০২ অক্টোবর ২০২১

চৈতন্য ফকির



মিছিলের মুখ
 

মাকড়সার জালকে মাকড়ের জাল বললে
নাক সিঁটকানো এলিটেরা 
ভূমধ্যসাগর থেকে ডানা ঝাপটানোর শ্রম 
না জেনেই তিনি কৃষকবন্ধু
সুতরাং বুক ফুলিয়ে নিজেকে গোবিন্দ তেলী
মনে করতে অসুবিধা নেই। 

বহুদূর ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে উড়তে
শিকারের নিকট গেলেই 
দলপতি জেগে উঠেন কাঁচি হাতে
ডানা ছেটে ফেলে দিলেন।
তারপর আয় আয় মন্ত্র উচ্চারণ করে বলেন
চলো মিছিলে পা রাখি।

ক্ষত সারাতে মোক্ষম কাজটি না করেই
ঠান্ডাঘরে রাখি বডি কিংবা শরীর
গতদিনের বাসী সবজির মতো।

মিছিলে আসে না প্রকৃত বেনিফিসারী। 
গেলো বছর তারও কেটে নেওয়া হয় 
বেঁচে থাকার মুষ্টিবদ্ধ হাত-এখানেই 
সম্ভাবনা ছিলো একটি চারাগাছ। 






০১:১০:২০২১
ভোর:০৫টা ২৩মি
কুমারঘাট।

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"৩

 চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়" আজ তৃতীয় দিন। 
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।    




                                                  উদাসী মেঘের ডানায় 
                                                                     (  য় পর্ব )                   
 

তৃষ্ণা কে রেষ্ট হাউজ থেকে তুলে নিলো অপু বললো
ঃবলো কোথায় যাবে?
ঃ তুমিই বলো।
ঃবেশ খানিকটা সময় এলোমলো ঘুরি তাহলে।
ঃবেশ লাগবে তাহলে। 

অপু গাড়ি চালাচ্ছে  নিরবে আর ভাবছে,কি আশ্চর্য
বিবাহিত জীবন ছিলো ভালোবাসাহীন,যেনো কামলীলার আসক্তিকরের মতন। হাজার চেষ্টা করে ও
মন পায়নি নীরার যেনো মাটির পুতুল কর্তব্য পালন
করে গেছে স্বাক্ষরের বিনিময়ে।
মনের অশান্তি বেড়েছিলো  তবুও চেষ্টা করে গিয়েছিলো, ওর জীবনের কথা শুনে মায়ায় মমতায়
ভেবেছিলো ভুলিয়ে দিবে।পারেনি তার অভিশপ্ত জীবনের কাছে হার মেনে কখন যে শান্ত নির্মল তৃষ্ণাকে ভালোলাগা শুরু হলো অজান্তে ভালোও বেসেছিলো,কিন্ত তৃষ্ণা চাকরিটা হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে
পালিয়ে গিয়েছিলো বিবাহিত জেনে। 

তৃষ্ণাও গভীর ভাবনার অথই জলে ডুবে স্মৃতির মালা গুনছে
আবার হারিয়ে যাওয়া রোদের ছায়ায় ফিরে দেখা
বড় ভয় হয় হারানোর,অপু আগের মতোনই আছে
হাসি-খুশি প্রাণচাঞ্চল্যকর কিন্ত ওর মুখখানা মায়ার
এক বেদনা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে তৃষ্ণার চোখ
এড়ায়নি। 

তন্ময়তা ভাঙ্গলো অপু -কি ভাবছো এতো নিরব কেন?
তুমি কি ভাবছো বলে দুজনাই হেসে উঠলো
ম্যাডাম এসে গেছি মার্কেটে নামো। 

কিছু মুক্তোর মালা টুকটাক আরও কিছু কিনলো
হঠাৎ পিছন থেকে গলায় হাত পড়তেই চমকে উঠে
পিছন ফিরতেই দেখে কোন ফাঁকে পাচঁ লহলের পিংক
পার্লের মালা কিনে গলায়পড়িয়ে দিয়ে ঠোঁটে আঙুল রেখে
চুপ করিয়ে দিলো।
বের হয়ে বাহিরে দাঁড়াতেই দমকা একটা বাতাস 
অনেকক্ষন আগেই খেয়াল করেছিলো জলপাই রং আকাশে কালো মেঘে ঢেকে গেছে, সেই কৃষ্ণ মেঘকে দ্বিখন্ডিতকরে ঝলসে উঠছে বিদূৎরেখা গাড়ি পার্কিএর কাছে পৌছানোর আগেই তৃষ্ণার শাড়ির 
আচঁল  উড়ছে চোখে মুখে কাঁধ ছাপানো চুলের রাশি
  এলোমেলো উড়ছে কোনরকম গাড়িতে উঠলো দুজন
অপু স্টিয়ারিং এ হাত রেখে তৃষ্ণা কে দেখছে হাসছে
মিটিমিটি তৃষ্ণার রাগ করে বললো -
ঃখুব মজা দেখছো না 

অপু হো -হো করে হেসে বললো-
এ আনন্দ তুমি বুঝবেনা, আমার চোখে তো তুমি দেখনি, অপূর্ব, যাদি আগের মতন আমার গাড়িতে
রংতুলি থাকতো বৃষ্টিতে ভিজিয়ে তোমার স্কেচ আঁকতাম। 

