১০ এপ্রিল ২০২২

মমতা রায় চৌধুরীর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ১৪৯





উপন্যাস 


টানা পড়েন ১৪৯
খুশির হাওয়ায় লাগল নাচন
মমতা রায় চৌধুরী
২৫.৩.২২ রাত্রি ৮ ২৩.


গতকাল এত রাত হয়ে গেছিল শুতে, যে ভোরবেলা আর উঠতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু উঠতে তো হবেই আজকে তো দেশের বাড়িতে যেতে হবে। ঘুমের চোখে হাতরে হাতরে মোবাইলটা বের করল টাইম টা দেখলো। ভোর ৪:৩০ বাজে। একবার রেখা মনে মনে ভাবল মনোজকে ডেকে তুলবে? পরক্ষণে ভাবল না ,না ওকে ডাকলেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে না। বরং অকালে ঘুম থেকে তুলে সমস্ত কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। থাক ও ঘুমাক। কিন্তু এটা তো শিওর হতে হবে আদপে  যাবে কিনা? দোমনা করে মনোজকে গায়ে হাত দিয়ে একটু ধাক্কা দিয়ে ডাকলো'কি গো, অ্যা ই 
আজ যাবে তো কাকু কাকিমার ওখানে।"
"হু'।
কিন্তু ঘুমের ঘোরে কথা তো বিশ্বাস করাও যায় না। সকালে উঠেই হয়তো মত পাল্টে দেবে।
রেখা আবার মনোজকে ধাক্কা দিল আবার ডাকলো" কি গো শুনতে পাচ্ছ?
আজ যাবে তো কাকু কাকিমার ওখানে? ঠিক করে বলো, তাহলে তো আমাকে উঠে সেভাবে কাজ গোছাতে হবে।
হু।
এ বাবা আবার ঘুমিয়ে পড়ল ।তারপর ভোস ভোস করে নাক ডাকতে শুরু করল।
একে জাগানো সম্ভব নয়। ঘুম থেকে উঠলে তবেই একে বলতে হবে।
রেখাও আর একটু ঘুমানোর চেষ্টা করল।
এ বাবা সেই ঘুম যে একেবারে মাসির কলিংবেলের আওয়াজে ভাঙবে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি রেখা।
বাইরে কলিং বেজে যাচ্ছে। "জয় গনেশ ,জয় "গনেশ জয় ,গনেশ দেবা'। কানে যাচ্ছে কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। আবার কলিং বেলের আর্তনাদ। রেখা কান খাড়া করে ভাবলোএটা তো স্বপ্ন নয় এতো বাস্তব ।রেখাদের বাড়িতেই বাজছে। রেখা ধড়ফরিয়ে উঠে পড়লো। এ বাবা কত বেলা হয়ে গেছে। মনোজকে ধাক্কা দিয়ে দুচার ঘা  কিল মেরে দিল। এ বাবা কি করছো তুমি? দু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল মনোজ।
তাকিয়ে দেখছো কি? তোমার জন্য আজকে আমার কত বেলা হয়ে গেল।.
মনোজ  কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলল'এখানে আমার কি দোষ বলো?'
'বাহ রে, আমি তখন তোমাকে ধাক্কা দিলাম। ওঠার জন্য। উঠলে না। আর আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।'
ওদিকে আবার কলিং বেল বাজছে।
'না ,এবার আমি গিয়ে দরজাটা খুলি। নাহলে মাসিও চলে যাবে খাটুনির শেষ থাকবে না।'
মাসি জিজ্ঞেস করল' কি গো বৌমা আজকে এত দেরি করলে?'
'আর বোলো না ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
'"মাসি তাড়াতাড়ি কাজগুলো করে নাও।'
কোথাও যাবার আছে?'
'হ্যাঁ ঠিক তো করেছি। জানি না যেয়ে উঠতে পারব কিনা?'
"কোথায় যাবে বৌমা?"
