২৪ এপ্রিল ২০২২

কবি ডালিয়া মুখার্জী এর কবিতা "ইচ্ছে গুলো এলোমেলো"




ইচ্ছে গুলো এলোমেলো 
ডালিয়া মুখার্জী


আজ আবার কবিতা লিখতে ইচ্ছে হয়,
ইচ্ছে হয় নতুন করে বাঁচতে, 
ইচ্ছে হয় আবার মেঘ পাহাড়ের ঘন কুয়াশা তে মিশে যেতে,
ইচ্ছে হয় পৃথিবীর গন্ধটা বুক ভরে নিতে,
ইচ্ছে হয় শিমুল বনের রাঙা রাস্তা ধরে হাঁটতে,
ইচ্ছে হয় বৃষ্টির প্রতিটি ফোটতে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে
ইচ্ছে হয় পাহাড়ের সূর্যাস্ত দেখতে,
শেষ বিকেলে ঘরে ফিরে যাওয়া পাখিদের কলকলানি শুনতে,
ইচ্ছে হয় একভাবে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর গান শুনতে
ইচ্ছে হয় নীল আকাশে রাতের ধ্রুব তারা দেখতে,
বসন্তের হাতছানিতে নিজেকে খুজে নিতে।

মমতা রায়চৌধুরী এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৬১




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ১৬১
অনিন্দিতার বাচ্চা
মমতা রায়চৌধুরী

