চলছে নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়" আজ তৃতীয় দিন।
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের পড়তে সহযোগিতা করুন লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম লেখার।
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে লিখতে সহযোগিতা করবে।
উদাসী মেঘের ডানায়
( ৩ য় পর্ব )
তৃষ্ণা কে রেষ্ট হাউজ থেকে তুলে নিলো অপু বললো
ঃবলো কোথায় যাবে?
ঃ তুমিই বলো।
ঃবেশ খানিকটা সময় এলোমলো ঘুরি তাহলে।
ঃবেশ লাগবে তাহলে।
অপু গাড়ি চালাচ্ছে নিরবে আর ভাবছে,কি আশ্চর্য
বিবাহিত জীবন ছিলো ভালোবাসাহীন,যেনো কামলীলার আসক্তিকরের মতন। হাজার চেষ্টা করে ও
মন পায়নি নীরার যেনো মাটির পুতুল কর্তব্য পালন
করে গেছে স্বাক্ষরের বিনিময়ে।
মনের অশান্তি বেড়েছিলো তবুও চেষ্টা করে গিয়েছিলো, ওর জীবনের কথা শুনে মায়ায় মমতায়
ভেবেছিলো ভুলিয়ে দিবে।পারেনি তার অভিশপ্ত জীবনের কাছে হার মেনে কখন যে শান্ত নির্মল তৃষ্ণাকে ভালোলাগা শুরু হলো অজান্তে ভালোও বেসেছিলো,কিন্ত তৃষ্ণা চাকরিটা হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে
পালিয়ে গিয়েছিলো বিবাহিত জেনে।
তৃষ্ণাও গভীর ভাবনার অথই জলে ডুবে স্মৃতির মালা গুনছে
আবার হারিয়ে যাওয়া রোদের ছায়ায় ফিরে দেখা
বড় ভয় হয় হারানোর,অপু আগের মতোনই আছে
হাসি-খুশি প্রাণচাঞ্চল্যকর কিন্ত ওর মুখখানা মায়ার
এক বেদনা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে তৃষ্ণার চোখ
এড়ায়নি।
তন্ময়তা ভাঙ্গলো অপু -কি ভাবছো এতো নিরব কেন?
তুমি কি ভাবছো বলে দুজনাই হেসে উঠলো
ম্যাডাম এসে গেছি মার্কেটে নামো।
কিছু মুক্তোর মালা টুকটাক আরও কিছু কিনলো
হঠাৎ পিছন থেকে গলায় হাত পড়তেই চমকে উঠে
পিছন ফিরতেই দেখে কোন ফাঁকে পাচঁ লহলের পিংক
পার্লের মালা কিনে গলায়পড়িয়ে দিয়ে ঠোঁটে আঙুল রেখে
চুপ করিয়ে দিলো।
বের হয়ে বাহিরে দাঁড়াতেই দমকা একটা বাতাস
অনেকক্ষন আগেই খেয়াল করেছিলো জলপাই রং আকাশে কালো মেঘে ঢেকে গেছে, সেই কৃষ্ণ মেঘকে দ্বিখন্ডিতকরে ঝলসে উঠছে বিদূৎরেখা গাড়ি পার্কিএর কাছে পৌছানোর আগেই তৃষ্ণার শাড়ির
আচঁল উড়ছে চোখে মুখে কাঁধ ছাপানো চুলের রাশি
এলোমেলো উড়ছে কোনরকম গাড়িতে উঠলো দুজন
অপু স্টিয়ারিং এ হাত রেখে তৃষ্ণা কে দেখছে হাসছে
মিটিমিটি তৃষ্ণার রাগ করে বললো -
ঃখুব মজা দেখছো না
অপু হো -হো করে হেসে বললো-
এ আনন্দ তুমি বুঝবেনা, আমার চোখে তো তুমি দেখনি, অপূর্ব, যাদি আগের মতন আমার গাড়িতে
রংতুলি থাকতো বৃষ্টিতে ভিজিয়ে তোমার স্কেচ আঁকতাম।
হয়েছে এবার ফেরা যাক, আমার রুম বুকিং করেছো
কালকের জন্য।
ঃএমা একদম ভুলে গিয়েছি।
ঃআরে আমি কোথায় থাকবো রেষ্ট হাউজে একা
ঃকেন আমার রুমে
ঃকি বললে, আমি গাড়িতেই থাকবো।
ঃআরে পাগলি রুম নেওয়া হয়েছে,এতো অস্হির কেন?