'ভেবেছিলাম একটু কাকু কাকিমার কাছে যাবো দেশের বাড়ি।'
"কিন্তু কিন্তু করছ কেন যাও না?'
'তোমার বাচ্চাগুলোকে নিয়ে তো অসুবিধে নেই আমি আছি।'
হ্যাঁ সে তো জানি। তিনি যাবেন কিনা দেখো।'(মনোজকে ইঙ্গিত করে কথা।)
"ছেলেকে গিয়ে তোলো।'
"ঠিক বলেছ?'
রেখা আনন্দ উচ্ছ্বসিত হয়ে মনোজের ঘরে গিয়ে ডাকে"কিগো যাবে তো?"
'সকাল সকাল কানের কাছে এরকম বাজখাই  গলায় কথা বললে না ,ভীষণ বিরক্ত লাগে।'
"এ বাবা এ আবার কি কথা?
রাতে একরকম কথা সকাল হলেই চেঞ্জ?
ফ্রিজে,মাছটা পড়ে আছে, তাহলে কি হবে?
তুমি যদি না যাও বল আমি পার্থকে গাড়ির কথা বলব?'
মনোজ আড়মোরা কেটে বলে
"হ্যাঁ,রে বাবা যাব।"
রেখার হৃদয় আনন্দে ময়ূরের মত নেচে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে লাফাতে লাফাতে রেখা ছুটে এসে 
বলল "ঠিক আছে ,তাহলে আমি মাসিকে বলে দিচ্ছি কিন্তু।'
মনোজের উত্তরের প্রত্যাশা না করে রেখা মাসিকে এসে বলল 'মাসি তুমি তাড়াতাড়ি কাজ করে তোমার যা বাড়িতে গুছিয়ে আসার দরকার গুছিয়ে চলে এসো।'
'ঠিক আছে বৌমা।'
'সত্যি, কি আনন্দই না লাগছে। '
মাসি বললো এটাই বাবার বাড়ির টান বুঝেছ বৌমা?
রেখার এক ঝটকায় মনটা চলে গেল সেই নিজের দেশের বাড়ি, গ্রামের বাড়ি সেখানে যে জেঠিমা কাজ করতে এসেছিল বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে। সে মাঝে মাঝেই বলতো'মাইয়াদের বাবার বাড়ি যে কি তা বিয়ার পরেই বুঝা যায়?'
সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুমা বলতেন, একেবারে হক কথা কইছো।'
 সত্যি সেই জেঠিমার কথাটি রেখার মনেপ্রাণে গেঁথে রয়েছে। আজ বুঝতে পারে "মেয়েরা কেন বাবার বাড়ি যেতে চায়? এ যে নারীর টান।'
রেখা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে চা বসিয়ে দিল মাসির জন্য ।তারপর ফ্রিজ থেকে ময়দা বের করে ঝটপট পরোটা বানিয়ে ফেলল ।মাসিও তো আজকে খাবে। অন্যদিকে ক্যাপসিকাম আলু ভাজা করবে বলে তরকারি কেটে ফেললো।
চা নামিয়ে মাসিকে চা আর বিস্কিট দিল।
আর বলল "মাসি তুমি পরোটাটা এসে খাবে, না নিয়ে যাবে?'
মাসি চুপ করে আছে।
রেখা বুঝতে পারল কেন চুপ করে আছে? মাসির সংসারে অভাব পরোটা নিয়ে গেলে নাতি-নাতনিদের ভাগ করে দিতে পারবে।
শুনেছে ।মাসির ছেলেটা নাকি দু-দুবার স্টোক হয়েছে তার ফলে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছে, একটা দিক তো পুরো  প্যারালাইজড হয়ে গেছে।
এই বয়সে মাসিকে খাটতে হচ্ছে অভাবের সংসার বলে। মাসির বৌমাকেও কাজ করতে হয় তবে বেশি বাড়ীতে কাজে দেয়নি বৌমাকে কারণ ছেলেমেয়েগুলোকে লেখাপড়া জন্য ঠিক টাইমে ভাত রান্না করে দেওয়া এগুলো বৌমাকে করতে।