ও বাপরে বাপ আমি কিছুতেই পারছিনা।
কি হলো? হলো টা কি? আর আমার মান্থলি টিকিট কার্ড পাচ্ছি না।
দেখ ওখানে আছে তোমার যে ভুলোমন।
তুমি কি ব্যাক চেঞ্জ করেছিলে?
'হ্যাঁ করেছিলাম। তাতেও নেই।'
নেই মানে টা কি ?
মনোজ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে ড্রয়ার টা খুলল। ভালো করে জিনিসপত্র সরিয়ে সরিয়ে দেখলো, তারপর বললো "এই দেখো ,বলেই কার্ডটা রেখার  কাছে নিয়ে গিয়ে দেখালো।'
রেখা বলল 'আশ্চর্য আমি তো ড্রয়ার টাও খুঁজলাম।'
"ঠিক আছে, চলো ট্রেন পাবে না কিন্তু
 এর পর ।আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।'
"তোমার লেট হয়ে যাবে না।"
"না,না, আমার পরের  ট্রেনে গেলেও হবে আজকে।"
Ok
"ঠিক আছে তুমি গাড়িটা বের করো আমি দরজা লাগিয়ে আসছি।"
মনোজ গাড়ি বের করতে করতে চিৎকার করে বলল" আসার সময় বিস্কিট নিয়ে এসো, না হলে কিন্তু ছাড়া পাবে না ওদের কাছ থেকে।". 
রেখা হাতে করে বিস্কিট এনে আগে বাচ্চাগুলোকে দিল, মিলিকেও দিল।"
তারপর মনোজ রেখাকে  নিয়ে গাড়ি করে স্টেশন এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির খবর হয়ে গেল রেখা তাড়াতাড়ি ওভারব্রিজ অতিক্রম করে ট্রেন ধরার জন্য ছুটলো।
মনোজ বললো 'সাবধানে।'
রেখা বললো' তুমিও সাবধানে যেও।'
ওভারব্রিজ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেন ঢুকে গেল। রেখা  ট্রেনে উঠে বসলো। সে ভেবেই নিল
জায়গা পেলে ঘুমোতে ঘুমোতে একেবারে কৃষ্ণনগর জংশন।
অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে জায়গা না পেলেও কিছু দুরে গিয়ে জায়গা পেল। রেখা সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজলো।
গাড়ি কৃষ্ণনগর জংশন এর পৌঁছালে ঘুম ভাঙলো তারপর রেখা টোটো ধরে স্কুলে পৌঁছালো।
অ্যাটেনডেন্স  দিতে গিয়ে রেখা দেখল "বড়দি মুচকি মুচকি হাসছেন।"
রেখা ভাবল "তার ড্রেসে কি কিছু অবিন্যস্ত ভাব ধরা পড়েছে ?"
বড়দি সেটা বুঝতে পেরে বললেন' না ,না ,আমি হাসছি ।তুমি দেখছি নির্দিষ্ট টাইমেই এসে পৌঁছে গেছে এইজন্য।"
রেখা বলল "ও আচ্ছা ।না ,দিদি কি করবো খামোকা লেট করে ।আমার যদি সত্যিই খুব অসুবিধে থাকতো, তাহলে নয় ঠিক ছিল।
ইচ্ছে করে শুধু সুবিধা নেব বোলে দেরি করে আসব, সেই মানসিকতা আমার নেই।'
বড়দি বললেন "আমি জানি তা হলেও যেহেতু কালকে অত রাত্রে ফিরেছো তো ,তাই তোমাকে বলেছিলাম।এজন্যই তো তোমাকে এত ভালো লাগে।'
রেখা বলল' আপনি আমাকে স্নেহ করেন তাই।"
এরপর বড়দি একটু চিন্তার মধ্যে ঢুকে গেলেন।
রেখা বলল 'ও বড়দি কিছু সমস্যা?'
বড়দি রেখার দিকে তাকিয়ে বললেন' কিছু বলছো?'
'না মানে আপনি চুপ করে গেলেন তো তাই।"
বড়দি বললেন "ভাবছি কাল থেকে আবার ভ্যাকসিন শুরু হয়ে যাচ্ছে।'
"এবার কাদের বড়দি?'
"ওই যে 12 থেকে 15 বছর বয়সের মধ্যে।"
"ও আচ্ছা, আচ্ছা।'
"কিন্তু দেখো অনিন্দিতা তো ক্লাস এইট এর ক্লাস টিচার । ও তো আসছেই না।
"ওকে তো অ্যাটেনডেন্স শিট তৈরি করতে হবে। কুপন তৈরি করতে হবে।এই কাজগুলো তো করতে হবে।"
"ওর ছেলের খবর কি দিদি?"
ওই তো ফোন করেছিল বলল" দিদি, আমরা এসএসকেএম হসপিটাল এ নিওনেটোলজি বিভাগে দেখাচ্ছি।"
