০৪ জানুয়ারী ২০২২

মমতা রায়চৌধুরী /৮৫




উপন্যাস 


টানাপোড়েন ৮৫ 
আঘাত

মমতা রায়চৌধুরী



গতকাল রাতে একটা উত্তেজনার ঘোর ছিল রেখার মনে ।অনিন্দিতার বিয়ে। তাহলে শেষ পর্যন্ত অনিন্দিতার বিয়েতে যেতেই হবে। রিম্পাদি কায়দা করে গিফটা আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। বড়দি সরাসরি নিজের বাড়ি থেকে যাবেন, নিজের গাড়িতে। শুভ্রা, আমি রিম্পাদি , অনুরাধাদি এক গাড়িতে যাব। রিম্পাদি গাড়িটা নিয়ে আসবে অনুরাধাদিকে তুলবে ,তারপর আমাকে, তারপর শুভ্রাকে এই পর্যন্ত কথা হয়েছে। কে কি সাজগোজ করবে সেই প্রস্তুতি চলছে।
রিম্পাদি গতকাল পার্লারে চুলের হেয়ার স্ট্রেটনিং করিয়েছে। শুভ্রা লেয়ার কার্ট ,সঙ্গে স্ট্রেটনিং করেছে।
শুধু আমি চুল কাটাতে পারি নি। যাব কিনা সেটা নিয়েই তো প্রথম থেকে ডিসিশন নিতে পারি নি। যাক গে যা হবে হবে ।সবার মাঝে না হয় একটু নিষ্প্রভ থাকবো। ভাবতে ভাবতেই ওয়ারড্রব খুলে শাড়িগুলো সিলেট করছে কোনটা পড়বে।
রেখা সব শাড়িগুলো ঘাটার পর মনে মনে ভাবছে"ওপারা সিল্ক  পড়ব, নাকি কাতান সিল্ক ?'
ভেবে যখন কোনো ডিসিশন নিতে পারল না তখন দুটো শাড়ি নিয়ে গিয়ে মনোজকে দেখাল। মনোজ
তখন ল্যাপটপ খুলে একটা কাজ করছিল মনোযোগের সঙ্গে।ঠিক তখনই রেখা ঢুকলো শাড়ি দুটো নিয়ে ঝড়ের বেগে।
রেখা হঠাৎ গিয়ে মনোজকে বলল' কোন শাড়ি পড়ি বলো তো? '
মনোজ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলল 'তুমি যেটা পরবে, সেটাই ভাল লাগবে।'
 রেখা আবার বললো  'বলো না কোন শাড়ি টা পড়বো?'
 মনোজ বলল' আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি রেখা।'
 রেখা বলল' একবার আমার দিকে তাকাও না? তাকিয়ে বলো।'
 মনোজ রেখার দিকে  বিরক্তিতে
 তাকিয়ে বলল 'ঠিক আছে বলো?'
 রেখা এমন ভাবে মনোজের দিকে তাকিয়েছে যে মনোজ হেসে ফেলেছে। ল্যাপটপ টা সরিয়ে রেখে রেখার কাছে এসে বলল 'দেখি শাড়ি দুটো ।নীল শাড়ি টাও ভালো লাগছে, আবার তোমার হলুদ ওপারা সিল্কটাও ভালো লাগছে।মনোজ বলল
 'এবার তো আমি কনফিউজড। কোনটা তোমাকে সাজেস্ট করি বলো তো?'
 রেখা এবার বলল এভাবে বলোনা আমি নিজেই কনফিউজড।
 মনোজ বলে একটা কথা বলব?
 রেখা খুব উৎসুক ভাবে বলল বলো?
 তুমি এক কাজ করো দুটির শাড়ি তুমি পড়বে?
 রেখা বললো তুমি কি পাগল হয়ে গেলে দুটো শাড়ি আবার কিভাবে পড়ে একসঙ্গে?
 মনোজ বলল 'আমি কি তাই বলেছি ,দুটো শাড়ি একসঙ্গে পড়বে?'
 রেখা বলল' তাহলে?'
 মনোজ  বলল 'বাড়ি থেকে যখন বেরোবে তখন একটা শাড়ি পড়বে। আর যখন অনিন্দিতার বাড়ি যাবে তখন..।'
 রেখা বলল 'তখন আবার আমি শাড়ি চেঞ্জ করবো তাই তো?'
 মনোজ বললো  'হ্যাঁ ,একেবারে সিম্পিল পথ দেখালাম।'
 রেখা মনোজের মাথায় চুল ধরে একটু ঝাকিয়ে বলল 'সত্যিই তুমি ক্ষেপে গেছ মনে হচ্ছে?'
 মনোজ বলল ' কেন আমি কি খারাপ কথাটা বলেছি? অনেকেই তো বিয়ে বাড়িতে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে করে না?'
 রেখা বললো 'থাক তোমার ওই সাজেশন আমার দরকার নেই ।আমি চললাম।'
 মনোজ রেখার হাত দুটো ধরে টেনে বলল'অ্যাই রেখা ,শোনো ,শোনো, শোনো ।রাগ ক'রো না। আসলে দুটো শাড়িই সুন্দর।এ জন্যই তো বললাম এই কথা।'
 রেখা এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল
  নিজের ঘরে ।ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের থেকেই সিলেক্ট করলো হলুদ ওপারা শাড়িটাই সে পড়বে। আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের মনেই মনোজের কথাটা মনে পড়ে হাসতে লাগল আর ভাবতে লাগলোএক হিসেবে মনোজ ঠিক ই  বলেছিল।'
 মনোজ চুপিসারে ঘরের দরজার কাছে দাড়িয়ে রেখাকে লক্ষ্য করছিল। শেষে মনোজ রেখার কান্ড কারখানা দেখে গুনগুনিয়ে বলল'তুমি কি এমনি করে থাকবে দূরে আমার এ মন মানে না...।'
 রেখা জিভ ভাঙ্গিয়ে বলল 'আমার বয়েই গেছে।'
 মনোজ এসে জোর করে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।
 আর বলল 'প্লিজ রাগ করো না।'
 রেখা বলল 'না  ছাড়ো প্লিজ।'
 মনোজ বলল 'আমি খোলা জানালা ।তুমি ওই দখিনা বাতাস ।আমি নিঝুম রাত ।তুমি কোজাগরি আকাশ।'
 রেখা বলল' বেশ বেশ বুঝতে পেরেছি। এবার ছাড়ো।'
 তারপরে রেখা বলল' আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ...।'
 মনোজ বলল 'এবার আমি খুশি হয়েছি।'
 রেখা বলল 'ছাড়ো আমি আমার বেবিদের খাবারগুলো দিয়ে আসি ।তারপর নিজেকে রেডি হতে হবে।'
 মনোজ  বলল 'আমার খাবার করো নি তো?'
 রেখা বলল 'বাহ রে তুমিই তো বললে  আজকে  খাবার করতে হবে না । বিরিয়ানি কিনে এনে খাবে?'
 মনোজ বলল' সেজন্যই তো  আবার জিজ্ঞেস করলাম।'
 রেখা বলল 'আচ্ছা মকা পেয়ে গেলে বাইরের খাবার খাবে ।তোমার রুচি বদল হবে। তোমার বউয়ের রান্না আর ভাল লাগছিল না আজকাল।'
 মনোজ আবার রেখাকে ধরে বলল 'অ্যাই আমি কখন বলেছি তোমার রান্না ভালো নয়। প্লিজ এভাবে ব'লো না।'
 রেখা বলল 'ঠিক আছে সব বুঝতে পেরেছি ।এবার আমি যাই ছানাপোনাদের খাওয়াতে।'
 রেখা তারপর বাচ্চাদের খাওয়াতে গেল ও বাবা আজকাল যা হয়েছে এদের খাবার নিয়ে গেলে আগে ওদেরকে আদর করতে হবে যে যার মত অভিমানে ন শুয়ে পড়ে ।প্রত্যেককে কোলে তুলতে হবে, আদর করতে হবে ,তারপর ওরা খাবে। খাবার নিয়ে গিয়ে
 রেখা বলল 'পাইলট, তুলি ,লিলি সব উঠে পড়ো সোনা খাবে।'
 ওরাও নিজেদের ভাষায় 'অউ অউ  'আবার কেউ  'ঘেউ ঘেউ' করে উত্তর দিল।
 রেখা এদেরকে খাইয়ে তারপর নিজের রেডি হবে বলে মনোজকে বলল 'তুমি যাও না তোমার পাশের ঘরে।' 
মনোজ বলল 'কেন আমি থাকলে অসুবিধা কি?'
রেখা বলল 'বাহ রে আমি শাড়ি চেঞ্জ করবো আমার বুঝি লজ্জা করে না?'
মনোজ অবাক হয়ে রেখার কাছে গিয়ে রেখার মুখটি তুলে ধরে বলল' হ্যাঁ ,কি বলছো গো আমার কাছে তোমার লজ্জা?'
 এর মধ্যেই রিম্পাদি ফোন করেছে।'রিংটোন বাজতে শুরু করলো'আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল। বাতাসের আছে কিছু গন্ধ...।'
 রেখা মনোজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফোন ধরে বলল 'হ্যালো বলো?'
 রিম্পাদি বলল 'কিরে তুই রেডি হচ্ছিস তো?'
 রেখা বলল ' রেডি হবো।'
 রিম্পাদি বলল' ওকে ।আমরা কিন্তু কাঁচরাপাড়া এসে গেছি।'
 রেখা বলল 'ওকে।'
 এরমধ্যে রেখা রেডি হতে শুরু করে দিল।
 রেখা রেডি হয়ে মনোজকে বলল' ওদের খাবারটা ঠিক সময় দিয়ে দিও। আর মিলিকেও‌ দিয়ে দিও। নিজে খেয়ে নিও।'
 মনোজ  হেসে বলল 'ওকে ম্যাডাম।'
 এমন সময়ে গাড়ি এসে হর্ন বাজাতে শুরু করলো। রেখা বললো 'দেখো নিশ্চয়ই রিম্পাদিদের গাড়ি এসেছে।'
