১০ নভেম্বর ২০২১

শামীমা আহমেদ এর ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"১১

ধারাবাহিক  শামীমা আহমেদ এর  ধারাবাহিক গল্প "অলিখিত শর্ত"




শায়লা শিহাব কথন 
অলিখিত শর্ত 
                                              (পর্ব ১১)
   শামীমা আহমেদ 



                                                বিকেলে ছাদে চা নাস্তার আয়োজন করে শিহাবের ভাবী সুমাইয়া, শিহাব ও বাচ্চাদের নিয়ে ছাদে চলে এলো। ছাদে ম্যাট বিছিয়ে দিল বাচ্চাদের জন্য। আরাফের খেলনা আর আরাফকে নিয়ে সুনায়রা ও আরুশ খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সুমাইয়া খুব ভাল করেই জানে এখানে এলে শিহাব তার অতীত নিয়ে মুষড়ে পরে।তাই খানিকটা হালকা করতে ছাদে চলে আসা।কিন্তু এতে শিহাব যেন আরো  বেশি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লো । রিশতিনার স্মৃতি তাকে ভীষণভাবে তাড়া করে ফিরে। শিহাবের জীবনে রিশতিনা এসেছিল ক্ষণিকের অতিথি হয়ে। 
সুমাইয়া শিহাবকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো । শিহাব চিন্তামগ্ন হয়ে কাপটা হাতে নিলো। শিহাবের একে একে সবকিছু মনে পড়তে লাগল।
শিহাবদের বাড়ির কয়েকটি বাড়ির আগেই, ধরতে গেলে গলির মোড়ের প্রথম বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়িটাই রিশতিনাদের।আর তার মুখোমুখি  চমৎকার একটা কনফেকশনারী ছিল।এখন সেখানে  একটি সুপার শপ হয়েছে।বাড়ির খুব কাছে হওয়াতে সুমাইয়ার জন্য খুব সুবিধা হয়েছে। শিহাব এখন গলিটা পেরুতে গেলেই ওখানে কেমন যেন থমকে যায়।  সেখানে দাঁড়ালে রিশতিনার ঘরের সাথের বারান্দাটা একেবারে সরাসরি দেখা যেতো।
রিশতিনা মাঝে মাঝেই  হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে বারান্দায় এসে ইয়ার ফোনে গান শুনতো।কখনোবা হাতে থাকতো পাঠ্যবই।বুঝাই যেতো আজ অথবা কাল এক্সাম।বারান্দার ইজিচেয়ারে বসে বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়তো। রিশতিনা ছিল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ব্যারিস্টার  বাবার আদরের মেয়ে। রিশতিনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল তার মা, রিশতিনাকে কখনোই একা চলার  সুযোগ  দেননি।বাবার কড়া নির্দেশে রিশতিনাকে মা সর্বক্ষণ ঘিরে থাকতেন। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করতো রিশতিনা।চালচলন আর পোশাকআশাকে এই এলাকায় সবার চেয়ে সহজেই  আলাদা করা যেতো । রিশতিনা তখন ও লেভেলের ছাত্রী।সদ্য কৈশোরে পড়া মেয়েটির মায়াবী মুখটায় শিহাবের চোখ আটকে যায়।প্রতিদিন সেই কনফেকশনারীর সামনে বাইক নিয়ে সাথে কিছু বন্ধুদের নিয়ে চলতো শিহাবের চা পানের উৎসব।রিশতিনাকে এক নজর দেখার জন্য শিহাবের উৎসুক চোখ মরিয়া হয়ে থাকতো।কিন্তু মেয়েদের উত্যক্ত করা শিহাবের রুচিতে নেই।
আর পড়াশুনায় সিরিয়াস রিশতিনার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।কিন্তু শিহাবতো রিশতিনাকে কল্পনায় ভেবে চললো। কিন্তু তাকে তা জানানোর জন্য মোটেই কোনরকম ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়নি।রিশতিনা যখন বারান্দায় আসে শুধু সেই দৃশ্যটুকু দেখার জন্য দিন রাত ঝড় বৃষ্টি গরম শীত কিছুই তাকে  টলাতে পারেনি।
পড়াশুনায় ভীষণ খামখেয়ালিপানার শিহাব কখনোই তেমন করে সিরিয়াস হয়নি। তখন বি কমে জগন্নাথে নামকাওয়াস্তে ভর্তি হয়ে থাকা।ক্লাসে একেবারেই নিয়মিত নয়। বিদেশ থেকে বাবার টাকা,নিজেদের বাড়ি থেকে আয়,বড় ভাইয়ের এত বড় চাকুরী,মায়ের আদর আহলাদের বড় হওয়া শিহাব বখাটে না হলেও খুব যে সুন্দর করে জীবন গড়ছে সেটাও নয়। 
রিশতিনা মায়ের সাথে গাড়িতে করে স্কুলের জন্য বেরিয়ে গেলে দারোয়ান দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগের সময়টুকু  বাড়িটির ভেতরে যতটুকু দেখা যায়,এলাকার মানুষের তা উঁকি দিয়ে  একনজর দেখার ইচ্ছা থাকে।ব্যারিস্টার সাহেবের বাড়ি বলে কথা! ভীষণ সুন্দর বাড়িটির ভিতরে। চমৎকার ফুলের বাগান, মাঝে একটা পানির ফোয়ারা, বাগানের চারপাশে পানি ছড়িয়ে দিচ্ছে! কতইনা বাহারী ফুল! মাঝে মাঝে কয়েকটা পাথরের মৎসকন্যার মূর্তি দাঁড়িয়ে।  রাতের বেলা যখন বাগানের নিয়ন বাতিগুলো জ্বলে উঠে মনে হয় যেন একটা স্বপ্নপুরী!একজন মালীর নিরলস যত্নে এমন সবুজ ঘাস আর রঙিন ফুলের বাগান দেখলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।কিন্তু সেখানে  জনসাধারণের  প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ।
শিহাবের জীবনে ইশারায় ইঙ্গিতে অনেকেই ভালবাসার কথা জানিয়েছে,কত  মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব বা একটু সাথে চলার জন্য, বিকেলে একটু চায়ের আড্ডার জন্য , এমন কতইনা অনুরোধ উপেক্ষা করেছে।ক্লাসে গেলে দিনে জুনিয়রদের কাছ থেকে কমপক্ষে চার পাঁচটা প্রেম নিবেদন মোকাবেলা করতে হতো।কিন্তু কেন যেন শিহাবের মনে বারবার রিশতিনার মুখটিই ভেসে উঠতো! যাদের জীবনে চারপাশে হাজারো নারীমুখ ঘিরে থাকে তারা কিন্তু শুধুমাত্র একটা মুখের জন্যই তৃষ্ণার্ত থাকে। শিহাবও যেন দিনে দিনে রিশতিনার ভাবনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখলো। 
এভাবে দু'বছর চলে যায়। শিহাব মাস্টার্সে ভর্তি হলো। রিশতিনা এ লেভেল শেষ করলো। এরই মাঝে খুবই দ্রুত অনেককিছু ঘটে গেলো। রিশতিনার প্রতি শিহাবের দূর্বলতা সেটা রিশতিনার চোখ এড়ায়নি। আর শিহাব চোখ পড়ার মতই একটা ছেলে। এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে তার একটা সুনামও আছে।সানগ্লাস পরা এমন শুভ্রতায় নায়কোচিত চেহারার প্রতি তো নজরের তীর এমনিতেই বিঁধে।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করা ছেলেমেয়েরা বরাবরই ভীষণ আউটস্পোকেন আর স্মার্ট হয়।ওদেরকে নিজের কথা নিজে বলার মত সাহসী করেই গড়ে তোলা হয়।রিশতিনাও তেমনি  একদিন বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিলো। একদিন ওদের বাড়ির দারোয়ানকে  কনফেকশনারীর সামনে চায়ের দোকানটিতে পাঠিয়ে শিহাবের মোবাইল নাম্বারটা লিখে দিতে বলে। শিহাব অত্যাশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল সেদিন! আর বন্ধুদেরও সেকি ঠাট্টা তামাশা!
এরপর দুজনার প্রেমকাহানী এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে। শিহাব এমনিতে উপরে উপরে চাপা স্বভাবের  হলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ রোমান্টিক আর আবেগী একটা ছেলে আর রিশতিনা, বাবা মায়ের কড়া শাসনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে শিহাবের কাছে একটু যেন স্বস্তি খুঁজে ফিরেছিল।
শিহাবের ভাবী সবই টের পাচ্ছিল বা বলা যায় তার চোখ কিছুই এড়ায়নি। আর শিহাব আর রিশতিনার ভরসাস্থল ছিল সুমাইয়া ভাবী।কিন্তু ভাবী এ সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে ভীষণ আতংকিত হয়ে উঠেন। রিশতিনার ব্যারিস্টার বাবার ক্ষমতা আর কড়া মেজাজের কথা এলাকায় কারো অজানা নয়। রিশতিনার  বিয়ের কথা চলছিল ওর বাবার ছাত্র এক ব্যারিস্টারের সাথে। বিয়ে পর লন্ডনে গিয়ে রিশতিনাও ব্যারিস্টারী পড়বে, সেভাবেই ওর বাবা সব কিছু গুছাচ্ছিলেন। আর সেই বিয়ে এড়াতে, রিশতিনার প্রবল আগ্রহ আর চাপে শিহাবকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হলো। ওরা নিজেরাই বিয়ে করে এলো কাজী অফিস থেকে। এলাকায় তখন একটা থমথমে ভাব।কী যে ভয়ে আর আতংকে দিন কেটেছে শিহাব আর রিশতিনার ! বিয়ের পরে যেখানে সবাই হাসি আনন্দে দিনকাটায় সেখানে সারাক্ষণই ওদের ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছে কখন বাবা তার লোকবাহিনী পাঠিয়ে মেয়েক..



                                                                                                                                  চলবে....

হা‌বিবুর রহমান হা‌বিব




প্রিয় সু‌বোধ,


তুই মানবী‌কে নি‌য়ে পা‌লি‌য়ে যা,এখা‌নে মানবী নিরাপদ না। প্রতি দিন খুন,ধর্ষণ,গুম,হত‌্যা,লুটপাট লে‌গেই আ‌ছে। যে রাষ্ট্র ব‌্যবস্থা মানবী‌কে সম্মান দি‌তে পা‌রে না,তার অ‌ধিকার,মু‌ক্তি,স্বাধীনতা শুধু রঙ তামাশার নাম মাত্র।মানবীর অ‌ধিকার গু‌লো আজ সাম্রাজ‌্যবা‌দের অপসংস্কৃ‌তির করাল গ্রা‌সে নিপ‌তিত।অন্ধ ধ‌র্মের না‌মে কুসংস্কা‌রের মা‌ঝে মানবী‌দের কি ভা‌বে নি‌ক্ষেপ ক‌রে তার দৃষ্টান্ত প্রতি‌দিন।
এখা‌নে মানবী‌কে নি‌য়ে তুই ভাল থাক‌বি না। মানবী‌কে ব‌লিস, স্বাধীনতাই মু‌ক্তির শেষ পথ নয়।এর চে‌য়ে অ‌নেক বড় ,প্রেম,ভালবাসা,কাব‌্য,সা‌হিত‌্য,সংসার।এ গু‌লোর পূর্ণ বিকা‌শের জন‌্যই তো স্বাধীনতা,অ‌ধিকার ও ম‌নের মু‌ক্তি ।
তাই তো‌দের জন‌্য লড়াই,আ‌রো একবার রক্তাক্ত লড়াই ।বন্ধু আমার ভাল থা‌কিস ।

মমতা রায়চৌধুরী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন" ৪০

কান্ত মনেই লিখে চলেছেন লেখক।  তার নিত্যদিনের  আসা  যাওয়া ঘটনার কিছু স্মৃতি কিছু কল্পনার মোচড়ে লিখছেন ধারাবাহিক উপন্যাস "টানাপোড়েন "



টানাপোড়েন (৪০)

                                                                        কৃতজ্ঞতা


                                          রেখা ট্রেন থেকে নেমেই হন্তদন্ত হয়ে অটোর খোঁজ করছে এক অটোওয়ালাকে দেখতে পেয়ে বলল  'অ্যাই অটো,অ্যাই অটো(হাত নেড়ে)।'
অটোওয়ালা বললো ' দিদি জায়গা নেই পরের অটোর জন্য ওয়েট করুন।'
রেখা বললো  'এই না, না, না। আমাকেএই অটোতেই যেতে হবে।'
অটোওয়ালা বলল  'আপনারা আমাদেরকে ঝামেলায় ফেলবেন।এখন ওভারলোড নিতে বারণ করছে ,দেখছেন না। রাস্তায় ধরছে পুলিশ ।
প্যাসেঞ্জারকে এ ব্যাপারে কিছু বোঝানোই যায় না।'
রেখা সে সব কথায় কর্ণপাত না করে হুটোপাটি করে অটোতে বসে পড়ে, থ্যাঙ্কস জানাল।'
অটোতে বসে রেখা ভাবতে লাগলো  'মনোজ কেন ফোনটা অফ করে রেখেছে কে জানে? বিপদ হয় নি তো?'
এরইমধ্যে  ফোন বেজে উঠলো"জব কই বাত বিগার যায়ে ,যব কই মুশকিল পর যায়ে..।'
অটোতে যেতে যেতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করা খুব মুশকিলের ব্যাপার।বারবার ব্যাগ হাতরে হাতরে
ফোনটা বের করে রিসিভ করে বলল ‌ 'হ্যালো।'
রিম্পাদি বলল  'আরে তুই তোর অ্যাটেনডেন্স শিটএর ব্যাগ ফেলে গেছিস। আমি নিয়ে নিলাম।'
রেখা বলল ' দেখেছো মনটা অস্থির হয়ে আছে তো ।কি রকম ভুলে গেলাম। ভাগ্যিস তুমি ছিলে?'
রিম্পাদি বলল 'ওই জন্য তোকে ফোনটা করলাম। চিন্তা করবি তাই ?বাড়ি পৌঁছে গেছিস?'
রেখা বললো  'না ,না ।বাগের মোড় আছি।'
রিম্পাদি বলল  'ঠিক আছে সাবধানে যা,। মনোজকে ফোনে পেলি?'
রেখা বলল 'না গো। সেজন্যই তো চিন্তায় আছি আর ওদিকে মিলিদের জন্য?'
রিম্পাদি বলল ' কোনো চিন্তা করিস না ।ঠিকঠাক টাইমে ফিরে আসবে ।ঠিক আছে ।আমি বাড়িতে পৌঁছে তোকে ফোন করব ।রাখি।'
রেখা বললো  ,ঠিক আছে ।তুমিও সাবধানে যেও।:
এরইমধ্যে  ব্যাগে ফোনটা সবেমাত্র রেখেছে , তার মধ্যেই ফোন বাজলো।
রেখা আবার ফোনটাকে বার করল হাতরে হাতরে । ও অধীর আগ্রহে ভাবছে বোধহয় মনোজ ফোন করেছে।