"ও আচ্ছা তারমানে কতগুলো  টেস্ট হবে তো?'
'হ্যাঁ ,সেরকমই তো বললো।"
"প্রথম দিন নাকি জেনারেল স্টাডিজ হয়েছে বাচ্চার ।অবশ্য বাবা -মার ও কাউন্সেলিং হচ্ছে।
গতকাল নাকি বাচ্চার সেন্স এর উপর ও টেস্ট হয়েছে।'
"ও বাবা তাই?"
এখনো ও কে  কিছুদিন বাড়িতে থাকতে হবে। ও সিসিএল এর জন্য অ্যাপ্লিকেশনও দিয়েছে।
ও তাই বুঝি?"
"এখন বাচ্চার কি কিছু ইমপ্রুভ বুঝতে পারছে?"
"ওই তো ,ও যেটা বলেছে যে ,এটা আপনাদের দোষ । এরকম হয়েছে আপনাদের জন্যই। বাচ্চা এমনি সুস্থ স্বাভাবিক আছে কিন্তু কথা বলার শুরুতে যে কোশ্চেনগুলো বাচ্চার ভেতরে লক্ষ্য করা যায় সেগুলো ও করেছিল কিনা ?"
"তখন ওরা নাকি বলেছে মানে?'
*মানে বাচ্চা কোন কিছুর মধ্যে ইনভলভ হয়ে ইন্টারেকশন করতে চেয়েছে কিনা মা-বাবার সঙ্গে?"
তখন অনিন্দিতা আর ওর বর নাকি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।
তারপর বলেছিল যে ওর একটা ভিডিও করে রেখেছে এসবের।
বাবুরা নাকি একটু কৌতূহলী হয়েছিলেন। অনীনদিতা বলেছে ও যে ভিডিও করে রেখেছিল 
সেগুলো ফোনের থেকে দেখায়। বাচ্চা কোন বয়সে ও ঝাঁটা নিয়ে ঝাঁট দিতে গেছে। মানে ও সময় বাচ্চা ইন্টারেকশন করতে 
চেয়েছে বাবা-মায়ের সাথে ।কিন্তু সে সময় মা-বাবা তাকে গুরুত্ব দেয় নি ।'
মা-বাবা ও কর্ম ব্যস্ত মানুষ ছেলের গুরুত্ব বুঝতে পারেনি শুধু খাওয়ানো ,ঘুমপাড়ানো ছাড়া।'
ডাক্তারবাবুরা বলছেন তাই হেলদি হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাচ্চার এই গ্রোথ টা ঠিক হয়নি।
তখন নাকি অনিন্দিতা এরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে।
তখন ডাক্তার বাবু বলেছেন চিন্তার কোন কারণ নেই একটু দেরি হয়েছে কিন্তু খুব দেরি হয়নি এখন ধৈর্য ধরে বাচ্চার সঙ্গে লেগে থাকতে হবে।
ডাক্তারবাবুরা যেগুলো বলছে সেগুলো ভালো করে ফলো করতে হবে।
কিরকম দিদি?
আরো জিজ্ঞেস করেছেন ডাক্তারবাবুরা যে "মোবাইল নিয়ে বসে থাকে কিনা বাচ্চা?
'অনিন্দিতা বলেছে "হ্যাঁ মোবাইল ছাড়া খাবে না তাছাড়া মোবাইলটা ইচ্ছে করে বাচ্চাকে এক সময় ওরাই দিয়েছে কাজের সুবিধার্থে।'
ডাক্তারবাবুরা বলেছেন মোবাইলে একদম দেয়া যাবেনা বাচ্চাকে তাতে সে যতই কান্নাকাটি করুক বা খাবার দেওয়া না খাক।
রেখা বলল 'কী সাংঘাতিক?'
তারপর ডাক্তারবাবুরা বলেছেন ও আগে যে খেলনা গুলো দিয়ে খেলত সেগুলো একটাও দেয়া যাবে না ।ডাক্তারবাবুরা যে সমস্ত খেলনার কথা বলবেন শুধু সেইগুলোকে কিনে দেয়া হবে আর ওর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কথা বলতে হবে ।মানে নিজেরাই কথা বলতে হবে নিজেরাই উত্তর দিতে হবে এবং ওটা দেখে দেখেই  ও শিখবে।'
কি অদ্ভুত ব্যাপার হলো দিদি দেখুন যে বাচ্চার স্বাভাবিক ছন্দে সমস্ত কিছু শিখতে চেষ্টা করছিল সেটা কে ওরা গুরুত্বই দেয় নি।
বড়দি বললেন 'আসলে সত্যি সত্যিই মা বাবারাই কিন্তু বাচ্চার ভালো করতে গিয়ে কখন যে খারাপ করে ফেলেন সেটা বুঝতেও পারেন না।
একেবারে স্লো পয়জন' এর মত কাজ করে।
যাই হোক ওর বাচ্চা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনাই করি।
ঠিক বলেছ রেখা।