হয়েছে এবার ফেরা যাক, আমার রুম বুকিং করেছো
কালকের জন্য।
ঃএমা একদম ভুলে গিয়েছি।
ঃআরে  আমি কোথায় থাকবো রেষ্ট হাউজে একা
ঃকেন আমার রুমে
ঃকি বললে, আমি গাড়িতেই থাকবো।
ঃআরে পাগলি রুম নেওয়া হয়েছে,এতো অস্হির কেন?
আমার পাশের রুমটাই পেয়েছি ভয় নেই কালকে
সব এনে গুছিয়ে রেখে নীলগিরি যাবো পরশু রাত হবে
ফিরতে।
ঃনামো চলে এসছি হাতমুখ ধুয়ে বৃষ্টি দেখবো কিন্ত। 

হঠাৎ তৃষ্ণার মুঠো ফোনটা বাজতেই অন করে বললে
ঃসামিয়া আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো বারোটার ভিতর, সরি একা হয়তো তোর  খারাপ লাগছে। 

ঃনারে বরং ভালো  লাগছে তোকে হাসিখুশি দেখতে।
ও আমি তোর সুটকেস গুছিয়ে,রেখেছি সকালে যাবার
পথে তোকে হোটেলে রেখে আমি রওনা হবো
তাড়াতাড়ি চলে আসিস কিন্তু সব শুনবো।
এই বলে সামিয়া লাইনটা কেটে দিলো। 

দুজন এসে বসলো জালালার কাছে বৃষ্টির জলের
নৃত্যরত সাগর আবেগের ডানা মেলে দিয়েছে সইকে
পেয়ে,কি অদ্ভুত আশ্চর্য মায়াবী খেলায় মেতেছে বৃষ্টি
সাগরের সখ্যতায়।
অপু মৃদুকন্ঠে বললো ঃখুব সুন্দর প্রকৃতির এই রুপের
রহস্যময়তা,মানুষের জীবনে এমন কষ্ট যে কেন থাকে
আমার ইচ্ছে করে সাগরেরে মতন আনন্দে আত্মহারা
হয়ে প্রিয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে হারিয়ে যেতে।
একটু থেমে, তোমার ইচ্ছে হয়না তৃষ্ণা
তৃষ্ণা কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বললো কালকের ঃগল্পের বাকি অংশ টুকু বলবেনা।
অপুঃ আজ নাইবা শুনলে কাল বলি, এমন মোহময়ী সন্ধার কাছ থেকে কিছু না হয় স্বপ্নআঁকি চোখের তারায়
দেখি, যা আজও আটচল্লিশে চাপা পড়ে ছিলো
কঠিন বাস্তবতায়, তোমার পঁয়ত্রিশ বছরজীবনে সব হারিয়ে আজ নাহয় নতুন কিছু স্বপ্ন দেখো
কেন মিছে আড়ালে থেকে কষ্ট পাও, কয়দিনের জীবন
আমাদের বলো।
তৃষ্ণা নির্বাক বসে রইলো
ঃমোনালিসা একটা কথা বলি
ঃবলো
ঃনির্ভয়ে না ভয়ে
ঃনির্ভয়ে
ঃতোমার তো চুল পাকার বয়স হয়নি, এতো তাড়াতাড়ি
ঃতৃষ্ণা হা-হা-হা পাকেনি এটা হাইলাইট করেছি
আজকাল খুব ফ্যাসান এই কালালের।
ঃকিন্তু তোমাকে খুব মানিয়েছে কালো বার্গান্ডি দু,একটি চুল সাদা। 

ঃজানোতো চুলের কালার  আমার পছন্দ সব সময়ই।
অপুঃতোমার জীবনের সেই দুঃসময়ের কথা কি বলবে
আজও শোনা হয়নি।
তৃষ্ণা ঃ শুনবে?  তাহলে শোন।
আমি ম্যাথম্যাটিকস এর উপর মাষ্টার্স শেষ করে ভার্সিটিতেে জয়েন করেছিলাম,আর পিএইডি করার
ইচ্ছেও ছিলো।বিয়ে করারা ইচ্ছে ছিলোনা আমি ছিলাম পড়া পাগল একটি মেয়ে। কিন্তু বাবা ছিলোনা
মামার বাড়িতে থাকতাম মামা,মা প্রায়ই রাগারাগি করতে চৌত্রিশ এ পা দিয়েছি আর কবে বিয়ে করবো
মাও কান্নাকাটি করে আমার বিয়ে দেখে যেতে পারবেনা।শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম এডিশনাল সেক্রেটারি বিয়ে হলো, বিয়ের রাতেই যখন ঘরে ঢুকলো বদ্ধমাতাল, কথা নেই বার্তা নেই আমার
শরীরটা জানোয়ারের মতন ভোগ করে ঘুমিয়ে পড়লো।
এভাবেই কাটলো নয়টি মাস আমি ও নিরুপায়
মনে হলো লেখাপড়া শিখে আমি শেষ পর্ষন্ত শষ্যা
সঙ্গীনি হলাম, অনেক বুঝাতে চাইলাম তার ধারনা কাবিন নামার আর এক নাম বৈধ রক্ষিতা।
চলে ও যেতে পারছিনা মা,মামা আত্বীয়রা বলবে কি
হঠাৎ একদিক রাত একটার দিকে খবর এলেো পার্টি
থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওর গার্লফ্রেন্ড সহ এক্সিডেন্ট
করেছে বোর্ড হাউজ থেকে ফেরার পথে।
ছুটে গেলাম সবাই স্পটডেট দুজনাই,খবরের কাগজে
পড়েছো নিশ্চয়।
চল্লিশ দিন পর ওরা আমাকে অপবাদ দিলো রূপই কাল  আর বিদ্যা থাকলে কি হবে স্বামিকে বস করতে 
না পারায় ওর বাহিরের নেশা কাটেনি তাই আমি দায়ি।
সেই থেকে আর মামার বাড়িতেও যাইনি মাকে নিয়ে
বেশ আছি।আমার মতন অপয়া নারীদের ভালোবাসা
সংসার মানায়না অপু। 