কিন্তু আশাহত হয়ে দেখল মনোজের নয় অন্য একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন আসছে ।একটু বিরক্তিভরে ফোনটা রিসিভ করে বলল  'হ্যালো''।
অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসলো ‌ 'কিরে রেখা?'
 গলাটা খুব চেনা চেনা লাগছে রেখার।
রেখা বলল  ' হ্যাঁ ।কে বলছেন?'
অপরপ্রান্ত থেকে বলল  'আমি তোর কাকিমা বলছি।'
রেখা খুব আশ্চর্য হয়ে বলল  ' হ্যাঁ, কাকিমা বলো । কেমন আছো?'
কাকিমা বলল  'আর কেমন আছি মা ।তোমার কাকা তো খুব অসুস্থ ,।বাড়াবাড়ি হয়েছে ।একটু আসতে পারবে?'
রেখা বলল ' তুমি সোমুকে ফোন করেছিলে আর দাদা কে?'
কাকিমা বলল  'সোমুকে ফোন করেছি আর তোমার দাদাকেও করেছি ।তুমি আসবে কিনা ,তাই জানতে চাইছি?'
রেখা বলল  'আজকে কি করে যাবো কাকিমা,? কালকে চেষ্টা করবো যাবার। মনোজ ও তো বাড়ি নেই।'
কাকিমা বলল ' পারলে একবার এসে দেখে যেও কাকাকে ।সব সময় তোমার কথা বলছে ।শেষ সময় কিনা জানি না ।রাখি।'
রেখা চিন্তিত হয়ে বললো ' সত্যিই তো' বিপাশা কবে বলেছিল একবার কাকু কাকিমাকে গিয়ে দেখে আসতে।সময় করে উঠতে পারে নি ।কত রকম ঝড় ঝাপটা ,ঝামেলায় জড়িয়ে গেছে ।এ ভাবতে ভাবতেই অটোওয়ালা বলল  'দিদি নামুন।'
রেখা বলে  ,'হ্যাঁ এই নিন ভাড়া ।ভাড়াটা মিটিয়ে এসে গেটটা  খুলল।'
চৈতির মা গেট খোলার আওয়াজ পেয়ে বলল  'দিদি দেখুন তো অনেকক্ষণ থেকে কিন্তু আপনাদের মিলি আওয়াজ করছিল ।এখন মাত্র চুপ করেছে । দেখুন কি হলো?'
রেখা বলল  'ও তাই বুঝি ,?আচ্ছা দেখছি।'
তাড়াতাড়ি গেট খুলে ভেতরে গিয়ে ব্যাগটা কোনরকমে টেবিলে নামিয়ে রেখে সিঁড়ির কাছে গিয়ে দেখল যে বাচ্চাগুলো জলের মধ্যে আছে । ভাবছে এত জল কোথা থেকে আসলো ।একটু পরেই বুঝতে পারল যে সন্ধ্যের দিকে সিঁড়িগুলোকে ধুয়েছে জ্যেঠি শাশুড়ি ।সেই জল এসে বাচ্চাদের গায়ে পড়েছে এইজন্য বোধহয় মিলি চেঁচাচ্ছিল।'
রেখার চট করে মাথাটা এত গরম হয়ে গেল যে, আর থাকতে না পেরে তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল  ।জ্যেঠি শাশুড়ি কে বলল  'জ্যেঠিমা আপনি সিঁড়িতে জল ঢেলেছেন।'
জ্যেঠি শাশুড়ি (স্বর্ণলতা) বললো  'এত নোংরা হয়েছিল, তাই জল দেয়া হয়েছে।'
রেখা বলল  'ঠিক আছে ।আপনাকে তো বলা হয়েছিল যে কিছুদিন অন্তত ওয়েট করুন বাচ্চাগুলোকে সরিয়ে নেয়া হবে।'
স্বর্ণলতা দেবী বললেন'এতদিন কি লোকে নোংরার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করবে?'
রেখা বলল  'কোন জায়গাটা নোংরা দেখতে পেয়েছেন। ওরা যেখানে থাকে ,ওখানটা তো আমি রোজ সকালবেলা পরিষ্কার করে দি।'
স্বর্ণলতা দেবী বললেন  ,'কেউ ওখানে পরিষ্কার করে না।'
রেখা বলল  'আপনি এবার থেকে রোজ সকালে এসে দেখবেন পরিষ্কার থাকে কিনা। আপনি তো উপর থেকে নোংরাগুলো ফেলেন।
আপনার একটু বিবেক হলো না যে কচি বাচ্চা । ওদের ঠান্ডা লেগে যাবে ।জলের মধ্যে আছে দেখুন গিয়ে।'(আঙ্গুল দিয়ে সিঁড়ির দিকে ইশারা করে)।
স্বর্ণলতা দেবী বললেন  'তোমার বিবেক আছে?'
রেখা বলল  'বিবেকের জন্যই তো আপনার কাছে এসেছি ,আপনি কেন এই কাজটি করলেন?
আপনার যখন ধোবার ছিল তাহলে যখন বাড়ি ছিলাম আপনি বলতে পারতেন যে বাচ্চাগুলোকে একটু ধরো ।ওই জায়গায় জল ঢালবো। আমি  অন্য জায়গায় সরিয়ে দিতাম আপাতত সেই সময়টুকু।'
রেখা কথাগুলো বলে তরতর করে নীচে নেমে আসলো।  বাচ্চাগুলোকে সরিয়ে ওই জায়গাটা ভালো করে ঝাড় দিয়ে জলগুলোকে সরানোর চেষ্টা করল ।তারপর একটা বস্তা পেতে দিয়ে বাচ্চাগুলোকে শুইয়ে দিল।
আর তার সঙ্গে মিলি এবার ওর খিদে পেয়েছে খাবার চাইছে ওর ভাষায়।
এবার রেখা মিলিদের খাবার দিল তারপর নিজে ফ্রেশ হলো। ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যে বাতি জ্বাললো।
এখনো মনোজ ফেরে নি সেই চিন্তায় এবার রেখা মশগুল হয়ে গেল আর ভাবতে লাগলো যে কাকু কাকিমাকে দেখতে যাওয়া উচিত ।এই ভেবে একবার ফোন লাগাল মনোজকে । ফোন বেজে গেলো, বেজেই গেলো ।এবার ফোনটা খুলেছে ।
 এর মধ্যে রেখার ফোন বেজে উঠলো'পল পল দিল কে পাস তুম রেহতি হো''রেখা বুঝতেই পারলো এটা মনোজের ফোন তাই ফোন রিসিভ করে বলল  'তোমার সারা দিন হয় নট রিচেবল, নয় সুইচড অফ ।কেন গো? 'কোন বিপদ-আপদ হলে কেউ যোগাযোগ করতে পারবে না?'
মনোজ বলল  'কেন ,কার কি হয়েছে?'
রেখা বলল  ,'কাকুর খুব বাড়াবাড়ি হয়েছে ।কাকিমা ফোন করেছিল।বার বার করে আমাদেরকে যেতে বলছে।'
মনোজ বলল ' টেনশন নিও না। ঠিক আছে পার্থকে বলে দিচ্ছি কালকে ভোর বেলায় বেরিয়ে কাকু কাকিমাকে দেখে আসব ঠিক আছে।'
রেখা বলল  'তুমি কখন আসবে?'
মনোজ বলল ' ঘড়ি দেখে আধঘণ্টা শুধু দেখো, তার মধ্যেই তোমার কাছে পৌঁছে যাব।'
রেখা এবার হেসে বলল' ঠিক আছে সাবধানে এসো।'
 ফোনটা রেখে রেখা ভাবল  'এই যা ,রিম্পাদিকে তো ফোন করা হয় নি । সঙ্গে সঙ্গে রিম্পাদিকে ফোন করলো ' হ্যালো'।
তুমি পৌঁছেছ?'
রিম্পাদি বলল ' হ্যাঁ ।এই জাস্ট বাড়ি ঢুকছি।'
রিম্পাদি বলল  'ট্রেনে বসে বসে দেখলাম মেসেজ ঢুকছে ।কালকে মিড ডে মিল আছে ।স্কুলে আসবি তো?'
রেখা বলল 'আমি তো মেসেজটা খেয়াল করি নি ।তবে কালকে যেতে পারবো না রিম্পাদি ।আমার কাকু খুব অসুস্থ। দেখতে যাব।'
রিম্পা দি বলল  ,,'ঠিক আছে ।যা দেখে আয় আর বড় দিকে একটা মেসেজ করে দে।'
রেখা বলল  'হ্যাঁ ।আমি ফোনে ট্রাই করব ।যদি না পাই তাহলে মেসেজ করে দেব ।আর তুমিও স্কুলে গিয়ে একবার ব 'ল।'
রিম্পাদি বলল ' ওকে ।টেনশন নিস না।'
এরমধ্যেই চৈতির মা জানলা দিয়ে ডাকছে ' ও দিদি, ও দিদি । মিলি খুব চেঁচাচ্ছিল
ছিল কেন ?কি হয়েছে?'
রেখা জানালার পর্দাটা সরিয়ে গলা বাড়িয়ে বলল 'আর বলবেন না ।যা হয় আমাদের বাড়িতে। জানেন তো সেই ইতিহাস। সিঁড়ির কাছে   বাচ্চাগুলো জলের মধ্যে আছে। এমন জল ঢেলেছে ..."

