২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গল্প - নির্মলেন্দু কুণ্ডু

সম্পর্ক 

—"কী রোজ রোজ ঐ পাগলটার কাছে যাও,ভালো লাগে না এসব!কতবার বারণ করেছি না!"
—"ও-ও যে আমায় মা বলে ডাকে বাবা,মা হয়ে সন্তানের ডাকে সাড়া না দিই কি করে!"কোনরকমে কান্না গিলে কথাগুলো বলেন নীলিমা দেবী৷

আর পাঁচটা মেয়ের মতো নীলিমা দেবীর যখন বিয়ের কথাবার্তা চলছে,তখন থেকেই সবাই সাবধান করে দিচ্ছিল সাংসারিক নানা ব্যাপারে৷শাশুড়ীর কথা শুনে চলা,স্বামীকে দেবতাজ্ঞান করা,বাড়ির কাজকর্ম মুখ বুজে করে যাওয়া এরকম হরেক উপদেশ আর পরামর্শে বিয়ের আগে থেকেই শ্বশুরবাড়ি সম্বন্ধে একটা অজানা ভীতি কাজ করছিল নীলিমার মনে৷কিন্তু বিয়ের পর নিজেই অবাক হয়ে গেল নীলিমা৷কোথায় শাশুড়ীর দজ্জালপনা!তিনি যে মায়ের থেকেও আপন৷কথায় কথায় বলতেনও,নীলিমাকে এনে উনি ওঁর মেয়ের শখ পূর্ণ করেছেন৷স্বামীটিও দিলদরিয়া মানুষ৷রাশভারী অধ্যাপকের বর্ম পরে থাকলেও স্ত্রীর সাথে রঙ্গ-রসিকতায় কম যেতেন না৷নীলিমাও বুঝতেন,স্বামী তাঁকে প্রচন্ড ভালোবাসেন৷তাঁদের সেই ভালোবাসারই ফসল অনিন্দ্য,ওঁদের ছেলে৷অনিন্দ্য হওয়ার পর আনন্দটা যেন আরও
বেড়ে গিয়েছিল নীলিমার সংসারে৷কিন্তু এত সুখ বোধহয় বিধাতার সহ্য হলনা৷শাশুড়ির মৃত্যুর পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম মিটতে না মিটতেই এক গাড়ী দুর্ঘটনায় স্বামী প্রমথেশবাবুও প্রাণ হারালেন৷সেই থেকে তাঁর পেনশনের কিছু টাকা আর কয়েকটা টিউশনি—এভাবেই বড় করে তুলেছেন নীলিমা দেবী তাঁর ছেলেকে৷কোনদিনও অভাব বুঝতে দেননি৷সাধ্যের বাইরে গিয়েও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়েছেন৷ছেলে যখন নামী সংস্থায় চাকরী পেল,গোটা পাড়ায় মিষ্টি বিলিয়েছেন৷