ঃআজ আমি তোমাকে কিছুই বলবোনা তবে আমার
সামনে কখনো নিজকে আশা করি অপয়া বলবেনা
তেমার স্বামীর ভাগ্যখারাপ তাই তোমাকে চিনতে
পারেনি বলেই তার ভাগ্যকে সে নিজেই মৃত্যুর দিকে
ঠেলে দিয়েছে।
রাত হয়েছে চলো খেয়ে, তোমাকে রেষ্ট হাউজে রেখে আসি।
একি তোমার চোখে জল, এই বলে পকেট থেকে রুমাল বের করে জল মুছিয়ে দিয়ে বললো
ভেবে নাও তুমি একটি বছর দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে
তা অনেক আগেই অতীত হয়ে গিয়েছে।
বাঁচো বাচঁতে শিখো তৃষ্ণা।

                                                                                                                                                   চলবে....

রাবেয়া পারভীন এর ধারাবাহিক ছোট গল্প "কালো ক্যনভাস"৬

                                                নতুন  ধারাবাহিক "কালো ক্যনভাস "
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম এই লেখার আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে।  





                                                                 কাল ক্যানভাস
                                                                                               (ষ্ঠ পর্ব)


                                           প্রায় একসপ্তাহ  হাসপাতালে থেকে বাসায় ফিরল নীলা। নীলাকে  অনেক প্রশ্ন করেও নীলার বাবা মা  কোন তথ্য নিতে পারলেন না। শুধু নীলার  অবচেতন  মুখে " প্লিজ স্যার  আমাকে ছেড়ে দিন " এই কথা থেকে  জালাল  সাহেব  অনুমান করলেন  যে  এটা ইশতিয়াকের কাজ। তখন ইশতিয়াকের  মেসে  গিয়ে খোঁজ করে জানলেন  সে  চলে গেছে  কেউ  তার ঠিকানা জানেনা । একবার ভাবলেন পুলিশে  জানাবেন  কিন্তু  নিজেদের  মানসন্মানের কথা ভেবে  চেপে গেলেন।  কিন্তু এই নীলা আর সেই নীলা  রইলোনা। আগের সেই আনন্দময়ী  কিশোরীটি  হঠাৎ করেই যেন বদলে গেছে। অল্প আওয়াজেও সে ভয়ে কেঁপে উঠে। কারও সাথে কথা বলতে ভালো লাগতোনা। পরীক্ষাটাও আর দেয়া হলোনা । বন্ধুরা  ছুটে এলো, এসে দেখলো  নীলা অসুস্থ কিন্তু কি হয়েছে জানলোনা। কারো সাথে কথা বলেনা সে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে  কিছুক্ষন চেয়ে থেকে দু হাতে মুখ ঢেকে  ডুঁকরে  কাঁদে। পুরো  একটা বছর  বিভীষিকার মধ্যে  কাটলো নীলাদের পুরো পরিবারের। মা  বাবার স্নেহ আর ভালোবাসায় আস্তে আস্তে  সেরে উঠল  নীলা। কিন্তু পুরো একটা বছর  বৃথাই  খসে পড়ল  নীলার জীবন থেকে। বাবার উৎসাহে  আবার পড়াশোনা  শুরু করল নীলা।




                                                                                                                       চলবে ....

শ্যামল রায়



এইরকম একজন চাই


এইরকম একজন চাই সে কিনা
আমাকে খোঁজ নিয়ে বলবে তুমি কি করছো?
খেয়েছো ?শরীরটা ঠিক আছে তো?
এইরকম একজন মানুষ চাই।
এইরকম একজন মানুষ চাই সে কিনা
কথা বলতে বলতে ঘড়ির দিকে তাকাবে না
কথা বলতে বলতেই শুধুই আমার তোমার কথা
এমন একজন মানুষ চাই।
এমন একজন মানুষ চাই সে কিনা
আমাকে জড়িয়ে ধরবে, বুকের উপর দু হাত দিয়ে
সযত্নে আদর করবে, কখনোকখনো দুটোটে চুমু দেবে
শরীরের উপর দুপা দিয়েবলবে,তুমিতো শুধুইআমার 
এইরকম একজন মানুষ চাই সে কিনা,
আমার কথা ভাববে আমার কথা বলবে
হাজারো রকম সমস্যার মধ্যেও অজুহাত দেখাবেনা
সত্যিই আমি এরকম একজন মানুষ চাই।
এইরকম একজন মানুষ চাই বিতর্ক হবে না
অশান্তিতে দুজনা কেউই কথা বন্ধ রাখবো না
শুধুই যেন ভালোবাসাগুলো ফুল হয়ে ফুটে উঠবে।
এমন একজন মানুষ চাই সে কখনো অন্য কিছু খুঁজবে না
শুধুই আমি আর সে, নীল আকাশটা ,আর নদীর স্রোত দেখে
হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবো, বলবো ভালো আছি।
এমন একজন মানুষ আমি চাই, সে কিনা
আমাকে ভাববে ,আমাকে খোঁজ নেবে
আমার হাজারো রকম দুঃখের পাশে সুখ এঁকে দেবে
আমি এমন একজন মানুষ চাই সে কিনা
তার জীবনের অভাব গুলো আমাকে বলবে
কখনো একাধিক চোখে চোখ রেখে বলবে না
আমি অনেক কিছু করতে পারি, সাহস আছে আমার
আমি এমন একজন মানুষ চাই সে কিনা
সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে রং তুলিতে, শুধুই আমি থাকবো!
আমি এমন একজন মানুষ চাই সে কিনা?
অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে দুজনা পাশাপাশি থাকবো
অন্ধকার ঘনিয়ে এলে ঘুমিয়ে পড়বো এক চাদরে
সকালবেলা টায় এলোমেলো চাদরে হাত লাগাবে তুমি
বলবে আমরা বেশ ভাল আছি, আমরা বেশ ভাল আছি
শুধুই আমার জন্য তুমি ,তোমার জন্য আমি
এখানে অন্য কেউ নেই সযত্নে তুমি আর আমি।