কথায় কথায় কত কথা বলছিল মাসির দিকে তাকিয়ে রেখার মনের ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠলো আর ভাবল আহা এই বয়সে কি কাজ করার বয়স তবুও কাজ করছে কত নিষ্ঠার সাথে।  দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেখা বলে" ঠিক আছে, তুমি দুটো পরোটা এখানে খাও আর দুটো নিয়ে যাও কেমন?'
মাসি বলল আচ্ছা।
রেখা খেয়াল করল মাসির চোখমুখে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল ।কতটা খুশি হয়েছে তা বুঝা গেল চোখ মুখ দেখে।
মাসি ঝটপট কাজ গুছিয়ে দিয়ে বলল' বৌ মা আমি আসি তাহলে।'
রেখা বলো হ্যাঁ মাসি, এসো।।
যেতে গিয়ে মাসে আবার থমকে দাঁড়ালো। প্রথম দিকটা খেয়াল করেনি পেছন ফিরে গ্যাসে মিলিদের রান্না চাপাচ্ছিল 
হঠাৎ রাক থেকে খুন্তি টা নেবে বলে পেছনের দিকে তাকালো। রেখা চমকে উঠে বলল'একি তুমি যাও নি!"
"আরেযেতে গিয়ে মনে পড়ল শীতলা পূজা আছে কিন্তু। পুজো পাঠাবে? সেই জন্য তোমাকে মনে করালাম।।
'কবে আছে?
"আগামীকাল।'
"ও বাবা তাহলে তো আজকেই তোমাকে টাকা দিয়ে রাখতে হবে।'
'হ্যাঁ বৌমা।'
'তো তুমি কি এখনই নিয়ে যাবে? নাকি এসে নেবে?'
'যা বলবে।'
দাঁড়াও নিয়ে যাও কারণ তুমি তো বললে তোমাদের পাড়ার থেকে যারা যাবে তাদের কাছে তোমাদের পুজো পাঠাবে তাহলে আমারটাও ওদের কাছেই দিতে পারবে।"
"ঠিক আছে।'
'রেখা ৫০ টাকা কিছু কিনে নিতে বলল আর ১১টাকা দক্ষিণা হিসেবে. দিতে বলল।'
মাসি বেরিয়ে গেল।
"ও মাসি দাঁড়াও দাঁড়াও নাম গোত্র এগুলো সব লিখে দিই।'
"হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। নাহলে তো মনে করতে পারব ন।'
রেখা দ্রুত বসার ঘরে গিয়ে রাইটিং প্যাড থেকে একটা পাতা ছিঁড়েনিয়ে খসখস করে লিখলো।
তারপর হাত বাড়িয়ে কাগজটা মাসিকে দিল।
মাসি চলে গেল।
দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে রান্না ঘরে ঝটপট মিলিদের খাবারটা নামিয়ে ফেলল।
অন্যদিকে ফ্রিজ থেকে মাছটা বের করে ফুলকপি আলু দিয়ে মাছের ঝোল করবে বলে মাছগুলোকে ভেজে নিল। ঝোল চাপিয়ে দিয়ে রেখা কয়েকটা কাজ এদিক ওদিক করতে লাগলো।
রেখা খুব তাড়াহুড়ো করছে বুকের ভিতর একটা উত্তেজনা কাজ করছে। বলতে বলতেই  কলিংবেল আবার বেজে ওঠে।
মনোজ কলিংবেলের আওয়াজে উঠে পড়ে।
রেখাকে উদ্দেশ্য করে বলে 'কি গো চা জল দেবে?'
'হ্যাঁ দেবো।'
'কে আসলো গো?'
পেপার দিয়ে গেল।
'পেপার টা দাওনা একটু চোখ বুলাই।'
রেখা পেপারটা দিয়ে রান্নাঘরে এসে চায়ের কাপে চা ঢেলে মনোজকে দিয়ে আসলো। মনোজ বললো কটায় বেরোবে?
'তুমি বলো?'
'তোমার এদিকে সব রেডি?খাবারদাবার বানানো হয়ে গেছে?'
রেখা বলল ' হ্যাঁ।'
তাহলে চলো, ১১:৩০টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ি।
Ok
রেখা দ্রুত পদে রান্নাঘরে গেল। তারপর স্নান করতে ঢুকলো। বাথরুমে থেকে চেঁচিয়ে বললো' পামপটা চালিয়ে দাও।'
দিচ্ছি।
রেখা স্নান করতে করতে আপন মনে গেয়ে উঠল" আমার ভিতর ও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি.…।'


