০৯ ডিসেম্বর ২০২১

কবি ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায় এর গুচ্ছ কবিতা







ছবি 
     

যখন ঠিক সন্ধ্যে হয়ে আসে 
যখন শেষ বেলার গোধূলির রং রাঙিয়ে দিয়ে আকাশ বলে,
"দ্যাখ.. আজ তোর প্রিয় রঙে সেজেছি",
যখন ক্লান্ত পাখিরা ফিরে আসে নীড়ের টানে -
তখন কেন কান্না পায় জানিনা
তখন বড়ো মন কেমন করে।
আচ্ছা... মন কেমনের রঙ কেমন হয় বলতো..?
কালো, ধুসর না বাদামি?
নাকি অন্য কিছু..!
আমাকে একটা মন কেমনের ছবি এঁকে দিবি? 

             


  ভালোবাসা 
    

ভালোবাসা গন্ধ-রুমাল বুকের খাঁজে রাখা
ভালোবাসা বেলের কুঁড়ি পাতার ঘোমটা ঢাকা।
ভালোবাসা হারিয়ে আবার নতুন করে পাওয়া
ভালোবাসা মন-কেমনের গল্পে ডুবে যাওয়া। 

ভালোবাসা স্বপ্ন-উড়ান বৃষ্টি-মাখা ভোরে
ভালোবাসা আঁকড়ে ধরা উথালপাথাল ঝড়ে।  
ভালোবাসা আদর-গভীর অনুভূতির ভাষা
ভালোবাসা কষ্ট পেয়ে চোখের জলে ভাসা। 

ভালোবাসা গলার কাছে আটকে থাকা ব্যথা
ভালোবাসা কাজল-চোখের নিঃশব্দের কথা।
ভালোবাসা বিষম জ্বরে মায়ের শীতল হাত
ভালোবাসা আকূল আবেগ জীবনভরা সাথ। 

                   

                  
  তুমি ছুঁয়ে দিলে ...
           

তুমি ছুঁয়ে দিলে আগুন হয়ে যাই,
ইচ্ছে করে, যা কিছু খারাপ সব পুড়িয়ে ছাই করে দিই।
সমাজের দুর্গন্ধময় ক্লেদ, অবজ্ঞা, অবহেলা, 
ষড়যন্ত্র, পাপ, অবিচার - সবকিছু।
ডানা মেলি ফিনিক্স পাখির মতো দিগন্তরেখায়। 

তুমি ছুঁয়ে দিলে প্লাবন হয়ে যাই,
এলোমেলো ঘুর্নিঝড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাই সবকিছু।
ব্জ্রমেঘের অশনিসঙ্কেত হয়ে গর্জে উঠি 
আশঙ্কায় ভয়ে ত্রস্ত হয়ে থাকে জগৎ-সংসার।
বিধ্বংসী ঝড়ের শেষে নতুন করে প্রাণ পায় প্রকৃতি। 

এবার যদি আর একবার তুমি ছুঁয়ে দাও-
সত্যি বলছি, এবার ছুঁয়ে দিলে ভালোবাসা হয়ে যাবো। 

                          


 হারিয়ে যাওয়া আমি  


আমার মন-কেমন শহরের দেওয়ালে 
পড়েছে তোমার নিখোঁজের পোস্টার
বুকে সাঁটা পেরেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে 
সেই বটগাছ.. দুহাত উপরে তুলে।
হঠাৎ ঝড়ের দমকা হাওয়ায় নিবে গেছে সব আলো..
তাতে কী..? 
আজকাল আলো নিবে গেলে জ্বেলে দিই মন।
জ্বলতে জ্বলতেই মনটা কেমন আলো হয়ে যায়। 

আগুনে পুড়েছো কখনো..? 
তুঁষের আগুনের ধিকিধিকি আঁচে ঝলসানো মন 
ছুঁয়ে দেখেছো কখনো..?
হয়তো দেখেছো। তাই বোধহয় এই চেনা পোড়া গন্ধ 
ছুঁয়ে গেছে তোমাকে বারবার।
উথালপাথাল বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেছে রং মাখা মুখ
সে মুখ এখন বিবর্ণ সুন্দর -  চাঁদের আলোর মতো
জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতার আভা আমার ভালোবাসায়।
যদি আমি হারিয়ে যাই কোনো দিন ঝরা 
গোলাপের পাপড়ির সাথে বৃষ্টি ধারার স্রোতে
আমাকে খুঁজে নিও এই জ্যোৎস্নার বিবর্ণ আলোতে
তোমারই শরীরের ঘ্রাণে তোমারই প্রশ্বাসের টানে
হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখো বুকে 
আমি আছি জড়িয়ে তোমাকে। 