সেজন্য একটু চিন্তিত আছি ওর কাজগুলো কাউকে না তো কাউকে করতেই হবে।
আপনি এত চিন্তা করছেন কেন আমি তো আছি তো?
সে আমি জানি রেখা কিন্তু তবুও ভাবছি আবার sযদি ওয়ার্কশপ হয় তাতেও তো তোমাকেই যেতে চলো রেখার লাইনের জন্য ধার করা সবাইকে চলো রেখার লাইনের জন্য মেয়েদের সঠিক ভাবে দাঁড় করিয়ে দাও হবে।

তাই এই ক্ষেত্রে আমি তোমাকে একটু ছাড় দিতে চাইছি।
আর কোন টিচার ফাঁকা পাওয়া যায়।
গান তুই যদি না পাওয়া যায় তখন তো তোমাকে পাঠাতেই হবে।
আর অনিন্দিতাকে যেহেতু কিছুদিন বাচ্চার টেক কেয়ার করতে হবে তাই ভাবছি ওঁকে কিছুদিন সি সি এল দিয়ে দিতে হবে।
দেখো পেয়ার লাইনের ঘন্টা পড়তে চলেছে কজন টিচার পেয়ার লাইনে দাঁড়ায়।
"এজন্যই কঠোর নিয়ম জারি করতে 
 রেখা বলল ঠিক তাই একজন দুজনের জন্যে বাকি সবার উপর করতে এসে পড়ে।
 মেয়েদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে সবার কাছে গিয়ে দেখতে হবে স্কুল ইউনিফর্ম পড়েছে কিনা?
ওকে দিদি।
"আর দেখো না আজকে টিচার লেট করে আসলে লেট মার্ক খাইয়ে দেবো আমি।"
মেয়েরা সব জাতীয় সঙ্গীত শুরু করো।
তারপর যে যার রুমে চলে যাও
রেখার মাথার মধ্যে সারাক্ষণ অনিন্দিতা আর ওর বাচ্চার কথাই ঘুরপাক খেতে লাগল।
লেখার একটা প্রিয় গান মনে পড়ে গেল
"যার কথা ভাসে মেঘলা বাতাসে ,তবু সে দূরে থাক ,সে কথা মানে না…। "গানটা বার বার মনে পড়ছে রেখার। অনিন্দিতা সঙ্গে মনের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে কিন্তু তবুও অনিন্দিতা আর ওর বাচ্চার ভালো হোক সেটাই চায় বরাবর।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৯৮