মনোজ মনে মনে ভাবল রেখার বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা শুনলেই কেমন মনটা আনন্দে নেচে ওঠে ।তাই কি সুন্দর গান গাইছে। আসলে সব মেয়েদেরই বোধহয় বাপের বাড়ির প্রতি একটু উইক আছে।
আবার কখনো কখনো কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা আওরাছে
"আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়' ..।"আজ রেখার মন খুশিতে পাল তুলেছে। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তার অভিব্যক্তি।

কবি দীনবন্ধু ঘোষ এর কবিতা "চিড়িয়াখানা"




চিড়িয়াখানা
দীনবন্ধু ঘোষ
                    ‌
চিড়িয়াখানা  চিড়িয়াখানা‌ 
কলকাতার ই   চিড়িয়াখানা ,
সকাল থেকেই চলতে থাকে 
কত লোকের আনাগোনা ।

শিশু থেকে  বড়ো সবাই
ছুটে আসে চিড়িয়াখানায় 
খা‌ঁচাবন্দি  বন‍্য দেখে 
জুড়াই  যদি জীবনখানাই।

হঁংস থেকে হস্তি দেখি
বাঘ ভল্লুক নানান পাখি
জেব্রা জিরাফ হরিণ কুমির
দেখছে সবাই ভরিয়ে আঁখি।

ওদের দেখে খিলখিলিয়ে কেবল হাসে সবে,
কি মজাই না আজ পেয়েছি আনন্দ এই ভবে!
দূর হতে আকাশ হয়ে অতি হতাশ 
বর্ষায় অশ্রু নিশীথে নিরবে।


কেউ জানেনা কষ্ট ওদের ,
বোঝে শুধু আমোদ নিজের
বিনা দোষেই বদ্ধ ওরা জেলখানার  ঐ   নামান্তরে
স্বপ্নে ওরা আমায় বলে,"আমরা সুখী বনের দ্বারে"।