মমতা রায়চৌধুরী ৬৪





টানাপোড়েন ৬৪
মন কাড়া উৎসব


                                                        জীবন নদী পারাপারে কত বাধা-বিপত্তি সংগ্রাম ,টানাপোড়েন এ তো চলতেই থাকে। জীবনটাই যেন যুদ্ধক্ষেত্র। তবুও মানুষ এসব ভুলে গিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে।রেখার ভাবনায় আলোড়ন তোলে রেখার জা।
সাতসকালে রেখার জা রীতা হঠাৎই চিৎকার"আরে বাবা গুরুদেব আসবেন ।আর সিঁড়ির অবস্থা যদি এরকম থাকে। '
রেখা জানলাগুলো বন্ধ করে দিতে লাগলো।
মনোজ অবাক হয়ে বলল''জানলা বন্ধ করছো কেন?'
রেখা বলল' যাতে কোনো চিৎকার কানে না আসে?'
মনোজ বলল' এটা তো নিত্যকালের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের ঝামেলাটা কে করছে জেঠিমা ?নাকি তার ছেলের বউ?'
রেখা বলল 'তোমার সাধের বৌদি ভাই।''
মনোজ বলল 'এতে কি লাভ আছে বলো তো? কে যে ক'দিন থাকে পৃথিবীতে ?তার আবার লড়াই?'
রেখা বলল' যাই দেখে আসি কেন চিৎকার করছে?'
রেখা মনোজকে বলল 'গরম জলের ভ্যাপারটা নেবে?'
মনোজ বলল 'না আগে তুমি দেখে এসো ।'
রেখা বললো 'তাহলে এসে দেবো কেমন?'
মনোজ একটু হাসলো। রেখা বেরিয়ে গেল। রেখা মিলিদের ওখানে গিয়ে দেখল দুটো বাচ্চা সিঁড়ির কাছে বসে আছে। আর তা নিয়েই সমস্যা।
তুলি ,লিলিকে কোলে করে আবার তাদের সঠিক জায়গায় এনে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
ওপর থেকে রেখার জা সব দেখতে লাগলো।
রেখা কথা না বাড়িয়ে মনোজ যে ঘরে সেই দিকে চলে আসলো। 
মনোজ  বললে' :কি গো কি হয়েছে?'
রেখা বলল 'কি আর হবে আসলে ওদের পায়ে পা  দিয়ে ঝগড়া না করলে দিনটা ভালো যায় না।'
মনোজ বলল 'রেখা এসো' বসো আমার পাশে।'
রেখা ভালো করে হাত ধুয়ে এসে  বসলো।
মনোজ বলল 'তোমাদের গ্রামের পুজোর ছবি দেখলাম সংবাদপত্রে।"
মনোজ বলল 'কেমন কাটালে?'
রেখা বললো' খুব ভালো।'
মনোজ  বলল 'আমি অবশ্য এর আগেও গল্প শুনেছি।তোমাদের ওখানে পুজোর গল্প করো একটু শুনি।
রেখা বলল 'ছোটবেলার সেই সোনালী দিনগুলোর গল্প তো তোমার কাছে করেছি। পূজাতে ওখানে যাই নি । তবুও সেখানকার আন্তরিক মনোভাব সত্যি নজর কাড়ে।'
রেখা বলল 'শুধু তাই নয় গো ।এবার নাকি পুজোর থিম ছিল ।নানারকম বিষয়। সেখানে নাকি নারীর মুক্তি বিষয়টাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।'
মনোজ বলল-হ্যাঁ ,পেপারেও সেটা দিয়েছিল।'
রেখা বললো  'জানো তো। আমরা সব সময় শহরের পুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকি ।কিন্তু গ্রামের পুজো কমিটির উদ্যোগে কত সুন্দর করে বিষয়গুলো ভাবতে পারে ,তা আমাদের গ্রামে না গেলে কেউ বুঝতেই পারবে না।'
মনোজ বললো 'আর কি কি ছিলো গো ভাবনায়?'
রেখা বলল 'প্রতি বছর পুজোর দিনগুলোতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে প্রসাদ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা হয় । এবছরও সে বিষয়টা ছিল।তাছাড়া... ছিল। তাছাড়া আর কয়েকটি অভিনব চিন্তা?'
মনোজ বলল- "কি ?'
রেখা বলল 'যেমন নারীমুক্তির বিষয়টাকে দেখানো হয়েছে  ।তেমনি তাদের থিমে ছিল 'মন মেলুক পাখনা ,মেঘ,তারা ,ফুল ,পাখি ,প্রজাপতির অপরূপ সৌন্দর্য আর আলো-আঁধারিকে তুলে ধরা হয়েছিল যেন একটা পরীদের দেশ।'
মনোজ অবাক হয়ে বলল 'তার মানে বলতে চাইছো শিশুদের জন্য মণ্ডপের থিম ভাবনা অনেকেই করে না তাই তো?'
রেখা বলল' একদমই তাই। এখানে শিশুদের উপযোগী করে এক আলাদা যেমন পরীদের দেশ যে ভাবনাটা গড়ে তুলেছে ,তেমনি ছিল কিছু চেনা কার্টুন ।শিশুদের জন্য আনন্দ দিতে।'
মনোজ বলল 'দারুন ভাবনা।'
রেখা একটু উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল 'জানো তো ,এখানে বাংলার শিল্পটাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল?'
মনোজ অবাক হয়ে বলল 'বল কি গো?'
রেখা বলল ' তাহলে আর কি বলছি?'
মনোজ বলল' কিরকম 'কিরকম ।রেখার লাল টুকটুকে গাল যেন আহ্লাদে আরো সুন্দর হয়ে উঠলো ।'তারপর খুব প্রফুল্ল চিত্তে বলল বাংলার কুটির শিল্প ঝুড়ি, কুলো, ধামা ,লক্ষ্মীর ঝাঁপি ইত্যাদি দিয়ে বাংলার শিল্পকে তুলে ধরা হয়েছিল।'
মনোজ বলল 'কিন্তু তোমাদের গ্রামের পুজোতে শুনেছি যে সাবেকিয়ানাটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।'
রেখা বলল' 'ঠিকই শুনেছো ।ওখানে যে একচালা ছিল তাতে ডাকের সাজে প্রতিমা করা হয়েছে।'
মনোজ বলল'ভোগের ব্যাপারটা কি রকম ছিল?'
রেখা বলল :'কোনদিন অন্নভোগ,কোনদিন খিচুড়ি ,কোনদিন পুষ্পান্ন ,বিভিন্ন রকমের ভাজা।'
মনোজ বলল 'কিন্তু তোমাদের নবমী ?নবমীতে তো অন্যরকম ভোগ দেয়া হয়? '
রেখা বলল ' হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি ।প্রথমে নবমীতে দেবীকে অন্নভোগ দেয়া হয়। তার সাথে কচুর শাক আর বিভিন্ন পিঠা ভোগ নিবেদন করা হয়।'
মনোজ বলল 'তাহলে তো বেশ পিঠে খাওয়ার আনন্দটাও  তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যায়।'