সেই একই পাড়ায় এক বটতলায় হঠাৎই এসে উপস্থিত হয় এক জটাওয়ালা যুবক৷গালের দাড়ি,উস্কোখুস্কো চুল,নোংরা পোশাক দেখে সবাই এক মুহূর্তেই বুঝতে পারে লোকটা রামপাগল৷দুয়েকবার তাড়াবার চেষ্টাও করে,কিন্তু পাগলটা রে-রে করে তেড়ে আসায় সেই চেষ্টায় ক্ষান্ত হয় পাড়ার লোকে৷কয়েকজন অতি-উৎসাহী তখন হাতের কাছে পড়ে থাকা ইঁট ছুঁড়তে থাকে পাগলটাকে লক্ষ্য করে৷মন্দির থেকে ফেরার পথে দৃশ্যটা দেখেই রুখে দাঁড়ান নীলিমা দেবী৷
—"এই কি করছো কি তোমরা?থামো,থামো বলছি!"
—"সরে যান জেঠিমা৷ও একটা পাগল৷এক্ষুনি কিছু একটা ক্ষতি করে দেবে আপনার৷"
—"কে পাগল নয়,বাবা!এই দুনিয়ায় প্রত্যেকেই তার নিজের নিয়মে পাগল৷আর ক্ষতি,রাখে হরি মারে কে!"
নীলিমা দেবীকে পাড়ার ছেলেপুলেরা একটু মান্য করে৷তাই ইঁট ছোঁড়া ছেড়ে আস্তে আস্তে চলে যায় জায়গাটা ছেড়ে৷নীলিমা দেবী এবার পাগলটার দিকে ঘুরে তাকান৷লোকটা এতক্ষণ ভয়ে কুঁকড়ে ছিল৷তিনি এগিয়ে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন—"তুমি কে বাবা?"
পাগলটা বোবা অর্থহীন দৃষ্টিতে নীলিমা দেবীর দিকে তাকায়৷বোধহয় বোঝার চেষ্টা করে ইনি ওর বন্ধু,না শত্রু৷
—"ভয় পেয়ো না,বাবা!আমি তোমায় মারবো না!তোমার খুব খিদে পেয়েছে,না?এই নাও,এই মিষ্টিগুলো খাও৷এখন আমি আসি,কেমন!তুমি কিন্তু কোথাও যেও না!কারো কোন অনিষ্টও করো না৷"
উনি উঠে একটু এগিয়েছেন,হঠাৎ—"মা!"
চমকে ঘুরে তাকালেন নীলিমা দেবী৷আঃ,কতদিন তিনি এ' ডাক শোনেননি৷যে ছেলেকে এত কষ্ট করে মানুষ করলেন,সেও যেন কেমন পাল্টে যাচ্ছে৷আগে অফিস থেকে ফিরে নানা কথা বলতো৷ধীরে ধীরে সেটুকুও বন্ধ হয়ে গেল৷এখন কথা বলতে 'খেতে দাও','দরজা বন্ধ করে দাও' ইত্যাদিতেই সীমাবদ্ধ৷মা ডাকটাও তাই অনেকদিন শোনেননি নীলিমা দেবী৷তাই আজ হঠাৎ এই অপরিচিত পাগলটার মুখে 'মা' ডাক শুনে সেই ফল্গুধারার মতো বয়ে চলা মাতৃত্বস্নেহধারা যেন নতুন গতিমুখ পেল৷সেই থেকে পাগলটাকে রোজ খাবার,অনিন্দ্যর পুরনো জামাকাপড় দিতে লাগলেন৷পাগলটাও কেমন যেন মা-নেওটা হয়ে উঠল ধীরে ধীরে৷পাড়ার অন্য কাউকে কিছু বলে না৷কেউ মারতে বা খোঁচাতে এলে খেঁকিয়ে ওঠে ঠিকই,কিন্তু কখনোই কাউকে মারতে যায়না৷ও অবশ্য মায়ের এই ভালোবাসাটুকু সেই গাছতলায় বসেই উপভোগ করতো৷কখনো নীলিমা দেবীর বাড়ি যায়নি৷নীলিমা দেবীও তা মেনে নিয়েছিলেন৷কারন অনিন্দ্য যখন থেকে পাগলটার কথা জানতে পেরেছিল,তখন থেকে মায়ের সাথে দূরত্বটা যেন আরও বড় হয়ে উঠেছিল৷মায়ের কাজে অসন্তোষও প্রকাশ করতো প্রায়ই,এমনকি গলাবাজিও হত মাঝে মাঝে৷পাড়ার লোকেরাও ওর এরকম ব্যবহারে অবাক হত,কিন্তু নাক গলাতো না৷

হঠাৎ একদিন সকালবেলায় দেখা গেল পাগলটা নীলিমাদেবীর বাড়িতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা মারছে৷পাড়ার লোকেরা সেই শব্দে বেরিয়ে এসছে৷অনিন্দ্য তখন অফিসের কাজে বাইরে গেছে৷পাড়ার লোকেরা পাগলটার এরকম আচরণে অবাকই হল,কারন এত দিনে এই প্রথম পাগলটা এরকম করছে৷তাছাড়া নীলিমা দেবীই বা কোথায়!উনিই পাড়ায় সবার আগে ওঠেন৷অথচ এত আওয়াজেও ঘুম ভাঙছে না!পাগলটা প্রতিবেশীদের দেখতে পেয়ে ছুটে গেল ওদের কাছে৷মুখ দিয়ে বিচিত্র আওয়াজ করতে লাগলো,আর বারবার আঙুল দিয়ে নীলিমা দেবীর বাড়ির দিকে দেখাতে লাগলো৷দুয়েকজন কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেল সেই বাড়ির দিকে৷নিজেরাও ধাক্কা দিল দরজায়৷কিন্তু শব্দ না পেয়ে অজানা আশঙ্কায় দরজা ভেঙে ঢুকে দেখলো খাটে পড়ে আছে নীলিমা দেবীর নিথর দেহ৷