চৈতির মা বললো  'সত্যি বিবেক বলে কি কিছু নেই?:
দুপুরবেলা দেখলাম সন্টুদা  খেতে  দিলো।'
ওদিকে রেখার আবার ফোন বেজে উঠল।
রেখা বলল  'দিদি ফোন বাজছে। ঠিক আছে ।পরে কথা বলব।'
চৈতির মা বলল ' ঠিক আছে ।আপনি ফোন ধরুন।'
ফোন ধরে রেখা বলল  'হ্যালো'।
অপরিচিত ব্যক্তি বললেন  'আমাকে চিনতে পারছো?'
রেখা বলল 'না তো ,আপনি কে?'
অপরিচিত ব্যক্তি আবার বললেন  'একদমই চিনতে পারছ না ।গলাটাও চেনা যাচ্ছে না? এত বছরে কি সব গলার আওয়াজটা ও ভুলে গেলে।'
রেখা মনে করার চেষ্টা করে বললো ' দেখুন ,আমার এমনি মন মেজাজ ভালো নেই ।আপনার এই ভনিতা মূলক কথা আমার একদম ভালো লাগছে না।কে হন আপনি ।আপনার পরিচয় দিন ,না হলে ফোনটা কেটে দিন।'
অপরিচিত ব্যক্তি বললেন  'সেদিন স্কুলে থেকে স্টেশনে গাড়িতে পৌঁছে দেয়া হলো।'
রেখা বলল  'ও ,এবার চিনতে পেরেছি। ফোন নম্বর কোথা থেকে জোগাড় করা হলো।'
অপরিচিত ব্যক্তি বলল  'ফোন নম্বর জোগাড় করা কি আর কঠিন কাজ?'
রেখা বলল ' কেমন আছো?'
সুব্রত বললো  'ভালো আছি। এখন আরো ভালো । মে
রেখা বলল  'কেন  নতুন কিছু ঘটনা ঘটেছে?'
সুব্রত বলল  'এতদিন পর পুরনো বন্ধুকে দেখা ।একটা ভালো লাগার জায়গা তৈরি হয় বৈকি ।'
সুব্রত বলল  'একদিন আমার সাথে দেখা করো না ।অনেক কথা আছে।'
রেখা বলল 'আমার সঙ্গে আর কি কথা থাকবে ?দেখা করার ই বা  কি আছে?'
সুব্রত বলল- 'তুমি আগের মতোই জেদি আছ।
আসলে আমি একতরফা তোমার দিকে বারবার এগিয়েছি।'
রেখা বলল  'আর এখন তো আরও দূরত্ব। সমুদ্র পার হয়ে কখনো আমার কাছে পৌঁছানো যাবে না।'
সুব্রত বলল  'যাবে না কিন্তু জল স্পর্শ করা যাবে?'
রেখা চুপ করে থাকলো।
সুব্রত বললো  'এত বছরেও আমি কিন্তু তোমাকে ভুলতে পারি নি। যদিও মনে হয় তুমি আমার কথা কিছুই মনে ‌রাখো নি।'
,রেখা বলল ' কেন মনে রাখার মত কি কিছু ঘটনা ঘটেছিল?'
সুব্রত বলল  'না তোমার দিক থেকে হয়তো কিছু ঘটনা ঘটে নি কিন্তু কিছু কিছু বিশেষ মুহূর্ত মনে করতেই পারো.।'
রেখা বলল  'আমার অত সময় নেই।'
সুব্রত বলল জানি তুমি সুখের সংসার করছো আজকে শুধু তোমার সাথে কথা বলবো বলেই তোমাকে ফোন করি নি। একটা কাগজে তোমার লেখা পড়লাম ভীষণ ভালো লাগলো তোমাকে কনগ্রাচুলেশন্স জানাবো বলেই ফোনটা করেছি ।তোমার ভিতরে এই প্রতিভাটা ছিল ।কলেজ লাইফে দেখেছি এতদিন পরে তোমার সেই প্রতিভার স্ফুরণ ঘটছে বলে আরো বেশি খুশি হচ্ছে তুমি চালিয়ে যাও।
রেখা অবাক হয়ে বলল ' কি বেড়িয়েছে ?আমার
লেখা? এক নিঃশ্বাসে বলে গেল কোথায় ,কোন পত্রিকায়?'
সুব্রত বলল 'সিঁড়ি সাহিত্য' পত্রিকায় আর দিশা 'পত্রিকায়'।
রেখে আবার মনে মনে ভাবল একদিন তো রিম্পা দি লেখা গুলো নাড়াচাড়া করছিলাম বলছিল দাঁড়া দেখছি  লেখাগুলো তো তুই পাঠাবি না ?আমি তার ব্যবস্থা করব।
এখন সত্যি সত্যি  ছাপার অক্ষরে ,ভাবতেই যেন কেমন শিহরণ হচ্ছে ,আনন্দ হচ্ছে সঙ্গে।
রেখা বলল-কি লেখা বেরিয়েছে ?
'সুব্রত বলল  'প্রতীক্ষা 'আর  'বেলা শেষে ।'
সুব্রত বললো লেখাটা দারুণ লেগেছে। সে জন্য অনেক ফুলেল শুভেচ্ছা আর শুভকামনা থাকলো। আগামী দিন এভাবেই তোমার কলমে এগিয়ে চলুক।
রেখা বলল  'আমিও অনেক আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ,আমার লেখা পড়ার জন্য। ভালো থেকো'
সুব্রত বললো  হ্যাঁ, তুমিও ভালো থেকো আর তোমাকে যে প্রস্তাবটা দিলাম । একবার ভেবে দেখো ।যদি দেখা করতে পারো ,আমাকে জানিও।:'
রেখা একটু কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেল। সুব্রত মনেপ্রাণে রেখাকে চেয়েছিল কিন্তু রেখা সেই ডাকে সাড়া দিতে পারে নি ।তবে সুব্রতর জন্য একটা কৃতজ্ঞতাবোধ আছে ।
চাকরির প্রথম কল লেটার যেদিন আসে সেদিনই সুব্রত একটা চিঠি নিউ ইয়ার উপলক্ষে, সঙ্গে গ্রিটিংস কার্ড পাঠিয়েছিল। পিয়ন দিয়ে যাবার পর পরে দেখা গেছে আবার একটি চিঠি আসে এবং চিঠি খুলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিল রেখা।
সেই দিনটি রেখা ভুলতে পারে না। তার কাছে স্মরণীয় দিন ।কিন্তু সুব্রতকে মনেপ্রাণে সে কখনই চায়নি।'
শেষে রেখা সুব্রতকে ' অসংখ্য ধন্যবাদ জানাল।
কলেজ লাইফে এই নিয়ে কম টানাপোড়েন হয় নি। অনার্সের ক্লাসগুলোর শেষে এজন্য অনেক হ্যারাসমেন্ট হতে হয়েছে সুব্রতর বন্ধুদের কাছ থেকে।
তবুও রেখা গররাজী । কিন্তু এতদিন পর সুব্রত তার যোগ্য মর্যাদায় আসীন হয়ে রেখাকে কি বার্তা দিতে চাইছে ?'
রেখা বলেছিল  'যোগ্য মর্যাদায় যেদিন আসতে পারবে সেদিন সুব্রত সঙ্গে কথা বলবে ।আজ কি সেই বার্তাই রেখাকে দিতে চাইছে? সুব্রত কি তাহলে রেখার প্রতি কৃতজ্ঞ ।রেখার জন্য‌ সুব্রতর আজকে এই উন্নতি?'
এমন সময় আবার ফোন বেজে উঠল।
রেখা ফোন রিসিভ করে বলল 'হ্যালো'।
অপরপ্রান্ত থেকে বলল  'রেখা আমি রিম্পা দি বলছি।'
রেখা বলল  'হ্যাঁ বল রিম্পা দি।'
রিম্পাদি  বললো ' কনগ্রাচুলেশন্স'।
রেখা বলল ' কি জন্য?'
রিম্পা দি বলল'তোর লেখা বেরিয়েছে পত্রিকায়।  আমি ভীষন খুশী হয়েছি।'
রেখা বললো '  আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ ।তোমার জন্য এটা সম্ভব হল।'
রিম্পাদি  বলল "আরে  না ,না তোর লেখা সত্যি সুন্দর।'চলার পথেঅনেক শুভকামনা রইল।
ভালো থাকিস।'