গোলাম কবির





কতোবার বলবো 

  কতোবার বলবো যে এই হৃদয়টাই 
  তো তোমায় দিয়েই দিলাম।
  এখন আর দেবার মতো
  কিছু নেই যে দেবো।
  এরপর পড়ে থাকবে শুধু
  মরে যাবার পরে ভীষণ ঠাণ্ডা একটা শব!  
  এরপরও যদি কিছু চাও  
  তবে বলবো, " ভালবাসা ছাড়া 
  আর কিছুই তো ছিলো না আমার " !
  তা ছাড়া, ভালবাসা ছাড়া একজন কবির
  কাছে আর কী ই বা থাকে দেবার!

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৮

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "। 





                                                         টানাপোড়েন (১৮)

                                                     সোনালী রোদ্দুরে মেঘ


আজকে স্কুলে গিয়ে রেখার খুব ভালো লেগেছে। দীর্ঘ দিনের ক্লান্তি যেন কিছুটা রিম্পাদির সঙ্গে কথা বলে হালকা হতে পেরেছে। কত কথা জমেছিল দুজনার। আজ যেন মনে হল সোনালী রোদ্দুর উঁকি দিয়েছে।সোমদত্তার পার্থর কথাটা বলাতে রিম্পাদি বলল  ' দেখ ,এখন ওরা প্রাপ্তবয়স্ক ।বড় জোর বোঝানো যেতে পারে ।তার বাইরে তো আর তোর কিছু করার নেই। দেখ কি হয়?'
রেখা বলল  'সমুর ক্রাইসিস যে কী ?সেটাই তো বলছে না। ও মেটাতে চাইলে তবে তো মিটবে বলো। আমার তো বিরক্তি লাগছে আমার নিজের বোন বলে নয় চিরকালটাই শুধু ব্যক্তি স্বার্থ দেখে গেল। একবার কাকিমা কাকুর কথাটা তো ভাবা উচিত ছিল? ।আমাদের পরিবারের তো একটা রেপুটেশন আছে রিম্পা দি। তাছাড়া পাবলোর কথাটা ভাবল না ,ভাবো ..?
রিম্পা দি বলল   'জানিস তো আজকাল না এটা যেন একটা ক্রেজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে যে কার কখন ক্রাশ হয় কে জানে? আর তোকে বলেছিলাম না,  আরে ওই সৌরভের কথা ।সে তো দিব্যি মজেছে সেই তৃপ্তি না কার সঙ্গে?'
রেখা বলল  'তুমি কি না শিখার জন্য ওই পাত্র খুঁজছিলে?'
রিম্পাদি বলল  'আমি কি ছাই জানতাম? জেনে বুঝে কখনো এরকম একটা সম্বন্ধে দিতাম বল?'
রেখা বলল  'তা ঠিক?'
রিম্পাদি বলল  'হ্যাঁরে আজকাল কি পরকীয়াটাই বেশি প্রাধান্য পেল?'
রেখা একটু ভেবে বলল  'মন্দ কি? চেষ্টা করে দেখলে হয় ,কি বলো রিম্পা দি?'
রিম্পাদি হেসে বলল  'রেখা তোর দ্বারা এই কাজ হবে না। তোর দৌড় কতদূর আমি জানি?'
রেখা বলল  'কেন?তুমি জানো ,এখনো কতজন আমার হার্ট থ্রব?
রিম্পাদি বলল  'সেই জন্যই তো বলছি, যদি তাই হতো তাহলে কবে তুই...?
নে ছাড় তো অফ পিরিওডটা ছিল ভাগ্যিস। তাই এত কথা শেয়ার করতে পারলাম।'
রিম্পাদি বোকে যেতে লাগলো।জানিস তো এই কটা দিন আমার পেট ফুলে গেছিল ,তোর সাথে কথা না বলতে পেরে।'
রেখা রিম্পাদিকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে ' তুমি পারোও বটে।'
রিম্পাদি বলল  ,'সত্যি বলছি রেখা।'
রেখা বলল  :সেটা আমি জানি। এবার ওঠ  ট্রেন ধরতে হবে তো ,নাকি?
রিম্পাদি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল 'আরে সাড়ে চারটে বেজে গেল,? এই রেখা চল চল টো টো    ধরতে হবে।'
বাড়ি ফিরে এসে রেখা এই কথাগুলোই ভাবছে। আজ মনোজ অফিসে যায় নি ।তাই সন্ধ্যে থেকেই বাড়িতে ছিল। বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মনোজ একেবারে ব্ল্যাক কফি এনে হাতে তুলে দিল। সত্যি মনোজ আমার মনের কথাটা ভাল করে পড়ে ফেলেছে।
ট্রেনের ক্লান্তির রেস ,উস্কোখুস্কো চুল গেট দিয়ে ঢোকার সময়ই মনোজ হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। মনোজ এভাবে তাকালে ভীষণ  লজ্জা লাগে। গেট থেকেই ব্যাগগুলো আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিল। সত্যি রেখা কোনদিন গেট থেকে  মনোজের ব্যাগপত্র নিয়ে ঢোকে নি।
ঘরে ঢুকেই মনোজ রেখাকে জড়িয়ে ধরে বলল  'আমি 'তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।'
রেখা অবাক হয়ে বলল  'সে তো আমি জানি। কিন্তু এখন তুমি আমাকে ছাড়ো ।আমি ট্রেনে  করে এসেছি, নানা লোকজনের ঘাটাঘাটি ,করোণা পরিস্থিতিতে এগুলো মাথায় রাখো?'
মনোজ তবু রেখাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে রইলো।
রেখা মনোজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কারণ রেখা জানে মনোজকে যদি একটু মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়া হয় ।তাহলেই ওর শান্তি।
মনোজ বলল  'ঠিক আছে যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও বাকিটা রাত্রে?'
রেখা ওয়াস রুমে চলে যায়।
ওদিকে মনোজ বলল  ,'রেখা পুটুর বাড়িতে একটা অশান্তি হয়েছে। ও আসতে পারবে না। কালকে একটি নতুন মেয়ে আসবে ,সুমিতা।'
রেখা দরজাটা ফাঁক করে গলাটা বাড়িয়ে বলল ' কি হয়েছে গো? আর এই সুমিতাটাই বা কে?'
