অবোলার সঙ্গদান
( ছোট গল্প )
প্রাতঃকালীন হাটাহাটি করার সময় ইদানিং কয়েকদিন যাবৎ দেখি এক মধ্য বয়সী পুরুষ কুকুর আমাদেরকে অনুসরণ করছে, বলা যায় রীতিমত আমাদের সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে কুকুরটির সঙ্গ দেওয়ার ব্যাপারে একটা তপসারা খুঁজে বের করলাম। সহসঙ্গী মেজর জামানকে বললাম,"জামান বলোতো কেন কুকুরটি আমাদের হাঁটার পুরা এক ঘন্টা সময়কাল নিঃস্বার্থভাবে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে"?
উত্তরটা একটু পরেই শুনি। হয়ত স্বগোত্রীয় কোন কুকুরের সাথে কামড়াকামড়ি করতে যেয়ে কিংবা কঠিন কোন হৃদয়ের মানুষ তাকে সজোরে আঘাত করে তার একটি পা ভেঙ্গে দিয়েছে। কুকুরটি মাঝে মাঝেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌড়ে আমাদের হাঁটা দলের একটু সামনে যেয়ে আমাদের দিকে লেজ নাড়ায় আর চোখেমুখে কি যেন এক অদ্ভূত আকুল আকুতি জানায়। তার ঈশারা আর দেহভঙ্গির মাধ্যমে কেমন যেন একটা আহ্লাদ আহ্লাদ আর মায়াময় ভাব। কি মেসেজ বা বার্তা সে দিতে চায় তা বুঝার ক্ষমতা আমার নেই।
তবে মানুষ হিসেবে যা বুঝলাম সেটা হলো, সে যে আমাদেরকে খুব অন্তরঙ্গ ভেবে আমাদের সাথে তার সঙ্গটা মনেপ্রাণে উপভোগ করছে সেটা তার ঈশারা ইঙ্গিতে পরিস্কারভাবে সে যে বুঝিয়ে দিচ্ছে আমি সে ব্যাপারে নিশ্চিৎ।
অতঃপর মেজর জামান বললো "সার, আপনি বলেন"। আমি তাকে বললাম, আমার মনে হয় সে এ মহল্লায় আগন্তুক, তাই আমাদের প্রত্যক্ষ সাহায্যে আগামী কয়েকদিন সে এ এলাকায় নিজেকে শত্রু মুক্ত রাখতে চাইছে। কারণ, সেও জানে মানুষের সাথে থাকা তার জন্য বিরাট একটা সাপোর্টের বিষয়। কারণ কুকুরদের ঘাড়ে তো আর দুটো করে মাথা নেই যে তারা সৃষ্টির সেরা জীবের সাথে পাঙ্গা নিবে বা টক্কর দিবে।
কুকুরটি কিছু পথ চলে, আবার মুল হাঁটা দল হতে সামান্য পিছে পড়ে আবার দৌড়ে যেয়ে পিছু পড়া রাস্তা কভার করে বার বার আমাদের দিকে ফিরে ফিরে তাকায়। সে যেন সত্যিই এক অপূর্ব দৃশ্য! আবার দৌড়িয়ে সামান্য কিছু লিড নিয়ে সামনে যেয়ে চোখেমুখে একই ধরণের আকুতি আর প্রভু ভক্তের চাহুনী যেন তার চোখেমুখে ফুটিয়ে তুলছিল। এরই ভিতরে আমাদের হাঁটা দলের হাঁটা শেষ করে কয়েকজন সিনিয়র অফিসার নিজের গাড়ী নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলেন।
আমার বাসা আর মেজর জামানের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় আমরা পদব্রজে বাসার দিকেই আসছিলাম। তাকিয়ে দেখি কুকুরটি সেই একই কায়দায় আমাদের পিছু নিয়েছে। আমি মেজর জামানকে বললাম, জামান, খেয়াল করেছো যে মিষ্টার ডগ আমাদের সাথে সাথেই আসছে।
মেজর জামান বললো, "স্যার, এরা নিরীহ পশু হতে পারে কিন্তু এরাও কিন্তু দূর থেকে গন্ধ শুকেই ভাল মানুষ খুঁজে বের করতে পারে"। সাধারণ মানুষ হলেও নিজেকে ধন্য মনে করলাম এই ভেবে যে, যাক তাহলে এতদিন পরে একজন ভালো মানুষের তালিকায় নিজেকে অন্তর্ভূক্ত ক'রতে পারলাম।
মনটা মুহূর্তের মধ্যেই বেজায় খুশী হয়ে গেলো। অতঃপর দু'জনের পথ দুটি দিকে হওয়ায় যার যার বাসার পথে রওয়ানা হলাম। গল্পে গল্পে বিদায় বেলায় কুকুরটির কথা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম।