত নামের প্রোফাইলে বন্ধু হবার অনুরোধ রাখল। শায়লা ভাবলো, দেখি এবার নিজেই নিজের ভাগ্যটা একটু যাচাই করে নেই। তবে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কোন রকম আবেগে ভাসা যাবে না। কোন ধরণের কথায় বাঁধা পড়বে না কারণ শায়লা খুব কাছে থেকে ওর এক মেয়ে কলীগকে দেখেছে।ফেসবুকে পরিচয়ে অচেনা মানুষের জন্য কেমন আকুল হতে।তারপর যখন সে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে,সেকি তার দুরবস্থা, সারাক্ষণ অস্থিরতায় ভুগা। ভালোবাসার সম্পর্ক  যতটুকুই আগাক তারচেয়ে বেশী আহত করে মিথ্যে দিয়ে সাজানো কথামালা আর একদিন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাওয়া। সে এক অসহ্য যন্ত্রণা। মানুষ অভ্যাসের দাস, আর এখনতো মানুষ যন্ত্রের দাস! আবেগকে রিমোট কন্ট্রোলের মত নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইল যোগাযোগ। 
নিজেকে মানসিকভাবে বেশ শক্ত করে নিয়ে শায়লা অনুরোধ গ্রহণের অপেক্ষায় রইল।
তবে শায়লা ভেবে রেখেছে কিছুতেই তার নিজের জীবনের সবকিছু বলবে না।কারো দয়া বা সুযোগ নেয়া সহজ করে দিবে না। চেষ্টা করবে লোকটিকে জানতে।
এখন রাত প্রায় একটা। লোকটি কি জেগে আছে? থাকতেও পারে নাও পারে। তবে পাশে নিশ্চয়ই স্ত্রী থাকবে, তাহলে হয়তো সাড়া নাও মিলতে পারে।অবশ্য আজকাল স্বামী স্ত্রী একই বিছানায় যার যার মোবাইল নিয়ে পাশ ফিরে রাত  কাটায়। যেন এক শান্তি চুক্তি ঘোষণা!  শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। দিনে দিনে বন্ধনগুলো কেমন যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে।মানুষ আপন ছেড়ে অচেনা পর মানুষের জন্য বেশি ব্যাকুল হচ্ছে। শায়লার এ ধরনের কোন সমস্যা নেই।সেতো আর কাউকে ঠকাচ্ছে না।বরং সেই ঠকেছে আর বিনা নালিশে পরাজয়ও বরণ করেছে।
এখন আর নোমান সাহেব নক দেন না। বলটি এখন শায়লার কোর্টে।শায়লা ইচ্ছে করলে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ে তা ছুঁড়ে দিতে পারে তার সম্মতি জানিয়ে, নয়তো  স্বেচ্ছায় এ খেলা ত্যাগ করা যায়। এ ব্যাপারে শায়লা এখনো মতদ্বৈততায় আছে। মাঝে মাঝে তার উদাস দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ঐ দূর আকাশে, চাইলে সেখানে উড়োজাহাযে উড়তে পারে নয়তো মাটিতে থেকে আকাশের রংয়ের খেলা দেখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।
শায়লা "সততায় শিহাব" প্রোফাইল থেকে কোন উত্তর এলো কিনা বারবার তা তাকিয়ে দেখছে।নাহ! এত রাতে এভাবে নক দেয়াটা ঠিক হয়নি।আবার এটাও বুঝে নেয়া যায় খারাপ মানুষ হলে এই রিকুয়েষ্ট লুফে নিতো! আবার হয়তো বিবাহিত মানুষ বউয়ের সামনে ভালো সেজে আছে, সকালে অফিসে পৌছেই কিংবা গাড়িতে, বাসে বসে রেস্পন্স করবে। শায়লা প্রায়ই ভাবে, যে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা হয়, পুরুষরা তার কতটুকু মূল্য ধরে রাখতে পারে? কতটুকু সৎ থাকতে পারে তাদের স্ত্রীদের প্রতি। শায়লার মনে অজান্তেই এই ভাবনাটা এলো। পরনারী কিংবা অচেনা অজানা নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ানো যেনো পুরুষের মজ্জাগত চরিত্র। সংসার সন্তান দিয়ে স্ত্রীকে ব্যস্ত রেখে নিজে শিকারির চোখ  নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
এমনি নানান ভাবনায় শায়লা ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুমের মাঝে শায়লা প্রায়ই সেই দৃশ্যটা দেখে,  একটা লাল ফ্রক পরে শায়লা তার বাবার কোলে।বাবা বারবার তাকে উপরে ছুড়ে দিচ্ছে আর নামাচ্ছে।আর শায়লা কলকল করে হাসছে। বাবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক! দূরে দাঁড়িয়ে মা ভয় আর আতংকে বাবাকে বারবার বারণ করছে এমনটি করতে। তখন কি মা ভেবেছিল তার এই শায়লাকে নিয়ে তাদের এত স্বপ্ন আনন্দ, আহলাদ সবই একদিন মিথ্যা হয়ে যাবে? 
বিধাতার বেধে দেয়া ছকে আমাদের শুধু রোলপ্লে করে যেতে হবে। শায়লা তার নিজের প্রোফাইলে ঘুরে এলো।নাহ, এখনো এক্সেপ্ট করেনি,,,



                                                                                    চলবে...