মনোজ বলল 'পুটুর জানাশোনা।'
রেখা বলল  'যাক  বাবা। দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।'
বাথরুমে ফ্রেশ হতে হতে ভাবছিল পুটু যখন পাঠিয়ে ছে, তাহলে ভালই হবে। এই ব্যাপারে পুটুর প্রতি অগাধ আস্থা।'
রেখা বাথরুম থেকে টাওয়াল মাথায় জড়িয়ে যখন বেরোলো মনোজ তখনও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সদ্য স্নান করে ওঠা কমনীয় স্নিগ্ধ ভাব মনোজের বরাবরই ভালো লাগে। 
তবুও মনোজ বলে  'ওঠে রোজ রোজ চুলটা কেন ভেজাও ?তুমি তো জানো তোমার ঠান্ডার ধাত আছে।'
রেখার এটা বরাবরের স্বভাব ।তাই বলে ওঠে ' কি করবো বলো, আমি যে, পারি না।'
নিরিবিলি ঘরটায় ধূপের গন্ধে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে
আর রেখাকে ও কি স্নিগ্ধ, কি মিষ্টি লাগছিলো ।মানোজ তো চোখ ফেরাতে পারছিলো না।
মনোজ যেদিন অফিস ছুটি নেয় বা অফিস ছুটি থাকে সেদিন ঠিকই এমনি করেই রেখাকে বেঁধে রাখতে চায়। হঠাৎই মনোজ বলল  'রেখা সমু ফোন করেছিল?'
রেখা অবাক হয়ে বলল   'তোমাকে? কেন?'
মনোজ বলল  'সেই একই কথা। মাথাটা বোধহয় গেছে। তোমার বোন হয়ে এরকম শিক্ষা কি করে পেলো?'
রেখা বলল  'এটা তো আমিও ভাবি। কাকু কাকিমাকে যে কি বলব ?আমার না কিছু মাথায় ঢুকছে না
হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে। মনোজ ই ফোনটা রিসিভ করে বলে '' হ্যালো'।
অন্যদিক থেকে আওয়াজ আসে 'আমি রিম্পা দি বলছি।'
কিন্তু কণ্ঠটায় যেন একটু বেদনা জড়িত।
 মনোজ বলল  'ঠিক আছে ।ধরুন দিদি। আমি রেখাকে দিচ্ছি।'
রেখা ফোনটা নিয়ে বলল  'হ্যাঁ। বলো রিম্পাদি। ঠিকঠাক পৌঁছেছো?'
রিম্পাদি কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল 'হ্যাঁ একটু আগে পৌঁছেছি।'
রেখা ভাবল রিম্পাদি এভাবে কখনো কথা বলে না কিছু একটা হয়েছে।
রিম্পাদি বলল ' তোকে কেউ ফোন করেছিল?'
রেখা বলল ' কি ব্যাপারে? কোথা থেকে ?বল তো?
রিম্পাদি বলল  'স্কুল থেকে। 'রেখা বলল  'না ফোন তো কেউ করেনি? হোয়াটসঅ্যাপটা চেক করি নি।'
রিম্পাদি ফোনেতে কাঁদছে আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে । রেখা উদগ্রীব হয়ে বলল  'কি হয়েছে বলো না ?আমার তো এবার হার্টফেল হবার অবস্থা ।কী হয়েছে বলো, প্লিজ।'
গৌরীদি বলেই আবার কাঁদতে শুরু করল।
রেখা বলল-'হ্যাঁ গৌরীদির কি হয়েছে?'
রিম্পাদি বলল  'আমি একজন অভিভাবিকাকে হারালাম।'
রেখা বলল-'কি বলছ রিম্পা দি? হারালাম মানে?'
রিম্পাদি বলল  'গৌরীদি আর আমাদের মধ্যে নেই রে।
রিটায়ার করার পর থেকেই একটা অবসাদে ভুগছিলেন ,বাড়িতে ভাই ভাইয়ের বউদের অসহযোগিতা ,নানা কারণ।'
রেখা বলল অথচ দেখো গৌরীদিকে কিন্তু দেখে কখনো বোঝা যেত না ।সব সময় একটা হাসি মুখ ছিল।'
রিম্পাদি বলল ' কিন্তু আমি আমার পরামর্শদাত্রী 'আমার শ্রদ্ধেয় দিদি ,তাকে আর কখনোই কোনো কথা বলতে পারব না ।দেখতে পারবো না ।এটা আমি ভাবতে পারছি না ।রেখা জানিস আমার জীবনেও কত ক্রাইসিস  এসেছিল ।সবকিছু আমি গৌরীদির  সঙ্গে শেয়ার করেছি ।গৌরীদি আমাকে রাস্তা দেখিয়েছে।'
রেখা বলল  'তুমি শান্ত হও রিম্পাদি, ভেঙে পড়ো না কি করবে বলো ?আসা যাওয়া এটাই তো আমাদের জীবন। সবকিছুই তো মেনে নিতে হবে বলো। তুমি ভেঙ্গে পড়লে আমি কোথায় দাঁড়াবো বল তো। রিম্পা দি তুমি আমাকে কত স্নেহ করো ।তুমিও আমার অভিভাবিকা স্বরূপ ।আমি চাইনা আমার এরকম একটি সুন্দর দিদিরৎমন ভেঙে যাক'।
রিম্পাদি বলল  'ঠিক আছে। রাখছি।'
ফোনটা ছাড়তেই মনোজ বলল ' গৌরীদির ?'
রেখা বলল গৌরীদি আর আমাদের মধ্যে নেই। কিছুদিন আগেই দীপ্তিদি এরপর গৌরীদি ভাবতেই পারছি না।'
রেখা ফোনটা ছেড়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো এই গৌরী দি যে পরিবারের জন্য তার ভালবাসাটাকে স্যাক্রিফাইস করেছিল আর সেই পরিবার আজ গৌরী দিকে অসহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। একটু শান্তি পেলো না জীবনে কিন্তু কখনো গৌরীদিকে দেখে বোঝা যেত না। এর মধ্যেই একটা রিক্সা পো পো শব্দ করতে করতে বেরিয়ে গেল। রাস্তার কুকুরগুলো কাঁদছে। রাত্রি নামলে অন্ধকার যেমন পৃথিবীকে গ্রাস করতে থাকে ঠিক তেমনি করে মনে হল যেন জীবন টাকে কেউ গ্রাস করে নিচ্ছে। কার স্থায়িত্ব কতটুকু কে জানে? কতদিনই বা এই পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ পান করবে? মৃত্যু এমন জিনিস যার হাত থেকে কেউ রেহাই পায় না। এসব ভাবতে ভাবতে মনে হল সোনালী রোদ্দুরে কখন মেঘ এসে ঢেকে দিয়ে গেছে। একটা চাপা দুঃখ কষ্ট থেকে রেখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন"১৮ ক্রমশ

