০৯ নভেম্বর ২০২০

নূরজাহান শিল্পী



রোদ্দুরের মায়ালিপি


কিঞ্চিৎ আলোয় মেঘের মায়া

সমুদ্রপাড়ে আল্পনা-মাখা আবছায়া

তোমার অনুভবের নদীতে ডুবুরি আমি খুঁজে নিই অগণিত মুক্তোর মণি।

তোমার প্রবল আকাঙ্ক্ষার জলোচ্ছ্বাসে সুর তুলে আমার স্বপ্নের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি।

সানন্দা পৃথিবী সাজে শব্দের আঁচলে।

সন্ধ্যার আলোক-মাখা প্রেমের কাব্য রচিত হয় সমর্পণে।

শিশিরে স্নান সেরে পদ্মপাতায় তৃষিত ইচ্ছাগুলো জ্যোৎস্না পোহায়।

মোহাচ্ছন্ন ক্ষণ লুকিয়ে যায় গহিন ছায়ায়।


মায়া-অশ্রু-নয়নে ডুবে যায় নীল প্রলেপী রাত।

আর আমি বেলান্তের শেষ পাতায় রোদ্দুরের মায়ালিপিতে খুঁজে বেড়াই তোমায়।


( যুক্তরাজ্য) 

রণজিৎ সরকারের তিনটি লিমেরিক

 
ঘোড়াড্ডিম

ঘোড়াড্ডিমের বড়া করে ধরা পড়ি ঘোড়ার চালে

আড়াই চালে ঘোড়ামারা বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে

পিণ্ডিরামের পিণ্ডি চটকাই

সাত ঘোড়ার হণ্ডা চাই

ঘোড়া টিপে বোড়া মারি

 সাতকাহনের সাঁঝ-সকালে


বালখিল্য

রণজিৎ সরকার

অন্ধজনের হাতি দর্শন কেমন সে তো সবার জানা

কলম ঘুরিয়ে অনেকেই দেখি করে তানা নানা

অল্প বিদ্যের চোপায় ধার

ভয়ঙ্করি বোঝা ভার

তাদের জন্য হাত ঘুরিয়ে মোয়া মোয়া খেলা মানা


সাধারণ লিমেরিক

টুপ টুপ চুল ঝরে হায় হায় টাক পড়ে চাতাল

তের কেটে টাক তাতে নাচে কোন মাতাল

চুলের রেলিঙ ধরে ঝুলে

সবে পা রেখেছি টুলে

উলটে গিয়ে পালটি খেল ভাঙল মাথায় কাঁঠাল

শুভমিতা বিশ্বাস



লাল সোয়েটার


শহরের সিগন্যালে সিগন্যালে শীত এসেছে,

এখন প্রায় কুয়াশার ভেতর একটা
লাল সোয়েটার
আগুন ঠোঁট নিয়ে ছুটে যাবে-
কোনো বৃষ্টির কাছে বা কোনো হিমবাহে
তারপর,
রোডলাইটের নীচে উল কাঁটার কাঁটাকুটি।
ঠান্ডা আঙুল পশমের পকেটে চুপচাপ আগুন পোহাবে
ছাতিম গাছে সন্ধ্যা নামলেই,
সে আসবে 

সে আসবে, 
আসতে তাঁকে হবেই শিশিরের পতনের মতো 
তারপর,একাধিক নির্জনতার আঁধারে 
ধোঁয়াশায় ঢেকে যাওয়া ঘন সবুজ থেকে ছুটে আসবে,

 একঝাঁক লাল সোয়েটার..