রেখা বলল' আর একটা মজার জিনিস কি হয়েছে জানো ?এবার নাকি বিভিন্ন শহর থেকেও মানুষ এই থিমের পুজো দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিল।'
মনোজ বলল 'তাই?'
রেখা একটু মন খারাপের সুরে বলল শুধু আমরাই যাই না।
মনোজ বলল-'আচ্ছা আগামীবার যাব কেমন।'
রেখা বলল 'কথা দিলে।'
মনোজ বলল 'পাক্কা। যদি এই পৃথিবীর রূপ -রস -গন্ধের আসাদ নিতে পারি।'
রেখা বলল' ভালো লাগে না ছাই। যত সব অলক্ষনে কথা।'
মনোজ বলল'রাগ করছো কেন ?আমি তো এমনি বললাম।'
রেখা বলল' খবরদার ,তুমি আর এই ধরনের কথা বলবে না।'
রেখার মনটা কিছুক্ষণের জন্য একটু যন্ত্রণা ও ব্যথাতুর হয়ে উঠলো।
রেখার কাছে এসে মনোজ বললো 'রাগ ক'রো না রেখা।' মনোজ ও  কেমন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল।
রেখা মনোজের মনটাকে অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য বলল 'জানো তো ,এবার আমাদের গ্রামের এই পুজো কমিটি 'বিশ্ববাংলা শারদ  সম্মান' পেয়েছে।'
মনোজবললো-এইসব পুরস্কার পেলে কাজের প্রতি নিষ্ঠা ,ভালোবাসা ,অনুরাগ জন্মায়।'
রেখা বলল' আর একটা কথা বলা হয় নি। জানো তো?
মনোজ বললো 'কি?'
রেখা বলল 'বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে সচেতন করতে একটা থিম ভাবনা করেছিল?'
মনোজ বলল 'বাহ' একটা সচেতনতামূলক বার্তা সমাজের স্তরে পৌঁছে দেবার চেষ্টা। মহতী ভাবনা।'
এরমধ্যে মনোজের ফোন বেজে উঠলো।
রেখা বলল' কে ফোন করছে?'
মনোজ একটু মনে মনে ভয় পেতে লাগলো আবার কি তিথি ফোন করেছে? উফ্ ফ, আর পারা যাচ্ছে না।
রেখা বললো ' কি?'
মনোজ বলল' দেখ তো ফোনটা কে করেছে?'
রেখা একটু অবাক হয়ে বলল 'তোমার ফোন আমি ধরবো ?আমি তোমাকে ফোনটা দিচ্ছি।'
মনোজ বললো 'কি বলো না রেখা ।আমার ফোন তুমি ধরবে না তো, কে ধরবে?'
রেখা আমতা আমতা করে বললো' না মানে...।
মনোজ বললো 'বুঝেছি তুমি সেই দিনের' ব্যাপারটা আজও মনের মধ্যে পুষে রেখেছে না?'
রেখা বলল' আচ্ছা দাঁড়াও দিচ্ছি ফোনটা?'
দু তিনবার মিসকল হয়ে গেল।
এবার রিং হতেই রেখা  ফোনটা মনোজের কাছে দিল।
মনোজ একটু বিরক্তিভরে বলল 'হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে কন্ঠ ভেসে আসলঃ কিরে কি খবর?
মনোজ বলল 'ভালো আছি। তুই কেমন আছিস ব্যাটা?'
সুরঞ্জন বলল আমি তো ভালো আছি কিন্তু তোর কোন খোঁজ খবর পাচ্ছি না ,ফোন পাচ্ছি না এই জন্য আজকে ফোনটা করলাম।'
মনোজ বললো' ও তাই ?তা তুই কবার ফোন করেছিস?'
সুরঞ্জন বলল 'আচ্ছা ,আমি যদি না করে থাকি, তাহলে তুই করলি না কেন ?আজকে তো আমি ফোনটা করলাম।'
মনোজ বলল 'দেখতেই পাচ্ছি। বৌদি কেমন আছে রে ?শিখা, বৃষ্টি, ওরা সবাই ভালো তো?'
সুরঞ্জন বলে 'সবাই ভালো আছে। রেখা কেমন আছে রে?'
মনোজ বলল 'ওই আছে একরকম।'
সুরঞ্জন বলল 'কেন এরকম বলছিস?  রেখাকে ফোনটা দে তো ।ওর বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে।
মনোজ অবাক হয়ে বলল ' কার বিরুদ্ধে,?'
সুরঞ্জন বলল' কে আবার তোর সহধর্মিনী।'
মনোজ অবাক হয়ে বলল 'ও আবার কি করেছে?'
সুরঞ্জন বলল 'ওর লেখা আমরা পাচ্ছি না ।কি করছে?'
মনোজ হো হো করে হেসে উঠলো।
মনোজের এই প্রাণখোলা হাসিটা একটু নিশ্চিন্ত বোধ করে। সুরো, ওদের সঙ্গে ফোনে কথা বলাতে দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব তো কতটা ভালো তা প্রমাণ করে।
এরমধ্যে আবার বাইরে  চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
মনোজ একটু দৃঢ়ভাবে বলল রেখা দিকে তাকিয়ে 'দেখ তো বাইরে কি হচ্ছে?'
রেখা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে দেখল?
সুরঞ্জন বলল'চুপ করে গেলি কিছু হয়েছে?'
মনোজ বলল 'ও একটু ব্যস্ত ছিল। এখানেও ছিল না ।নিজের বাড়িতে গেছিল।'
সুরঞ্জন বলল' ও তাই?'তোরা দুজনে কি করছিলি?'
মনোজ বলল-'ওর গ্রামের পূজোর গল্প শুনছিলাম।'
সুরঞ্জন বলল 'হ্যাঁ ,এবার পেপারে ওদের গ্রামের পূজা নাম বেরিয়েছে।'
মনোজ বলল' গ্রামীণ ঐতিহ্যটাই অন্যরকম।'
সুরঞ্জন বলল' এ বিষয়ে সহমত পোষণ করি।'
মনোজ বলল'জানিস শুরু এবার নিজের বাড়িতে গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গেছিল। নেহাত আমার..?
সুরঞ্জন বলল 'সে কিরে ?তোর আবার কি হয়েছে ?সত্যি কথা বল তো?'
মনোজ একটা মেসেজ ফরওয়ার্ড করল সুরঞ্জন কে।
তারপর বলল 'তোর মেসেজটা চেক কর বুঝতে পারবি?'
সুরঞ্জন মেসেজটা খুলে দেখে'Manoj your covid-19 test result was positive.....
সুরঞ্জন বলল 'ভয় পাবার কিছু নেই।' ডাক্তার যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবে চল।'
এরমধ্যে রেখা এসে তাড়া  দিলো' ভ্যাপারটা নাও।'
সুরঞ্জন বলল 'ঠিক আছে ।এখন রেখা যা করতে বলছে ,তাই কর। পরে আমি আবার খবর নেব ।ভালো থাকিস বন্ধু। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ।ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি।'

