২৮ অক্টোবর ২০২১

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"৭





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত
                                   (পর্ব)
শামীমা আহমেদ 

                                                  জকাল মোবাইলের কল্যাণে অনলাইন শপিংয়ের মত অনলাইন বন্ধুও  বেছে নেয়া যায়।তা সে চেহারা দেখে,বা  না দেখেও বন্ধু হবার অনুরোধ পাঠানো যায়, তারপর চলে চেনা জানা, দেখাশুনা, চাই কি তা অনেকের অনেকদূর পর্যন্তও  গড়ায়। তবে শায়লার জীবনে তেমন কোন মিরাকল কিছু ঘটবে না সে ব্যাপারে শায়লা নিশ্চিত। কারণ শায়লা কোন কিছুই সহজে পায়নি। তেমন কোন বন্ধুও পাওয়া হয়নি আজ পর্যন্ত । শায়লাতো তার স্বাভাবিক জীবন থেকে দলছুট হয়ে গেছে।সবার জীবনের মত তার প্রতিটি ধাপ  মেনে চলেনি।
আগের যুগের মানুষের, শুরুতে দেখাশুনা হতো,চেনা জানা চলাফেরা তারপর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা। এখন সবই পালটে গেছে।তবে আগের দিনে যে পত্রমিতালী হতো,আজকাল তার ডিজিটাল ভার্সন হচ্ছে টেক্সট, মেসেজ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার!
বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার কী মানুষের আবেগ বাড়িয়েছে নাকি কমিয়েছে?নাকি ভার্চুয়াল জগতে  মিথ্যের চর্চা চলছে, নাকি অচেনাকে চিনে নিতে সহজ করে দিয়েছে!
শায়লার মনের ভেতরের নানান দ্বিধাদ্বন্দ্ব
সত্ত্বেও সেই ছবিটায় "সততায় শিহাব" এই আরোপিত নামের প্রোফাইলে বন্ধু হবার অনুরোধ রাখল। শায়লা ভাবলো, দেখি এবার নিজেই নিজের ভাগ্যটা একটু যাচাই করে নেই। তবে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কোন রকম আবেগে ভাসা যাবে না। কোন ধরণের কথায় বাঁধা পড়বে না কারণ শায়লা খুব কাছে থেকে ওর এক মেয়ে কলীগকে দেখেছে।ফেসবুকে পরিচয়ে অচেনা মানুষের জন্য কেমন আকুল হতে।তারপর যখন সে ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে,সেকি তার দুরবস্থা, সারাক্ষণ অস্থিরতায় ভুগা। ভালোবাসার সম্পর্ক  যতটুকুই আগাক তারচেয়ে বেশী আহত করে মিথ্যে দিয়ে সাজানো কথামালা আর একদিন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাওয়া। সে এক অসহ্য যন্ত্রণা। মানুষ অভ্যাসের দাস, আর এখনতো মানুষ যন্ত্রের দাস! আবেগকে রিমোট কন্ট্রোলের মত নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইল যোগাযোগ। 
নিজেকে মানসিকভাবে বেশ শক্ত করে নিয়ে শায়লা অনুরোধ গ্রহণের অপেক্ষায় রইল।
তবে শায়লা ভেবে রেখেছে কিছুতেই তার নিজের জীবনের সবকিছু বলবে না।কারো দয়া বা সুযোগ নেয়া সহজ করে দিবে না। চেষ্টা করবে লোকটিকে জানতে।
এখন রাত প্রায় একটা। লোকটি কি জেগে আছে? থাকতেও পারে নাও পারে। তবে পাশে নিশ্চয়ই স্ত্রী থাকবে, তাহলে হয়তো সাড়া নাও মিলতে পারে।অবশ্য আজকাল স্বামী স্ত্রী একই বিছানায় যার যার মোবাইল নিয়ে পাশ ফিরে রাত  কাটায়। যেন এক শান্তি চুক্তি ঘোষণা!  শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। দিনে দিনে বন্ধনগুলো কেমন যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে।মানুষ আপন ছেড়ে অচেনা পর মানুষের জন্য বেশি ব্যাকুল হচ্ছে। শায়লার এ ধরনের কোন সমস্যা নেই।সেতো আর কাউকে ঠকাচ্ছে না।বরং সেই ঠকেছে আর বিনা নালিশে পরাজয়ও বরণ করেছে।
এখন আর নোমান সাহেব নক দেন না। বলটি এখন শায়লার কোর্টে।শায়লা ইচ্ছে করলে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ে তা ছুঁড়ে দিতে পারে তার সম্মতি জানিয়ে, নয়তো  স্বেচ্ছায় এ খেলা ত্যাগ করা যায়। এ ব্যাপারে শায়লা এখনো মতদ্বৈততায় আছে। মাঝে মাঝে তার উদাস দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ঐ দূর আকাশে, চাইলে সেখানে উড়োজাহাযে উড়তে পারে নয়তো মাটিতে থেকে আকাশের রংয়ের খেলা দেখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।
শায়লা "সততায় শিহাব" প্রোফাইল থেকে কোন উত্তর এলো কিনা বারবার তা তাকিয়ে দেখছে।নাহ! এত রাতে এভাবে নক দেয়াটা ঠিক হয়নি।আবার এটাও বুঝে নেয়া যায় খারাপ মানুষ হলে এই রিকুয়েষ্ট লুফে নিতো! আবার হয়তো বিবাহিত মানুষ বউয়ের সামনে ভালো সেজে আছে, সকালে অফিসে পৌছেই কিংবা গাড়িতে, বাসে বসে রেস্পন্স করবে। শায়লা প্রায়ই ভাবে, যে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা হয়, পুরুষরা তার কতটুকু মূল্য ধরে রাখতে পারে? কতটুকু সৎ থাকতে পারে তাদের স্ত্রীদের প্রতি। শায়লার মনে অজান্তেই এই ভাবনাটা এলো। পরনারী কিংবা অচেনা অজানা নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ানো যেনো পুরুষের মজ্জাগত চরিত্র। সংসার সন্তান দিয়ে স্ত্রীকে ব্যস্ত রেখে নিজে শিকারির চোখ  নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
এমনি নানান ভাবনায় শায়লা ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুমের মাঝে শায়লা প্রায়ই সেই দৃশ্যটা দেখে,  একটা লাল ফ্রক পরে শায়লা তার বাবার কোলে।বাবা বারবার তাকে উপরে ছুড়ে দিচ্ছে আর নামাচ্ছে।আর শায়লা কলকল করে হাসছে। বাবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক! দূরে দাঁড়িয়ে মা ভয় আর আতংকে বাবাকে বারবার বারণ করছে এমনটি করতে। তখন কি মা ভেবেছিল তার এই শায়লাকে নিয়ে তাদের এত স্বপ্ন আনন্দ, আহলাদ সবই একদিন মিথ্যা হয়ে যাবে? 
বিধাতার বেধে দেয়া ছকে আমাদের শুধু রোলপ্লে করে যেতে হবে। শায়লা তার নিজের প্রোফাইলে ঘুরে এলো।নাহ, এখনো এক্সেপ্ট করেনি,,,



                                                                                    চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thank you so much