ধারাবাহিক উপন্যাস

 
শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৯৮)
শামীমা আহমেদ 



শিহাব খুবই ঠান্ডা মাথায় একমনে রোমেলের কথাগুলো  শুনে নিলো। সে বুঝতে পারছে না এর মাঝে কতটা সত্যতা আছে বা আদৌ তা সত্য কিনা। বেশ কিছুদিন যাবৎ রোমেল শিহাবকে ভীষণভাবে  অনুসরণ করছে আর রিশতিনারকে নানান বুদ্ধি পরামর্শ  দিয়ে যাচ্ছে।  সে খুবই চেষ্টায় ছিল তার আর রিশতিনার দুরত্বটা মিটিয়ে দিতে  কিন্তু শিহাব আর রিশতিনার মাঝে যে বোঝাপড়া হয়েছে
তাতো  রোমেলের অজানা ।  রিশতিনা বিনা আপত্তিতেই  চলে গেছে। হ্যাঁ,সে স্বেচ্ছায় এসেছিল কিন্তু নানান পারিপার্শ্বিক কারণে শিহাবের তাকে গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। আজ যদি সে  কোন সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা সে তার নিজ দ্বায়িত্বেই নিবে। এব্যাপারে শিহাব মোটেই উদ্বিগ্ন হলো না। আর হয়েও কোন লাভ হবে না। শায়লার কথা রিশতিনা জেনেছেও। খুব দ্রুতই শিহাব রিশতিনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়ে শায়লার সাথে বিয়েটা সেরে নিবে। শায়লাকে নিয়ে আজ সে যতদূর এসেছে সেখান থেকে সে আর ফিরে যাবে না। আর এজন্য যা ফেইস করতে হয় নির্বিঘ্নে তা করবে। আর শায়লার  প্রতি তার ভরসাও আছে। সে তাকে কোনদিনই ভুল বুঝবে না।রাহাত আর বুবলী শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো বা ফোনে কি খবর এলো,এই নিয়ে দুজনেই ভীত দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে তাকিয়ে। শিহাব নিজের মাঝে ফিরে এলো। সে হঠাৎ  অনুভব করলো শায়লা তার হাত ধরে আছে। শিহাব শায়লার দিকে তাকাতেই শায়লা তার চোখের ভাষায় শিহাবের মনে সাহস সঞ্চার করলো। শিহাব দেখলো, হলুদ শাড়ি আর কাঁচা ফুলের গহনায় শায়লাকে অপূর্ব লাগছে। কাঁচা ফুলের সৌরভের মাদকতায় শিহাব একেবারে বুঁদ হয়ে গেলো। সে শায়লার আরো কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো। শায়লা টের পেলেও নিশ্চুপ রইল।
শিহাব উপরে যাওয়ার জন্য এগুতেই রাহাত আর বুবলীর যেন সকল শংকা কেটে গেলো।
ওরা ফোনের কথা কিছু আর জানতে চাইলো না। শায়লা আর শিহাবকে দুইপাশে দুজন সংগী করে ছাদের দিকে এগিয়ে গেলো। শায়লার চলায় বারবার শিহাবের স্পর্শ শায়লার ভেতরে রক্তের এক উন্মাদনা খেলে গেলো। দুজনে ধীর পায়ে  সিঁড়ি পেরুতে লাগলো। শিহাব বেশ শক্ত করে শায়লার হাত ধরে আছে।এমন অচেনা যায়গায় অচেনা পরিবেশে শুধু শায়লাই ভরসা।
দুজনকে ছাদে নিয়ে স্টেজে বসানো হতেই
শিশু কিশোরদের আনন্দ যেন আর ধরে না। মুরুব্বিরা এমন নায়কের মত জামাইকে দেখে যারপর নাই অত্যাশ্চর্য হয়ে যায়! নিজের মেয়ের বিয়ের জন্য মনে মনে এমন একটা পাত্র পেতেই হবে মনে মনে তা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। শায়লার মা অসুস্থ বোধ করায় তিনি নিজের ঘরেই রইলেন। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী  রুহি খালা যত্নের কোন ত্রুটি করছেন না। নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত করছেন। একে একে মুরব্বীরা তাদের হলুদ ছুইয়ে দোয়া করে দিলেন। বুবলী আর রাহাত সবাইকে আপ্যায়নে ব্যস্ত হলেন। রাহাত বাবুর্চিদের আজ আর যেতে দেয়নি।এত রাতেও তাদের রান্না প্রস্তুত। এমন মধ্যরাতে এমন একটি আনন্দক্ষণ তাদের জন্য অপেক্ষা  করছে সেটা কেউই জানতো না। সবাই তাই এই আচমকা আনন্দটা একেবারে লুফে নিতে চাইছে। শায়লা আর শিহাবের হলুদ ছুঁইয়ে বুবলী দুজনের মুখে কিছু খাবার তুলে দিলো। শিহাবের মনেই পড়ছে না শেষ কখন সে খাবার খেয়েছে। শায়লারও সারাদিন নানান ঘাত প্রতিঘাতে  একেবারেই খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলেছিল। বুবলী দেখলো রাহাত স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার অশ্রুসিক্ত চোখ।অবশেষে  সে, আপু আর শিহাব ভাইয়াকে এক করতে পারলো।এতদিন সে ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছিল।আজ সব উৎকন্ঠার অবসান হলো।