দেখা হবে, 

এই শীতকালেই কোনো এক নগরের বুকে দেখা হবে
 হারিয়ে যাওয়া সব
লাল সোয়েটারের সাথে।

স্বপন দত্ত



ধুম লেগেছে পাঁজর ঘরে

অমিতা তোকে স্বপ্নে দেখলাম I তোকে ঘিরে একটা ফড়িং উড়ছিল l হঠাৎই দেখছি তুই ঘাস l উঁহু ঠিক হলো না l ঘাসের শরীর টা ফড়িং সবুজটা তুই l ঠিক এমনই সময় আকাশ সিম্ফনি I বাতাস ঝমঝম হাসি l স্বপ্নটা ভেঙে গেলো l 

হিসেব কষছি আকাশ আর বাতাস কোনটা তুমি l আর কোনটাই বা ফড়িং l আকাশ চোখের পাতায় তিরতির কেশর গন্ধ অন্য ভুবন নির্মাণ ছোঁয়া হতে একটার পর একটা আলেখা পাতাI 

নেহাতই আমি l নইলে কি যে হতো l অমিতা অমিতা খেলতে খেলতেই তো হু হু দিন বয়ে যায় l টু -------কি ! না টাকা লাগেনা l পার্কস্ট্রিটের পানশালাও নয় , তবুও কোথা থেকে যেন আসতেই থাকে পেগের পরে পেগ l বেশ কয়েক পশলা নেশা নিজেকে নিজেই আঁকড়ে ধরি l আমার শরীর ছুঁয়ে থাকে আমারই শরীর l দম বন্ধ গলা বুক নাভি l মানচিত্রের দেওয়াল ঘিরে তো বেকারি ছাঁটাই খুন ধর্ষন তোলাবজি মূল্যবৃদ্ধির গরাদ l তবুও যে পাগলা ঘন্টি বাজে l  জানালা গলে যায় l ছুটতে থাকে বাঁকুড়ার পোড়ামাটি ঘোড়া l কোথায় ছোটে l কোথায় ছোটে  ধূলাপায়ে l স্বপ্নলাগা নেশা ধরা পাঁজর ঘরে l সেই খানে যে বাঁধ ভাঙা নদী l অসভ্য আমি l বেখেয়াল আমি l মাছরাঙা ঘাই l আদর করি l এই আমিই তখন তুই হয়েছি l আশ্লেষ বুদবুদ l শিশির ভেজা  সোহাগ হাসি l  বিলি কাটছে আঙুল l ডুবে যাচ্ছি l ডুবে যাচ্ছি ! কি যেনো কি l পিকাসো জ্যমিতি যাপন তিয়াস l বুকের ভেতর বুক l আকাশ ঢুকে পড়ে l সীমা -- মানচিত্র ছেঁড়ে l


ধুম জ্বর ওই তো কে যেন হাততালি দিচ্ছে l এতো লম্বা তালগাছ তাও হাতে আকাশ পায়না l ধূ ধূ শূন্য l আরও আরও কয়েক পেগ আ : l এইবার এইবার প্রিয় ঝরনা ফুলের গান শুনতে শুনতে নির্ভেজাল একা ক্রমেই দোকা হয়ে যাচ্ছি l এক্কা দোক্কা I এক্কা দোক্কা ! একলা দোকলা এইতো জোর ছুটছে এক্কাগাড়ি আ:! আ: ! এই বেশ  এইতো বেশ নিজেকে নিজেই উ উম্ উম্  তুমি আমি পৃথিবী মাতন পিপাসাদংশন l জ্বলে জ্বলতেই থাকে I

ওয়াহিদা খাতুন



ও বেদিনী নাই কীরে তোর ঘর (গানঃ)


ও বেদিনী নেই কীরে তোর ঘর,

বেদিনী তুই নাকি যাযাবর, 

সাপ খেলাইয়া বহুদূরে--

বীণ বাজিয়ে যাসরে সুরে--

তোদের কেউ নেইযে আপন পর!

ও বেদিনী নেই কিরে তোর ঘর!!


নানাভাগে নানা পেশায় ঘুরিস বনেবনে,

শিঙা ফুঁকে ওষধ দিয়ে সারাস কতজনে,

কেউবা করিস মাছের পেশা বেচিস চুড়ি,মালা--

খুশি রাখিস নানা খেলায় পেটে নিয়ে জ্বালা--

বারো বছর হলে তোদের জোটে এসে বর!

