১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

সানি সরকার


কুহক যখন তোমাকে গ্রাস করছে তোমার অজান্তেই 



ভোরের গোধূলিকে বলো, ভালো আছ? 

ভোরের গোধূলি জানে, প্রতিটি মুহূর্ত… 

কেন যে ভুলে যাও 

শুধু ভালো থাকার জন্যে ভালো থাকা না! 


এই যে দশ দিক তার চারপাশে 

তুমি যে সেখান থেকে অসংখ্যবার গন্ধ নিচ্ছ 

এবং মনে করছ, বুকের ভেতরের পাখিটি বুঝি মুক্ত হয়ে গেল… 

কিন্তু না! 


যে বৃক্ষের নিচে শ্বাস নিচ্ছ ইদানীং 

যে যে বৃক্ষ তোমাকে পথের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ দিল 

তাঁরা হাসলেন খুব, না প্রাণ না, 

মনে মনে হাততালি দিতে দিতেই 

ক'য়েক পাক চক্কর কেটে নিলেন দ্রুত-ই 

কারণ নির্মাণ সফল হয়েছে  


আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ 

ওঁরা একেকজন সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা… 

একজন মানুষকে প্রতিটি ক্রিয়েটর 

কখনও রাক্ষস কিংবা ঝোলার বেড়াল বানাতে পারেন 

এখানে মনে রাখা উচিৎ, ওঁর কাজই হল নির্মাণ করা 

তা মিথ্যে হোক বা সত্যি 


এখানে বলে রাখা ভালো, যদি সিনেমার ভাষায় দ্যাখো, তবে 

এই জগৎ-সংসারে পর্দার আড়ালের মানুষটিকে কেউ চেনেন না 

ওঁরা ইচ্ছে মতো প্রতিটি চরিত্রের একেকটি নাম 

            ও ট্যাটু এঁকে দেন 


এইখানে তুমি যদি সাধক-শিল্পীটি হও 

যে কোনও গন্ধ শোঁকার পরে একশ আটবার না  

সত্যি ও মিথ্যের জ্যামিতিটি সমাধান করতে 

ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সচেতনভাবে তুমি মাত্র ষাট পাক ঘুরবে 


এখন তোমার সামনে শান্ত-স্থির কেদারা ও বিজ্ঞাপনের হাতছানি 

এবার তোমার নাভিকুণ্ডলীর কাছে জিজ্ঞেস করো, 

আসলে তুমি কেমন আছ এবং ভবিষ্যতে কেমন থাকতে চাইছ 

কারণ ভোরের গোধূলির কাছে কখনও মিথ্যে বলতে নেই 

একজন সত্যিকারের মানুষ, নিজেকে কখনও 

মিথ্যে করেও মিথ্যে বলতে পারেন না


সালমা খান


নাগেশ্বর বৃক্ষ 


পুরোনো দীঘির জলে কবে কার নাগেশ্বর বৃক্ষ ছায়া দেখে তার প্রিয় হারানো,

আমারি মতো সেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিক্ষার পথ চেয়ে ।

অদূরে হয়ে ফিরছে এই যে পথ,

আরো শতবর্ষ ছিলো হেঁটে যাবার,

ধীরলয়ে যেমন হেঁটে যাবার

ভেবেছি একদিন তোমার হাতপাশে আমারি হাত রেখে ছন্দবদ্ধ হবে সকল বৈরাগ্যপনা ,

সে স্বপ্নাতুর অভিলাষ ফিকে হয়ে গেলে আমার আর ভালো লাগে না।

ডাক দিয়েছি,তুমি পৌঁছে গেছো মৌনি ধাপে

আমিও হালকা ওমের মতো চৌহদ্দি ছাড়লাম,

নেমে গেলাম জলের মতো।

 পথে পথে শামুকের খোল,পাথরের তীক্ষ্ণ ঢেলা বুঝতে কি পারো ,

ঢালুর অংশের আধভাঙা ফাটলে প্রত্নজীব শ্যাওলা?