                                                                                              ক্রমশ চলছে ...

এডুকেশনাল ইকো-সিস্টেম তৈরি : সুপ্রতিম ঘোষ

সুপ্রতিম ঘোষ এর লেখা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করা




একজন ভারতীয় হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের মনের কোণে একটা স্বপ্ন ঘর করে রয়েছে, তা হলো আমাদের এই ভারতবর্ষ একদিন সুপার পাওয়ার হবে। হাঁ এই স্বপ্ন আমিও দেখি আর আমার মতো আপনিও দেখেন। কিন্তু আমাদের এটা কখনোই ভুললে চলবে না যে একটা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সুপার পাওয়ার দেশ গড়ে তোলার এই যাত্রাটা, সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে আমাদের শিক্ষা প্রণালী কি, কেমন, কতটা প্রভাব ফেলছে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মের উপর। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছে -আজ যদি আমরা একটু গভীর ভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার দিকে নজর দিয়, তাহলে আমরা শুধু চাপ, হতাশা ও বিষন্নতাই খুঁজে পাবো। আজও আমাদের দেশের একাংশ পিতা মাতা এমন আছেন যিনারা নিজেরদের সর্বস্ব দিয়ে তাদের সন্তানদের হাই টেক স্কুল ও টিউশন ক্লাসে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছেন।কিন্তু তাতেও কি একজন শিক্ষার্থী এই চাপ, হতাশা ও বিষন্নতা কাটিয়ে উঠতে পারছে ?

আমাদের ধর্ম গ্রন্থ বলে - প্রকৃত শিক্ষা আমাদের মুক্তির রাস্তা দেখায়। কিন্তু আজ একজন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষকেরাও সমান ভাবে এই চাপ, হতাশা ও বিষন্নতার শিকার হচ্ছেন।কিন্তু আমরা প্রশ্ন হলো - আমরা কি এমন কোনো ব্যবস্থাপনাকে গ্রহণ করতে পারি না, যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী এই চাপ, হতাশা ও বিষন্নতা কাটিয়ে সম্পূর্ণ আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করতে করতে তাদের ভবিষৎকে নির্মাণ করতে পারে ?