 এবার রিম্পাদি গাড়ি থেকে নেমে কলিং বেল  বাজাল'জয় গনেশ ,জয় গনেশ ,জয় গনেশ দেবা... মনোজ বলল 'ওই দেখো দেবা গণেশ বাজছে। '
 রেখা মনোজকে ধাক্কা দিয়ে বলল'যাও না দরজাটা খোলো না?'
 মনোজ বলল' সুন্দরী বউকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।'
 রিম্পা দি আবার ডাকতে শুরু করলো চেঁচিয়ে 'মনোজ ,রেখা রেখাআ.আ।'
 মনোজ এবার দরজা খুলে বলল ' আরে দিদি, আসুন ,আসুন ,আসুন ভেতরে আসুন।'
 রিম্পাদিয বলল' আরে না রে বাবা ,এখন ঢুকলে হবে না ।হয়েছে রেখার?'
মনোজ বলল' হ্যাঁ ও তৈরি হয়ে গেছে ,আপনাদের ভিতরে নিয়ে আসতে বলল।'
 রিম্পাদি গাড়িতে বসা অনুরাধা দিদিদের দিকে তাকিয়ে বলল 'না ,না ,না ভেতরে গেলে হবে না।'
 মনোজ বলল 'এত দূর থেকে আসছেন একটু রেস্ট নিয়ে জল মিষ্টি খেয়ে যান।'
 রিম্পাদি বলল ''না বাবা ,তাহলে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে আর কি খাব?'
 অগত্যা মনোজ রেখাকে ডাকল' রেখা, রেখা , রেখা .আ. আ .
 রিম্পাদিরা কিন্তু ভেতরে আসছেন না । 'তোমাকে বের হতে বললেন।'
 রেখা বলল" সে কি?
 রেখা বাইরে বেরিয়ে এসে বলল এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না রিম্পা দি ,অনুরাধাদি  সবাইকে ভেতরে আসতে বলছি।'
 রিম্পাদি বলল ' না রে দেরি হয়ে যাচ্ছে। চল চল চল আবার ফিরতে হবে।'
 রিম্পাদি রেখাকে হাত ধরে টেনে তুলল গাড়িতে।
 গাড়ি ছাড়ার সময় সবাই মিলে মনোজকে হাত নেড়ে বলল 'আসছি।'
 তারপর গাড়ি ছুটতে শুরু করল। গাড়িতে তখন গান বাজছে 'আমার পরানো যাহা চায় ,তুমি তাই, তুমি তাই গো...।"
 গাড়ি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরে এসে পৌঁছালো। কৃষ্ণনগরে শুভ্রাকে তুলে তারপর গাড়ি ছুটলো বেথুয়া ডহরির উদ্দেশ্যে।
 শুভ্রাএকটা ব্লু কালারের বেনারসি পড়েছে খুব ভালো লাগছে দেখতে।
 রেখা বলল 'আরে শুভ তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না। দেখিস বাবা ,আজকে বিয়ে বাড়িতে নজর না লেগে যায়।'
 শুভ্রা বললো' কি যে বলো না দিদি, তোমার কাছে আমি....?'
 রিম্পাদি বললো 'ঠিকই বলেছিস।'
 অনুরাধাদি বরাবরই চুপচাপ  আর রাশভারী প্রকৃতির। তবুও এই কথাতে অনুরাধাদি হেসে ফেললেন।
 কথা বলতে বলতে আর বাইরে জানলা দিয়ে দৃশ্য দেখতে দেখতে গাড়ি এসে পৌঁছালো বেথুয়াডহরি ''আপনজন' লজের কাছে ।
 গাড়ি থেকে নামার আগে প্রত্যেকে একটু নিজের নিজের চুল আঁচড়ে নিল। শুভ্রা আরেকটু লিপস্টিক ঘষে নিল।
 রিম্পাদি গাড়ি থেকে নেমে তাড়া দিতে লাগল' কিরে তোদের হলো?'
 রেখা  শাড়ি ঠিক করতে করতে বলল '' এই তো হয়ে গেছে।'
 অনিন্দিতার বাবা গাড়ির সামনে এসে বললেন 'আপনি রিম্পাদি আর তোমরা  রেখা শুভ্রা তাই তো?'
 রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ একদম ঠিক ধরেছেন।'
 রেখা হাতজোড় করে বলল 'নমস্কার ভাল আছেন তো? '
 অনিন্দিতার বাবা একগাল হেসে বললেন  ভালো আছি  ।তবে তোমরা আসাতে সাথে ভীষণ খুশি হয়েছি।'
 ভেতরে যাওয়া হোক
 রিম্পাদি বলল 'সেই ভাল।'
 গেট দিয়ে ঢুকতেই  সঙ্গে দেখা।' কি মিষ্টি লাগছে তন্দ্রা তোমাকে ।'রেখা বলল' তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে'
 তন্দ্রা একটু হেসে বলল ' দিদি, চলুন স্টল বসেছে ফুচকার। খাবেন?'