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ৮৫




ধারাবাহিক উপন্যাস 


শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত (পর্ব ৮৫)
শামীমা আহমেদ 

শিহাব মোবাইলে কথা বলা শেষ  করে উৎকণ্ঠিত রাহাতের দিকে তাকালো। শিহাবের চোখে মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে । তার সামনে রাহাতের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি!  শিহাব যেন কিছু বলবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এমনিতেই শিহাবের ভেতরে শায়লাকে পাওয়া না পাওয়ার দ্বিধান্বিত ভাবনা আবার এর সাথে যোগ হলো শিহাবের হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ। ফোন কলটি যেন শিহাবের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে এলো।
রাহাত শিহাবকে ভাবনার জগৎ থেকে বের করে আনতে প্রশ্ন করলো,
কী হয়েছে শিহাব ভাইয়া ? কোন খারাপ খবর ? আপনার বাসার  সবাই ভালোতো ?
শিহাব এবার একটু স্বাভাবিকে এলো, বিড়বিড় করে বললো, ভাবীর কল এসেছিলো।আমার ছোট্ট আরাফ সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। কপালে কেটে গেছে। খুব রক্ত ঝরছে। সবাই হাসপাতালে নিয়ে গেছে।সে বাবা বাবা বলে কাঁদছে। কথাগুলো বলতে গিয়ে শিহাবের ভেতরে  কান্নার ঢেউ এলেও এমন খোলা যায়গায় সে নিজেকে খুব কষ্ট করে সংযত রাখলো।
তাহলে তো আপনার এখুনি যাওয়া উচিত শিহাব ভাইয়া। দেরি করবেন না।
শিহাব কথাটি ঠিক শুনলো কিনা! সে মোবাইলে কিছু টাইপ করছে যেন।
শিহাব শায়লাকে মেসেজ পাঠিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো পার্লারে এখন ও নানান প্রস্তুতিতে আছে।এখন কিছু জানলে ও বেরিয়ে আসতে চাইবে।  আবার  শিহাবের এতটা সময় অপেক্ষা করাও সম্ভব না?  তার আরাফের জন্য মন মানছে না। এমনিতেই শিশুটি মা বাবার আদর ছাড়াই বড় হচ্ছে।  ওর কোন বিপদ শিহাবের মনে অনেকখানি ব্যথায় ভরিয়ে দেয়। ধি্বে অন্তরে  ভাবনা ঢেউ,নিশ্চয়ই আরাফ ব্যথায় খুব কাঁদছে। নিশ্চয়ই তাকে দেখতে চাইছে !
শিহাব ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে কি করবে ? 
তবুও তাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। শিহাবের এই একটা চমৎকার গুন। সে সব অবস্থাতেই নিজেকে স্থির রেখে করণীয় দ্বায়িত্ব কর্তব্যের ছক কেটে নিতে পারে। তাকে এখন দুই দিকই সামাল দিতে হবে।
যদিও শায়লা সবই সহজভাবে নিবে চাইকি জানতে পারলে সে এখনই আরাফের জন্য ছুটে যাবে ! 