শান্তা কামালী ৩৫ পর্ব





বনফুল 
৩৫ পর্ব
শান্তা কামালী


জুঁই য়ের শরীর টা ভালো যাচ্ছে না কয়েক দিন ধরে। দুদিন বাড়ি থেকে একদম বের হয়নি।পলাশ বাড়িতে এসে খবর নিয়েছে। 
সেদিন সকালে হঠাৎ জুঁই য়ের ফোন পলাশ কে।তখন সকাল মাত্র ছয়টা বাজে।
এ সময় তো জুঁই ঘুম থেকে ওঠে না!  পলাশের মনে কু ডাকে।
ফোন তুলে গুড মর্নিং বলতেই, ওপাশ থেকে কান্না ভেজা গলায় জুঁই বলে উঠলো, তুমি একবার শীঘ্রি এসো, উউহ কি ব্যথা..... 
কি হয়েছে জুঁই?  বলো....
পলাশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। 
সুইট হার্ট,আমি পড়ে গেছি,হাতে খুব লেগেছে কাঁধের কাছে যন্ত্রণা হচ্ছে, আমি কি করবো জানি না.... 
একটু অপেক্ষা করো,আমি এক্ষুনি আসছি, এই বলেই পলাশ দ্রুত তৈরি হয়ে জুঁইদের বাড়িতে পৌঁছে যায়।
গিয়ে দেখে জুঁই য়ের বাবা মা ডাক্তার ডেকে এনেছেন। সবাই ঘরে উপস্থিত। জুঁই তখন ডাক্তারবাবু কে বলছে, ঘুম থেকে উঠে ওয়াস রুমে যাবো, এমন সময় মাথা টা একটু কেমন চক্কর দিলো, পড়ে যেতে গিয়ে কিছু ধরবো বলে হাত টা বাড়িয়েছি,অমনি  পা টা হড়কে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়লাম বিছানা ঘেঁষে একদম  মাটিতে। খাটের সাইডে কাঁধ টা লাগলো খুব জোরে। আর ডান হাতটা মাটিতে।এখন দুটো কাঁধেই খুব ব্যথা করছে,আর ডান হাতের কনুই তেও খুবই.... 
ডাক্তার সব দেখে বললেন,সম্ভবত স্পন্ডালাইটিস থেকে এটা হয়েছে। আপাতত এক থেকে দেড় মাস বাইরে বেরবেন না।ঘরে সকালে বিকালে তিরিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট করে ট্র‍্যাক্সানের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর ঘাড়ের দুটো  এক্স-রে করে দেখে নিয়ে বলা যাবে কলার বেল্ট পড়তে হবে  কি-না। আর ওষুধ লিখে দিচ্ছি,ব্যথা টা কমে যাবে। ডাক্তার বাবু প্রেসক্রিপশন লিখে জুঁই য়ের বাবা-র হাতে দিয়ে বললেন, আমি একজন অর্থপেডিক টেকনিশিয়ান কে পাঠিয়ে দেবো দশটার মধ্যে সে এসে সব ব্যাবস্থা করে দিয়ে যাবে।এই বিছানা তেই কয়েকটা সিস্টেম লাগিয়ে দেবে। আর যদি আপনারা নিজেরা দেখে নিয়ে দু'বেলা ট্রাকশান খোলা পড়া করতে পারেন তবে আর ওকে দু'বেলা এসে করে দিতে হবে না। নাহলে ওর জন্য দু'বেলার ফিজ দিতে হবে। ও নিজেই সময় মতো এসে করে দেবে। 
ডাক্তার উঠে দাঁড়িয়ে বেরতে যাবেন,এমন সময় তাঁর চোখ পড়লো পলাশের দিকে। জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? 
জুঁই য়ের আব্বু বললেন, পুত্রসম। 
ডাক্তার কি বুঝলেন কে জানে,উনি বললেন ইনি যদি একবার দেখে নেন,তবে ইনি নিজেই বিষয়  টা বুঝে নিয়ে করতে পারবেন। এ্যাটেন্ডেন্ট রাখতে হবে না। 
ডাক্তার বাবু তার ফিজ নিয়ে চলে গেলেন।
মনোয়ারা বেগম পলাশ কে বললেন, বাবা, তুমি এখানেই একটু বসো,আমি নাস্তা তৈরী করে পাঠিয়ে দিচ্ছি,দু'জনে খেয়ে নেবে।এই বলে জুঁই য়ের আব্বু আর আম্মু নিচে চলে গেলেন।
পলাশ জুঁই য়ের পাশে গিয়ে বসলো।

চলবে....