পুজো নিয়ে তোমার মোহগ্রস্ত ঘুম এখনো ভাঙেনি

ভাবছো আমজনতা খেয়ে নেবে সংক্রামিত প্রসাদ বাতিল নিরামিষের গরাস!

রোজ সকালে আয়না তুলে ধরি মুখ ,

স্মৃতির কৌটা খুলে কপালে আঁকি লাল বৃত্তের সুখ।

কি নিদারুণ ভাবে আমার সিঁথির সিঁদুরে টকটকে রোদ্দুর গুড়ো

লেপ্টে দিলে যা আমার কপাল বেয়ে 

নেমে এলো মৃত্যু ,

আমি মৃত্যুর জন্য নৈশব্দিক একটা কবিতা লিখবো।

এক লক্ষ জোনাকির নিমন্ত্রণ দেবো সেদিন

ঝিঝি  পোকারা গুনগুন করে গান ধরবে মৃত্যুর সময় 

ঝিরি ঝিরি বাতাস বইতে থাকবে,

ক্রন্দন ভরা বাতাসের তীব্রতায় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে ছড়িয়ে পড়বে

হলুদ শাড়ি পড়ে থাকবো সেদিন

কপালে টিপ আঁকবো,কাজল দেবো গাঢ় করে,যখন চোখ দুটো চিরতরে বন্ধ  হয়ে যাবে।

জলের কাছে নিমন্ত্রণ পাঠাবো ,

জলের ফোঁটায় সারা মুখে ছড়িয়ে পড়বে।

তখন কান্নার শব্দকে দেব ছুটি

অন্ধকার রাত ব্যাথিত হয়ে দেখবে আমার শেষযাত্রা।

সীমাহীন রুপান্তর তুমি

মালবিকার চোখে চোখ পড়ে না।

তুমি অন্ধ পথে থৈ থৈ, 

চোখ আছে তবুও চোখের মনি নেই।

মাসুদ করিম


চঞ্চল হরিনী


সেই মেয়েটি থাকে সদা

হাঁসি খুসি মনে,

সারা পাড়া মাতিয়ে রাখে

সোহাগ ভরা মনে।

পাড়ার সবাই দশ্যি বলে

যেন চঞ্চল হরিনী,

দুষ্টমিতে বেজায় পটু তবুও

সবারি আদরিনী।

মা বলেন ডেকে খুকি সোনা

এবার ঘরে আয়,

মায়ের পানে মুখ বাঁকিয়ে দুষ্ট

মেয়ে দৌড়ে পালায়।

সারা বেলা দৌড়ে বেড়ায় খুকি

চঞ্চল হরিনীর মত,

আমের ঢালে জামের ঢালে

করে দুষ্টমি আছে যত।

বাবা ডেকে বলেন মাগো নেমে

এবার বাড়ি যাও,

খুকী এবার দুষ্টমিতে বায়না ধরে

বাবা আমটি পেড়ে দাও।

বাবা হেসে বলেন মাগো এবার বেলা হলো শেষ,

খুকী এবার মুখ ঘুরিয়ে বসল বেঁকে

রাগ করেছে বেশ।


গোলাম কিবরিয়া ( শরীফ)


দেহ


পড়ন্ত বিকেলে রৌদ্রের বুকে 

ঘুমিয়ে পড়িছে দেহ,

অনামিকা নড়ে, স্মৃতি মনে পড়ে-

বাঁচাবে আমারে কেহ? 


দৃশ্যপট 


বৃদ্ধ আসিলো জমির অফিসে -

সাথে আছে ওয়ারিশ, 

ভাগ বাটোয়ারা, হয়ে গেছে সব,

স্বাক্ষরে কুর্নিশ। 


সকলের মুখে প্রাপ্তির হাসি -

আশার মশাল জ্বলে, 

বৃদ্ধের মুখে বিদায়ের গান -

হৃদয়ে স্মৃতির থলে। 


জমি আপনার? নাম কি যে তবে? 