আবার শিহাব এটাও জানে,  ভালবাসায় ভুল বুঝাবুঝি দুজনার মাঝে  আনতে পারে বিস্তর ফারাক।এতে দুজনার প্রতি দুজনার বিশ্বাস হারায়।  তাই শিহাব আর দেরী না করে,মেসেজে সে তার প্রকৃত অবস্থা  শায়লাকে  জানিয়ে দিলো। শায়লার প্রতি তার শুধু এটুকু  মিনতি রইল, শায়লা তুমি আমার অপেক্ষায় থেকো। আমি আরাফকে সুস্থ করে তোমার কাছে ফিরবো। শায়লার প্রতি শিহাবের অনেক আস্থা। সে তার যে কোন কিছুকে খুব সহজভাব নিবে। রিশতিনা বা আরাফের বিষয়টিতে সে কোন প্রশ্ন আনেনি কোনদিন।কারণ শিহাবের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস  আর অপরিসীম ভালবাসা। শিহাব মেসেজ সেন্ড করে  সময় দেখে নিলো।এগারোটা বাজছে।শায়লার আরো একঘন্টা  লাগবে।এদিকে জিগাতলা থেকে আবার মায়ের ফোন এলো। মা কাঁদছে। শিহাব আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না। সামনে যে রাহাত দাঁড়িয়ে আছে শিহাব তা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল।শিহাব বাইক স্টার্ট  দিয়ে আবার থামল। সে হঠাৎই   রাহাতের  হাত ধরে অনুরোধের সুরে বললো, রাহাত আমি যাচ্ছি।সন্তানের ডাক সে এক অন্যরকম অনুভুতি। যেন এক সাগর সাঁতরে যেতেও কোন কষ্ট বোধ নেই। শুধু অনুরোধ রইল, তোমার আপুকে কানাডা যেতে দিও না। ওখানে গেলে ও বাঁচবে না। আমার  শূন্যতা ওর কাছে এক অপূরণীয় অনুভুতি। আমার অনুপস্থিতি যেন জলবিহীন মরুদ্যান।
আমি ওকে খুব করে চিনেছি রাহাত।আমাকে ছাড়া ওর জীবনীশক্তি হারিয়ে যাবে। আর আমিও এদিকে একাকীত্বের বেদনায় ডুবে যাবো। তোমরা ভুল করোনা। শায়লাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিও না।শিহাব আর কিছু বলতে পারছে না। তার মনের ভেতর প্রচন্ড এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে। রাহাতের কাছে সকল আর্জি  জমা রেখে গেলো। শিহাব হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট দিয়ে উচ্চরবে হর্ণ তুলে ঢাকা এয়ারপোর্ট রোডের জনারণ্যে মিশে গেলো। রাহাত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বারবার তার একই পরীক্ষায় পড়তে হচ্ছে।একদিকে পরিবারের মান সম্মান আরেকদিকে দুটি সুন্দর মনের কাছে আসার আকুতি। সে এখন বেশ বুঝতে পারছে রুহি খালার কথা শুনে তার মত বদলে ফেলা উচিত হয়নি। শায়লা আপু শিহাব ভাইয়া তো তার কাছেই সমাধানের জন্য এসেছিলো। তার নিজেকে বদলে ফেলা উচিত হয়নি।  এতদিনে ডিভোর্সের  কাগজপত্র এগিয়ে নিলে নোমান ভাইয়াকেও ঠেকানো যেতো। রাহাত আর কিছু ভাবতে পারছে না। বিষয়টি ভীষণ জটিল হয়ে গেলো। শায়লা আপুকে সুখী দেখাইতো তার চাওয়া ছিল। আপুর চোখের ছায়ার সর্বদাই শিহাব ভাইয়া। আর শিহাব ভাইয়াও আপার জন্য যেভাবে বারবার ছুটে আসছে এমন একটা  বন্ধন এক হতে না দিলে রাহাত সারাজীবন  নিজেকে ক্ষমা  করতে পারবে না। কিন্তু  এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।আর কিছুক্ষণ পরে আপুর হাজবেন্ড নোমান ভাইয়ার বিমান ল্যান্ড করবে। আপুকে নিয়ে তাকে রিসিভ কর‍তে যেতে হবে।কিন্তু শিহাব ভাইয়ার এই খবর জানলে আপুকেতো কিছুতেই শান্ত রাখা যাবে না। উফ ! আমি আর ভাবতে পারছি না। রাহাত সবকিছু নিয়তির উপর ছেড়ে দিল। চারপাশের মানুষের এত কোলাহলেও সে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