জাবেদ আহমেদ





মায়া


লিখবো কি পদ্য কবিতা 
চুল তোমার বাহ্,
ঐ মুক্তা চোখ তোমার
চোখ নয় যেন উপন্যাস,
ঐ ঠোঁট ঐ রুপ যেন
বৃন্দাবন, 
মন চাই হতে কানায়
দিবানিশি বঁশি বাজায়,

অনামিকা সুহাসিনী 
ভাষা এখনো শোনিনী
মনে হয় সুভাষিণী 
সাহিত্য মনার হৃদ মাঝারে
থাকো তুমি
উপন্যাসের পান্ডুলিপি তুমি
তুমি কবিতার শব্দ, 
তুমি অনন্যা তুমি কবির
প্রেরণা তোমার স্বপ্নে 
কবি লিখে সহস্র কবিতা।

শামরুজ জবা





স্বাধীনতা তুমি


স্বাধীনতা তুমি,
বীর বাঙ্গালীর কাঙ্ক্ষিত ফসল,
শরতের জোছনা ভরা রাতে আলোর ঝলমল। 
স্বাধীনতা তুমি,
বীরাঙ্গনা মা- বোনের ইজ্জ্বতের আবরণ,
বঙ্গজননীর  মায়াভরা আবেগি দৃষ্টির চাহুনি ছলছল।

স্বাধীনতা তুমি, 
লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত লালসূর্য, 
লড়াকু বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের রণতূর্য। 
স্বাধীনতা তুমি, 
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির প্রতীক, 
শত্রু হননে, মুক্তি পাগল বাঙালির বীর গাম্ভীর্য। 

স্বাধীনতা তুমি,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ লালিত দেশ গড়া স্বপ্ন, 
বেদনাহত বাংলা মায়ের মুখে  বিজয়ী দীর্ঘশ্বাস।
স্বাধীনতা তুমি,
মুক্তিসেনার বিজয়ের আনন্দ উল্লাস,
অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস। 

স্বাধীনতা তুমি, 
গাঢ় সবুজের মাঝে লালবৃত্ত খচিত পতাকা,
বাংলার রক্তিম সীমারেখা - বিশ্ব মানচিত্রে আঁকা।
স্বাধীনতা তুমি 
ষোড়শী কন্যার কৌশলী বীরাঙ্গনায়, 
নিজেকে মেলেধরা,
শত্রু কপোকাতে হাসির লাল ঠুঁট বাঁকা।

স্বাধীনতা তুমি 
অথৈজলে নববধূর অবাধ সাঁতার, 
পড়ন্ত বিকেলে কুটিরে বসে,
উদাস মনে গুণগুণ গান।
স্বাধীনতা তুমি 
আবাল-বৃদ্ধের বাঁচার সমঅধিকার,
দেশ শাসনে আলোচনা- সমালোচনা,
গণতান্ত্র প্রতিষ্ঠায় কথা বলা মুক্ত প্রাণ।

মোঃ হা‌বিবুর রহমান / ৩য়





ইউএন মিশ‌নে হাই‌তি‌তে গমন
৩য় পর্ব
মোঃ হা‌বিবুর রহমান



                                             মার্কিনীরা যে প্র‌ক্রিয়াজাত খাবার প্যা‌কেট ক‌'রে রাখে তা অবশ্য অ‌নেক‌দিন ধ‌'রেই খাওয়া যায়। এটা‌কে ব‌লে এমআরই (MRE অর্থাৎ 'Meal Ready to Eat'). এমআরই খাওয়ার বিড়ম্বনা হ'ল যে, দু'-‌তিন রক‌মের এমআরই এর ম‌ধ্যে কোনোটা‌ শুধুমাত্র বিফ কিংবা বা গরুর মাংশ আবার কে‌ানোটা‌তে পুরোটাই পর্ক বা শুক‌রের মাংশ মেশা‌নো আবার কোনো-কোনোটা‌তে বি‌ভিন্ন রক‌মের মিশ্রণও আ‌ছে। তাই ম‌নে প্রগাঢ় বিশ্বাস নি‌য়েই খে‌তে হ‌বে। অ‌নে‌কেই ব‌লে "বিশ্ব‌াসে মেলায় বস্তু ত‌র্কে বহুদূর"। সবই ঠিক আ‌ছে কিন্তু খাওয়াদাওয়ার উপর আমার বিশ্বাস বেশ আ‌গের থে‌কেই কম। 

একবার শ‌ুনে‌ছিলাম ঢাকার কে‌ান এক হো‌টে‌লে না‌কি কাষ্টমার‌দের‌কে কুকু‌রের মাংশ দি‌য়ে আপ্যায়ণ করা হ'য়ে‌ছি‌লো। তাছাড়া, ফা‌র্মের মুরগী দে‌শে আসার পর মরা মুরগী সমা‌ধিস্হ না ক‌'রেই সৃ‌ষ্টির সেরা জীব মনুষ্যজা‌তি‌কে আপ্যায়ণ হা‌রের আ‌ধিক্য‌টি না‌কি বহুলাং‌শে বে‌ড়ে গেছে। এটাই না‌কি আমা‌দের বাংলা‌দে‌শের রী‌তি হ‌'য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে‌ছে। এরা ‌নি‌জেরা ঠিকই জী‌বিত খায় আর মরাটা অন্য‌ে‌কে খাওয়ায়। বি‌চিত্র বাঙালী। আমরা বী‌রের জা‌তি এটা অবশ্যই ঠিক আ‌ছে কিন্তু মা‌ঝে-মাঝেই নিয়ম-নী‌তির এ‌কেবা‌রেই ‌যেন থোড়ায় ‌তোয়াক্কা ক‌'রে থা‌কি। হয়তবা দে‌শের প্র‌তি এ‌দের মায়া তথা দেশপ্রী‌তি এত বেশী যে এরা খামাখা দেশ‌কে ল‌সের ভিতর ফেল‌তে চায়না তাই বু‌ঝি মরা ম‌ুরগীর মায়া এরা ‌ঠিক সামলা‌তেও পা‌রেনা। 

যাক, আল্লাহপাক আমা‌দেরকে স‌ঠিক দীক্ষা দিন। এসব কথা আপাতত থাক। চলুন আবার অন্তরীক্ষ থে‌কে ঘু‌রে আ‌সি। পেট চো চো থে‌কে এবার লম্বা সময় ধ‌রে পে‌টে শব্দ ক‌'রে ডাকা শুরু ক‌'রেছে, সোজা বাংলায় ব‌লে পে‌টে পাক দেওয়া শুরু হ‌'য়ে‌ছে আর কি! এবার আর বু‌ঝি র‌ক্ষে নেই। মানু‌ষের বু‌ঝি দুই মন থা‌কে, এ মূহুর্তে আমার আরেক মন ব'ললো "রাখ‌তো তোর এসব গোড়ামী? আ‌গে তোর পেট সামলা", ‌যেন আপনি বাঁচ‌লে বা‌পের নাম আর‌কি!