দিয়াছেন সজ্ঞানে? 

সাব রেজিস্ট্রার - পরখ করিতে, 

তাকায় তাহার পানে। 


আরে সাহেব -


জমিতো আমার , ভাবিতে ভাবিতে -

জীবন করেছি পার ;

জীবনের কূলে এসে দেখি আজ -

নেই সাথে কিছু আর। 


স্বাক্ষর হলো, টিপসই ও দিলো, 

লুকায় চোখের জ্বলে, 

"আজ থেকে আর, রইলো না তার  -

কিছুই নিজের বলে। "


যাক বাঁচা গেলো, মনে মনে ভাবে -

তুষ্টিতে থাক সবে, 

এখন তো আর বলবেনা কেউ -

"বাবা" যে মরবে কবে? 


বছর দুয়েক পর -


বাবার হইলো ভীষন অসুখ -

সারিবেনা কোনও ভাবে ;

ডাক্তার বলে, বিদেশ গমনে -

বোধ হয় কাজ হবে। 


এই বার সবে, চোখাচোখি করে, 

এই ক্ষনে কি যে করে ! 

"তাহার তো ঢের হয়েছে বয়স -

এমনিতে যাবে মরে। "


"বিদেশ যাইতে প্রচুর খরচ -

জমি বেচে দেব পুরো? 

কি লাভ আছে! যতদিন বাঁচে -

বাড়িতে থাকুক বুড়ো। "


অবশেষে বাবা বুঝিতে পারিলো -

চোখে  ক্লান্তির ছোঁয়া, 

তবু দুই হাত, তুলে সারা রাত ;

করিলো সবারে দোয়া। 


মুয়াজ্জিনের  মধুর ধ্বনিতে 

প্রতিদিন বাবা জাগে, 

আজ তো জাগেনি বাবার দেহটা, 

নিথর হয়েছে আাগে। 


গোধুলিতে এসে  হিসেব  মিলায় -

দুপুরের রোদে কত কষ্ট ;

এখানেই জিতে গেলো বসুধার রং, 

শেষমেষ আঁধার প্রকোষ্ঠ।


সাহানারা সেখ(টুম্পা)


সম্পর্ক 


এ রমণী কোন রমণী?

নিজেকে জননী বলে,করে দাবি!

অন্য স্বামীতে আসক্ত হয়ে,

অবৈধ সম্পর্কে করে মাতামাতি।

ধিক্কার দি সেই তনয়কে ও

যে অন্নের ভেলাতে ভাসে।

এমন করে এই সংসারে

নাশহীন হয়ে নেমে আসে।

ক্ষমার যোগ্য নয়তো তারা

সমাজ কুলসিত করার কারিগর।

চক্ষুর ওই কালো পর্দা অন্নে খোলার চেয়ে 

নিজে খুলে ফ‍্যাল।

অন্ধকার সংসার থেকে,আলোর জগতে বিরাজ কর।


এস, আলম


কাশফুলে  স্মৃতি দোলে 


    কাশফুলে আজ হারিয়ে যাবো
    থাকবে না আর ছায়া, 
    কাঁদিসনে কেউ আমার ব্যথায় 
    রাখবে স্মৃতির মায়া । 

    আসবো আবার শরৎ এলে  
    যৌবনা কাশফুলে, 
    দেখবে সেথায় মেঘের ভেলায় 
    মনের আগল খুলে । 

    আসবে সুজন দেখবে স্বজন 
    নদীর কূলে গেলে, 
    বেতাল স্রোতে ভাসিয়ে যাবো 
    দেখিবে দুচোখ মেলে । 

    আমায় ক'জন করবে সোহাগ 
    ভালোবাসার সাথে, 
    ক'জন আবার মায়ায় বেঁধে 
    রাখবে প্রেমের হাতে । 

    দেখবে যখন কাঁদবে গগন 
    করবে স্মৃতি স্মরণ, 
    শরতকালে বদল দিনে 
    আবার হবে মরণ ।