আমার পাশের রুমটাই পেয়েছি ভয় নেই কালকে
সব এনে গুছিয়ে রেখে নীলগিরি যাবো পরশু রাত হবে
ফিরতে।
ঃনামো চলে এসছি হাতমুখ ধুয়ে বৃষ্টি দেখবো কিন্ত।
হঠাৎ তৃষ্ণার মুঠো ফোনটা বাজতেই অন করে বললে
ঃসামিয়া আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো বারোটার ভিতর, সরি একা হয়তো তোর খারাপ লাগছে।
ঃনারে বরং ভালো লাগছে তোকে হাসিখুশি দেখতে।
ও আমি তোর সুটকেস গুছিয়ে,রেখেছি সকালে যাবার
পথে তোকে হোটেলে রেখে আমি রওনা হবো
তাড়াতাড়ি চলে আসিস কিন্তু সব শুনবো।
এই বলে সামিয়া লাইনটা কেটে দিলো।
দুজন এসে বসলো জালালার কাছে বৃষ্টির জলের
নৃত্যরত সাগর আবেগের ডানা মেলে দিয়েছে সইকে
পেয়ে,কি অদ্ভুত আশ্চর্য মায়াবী খেলায় মেতেছে বৃষ্টি
সাগরের সখ্যতায়।
অপু মৃদুকন্ঠে বললো ঃখুব সুন্দর প্রকৃতির এই রুপের
রহস্যময়তা,মানুষের জীবনে এমন কষ্ট যে কেন থাকে
আমার ইচ্ছে করে সাগরেরে মতন আনন্দে আত্মহারা
হয়ে প্রিয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে হারিয়ে যেতে।
একটু থেমে, তোমার ইচ্ছে হয়না তৃষ্ণা
তৃষ্ণা কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বললো কালকের ঃগল্পের বাকি অংশ টুকু বলবেনা।
অপুঃ আজ নাইবা শুনলে কাল বলি, এমন মোহময়ী সন্ধার কাছ থেকে কিছু না হয় স্বপ্নআঁকি চোখের তারায়
দেখি, যা আজও আটচল্লিশে চাপা পড়ে ছিলো
কঠিন বাস্তবতায়, তোমার পঁয়ত্রিশ বছরজীবনে সব হারিয়ে আজ নাহয় নতুন কিছু স্বপ্ন দেখো
কেন মিছে আড়ালে থেকে কষ্ট পাও, কয়দিনের জীবন
আমাদের বলো।
তৃষ্ণা নির্বাক বসে রইলো
ঃমোনালিসা একটা কথা বলি
ঃবলো
ঃনির্ভয়ে না ভয়ে
ঃনির্ভয়ে
ঃতোমার তো চুল পাকার বয়স হয়নি, এতো তাড়াতাড়ি
ঃতৃষ্ণা হা-হা-হা পাকেনি এটা হাইলাইট করেছি
আজকাল খুব ফ্যাসান এই কালালের।
ঃকিন্তু তোমাকে খুব মানিয়েছে কালো বার্গান্ডি দু,একটি চুল সাদা।
ঃজানোতো চুলের কালার আমার পছন্দ সব সময়ই।
অপুঃতোমার জীবনের সেই দুঃসময়ের কথা কি বলবে
আজও শোনা হয়নি।
তৃষ্ণা ঃ শুনবে? তাহলে শোন।
আমি ম্যাথম্যাটিকস এর উপর মাষ্টার্স শেষ করে ভার্সিটিতেে জয়েন করেছিলাম,আর পিএইডি করার
ইচ্ছেও ছিলো।বিয়ে করারা ইচ্ছে ছিলোনা আমি ছিলাম পড়া পাগল একটি মেয়ে। কিন্তু বাবা ছিলোনা
মামার বাড়িতে থাকতাম মামা,মা প্রায়ই রাগারাগি করতে চৌত্রিশ এ পা দিয়েছি আর কবে বিয়ে করবো
মাও কান্নাকাটি করে আমার বিয়ে দেখে যেতে পারবেনা।শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম এডিশনাল সেক্রেটারি বিয়ে হলো, বিয়ের রাতেই যখন ঘরে ঢুকলো বদ্ধমাতাল, কথা নেই বার্তা নেই আমার
শরীরটা জানোয়ারের মতন ভোগ করে ঘুমিয়ে পড়লো।
এভাবেই কাটলো নয়টি মাস আমি ও নিরুপায়
মনে হলো লেখাপড়া শিখে আমি শেষ পর্ষন্ত শষ্যা
সঙ্গীনি হলাম, অনেক বুঝাতে চাইলাম তার ধারনা কাবিন নামার আর এক নাম বৈধ রক্ষিতা।
চলে ও যেতে পারছিনা মা,মামা আত্বীয়রা বলবে কি
হঠাৎ একদিক রাত একটার দিকে খবর এলেো পার্টি
থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওর গার্লফ্রেন্ড সহ এক্সিডেন্ট
করেছে বোর্ড হাউজ থেকে ফেরার পথে।
ছুটে গেলাম সবাই স্পটডেট দুজনাই,খবরের কাগজে
পড়েছো নিশ্চয়।
চল্লিশ দিন পর ওরা আমাকে অপবাদ দিলো রূপই কাল আর বিদ্যা থাকলে কি হবে স্বামিকে বস করতে
না পারায় ওর বাহিরের নেশা কাটেনি তাই আমি দায়ি।
সেই থেকে আর মামার বাড়িতেও যাইনি মাকে নিয়ে
বেশ আছি।আমার মতন অপয়া নারীদের ভালোবাসা
সংসার মানায়না অপু।
ঃআজ আমি তোমাকে কিছুই বলবোনা তবে আমার
সামনে কখনো নিজকে আশা করি অপয়া বলবেনা
তেমার স্বামীর ভাগ্যখারাপ তাই তোমাকে চিনতে
পারেনি বলেই তার ভাগ্যকে সে নিজেই মৃত্যুর দিকে
ঠেলে দিয়েছে।
রাত হয়েছে চলো খেয়ে, তোমাকে রেষ্ট হাউজে রেখে আসি।
একি তোমার চোখে জল, এই বলে পকেট থেকে রুমাল বের করে জল মুছিয়ে দিয়ে বললো
ভেবে নাও তুমি একটি বছর দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে
তা অনেক আগেই অতীত হয়ে গিয়েছে।
বাঁচো বাচঁতে শিখো তৃষ্ণা।
চলবে....