তাই প্রথ‌মে খা‌বোনা ব‌লে মানা ক‌'রে থাক‌লেও এ অবস্হায় লাজ-লজ্জ্বা-হায়া সব ত্যাগ ক‌'রে আবার ডাকলাম এক আ‌মে‌রিকান সা‌র্জেন্ট‌কে যেন বাংলা‌দেশে যাত্রা প‌থে ঝালমু‌ড়িওয়ালা‌দের ডাকার মত। সা‌র্জেন্ট সা‌হেব হয়ত মুচ‌কি হে‌সে মুখটি চে‌পে ম‌নে ম‌নে ব‌লে‌ছে, "এই বাঙ্গালী, খুব‌তো ব‌'লে‌ছি‌লে অ‌ভিমা‌নের সু‌রে খাবোনা? দাঁড়া! পে‌টের কা‌ছে পৃ‌থিবীর সুবৃহৎ প্রাণী হা‌তি আর তি‌মি মাছও যখন কাবু আর তুই‌তো মাত্র ৫ ফুট ৫ ই‌ঞ্চির একজন অ‌তিকায় ক্ষুদ্র বাঙ্গালী তাও আবার সুশৃঙ্খল বা‌হিনীর একজন সদস্য"।

যাক, পেট ঠান্ডা হ'লো। ঘণ্টা দুই না খে‌লেও চ'ল‌বে কিন্তু বিপ‌ত্তি অন্য জায়গায়। এমআরই‌তে যে প্রিজার‌ভে‌টিভ ব্যবহার করা হ‌'য়ে‌ছে এ গন্ধ‌টা তো এরই ভিতর ম‌ুখে স্হা‌য়িত্ব পে‌য়ে‌ছে যেন চিরস্হায়ী ব‌ন্দোব‌স্তের মত। ভাবলাম, খাওয়ার মজা এক বছ‌রের মত বু‌ঝি শেষ। কোথায় পা‌বো পাবদা, ই‌লিশ, রুই-কাতলা কিংবা শৈল-মাগু‌রের ঝোল? এভা‌বেই একটা সি‌ষ্টেম ক‌'রে নি‌তে হ‌বে আর‌কি! এরই ম‌ধ্যে আরও তিন ঘণ্টা গত হ‌'য়ে‌ছে। আমা‌দের মা‌র্কিণী প‌ঙ্খিরাজ ছু‌টে চ‌'লে‌ছে সাঁয়-সাঁয় ক‌রে যেন প্রশান্ত‌কে নী‌চে সাক্ষী রে‌খে।

সূ‌র্যি মামার হা‌সিটা তখন বেশ বে‌ড়ে‌ছে তাই জানালা দি‌য়ে মহাসাগর দেখার চেষ্টা ক'র‌ছি যেন নীল পা‌নির উপর মা‌ঝে-মা‌ঝেই সেই ডি‌ঙ্গি নৌকাসম কিছ‌ু সমুদ্রযান চ'ল‌ছে কোনোটা আ‌গে আবার কোনোটা প‌রে। ছোট বেলায় প‌'ড়ে‌ছি, পৃ‌থিবীর তিন ভা‌গের দু' ভাগই না‌কি পা‌নি, সৃ‌ষ্টিকর্তা তাই বু‌ঝি সেই সত্যতা আমা‌কে চাক্ষুশ দর্শ‌নে এ‌নে‌ছেন তাঁর সাত মহাসাগ‌রের সব‌চে‌য়ে গভীরত‌মের উপর দি‌য়ে উ‌ড়ে চল‌তে চল‌তে আর ‌যেন সেই মূল্যবান জীবনসম পা‌নির জরীপ কর‌তে কর‌তে। আহা! পৃ‌থিবী‌তে বু‌ঝি ডাঙ্গা বা স্হলভাগ ব'ল‌তে কিছ‌ুই নেই এমন‌টিই ঠিক যেন বার বার ম‌নে হ‌'চ্ছিল। হঠাৎ ক‌রেই আবার বা‌ম্পিং শুরু হ‌'লো। আবার সেই চিরাচ‌রিৎ সিটবেল্ট বাধার হু‌শিয়ারী। 

ঢাকা থে‌কে শুরু করেছিলাম সকাল ১০ টায় কিন্তু এগার ঘণ্টার মত গত হ‌'লেও তখন বা‌জে স্হানীয় সম‌য়ে জোর সকাল সাতটার মত। আমা‌দের আপাতত গন্তব্য হাওয়াই দ্বী‌পের রাজধানী হন‌ুলুলু‌তে। সি‌নিয়াররা বল‌তে লাগ‌লেন এখনও ছয় ঘণ্টার মত বাকী। বুঝ‌তে পারলাম কেন মা‌র্কিনীরা শত মানু‌ষের জা‌নের ঝু‌কি নি‌য়ে ঘণ্টা সা‌তেক আ‌গে তারা আকাশে এক প্লে‌ন থে‌কে অন্য প্লে‌নে জ্বালানী মওজুদ ক‌'রে নি‌য়ে‌ছি‌লো। আস‌লে মা‌র্কিনীরা বড্ডই বু‌দ্ধিমান।

চল‌বে....