বেশ অনেক রাত হয়েছে।আনন্দপর্ব আর খানাপিনার পর কেউ আর জেগে  থাকতে চাইছে না। শিশুরাও হুড়োহুড়ি করে বেশ ক্লান্ত। একে একে সবাই নিচে নেমে গেলো। রাহাত এই সুন্দর মূহুর্তের কিছু ছবি তুলে রাখলো।রাহাত দেখলো, ঘি রঙা পাঞ্জাবীতে শিহাবের আরো যেন আভিজাত্য ফুটে উঠেছে। শায়লা আর শিহাবকে  স্টেজ  থেকে নামিয়ে বুবলী তাদের নিচে নিয়ে যেতে চাইলো। 
কিন্তু শিহাব এই খোলা ছাদে শায়লাকে নিয়ে আরো কিছুক্ষন থাকতে চাইলো। তাদের সম্মতি জানাতেই বোনের জন্য রাহাতের কান্না যেন বুক ফেটে বেরিয়ে এলো।  শায়লাও আবেগ আপ্লুত হয়ে ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। রাহাত শুধু একটা কথাই বলছে,আপু,তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আজ শায়লা রাহাতের সবকিছু ভুলে স্নেহের পরশে জড়িয়ে নিলো। ভাই বোনের এমন মিলন মূহুর্তে রাহাতকে নিয়ে  শিহাবের মনের সব কষ্ট  অভিমান মুছে গেলো। শিহাব শায়লাকে আর রাহাতকে সান্ত্বনা দিয়ে  ছাড়িয়ে নিয়ে নিজে খুব শক্ত করে শায়লার হাত ধরে নিলো। রাহাত ভেবে নিলো, কাল সকালেই কাজী ডেকে আপু আর শিহাব ভাইয়ার বিয়েটা সেরে নিবে। 
রাহাত আর বুবলী নিচে নেমে  গেলো। সিঁড়িতে বুবলী পিছন থেকে রাহাতের হাত ধরতেই রাহাত বিস্মিত হয়ে চমকে উঠলো!  বুবলীর চোখ জলে ভরা,সে তার হাতের আংটিটা দেখিয়ে রাহাতকে বললো, রাহাত ভাইয়া আমার আঙুলের এই আংটিটা তোমার আমার মাঝে যোজন যোজন ফারাক করে দিলো। রাহাত একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে, কেউ দেখে ফেলবার ভয়ে এক ঝটকায় বুবলীর হাত ছাড়িয়ে দ্রুত তার নিজের ঘরে ঢুকে গেলো। বুবলী সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একা একা নীরবে চোখের জল ফেললো। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে নিচে নেমে এলো।
 ছাদে শিহাব এবার যেন বাধ ভাঙা ভালোবাসায় শায়লাকে জড়িয়ে ধরলো। শায়লাও যেন নিজেকে বিগলিত করে শিহাবের বিশাল বুকে মুখ গুজে দিলো। কাঁচা ফুলের ঘ্রাণ আর নারী দেহের তীব্র টানে বহুদিনের অপ্রাপ্তির চাওয়া যেন সবটা গ্রাস করতে চাইছে। কতটা ক্ষণ এভাবেই রইল। ক্রমশ শিহাবের ভেতর শায়লাকে একান্তে পাওয়ার বাসনা উঁকি দিচ্ছিল। দুজনে এভাবেই মনের যত কষ্ট  হতাশা ছিল সব যেন ধুয়ে মুছে নিলো। শিহাব  বিড়বিড় করে বলে চললো,আজ সারাটা দিন তোমাকে হারানোর আশংকায় প্রতিটা ক্ষণ কি যে এক অস্থিরতায়  কেটেছে।যেন তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি এমন দূর্ভাবনা গ্রাস করছিলো। শায়লা এবার মুখ তুলে বললো,না শিহাব,আমি তোমায় রেখে  থেকে কোথাও হারাবো না।আমি আজীবনের জন্য তোমার। 
এভাবেই দুজনে কিছুটা সময় পার করতেই শিহাবের ফোন বেজে উঠলো !  শায়লা  ভীত হয়ে গেলো। আবার কি সেই অনাকাংখিত কল ? শায়লা শিহাবকে এবার খাঁমচে ধরলো। শিহাব পকেট থেকে মোবাইল বের করে  হাতে নিলো। সে স্ক্রিনে  তাকাতেই দেখতে পেল রাহাতের কল।শিহাব দ্রুত রিসিভ করে হ্যালো  বলতেই ওপ্রান্তে নারী কন্ঠ ভেসে এলো। বুবলীর উপদেশ ভেসে এলো। শিহাব ভাইয়া,এতরাতে আপনাদের দুজনের ছাদে থাকা ঠিক হচ্ছে না।আপনাদের গায়ে হলুদ লেগেছে।আপনারা এখন বিয়ের বর কনে। এখন নিজেদের ঘরে চলে আসাই ভালো। শিহাব ভাবলো, মাঝে মাঝে ছোটদের এমন শাসন ভালোই লাগে।