 রিম্পাদি আর শুভ্রা ফুচকার নাম শুনে জিভে জল আসতে শুরু করলো। রিম্পাদি বলল 'আর দেরি কেন চলো।,'
 রিম্পাদি আর শুভ্রা টপাটপ জল ফুচকা খেতে লাগলো। আর রেখার দিকে তাকিয়ে রিম্পাদি বলল '
 একটু দই ফুচকা খা না রে বাবা ।তুই তো বাড়িতে দই ফুচকা নিয়ে গেলে খাস।'
 তন্দ্রা বলল 'দিদি এইগুলো খেয়ে দেখুন খুব টেস্টি। এরা আমাদের এখানে সব থেকে বেশি ভালো বানায়। তাই এদেরকেই দিদির বিয়েতে অর্ডার দিয়েছি।'
 রেখা বলল 'ঠিক আছে । আচ্ছা, দিন তো আমাকে দুটো ফুচকা।'
 তন্দ্রা বলল অসীমদা ' চারটে ভালো করে দই ফুচকা বানিয়ে দিন।'
 অসীমদা ঘাড় নেড়ে ভার থেকে দই কাটছিলেন আর তারপর কাজু কিসমিস সমস্ত কিছু বের করে একটা জায়গায় রাখলেন ।এরপর ফুচকা রেডি করে রেখার হাতে দিলেন।
 রেখা ফুচকার বাটিটা হাতে নিয়ে একটা মুখে দিলে দেওয়ার পর বুঝল ফুচকাগুলো সত্যিই খুব ভালো। আরও চারটি ফুচকা খেল।'
 অসীমদা জিজ্ঞেস করলেন'দিদি কেমন লাগছে?'
রেখা ঘাড় নেড়ে বললো' ভালো।'
অসীমদা বললেন্'আর চারটে নিন না দিদি।'
রেখা বললো 'ঠিক আছে, দুটো দিন।'
অসীমদা খুব খুশি মনে দুটো নয় চারটে ফুচকা দিলেন।
রেখা বলল 'এতগুলো দিলেন?'
অসীমদা একগাল হেসে বললেন 'খান, ভালো লাগবে।" 
রেখা বলল' হ্যাঁ ,ভালো তো লাগছে কিন্তু আরও তো কিছু খাবার খেতে হবে?'
রিম্পাদি বলল  'অনিন্দিতার সাজগোজ হয়েছে? নিয়ে এসেছে এখানে।'
তন্দ্রা বলল এক্ষুনি চলে আসবে দিদি। একটু ওয়েট করুন প্লিজ।'
রিম্পাদি বলল 'হ্যাঁ ,সে তো আমরা ওয়েট করব কিন্তু গিফট আগে দিতে পারলে ভালো হতো ।আমরা তো আবার ফিরব এবার খাবার-দাবার খেতে যাব।'
তন্দ্রা বলল 'আসলে দিদি ,পার্লারের মেয়ে একটু দেরি করে এসেছে ,দিদিকে সাজাতে।'
এমন সময় অনুরাধাদি বলে উঠলেন' ওই তো অনিন্দিতা?'
সবাই তখন উৎসুক হয়ে অনিন্দিতাকে দেখছে।
রেখা বলল 'কি ভাল লাগছে ।'
অনিন্দিতা কিন্তু রেখার কথার কোন রেসপন্স করলো ।না ,না হাসলো ও না।'
অনিন্দিতা জিজ্ঞেস করল' কখন এসেছ? '
রিম্পাদিও বলল 'তোমরা কখন এসেছ?'
রেখা বলল  'এই তো একটু আগে।'
এখনো কোন রেসপন্স করলো না অনিন্দিতা।
রেখা রিম্পাদির উত্তরগুলো নিজের কন্ঠে বসিয়েছিল 
অনিন্দিতা শুভ্রাকে বলল 'বাবা তুই তো নীল পরী সেজেছিস?'
শুভ্রা শুধু মিষ্টি করে হাসলো। এরপর অনুরাধা দিকে বলল
অনুরধাদিকে বলল' আস্তে কোন অসুবিধা হয় নি' তো?'
এবার রেখা খুব ইনসাল্ট বোধ করলো।
রিম্পাদি ব্যাপারটা খেয়াল করে রেখাকে বলল' আগে খেতে বসি। আরো বললো অনিন্দিতা এই তোর গিফট তোদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক, সুন্দর হোক, মধুর হোক ,এই কামনা করি।'
অনিন্দিতা বলল 'থ্যাংক ইউ দিদি।'
বিয়ে বাড়িতে গান বাজছে ' ও আধো আলো ছায়াতে, কিছু ভালোবাসাতে। আজ মন ভোলাতে, হবে বল কার ? কারোর  নয় শুধু যে আমার..।'
কিন্তু রেখা যে প্রাণোচ্ছলতা নিয়ে অনিন্দিতার বিয়েতে এসেছিল মনটা খুবই ভারাক্রান্ত হয়ে গেল অনিন্দিতার ব্যবহারে। মনে মনে ভাবছিল তার থেকে না আসলেই ভাল হত। অনিন্দিতার সাথে এতটাই ক্লোজ ছিল রেখা কিন্তু আজকে নিজের বিয়ের দিনে যেভাবে  রেখাকে আঘাত করলো ,এই অপমানের জ্বালা কিছুতেই ভুলতে পারছে না রেখা। সময় চলে যাবে অনেক কিছু বদলে দেবে কিন্তু এই ব্যবহার রয়ে যাবে।