ছেলেকে খবর পাঠানো হল৷ছেলে বিকেলেই ফিরে এল৷এসেই জিজ্ঞেস করলো—"বডিটা কখন দাহ হবে?আমাকে আবার ফিরতে হবে৷একটা ইমপর্ট্যান্ট মিটিং সারতে হবে!"ছেলের এই মনোভাবে প্রতিবেশীরা যারপরনাই বিস্মিত হল৷পাগলটা কিন্তু তখনও বাইরে বসে অঝোর ধারায় কেঁদেই চলেছে৷

পরের দিন সকালে দেখা গেল সেই বটতলায় পাগলটা মরে পড়ে আছে!

সুব্রত হাজরা

ব্যথার সম্পর্ক 

তোমার সাথে আমার একটিই  সম্পর্ক 
তা হলো ব্যথার।
যেখানে যেখানে  ব্যথারা ঘুরপাক খায়
সেখানে সেখানে তোমায় খুঁজে পাই।

 তোমার কথার মধ্যেই আমি আছি।
বিশ্বাস না হলে পরখ করো
বুকের ওপর হাত দিয়ে দেখো 
সকল ধুকপুকানিতে সেই 'তরুণ'-
এলোমেলো চুল,ঘোলাটে স্বপ্নিল চোখ 
অবহেলার পোশাকে বড়ই পাগলাটে 
যাকে তুমি আদর করে বলতে - কেয়ারলেস বিউটি। 

আজ ২৬ শে সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর দিন
দেবব্রতর কথাতে কলম ধরা।
কিন্তু বারবার তোমার ছবি কেন ভেসে আসছে
তুমি কি আমায় মনে করছ?

ব্যথারা এখন কথা হয়ে কোথায় উড়ে যায়
পিপাসু ঠোট , তোমার লিপগ্লসের গন্ধে 
বড়ই  উচাটন  করে।

তুমি কি আমায় ভাবছ?

তুমি কি কাঁদছ?
এ ব্যথার বিন্দু বিন্দু  রেণু আমায় ভিজিয়ে চলেছে
আমি ভিজছি।
আমি কাঁদছি। 
না পেয়েও হারানো ব্যথারা আমায় ঋদ্ধ করে চলেছ 
মামমাম, তুমি কত দূরে অথচ কত কাছে?

দেবযানী বসু

সলিলা হও গো

সাগরমমতা ছিল দিঘি তোর. মহাঘোষ অন্তরে. দিঘি-দিদিদিদিদি.... খুন্তি হাতা দিয়ে নেড়ে দি ৫.৫ মিলিয়ন বছর বয়সে তোর. হারিয়ে যাওয়া বর্ষাবর্ষ গুনতে গুনতে. মা হারা মেছো নৌকোরা শুখো কোল জাপ্টে. মা মরা মা মড়া. বীরপুরুষ জাহাজেরা পড়ে পড়ে ঘুমোয় আর বালি খায়. চোরাবালি চুরি করে খায়. এখন পেয়েছে তোকে লবণবাতিকে. বুকে পাতা রেললাইনে খেলা করে মাছ. আমি মহাসচিব আসি তোর কাছে. পালাতে পারি নি. পারি নি. আমারও আশ্রয় উল্টোনো জাহাজ পাঁচ মিলিয়ন বছরের. 

মোনালিসা রেহমান

জলজ 

একটু বৃষ্টি হলেই জল
 জমে  মাটির শরীরে
নরম মাটির দেয়াল ঘেঁষে
বেড়ে ওঠে  চারাগাছ

শ্যাওলা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
 দেওয়াল ফেটে চৌচির
দুয়েকটা ইট হাড় জিরজিরে....
ডানা ভাঙা পাখি।

ইমারত ভাঙার শব্দ ক্ষীণ
কারুকার্য খচিত রাজপ্রাসাদে
আজ নান্দনিকতা বেমানান
উত্তরআধুনিক প্রেক্ষাপটে
স্রষ্টা  নিজেই দিকবিশূন্য
প্রদোষকালে পাখিদের
ডানা ঝাপটানো কিসের ইঙ্গিত!