শায়লা  জিজ্ঞাসু চোখের প্রশ্নে শিহাব জানালো, বুবলী আমাদের নিচে নিজেদের রুমে যেতে বলছে।এবার শায়লা লজ্জায় রাঙা  হয়ে গেলো। সিঁড়িতে বুবলীর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যেতেই শায়লা শিহাবের থেকে নিজেকে  ছাড়িয়ে নিলো। বুবলী বলে উঠলো, চলো,দুজন নিচে চলো। তোমাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে আমি একটু ঘুমাবো।উফ! সারাদিন দুজনে যা দেখালে না! সিনেমাকেও হার মানায়।বাপরে! এমন কঠিন প্রেম! চলো চলো, আর কোন টেনশন না। চলো,নিচে চলো, আর কতদিন এইভাবে খোলা যায়গায় লুকাছাপা প্রেম করবে ? বলেই বুবলী শায়লাকে একরকম টেনে নিচে নিয়ে  যেতে চাইছে।কিন্তু শায়লার  আড়ষ্টতা যেন কাটছে না। তবে শিহাব একেবারেই যথা আজ্ঞা রুপে দণ্ডায়মান হয়ে রইল যেন, বুবলীর সবকিছু সে একবাক্যে মেনে নিতে রাজী আছে। এবার বুবলীর চোখ গেলো শিহাবের দিকে, সে ঝনঝন করে বলে উঠলো, শিহাব ভাইয়া,আপনাকে দেখে আমার ভীষণ হিংসা হচ্ছে।কেন আপনার সাথে আমার আগে দেখা হলো না।ইস! গ্রেট মিস! কি আর করা! এখন দুলাভাই ডেকে মনকে সান্ত্বনা দিতে হবে। শায়লা লাজুকতায় নুইয়ে যাচ্ছে যেন।
শিহাব  বললো, তাতে কি ? দুঃখ করোনা।তোমরা দুই বোন আমাকে ভাগাভাগি করে নিতে পারো। বুবলী রীতিমতো মাথা চাপড়ে বললো,মাত্থা খারাপ।শায়লা আপু আমাকে মেরেই ফেলবে।না বাবা, যার অধিকার,শুধু সেই থাকুক।আমি এমনিতেই ভালো আছি।
শিহাবের এখন মনটা খুবই ভালো লাগছে।
বুবলী তার হাতের আংটি দেখিয়ে বললো, এই যে একজন বুকিং দিয়ে রেখেছে।আপনি চাইলেও নো ভ্যাকেন্সি,বলেই বুবলী খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।  বুবলীর দুষ্টুমিটা শিহাব বেশ উপভোগ  করছে। 
এবার শায়লা  একপ্রকার হ্যাচকা টানে দুজনকে নিচে নিয়ে এলো। শায়লার ঘরের সামনে এসে বুবলী শায়লার উদ্দেশ্য বললো,কই শায়লা আপু,তোমার অতিথিকে তুমি নিজেই ঘরে নাও। আমি আর তোমাদের মাঝে থাকতে চাইছি না। বুবলী দরজা খুলে দিতেই শায়লা ঘরে ঢুকলো।  এই ঘরে শায়লা শিহাবকে মনে মনে অনেকদিন কাছে চেয়েছে। আজ তা সত্য হলো।শায়লার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না স্বপ্ন এভাবে সত্যি হতে পারে!  শায়লা দেখলো তার পুরো খাট কাঁচা ফুল দিয়ে ঢেকে রাখা।যেন একটা ফুলের ঘর বানিয়ে রাখা।এরই মাঝে তবে বুবলী আর রাহাত এই কাজ করিয়েছে।শায়লার অনেক পুরনো অভ্যাস ঘরে ঢুকেই দেয়াল ঘড়িতে চোখ রাখা।সে অবাক হলো,রাত চারটা বাজছে" ভোর হতে আর বেশ্য দেরি নেই। সে  শিহাবকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে বিছানায় এনে বসালো। শায়লার আজ নিজের ঘর নিজেরই অচেনা লাগছে। ঘর ভরা বিয়ের কেনাকাটা, শায়লার বিয়ের শাড়ি, নতুন জামাইয়ের জন্য শেরওয়ানী,পাগড়ি,নাগরা, সব পরিপাটি করে গোছানো।  শিহাব এক টানে শায়লাকে কাছে টেনে নিলো। শায়লা দেখলো,বুবলী টেবিলে অনেক খাবার রেখে গেছে। এত্তটুকু মেয়ে কিভাবে যে এত সব গুছিয়ে করছে ! আজ বুবলী না হলে,এত সুন্দর একটা স্বর্গীয় আয়োজন রাহাতের পক্ষে একা কোনদিনই সম্ভব হতো না। ভাবতেই হঠাৎ  দরজায় নক করা শব্দে দুজনে বিছিন্ন হয়ে গেলো। বাইরে থেকে বুবলী বলে উঠলো, এই তোমরাতো ঘরের দরজা লাগাতেই ভুলে গেছো। বলেই তার সেকি খিলখিলিয়ে হাসি! এবার শায়লা  বড় বোনের রূপে এগিয়ে এলো,দুষ্ট কোথাকার! বাইরে দাঁড়িয়ে সব দেখছে! বুবলীর দুষ্টুমি ভরা প্রতি উত্তরে বলে উঠলো, আমার বয়েই গেছে! তোমরা দরজা খোলা রাখছো,আমি তা দেখিয়ে দিলাম,আর আমি পারছি না।এবার গেলাম।এ কথা বলে চলে যেতেই শায়লা এগিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।  এবার আর শিহাব নিজেকে শান্ত খোকা বাবু করে ধরে রাখলো না। চট করে উঠে  এসে শায়লাকে একটানে বিছানায় নিয়ে এলো। শায়লা আর নিজেকে শাসনে না রেখে শিহাবের কাছে নিজেকে সঁপে দিলো। টেবিল ল্যাম্পের আলো আঁধারিতে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি হলো।খাটের চারদিকে গোলাপ বেস্টিত আবরণে  চমৎকার সুঘ্রাণে দুজনে ডুবে রইলো। অনন্তকালের তৃষ্ণার  আজ পিপাসা মিটবে। কাল সকালের এক নতুন ভোরে হবে আগামীর  স্বপ্ন বুনন।পিছনে পড়ে থাকবে দুজনে দুজনাকে  পাওয়া না পাওয়ার সেই দোলাচলে ডুবে থাকার ইতিহাস। আজ  শিহাব তার নিজেরই আরোপিত অলিখিত শর্ত নিজেই ভেঙে চিরদিনের জন্য শায়লাকে আপন করে পেলো।