ও বেদিনী নেই কিরে তোর ঘর!

দেবাশিস সাহা'র দুটি কবিতা

 
ত্যাগ 


কান্না বদল করবে বলে

দরোজায় এসে দাঁড়ায় 

দুটি কাঠ


নিরিবিলি হলে

গাছেদের সংসারে আসবাবের গল্প


অবিবাহিত জানালার অবৈধ প্রেম

ফাঁক পেলেই

উকিঁ দেয় পরকীয়া চোখ



অন্যকে সুখ দেবে বলেই

বিছানার নীচে 

গাছেদের এই আত্মত্যাগ 

মনে রেখেছে বেবুশ্যা রাত।



ফুঁ


বাঁশী জন্মের লোভে

ফুটো সঞ্চয় করে বাঁশ


শূন্য থেকে গড়িয়ে আসা ফুঁ

ধারণ করে গর্ভে


বেজে ওঠার আগে

ফুঁ আর ফূটো

কাছাকাছি আসে

ঘি আর সলতে

অপেক্ষা করে আগুনের।

শারমিন সুলতানা রীনা

 

ফিনিক্স পাখি


তোমার বুক ছেনে আজন্ম ভাস্কর 

কুড়িয়েছি মুক্তার সর্বগ্রাসী সুখ

বেঁধেছি আঁচলের খুঁটে।


মোহান্ধে  হয়নি পড়া 

চোখের শ্লেটে লেখা ভাষা


বোধের উল্লাসে কখনও বুঝেছো 

কত পুড়ে বদলে যায় স্বর্ণকারের হাতে

সোনার স্বরূপ 


নিরাকার চাকুর ফলায় 

হৃদপিণ্ড উপরে নিরুদ্দেশ হলে

অঁচেনা মেরুর ফিনিক্স পাখি..

ফটিক চৌধুরী

 

জ্যোৎস্না


কেমন ফুটে আছে চারিদিকে জ্যোৎস্না !

চাঁদ অকাতরে ঢেলে দেয় জ্যোৎস্না-সুধা

যা পান করে কবিরা মাতাল হয়।


কে ভেবেছে বনলতা সেনের চুলের কথা

কিংবা কে দেখা করবে চন্দনের বনে !

অবনী বাড়ি আছে কি না জানা নেই।


এভাবে মাতাল হাওয়ার মতো কিছু লাইন

ঘোরাফেরা করে--

শুধু জ্যোৎস্না যদি আড়ি না করে।

মুন চক্রবর্তী

 

কবিতা দিতেই পারি 


শ্যাম্পেনের বোতলের জলরাশির মত শব্দের ভীড়ে 

গোধূলির কবিতা দিতেই পারি।

যেখানে জমে আছে শুভেচ্ছার কমল,আগামীর স্বপ্ন কথায়।

সকালের আবেশে পড়বে কোন এক সন্ধ্যার অনুরাগী।

নামহীন হয়ে যদি পারিজাত থাকে মনের অন্তরালে,কবিতা দিতেই পারি স্নিগ্ধ গোধূলির ধূলি মেখে।

আশিস চক্রবর্তী'র একটি অনুগল্প

 

সুযোগ


শঙ্করী পাঁচ বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। ভদ্রলোক সুপ্রিয় বাবু, ফাঁকা বাড়ির সুযোগ পেয়ে ওর ইজ্জত নিয়ে ছিনি মিনি খেলেছিল। শঙ্করী ভালো মতোই জানতো, প্রতিবাদ করলে সুফল কিছু আসবে না। কারণ, তার ইজ্জতের চেয়ে সুপ্রিয় বাবুর টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ।


মাস খানেক পর , সুপ্রিয় বাবু মারা গেলেন গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে। সেবার ফাঁকা বাড়ির সুযোগটা  শঙ্করীই নিয়েছিল।