রাত্রিকালে এক পক্ষকাল
নির্ঘুম স্বপ্নদোষ........

উদার আকাশ

একরামূল হক শেখ

রবিবার ২৪ সেপ্টেম্বর এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় 'উদার আকাশ' পত্রিকার 'ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা-১৪২৪'  উদ্বোধন করেন । 'মানবজমিন' নামক কালজয়ী উপন্যাস, জনপ্রিয় 'ফটিক' চরিত্রের স্রষ্টা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  উদার আকশ পত্রিকার বিষয় বৈচিত্রের পাশাপাশি সম্প্রীতি ও সৌহার্দের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। তিনি আরও বলেন, সমাজের বৌদ্ধিক বিকাশে সাহিত্য-সংস্কৃতির  বেশি বেশি চর্চা খুবই জরুরি।
উদার আকাশ পত্রিকার তরুণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান, চারদিকে ভেদাভেদ আর অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে। এই সময় সাহিত্য-সংস্কৃতিই  মানবিকতার জয়গান গাইতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে আমাদের। তিনি আরও বলেন, এর আগে উদার আকশ পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা এবং উদার আকাশ প্রকাশনের গ্রন্থ  নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মোস্তাক হোসেন, জয় গোস্বামী, দীপক ঘোষ, আবুল বাশার, সুনন্দ সান্যাল, নজরুল ইসলাম, প্রভৃতি বরেণ্য বাঙালি উদ্বোধন করেছেন। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলেন আমার অন্যতম প্রিয় কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তিনি এপার বাংলা ও ওপার বাংলা এবং আমাদের রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে মিলন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। এই শুভক্ষনে তিনি ঘোষণা করেন, 'উদার আকাশ' পত্রিকা ও প্রকাশনের উদ্যোগে আগামী ১৪ নভেম্বর ২০১৭ কলকাতার আইসিসিআর হলে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উদার আআকাশ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে 'টাইমস বাংলা'-র তরুণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রোহিত, 'অয়োময়' পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রাশিদ, 'নতুন গতি' পত্রিকার চিত্র সাংবাদিক অসিত ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