চলবে...

কবি মোঃ ইসমাঈল এর কবিতা "অন্তিম গন্তব্য"




অন্তিম গন্তব্য
মোঃ ইসমাঈল 

রুহ পাখি উড়ি-উড়ি
একদিন জমাবে ঠিক আকাশ পাড়ি।
এই ধরনী নয়তো কারোর জন্য চিরস্থায়ী ঠিকানা
চিরস্থায়ী থাকার জায়গা হলো কেবল মাটির বিছানা। 

নাহি থাকতে পারবে আর এই ধরনীতে
চলে যেতে হবে ঐ নির্জন ঘর কবরেতে।
নতুন জায়গা নতুন যাত্রা নতুন বিছানা
উপরেতে থাকবে দেওয়া বাশের সামিয়ানা।

থাকবে পরে একা আর নিবে না কেউ খবর
এরই নাম জীবনের অন্তিম গন্তব্য কবর। 
আসবে ফেরেশতা করবে প্রশ্ন যদি হয় নসিব ভালো 
তবে কবর এবং আখিরাত জীবনে জ্বলবে সুখের আলো।

কবি শিবনাথ মণ্ডল এর কবিতা "নারীর নেই বাড়ি"




নারীর নেই বাড়ি

শিবনাথ মণ্ডল


এই জগতে নারী পুরুষ
এখন সমান সমান
খাতা কলমে তাইতো আজ
দিয়েছে তার প্রমান।
বিয়ের আগে মেয়েরা সব
থাকে বাপের বাড়ি
বিয়ের পরে নারীদের ঠাঁই
হয় শ্বশুর বাড়ি।
নারী ছাড়া এই দুনিয়া 
হয় যে অন্ধকার
নারীর কোথায় নিজের বাড়ি 
তাই খুঁজি বার বার।
মেয়েরাতো মা  বোন  স্ত্রী হয়
গৃহের লক্ষীরুপা নারী
এত গুন থাকতেও নারীর
নেউকো নিজের বাড়ি।।