ভেতরে শায়লা  নানান প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।তক্ষুনি তার  শিহাবের মেসেজ দেখাটা তার সম্ভব হলো না। সবকিছু শেষ হতে প্রায় বারোটা বেজে গেলো। শায়লার নিজেজে বেশ ফুরফুরে লাগছে। সে বুঝতে পারছে বাইরের সৌন্দর্যও  মনের প্রফুল্লতা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য সে এতদিন এসবকিছুর দিকে একেবারে খেয়াল দেয়নি।পুরোটা সময় সে শিহাবের ভাবনায় ডুবে থাকতো। আয়নায় নিজেকে খুব ভাল করে দেখতে লাগলো।নিজের কাছে নিজেকে অচেনা লাগছে। আগের চেয়েও আরো আকর্ষণীয় লাগছে।কিন্তু শিহাবের চোখে কি তা ধরা পড়বে ? শিহাবের কথা মনে হতেই সে ভেবে নিলো নীচে শিহাব অপেক্ষায় আছে দ্রুত বেরুতে হবে। সে বুবলীকে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎই বুবলী সামনে এসে দাঁড়ালো। দারুণ এক হেয়ার স্টাইলে তাকে চেনাই যাচ্ছে না। 
চটপটে বুবলী নিজেকে আড়াল করে শায়লার প্রশংসায় একের পর এক বাক্য ব্যয় করে যাচ্ছে। ওয়াও আপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।দুলাভাই আজ এসে তোমাকে চিনতেই পারবে না। 
শায়লার ভেতরে শিহাবের জন্য মনটা খচখচ করছে। কতক্ষণে সে নীচে নামবে। আর যেভাবেই হউক রাহাতকে এড়িয়ে তাকে শিহাবের কাছেই যেতে হবে।আর সে যদি তা না পারে তাহলে আজীবনের মত সে শিহাবকে হারাবে।মনে মনে সে নিনেকে তৈরি করে নিলো। বুবলীকে দ্রুত বিল মিটিয়ে নীচে নামতে বললো। বুবলী ধরেই নিলো, দুলাভাইয়ের জন্য আপুর আর ত্বর সইছে না।
বিল হিসেব পত্র করে বুবলী টাকার লেনদেন সেরে নিলো।  পার্লারের একটি মেয়ে শায়লাকে একটা ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে তার সুন্দর দাম্পত্য জীবনের জন্য অভিনন্দন আর শুভকামনা জানালো। শায়লা এক ঝলক শিহাবকে ভেবে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো!   
দুজনে লিফটে নীচে নেমে এলো। শায়লার উৎসুক চোখ  শিহাবকে খুঁজছে।  নিশ্চয়ই শিহাব তাকে দেখে এগিয়ে আসবে।শায়লা শিহাবের লাল বাইকটি খুঁজছে। শায়লা আশেপাশে তাকাচ্ছে।বুবলী বুঝতে পারছে না আপু কাকে খুঁজছে ! ঐতো রাহাত ভাইয়া দাঁড়ানো। শায়লাকে রেখেই বুবলী রাহাতের দিকে এগিয়ে গেলো। 
ভাইয়া এইতো আমরা। গাড়ি কোথায় ? 
রাহাত শুধু শায়লার চোখের দিকে তাকিয়ে।
তবে কি শিহাব ভসিয়া আপুকে জানিয়ে যায়নি ? আপু কেন তবে শিহাব ভাইয়াকে খুঁজছে । সামনে বুবলী দাঁড়ানো, রাহাত স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু শায়লার ব্যথাক্লিষ্ট মনের ছাপ শায়লার মুখে যেন ভেসে উঠেছে !  রাহাত আপুর মনে অবস্থা খুবই বুঝতে পারছে।শিহাবের অনুরোধের প্রতিটি কথাই তার কানে বাজছে।
রাহাত এগিয়ে এসে বললো, আপু বাসায় চলো। আমাদের এয়ারপোর্টে যেতে হবে।
কিন্তু শায়লার চোখে  রাহাতের প্রতি  তীক্ষ্ণ প্রশ্নবান যেন আক্রমণ ক্রতে চাইছে।
নিশ্চয়ই রাহাত শিহাবকে এমন কিছু বলেছে তাই শিহাব চলে গেছে। কিন্তু পরক্ষণেই সে ভাবলো,শিহাব তো কারো কথায় চলে যাওয়ার মত ছেলে নয়! তবে সে কোথায় গেলো ? 
রাহাত আর শায়লার মাঝে দাঁড়িয়ে বুবলী কিছুই বুঝতে পারছে না। কেন আপু গাড়িতে উঠছে না আর কেনইবা রাহাত ভাইয়া আপুকে গাড়িতে তুলছে না। 
শায়লা শিহাবকে কল করতে চাইলো। কেন সে এখানে নেই ? সে তাকে রেখে কেন চলে গেছে ? এসব জানতেই শায়লা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতেই শিহাবের মেসেজ দেখতে পেলো। সবটা জেনে শায়লার যেন দেহে প্রাণ ফিরে এলো। সে মনে মনে বলে উঠলো, শিহাব আমি তোমার জন্য আজীবন অপেক্ষায় থাকবো।তবে আরাফের শায়লার জন্য মনটা কেঁদে উঠলো। 
রাহাত এগিয়ে এসে শায়লার হাত ধরলো। আপু চলো,বাসায় যাই।
শায়লা তার অনাগত পরিস্থিতিতে নিজেকে সঁপে দিলো। নিয়তির কাছে সমর্পণ করলো তার ভবিষ্যৎ । সে ধীর পায়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। শায়লার চোখে তখনো আজ সকালে দেখা মেরুণ রঙা শার্টের শিহাবের মুখটা মুখটা যেন মিশে আছে। 
শায়লা মনে মনে বলে চললো,  শিহাব তুমি যেখানে যেভাবে বা যতদূরেই থাকো তুমি আমার মনের সবটা জুড়ে। আমি তোমারই অপেক্ষায় আছি। 
ভাইয়া, ফুলের অর্ডার দেয়া ছিল। ওরা কি কিছু জানিয়েছে ? আপুর হলুদের জন্য ফুলের গয়না দেয়ার কথা  আর ফুল দিয়ে ঘর সাজিয়ে দিয়ে যাওয়ার কথা। 
রাহার ভাইয়া ওরা কি যোগাযোগ করেছে ? 
 দায়িত্বশীল বুবলীকে সবদিক দেখতে হচ্ছে।কিন্তু বুবলীর প্রশ্নে রাহাত নিরুত্তর হয়ে রইল।
শায়লা আর রাহাতের মনের ভেতর যেন এক ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। যেখানে রাহাত স্বেচ্ছায় পরাজয় বরন করে নিতে চাইছে।
গাড়ি যানজট কাটিয়ে সেক্টর সাতের দিকে এগিয়ে চললো।
চলবে....