                    
গবেষণাধর্মী মননশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশই 'উদার আকাশ' পত্রিকার ট্র্যাডিশন। এ-সংখ্যাতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল: উনিশ শতকের গীতিকবিতায় রোমান্টিকতা (ড. তাপস বসু), নৈতিকতা যেন আজ নিভু নিভু দীপশিখা (ড. মীরাতুন নাহার), প্রদোষে প্রাকৃতজন: ইতিহাস এখানে সাহিত্যের ফুল হয়ে ফোটে (ড. সাইফুল্লা), রবীন্দ্রনাথের নারীভাবনা: প্রসঙ্গ কালান্তর প্রবন্ধের 'নারী' (অনন্যা রায় পাটোয়ারী), মঙ্গল কাব্যে নিম্নবর্গের অবস্থান (নুরুল আমিন বিশ্বাস), নজরুল মানসে রাধাকৃষ্ণ প্রেম প্রসঙ্গ ( রাতুল গোস্বামী), চৈতন্য উত্তর যুগে বাংলার বৈষ্ণব সমাজে ধর্ম ও পাটবাড়ি (অমিত মণ্ডল), আজও খুঁজি হিমুকে ( ড. আমিনা খাতুন), ধর্মমঙ্গল: আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সমীকরণ ( ড. বিপুল মণ্ডল ) প্রভৃতি। দুটো গ্রন্থ সমালোচনা: রোকেয়া মূল্যায়নে প্রাসঙ্গিক ভাবনা (ড. আফরোজা খাতুন) এবং ড. আম্বেদকর এবং রাহুল সাংকৃত্যায়নের দৃষ্টিতে ভারতবর্ষের সামাজিক ন্যায়বিচার ( সুপ্রিয়া বিশ্বাস)। আপনাদের মামুলি পাঠক অর্থাৎ আমার একটি নিবন্ধ ' উপদল বৃত্তান্ত : প্রসঙ্গ মুসলমান সমাজ' এতে স্থান পেয়েছে।
'উদার আকাশ' পত্রিকার এই বিশেষ সংখ্যাটিতে কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, বিশেষ রচনা, রাজনীতি, কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণা, গ্রন্থ-সমালোচনা, স্মরণ, বিশ্বসাহিত্য, নাট্য-পরিচয়, চৈতন্যচর্চা, উর্দু উপন্যাস নিয়ে আলোচনাসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।
সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, এপার বাংলা ও ওপার বাংলার মানুষের মিলন প্রয়াসে বিগত ১৬ বছর নিয়মিত 'উদার আকাশ' পত্রিকাটি তিনি প্রকাশ করছেন। পাঠক সমাজকে সমৃদ্ধ করতে তিনি এই প্রয়াস নিয়েছেন।
এই সংখ্যায় দুই বাংলার পাঠক দরবারে দাগ কাটতে উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যায় কলম ধরেছেন মণিমালা বাগানী, দেবাশিস বিশ্বাস, পম্পা শীল, অনিকেত মহাপাত্র, হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশান্ত কুমার ঘোষ, প্রমথনাথ সিংহ রায়, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, ওয়ালে মহাম্মদ, শুভাশিষ গায়েন, নূপুর কাজী, রফিকুল হাসান, অশোক কুমার দত্ত, কবিরুল ইসলাম কঙ্ক, রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়, জাকির হোসেন স্মৃতিজিৎ, সুব্রতা ঘোষ রায়, প্রবীর ঘোষ রায়, গোলাম রাশিদ, বাসুদেব দাস, লালমিয়া মোল্লা, শিবনাথ রায়, মোনালিসা রেহমান, নুরুল আমিন বিশ্বাস, ড. ইছামুদ্দিন সরকার, ড. সুমিতা চট্টোপাধ্যায়, রুবিয়া খাতুন, ফারুক আহমেদ ও মৌসুমী বিশ্বাস সহ আরও অনেকের লেখায় সমৃদ্ধ এবারের সংখ্যাটি। সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে দারুণ প্রচ্ছদ উপহার দিয়েছেন সারফুদ্দিন আহমেদ।
উদার আকাশ পত্রিকাটি কলেজ স্ট্রিটে পাতিরাম, দে'জ, ধ্যানবিন্দু, মল্লিক ব্রাদার্স ও অভিযান পাবলিশার্সে পাওয়া যাবে।

সম্পাদক : ফারুক আহমেদ
মূল্য: ৫০/-
কথা:  7003821298

অর্ণব মণ্ডল

ফানুস উড়ানোর ইতিহাস খুঁজে

তুমি জীবন দেখো নি.....!
দেখেছো-
ফানুস ওড়ানো সমারোহ,
পূর্ণিমার নিষ্ক্রিয় দূষণ
ক্যামেরা বন্দি আতস বাজীর উচ্ছাস
অ্যালকোহলের বিসার্জন!

ছুঁয়েছ-
ব্যাস্ত কি-বোর্ড
কামনার শীৎকার,
গুপ্ত কোনো নিরোধক রক্তের দাগ,
কাটাছেঁড়া মুক্তি!

বুঝেছ কি-
কেন ঈশ্বর?
কেন মহাভিনিষ্ক্রমণ?
কেন ফানুস?

শিখেছ-
অবৈধ আবদার
নীল তিমির আঁচড়,
বিস্তৃত সুখে 'চাহিদা'
মূল্যহীন প্রতিকার!