আলমগীর হোসাইন





আভিজাত্য অবহেলা  

    
বসন্তের ফুল ফোঁটানো সুবাসিত গন্ধে 
তোমাকে দেখেছি ধানমন্ডির 
বিলাস  বহুল প্রাসাদের বাতায়ন পাশে 
সদ্য ফোঁটা লাল গোলাপ হাতে 
আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ।

কখনো বা পড়ন্ত বিকেলে ভ্রমণেরচ্ছলে শিশু পার্কে 
আবার কখনোবা ভোরের পাখি না জাগার পূর্বেই 
তোমাকে দেখেছি যৌবনে মুক্ত খগের মতো অবাধে 
প্রেমের অনন্তাকাশে বিচরণ অকুতোভয় প্রাণে।

সভ্যতার বিশাল এই নগরীতে
যেথায় তোমার পায়ের চিহ্ন পড়েছে 
সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি 
সর্বদাই আমাকে মুগ্ধ করেছে ।

প্রেমোভিলাশী মন সময়ের সুযোগে 
আনমনে নিবেদন হাত বাড়াতে গিয়ে 
পরাস্ত হয়েছি আভিজাত্যের অহংকারের কাছে 
অবহেলায় ঘৃণার চোখে উপহাস করেছো মোরে ।

সে দিন থেকে  যখন যে ভাবে 
দুঃখাচ্ছান্ন ভঙ্গুর হৃদয়ে বিস্মৃতি বহে 
চীর চেনা শহরের ওলি গলিতে 
পথ চলেছি একাকী হয়ে ।

জানিনা এ পথ  চলার শেষ কোথায় 
ভুল করে নিজেকে প্রশ্ন করি !
কেনইবা এমন ভালো লাগা ভালোবাসা
মানব সমাজে জীবন ভরি ।

রহমান মিজানুর এর প্রবন্ধ "বিশ্বাসের ভিত্তি বৈজ্ঞানি সত্যের চেয়েও দৃঢ়"