কবি রজেশ কবিরাজ এর কবিতা "প্রতিজ্ঞা"




প্রতিজ্ঞা
রজেশ কবিরাজ

আমাকে দুর্বল করে না প্রবল ঝড়
যবে ছেড়ে এসেছি ঘর।
নিয়েছি কতজনকে আপন করে 
সবাই ভেবেছে আমাকে পর।
নেইকো আমার ক্ষুধার জ্বালা 
নিভৃতে কাটিয়েছি কত বেলা,
খেলেছি কতজনের সাথে কত খেলা !
তবুও আমাকে কেউ পরায়নি প্রেমের মালা।
আমার অন্ধকার প্রতিটা রাত 
কাটে স্বজনহারা বিষাদে ;
মনে হয় আমি ফিরে যাই -
আবার আমার আপন স্বদেশে।
আমি হেঁটে যাই নিঃশব্দে 
কাঠফাটা রোদ্দুর দুপুরে কিংবা রাত্রে,
কত জনকে ভিক্ষা দিয়েছি সযত্নে ;
তবুও মনে হয় আমি কি -
ভুল করছি প্রতিটা ক্ষেত্রে ?!
এই আলোয় ভরা ধরার মাঝে
সেজেছি কতভাবে কত সাজে !
তবুও ভুলিনা কত শত আঘাতের ক্ষত
ভেসে ওঠে সেই ক্ষত মাঝে মাঝে।
দেখেছি চোখের সামনে কত মানুষ
বলেছে এসে মধুর কথা,
তাদের ভালোবেসে দেখেছি আমি 
তারাই দিয়েছে আগে শত শত ব্যথা।
চোখ মেলে দেখেছি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে
পড়েছে লাশের পরে লাশ,
তবুও একজন কেউ দেখিনি 
কাউকে ভালবেসে নিতে মনুষত্বের শ্বাস।
যতদিন আছি পৃথিবীতে বেঁচে 
পারব কি দেখে যেতে মানবতার বিকাশ !
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো আজ, যতই পাই যত ব্যথা
করে যাব মানুষের জন্য কাজ।
আমি চাই আপন হতে সবার,
চাইনা হতে ইতিহাসের পাতায় অমর।

কবি ইসলাম'রবি এর কবিতা "অদৃশ্য গোপন চিঠি"




অদৃশ্য গোপন চিঠি
ইসলাম'রবি

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে 
ক্লান্ত দেহ নিয়ে বাসায় ফিরে ,
খাবার আর তারা দেখে বিছানার চাদরে 
শরীল যখন এলিয়ে দেই ,
একটি শূন্যতা তোমায় মনে পড়ে
বহুদূরে আম্মা তবুও আছো মনের ঘরে ,
অবশেষে রাতের আকাশকে প্রশ্ন করি 
আম্মা তুমি কেমন আছো বিধাতার কাছে ?
জাগতিক সব স্মৃতি জেগে ওঠে তখনই 
এক বুক হাহাকার সাধ্য কার সান্তনা দেওয়ার ,
সবার কাছে অনেক বড় মানুষ আমি
তুমি একমাত্র এখনো ছোট মনে করেছ 
তোমার ছোট্ট রাগের জাহাজকে ,
যেখানে আছি যেভাবে আছি 
আম্মা তুমি আছো মস্তিষ্কের অলিগলিতে 
এই জগত সংসারে ছায়া তরু হয়ে ,
আম্মা তোমার মত আর কেউ হয় না
তোমার তরে চিঠি লিখি আমার সময়ে
সুখের সব মূহূর্ত এসে হাজির হয় বসলে ,
চিঠিকে বলি উড়ে যা অদৃশ্য হয়ে আম্মার কাছে 
আর আমার সালাম দিস আম্মার তরে,
আম্মা তোমার সাথে আমার প্রেমের রচনা নাই 
কিন্তু তোমার সাথে আমার আত্মার আত্মার সম্পর্ক !