কবি মোঃ ইমরান হোসেন এর কবিতা





খোল শিক্ষাঙ্গন
মোঃ ইমরান হোসেন

দুঃখজনক হলেও সত্য 
এটাই দেশের হাল 
সবই ঠিকঠাক চলছে শুধু 
শিক্ষা টালমাটাল ।

অন্ন দেবে দেবে সাইকেল 
দেবে মোবাইল 
রাখবে শুধু দেশটাকে আজ 
শিক্ষাক্ষেত্রে নীল। 

ক্লাস না হলেও থাকছে খোলা 
সমস্ত পাঠশালা
শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক গন 
শ্রেণী কক্ষে তালা। 

খোলা থাকছে  পানশালাটা
মাতাল হবে দেশ 
মদের টাকায় আমলারা সব 
আয়েশ করবে বেশ । 

ক্লাস না হলেও ক্রমোন্নত 
হবে পদোন্নতি 
রেজাল্ট হবে মার্কশিটে হাই 
বাস্তবে হীনয্যোতি। 

উচ্চতর ডিগ্রি থেকেও
থাকবে শিক্ষাহীন
চক্ষু থেকেও দেখবে আঁধার
থাকবে দৃষ্টিহীন। 

কর্মক্ষেত্রে গিয়ে এরা 
ভাঙবে দন্ত নিজ
সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেবে
মুর্খতারই বীজ। 

রাজনীতি তো অনেক হল 
দেখালে আস্ফালন
এবার একটু বন্ধ কর
খোল শিক্ষাঙ্গন।

শামীমা আহমেদ /পর্ব ৪৮





শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
(পর্ব ৪৮)
শামীমা আহমেদ 

 

রাহাত অফিসের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে কথাটা জানাতে হবে। নয়তো বিশাল এক কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে!মা ভীষণ অপ্রস্তুত হবে। এমনটি ভেবে শায়লা দ্রুতই ঘুম থেকে উঠলো। সকালের নাস্তার আয়োজন শেষে রাহাতকে ডাইনিং টেবিলে রেখে শায়লা মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে নিলো।মা বিছানায় নেই।তার মানে মা জেগে গেছেন।ওয়াশ রুমে আছেন।এই ফাকে শায়লা কথাটি রাহাতকে জানালো। 
গতকাল শিহাব আমাকে বাসার গেটে নামিয়ে দেয়ার সময় আমার পিছনে রিকশায় নিচ তলার রুহি খালা ছিল।সে শিহাবকে দেখেছে।আমি বাইক থেকে নামছিলাম,বিস্ময়ে তার চোখ ফেটে যাচ্ছিল।
এখন কি করা যায়। তুমি অফিসে বেরিয়ে গেলেই রুহি খালা আসবে।আর মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে যখন সব বলবে মাতো বিশ্বাসই করতে চাইবে না।আর যখন বুঝবে এটা সত্যি তখন মা যতটা আঘাত পাবে তা কিভাবে সামাল দিবো! শায়লা এই ভেবে অস্থির হয়ে উঠছে।রাহাতের কাছে এর সমাধানের উপায় বের করে দিতে বলছে।
সবকিছু শুনে রাহাত কিছুটা ভেবে নিলো।শিহাব ভাইয়া তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে এটা ঠিক কিন্তু এই যে পাড়া প্রতিবেশীরা তা দেখে ফেললো এটা তো একটা বিরাট ঝামেলা হবেই। তুমি একটা বিবাহিতা মেয়ে রাত করে সেজেগুজে একজন অচেনা মানুষের বাইক থেকে নামবে,বিষয়টিতো আমাদের সমাজে গ্রহনযোগ্য হবে না। দেখা যাক কি করা যায়।তবে যাই হউক মাকে এখনই সব জানানো প্রয়োজন।এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমরা ভাইবোন নিতে যাচ্ছি, মাকে তা জানানো উচিত।মায়ের দোয়া ছাড়া তো নতুন জীবন শুরু করা যাবে না।শায়লার চোখ মুখ ভীতিকর হয়ে উঠলো! মা কিভাবে নিবে ব্যাপারটা?
মা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং এ এলো।প্রতিদিনই সে রাহাতকে অফিসের জন্য বিদায় জানায়।
রাহাত বললো,মা বসো।তোমার সাথে আমার একটু জরুরি কথা আছে।শায়লা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাহাত তাকে বসতে বললো। রাহাত কি কিছু বলতে চায়? মায়ের জিজ্ঞ্যাসু চোখ! তবে কি শায়লার কানাডা যাওয়ার কাগজপত্র এসে গেছে! শায়লা না থাকলে কে তাকে দেখবে? পরক্ষণেই ভাবলো,ছি ছি কেন এমন ভাবছি? মেয়েতো তার স্বামীর সংসারে যাবে, এটাইতো আনন্দ! 
মায়ের ভাবনাকে একেবারে উল্টে দিয়ে রাহাত যা শোনালো শায়লার মা,লায়লা আঞ্জুম, একেবারেই তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না!
রাহাত জানালো,মা আজ হয়তো নিচতলার রুহি খালা আসতে পারে।উনি এসে শায়লা আপুকে নিয়ে যা বলবে তুমি শুধু চুপ করে শুনবে। তার কোন প্রশ্ন বা উত্তর করো না।শুধু শুনে রাখবে।আমি সময়মত তোমাকে সব জানাবো।রাহাত কি বলছে, আর এসব কেনই বা বলছে মা কিছুই বুঝতে পারছিল না।শুধু রাহাতের কথায় মাথা ঝুকালো। তবে কি কানাডার ব্যাপারে কিছু ঘটেছে?
শায়লা একেবারে শব্দহীন হয়ে শক্ত মনোভাবে টেবিলে বসে রইল।
রাহাতের অফিসের গাড়ি চলে এসেছে।রাহাত দরজার কাছে গেলো।শায়লা দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। রাহাত জানালো আমি আজই শিহাব ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। কিভাবে দ্রুত সবকিছু করে ফেলা যায়।আপু তুমি টেনশন করোনা৷ রাহাতের কথায় শায়লা আস্বস্ত হলো।