রাবেয়া পারভীন/৮ম পর্ব








স্মৃতির জানালায় 
(৮ম পর্ব)
রাবেয়া পারভীন





                                                   মাহতাবের  মাথার মধ্যে শিপলুর কথাটা ঘুরতে লাগলো, " আপাকে দেখতে এসেছে, পছন্দ হলে আপার বিয়ে হবে। "  সে অলস পায়ে দোতলায় উঠে এলো।  শবনমের মামা মামী এসেছেন।  শবনম সম্ভবত  নিজের ঘরে। ওই ঘরে উঁকি দিয়ে  একবার শবনমকে   খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু উচিৎ  হবেনা  ভেবে ইচ্ছেটাকে  দমন করল। সোজা হেঁটে চলে গেল রান্নাঘরের সামনে। ভিতরে শবনমের মা এবং মামী  দুজনেই আছেন। কাজেম থালাবাটি পরিস্কার করে  ধুয়ে খাবার ঘরের টেবিল সাজাচ্ছে। রান্না ঘরের দরজায়  দাঁড়িয়ে মাহতাব ডাক দিল 
- খালাম্মা স্যারর আমাকে পাঠালেন  প্রস্তুতি কতটুকু হলো দেখতে 
মাহতাবকে দেখে এগিয়ে এলেন শবনমের মা বললেন
বাবা মাহতাব তুমি বুঝি এতোক্ষনে এলে ?
-জ্বী খালাম্মা !  
 শবনমের মা কাজেম কে ডেকে বললেন
- কাজেম , মাহ্তাবকে শরবত আর মিস্টি দে, 
বলেই  আবার মাহতাবকে বললেন - 
- তুমি এক কাজ কর, এগুলু খেয়ে  তোমার  স্যারকে জিজ্ঞেস করে এসো  মেহমানদের খাওয়া আগে হবে নাকি মেয়ে দেখা আগে হবে!  
ঘাড় হেলিয়ে কোনরকমে শরবতটা খেল সে, তারপর ছুটল  নীচ তলায়। শবনমের বিয়ে হবে  অন্য কোথায় কে জানে  আর বিয়ের বিভিন্ন  ঝামেলার  কাজও হয়ত  মাহতাবকেই করতে হবে হায়রে কপাল!  বিধাতা না জানি  তাকে কোন  পরীক্ষায় ফেলেছেন । বসার ঘরে ঢোকার আগে লম্বা  করে  দম নিল সে। নিজেই নিজেকে শান্তনা দিল সে। আজকে যা ঘটছে  এটাই তো স্বাভাবিক। শহরের বড় ঘরের  একমাত্র মেয়ে শবনম  তাঁদের সমপর্যায়ের  আরেক ঘরে বিয়ে হবে। সে কোথাকার কোন অখ্যাত  মাহতাব  চাল নেই চুলো নেই,  শবনমকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখাটা  দুঃসাহিকতা  ছাড়া আর কি ?  তা ছাড়া শবনমও তো কখনো  তাঁকে বলেনি  যে,  তোমাকে ভালোবাসী।
বসার ঘরের সমবেত মেহমানদের হাসির  শব্দে চমকে উঠল মাহতাব। ছিঃ ছিঃ  সে এসব হাস্যকর চিন্তা  কেন করছে!  মন থেকে ভারি পাথরটাকে জোর করে সড়িয়ে  দিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করল মাহতাব।
 


চলবে....

শামীমা আহমেদ ২৬







শায়লা শিহাব কথন
অলিখিত শর্ত (পর্ব ২৬)
শামীমা আহমেদ 

ঢাকা এয়ারপোর্ট রোড ক্রস করতেই শিহাবের রাত পৌনে দশটা হয়ে গেলো।
শায়লা অপেক্ষায় আছে ভাবতেই শিহাব বাইকের স্পীড  বাড়িয়ে দিলো। ভাগ্যিস যানজট নেই! শিহাব বাইক দ্রুত চালিয়ে আজমপুর দিয়ে উত্তরায় ঢুকল। একপাশে বাইক থামিয়ে শায়লাকে মেসেজে জানালো আমি আর দশমিনিটের মধ্যেই আসছি! শায়লাদের বাসার রোডটা শিহাবের চেনাই আছে। প্রায়ই কুশল সেন্টারের ওর অফিস থেকে বেরিয়ে সেক্টর সাত দিয়ে  এই পথেই শিহাব নিজের বাসায়  ফেরে। শুধু বাসার নম্বরটা মিলিয়ে নিতে হবে। ফোনে শায়লার সেই কান্না জড়িত কন্ঠ এখনো শিহাবের কানে ভাসছে।আজ শায়লসর সাথে দেখা করে তবেই বাসায় ফিরবে। নয়তো রাতে তার কিছুতেই ঘুম হবে না।। শিহাব আজমপুর রোডে ঢুকে রোড নম্বর মিলিয়ে বাইক ঢুকালো। একে একে বাড়ির নম্বরগুলো দেখে এগুচ্ছে। 

আজ সন্ধ্যাবেলায় শিহাবের ফোনে শায়লা কেন যে এতটা আবেগী হয়ে উঠেছিল! সে কথা ভাবতে এখন লজ্জাই লাগছে।শিহাব কথা দিয়েছে আজ দেখা করে যাবে। এতে শায়লা ভীষণ পুলকিত! আর শিহাব যখন বলেছে তখন সে আসবেই।শায়লার সে আস্থা শিহাবের উপর আছে। কোনদিন কথা দিয়ে কথা রাখেনি তেমনটি হয়নি। শায়লা বারবার ঘড়ি দেখছিল।কতদূর এগিয়েছে শিহাব জানতে ইচ্ছে হলেও চলন্ত  বাইকে কল দিয়ে শিহাবকে বিরক্ত করতে চাচ্ছে না শায়লা। শুধু দেয়াল ঘড়িটার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর একটা একটা সেকেন্ডের কাঁটার চলন দেখছে। শায়লা মায়ের জন্য রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলো।মা এশার নামাজ শেষে  সালাম ফিরিয়ে একটু অবাকই হলো।আজ এত জলদি কেন খাবার দিচ্ছে শায়লা! আবার মাকে খেয়ে নেয়ার জন্য শায়লা একটু তাড়াও দিচ্ছিল।মা ভীষণ বিস্মিত চোখে সব দেখছেন!
হঠাৎ মেসেঞ্জার ট্রুং করে উঠল। রাত পৌনে দশটা! শিহাব কি চলে এলো!  হায় মাকে কি বলবে? রাহাতকেইবা কিভাবে ম্যানেজ কিরবে।আর নীচতলার রুহি খালা দেখলেতো আরেক ইতিহাস! হয়তো কানাডা পর্যন্ত  খবর পৌছে যাবে।শিহাবের ম্যাসেজে চোখ রাখল শায়লা,
আমি আর দশ মিনিটের মধ্যে আসছি। 
শায়লা ভাবলো, 
শিহাবের সাথে দেখা করে তবেই সে রাতের খাবার খাবে। শায়লা ঘর আর বারান্দা করছে বারবার।ভেতরে তার হাতুড়ি পেটার শব্দ হচ্ছে! কেমন যেন ভালোলাগা আবার কেমন যেন ভয় ভয় মিশ্রিত চাপা উত্তেজনা।
শায়লা আয়না দেখে চুলটা ঠিক করে নিলো। 
পরনের সালোয়ার কামিজটায় একবার চোখ বুলালো।ভেবে নিলো, এতেই চলবে।