 বিশ্বাসের ভিত্তি বৈজ্ঞানি সত্যের চেয়েও দৃঢ়



বিজ্ঞান হলো পরীক্ষণের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের বিশ্লেষণলদ্ধ জ্ঞান এবং যুক্তি প্রয়োগ করে গঠিত তত্ত্ব বা সূত্র। বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলো সাধারণত চুড়ান্ত নয়, সময়ের সাথে সাথে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের প্রেক্ষিতে এগুলো পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানের গবেষণা মূলত দৃশ্যমান বা আপাত অদৃশ্য পদার্থসমূহ এবং শনাক্তযোগ্য শক্তির উপস্থিতির উপর। 
এই বিশ্বজগতে পদার্থ এবং শক্তি ছাড়াও আরও অসংখ্য  জিনিস রয়েছে, যেগুলো বিজ্ঞানের আওতাধীন বিষয়  নয়। বিজ্ঞান সেগুলো নিয়ে মাথাও ঘামায় না। যেমন, নীতি নৈতিকতা, ধর্মবিশ্বাস, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, আইন, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি, কৃষ্টি ইত্যাদি।
এছাড়া আরও কিছু জিনিস রয়েছে, যার ব্যাখ্যা দেওয়া এখনও বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যেমন, প্রাণ, আবেগ, সুখ দুঃখবোধ, চিন্তাশক্তি ইত্যাদি। 
বিজ্ঞান প্রধানত দু'টি প্রশ্নের জবাব নিরন্তর খুঁজে যাচ্ছে, 'কি' এবং 'কিভাবে'। প্রাপ্ত জবাবকে বিশ্লেষণ করে তৈরি করছে তত্ত্ব। এক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তাকে ভিত্তি ধরে আরও আরও তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছে। 
'কেন'; এই প্রশ্নের জবাব নিয়ে বিজ্ঞান ভাবে না।
যেমন পানি ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভারী। কারন এই তাপমাত্রায় পরমাণুগুলো পরষ্পর ১২০° কোণে অবস্থান নেয়। এইটুকু বিজ্ঞানের বিষয়। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, ৪° সেলসিয়াসে কেন সবচে ভারী হবে? কেন ৪ ডিগ্রিতেই পরমাণুগুলো ১২০° কোণে অবস্থান নেবে? যেখানে সহজাত তত্ত্ব হচ্ছে, একই অবস্থায় পদার্থের তাপমাত্রা যতো কমবে, ঘনত্ব ততোই বাড়তে থাকবে! বিজ্ঞান কিন্তু এই 'কেন'র জবাব দেবে না। 
আবার নীতি- নৈতিকতাও বিজ্ঞানের ভাবনার বিষয় নয়। হিরোশিমা নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা ফেলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরে ফেলা, পরিবেশ প্রকৃতি, অজস্র স্থাপনা মুহূর্তে ধ্বংস করে দেয়াকে বিজ্ঞানের সাফল্য হিসাবেই দেখা হয়। কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে? সে প্রশ্ন বিজ্ঞানকে করা অবান্তর, কারন এই বিষয়টি বিজ্ঞানের আওতাভুক্ত নয়।
বিজ্ঞান কিন্তু নতুন কিছু সৃষ্টি করে না, অর্থাৎ সে কোনকিছুর স্রষ্টা নয়। অস্তিত্ব আছে এমন কিছুর উপর তত্ব প্রয়োগ করে অন্য কিছুতে (বস্তু বা শক্তিতে) রূপান্তর ঘটায় মাত্র। ধরা যাক বিদ্যুতের কথা। বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য চুম্বক, চৌম্বকীয় পদার্থ, পরিবাহী, অপরিবাহী ইত্যাদি প্রতিটি জিনিসই পূর্বে থেকে পৃথীবিতে মজুদ ছিলো। সেগুলোকেই ঘষেমেজে, তত্ত্ব অনুযায়ী আকার দিয়ে তার উপর যান্ত্রিক বল (mechanical force) প্রয়োগ করে কিংবা বিভিন্ন কেমিক্যালের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। 
এই পৃথিবীতে কিংবা মহাবিশ্বে বিদ্যমান মহাকর্ষ বল, মহাজাগতিক চৌম্বক ক্ষেত্র, গ্রহ নক্ষত্রের ঘূর্ণন বল, কল্পনাতীত বিশাল নক্ষত্র গ্রহের সমন্বয়ে গঠিত জগৎ,  এর কোনকিছুই বিজ্ঞান তৈরি করেনি, অন্তত মানুষের বিজ্ঞান তো নয়ই। তৈরি করার ধারনা কল্পনাতীত, এর কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ ব্যাখ্যা করাও বিজ্ঞানের পক্ষে আজও পর্যন্ত অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বিজ্ঞানের উপর আস্থা রেখে মুক্ত জ্ঞান সমূদ্রে অবগাহন করার দাবী নেহায়েতই বালখিল্যতা নয়? 

#বিশ্বাস
সাধারণভাবে, কোন বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে তাকে সত্য/মিথ্যার নিরিখে যাচাই করার পর যদি 'মন' তাকে সত্য এবং সঠিক বলে গন্য করে, তার উপর আস্থা রাখে। তাহলে মনের এই রায়টিই হলো 'বিশ্বাস'। 

বিশ্বাস মানে আস্থা (faith) এবং ভরসা (trust)। সত্য মিথ্যা বিচার করে, রায় সত্যের দিকে গেলে তা বিশ্বাস, আর মিথ্যার দিকে গেলে অবিশ্বাস। এর মধ্যে আবার থাকতে পারে সত্য মিথ্যার দোলাচল। মিথ্যার সম্ভাবনা বেশি মনে হলে বিশ্বাস স্থির থাকবে না, উদ্ভব হবে সন্দেহের । বিশ্বাস এবং সন্দেহ পরষ্পর উল্টানুপাতিক। বিশ্বাস যত বাড়ে, সন্দেহ তত কমে বা ভাইস ভার্সা। 