নাস্তা পর্ব শেষ করে চায়ের মগ নিয়ে শায়লা নিজের ঘরে এলো।আজ আর রান্নার চাপ নেই।গতকাল নায়লার বাসা থেকে অনেক খাবার পাঠিয়েছে।শায়লাদের তিনদিন রান্না না করলেও চলবে। কাজের বুয়া আজ শুধু ঘরবাড়ি থালাবাসন  পরিষ্কার করবে আর  কাপড় ধুয়ে চলে যাবে। শায়লা বেশ অনেকক্ষন হলো মোবাইল থেকে দূরে ছিল।ঘরে এসেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে শিহাবের মেসেজটা দেখে নিলো।শুভ সকাল।শায়লা আমার প্রতি বিশ্বাস রেখো।কখনী ভুল বুঝনা।
নাহ,শিহাব তোমাকে ভুল বুঝার কোন অবকাশ নেই।তুমি কাঁচের মতই স্বচ্ছ আর তোমার প্রতি আমার পুরোপুরিই বিশ্বাস শিহাব।শায়লা মনে মনে মেসেজের উত্তরটা দিয়ে দিলো।নিশ্চয়ই শিহাব তা জেনে যাবে।।দুজনার মন যে এখন একই কথা কয়,একই সুরে গায়!
আজ সকাল সকাল শিহাবের জীবনে একি ঘটে গেলো। আজ সকালে এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে তা শিহাবের ভাবনার ত্রিসীমানাতেও নেই। হ্যাঁ, রিশতিনাকে সে ভুলেনি।রিশতিনা তার সন্তানের মা।শিহাবের জীবনে শায়লার প্রবেশের আগে পর্যন্ততো পাবে না জেনেও  সে রিশতিনার অপেক্ষায়
ছিল। ধীরে ধীরে শায়লা তার মাঝে জায়গা করে নিয়েছে আররিশতিনাকে পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই জেনে আজ শায়লার ডাকে সাড়া দিয়ে  শিহাব একটা সিদ্ধান্তে এসেছে।উফ! রিশতিনা এতদিন কেন নীরব ছিলে? রিশতিনাকেওতো অস্বীকার করা যায় না।সেতো অবস্থার স্বীকার। তার বাবা মায়ের রক্তচক্ষুর কারনে  তার ভালবাসা, সন্তান সবকিছুকে ফেলে যেতে হয়েছে চারটি বছর পর আজ এভাবে রিশতিবা তার সাথে দেখা করতে চাইবে এযে কল্পনায় এলেও এ যে বাস্তব রূপ পাবে সে আশাটুকু করতেও শিহাব সাহস পায়নি। জজ সাহেব রিশতিনার জাঁদরেল পিতার কাছে মেয়ের ভালবাসা মূল্যহীন হয়েছে। প্রচন্ড চাপের মুখে মেয়েকে সবকিছু ছাড়িয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।অতটুকু দুধের শিশু আরাফকে ফেলে যেতে হয়েছে।শিশুটির তখনো নাম রাখা হয়নি।রিশতিনা জানেও না তার ছেলের নামটা কী?
তাছাড়া রিশতিনা আজ অন্য একজনের সাথে জীবন বেঁধেছে। তার আর পিছনে ফেরার কোন প্রয়োজন আছে কি?
শিহাবের  কেবলি   গতকাল সন্ধ্যায় শায়লার 
সাথে তার কথা তার স্পর্শ শায়লার তার প্রতি আস্থা ভরসায়  তার প্রতি নির্ভরতা সেটাই যেন বারবার জানান দিচ্ছে। শিহাব এমনিভাবে অতীত  আর বর্তমানের   টানাপোড়েনে অসহ্য এক যন্ত্রণায় যেন শরবিদ্ধ  ডানা ঝাপটানো  পক্ষীর মত ছটফট করছিল।এক চাপা বেদনায় শিহাবের বুক ভারী হয়ে উঠলো।কেন তার জীবনটা এরকম অস্বাভাবিক হলো আর সবার মত সঅহজবার স্বাভাবিক হলো না। সেতো শায়লাকেই আরাফের মা করে চেনাবে।অথচ ঠিক তখুনি রিশতিনার আগমন। শিহাব কিপ্ রিশতিনার সাথে দেখা করবে? আদৌ কি তার কোন প্রয়োজন আছে। শায়লাই এখন তার জীবনে সত্য।শায়লাকে নিয়েই তার আগামী ভাবনা। 
শিহাব নিজেকে কিছুটা স্থির করে নিলো।কত কাজ পড়ে আছে। আজ আর নাস্তা করা হলোনা।শিহাব কবিরকে ডেকে লাবাম্বা থেকে একটা চিকেন স্যান্ডউইচ  আর সাথে কোক আর কলা। এইতো খুবই সামান্যই তার চাওয়া আর পাওয়া! 
শিহাব এই ফাকে মেসেঞ্জারে চোখ বুকিয়ে নিলো। শিহাবের মেস্রজে শায়লার কিস দেয়া   ইমোজি! মনের অজান্তেই  শিহাব হেসে উঠলো"!
কবির স্যান্ডউইচ নিয়ে এলো। আর শিহাবের টেবিলে  তা রাখতে রাখতে বললো, স্যারসে মিলন  ছেলেটা কিন্তু এখনো যায় নি।বাইরে বসে আছে।সে নাকি আপনাকে না নিয়ে যাবে না.
শিহাব ভীষণ অবাক হলো! কিন্তু কথাটি না শোনার ভঙ্গিতে  নিজেকে সংযত করে  বলে উঠলো, অনেক বেলা হয়েছে।হাতে বেশ কাজ!সময় নষ্ট করা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না।