 আমাদের হিউম্যান মাইন্ড সবসময় যেখানে আনন্দ রয়েছে সেখানে ছোটে। তাই একটা  শিশু মনও যে কর্মে আনন্দ রয়েছে সেই কাজটাই বার বার করতে চাই যেমন - খেলাধুলো, কার্টুন, সিনেমা, ভিডিও গেম ইত্যাদি। কিন্তু একজন শিশু যখন সে পড়তে বসে তখন আর সে সেই আনন্দ খুঁজে পাই না কারণ আনন্দদায়ক সমস্ত কিছুই ভিজ্যুয়াল আর পড়তে বসে দেখে টেক্সচুয়াল। তাই পড়তে বসে, সে চাইলেও মন বসাতে পরে না ফলে এই রকম চলতে চলতে একদিন তার ছাত্র জীবন  হতাশা ও বিষন্নতা গ্রস্ত হয়।
 একজন শিক্ষার্থী যখন বার বার লিখে, পড়ে কোনো টপিক কে মুখস্থ করেও মনে রাখতে পারে না তখন তার মন বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তার মাইন্ড  হয়তো পড়াশোনা করার জন্যে নয় ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হতাশার সৃষ্টি হয়। 
তদরূপ বিভিন্ন  ধরণের সমস্যার ( স্মৃতি ধরে রাখার সমস্যা, লেখার ও পড়ার সমস্যা, প্রেরণার অভাব, নেতিবাচক চিন্তা, মুখস্থ করতে অসুবিধা, মনোযোগের অভাব, আত্মবিশ্বাসের অভাব, শেখার সময় বিভ্রান্তি, প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না করা, পরীক্ষার উদ্বেগ, পড়ার সময় একঘেয়েমি, অলসতা, সময়ানুবর্তিতার অভাব, ইত্যাদি ) মধ্যে  দিয়ে যখন একজন শিক্ষার্থীর জীবন অতিবাহিত হয় তখন তার প্রকৃত সমাধান খুঁজে না পাওয়ার ফলে একদিন তার ছাত্র জীবন সম্পূর্ণ ভাবে চাপ, হতাশা ও বিষন্নতায় জর্জড়িত হয়ে পরে।
আমাদের ছাত্র সমাজের এই বিশাল সমস্যাকে উপলব্ধি করার পর, আমি আমার ২০ বছর বয়সেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের একটি মাধ্যম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই ।
কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল এই সমস্ত সমস্যার প্রকৃত কারণ গুলো খুঁজে বার করা অর্থাৎ কারণের কারণ খুঁজে বার করা। দীর্ঘ সময় ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর গভীর অধ্যাবসা করে ফাইনালি খুঁজে পাই সেই সমস্ত ফাঁক গুলো যার কারণে শিক্ষার্থীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রথমত :: আমরা শুধু শিখি কিভাবে লিখতে হবে আর কিভাবে পড়তে হয়। কিন্তু কিভাবে মনে রাখতে হয় সেটা আমরা কেউ শিখি না বা আমাদের শেখানো হয় না। আবার বেশির ভাগই কিভাবে লিখতে হবে আর কিভাবে পড়তে হয় সেটাও শিখিনা বা শিখানো হয় না। শুধুমাত্র বলা হয় লেখ আর পড়। 
দ্বিতীয়ত :: আমরা সবাই বিজ্ঞান পড়ি কিন্তু আমাদের পড়াশোনাতে বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করে কেউ পড়াশোনা করি না।
তৃতীয়ত :: আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা ব্যাক্তিগত লার্নিং স্টাইল রয়েছে কিন্তু আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় এমন কোনো মাধ্যম নেই, যার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থী নিজের প্রকৃতি অনুসারে, ব্যাক্তিগত লার্নিং স্টাইল অনুসারে নিজের মতো করে পড়াশোনা করতে পারে। 
চতুর্থত :: আজ আমাদের কাছে এমন কোনো গুরু বা শিক্ষক উপলব্ধ নেই যিনি ২৪/৭ ঘন্টা একজন শিক্ষার্থীর সাথে থেকে শুধুমাত্র তার পড়াশোনাকে নয় বরং তার শক্তি এবং দুর্বলতা কে জেনে, তার প্রকৃতিকে জেনে সেটাকে লালনপালন করে বিকাশ ঘটিয়ে সঠিক জায়গায় কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া চালাবে।




 আমি আমার দীর্ঘ কালীন গবেষণায়, বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদদের ও হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ওপর গভীর অধ্যাবসার  মাধ্যমে  এই চারটে বিষয়কে আমি মূল কারন রূপে খুঁজে পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যদি আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে থেকে এই চারটে ফাঁককে পূরণ করতে পারি তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এক আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ আমাদের আগামী প্রজন্মকে উপহার দিতে পারবো।       
আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে থেকে এই চারটে ফাঁককে পূরণ করতে জন্ম উত্থান হয় - পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ এবং হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে প্রিয় পার্সোনাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ''MissionAA.Com'' এর। যার উদ্দেশ্য এই চাপ, হতাশাপূর্ণ ও বোরিং শিক্ষা ব্যাবস্থাকে নির্মূল করে শিক্ষায় এক নতুন স্বাদ প্রকাশের মাধ্যমে আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করা। আমাদের ছাত্র, শিক্ষক এবং সহকর্মীদের সফল করার জন্য তাদের মধ্যেকার সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করার ও জাগিয়ে তোলার জন্য  সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিক্ষার বাস্তুতন্ত্র (এডুকেশনাল ইকো-সিস্টেম) তৈরি করা। আমাদের বিশ্বাস তারা প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে নিজস্বতা কে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার এই নতুন মাধ্যমে নিজেদেরকে সংযুক্ত করে তাদের বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবে।

লেখক শান্তা কামালী'র ধারাবাহিক উপন্যাস "বনফুল"২২

চোখ রাখুন স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পাতায় লেখক শান্তা কামালী'র  নতুন ধারাবাহিক  উপন্যাস "বনফুল" 


বনফুল 
( ২২তম ) 


জুঁই বললো ময়না তুমি যাও আমরা আসছি, 
অহনা সৈকতের ও টুকটাক কথোপকথন হয়েছে, ফোনের নাম্বার আদান-প্রদান ইত্যাদি ... 
জুঁই পলাশ নিচে নেমে এসে দেখে সৈকত ও অহনা সহ সবাই ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছে। 
খাবার টেবিলে বসে সৈকতের তাক লেগে গেছে...  
পুরো রাজকীয় সব খাবার-দাবার! 
ওয়াজেদ সাহেব ও মনোয়ারা বেগমের উল্টো দিকে  পলাশ ও সৈকত বসেছে, টেবিলের দুই ধারে জুঁই ও অহনা বসলো।
 গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ হলো।
 জুঁইয়ের বাবা-মা দুজনেই নিজেদের ঘরে  চলে গেলেন রেস্টের জন্য।
ওরা চারজন বসে চুটিয়ে গল্প করলো। বিকাল হতেই পলাশ বললো জুঁই এখন আমরা উঠবো।
 জুঁই বললো কফি খাও তারপর  যাবে।
জুঁই ময়নাকে ডেকে বললো এখানে আমাদের কফি দাও।

জুঁই গিয়ে বাবা-মাকে ডেকে আনলো, জুঁই বললো আম্মু উনারা চলে যাচ্ছেন। 
জুঁইয়ের মা জিজ্ঞেস করলেন ওদের চা নাস্তা দিয়েছো? 
জুঁই বললো হ্যাঁ, দিয়েছে। পলাশ আর সৈকত বললো আন্টি, আঙ্কেল আজ আমরা আসি।
ওয়াজেদ সাহেব বললেন, বাবা এখনতো বাসা চিনে গেছো মাঝেমাঝে  এসো আন্টি আঙ্কেলকে দেখতে। 
পলাশ বললো, জ্বি নিশ্চয়ই আসবো আঙ্কেল।
জুঁই বললো তোমরা অহনাকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যেও। 
এই বলে ওরা বাসার দিকে এগোলো,জুঁই উপরে চলে গেলো।
এবার ওযাজেদ সাহেব মনোয়ারা বেগম কে বললেন ছেলেটা দেখতে শুনতে অনেক ভালো  কি বলো?
মনোয়ারা বেগম ইশারায় হ্যাঁ  বলে সম্মতি জানালেন। 