কোনো তথ্য (information) বোধগম্য হওয়া এবং তাকে বিভিন্নভাবে যাচাই করার পর, সেই বোধকে সত্য বলে স্থায়ী ধারণা হলে তাকে জ্ঞান (knowledge) বলা যায়। সার্বিক জ্ঞান হচ্ছে পূর্বলব্ধ তথ্য এবং অভিজ্ঞতার সমষ্টি।  পর্যবেক্ষণের সাথে সাথে যুগপৎ যুক্তির সাহায্যে বিচার (judge) করে কোন বিষয় সত্য বলে সিদ্ধান্ত নিলে তা থেকে নতুন জ্ঞান জন্মায়। এইভাবে মনের মধ্যে উপলব্ধ সত্যগুলিকে জুড়ে যে তত্ত্বের জাল বোনা হয়, তাদের বিষয়বস্তুগুলি সামগ্রিকভাবে হলো জ্ঞান। আর তাদের গ্রহণযোগ্যতার সচেতন অনুমোদনই বিশ্বাস। 

জ্ঞানের বিশেষত্ব হলো, কেবলমাত্র পূর্বের অভিজ্ঞতাই নয়, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কিংবা অজ্ঞাত পরিস্থিতি সম্পর্কেও এর সাহায্যে অনুমান করা সম্ভব। সেই অনুমানের সাফল্য বিশ্বাসকে জিইয়ে রাখে। জ্ঞানের গভীরতা, ব্যপ্তি ও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাকে প্রয়োগ করে ভালো ফল লাভের উপর নির্ভর করে জ্ঞান ক্ষেত্রবিশেষে বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞা (wisdom) বা দূরদৃষ্টি (insight) ইত্যাদি হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল" ২

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায়  শুরু হলো  লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 



                                                               বনফুল



                                                            জুঁই সব ক্লাস শেষ করে গেইটে এসে দেখলো ওর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, জুঁই  গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো, কিছুটা সামনে যেতেই জুঁই পলাশকে দেখতে পেলো হেটে হেটে সামনের দিকেই যাচ্ছে। 
জুঁই ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলো  পলাশের সামনে এসেই গাড়ি থামলো, 
জুঁই গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বললে ভাইয়া  আমরা তো একই রাস্তায় যাচ্ছি, গাড়িতে উঠুন ড্রাইভার আপনাকে ড্রপ করে দিবে,  
নো থেংক্স একটু সামনেই বাস স্টপ, তুমি যাও বলেই পলাশ হাঁটতে শুরু করলো, জুঁই গাড়িতে বসে অনেক কিছু ভাবতে লাগলো। 
বাসায় পৌঁছে জুঁই ফ্রেস হয়ে সামান্য কিছু খেয়েই উপরে চলে গেল। 
বিছানায় শুয়েই চোখে ঘুম চলে আসে, কিন্তু কি আশ্চর্য আজ কিছুতেই ঘুম আসছে না। 
জুঁইয়ের বার বার পলাশের কথা মনে পড়ছে, জুঁই যত বার দেখেছে খুব আপন মনে হয়েছে, যেন অনেক দিনের চেনা..... 
পলাশ বাসায় ফিরে হাত মুখ দু'য়ে যা টেবিলে আছে মুখে গুঁজে যন্ত্রের মতো বেরিয়ে পরে টিউশনির জন্যে। চারটি টিউশনি করে, ওগুলো শেষ করে রাত নয়টায় বাসায় ফিরে নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করতে হয়।
মাঝেমধ্যে ছোট ভাইবোনের পড়াও পলাশই দেখে, 
পলাশেরও সব কিছুর ভিড়ে দুএকবার জুঁই মেয়েটির কথা মনে পড়েনি এমনটা না! মনে মনে এটাও ভেবেছে ওরা অনেক বড়লোক, আমার ওর কথা ভাবা ঠিক না,তবু চোখের সামনে ভেসে  উঠছিলো জুঁইের সুন্দর মুখখানা।
জুঁই ভাবছিল....
কি করে পলাশের সাথে একটু  ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়, 
পরদিন পলাশের সাথে দেখা হওয়া মাত্র সালাম দিয়ে জানতে চাইলো কেমন অছেন ভাইয়া?
 পলাশ বললো হে ভালো আছি ;
তুমি কেমন আছো? জুঁইও উত্তর দিল জ্বি ভালো,জুঁই চট করে বললো ভাইয়া আপনার ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে? না মানে কোনো বিষয়ে যদি না বুঝতে পারি আপনাকে ফোন দিয়ে পড়া বুঝে নিতে পারবো এই বলে বলে জুঁই খাতা এগিয়ে দিলো পলাশের দিকে, পলাশ খাতা হাতে নিয়ে খচখচ করে নাম্বার লিখে দিয়ে দ্রুত চলে গেল।

শিবনাথ মণ্ডল




এবার জামা দেবে মামা


যেদিন থেকে ঠাকুরের গায়ে
পড়েছে খড় মাটি
আনন্দে ছেলে মেয়েরা
করছে ছোটাছুটি।
দূর্গাপূজো এসেগেলে
স্কুলে পড়বে ছুটি
 বাবা আমায় কিনেদেবে 
লাল নীল জামা দুটি।
বাবা কবে আসবে মাগো
আনবে কবে জামা
মা বলছে শোনরে খোকা
জামা দেবে মামা।
বারে বারে বলে খোকা বাবা
আসবে কবে ফিরে
খোকা জানেনা বাবাতার
অকালে গেছেমরে।
মাগো তোমার আগের মত
নেইকো মুখে হাসি
কাঁদতে তোমায় মানা করেছে
আমার ছোটো মাসি।
সাদা কাপড় পড়া দেখলে বাবা
বকবে তোমায় খুব
খোকার কথাশুনে মায়ের 
ফেটে যায় বুক।
বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে
মা বলছে খোকা
বড়ো হলে বুঝবি সবিই
এখন তুই বোকা।।

asfds

LOVE

ffgh

LOVE