 চলবে...

কবি শ্রী স্বপন দাস এর কবিতা




কেহ কম নহে:
শ্রী স্বপন দাস



প্রকৃতি হয়ে যাচ্ছে বেসামাল
ভাইরাস হয়ে উঠেছে বদ্ধমাতাল।
প্রবল রূপে হয়েছিল আগুয়ান
আয়লা যশ আম্ফানের উৎপীড়ন,
পাশাপাশি মারলো ধাক্কা, করোনা এক দুই
তবুও হয়নি শান্ত, আবার দুরন্ত রূপে এল অমিক্রন।
বাঁধাহীন রূপে করেই চলেছে সমগ্র বিশ্বে,
প্রাণনাশ সহ লাগামহীন আক্রমন।
সারা বিশ্বে যাচ্ছে দেখা, বিশ্ব ধ্বংসের এক পূর্বাভাস,
প র প্রজন্মের স্বার্থে রবে, পৃথিবী ধ্বংস লীলার এক ইতিহাস।।
রিজেন্ট পার্ক টালিগঞ্জ কলকাতা

শান্তা কামালী/৫৭ তম পর্ব




বনফুল
(৫৭ তম পর্ব ) 
শান্তা কামালী

সকাল আটটার মধ্যে সৈকতের বড় মামা মামানি চলে এসেছেন।
সৈকতের বাবা গতকালই হোটেলে অর্ডার করে রেখেছেন, সকালে কি কি নাস্তা আসবে, বারটায় কি রিচুয়াল স্পেশাল ডিশ.....। 
বেলা এগারোটায় সৈকতের ছোট মামা, দুই চাচা এসেছেন, এর কিছুক্ষণ পরে সৈকতের ছোট বেলার বন্ধু  আসিফ সাথে তিনটা ছেলে কয়েক ব্যাগ ফুল আরো কিসব...  নিয়ে এলো।গতকালই অহনার বাড়ি থেকে ফার্নিচার এসেছে, আসিফ সৈকতকে নিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে এসে অন্য রুমে বসেছে। 
সাড়ে বারোটায় সৈকতের ফুলসজ্জার খাট সাজিয়ে এসে আসিফ কাকে যেন উদ্দেশ্য করে বললো বরের সবকিছু বের করে দেন, বরকে সাজিয়ে আমাদের ছুটি। বেলা ঠিক একটার দিকে সাজানো গোছানো ডিশ নিয়ে এলো হোটেল বয়েরা। সৈকতের বাবা বললেন আসিফ তোমাদের মামানি সাহায্য করবেন খাওয়ার ব্যাপারটা শেষ করো, আমরা বেরোবো। নিয়ম মেনে সৈকত খাবারের ডিশে হাত রেখে নিজের অজান্তেই চোখ অশ্রুতে ভরে গেল.... 
আজ মা সুস্থ থাকলে পাশে বসে ছেলের মাথায় আশির্বাদ করতেন। 
মামানি বুঝতে পেরে বললো আমি  তোমার মায়ের হয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, বলে উনি সৈকতের মুখে এক লোকমা ভাত তুলে দিলেন, আসিফ ও  খেলো সামান্য। হাত ধুয়ে সৈকত মায়ের বিছানার পাশে গিয়ে বসলো, মা রাহেলা খাতুন হাসি মুখে ছেলের মাথায়  হাত বুলিয়ে বললেন এসো বাবা ।  সৈকতের বাবা ফুলে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে সৈকত ও আসিফকে  তুলে দিয়ে ওনারা পাঁচজন একটা লাইট্রেসে উঠলেন।

চলবে...

কবি সামরিন শিরিন এর কবিতা




বুকপাঁজরেই 
সামরিন শিরিন 

বুকের ভিতরে তার বাস
একেবারে বুকপাঁজরেই। 
একটি গভীর মায়ার করস্পর্শ 
শুদ্ধস্বর গাঢ় চোখ! 
গরবিনী জয়িতা
আমার লাবণ্যপ্রভা।

অথচ তার হৃদয় জুড়ে ঘন সন্ধ্যার ছায়া, 
হতাশার খরতাপ, 
অস্থির শূন্যতায় মর্মর ব্যথা বিদ্বেষের শব্দ! 
অশোভন, অসুন্দরের আতংকে মুহ্যমান রাত্রিদিন। 
উত্তরণের অনিশ্চিত অপেক্ষা...
তবু, 
তাকেই উৎসর্গ করেছি 
এক অনুপম প্রেমকবিতার চিঠি। 
সাহসী জীবন্ময় আশাবাদী কথকতা। 
সময় আরও একটু সুস্থ্য হোক
বা সংযত...
হে মহান বিজয়দিন!
আপ্রাণ সাক্ষরে, শ্রদ্ধায়
আমি তোমাকেই সঁপে যাই
আমার স্বদেশী অন্তর।

কবি জাবেদ আহমেদে এর কবিতা




লোভী 
জাবেদ আহমেদ 

লোভ লালসা 'র জাল
বুনবি আর কতকাল
বাচবিচার নাইরে তোর
পোষাক আষাকে মহান।
চাপার জোর বড় বেশী 
মনে লোভের খনি,
হক হালালে মাথাব্যথা 
নাইরে তোর ওরে নোংরা।
আলাল দুলাল কে ও
করিস ফরক।
তোর মাটেরই ত ফসল তারা।
গরীব পেলেই গোষ্ঠী মারিস
যখনতখন ভাঙিস লোভের হাঁড়ি। 
মূদ্রা পেলে খুশী সদা
হয় যদি হারামে তোর নাই-
ভাবনা পাইলে হইছে মূদ্রা।
মিছে কথা যখনতখন 
ডর ভয় নাইরে মরনের।
লোভে ভরা মনরে তোর
পরপারের নাইরে চিন্তা। 
ওরে লোভী পাপী 
আর কত সত্য মিথ্যা 
বলে বেড়াবি। 
লাটি হাতেও মরনে
ভয় না করলি।

কবি শিরিন আক্তার  এর কবিতা




অনুশোচনার ক্ষণে
 শিরিন আক্তার 

বহুকাল পরে সেই অব্যক্ত বাসনা 
ভেতর ঘরে জাগায় অসহ্য তাড়না।
অনুশোচনার ক্ষণে পিছু মন থাকা
অতীত আমায় ডাকে,কতো স্মৃতি আঁকা।

উত্তাল তরঙ্গ মাঝে ইচ্ছে ছুঁড়ে দেয়া
দূরের গগন দেশে হারিয়ে যাওয়া।
অবশেষে বাকি ছিল কিছু গল্প বলা,
অনিন্দ্য সুন্দর ছিল; তার ছলাকলা।

দোদুল্যমান আজও সে লগন গুলা
মনের দেয়াল থেকে তা যায় না ফেলা।
পায়তারা দেয় যেন;এক নিত্য ধারা
প্রণয়ী আমার!প্রিয় গানের অন্তরা।