যদি বুঝে জানতে চাও জীবন...
শেখো তবে সাহিত্যের দর্পণে
'নিমিত্ত আধুনিকতা'

ফানুস উড়ানোর ইতিহাস খুঁজে ।



গোপাল বাইন

সমুদ্রে হাঙর ছাড়া আর কিছু নেই 

হাঙর শুশুকের মত নয় , মানুষের সাথে কিংবা
জলচর অন্য প্রাণীদের তার কোন
নিবিড় হার্দিক সম্পর্ক আজও গড়ে ওঠেনি l
হাঙর ধারাল দাঁতে নৃঃসংশতা আর পেটের
আগুনখিদে নিয়ে জীবন যাপন করে

হাঙরের খিদে আর নৃঃসংশতার বলি যারা হয়
তারা জানে সমুদ্রে হাঙর ছাড়া আর কিছু নেই

সাজিদা ইসলাম

কলকাতার প্রতি 

কলকাতা,তুমি কি এই সেই কলকাতা
হয়তো যাকে আমি মনের গভীর থেকে দেখতে চেয়েছি,
জানতে চেয়েছি,উপলব্ধি করতে চেয়েছি,আসলে তুমি কি?
কেন তোমার এত মহিমা,এত গৌরব?

রাতের আঁধারে তুমি জোনাকির আলো,ঝি ঝি পোকার গান
দিনের আলোয় তুমি সোনালী রোদ্দুর,ব্যস্ত গানের সুর
প্রতিটি মুহূর্তে আলো ছড়াও ফুলকি হয়ে ।

তুমি হয়তো অনেক কিছু দিয়েছো  কিন্তু পারোনি দিতে
সেই মহিমা যেখানে বসন্তের সকালে শোনা যায় কোকিলের গান
শোনা যায় বাতাসের মর্মর শব্দ, গাছেদের অব্যক্ত কথা ...

ফিরোজ আলি (আবির )

রঙ

কার আলোয়
বুক মেলা তোর,
খেলিস, কার চোখে ফাঁকি...
আলোর আলো কত আওয়াজ দিলো
তবু,তোর অন্ধকারেই থাকি...।।

শীলা বিশ্বাস

প্রেরণা 

ঠিক  আঁকড়ে  ধরা নয়
ঠিক  সরিয়ে  ফেলাও নয়              
মধ্যিখানে রয়ে  যাওয়া সম্পর্ককে
তোমরা  কি নামে ডাকো?

 বন্ধু  অথবা প্রেমিক
 এই দুই সম্পর্কের মাঝে
 হাইফেন হয়ে  ঝুলে থাকা
বন্ধুর  মত প্রেমিক
অথবা প্রেমিকের  মত বন্ধুকে
আমি প্রেরণা  বলে ডাকি ।

মীর রাকেশ রৌশান

হৃদয়সুরের ডাক 

জীবনের জৈবরস ফেলে এসেছি নিরোর বেহালায়।
ছুঁয়ে দেখো তোমার মধ্যে সুর বেঁচে আছে কি না।
সুর অন্তহীন পথ।

সঞ্চিতা দাস

অনিয়ম

কয়েক মুঠো নম্র বায়ুমণ্ডল টলতে টলতে চামচে এসে গেছে বলেই
কোমল নদী ডানা মেলে না,
কাছে এসে
অনিয়ম করে ফের দূরে যাওয়ার খেলায় মেতে ওঠে
চিরপরিচিত হয়েও ছদ্মবেশে আর কতদিন জলপটি দিতে পারে কেউ ..
তবে থাকল না
সেই বারান্দার ছায়াচোখ।

ইশারার লালচে কাচে লবণহ্রদের বাঁকে
মাতোয়ারা সুর সভ্যতার গোল মুখে
আলতো আদর দেখে নাম রাখে-
 স্বপ্নের চশমা ।
এছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

স্ক্রিনে ভেসে ওঠে
কত অনুতপ্ত ভোর
না বলা অনেক কালের কথায়
 শুভেচ্ছার গন্ধ বসতেই একঝাঁক বৃষ্টি এলো! বৃষ্টি আসে!

শুভ্র ব্যানার্জী

প্রবাসী 

যে ঘর ছেড়েছে সেকি চেনে আসমান?
প্রবাসী নদীতে অবগাহনের স্মৃতি
নিকানো উঠোন, পুরনো মশারি, বাগান
ভুলে যায় গান,একান্ন সম্প্রীতি?

চেনা পথ লেখে  অচেনা গ্রহের সন্ধান
 স্বপ্ন-উড়ালে বিরহ ক্ষণস্থায়ী
ডেকে নেয় পথ  বাতাসে মিশলে  সন্ধা
সফল পাখীরা শততই পরিযায়ী!