এদিকে পলাশ সৈকত আর অহনা কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের  বাসায় ফিরলো।

মাসুদ করিম




পারবো কি লিখতে আবার


মনের মাধুরী মিসিয়ে লিখতে চেয়েছি 
কিছু কবিতা, চেয়েছি মন খুলে গাইতে 
হারানো দিনের গান,হারিয়ে ফেলেছি 
বারে বার কবিতার ছন্দ আর ভালো 
লাগা গানের সুর।

হারিয়ে যায় স্বপ্ন বারে বার, থমকে যায় 
সাদা কাগজের বুকে কলমের কাটা দাগ, 
লিখতে গিয়ে ভেসে উঠে পুরনো স্মৃতী, 
চোখ দুটো হয়েযায় মলিন মনযে 
হারায় কবিতার ছন্দ।

এলমেল ভাবনা সব উকি দেয় মনের 
আকাশে, লিতে গিয়ে থমকে যায় 
হাতের কলম, ভাবি বসে লিখতে কি 
পারবোনা আগেরমত মনের মাধুরী 
দিয়ে সেই কবিতা?

কি ভাবছি এসব? 
আমিতো কবি নইযে কবিতা লিখবো, 
তবুও চেষ্টা করি মনের কিছু কথা তুলে 
ধরবো কলমের কালিতে সাদা 
কাগজের বুকে, আনমনে ভাবি পারবো 
কি লিখতে কবিতা আবার ?

রুকসানা রহমান এর ধারাবাহিক উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়"২৫

চলছে নতুন  ধারাবাহিক  উপন্যাস "উদাসী মেঘের ডানায়
লেখাটি পড়ুন এবং অন্যদের  পড়তে সহযোগিতা করুন  লেখককের মনের অন্দরমহলে জমে থাকা শব্দগুচ্ছ একত্রিত হয়েই জন্ম  লেখার। 
আপনাদের মূল্যবান কমেন্টে লেখককে  লিখতে সহযোগিতা করবে। 





উদাসী মেঘের ডানায় 
                                                         ( পর্ব ২৫


                                  রাতে ফোন করলো অপু দুজনই বিভোর আগামি দিনের স্বপ্নের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে।
অপু- মোনালিসা
তৃষ্ণা- হুমম বলো
অপু- কি করছো?
তৃষ্ণা- এইতো তোমার সাথে কথা বলছি
অপু হা-হা-হা করে,হেসে বললো- বেশ বলেছো।
তৃষ্ণা- তুমি।
অপু - স্বপ্ন দেখছি।
তৃষ্ণা- কি স্বপ্ন বলোনা। 
অপু- শুনবে
তৃষ্ণা- শুনবো তাড়াতাড়ি বলোনা।
অপু - স্বপ্ন সখ দুটো ইচ্ছে পূরণ করবে তো?
তৃষ্ণা- আরে বলোনা।
অপু- আমাদের বুবলি তো একটা মেয়ে আমার খুব সখ গো আমরা ফুটবল টিম জন্ম দিবো  ভালো হবেনা দুজন মিলে আদর করে ঘুমপাড়িয়ে
তুমি আমি একাকার,হয়ে থাকবো অনাবিল শান্তিতে।
তৃষ্ণা- এ বিয়ে,হবেনা
কেন?
আমি পারবোনা প্রোডাকশন বাড়াতে।একটা আছে 
বড় জোর আরএকটা রাজি তো আমি রাজি।
অপু -দুর ছাাই আমার স্বপ্ন গুলো তাহলে পূরণ হবেনা।
তৃষ্ণা- তাহলে আমার বিয়ে করার দরকার নেই।
অপু- এমন করে বলে কেউ আমার হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যাবে।
তৃষ্ণা- তা যাক আমি ফুটবল টিম জন্ম দিতে পারবোনা এই ভয়ংকর স্বপ্নবাজকে  বিয়ে করা সম্ভব নয়। 
অপু- আরে রাগ করছো কেন?  ওরা তো সারাদিন নানু দাদুমার কাছে থাকবে শুধু দুজন অফিস থেকে বাসায় এলে ছুটে এসে চড়ুই,পাখির মতন কিচিরমিচির,করে জাপটে ধরবে যখন সব ক্লান্তি
নিমিষে উধাও তারপর ওদের ঘুম পাড়িয়ে দুজন হারিয়ে যাবো।
তৃষ্ণা- আমি বছর বছর পেট নিয়ে অফিস করবো
কালই মাকে জানিয়ে দিবো এ বিয়ে হবেনা।
অপু- রাগছো কেন লক্ষীটি ঠিক আছে এক হালি
তৃষ্ণা- একটা আছে আর একটা নিলে আমি রাজি নয়তে সম্ভব নয়া আমাকে মেরে ফেলার বুদ্বি কি সর্বনাশা প্রেমিক আমার।
না বিয়ে করবোইনা তোমাকে, যাও অন্য কাউকে বিয়ে করো।
অপু- কি আর করা আমার সখের স্বপ্নটা পূরণ না হলে
কি আর করা আবার তুমিহীন কি করে থাকি বলোতো
বিধাতা আমার ভাগ্যে এমনই লিখেছে কেন জানিনা।
আর একটা বিয়ে করে টিম বানাও।
অপু-সে নাহয় বানালাম তুমি পাশে থাকবেতো? 
তৃষ্ণা- ছাই থাকবো, ফোন রেখে দিলাম
অপু- হা-হা-হা, তোমাকে ক্ষেপাতে কি যে আনন্দ
সে তুমি বুঝবেনা, পাগলি মোনালিসা।
তৃষ্ণা রাগে ফোন বন্ধ করে দিলো ঠিকই সারারাত ঘুম
হলোনা, কেন যে ফোনটা বন্ধু করে দিলো
মন খারাপ হলো ভোর রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়লো
নিজের,অজান্তে জানেনা।
চলবে...

jhgm

LOVE

cgmm

LOVE

vbbvnf

LOVE

mbnc

LOVE

chgcjhjc

LOVE

fxthfg

LOVE