শিহাব একে একে বাসার নম্বর দেখে আগাচ্ছিলো। সব বাসার দারোয়ান, কেয়ার টেকারদের উৎসুক দৃষ্টি। শিহাব সব কিছু উপেক্ষা করে, কারো সাহায্য না নিয়ে নম্বর মিলাতে লাগল।ঠিক শায়লাদের বাসার সামনে শিহাব দাঁড়িয়ে নম্বরটা নিশ্চিত হয়ে নিলো।দোতলা বাড়ির। রাস্তার দিকে বারান্দা।
শায়লা কী বারান্দায় দাঁড়িয়ে?
শায়লা ডাইনিং  টেবিলে মোবাইলটা রেখে জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে নিলো। শায়লার খুব টেনশন হচ্ছিল। হঠাৎই  মেসেঞ্জার ট্রুং কিরে উঠলো, 
কি করছেন?
কান্না কি থেমেছে?
শায়লা উত্তর দেয়ার জন্য মোবাইলে হাতে নিতেই পরের মেসেজ চলে এলো!
বারান্দায় আসেন।
শায়লার চোখ ছানাবড়া! উত্তেজনায় পুলকিত! শায়লা মোবাইলটা হাতে নিয়ে এক দৌড়ে বারান্দায় চলে এলো। তার উৎসুক চোখ কেবল শিহাবকেই খুঁজছিল। শায়লাদের বাড়ির বিপরীতে স্বপ্নবাড়ির সামনের ল্যাম্পপোস্টের নিচে বাইক স্টার্ট বন্ধ করছে।সুদর্শন ব্যক্তিটি বাইকের পাশে বসে আছে।। হ্যাঁ, ঐতো শিহাব দাঁড়িয়ে!
শিহাব বাইকে বসে মোবাইল ঘাটছে। শিহাব মাথা নিচু করেই  ম্যাসেজ রাখল,কোথায়!
শায়লা উত্তর লিখল, বারান্দায়।
এবার শিহাব বারান্দার দিকে  তাকালো।বারান্দার আলো আঁধারিতেও শায়লার চোখ চকচক করছিল। এমন দুঃসাহসিক কাজ কেবল শিহাবকেই মানায়। স্বপ্নবাড়ির দারোয়ান অবাক বিস্ময়ে  শিহাবকে দেখছে। কেন লোকটি এভাবে এখানে বাইক থামিয়েছে তা জানতে ভীষণ উদগ্রীব হয়ে উঠলো।
শায়লা দূর থেকে প্রান ভরে শিহাবকে দেখে নিচ্ছে আর ভেতরে একটু একটু করে যেন সিমেন্টের শক্ত ঢালাই হচ্ছে।শিহাব আবার শায়লাকে একনজর দেখার ফাঁকে মোবাইলে মেসেজ পাঠালো, কি এবার কান্না থেমেছে। 
শায়লা মাথা ঝুঁকিয়ে জানালো হ্যাঁ, যদিও চোখে তার আনন্দ অশ্রু! মনের সাথে মনের যোগ হলে বুঝি এমনই হয়! ইশারায়ও কথা স্পষ্ট হয়।
স্বপ্নবাড়ির দারোয়ান শিহাবের প্রতি খুবই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে।কিন্তু শিহাব চাইছে না ওরা বুঝে যাক। 
শায়লা অবাক দৃষ্টিতে শিহাবকে দেখছে।রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের বাতি থেকে আলোর বন্যা বইছে।শিহাবের মুখখানি জ্বলজ্বল করছে! শিহাবের পরনে গাঢ় সবুজ রঙের পাঞ্জাবি।  ধবধবে অবয়বে তাকে দেখতে দারুন লাগছে! শায়লা বুঝে না কেমন করে এমন হলো! কোনদিনতো এভাবে কোন ছেলের দিকে সে তাকায়নি।
কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পরে,
শিহাব ভাবলো, অকারণে কারো বাড়ির সামনে বসে  সবার মধ্যে একটা সন্দেহ সৃষ্টির কী প্রয়োজন?  দশ মিনিট পর শিহাব মাথা  দুলিয়ে যাবার অনুমতি চাইলো। শায়লা মাথা ঝুঁকিয়ে অনুমতি দিলো।যদিও ভেতরে তার দীর্ঘ চাওয়া, তবুও এটুকু প্রাপ্তিও কম কি? শায়লা অনুমতি দিতেও প্রচন্ড শব্দে হর্ণ বাজিয়ে বাইকটি ছুটে চললো। শায়লার মনে হলো, হঠাৎ করে কী যেনো হারিয়ে গেলো! 
তবুও শিহাবের শায়লাকে মনে করা,  কাছে আসা, যেন সারাদিন শায়লার অপ্রাপ্তির দোলনচাঁপার গাছে রাত শেষে হলে পুস্পরাগে প্রভাতের আলোয়  বিকশিত হলো! বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার আলসেমিতে উনুনের দুধটুকু শুকিয়ে গেল। কেমন যেন একটা উত্তাপ শায়লার সারাদেহে ছড়িয়ে  গেলো!
চলবে...

trssg

LOVE

fdgs

LOVE